ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব-১০+১১

0
1506

#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_১০(বোনাস_পর্ব)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

তন্নি দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে তার মা আর মামার সব কথা শুনে ফেললো।সে তো ভাবতেই পারছে না এইভাবে তার মনের আশা এতো সহজে পূরণ হয়ে যাবে।নোমানকে সে সারাজীবনের জন্য আপন করে পাবে ভাবতেই তার পুরো শরীর কম্পিত হতে লাগলো।বুকের ভিতর ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেলো।এখন সে কি করে নোমানকে ভাইয়া বলে ডাকবে আর কি করেই বা তার সামনে যাবে?বিয়ে না হতেই কেমন যেনো লজ্জা লজ্জা লাগছে তার!

ঠিক সেই সময়ে নোমান এলো তন্নির কাছে।আর বললো তন্নি তুই কি আমান ভাইয়ার সাথে একাই যেতে পারবি?তোর সাথে আর একজন গেলে ভালো হতো না?

তন্নি নোমানের কথা শুনে আরো বেশি লজ্জা পেলো।সে বুঝতে পারলো নোমানও তাদের সাথে যেতে চাচ্ছে।কিন্তু সেটা পরিষ্কার করে বলছে না কেনো নোমান?তাহলে কি নোমানও তাদের দুইজনের বিয়ের কথা জানে?

–কি হলো তন্নি?ওভাবে হা করে কি দেখছিস আমাকে?দেখিস নি কোনোদিন?

তন্নি নোমানের কথা শুনে হেসে উঠে নিচ মুখ হলো।সে কি করছে এটা?এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো নোমানের দিকে?

নোমান তন্নিকে এমন করা দেখে তার কাছে এসে তার মাথায় টেলা দিয়ে বললো,কি রে তোর হয়েছে টা কি?
এমন বিহেভ করছিস কেনো?
না বিয়ে বাড়ি যাবার আনন্দে পাগল টাগল হয়ে গেলি?

তন্নি সেই কথা শুনে হঠাৎ দৌঁড়ে সেখান থেকে চলে গেলো।

অন্যদিকে নোমান বেচারা মনে মনে বলতে লাগলো,যাকেই বোঝাতে যাচ্ছি সেই বুঝতে পারছে না তাকে।কারো কি বোঝার ক্ষমতাই নাই তাকে।তার মনের কথা কেউ কি বুঝতে পারছে না?নোমান তখন উপর দিকে তাকিয়ে বললো,
One’s unlucky, Always unlucky(অভাগা যেদিকে চায়,সাগর শুকিয়ে যায়)

নোমানকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে হঠাৎ তাহমিনা চৌধুরী আসলো সেখানে,আর বললো, বাবা নোমান আজ তুমি ওয়ার্ডে যাবে না?

–না ফুপি।আজ কেনো জানি ভালো লাগছে না।

–কেনো?কি হয়েছে?শরীর খারাপ লাগছে?এই বলে তাহমিনা নোমানের কপালে হাত দিয়ে চেক করতে লাগলো।আর বললো,না তো,সব কিছু তো ঠিকই আছে।তা বাবা কেনো তোমার এতো খারাপ লাগছে আজ?

নোমান তখন তাহমিনা চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরে বললো, জানি না ফুপি।আজ কেনো জানি কিছুই ভালো লাগছে না।ইচ্ছে করছে দুই তিন দিনের জন্য কোথাও গিয়ে ঘুরে আসি।আর সারাক্ষণ বই নিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না।

তাহমিনা চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, তাহলে তন্নির সাথে তুমিও যাচ্ছো না কেনো?

নোমান তাহমিনা চৌধুরীর কথা শুনে যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে গেলো।খুশিতে তার চোখমুখ একদম গদগদ হয়ে গেলো। তখন সে মনে মনে ভাবলো,কেউ যেতে বললে তো সে যাবে।কিন্তু কেউ তো বলছেই না যেতে।
যাক অবশেষে কেউ একজন বুঝতে পারলো তার মনের কথা।

–কি হলো নোমান?কি এতো ভাবছো?এতো ভেবে লাভ নাই।যাও তন্নির সাথে একটু বিয়ে বাড়ি থেকে ঘুরে আসো।দেখবে মনটা একদম ভালো হয়ে যাবে।তাছাড়া কখনোই তো তুমি গ্রামের বিয়ে বাড়িতে যাও নি।গ্রামের বিয়ে বাড়িতে কিন্তু অনেক মজা হয়।একবার গেলে বার বার যেতে চাইবে।

নোমান বেশি আগ্রহ প্রকাশ করলো না।কারণ বেশি আগ্রহ দেখালে তার ফুপি ভাববে সে আগে থেকেই যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।তবে নোমান তার ফুপির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো আর একবার ভালো করে বলো ফুপি।আরেকটু জোর করো আমাকে।তুমি না বললে আর কেউ বলবে না।আমার যে খুব বেশি দেখতে ইচ্ছে করছে তানিশাকে।সরি,সরি তানিশার গ্রামকে।কি ভাবছি এসব ভুলভাল আমি।

তাহমিনা চৌধুরী হঠাৎ আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলেন।নোমান বুঝতে পারলো না কিছু।আদৌ কি তার যাওয়া হবে?ফুপি কি তার যাওয়ার একটা ব্যবস্থা করে দেবে?

রাতের বেলা সবাই যখন একসাথে খাবার খাচ্ছিলো হঠাৎ নোমানকে খাবার টেবিলে দেখে তায়েব চৌধুরী বললেন,
নোমান তুমি আজ ওয়ার্ডে যাও নি?

–না বাবা।

–কেনো?

