#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_০৬_(বোনাস পর্ব)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
তানিশা চোখ মেলে তাকাতেই দেখে সে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে।তানিশা বুঝতে পারলো না কিছু।তাকে আবার কে নিয়ে এলো হাসপাতালে ?সে তো অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলো রাস্তায়।তারপর কি হয়েছিলো তার সাথে সে কিছুই মনে করতে পারলো না।
তানিশা তার কপালের ব্যান্ডেজ টা বোলাতে বোলাতে উঠতে ধরলো।কিন্তু তন্নি এগিয়ে এসে বললো,
উঠছিস কেনো?শুয়েই থাক।তা এখন কেমন লাগছে তোর?
তানিশা তখন শান্ত কন্ঠে বললো,ভালো লাগছে।কিন্তু আমাকে হাসপাতালে নিয়ে এলো কে?আর তোর নোমান ভাইয়ার কি অবস্থা?উনি কি ঠিক আছেন?
তন্নি তখন বললো,আমান ভাইয়া নিয়ে এসেছে তোকে।আর নোমান ভাইয়া গুরুতর ভাবে আহত হয়েছে।সেও এই হাসপাতালেই আছে।এখন মোটামুটি সুস্থই আছেন।
তন্নি তখন বললো হয়েছিলো টা কি তানিশা?
তানিশা তখন বললো আমি বাসস্ট্যান্ডে যাবো বলে রিক্সায় উঠেছিলাম।হঠাৎ কিছু ছেলে এসে আমাকে এট্যাক করে।তারা আমাকে তুলে নিয়ে যেতে এসেছিলো।আমাকে নাকি জোর করেই বিয়ে করবে।হঠাৎ সেই পথে তোর নোমান ভাইয়া যাচ্ছিলেন।তোর নোমান ভাইয়াকে দেখামাত্র আমার ভয় কিছুটা দূর হলো।আমি তখন চিৎকার করে তাকে ডাকতে লাগলাম।তোর নোমান ভাইয়া আমার চিৎকার শুনে সাথে সাথে এগিয়ে আসে।এবং আমাকে ছেলেগুলোর হাত থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন।কিন্তু একটা ছেলে পিছন দিক থেকে তোর নোমান ভাইয়ার মাথায় আঘাত করলে তিনি সাথে সাথে মাটিতে পড়ে যান।আমি ওনাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকি।কিন্তু কেউই এগিয়ে আসে না।তারপর একটা ছেলে আমার মুখ চেপে ধরলে আমি সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যাই।তারপর আর কিছু বলতে পারি না।
নোমান ভীষণ ভাবে আহত হওয়ার কথা শুনে তানিশার খুব খারাপ লাগলো।তাকে বাঁচাতে গিয়ে আজ তার এ অবস্থা হলো।
হঠাৎ আমান এলো তানিশার বেডে।আর জিজ্ঞেস করলো তানিশা কেমন আছো এখন?
–জ্বি ভালো ভাইয়া।
আমান তখন বললো,আর কখনোই একা একা যাবে না কোথাও।আমি না থাকলে কি হতো তোমার একবার ভেবে দেখেছো?
–জ্বি ভাইয়া।
আমান এবার তার দুর্দান্ত সাহসের গল্প তানিশাকে শোনাতে লাগলো।
আমান বললো,ভাগ্যিস আমিও বাহিরে বের হয়েছিলাম তা না হলে ছেলেগুলো তো তোমাকে উঠিয়েই নিয়ে যেতো।তারপর কি হতো তা উপরওয়ালাই ভালো জানে।
তন্নি সেই কথা শুনে বললো,ভাইয়া আপনি ছেলেগুলোকে কিভাবে তাড়ালেন?যেখানে নোমান ভাইয়া গুরুতর আহত হয়েছে সেখানে তো আপনার কিছুই হলো না।
আমান তখন হাসতে হাসতে বললো,তুই খুবই বোকা তন্নি।আমি হলাম ভবিষ্যৎ এর একজন পুলিশ অফিসার।এরকম ছোটো খাটো সন্ত্রাসীদের তাড়ানোর ক্ষমতা আমার আছে।আমি যে ফাইট জানি নোমান কি সেই ফাইট জানে নাকি?যার সন্ত্রাসীদের তাড়ানোর ক্ষমতা নেই,সে গিয়েছে তানিশাকে উদ্ধার করতে।আমাকে ফোন করে ডাকলেই তো নোমানের আজ এ ক্ষতি হতো না।
তানিশা আমানের মুখে পুলিশ অফিসার হওয়ার কথা শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।কারণ তাকে হুমকি দেওয়া ছেলেটাও তো পুলিশ অফিসার পরিচয় দিয়েছে।তানিশা তখন বললো,ভাইয়া আপনি পুলিশ অফিসার হবেন?
