#গল্পঃডিভোর্সের_পরে
পর্বঃ৪
#লেখকঃরিয়াজ
সেদিন থেকে আয়ানের সাথে আমার সম্পর্ক শুরু হয়।ডিভোর্সের পরে সেই বয়স্ক লোকটার সাথেও যখন আমার বিয়ে ভেঙে গেলো তখন ভাইয়ের বউয়ের অত্বাচার আরও বেড়ে গেলো।সে যেনো এখন বাসায় আমাকে সহ্যই করতে পারতেছিলো না।
একদিন বাহির থেকে আমি বাসায় যাচ্ছিলাম তখন পিছন থেকে শুনতে পেলাম একজন বলছে *জামাই ছাড়া মেয়ে যাচ্ছে*কথাটা শুনে বুঝে গেলাম যে আমাকেই বলা হয়েছে। এভাবে রাস্তাঘাটেও নানান মানুষ নানান কথা বলতে শুরু করলো।মানুষের কথার ভয়ে আমি দিন রাত বাসা থেকেই বের হতাম না।
আশেপাশের মানুষদের কথার ভয়েই আমি বাসায় বসে থাকতাম।২ বছরের মাঁথায় মানে আয়ানের সাথে ডিভোর্স হওয়ার দুই বছরের মাঁথায় একদিন একটা কাজে আমি আমাদের বাসা থেকে আমার এক বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলাম।একটু ধুরেই বলতে পারেন আমাদের বাসা থেকে বাসে যেতে দুই ঘন্টা লাগে।
জায়গা টা শহর এলাকা ছিলো তো বান্দবীর বাসা থেকে ফেরার পথে আমি আয়ান কে দেখি আর ওর সাথে একটি মেয়ে ছিলো আমার বুঝতে বাকি রইলো না এটা আয়ানের নতুন বউ।এই দৃশ্য দেখে আমি ভীষণ অবাক হয়ে যাই।যেই ছেলে আমাকে এতোটা ভালোবাসতো সেই মাত্র দুই বছরের মধ্যে কি করে আমাকে ভুলে অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে সংসার করতে পারছে?
এদিক থেকে আপনারা বলতে পারেন আমার কপালই খারাপ।কারণ সবাই সবার মতো স্যাটল হয়ে গেলো কিন্তু আমি ই এখনো অভাগা নারী হিসেবে রয়ে গেলাম।ভাগ্য আমার দিক থেকে এমন ভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে যে কোনো ভাবেই ভাগ্য আমার সহায় হচ্ছে না।
সেদিন আমার বান্দবীর বাসা থেকে এসে আমি সারারাত কান্না করেছিলাম।আমার জীবনে এমন একজন মানুষ নেই যার সাথে আমার জীবনের সাথে ঘটে যাওয়া এই সমস্ত ঘটনা আমি শেয়ার করবো।আজ সত্যি নিজেকে ভীষণ একা মনে হচ্ছিলো। এরমাঝে আমার ভাইয়ের বউয়ের পেঁটে সন্তান আসে।
এমনিতেও বাসার সব কাজ আমি করতাম কিন্তু লিজা মানে আমার ভাইয়ের বউ প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর বাসার যাবতীয় সব কাজ রান্না, বান্না কাপড় কাঁচা হারিপাতিল মাজা ইত্যাদি সব কাজ করতাম।আমি ভাইয়ের বউ চাইলেই সব কাজ করতে পারতো কিন্তু সে প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর কোনো কাজ হাত দিয়ে ছুঁয়েও দেখতো না।
ইবেন আমার ভাইয়ের বউয়ের ব্যাবহৃত জামা কাপড় ও আমাকে ধোলাই করতে হতো।এই সব আমি মুখ সহ্য করে ছিলাম।কারণ আমি এক নারী আমি চাইলেও কোনো কিছুই প্রতিবাদ করতে পারি না।আর বাসার এই সমস্ত ব্যাপার তো মোটেও না।আমার কিছুই করার ছিলো না।