–আজ যেতে ইচ্ছে করলো না।

–হ্যাঁ ঠিক করেছো না গিয়ে।মাঝে মাঝে একটু বিরতি নেওয়ারও দরকার আছে।তুমি তো পড়াশোনার বাহিরে আর কিছু ভাবতেই চাও না।

–জ্বি বাবা।নোমান কিছুক্ষন তার বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো, যদি তার বাবা নিজের মুখে তানিশাদের বাড়ি যাওয়ার কথা বলে।কিন্তু তায়েব চৌধুরী আর একটা কথাও বললেন না।আপন মনে খাবার খেতে লাগলেন।

কিন্তু নোমান যখন দেখলো রাত পেরোলেই ঠিক ভোরে আমান আর তন্নি বের হবে বাসা থেকে,আর এখন পর্যন্ত কেউ তার যাওয়ার ব্যাপারে সিরিয়াস হলো না তখন নোমান রাগ করে খাওয়া বাদ দিয়ে টেবিল থেকে উঠে গেলো।
কিন্তু তাতেও কেউ কিছু বললো না।শুধু তার বাবা বললো,এই নোমান, খাওয়া বাদ দিয়ে যাচ্ছিস কেনো?ব্যাস,এইটুকুই।সেজন্য নোমান বুঝতে পারলো তার যাওয়া অনিশ্চিত। আর আশা করে লাভ নেই।

নোমান সারারাত ছটফট করতে করতে পার করে দিলো।এক ফোঁটা ঘুম এলো না তার চোখে। সে বুঝতে পারছে না তার এমন হচ্ছে কেনো?কেমন যেনো শূন্য শূন্য লাগছে সবকিছু।তার মনের অবস্থা প্রকাশ করার ক্ষমতা সত্যি তার নেই।যদি প্রকাশ করতে পারতো তাহলে বোধহয় এতো অসহায় লাগতো না তাকে।সারারাত নির্ঘুমে কাটিয়ে দিলো সে।

তন্নি ঠিক ভোর পাঁচটায় উঠলো।আমানও উঠেছে।দুইজন একদম পুরোপুরি রেডি।তন্নি পড়েছে সাদা আর লালের কম্বিনেশনে হাতের কাজ করা সুন্দর একটি থ্রি পিচ।সে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়তে চাইছিলো কিন্তু তার মা বারণ করে দিলো বিধায় এই ড্রেস টা পড়েছে সে।তন্নির গায়ের কালার কিন্তু লাল ফর্সা।বেশি ধবধবে সাদা নয় সে।তবে তার চেহারায় একটা আলাদা মাধুর্য আছে।কারণ হাসলে গালে একটা টোল পড়ে।উচ্চতা ৫” ৩ এর মতো হবে।চুলগুলো বেশি বড় না।সেজন্য চুল গুলো বেশিরভাগ সময় সে খুলেই রাখে।আজ তন্নিকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছিলো।অন্যদিকে আমান পড়েছে আকাশী কালারের শার্টের সাথে ধূসর কালারের নরমাল প্যান্ট।সাথে আবার কালো সানগ্লাস।আমান বেশিরভাগ সময় নরমাল প্যান্টই পড়ে।কারণ সে তার বেশি উচ্চতার কারণে মন মতো প্যান্ট খুঁজে পায় না।আমানের উচ্চতা ফুল ৬ ফুট।অনেক বেশি লম্বা হওয়ার কারণে তাকে তালগাছের মতো দেখা যায়।

তন্নি আর আমান দুইজনই যখন তাদের লাগেজ নিয়ে বের হচ্ছিলো ঠিক তখনি দেখে নোমান নিজেও একদম সেজেগুজে দাঁড়িয়ে আছে।সাদা কালারের শার্ট সাথে আবার টাইট ফিটিং জিন্সের প্যান্ট পড়েছে সে।আর চোখে তার ডেইলি ব্যবহারের সেই চারকোনা ফ্রেমের অবতল লেন্সের মাইনাস পাওয়ারের চশমা।নোমান চশমা ছাড়া দূরের জিনিস ঝাপসা দেখে যার কারণে সবসময় তাকে চশমা পড়েই থাকতে হয়।নোমানের উচ্চতা ৫” ১০. আমানের থেকে দুই ইঞ্চি শর্ট হওয়ায় আমান সবসময় তাকে বেটে বলে ক্ষেপায়।আর কানা কানা করে তার কান একদম ঝালাপালা করে দেয়।

আমান আর তন্নি বেশ অবাক হলো নোমানকে দেখে।তারা বিস্ময় ভরা চোখ নিয়ে দুইজন দুইজনার দিকে তাকাতেই তায়েব চৌধুরী এসে বললেন, তোমরা রেডি?যাও তাড়াতাড়ি গাড়িতে গিয়ে বসো।

তন্নি আর আমান সেই কথা শুনে গাড়ির দিকে চলে গেলেও নোমান তার জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রইলো।
তায়েব চৌধুরী তখন বললো, কি হলো নোমান?তুমি যাচ্ছো না কেনো?নোমান তখন একটু ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো,বলছি তো আমি যেতে চাই না।আমার ভালো লাগে না কোনো অনুষ্ঠানে যেতে।
তায়েব চৌধুরী তখন বললো, বাবা জিদ করো না এমন।তুমি না গেলে তানিশার বাবা ভীষণ মন খারাপ করবেন।আমিও যাচ্ছি না, অন্তত তোমরা তিনজন যাও।তবুও একটু খুশি হবেন তিনি।

আসলে তহিদুল সাহেব সকালবেলা আবার ফোন করেছিলো তায়েব চৌধুরী কে।তারা কখন বের হবেন জানার জন্য?
কিন্তু তায়েব চৌধুরী যখন বললো তিনি যাচ্ছেন না তন্নি আর আমান যাচ্ছে তখন তহিদুল সাহেব বললেন,শুধু আমান আর তন্নি কেনো?নোমান বাবাজিকেও পাঠিয়ে দিয়েন।সেই কথা শুনে তায়েব চৌধুরী বললেন ঠিক আছে।আর সেজন্য তিনি সকাল সকাল নোমানকে ডেকে দিয়েছেন।
নোমান তো জেগেই ছিলো।সেজন্য তার বাবার এক ডাকেই সে উঠে পড়েছে।আর তানিশার বাড়ি যাওয়ার কথা শুনে এক লাফে বিছানা থেকে নেমে রেডি হয়ে তার কাপড়চোপড় প্যাক করাও শেষ করেছে।

এখন যাওয়ার সময় হয়ে গেছে তাদের।এতোক্ষণ দিয়ে নোমান বলতেছে,বাবা আমাকেও যেতে হবে?আমি না গেলে হয় না?