–হবো মানে?ধরে নাও হয়ে গেছি।এবার পরীক্ষা অনেক ভালো হইছে।শুধু রেজাল্টের অপেক্ষায় আছি।রেজাল্ট বের হলেই এই আমান হয়ে যাবে পুলিশ অফিসার আমান চৌধুরী।
তন্নি তখন মুখ ভেংচিয়ে বললো,ভাইয়া আপনার এসব বড় বড় গল্প করা এবার বাদ দিবেন।যেদিন হবেন সেইদিন বলিয়েন।এ যাবতে তো অনেক পরীক্ষা দিলেন।
আমান সেই কথা শুনে বললো আগে নিজের চরকায় তেল দে।আমি এবার পুলিশ অফিসার না হলেও সমস্যা নাই,নেক্সট আবার ট্রাই করবো।কিন্তু তোর তো এবারই লাস্ট সুযোগ।মেডিকেলে চান্স না পেলে কিন্তু খবর আছে।বাসার সবাই উঠেপড়ে লাগবে।
আমান আর তন্নি এইভাবে একের পর এক ঝগড়া করতেই আছে।
কিন্তু আমানের পুলিশ হওয়ার কথা শুনে তানিশার মাথা টা যেনো এলোমেলো হয়ে গেলো।সে কিছুতেই এই হিসাব টা মেলাতে পারছে না।আর সত্যি যদি হুমকি দেওয়া ছেলেটাই আমান হয় তাহলে তিনি কেনো এভাবে তাকে জোর করে বিয়ে করতে চাইবে?
নাহঃ কি ভাবছি সে।তার ধারণা হয়তো ভুল।এমনও তো পারে সবকিছু কাকতালীয় ভাবে মিলে গেছে।
হঠাৎ তানিশার বাবা মিঃ তহিদুল সাহেব দৌঁড়ে চলে এলেন তানিশার বেডে।তারপর তানিশার মুখ চোখ বুলিয়ে বললেন,মা ভালো আছিস তুই?কি হয়েছিলো তোর?
তানিশা তার বাবাকে দেখে সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে বললো,ভালো আছি বাবা।কিছুই হয় নি।একটু আঘাত পেয়েছি শুধু।
তহিদুল সাহেব তখন তন্নিকে বললো,মা এসব কি করে হলো?
তন্নি তখন বিস্তারিত ভাবে তহিদুল সাহেব কে সবকিছু খুলে বললো। তহিদুল সাহেব সব কাহিনী শোনার সাথে সাথে বললো,লাগবে না ডাক্তার হওয়া।এই শহরে তোকে আমি একলা একলা কিছুতেই রাখবো না।যদি সন্ত্রাসী রা খারাপ কিছু করতো তাহলে কি হয়ে যেতো?আমরা কোথায় পেতাম তোকে।
তানিশা সেই কথা শুনে বললো, তাই বলে কি ঘরের মধ্যে বসে থাকবো বাবা?
–হ্যাঁ ঘরের মধ্যেই বসে থাকবি।গ্রামের কেউ যদি শোনে তোকে সন্ত্রাসীরা ধরেছিলো তাহলে তো একদম নাক কাটা যাবে আমার।
আমান সেই কথা শুনে বললো, আংকেল কি বলছেন এসব?তানিশা অনেক মেধাবী স্টুডেন্ট আর একজন ভবিষ্যৎ ডাক্তারও।এভাবে ওর ক্যারিয়ার টা নষ্ট করবেন না।আমরা সবাই আছি তো?আমাদের কে বিশ্বাস করেন না?