সেদিন রাতে শুয়ে ভাবছিলাম এতো কাজ যদি আমি আয়ানের বাসায় থাকতে করতাম তাহলে কখনোই আয়ানের সাথে আমার ঝগড়া লাগতো না।দুজনে খুব সুখে শান্তিতে জীবন কাঁটাতে পারতাম।আমি যখন আয়ানের বাড়িতে ছিলাম তখন কোনো কাজ আমি হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতাম না।সব কাজ আয়ানের মা ই করতো।
আর বাসায় একটি কাজের ভুয়া ছিলো। আয়ানের সাথে আমার সব সময় ঝগড়া লাগতো এক মাত্র এই কাজ করা নিয়ে।আমি সারাদিন শুয়ে বসেই পার করে দিতাম বাসার কোনো কাজে হাত দিতাম না।যেই কাজের জন্য আয়ানের কাছ থেকে আমি ডিভোর্স নিয়ে চলে এলাম আর এখানে এসে সেই কাজ ই আমাকে করতে হচ্ছে।আসলে আমি নিজেই আমার পাঁপের ফল পাচ্ছি।মানুষ তার কিছু কিছু পাঁপের ফল এই পৃথিবীতেই পায় আর কিছু কিছু পায় মৃত্যুর পর।
আয়ানের সাথে পাঁচ বছরের যেই প্রেমের সম্পর্ক ছিলো সেখানে আয়ান কিন্তু আমাকে ঠিকই বলেছিলো আমার যত আবদার ই থাকুক না কেনো সব পূরণ করবে।আমার কোনো কাজ করতে হবে না বাসার সব কাজ সেই করবে।কিন্তু বিয়ের পর সেই আয়ান আমাকে এক বছর ও সহ্য করতে পারলো না।
সে আমাকে ধরে রাখতে পারলো না।আচ্ছা আয়ানের সাথে আমার ডিভোর্স এর কাহিনিটা বলি।একদিন রাত থেকে সকাল পর্যন্ত প্রচুর বৃষ্টি ছিলো সকালেও প্রচুর বৃষ্টি।বৃষ্টি ঘুমোতে আমার বেশ লাগে। তো সেদিন রাতে আয়ান জব থেকে বাসায় ফেরার পর আমি ঘুমেই ছিলাম ও নিজের খাবার নিজে বেড়ে খেয়ে সব কাজ গুছিয়ে শুয়ে পড়লো।আমিও ঘুমে ছিলাম কোনো কিছু বুঝতেই পারিনি।
আয়ান কখন আসলো কখন খাবার খেলো।কখন রুমে ডুকলো।এর কিছুই আমি জানিনা।এরপরদিন সকালেও বৃষ্টি ছিলো।আয়ানের অফিস সকাল ৯ টা থেকে।তাই ৮ টার দিকেই ওকে বাসা থেকে বের হতে হয়।প্রতিদিনের মতো সেদিন সকালেও আমি ঘুমাচ্ছিলাম।আয়ানের সাথে আমার দেখা হয় নি।
সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত আয়ান আমাকে ৩৬ টা কল দিয়েছিলো কিন্তু আমি একটি কল ও রিসিভ করতে পারিনি।আমি তখনো ঘুমাচ্ছিলাম।ও এতোগুলা কল দিলো কিন্তু আমি একটা কল ও ধরতে পারিনি। দুপুর ৩ টায় আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি সে এতো গুলো কল দিয়ে রেখেছে।আসলে সেদিন আমার শরীর টাও একটু খারাপ ছিলো।তাই এতো বেশি ঘুম।
এখন আমি ঘুম থেকে উঠে আয়ান কে কল ব্যাক করলাম ২’৩ বার দিলাম কিন্তু সে কল ধরলো না।আমি আর কল না গোসল করে খাবার দাবার খেলাম।খাবার সব আয়ানই রান্না করেছিলো।রান্না বান্না আমি হালকা পারতাম সব কিছু আয়ানই করতো।আসলে আয়ান আমাকে অনেক বেশিই ভালোবাসতো।
৫ টার দিকে দরজায় নক পড়লো।দরজা খুলতেই দেখি কি ব্যাপার আজকে কি হয়েছে আপনার এতো দ্রুতই চলে আসলেন অফিস থেকে।ও আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে আমার গালে সজরে একটি চড় দিয়ে আমার চুলের মুঠি ধরে ঘরের ভিতরে নিয়ে গেলো।
আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই সে তার কোমরের বেল্ট খুলে আমাকে ইচ্ছে মতো মারতে লাগলো।আমি কিছুই বুঝতেছিলাম না।কি হলো হঠাৎ করে সে আমাকে এভাবে মারছে কেনো।সব কিছু যেনো আমার মাঁথার উপর দিয়ে যাচ্ছিলো।ইচ্ছে মতো সে আমাকে মেরে বাসা থেকে বেরিয়ে চলে গেলো।
যাওয়ার সময় আমি তার পায়ে ধরে পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেছিলাম আমার অপরাধ কি?আমাকে এভাবে কেনো মারলা সেটা অন্তত বলে যাও।কিন্তু না সে আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।আমি সেদিন রাগে ক্ষোভে একটি চিঠি লিখে ওর টেভিলের উপর রেখে চলে আসি।
চিঠিতে লিখা ছিলো যেই মানুষটি আমাকে এতোটা ভালোবাসতো আমার এতোটা কেয়ার করতো সেই মানুষ থেকে এমন ব্যাবহার আমি কোনোদিনও আশা করিনি।এরকোম একটি পশুর মতো মানুষের সাথে আমি বাকি জীবন কি করে কাঁটাবো।যে একজম মানুষ কে জানোয়ারের মতো মারতে পারে।তোমার সাথে আমার আর সংসার করা সম্ভব না।আমি চলে যাচ্ছি ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবো সই করে দিও।
এটা লিখে আমি আয়ানের বাসা থেকে চলে আসি।বাসায় আসার পর আম্মুও আব্বুও সব শুনে বল্লো যেই মেয়েকে আমরা একটা থাপ্পড় পর্যন্ত দেইনি।আমাদের সেই মেয়েকে এভাবে মারলো মা তুই চলে এসে একদম ঠিক কাজ করেছিস।এখন ওকে আগে একটা উচিত শিক্ষা দিবো তারপর যা হওয়ার হবে।
এভাবে আমাদের বাসায় আসার পর এক সপ্তাহ কেঁটে যায়।এক সপ্তাহ কেঁটে গেলেও আয়ান আমার খোঁজ একটি বারের জন্যেও নেয়নি।যেই ছেলে আমার সাথে একদিন কথা না বললে পাগলের মতো হয়ে যেতো সেই ছেলে আজ তার সাথে ঝগড়া করে আসার পর এক সপ্তাহ কেঁটে সে আমাকে একটা কল দিলো না।আমি নাহয় তার কোনো যত্ন নেইনি বলে সে মেরেছে।কিন্তু আমি তো তাকে অনেক বেশি ভালোবেসেছিলাম।
তারপরেও সে এমন কেনো করলো আমার সাথে।যেহেতু সে এক সপ্তাহ ধরে আমার কোনো খোঁজ নেইনি।তাই আমি রাগে ক্ষোভে আব্বুকে নিয়ে যেয়ে কাজী অফিস থেকে ডিভোর্স পেপার তৈরী করে সেখানে আমার সাইন দিয়ে তার কাছে পাঠিয়েদিলাম সাইন করার জন্য। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য সে সেই ডিভোর্স পেপার এর পর দিনোই সই করে আমার কাছে পাঠিয়ে দেয়।তার সই করা ডিভোর্স পেপার পেয়ে আমি হতবাক হয়ে গেলাম।
পাঁচ বছরের ভালোবাসা ৭ দিনেই শেষ হয়ে গেলো।তবে আমি কিন্তু মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম ও যদি আমাকে নিতে আসে আর যখন ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছি তখনও যদি ও আমার কাছে আসতো আমাকে নিতে আসতো আমি ওর সাথে যেতাম।কিন্তু আসল কাহিনি আমি জানতে পেরেছি আরও কয়েকদিন পরে।সে আসলে কি কারণে আমার সাথে এমন ব্যাবহার করলো সেটা।
চলবে?