তায়েব চৌধুরী তখন বললো, আবার সেই একই কথা।যাও গাড়িতে গিয়ে বসো।
এদিকে নোমানের মনে তো খুশির ঠেলায় লাড্ডু ফুটতেছে।

নোমান গাড়িতে বসতেই আমান বললো,মুখখানা ওমন ভার করে আছিস কেনো?এভাবে জোর করে যাওয়ার কি দরকার ছিলো?যেতে যখন মন চাইছেই না তাহলে যাস না।তাই না তন্নি?

তন্নি সেই কথা শুনে হেসে উঠে নিচমুখ হলো।কারন নোমানের মুখ খান দেখে সত্যি তার হাসি পাচ্ছে।কেমন হুতুম প্যাঁচার মতো চুপটি করে বসে আছে।বোঝাই যাচ্ছে তাকে জোর করে পাঠানো হচ্ছে।
নোমান মনে মনে ভাবতেছে তার ডাক্তার হওয়ার পাশাপাশি সে এক্টর হলেও ভালো কিছু করতে পারতো।কি মারাত্মক রকমের এক্টিং জানে সে?একদম নিঁখুত অভিনয়।বোঝাই যাচ্ছে না মনে মনে সে খুশির ঠেলায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।তার মন শুধু বলছে কখন বের হবে তানিশাদের বাড়ি।আর কখন সে তানিশাকে দেখতে পাবে।সরি তানিশার বড় বোনকে।যার বিয়ে তে সে যাচ্ছে।

নোমানের মনে বার বার তানিশার কথা কেনো আসছে সত্যি সে বুঝতে পারছে না।
সে তো তানিশার গ্রাম,এলাকা,এলাকার মানুষ জন কে দেখতে যাচ্ছে।তানিশা কে দেখার মোটেও ইচ্ছে নাই তার।

নোমানকে এমন বিড়বিড় করা দেখে আমান বললো,কি রে পড়া মুখস্ত করছিস নাকি?তা দুই চারখানা বই সাথে নিলেও তো পারতিস।তাহলে এভাবে বিড়বিড় করা লাগতো না।আমরা বিয়ে বাড়িতে মজা করতাম আর তুই বই হাতে নিয়ে বিড়বিড় করে পড়তিস।
তন্নি আমানের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো।

ঠিক তখনি নোমান তার ব্যাগের চেন খুলে সত্যি সত্যি একটা বই বের করলো।আর চুপচাপ দেখতে লাগলো।

আমান নোমানকে এভাবে বই পড়া দেখে বললো,তুই ভালো হবি না জীবনে?তুই সত্যি সত্যি বই নিয়ে এসেছিস?বিয়ে বাড়িতে বই নিয়ে যেয়ে কি করবি?

–ভাইয়া ডিস্টার্ব করো না প্লিজ।আমার বিষয় আমাকেই ভাবতে দাও।

আমান সেই কথা শুনে কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে গান শুনতে লাগলো।
আর তন্নিকে চুপচাপ থাকা দেখে বললো, তুই বসে আছিস কেনো?তুই ও বই বের করে পড়া শুরু কর।

তন্নি সেই কথা শুনে বললো না আমি পড়বো না।

–তাহলে গান শোন।এই বলে আমান আরেকটা ইয়ার ফোন তন্নির দিকে ছুঁড়ে মারলো।

নোমান বই হাতে আর আমান,তন্নি গান শুনতে শুনতে পাঁচ ঘন্টার রাস্তা পারি দিলো।তারা সাতটায় গাড়িতে উঠে ঠিক বারোটায় তানিশাদের গ্রামে পৌঁছলো।কিন্তু তানিশাদের বাড়ির রাস্তা আসলে কোনটা সেটা বুঝতে পারলো না কেউ।তানিশা আজ যেহেতু একটু ব্যস্ত সেজন্য তারা তাকে ফোন করে আর বিরক্ত করলো না।

আমান এবার ড্রাইভার কে গাড়ি থামিয়ে দিতে বললো আর জানালা খুলে উঁকি মেরে লোকজন খুঁজতে লাগলো।হঠাৎ একদল পিচ্চি ছেলে গাড়ি দেখে এগিয়ে আসলে আমান বললো,তানিশাদের বাড়ি কোনটা?

তখন এক পিচ্চি বললো কোন তানিশা?
তখন ঐ দলেরই অন্য আরেক পিচ্চি আবার আরেক পিচ্চিকে বলছে,মনে হয় ডাক্তার ম্যাডামের কথা কচ্ছে।

আমান ডাক্তার ম্যাডাম নাম শুনে বললো হ্যাঁ হ্যাঁ ডাক্তার ম্যাডামের বাড়ি।
আসলে তানিশাকে যে তার এলাকার সবাই এখন ডাক্তার ম্যাডাম নামে চেনে সেটা আমান ভালো করেই জানে।তন্নিও জানে এটা।কারণ তানিশা নিজেই এ কথা বলেছে তাদের।সেজন্যই তো আমান ফেক আইডি দিয়ে মেসেজ দেওয়ার সময় ডাক্তার ম্যাডাম সম্বোধন টি ব্যবহার করেছিলো।

তবে নোমান আজ দিয়ে ফাস্ট শুনলো যে তানিশাকে সবাই ডাক্তার ম্যাডাম বলে ডাকে।নোমান তখন মনে মনে ভাবতে লাগলো ফাইনাল ইয়ারে উঠেও আজ পর্যন্ত কেউ তাকে বললো না এই ছেলেটি ডাক্তার হতে চলেছে, আর তানিশা ফাস্ট ইয়ারেই ডাক্তার ম্যাডামের উপধি পেয়ে গেছে!সত্যি মেয়েটা সৌভাগ্যবান।