তহিদুল সাহেব তখন বললো তোমরা আর কতদিন পাহারা দেবে তাকে।ঢাকা শহরে চেনা পরিচিত কেউ নেই তানিশার।আমার এতোদিন তেমন ভয় লাগে নি।কিন্তু এই ঘটনার পর কিছুতেই মন আমার সায় দিচ্ছে না।
আমান তখন বললো,তাহলে আংকেল আপনারা ঢাকাতে থাকছেন না কেনো?আন্টি আর আপনি থেকে যান এখানে।
তহিদুল সাহেব সেই কথা শুনে বললো,তা কি করে হয় বাবা।একলা মানুষ আমি।শহরে থাকলে গ্রামের জমিজমা গুলো কে দেখবে আমার?তাছাড়া তানিশার বড় বোনের এখন একের পর এক বিয়ের স্বমন্ধ আসতেছে।এই মুহুর্তে শহরে থাকা সম্ভব না আমাদের।
হঠাৎ তায়েব চৌধুরী প্রবেশ করলেন তানিশার রুমে আর বললেন,কেনো সম্ভব নয়?ইচ্ছা থাকলে সবকিছু করা সম্ভব।আপনি যদি কিছু না মনে করেন তাহলে তানিশা আমার বাসা থেকেই কলেজ করতে পারবে।আমার ছোটো ছেলেও তো তানিশার কলেজেই পড়ে।ওরা একসাথে যাবে প্রতিদিন।আর তা না হলে আমার সাথে যাবে।আমিও তো রোজ রোজ আটটায় অফিসে যাই।
তহিদুল সাহেব তায়েব চৌধুরীর কথা শুনে বললো,আপনাকে দেখলেই বোঝা যায় অনেক বড় মন আপনার।আপনাদের ফ্যামিলির প্রতিটা সদস্যই অনেক ভালো।আমার তানিশাকে যে আপনারা এতো বেশি ভালোবাসেন এই ঘটনা না ঘটলে সত্যি আমি বুঝতে পারতাম না।কিন্তু ক্ষমা করবেন আমাকে তানিশাকে আমি কিছুতেই আপনাদের বাসায় রাখতে পারবো না।নানান লোকে নানা কথা বলবে।তাছাড়া আমারও তো একটা মানসম্মানের ব্যাপার আছে।
তায়েব চৌধুরী তখন তহিদুল সাহেবের হাত ধরে বললো, তানিশাকে আমি আমার নিজের মেয়ের মতোই দেখে আসছি।তন্নি আর তানিশাকে কখনোই আমি আলাদা চোখে দেখি নি।আপনি নিশ্চিন্তে আমাদের বাসায় ওকে রাখতে পারেন।আমাদের বাসায় থাকলে ও বরং ভালোই থাকবে।হোস্টেলের সকল মেয়েই কিন্তু ভালো না।এমনও তো হতে পারে এসব ষড়যন্ত্র ওর চেনাজানাই কেউ করছে।সেজন্য আমি চাচ্ছি তানিশা আমাদের বাসা থেকেই ওর পড়াশোনা কম্পিলিট করুক।
তায়েব চৌধুরীর কথা শুনে তাহমিনা চৌধুরীর মাথায় যেনো আকাশ ভেংগে পড়লো।তার ভাই এসব কি বলে।বাসায় দুই দুই টা জোয়ান পোলা।তার মধ্যে এই মেয়েটাকে রাখা কি ঠিক হবে?তাদের তো একটা মানসম্মান আছে।তাছাড়া তানিশা বাসায় থাকলে তন্নি মোটেও পড়তে বসতে চাইবে না।সারাক্ষন শুধু গুজুরগুজুর করবে ওর সাথে।মেয়েটা আমার ভীষণ সহজ সরল।তানিশা ঠিকই তার লক্ষ্য পূরণ করবে মাঝখান থেকে তার মেয়েটা ছিটকে পড়বে।
সেজন্য তাহমিনা চৌধুরী বললো,তোমরা সবাই যেভাবে ভয় পাচ্ছো মনে হয় তানিশা একাই থাকে ঢাকা শহরে।আরে ওর মতো অহঃরহঃ মেয়ে থাকে এই শহরে।পরবর্তী তে একটু সাবধানে চলাফেরা করলেই আর এ বিপদ হবে না।আর তানিশা তুমি হুদাই এদিক ওদিক ঘুরে বেড়বা না,আমাদের বাসাতেও আসার দরকার নাই।হোস্টেল থেকে সকল মেয়ে এক সাথে বের হবে,আবার কলেজ শেষ করে আবার একসাথে ফিরবে।তাহলেই তো কোনো বিপদ হবে না।
তায়েব চৌধুরী তাহমিনা চৌধুরীর কথা শুনে ভীষণ রেগে গেলেন।তিনি তখন তাহমিনা কে বললেন, তুই মাঝখান থেকে নাক গলাস কেনো?তানিশা আমাদের বাসায় থাকলে তোর প্রবলেম টা কোথায়।তন্নি যেটুকু ভালো স্টুডেন্ট হয়েছে তা তানিশার সাথে চলাফেরা করেই হয়েছে।তানিশার সাথে চলাফেরা করে দেখেই পড়াশোনায় সে আজ এতো সিরিয়াস হয়েছে।জানিসই তো সৎ সংগে স্বর্গবাস,অসৎ সংগে স্বর্বনাশ।
তাহমিনা চৌধুরী তায়েব চৌধুরীর কথা শুনে একদম কেঁদেই ফেললো।তার ভাই তানিশাকে এতো বেশি পছন্দ করে।তানিশার জন্য সবার সামনে তাকে এতোগুলো গালমন্দ করলো।