#গল্পঃডিভোর্সের_পরে
পর্বঃ৫
#লেখকঃরিয়াজ।
ডিভোর্স পেপারে সাইন করার পর যখন আয়ানের সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে যায় এর কয়দিন পর একদিন আয়ানের মা আমাকে কল দেয়।অপরিচিত নাম্বার থেকে কল দিয়েছিলো তাই আমি কল ধরেছিলাম নাহলে আমার তখন অনেক রাগ ছিলো আমি কখনোই তাদের কল রিসিভ করতাম না।যাই হোক কল ধরার পর সে কান্না করে দিয়ে বলছে মা মিম তুমি কেমন আছো?
আমি বল্লাম আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?সে উত্তর দিলো মা আমি ভালো আছি।কিন্তু আমার ছেলেটা ভালো নেই।আমি বল্লাম কি বলেন আন্টি আমি তাকে মানে আমার শ্বাশুড়ি কে আন্টি বলেই ডাকতাম।মা ডাকতে আমার একটু অন্যরোকম লাগতো।তাই আন্টি বলেই ডাকতাম।
তারপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম আন্টি আপনার ছেলে ভালো নেই কেনো?কি হয়েছে তার?সে বল্লো আয়ান ঠিক মতো খায় না।ঘুমায় না।ঠিক অফিস যায় না।সারাদিন মন মরা হয়ে বসে থাকে।আমি তাকে বল্লাম আন্টি এসব কি বলছেন?তার তো অনেক ভালো থাকার কথা।কারণ আমাকে ছাড়া থাকতেই সে বেশি পছন্দ করে।
তাইতো আমাকে মেরে ধরে ঘর থেকে বের করে দিলো।তিনি বললেন মা আয়ান সেদিন এমনি এমনি তোমার গায়ে হাত তুলেনি।তুমি আয়ান কে চিনোনা?সে কখনো এমন ব্যাবহার করে কারো সাথে? আমি বল্লাম তো সেদিন কি হয়েছিলো কেনো সে এমন ব্যাবহার করলো শুনি?
আয়ানের মা বল্লো সেদিনের আয়ানের অফিসে ওর বসের সাথে কি নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো ওর বস সেদিন অফিসের সবার সামনে ওর সাথে অনেক বাজে ব্যাবহার করেছে।আর ও ওর সেই রাগটা বাসায় এসে তোমার সাথে ঝাড়লো।
আমি বল্লাম তা হয় ঝাড়লো কিন্তু ও তো একটি বার আমাকে বলতে যে হয়েছে। আমাকে ও জানোয়ারের মতো মেরেছে। তারপর তিনি বললেন মা আমি ওর হয়ে তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি তুমি চলে আসো মা।আমি বল্লাম আন্টি এখন আমাদের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে আপনার ছেলেও ডিভোর্স পেপারে সাইন দিয়ে দিয়েছে।
এখন আমি চাইলেও আর আয়ানের কাছে যেতে পারবো না।তবে আন্টি আপনি আমাকে একটি কথা বলেন না?আপনার ছেলে যদি আমাকে ভালোইবাসতো যদি ও আমাকে মন থেকে চাইতো তাহলে কি ও সেদিন ডিভোর্স পেপারে সাইন দিতো?আসলে ও এখন আর আমাকে চায় না।মনে হয় ওর নতুন কাউকে প্রয়োজন তাই ও নতুন খুঁজছে।আমাকে আর তার প্রয়োজন নেই।