পিচ্চি ছেলেগুলোর সহায়তায় নোমানরা তানিশার বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগলো। গাড়ি নিয়ে গ্রামের ভিতর ঢোকা যাবে না বলে।কারণ গ্রামে ঢোকার রাস্তাটি ভীষণ চিকন ছিলো। সেজন্য তারা এখানেই নেমে গেলো।আর ড্রাইভার গাড়িটি একটা প্রাইমারি স্কুলের মাঠে পার্কিং করলো।

তানিশাদের গ্রামের নাম ছিলো সুন্দর পুর।আসলেই গ্রামটি ভীষণ সুন্দর।সেজন্যই বোধ হয় এ গ্রামের নাম সুন্দরপুর রাখা হয়েছে। গ্রামের পাশেই রয়েছে একটি বড় ঝিল।যাতে নানা রকমের পদ্ম আর শাপলা ফুটে আছে।গ্রামের চারপাশে রয়েছে সবুজের মেলা।বিভিন্ন রকমের ফলমূলের গাছ,শাকসবজি,আর হরেক রকমের পাখির ডাক গ্রামটিকে করে তুলেছে যেনো এক শান্তির দ্বীপ।বিশাল এক ফলের বাগানের মধ্য দিয়ে তারা তানিশার বাড়িতে ঢুকলো।এই ফলের বাগানটি ছিলো তানিশার বাবার।এই বাগানে খেলাধুলা করেই তানিশার শৈশব কেটে গেছে।তানিশা তাদের গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা করেছে আর নিকটতম এক হাইস্কুলে তার মাধ্যমিক লেভেল পার করেছে।কিন্তু তহিদুল সাহেব যখন দেখলেন তার মেয়ে যথেষ্ট মেধাবী আর পড়াশোনায় ভীষণ মনোযোগী তখন তিনি তানিশাকে ঢাকার কলেজে ভর্তি করার জন্য সিদ্ধান্ত নেন।ঢাকার কলেজে ভর্তি হয়েই তানিশা আজ এতোদূর পর্যন্ত আসতে পেরেছে।

#চলবে,

#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_১১
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

কবে যে কন্যার হাতটি
আমার হাতে রাখিবে
সেদিন দুটি মনের ভেতর লাড্ডু ফুটিবে
হলুদ বাঁটো, মেন্দি বাঁটো, বাঁটো ফুলের মৌ,
বিয়ের সাজে সাজবে কন্যা নরম নরম বউরে
|
|

লীলাবালি লীলাবালি
বড় যুবতী সই গো
বড় যুবতী সই গো
কি দিয়া সাজাইমু তোরে
|
|
উঠ চুরি তোর বিয়ে হবে , ঘুমটা মাথায় দিয়ে হবে ,

উঠ চুরি তোর বিয়ে হবে , শাজনা তলায় গিয়ে হবে ,

উঠ চুরি তোর বিয়ে হবে রে, বিয়ে হবে রে …
|
|
তিন চার টা সাউন্ড বক্স সেট করা হইছে।একেক টা বক্স থেকে একেক রকম মিউজিক বাজছে।বোঝাই যাচ্ছে এটাই সেই বিয়ে বাড়ি।এবার আর নোমানদের বলে দিতে হবে না কোনটা তানিশাদের বাড়ি?
গান বাজনা শুনে মনে হচ্ছে আজকেই বিয়ে হচ্ছে।আসলে এটাই হলো বিয়ে বাড়ির আসল মজা।বিয়ের দুই তিন দিন আগে থেকেই সবাই গান বাজিয়ে মজা করতে থাকে।

নোমানরা বাড়ির ভিতর ঢুকতেই দেখে বিশাল বড় একটা বিয়ের গেট বানানো হয়েছে। আর তাতে বড় করে লেখা তানিয়ার শুভ বিবাহ।নোমানরা বাড়ির ভিতর পা দিতেই পিচ্চি ছেলেগুলো চিৎকার করে বলতে লাগলো ডাক্তার ম্যাডামের শহরের বন্ধু বান্ধবরা এসেছে।

মুহুর্তের মধ্যে সবাই তাদের দেখার জন্য ঘিরে ধরলো।গ্রামের আরো অনেক পিচ্চি পিচ্চি পোলাপান তো আছেই তার সাথে মহিলা গুলোও ভীড় ধরলো।সবার এমন কৌতুহল দেখে নোমান, তন্নি আর আমান বেশ অবাক হলো।মনে হচ্ছে তারা কোনো সেলিব্রিটি। তাই তাদেরকে এভাবে দেখছে।আসলে গ্রামের মানুষ রা খুবই সহজ সরল আর ভালো মনের হয়।যার কারণে তাদের মনে কোনোরকম হিংসা থাকে না।তাছাড়া শহর থেকে কেউ গ্রামে এলে তারা খুব কৌতুহল নিয়ে দেখতে আসে তাদের।কিন্তু শহরের লোক তো অহংকারের জন্য কেউ কারো বাসায় যাওয়া দূরের কথা দেখলেও কথা বলে না।আর এভাবে তো জীবনেও ঘীরে ধরে থাকবে না।

নোমানরা বুঝে গেলো তারা আসায় বেশ খুশিই হয়েছে সবাই।

হঠাৎ ভিড় ঠেলে তানিশা প্রবেশ করলো আর তন্নিকে দেখামাত্র জড়িয়ে ধরে বললো, আসতে কোনো সমস্যা হয় নি তো?
তন্নি নিজেও বেশ খুশি হলো তানিশাকে দেখে।সেও ভালোভাবে জড়িয়ে ধরে বললো,না হয় নি।আমরা একদম সুস্থ আর নিরাপদ ভাবেই পৌঁছে গেছি।

দুই বান্ধবীর এমন জড়াজড়ি দেখে নোমান আর আমান হা করে তাকিয়ে থাকলো।হয় তো দুইজনই মনে মনে ভাবছে তাদের যদি এভাবে কেউ একটু জড়িয়ে ধরতো।কিন্তু তাদের কি সেই কপাল আছে।তারা দুইজনই মনে মনে ভাবতে লাগলো,আহা! কি মহব্বত দুই বান্ধবীর মধ্যে।কবে যে এমন মহব্বত আমাদের মধ্যে হবে?