অন্যদিকে তন্নি মনে মনে তো সেই খুশি।তানিশা তাদের সাথে থাকলে সে সবচেয়ে খুশি হতো।কিন্তু তার মা যেভাবে বাঁধা দিচ্ছে তাতে যে কি হয়? তন্নি চুপচাপই থাকলো।কারণ এখানে সে যদি একটা কথা বলে তার মা একদম গলা টিপে মেরে ফেলবে তাকে।
তহিদুল সাহেব সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না।তিনি কি করবেন এখন কিছুই বুঝতে পারছেন না।আবার তানিশাকে একা একা রাখার সাহস ও পাচ্ছেন না তিনি।যদি এক্সিডেন্ট কিছু হয় তখন তিনি মেয়ে পাবেন কোথায়?অন্যদিকে তায়েব চৌধুরী আর তার পরিবার কে তিনি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারেন।কারন তিনিও অনেকবার গিয়েছেন তায়েব চৌধুরীর বাসায়।তানিশা যখন তন্নির সাথে একসাথে কোচিং করেছে তখন প্রথম কয়েকদিন তিনি তায়েব চৌধুরীর বাসাতেই ছিলেন।তাছাড়া ঢাকাতে তানিশাকে দেখতে এলেও তিনি মাঝেমধ্যেই ওদের বাসায় গিয়ে থাকতেন।সেজন্য তায়েব চৌধুরীর সাথে তার সম্পর্ক টা মোটামুটি ভালোই।
তায়েব চৌধুরী তহিদুল সাহেব কে চুপচাপ থাকা দেখে বললেন,এতো কিসের চিন্তা করছেন আপনি?যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে নিয়েন।যে কয়দিন তানিশা সুস্থ হয় নি অন্তত সে কয়দিন তো আমাদের বাসায় থাকতে পারে।আর আপনিও এ কয় দিন থাকবেন তানিশার সাথে।তানিশা সুস্থ হলে তবেই গ্রামে ফিরে যাবেন।
তহিদুল সাহেব হ্যাঁ বা না কিছুই বললেন না।কারণ তিনি ভীষণ চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলেন।না করলে তায়েব চৌধুরী ভীষণ মন খারাপ করবেন,আবার হ্যাঁ করলে তার মানসম্মান নিয়ে লোকে কথা বলবে।
নোমান আর তানিশা দুইজনই মোটামুটি সুস্থ হয়েছে।সেজন্য দুজনকেই বাসায় নিয়ে গেলো তায়েব চৌধুরী। নোমান সেই আগের মতোই চুপচাপ আর নিচ মুখ হয়ে থাকলো।এতোকিছু হয়ে যাওয়ার পরও সে এ বিষয়ে তানিশার সাথে একটি কথাও বললো না।
কিন্তু তানিশা নোমানের প্রতি অনেকটাই দূর্বল হয়ে গেছে।নোমান নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কি করে তাকে বাঁচাতে এলো।সে তো ইচ্ছে করলে মানুষ জন জড়ো করে তবেই তাকে বাঁচাতে আসতে পারতো।কিন্তু নোমান সেরকম কিছু না করে তার বিপদ আছে জেনেও তানিশাকে বাঁচাতে এসেছিলো।ছেলে গুলোর সাথে কিভাবে মোকাবিলা করছিলো!
নোমান যখন প্রতিটা ছেলেকে ঘুষি দিচ্ছিলো তানিশার মনে হয়েছে সেই ছেলেগুলোর মনে হয় সেই জায়গার হাড় একদম ভেংগে গেছে।তানিশার শুধু বার বার সেই দৃশ্যই চোখের সামনে ভাসছে।
#চলবে।
#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_০৭
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
নোমান কলেজ যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো।ঠিক তখনি তায়েব চৌধুরী এসে বললো,বাবা তানিশাকেও সাথে করে নিয়ে যেও।
নোমান সেই কথা শুনে বললো, বাবা, ভাইয়াকে বলো একটু।ভাইয়াও তো এসময়ে বাহিরে যাবে।
তায়েব চৌধুরী তখন রাগান্বিত কন্ঠে বললো,কেনো তোমার সাথে গেলে কি প্রবলেম?
নোমান তখন তার ব্যাগ টা ঘাড়ে নিয়ে বললো,ওকে তাড়াতাড়ি রেডি হতে বলো।আমি কিন্তু বেশিক্ষণ লেট করতে পারবো না।এই বলে নোমান গাড়িতে গিয়ে বসলো।
অন্যদিকে তানিশা আজ কলেজে যাবে না দেখে এখন পর্যন্ত বিছানা থেকেই ওঠে নি।কারন সে চাইছিলো মাথার ব্যাথাটা পুরোপুরি ভালো হলেই তবে সে কলেজ যাবে।এভাবে মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে সে কিছুতেই যেতে পারবে না।
এদিকে তায়েব চৌধুরী তানিশাকে ডাকতে ডাকতে তার রুমে প্রবেশ করলো।কিন্তু তানিশাকে শুয়ে থাকা দেখে বললো,মা তানিশা তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?এখনো ওঠো নি যে?