আয়ানের মা কান্না করে দিয়ে বল্লো মা তোমাদের এসব রাগ অভিমান থামিয়ে তোমার আবার এক হয়ে যায়।সামান্য একটু ভুল বোঝাবুঝির জন্য তোমার দুজনই কষ্ট পাচ্ছো।কি লাভ বলো?আমি বল্লাম আন্টি আপনি বুঝছেন না কেনো?আপনার ছেলে আমাকে আর চাইছে না।
যদি চাইতো তাহলে আপনার জায়গায় সে কল দিতো।অথবা সে আমাকে নিতে আসতো।কিন্তু সে আসেনি। তারপর সে বল্লেন মা আমি চাইছি তোমরা রাগ অভিমান ভুলে আবার এক হয়ে যাও।এখন তোমরাই যদি এক হতে না চাও তাহলে আমি এখানে কি করবো।
এই বলে তিনি ফোন রেখে দিলেন।এখানে আমি করবো আমার কিছুই করার ছিলো না।কারণ স্ত্রী রাগ করে বাবার বাড়ি আসার পর স্বামী এসে স্ত্রীকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়।কিন্তু আমাকে নিতে আসেনি।
এভাবে অনেক দিন কেঁটে গেলো কিন্তু আয়ান আমাকে নিতে আসলো।ধীরে ধীরে আমিও আয়ান কে ভুলতে শুরু করি।আমাদের সবার জীবনেই এমন কিছু মানুষ থাকে যাদেরকে আমরা সবার সামনে ভুলে গেছি বল্লেও ভিতরে ভিতরে ঠিকই মনে রাখি।
সবার জীবনেই এমন কিছু মানুষ থাকে যাদেরকে চাইলেও আমরা খুব সহজে ভুলতে পারিনা।আমি সবার সামনে আয়ানকে ভুলে গেছি ভুলে গেছি বল্লেও আয়নকে ঠিকই আমি মনে রেখেছিলাম।৫ বছরের সম্পর্কে আমাদের মাত্র কয়েকদিন নানান কারণে কথা হয়নি যেমন অসুস্থ অথবা ফোনে চার্জ না থাকা অথবা ঘুম এইসব কারণে হয়তো ৫ বছরে মাত্র ৭’৮ দিন কথা না বলে থেকেছি।
আজকে হঠাৎ করেই আয়ানের সেই মারের কথা মনে পড়ে আমার একটি অন্য কথা মনে পড়ে গেলো।আয়ান আমার প্রতি প্রচুর কেয়ার করতো।কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে উঠার পর অনার্সে ভর্তি হওয়া নতুন এক ছেলে আমাকে পছন্দ করে রাস্তা ঘাটে ডিস্টার্ব করতে শুরু করে।একদিন আমি বাসায় যাচ্ছিলাম তখন সেই ছেলেটি আমার সামনে এসে দাঁড়ায় আয়ান ও ব্যাপার টা জানতো।
কিন্তু ও কারো মনে কষ্ট দিতে চায়নি।তাই ভাবলো ওকে কিছু না বলে এমনিতেই যাতে ভুলে যায়।কিন্তু সেটা হয়নি।যখন ছেলেটি আমার সামনে এসে দাঁড়ায় এর পরপরই আয়ান সেই ছেলের সামনে এসে দাঁড়ায়।আয়ান সেই ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলো কিরে রাস্তাঘাটে মেয়েদের ডিস্টার্ব করিস কেনো?ছেলেটি আয়ানের প্রশ্নের উত্তর দিলো আমি কি করবো না করবো এটা আমার ব্যাপার আপনি কেনো বলছেন?