তানিশা এবার তন্নি কে ছেড়ে দিয়ে বললো,চলো সবাই, রুমে গিয়ে বসো।আগে ফ্রেশ হয়ে নিতে হবে।
আমান আর তন্নি সেই কথা শুনে রুমের ভিতর চলে গেলো।কিন্তু নোমান তার জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রইলো।
সে একটু তানিশার মুখ থেকে কথাটা আলাদা ভাবে শুনতে চাইছিলো।তানিশা তাকে নিজের মুখে বলুক আপনি ওভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?রুমে চলুন।

তানিশা আগে আগে রুমে চলে গেলো ।তার পিছু পিছু আমান আর তন্নি গেলো রুমে।তানিশা যখন দেখলো নোমান আসে নি,সে তখন বাহিরে তাকালো।সে দেখলো নোমান দাঁড়িয়েই আছে বাহিরে।তখন তানিশা নোমানের কাছে গিয়ে বললো,

আপনাকে কি রুমে আসার জন্য আবার আলাদা করে বলতে হবে?

নোমান কোনো উত্তর দিলো না।সে তখন ভদ্র ছেলের মতো নিচ মুখ হয়ে চলে গেলো রুমে।
তবে অনেকদিন পর তানিশাকে দেখতে পেয়ে কেমন যেনো অন্যরকম এক অনুভূতি হলো নোমানের।বুকের যে পাশ টা খালি খালি লাগছিলো তা মুহুর্তের মধ্যে যেনো পূরণ হয়ে গেলো।হার্টবিট তো সেই হারে উঠানামা করছে তার।নিজেকে আগের থেকে একটু স্ট্রং ও মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে সে যেনো এক নতুন শক্তির সন্ধান পেয়ে গেছে।
এটাও কি সম্ভব?এতোদিন কেমন যেনো তাকে অসহায় অসহায় লাগছিলো।আর আজ হঠাৎ এই মেয়েকে দেখার পর এতো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছে নিজের মধ্যে সে। নোমান কি তাহলে সত্যি সত্যি প্রেমে পড়ে গেছে।কিন্তু সে তো প্রেম ভালোবাসায় বিশ্বাস করে না।তাহলে এটা কিসের অনুভূতি?আচ্ছা যদি সে তাকে না পায়,তাহলে কি সারাজীবন এমন শূন্য শূন্য লাগবে তার?
না,না কিছুতেই সে এটা হতে দিতে পারে না।যে করেই হোক এই শূন্যস্থান তাকে পূরণ করতেই হবে।

এদিকে তানিশা হাত নেড়ে নেড়ে তন্নির সাথে কথা বলছে।মনের সুখে নানা ধরনের গল্প করছে।আমানও সেই সুযোগে তাল মিলাচ্ছে।তানিশার সাথে ভাব জমানোর ট্রাই করছে।যদিও আগে থেকেই তানিশার সাথে তার বেশ ভালো সম্পর্ক। কিন্তু এখন সে তো সেই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে নতুন আরেক সম্পর্ক গড়ার স্বপ্ন দেখছে।বেচারা তো ভেবেই নিয়েছে তানিশার সাথে তার সত্যি সত্যি বিয়ে হবে।কারণ তার বাবা যে নিজের মুখে বলেছে কিছুদিনের মধ্যেই তিনি তানিশার বাড়ি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবেন।

নোমান অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো তানিশার দিকে।তার কেনো জানি আজ ইচ্ছা করছে তানিশার হাত দুটি শক্ত করে ধরে রাখতে।তারপর সেই হাত দুটি তার বুকে রেখে বলতে,
তানিশা তুমি কি কিছু শুনতে পারছো?যদি সত্যি কিছু শুনতে পাও তাহলে প্লিজ আমাকে আর কষ্ট দিও না।আমি এখন তোমাকে না দেখলে এক মুহুর্ত ও থাকতে পারছি না।এ কোন মায়ায় জড়ালে আমাকে?

অন্যদিকে তন্নি ভাবছে নোমান বোধহয় তাকেই দেখছে।সেজন্য সে সাথে সাথে তার চোখ ফিরিয়ে নিলো আর মনে মনে ভাবতে লাগলো,এতো লোকের সামনে এভাবে দেখার কি মানে?আর কিছুদিন পরে আর এভাবে দূর থেকে দেখতে হবে না।দুইজন সামনাসামনি আর পাশাপাশি থাকবো সারাক্ষণ!

ভালোবাসা গুলো মনে হয় এমনি হয়।কার প্রতি কার কখন ভালোবাসা জন্মে সেটা কেউ বলতে পারে না।আর যখন কেউ কাউকে ভালোবাসে সে তখন শুধু তাকে নিয়েই ভাবতে থাকে।আর দুইজনের জন্য মনে মনে এক নতুন জগত তৈরি করে ফেলে।সেই জগতে সবসময় শুধু তাদের দুইজনকেই নিয়ে কথা হয়,তৃতীয় পক্ষের কোনো জায়গা থাকে না সে জগতে।

পিচ্চি ছেলেমেয়ে আর মহিলাদের কিচিরমিচির আওয়াজে সবাই সবার কল্পনার রাজ্য থেকে ফিরে এলো।কারণ পুরো বাড়ি লোকে গমগম করছে।আত্নীয় স্বজন দিয়ে ভরে গেছে পুরো বাড়ি।
সেজন্য আজ তানিশাদের বাড়িতে একটা রুমও ফাঁকা নেই।সব রুম আত্নীয় স্বজনরা ব্লক করে রেখেছে।তবে তানিশা দুইটা রুমে আগে থেকেই তালা দিয়ে রেখেছিলো নোমানদের জন্য।