তানিশা তায়েব চৌধুরীর কন্ঠ শোনামাত্র তাড়াতাড়ি করে উঠে বসলো আর বললো,না মামা,ঠিক আছি আমি।এমনিতেই শুয়ে আছি।তাছাড়া তন্নিও নেই সেজন্য একা একা ভালো লাগছে না।
তায়েব চৌধুরী তখন বললো,তাহলে কলেজে যাও তুমি।কলেজে গেলেই ভালো লাগবে।নোমান রেডি হয়ে গাড়িতে বসে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
তানিশা সেই কথা শুনে বললো ঠিক আছে মামা।রেডি হচ্ছি।এই বলে তানিশা তাড়াতাড়ি করে রেডি হতে লাগলো।কিন্তু তানিশা যখন রেডি হয়ে বাহিরে চলে গেলো সে কাউকে দেখতে পেলো না।তানিশা বুঝতে পারলো নোমান তাকে রেখেই চলে গিয়েছে।সেজন্য তানিশার খুব খারাপ লাগলো।কারণ নোমান এইভাবে তাকে অপমান না করলেও পারতো।
হঠাৎ আমান আসলো তানিশার কাছে।আর তানিশাকে রেডি হওয়া দেখে বললো, তানিশা আজ কলেজ যাবে তুমি?তা ডাকবে না আমাকে?চলো রেখে আসি তোমাকে।শুধু আমাকে পাঁচমিনিট সময় দাও।এই বলে আমান বাসার ভিতর প্রবেশ করলো।
তানিশা কোনো কথাই বললো না।সে তার জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রইলো।
হঠাৎ জোরে জোরে গাড়ির হর্নের শব্দ পাওয়া গেলো।অনবরত হর্ন বেজেই যাচ্ছে।তানিশা সেজন্য তার মাথা ঘুরালো।তানিশা দেখলো নোমান এভাবে হর্ন বাজাচ্ছে আর গাড়ি নিয়ে বাসায় প্রবেশ করছে।
আসলে নোমান খুবই পাংচুয়াল। সে কলেজ যেতে কখনোই এক সেকেন্ড লেট করে না।সে যখন দেখলো ইতোমধ্যে সাত টা বেজে গেছে। কলেজ যেতে আরো এক ঘন্টা লাগবে।সেজন্য সে তানিশাকে রেখেই চলে গিয়েছিলো। পরে আবার কি মনে করে যেনো ফিরে এলো।নোমান তানিশাকে ডাকা বাদ দিয়ে অনবরত হর্ন দিতেই আছে।তানিশা নোমানকে এভাবে হর্ণ বাজানো দেখেও চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
নোমান এবার গাড়ি থেকে নামলো।আর তানিশাকে উদ্দেশ্য করে বললো,ঘড়ি দেখেছো কয় টা বাজে?নিজেও লেট করলে আর আমার ও লেট করালে।তাড়াতাড়ি গাড়িতে গিয়ে বসো।
কিন্তু তানিশা নোমানের কথা শুনেও এক পা এগোলো না।তার ইচ্ছা সে কিছুতেই নোমানের সাথে যাবে না।যে ছেলে ভালো করে তার সাথে কথা বলে না তার সাথে সে কি করে যাবে?তার তো নিজের একটা আত্নসম্মানবোধ আছে।সে আমানের সাথেই যাবে।
নোমান যখন দেখলো তানিশা কিছু বলছেও না আর তার গাড়িতে গিয়ে বসছেও না তখন সে তানিশার হাত ধরে টেনে তার গাড়ির দিকে নিয়ে গেলো।
তানিশা তা দেখে বললো,কি করছেন আপনি?হাত ছাড়ুন আমার।আমি যাবো না আপনার সাথে।আমান ভাইয়া নিয়ে যাবে আমাকে।তিনি রেডি হতে গেছেন।
নোমান সেই কথা শুনে এক ঝটকায় তানিশাকে গাড়ির মধ্যে বসালো।আর তানিশার সিট বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে নিজেও লাগিয়ে নিলো।তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলো।
নোমানের এমন কান্ড দেখে তানিশা একদম হা হয়ে রইলো।সে কখনো ভাবতেই পারে নি নোমান এভাবে জোর করে তাকে গাড়িতে বসাবে।কিন্তু আমান ভাইয়া তো রেডি হতে গিয়েছে।তাকে তো অন্তত বলে যাওয়া উচিত।সেজন্য তানিশা বললো,আমান ভাইয়াকে একটা কল দিন প্লিজ।উনি যদি রেডি হয়ে এসে দেখেন আমি চলে গেছি তখন উনি মন খারাপ করবেন।
নোমান সেই কথা শুনে বললো, চুপচাপ বসে থাকো।কাউকে কিছু বলতে হবে না।আর কাল থেকে যেনো লেট না হয়।আমি কিন্তু একদিনও কলেজ মিস করি না আর এক সেকেন্ড ও লেট করে ক্লাসে ঢুকি না।ঠিক সাত টায় রেডি হয়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবে।দ্বিতীয় বার আর এসব কথা যেনো বলে দিতে না হয়।
তানিশা নোমানের এমন কথা শুনে বললো,আপনি কিন্তু আমার সাথে হুকুমদারি করছেন বা একপ্রকারের বাধ্য করছেন আপনার সাথে যাওয়ার জন্য।কিন্তু আমি আপনার হুকুম কেনো মান্য করবো?