এটা শুনে আয়ানের মাথা গরম হয়ে গেলো ও আমার সামনেই ছেলেটিকে একটি চড় দিয়ে দিলো।ছেলেটি থতমত খেয়ে গেলো।গাল হাত দিয়ে সে আয়ান কে বল্লো আপনি আমাকে মারলেন কেনো?খোকা তুমি জানোনা আমি তোমাকে কেনো মারলাম?
কারণ তুমি যার পিছে ঘুরছো যাকে ফলো করছো যাকে ডিস্টার্ব করছো সে আমার বউ।তুমি প্রেম করার জন্য আর মানুষ খুঁজে পেলা না।আমার বউ কেই পছন্দ হতে হলো।ছেলেটি গালে হাত দিয়ে বলছে ভাই আপনি অথবা না উনি যদি আগে আমাকে বলতো তাহলে আমি কখনোই এই কাজ করতাম না।আমাকে ক্ষমা করে দিবেন ভাই আমি আর কখনো এমন করবো না।
এরপর আয়ান তাকে বলে দিলো যদি আর কখনো ওর আশেপাশে দেখি তাহলে এলাকা ছাড়া করবো।এরপর ছেলেটি চলে গেলো।আমি তখন আয়ান কে বল্লাম বাবা বাবা আমাকে এতো ভালোবাসো?একটি ছেলে আমাকে ডিস্টার্ব করলো বলে এতো গরম হয়ে গেলা?
আয়ান তখন বলেছিলো আমি সব সহ্য করতে পারবো কিন্তু তোমার সাথে অন্য কাউকে কখনোই মেনে নিতে পারবো না।সেদিন আমার মনে হয়েছিলো আয়ানই বোধহয় এই পৃথিবীতে আমাকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসে। এভাবে আরেকদিন হয়েছে কি রাতে আমার প্রচুর জ্বর আসে আমি কোনো কিছুই চোখে দেখতেছিলাম না।ফোন টোন কোথায় ছিলো কিছুই আমি জানিনা।
এদিকে আয়ান তো ফোন দিতে দিতে মেসেজ দিতে দিতে পাগল প্রায়।ও আমাকে না পেয়ে আমার কোনো রেসপন্স না পেয়ে পুরো পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলো।সেদিন রাত ১২ টায় আয়ান আর রুমে থাকতে না পেরে আমাদের বাসার নিচে চলে আসে।কিন্তু বাসার নিচে এসেও কোনো লাভ হয়নি।
কারণ রুমের লাইট অফ করে আমি আরও অনেক আগেই নিদ্রা চলে গিয়েছিলাম।আমার সেদিন রাতে কোনো কিছুই খেয়াল ছিলো না।আয়ানকে যে একটা মেসেজ দিয়ে বলবো আমার জ্বর আসছে সেটাও বলতে পারিনি।পরদিন সকালে আমার যখন ঘুম ভাঙে তখন সকাল ভোর বেলাই আমি দেখলাম আয়ানের আমাদের বাসার সামনে বসে বসে যিমুচ্ছে।
আমি সাথে সাথে ফোন হাতে নিয়ে দেখি ও ১৭৬ টা কল দিয়েছে। আর আমি একটা কল ও ধরতে পারিনি। আমি দ্রুত ফোন খুলে ওকে কল দিয়ে বললাম কি হয়েছে তোমার তুমি আমাদের বাসার সামনে বসে ঘুমাচ্ছো কেনো?আয়ান যা বল্লো তা শুনে আমি হতবাক হয়ে গেলাম।
ও বল্লো কাল রাত থেকে তুমি আমার কল ধরতিছো না।মেসেজের কোনো উত্তর দিচ্ছো না।তাই কি করবো রাতে তোমাদের বাসার সামনে এসেছিলাম তোমার খোঁজ নেয়ার জন্য। এসে দেখি রুমের লাইট অফ।তাও অপেক্ষা করছিলাম কখন তোমার ঘুম ভাংবে আর আমি কখন তোমাকে দেখবো।
চলবে??