তানিশা এবার সবাইকে তার রুমে নিয়ে গেলো।সবাই তানিশার রুমটি এক নজরে দেখে নিলো।
রুমের ভিতরের দেয়ালে গোলাপি রঙ করা।আর সাদা কালারের ছাদ।তানিশাদের বাড়িটি ইটের তৈরি আর ঘরের উপরে রঙিন টিন লাগানো।বোঝাই যাচ্ছে এ বাড়ির লোকজন খুব সৌখিন।ঘরের বাহিরের দেয়াল সাদা কালারের হলেও একেক রুমে একেক কালার করা।তানিশার রুমের সাথের বারান্দার সাইটে সুন্দর একটা ফুলের বাগান ও আছে।আর পুরো বাড়ি উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা।

তানিশাদের বাড়ি দেখে সবার চোখ যেনো জুড়িয়ে গেলো।শহরের দশ পাঁচতলা বিল্ডিং এর থেকেও গ্রামের বাড়িগুলো সত্যি চমৎকার। তবে সবার বাড়ি এরকম সুন্দর না।যে যার রুচিমতো তাদের বাড়িটা সাজিয়ে নিয়েছে।

তানিশার রুমে বেশি ফার্নিচার নাই।শুধু একটা সিংগেল বক্স খাট, একটা পড়ার টেবিল।আর কাপড় রাখার জন্য ওয়ারড্রব আর আলনা।
তানিশার বাবা তহিদুল সাহেব হলেন এলাকার একজন নামকরা ব্যক্তি যাকে এক নামে সবাই চেনে।কারণ তানিশার বাবার অনেক জমিজমা আছে গ্রামে।গ্রামের অর্ধেক জমিই মনে হয় তাদের।জমিগুলো অবশ্য তহিদুল সাহেব নিজে করেন নি,পৈত্রিক সূত্রে পেয়েছেন।তানিশার নিজের কোনো ভাই নাই।তবে চাচাতো,ফুফাতো,মামাতো অনেক ভাই ই আছে।

এবার তানিশার মা শিউলি বেগম সবার জন্য ঠান্ডা ঠান্ডা কিছু ফলের জুস নিয়ে এলেন।যাতে করে এই গরমে সবাই একটু সতেজ অনুভব করে।তানিশার মায়ের সাথে তার দাদীও এসেছেন।ওনার হাতে ছিলো হরেক রকমের নাস্তার ট্রে।

তানিশা তার মা আর দাদীকে দেখিয়ে দিয়ে বললো,
ইনি হলেন আমার মা,আর ইনি হলেন আমার দাদী।

তন্নি, আমান আর নোমান সেই কথা শুনে একসাথে উঠে সালাম দিলো তানিশার মা আর দাদীকে।

তানিশার মা সালামের উত্তর নিয়ে বললো,বসো বসো।দাঁড়ালে কেনো?
সেই কথা শুনে সবাই বসে পড়লো।
তানিশার দাদী তখন বললো,তোমাদের কথা অনেক শুনেছি তানিশার কাছে।তানিশা বাড়ি আসলে শুধু তোমাদের কথাই বলে।তন্নির কথা তো সবসময়ই বলে,তার সাথে নোমানের কথাও খুব বলে।কে সেই নোমান?সারাক্ষণ নাকি শুধু সে পড়ালেখাই করে।

তানিশার দাদীর কথা শুনে তন্নি আর আমান চোখ বড় বড় করে নোমানের দিকে তাকালো।

অন্যদিকে নোমান তো তানিশার দাদীর কথা শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।সে তানিশার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,আমাকে নিয়ে তাহলে বাসায় আলোচনাও করা হয়,তলে তলে এতোদূর।তাহলে আমার মতো নিশ্চয় তুমিও জ্বলছো!বুঝতে দেবে না তো!তবে আমি নোমান পারি না এমন কোনো কাজ নেই।তোমার মুখ দেখে কথা বের করবো তো ছাড়বো।বাসায় যখন আমার গল্প করেছো তাহলে ঠিক তোমার মনেও কিছু চলছে।

এদিকে তানিশা তার দাদীর কথা শুনে ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলো।তার দাদী সবার সামনে কি বললো এটা?এইভাবে তার মানসম্মান শেষ করে দিলো?তানিশা আর কারো দিকে তাকানোর সাহস পেলো না।বিশেষ করে নোমানের দিকে তো নয় ই।

আমান এবার দাদীকে আলাদা ভাবে আবার সালাম দিয়ে বললো,দাদী আমি আমান।আর এ হলো আমার ছোটো ভাই নোমান।
দাদী সেই কথা শুনে বললো ও,তুমি আমান?তোমার কথাও বলেছে আমাদের।

–ও তাই?তা কি বলেছে আমার কথা?এই বলে আমান তানিশার দিকে তাকালো।

তানিশা তো পড়ে গেলো মহা ঝামেলার মধ্যে।দাদী কি শুরু করেছে এসব?