নোমান কোনো উত্তর দিলো না।সে মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাতেই আছে।নোমানকে এমন চুপচাপ থাকা দেখে তানিশা বললো কি হলো জবাব দিন?
নোমান তখন বললো সব প্রশ্নের জবাব দেওয়া যায় না।এখন প্লিজ আর একটাও প্রশ্ন করো না।ঠিক সময়ে ক্লাসে পৌঁছতে পারবো কিনা সেজন্য টেনশনে আছি।
তানিশার তখন মনে হলো একবার কি তাকে তার বই এর ভিতর রাখা ছবিটার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবো?না আজ না।একদিন সময় বুঝে জিজ্ঞেস করতে হবে।এ রহস্য তাকে জানতেই হবে।আজ বলা যাবে না।সেজন্য তানিশাও চুপচাপ থাকলো।
নোমান একদম কলেজের সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো।আর তানিশার সিট বেল্ট খুলে দিয়ে বললো নামো এখন।আর কলেজ শেষ হওয়া মাত্র ঠিক এই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে থাকবে।
তানিশা নোমানের কথা শুনেও গাড়ি থেকে নামলো না।সে হঠাৎ নোমানকে বললো,থ্যাংক ইউ।
নোমান তানিশার মুখে থ্যাংক ইউ শুনে কিছুটা বিস্মিত হলো।হঠাৎ তানিশা থ্যাংক ইউ বললো কেনো।সে তখন হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললো,কিসের জন্য থ্যাংক ইউ বললা?
তানিশা তখন নিচ মুখ হয়ে বললো,আপনি সেদিন আমাকে সন্ত্রাসী গুলোর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন তার জন্য।
নোমান এবার না হেসে থাকতে পারলো না।সে তখন হাসতে হাসতে বললো,এতোদিন পর থ্যাংক ইউ!
–না মানে বলার সুযোগ পাই নি।আজ যখন সুযোগ পেলাম সেজন্য বললাম।
নোমান তখন বললো এখন নামো তানিশা।পরে থ্যাংক ইউ দিও।মনে হয় ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে আমার।
তানিশা এবার আর দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে ক্লাসের দিকে চলে গেলো।
ইতোমধ্যে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে।সেজন্য তানিশা শান্ত কন্ঠে বললো,মে আই কাম ইন স্যার।
স্যার তানিশাকে এতো দেরী করে আসতে দেখে বললো এতো লেট করলে কেনো আজ?তোমার তো লেট হয় না কখনো?
তানিশা সেই কথা শুনে নিচ মুখ হলো।সে কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না।
এদিকে তানিশার মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে পুরো ক্লাসের স্টুডেন্ট রা হা করে তাকিয়ে রইলো তার দিকে।
তখন স্যার বললো,যাও তাড়াতাড়ি সীটে গিয়ে বসো।তানিশা সেজন্য চুপচাপ সীটে গিয়ে বসলো।তানিশার রুমমেট রিশা আর লিরা বললো,কি হয়েছে তানিশা তোর?মাথায় আঘাত পেলি কিভাবে?
তানিশা বললো,ক্লাস শেষ হয়ে গেলে বললো।এখন চুপচাপ থাক তোরা।
তানিশাদের ক্লাস আড়াই টায় শেষ হলে যে যার মতো হোস্টেলে চলে গেলো।কিন্তু তানিশার রুমমেট রিশা আর লিরা তানিশার সাথে গল্প করতে লাগলো।তানিশা তাদের সাথে গল্প করতে করতে নোমানের কথা ভুলেই গেলো।এদিকে নোমান সেই কখন থেকে ওয়েট করছে তার জন্য।
আসলে তানিশাদের ক্লাস ঠিক আটটায় শুরু হয়।আর আড়াই টার দিকে শেষ হয়।মাঝখানে তিরিশ মিনিটের একটা ব্রেক থাকে।তবে সেই তিরিশ মিনিটের পনেরো মিনিটই আবার ক্লাসের লেকচারেই শেষ হয়ে যায়।বাকি পনেরো মিনিটি কোনো মতে তাড়াহুড়ো করে যে যার মতো খাবার খেয়ে নেয় তারা।তারপর আবার ক্লাস শুরু।কোনোরকম গল্প করার সুযোগ হয় না তাদের।
তানিশা রিশা আর লিরাকে বিস্তারিত ভাবে বলার আগেই নোমান এসে উপস্থিত সেখানে।নোমান কিছু বলার আগেই তানিশা রিশা আর লিরাকে বললো,আজ আসি রে।কাল এসে সবকিছু বলবো।এই কথা বলে তানিশা গাড়িতে গিয়ে বসলো।তারপর নোমানও চলে গেলো গাড়িতে।
হঠাৎ আমানও এসে উপস্থিত সেখানে।সেও তানিশাকে নেওয়ার জন্য এসেছিলো।নোমান আমানকে দেখতে পেয়ে আর এক সেকেন্ড লেট না করে তাড়াতাড়ি করে গাড়ি স্টার্ট দিলো।হঠাৎ তানিশা আমানকে দেখে চিৎকার করে বললো,গাড়ি থামান,গাড়ি থামান।আমান ভাইয়াকে দেখলাম।
নোমান তানিশাকে এমন চিৎকার করা দেখে বললো স্টপ!পাগলের মতো এমন চিৎকার করছো কেনো?
–না মানে আমান ভাইয়াকে দেখলাম।
–তো কি হইছে?
তানিশা এবার আর কোনো উত্তর দিলো না।আর নোমানও কোনো প্রশ্ন করলো না।কিছুক্ষন দুইজন চুপচাপ থাকলো।কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর নোমান বললো,মেয়ে দুইজন কি তোমার বান্ধুবী?
–হ্যাঁ।আমরা তিনজন এক রুমেই থাকতাম।
নোমান তখন বললো,এদের কে ছেড়ে আমাদের বাসাতে থাকতে অসুবিধা হচ্ছে না তোমার?
তানিশা নোমানের এমন প্রশ্ন শুনে বললো,হঠাৎ এ কথা বলছেন কেনো?
নোমান তখন বললো হ্যাঁ বলছি।কারণ আমার মনে হয় তোমার হোস্টেলে থাকাই বেটার হবে।আমাদের বাসায় থাকলে তুমি তেমন একটা পড়ালেখা করতে পারবে না।
তানিশা নোমানের কথা শুনে একদম কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো।নোমান এসব কি বলছে?সে তাদের বাসায় থাকছে নোমানের কি সেটা সহ্য হচ্ছে না?
তানিশা আর একটা কথাও বললো না।
নোমান তখন হঠাৎ করে বললো, তুমি কি আমান ভাইয়াকে পছন্দ করো?
তানিশা সেই কথা শুনে হা করে তাকিয়ে রইলো নোমানের দিকে।নোমান এসব কি বলছে?
নোমান তখন বললো, আমান ভাইয়া তোমাকে পছন্দ করে।মনে হয় বিয়ে করারও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সে।ভাইয়া চাকরি টা পেয়ে গেলেই প্রস্তাব পেয়ে যাবে বিয়ের।
তানিশা তখন রাগান্বিত হয়ে বললো,কি বলছেন এসব?পাগল হয়েছেন আপনি?
নোমান নিজেও তখন চিৎকার করে বললো,হ্যাঁ পাগলই হইছি।আমি চাইনা তুমি ভাইয়াকে বিয়ে করো।সেজন্য আমি চাচ্ছি তুমি থাকবে না আমাদের বাসায়।
নোমানের এমন কথা শুনে তানিশা বেশ অবাক হলো।কারণ নোমানের চেহারা স্বাভাবিক ছিলো না।সে বেশ রাগান্বিত ছিলো।রাগান্বিত হওয়ার কারণে চোখ দুইটা একদম লাল হয়ে গিয়েছে।
তানিশা এটা বুঝতে পারলো না নোমানের তাতে কি?সে এতো রাগ হয়েছে কেনো?
তানিশা তখন বললো,এতে আপনার কি সমস্যা?
কে আমাকে পছন্দ করলো?আর কে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলো তাতে আপনার কি?
নোমান তখন হাসতে হাসতে বললো,আমি জানতাম এতো বড় সুযোগ তুমি কখনোই হাতছাড়া করবে না।আসলে তোমাদের মতো মেয়েরা এমনি।বড়লোকের ছেলে পাইলে মাথা ঠিক থাকে না।নিজের যদি এতোটুকু আত্নসম্মানবোধ থাকে তাহলে আর কখনোই আমাদের বাসায় আসবে না।আমি যেনো আমাদের বাসার আশেপাশে তোমাকে না দেখি।
তানিশা এবার ভীষণ রেগে গেলো।সে তখন বললো মুখ সামলিয়ে কথা বলেন।আপনি কিন্তু তখন থেকে যা নয় তাই বলছেন।আমার কিন্তু যথেষ্ট আত্নসম্মানবোধ আছে।আর আমি যে আপনার ভাইকে বিয়ে করতে চাইবো সেটা ভাবলেন কি করে?নিজেকে কি ভাবেন আপনি?