দাদী আমানের সম্পর্কে কিছু বলার আগেই তানিশা বললো, দাদী সবার হাতে এবার ঠান্ডা ঠান্ডা জুস টা দিয়ে দাও তো।গল্প করার অনেক টাইম পাবে।তা না হলে ঠান্ডা জুস গরম জুস হয়ে যাবে।যে গরম পড়েছে।

দাদী সেই কথা শুনে নিজেই সবার হাতে হাতে ফলের জুস তুলে দিলেন।আর সবাই সাথে সাথে পান করা শুরু করে দিলো।কারণ সবার গলা একদম শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।কিন্তু নোমান জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে বসে আছে,সে একবারও চুমুক দিলো না।

তানিশা খেয়াল করলো ব্যাপারটা।তবে সে কিছু বললো না।কারণ সবার সামনে নোমানের সাথে এতো বেশি আন্তরিকতা দেখানো যাবে না, তা না হলে সবাই অন্যকিছু ভাববে।কারণ তার মনেও যে নোমানের প্রতি অনেক বেশি ফিলিংস আছে,তার সাথে আছে অতিরিক্ত মাত্রার দূর্বলতা।কারণ নোমান তাকালেই সে কেনো জানি দূর্বল হয়ে যায়।নিজেকে তখন ভিনগ্রহের প্রাণি মনে হয়।

তন্নি নোমানের হাতে জুসের গ্লাস দেখে বললো,কি হলো?খাচ্ছেন না কেনো আপনি?এভাবে ধরে আছেন কেনো?

নোমান তন্নির কথা শুনেও ধরেই থাকলো জুসের গ্লাসটি।আর তানিশার দিকে তাকিয়ে বললো,উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করছি।সময় হলে এমনি খাবো।

তন্নি নোমানের কথা কিছুই বুঝলো না।কিন্তু বেশি কিছু জিজ্ঞেসও করতেও পারলো না,যদি নোমান আবার তাকে বোকা ভাবে।এমনিতেই নোমান সবসময় তাকে বোকা বোকা বলে ক্ষেপায়।

আমান এবার কথা বলে উঠলো,সে বললো,কি হলো নোমান?খাচ্ছিস না কেনো?কি ভাববে সবাই?না খেতে মন চাইলেও খেতে হবে।নাক, কান চোখ বন্ধ করে ঢোক করে গিলে ফেল।আমান ভেবেছে নোমান বড়লোকি করছে,সেজন্য সে এসব শরবত খেতে চাচ্ছে না।

তানিশা এবার নিজেই নোমানদের কাছে আসলো।এসে দেখে নোমান এখনো কিছুই খায় নি।তানিশা বুঝতে পারছে না নোমানের এমন মতিগতি।তবে নোমানের তাকানো দেখে মনে হচ্ছে নিশ্চয় নোমান তার মুখেই শুনতে চাচ্ছে কথাটা।তাকেই মনে হয় খাওয়ার জন্য বলতে হবে আবার।এই ছেলেটা এমন শুরু করেছে কেনো?তানিশার মাথাতে সত্যি কিছু ঢুকছে না।তাছাড়া নোমান সবার সামনে যেভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে তাকে কারো নজরে আসলে কি হবে তখন?

তানিশা যখন দেখলো নোমান সেই আগের মতোই জুস টা ধরে আছে আর বার বার তার দিকে তাকাচ্ছে তখন তানিশা টেকনিক করে সবাইকে আরো এক গ্লাস করে জুস দিতে লাগলো।আর এই সুযোগে নোমানের কাছে গিয়ে বললো,
আপনি তো আগের জুস টাই শেষ করেন নি?তাড়াতাড়ি শেষ করুন।পরবর্তী নাস্তাগুলো কখন খাবেন?

নোমান তানিশার কথা শোনামাত্র এক চুমুকে শেষ করলো গ্লাসের সব জুস।তানিশা তা দেখে বললো আরেক গ্লাস দিবো?
নোমান হ্যাঁ, না কিছুই বললো না।তবে বোঝা যাচ্ছে সে তানিশার হাতের আরো এক গ্লাস জুস খেতে চায়।তানিশা সেজন্য আরো এক গ্লাস জুস দিলো।নোমান এবারও সব জুস এক চুমুকেই শেষ করে ফেললো।

নোমানের এমন আচরণে তানিশা বেশ অবাক হলো।তার ভীষণ ভয় হতে লাগলো।নোমান আবার না জানি উল্টাপাল্টা কিছু করে?কেমন যেনো লাগছিলো নোমানের আচরণ।

নোমান আসলে এরকম বিহেভ করে বোঝাতে চাইছে তানিশা নিজের থেকে বুঝতে পারুক তার ফিলিংসের কথা।তাকে যেনো নিজের মুখে কিছু বলতে না হয়।তার আগেই যেনো তানিশা সবকিছু বুঝতে পারে।আর নিজের মুখে তার ভালোবাসার কথা প্রকাশ করে।

কিন্তু নোমান হয় তো জানে না তানিশা কত টা চাপা স্বভাবের মেয়ে।নোমান যেমন তার ইগো নিয়ে থাকে,অতিরিক্ত ইগোর জন্য নিজের ফিলিংস প্রকাশ করতে পারছে না,তানিশাও ঠিক তেমনি।তার মুখ থেকে কথা বের করা এতো সহজ নয়।তার বুক ফাটবে তবুও মুখ ফুটবে না।এতো টা কঠিন মেয়ে তানিশা।

সবার খাওয়াদাওয়া শেষ হলে তানিশা যখন নাস্তার প্লেট গুলো অন্য ঘরে নিয়ে যেতে ধরলো তখন তন্নি বললো,
তানিশা!হলুদের অনুষ্ঠান হবে না?

তানিশা সেই কথা শুনে বললো,আবার জিগায়! হবে না মানে?আলবাত হবে।নিজের বিয়েতে হলুদের অনুষ্ঠান হবে কিনা জানি না আমার বোনের বিয়ে তে হবেই হবে।কারণ দুলাভাই আমার খুব সৌখিন।হলুদের প্রোগ্রামের সব খরচ উনি দিয়েছেন।

–বাহঃ দারুন তো।তানিয়া আপু সত্যি খুব লাকি।

–হ্যাঁ।খুব ভালো আমাদের দুলাভাই।বিয়ে না হতেই যে কেয়ার করে!কত জনের ভাগ্যে এমন বর জোটে!