নোমান এবার আর কিছু বললো না।তানিশা তখন বললো,গাড়িটা স্টপ করেন।আমি এখানেই নামতে চাই।নোমান তানিশার কথায় কান দিলো না।তানিশা তখন চিৎকার করে বললো,থামান বলছি।তা না হলে চিৎকার করবো কিন্তু।
নোমান এবারও চুপচাপ।
তানিশা তখন নোমানের গায়ে হঠাৎ হাত দিয়ে বললো, থামান বলছি।
নোমান এবারও চুপচাপ। তানিশা তখন রাগ করে একের পর এক মারতেই আছে নোমানকে।
তানিশা নিজেও জানে না সে কি করছে এটা।কারণ নোমানের কথাগুলো আজ ভীষণ গায়ে লেগেছে তার।
নোমান এবার হঠাৎ গাড়ি থামালো।আর বললো স্টপ!কি করছো এটা?কোন শাসনে আমার গায়ে হাত দিলে?
তানিশা এতোক্ষণে থামলো।সে আর একটি কথাও বললো না।তাড়াতাড়ি করে সিট বেল্ট খুলে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলো।
নোমান তা দেখে নিজেও নেমে গেলো গাড়ি থেকে।আর তানিশাকে বললো,গাড়িতে গিয়ে বসো।এভাবে রাস্তার মাঝখানে নামলে কেনো?
তানিশা নোমানের কথা যেনো শুনতেই পেলো না।সে হাঁটা শুরু করে দিলো।নোমানও পিছু পিছু গেলো।আর তানিশার হাত ধরে টেনে তার কাছে এনে বললো,এখন তুমি আমার সাথে আমাদের বাসায় যাবে।তারপর কাল সবাইকে জানিয়ে দেবে তুমি থাকবে না আমাদের বাসায়।এখন এই মুহুর্তে চলে গেলে বাসার লোক নানা ধরনের প্রশ্ন করবে।
তানিশা নোমানের হাত এক ঝাটকায় ফেলে দিয়ে বললো,না আমি এখনি যাবো।আপনাদের বাসায় যাওয়ার আর বিন্দুমাত্র রুচি নাই আমার।দয়া করে ছেড়ে দিন আমার হাত।
নোমান আর বেশি কথা বললো না।কারণ সে এতো কথা বলা মোটেও পছন্দ করে না।সেজন্য সে তানিশাকে কোলে উঠিয়ে নিলো।আর গাড়ির দিকে চলে গেলো।তানিশা নোমানের এমন বাড়াবাড়ি দেখে চিৎকার করে বললো,
আপনি কি শুরু করেছেন বলেন তো?আপনি যখন তখন আমাকে ধরছেন।আবার কোলে তুলে নিতেও দ্বিধাবোধ করছেন না।এতোদিন তো আপনাকে অনেক ভদ্র ছেলে ভাবতাম।কিন্তু আপনি তো এক নাম্বারের লুচ্চা ছেলে।তা না হলে এভাবে একটা মেয়েকে ধরার সাহস হতো না আপনার।
তানিশার এমন কথা শুনে নোমানের মাথায় যেনো আগুন উঠে গেলো।সে৷ রাগে দাঁত কিটমিটাতে লাগলো।তবুও সে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলো। কারণ আশেপাশে অনেক মানুষ জন।বেশি ঝামেলা করলে লোকজন সন্দেহ করতে পারে।সেজন্য সে তানিশাকে গাড়িতে নিয়ে গিয়ে বসালো।আর আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো।
তানিশা নিজেও এবার চুপচাপ থাকলো।তবে সে স্পষ্ট বুঝতে পারলো নোমান তাকে ভালোবাসে।তা না হলে সে এমন রিয়্যাক্ট করছে কেনো?তবে তানিশা সিদ্ধান্ত নিলো সে আর সত্যি সত্যি থাকবে না তাদের বাসায়।নোমান যখন নিজের মুখেই বলে দিলো তাহলে সে কোন লজ্জায় সে বাসায় থাকবে?
অন্যদিকে তানিশার বাবা এখনো নোমানের বাসাতেই আছে।কারণ তায়েব চৌধুরী কিছুতেই যেতে দিচ্ছে না তাকে।ভীষণ আদর যত্ন শুরু করে দিয়েছেন তিনি।তায়েব চৌধুরী তার ব্যবসা বানিজ্য সব ঘুরে ঘুরে দেখাতে লাগলেন তহিদুল সাহেব কে।কারণ তায়েব চৌধুরী নিজেও তানিশাকে তাদের বাসার বউ করতে চায়।তায়েব চৌধুরীর শুরু থেকেই ভীষণ ইচ্ছা ছিলো তানিশাকে তিনি তার বড় ছেলের বউ বানাবেন।তানিশার আচার আচরণ কথাবার্তা খুবই ভালো লাগে তায়েব চৌধুরীর।তিনি মনে করেন তার বাসার বড় বউ হিসেবে তানিশাকে বেশ মানাবে।
#চলবে,