নোমান সেই কথা শুনে মনে মনে বলছে,আমার সাথে বিয়ে হলে এই আফসোস টা কখনোই করবে না।এমন কেয়ার করবো আর ভালোবাসবো আমাকে ছাড়া দুনিয়ার সবাইকে ভুলে যাবে।এখনো সময় আছে প্রকাশ করো মনের কথা।

হঠাৎ আমান বললো, তোমার বিয়ে তে হলুদের অনুষ্ঠান হবে না কেনো?তুমি কি পালিয়ে বিয়ে করবে নাকি?

তানিশা তখন বললো,ভাইয়া,কি বলছেন এসব?পালিয়ে বিয়ে করতে যাবো কেনো?বাবা মার সম্মতিতে ধুমধামে নিজের পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করবো।এই বলে তানিশা নোমানের দিকে তাকালো।

এদিকে আমান তানিশার কথা শুনে ঝাটকা খেয়ে গেলো।তানিশা আবার কাকে পছন্দ করে!সে আবার প্রেম টেম করছে নাকি?না আর দেরী করা যাবে না।খুব শীঘ্রই তার ব্যাপার টা ক্লিয়ার করতে হবে।

নোমান শুধু শুনছে সবার কথা,সে কিছু বলছে না।নোমান এমনই।সে হাজার টা কথা বলে না।তবে একটা কথা বলবে সেটাই হাজার টা কথা বলার সময় হয়।

নোমান এবার সুযোগ বুঝে তানিশাকে উদ্দেশ্য করে তন্নিকে বললো,

তন্নি!তোরও আবার নিজস্ব কোনো পছন্দের মানুষ আছে নাকি?থাকলে তাড়াতাড়ি বলে দিস।তা না হলে কিন্তু পরে পশ্চাতে হবে।জানিসই তো আজকাল ভালো হ্যান্ডসাম ছেলেদের কে মেয়েরা সিংগেল থাকতেই দেয় না।

তানিশা বুঝতে পারলো তাকে উদ্দেশ্য করেই কথাটা বললো নোমান।সেজন্য সে তখন উলটো নোমানের উদ্দেশ্যে তন্নিকে বললো,
তন্নি!কখনোই আগে বলবি না তুই।কারণ মেয়েরা কখনোই তার মনের কথা নিজে আগে বলে না।কারণ ছেলেরাই সবার আগে বলে,আর সবসময় মেয়েদের পিছে পিছে ঘোরে।মেয়ারা রাজি থাকলেও সহজে প্রকাশ করতে চায় না।কারণ তারা চায় ছেলেরা তাদের পিছে পিছে ঘুরুক।

তন্নি তো একবার নোমানের দিকে তো একবার তানিশার দিকে দেখতে লাগলো।এরা আবার তার মনের কথা বুঝে ফেললো নাকি?তা না হলে নোমান এভাবে বললো কেনো?আর তানিশাই বা এভাবে বললো কেনো?
তন্নির মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেলো সব।

হঠাৎ তানিশার কাজিন হিয়া এলো তানিশাকে ডাকার জন্য।আর বললো,তানিশা আপু তুমি এখানে?আর আমি সারাবাড়ি খুঁজে বেড়াচ্ছি আপনাকে।আপনি রেডি হবেন কেনো?তানিয়া আপুর তো সাজ কম্পিলিট হয়েছে।

তানিশা তখন বললো, হ্যাঁ রেডি হচ্ছি।আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তন্নি এসেছে তো ওর সাথে একটু গল্প করছি।

হিয়া তখন তন্নিকে সালাম দিয়ে বললো, আসসালামু আলাইকুম আপু।কেমন আছেন আপু।

তন্নি সালামের উত্তর দিয়ে বললো,এই তো যেমন দেখছো তেমনি আছি।

–আচ্ছা আপু পরে কথা হবে।আমাকেও এখন রেডি হতে হবে। আপু আপনিও রেডি হয়ে নিন।কিছুক্ষনের মধ্যেই তো প্রোগ্রাম শুরু হয়ে যাবে।

আমান তখন হিয়াকে বললো,শুধু তন্নিকেই বললে যে?আমরা রেডি হবো না?না ছেলেদের হলুদের অনুষ্ঠানে থাকা বারণ আছে।

হিয়া তখন বললো,ছিঃ ছিঃ।কি বলছেন ভাইয়া?বারণ থাকবে কেনো?তবে মেরুন কালারের পাঞ্জাবী থাকতে হবে আপনার।তবেই হলুদের প্রোগ্রামে থাকতে পারবেন।অন্য কালার হলে চলবে না।তা না হলে আমাদের হবু দুলাভাই রাগ করবে।

–কেনো?রাগ করবে কেনো?

হিয়া তখন বললো,কারণ আমাদের হবু দুলাভাই নিজেই চয়েজ করেছে কালার।আর নিজেই সবার জন্য এসব ড্রেস কিনে পাঠিয়েছেন।ছেলেদের জন্য মেরুন কালারের পাঞ্জাবী আর মেয়েদের জন্য লেমন কালারের শাড়ি।তানিশা আপু লিস্ট পাঠিয়ে দিয়েছিলো সেই অনুযায়ীই কেনা হয়েছে সবার জন্য।তবে যারা লিষ্টের বাহিরেও এটেন্ড করবে তারা নিজের টাকা দিয়ে সেম কালারের ড্রেস কিনে তবেই এটেন্ড করতে পারবে।

আমান তখন বললো,এই আর কি সমস্যা?এখনি অনলাইনে অর্ডার করছি।

তানিশা তখন বললো, ভাইয়া লাগবে না অর্ডার করা।লিস্টে আপনাদের নাম ও ছিলো।

আমান আর নোমান দুইজনই অবাক হলো।তানিশা তাদের নামও দিয়েছে।সে কি করে বুঝলো যে তারা দুইজন আসবেই বিয়েতে।

আসলে তানিশা জানতো আমান আসবেই।নোমানের ব্যাপারে সে শিওর ছিলো না।তবুও নোমানের নামটাও দিয়েছিলো।ওদের দুইজনের গায়ের মাপ তন্নির দেখে শুনে নিয়েছিলো।

#চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে