#ডাকপিয়নের_ছুটি_নেই 🍁🍂
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব____১২
একই সীটে পাশাপাশি গা ঘেঁসে বসে আছে শ্রাবণ আর ইশা। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে এক মনে। বাচ্চারা সব একত্র হয়ে হল্লা করছে পেছনে। বারেবারে শ্রাবণের ধমকে দু’চার মিনিটের জন্য চুপ হলেও পূনরায় তাদের আনন্দ উল্লাস জমজমাট হয়ে ওঠে।
এদিকে ইশা কাচুমাচু হয়ে বসে আছে শ্রাবণের ভয়ে। শ্রাবণ ওর এমন ভাব দেখে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“বসতে অসুবিধা হলেও একটু এডজাস্ট করে নে!;
ইশা পাশ ফিরে তাকালো শ্রাবণের পানে। সে উসখুস করছে, বসতে না পারার দায়ে না। অন্য কারনে। সেটা কি করে বলবে শ্রাবণকে। ওকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শ্রাবণ ভ্রু নাচালো। ইশা না সূচক মাথা নাড়িয়ে সম্মুখে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। শ্রাবণের এতোটা কাছে বসতে ভেতরে ভেতরে কেমন হচ্ছে ইশার। পেটের ভেতর গুড়গুড় করছে যেন।
“বেশি অসুবিধা হচ্ছে?;
“না। তেমন অসুবিধা হচ্ছে না।;
“আরেকটু এগিয়ে আয় এদিকে।;
“আর এগোলে তো..;
আর এগোলে শ্রাবণের বুকের সাথে লেগে যাবে ইশার পিঠ। ইশা লজ্জা পাচ্ছে এই বিষয়টার জন্য। শ্রাবণের এতোকিছু মাথায় নেই। তার দুশ্চিন্তা ইশার অসুবিধা হওয়া নিয়ে।
“আরে এগিয়ে আসতে প্রবলেম?;
বলেই ইশার কোমর ধরে নিজের কাছে টেনে আনলো শ্রাবণ। শ্রাবণের হাত ইশার কোমর ছুঁতেই হকচকিয়ে তাকালো ইশা। চোখ জোড়া রসগোল্লা করে তাকাতেই শ্রাবণ ওকে তার নিজের কাছে টেনে নিলো। পরক্ষণেই চোখে চোখ পড়লো দু’জনের। ইশার বুকের ভেতর ঢোল পেটাচ্ছে কেউ। চোখ মুখ কেমন হয়ে উঠল তার। খানিক লজ্জা, খানিক ভয়!
“বস চুপটি করে।;
মানুষটাকে সত্যিই বোঝেনা ইশা। এমন একশোটা রূপ একেক মুহুর্তে। কোনটা আসল ভাববে সে?
শ্রাবণের শরীর থেকে এক মিষ্টি ঘ্রাণ ভেসে আসছে বারবার। ইশা না চাইতেও বারবার সেই মাতাল ঘ্রাণ উপভোগ করতে শ্রাবণের প্রতি ঝুঁকে যাচ্ছে। শ্রাবণ হয়তো বুঝতে পারছেনা ইশার মতলব খানা। সে স্বাভাবিক ভেবেই ইশাকে ধরে রেখেছে আগের মতো। ইশা সেই সুযোগে শ্রাবণের আরও সন্নিকটে পৌঁছে গেলো। খানিক বাদে শ্রাবণের মনে হলো ইশা তার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। কি অদ্ভুত ব্যাপার! এই তো এক্ষনি ড্যাবড্যাব করে তাকাচ্ছিলো শ্রাবণের পানে। আবার এক্ষনি ঘুম!
শ্রাবণ মনেমনে হাসলো। হেসেই ইশার কোমর ছেড়ে কাঁধ আগলে নিলো। ইশাকে আগলাতে আগলাতেই পূণরায় পেছন থেকে হৈ-হুল্লোড়ের শব্দে রাগী চোখে তাকালো শ্রাবণ। শ্রাবণের রাগী দৃষ্টিজোড়া ভড়কে দিলো বাচ্চাগুলোকে। তারা নিজ নিজ দায়িত্বে চুপ হয়ে গেলো।
“ভাইয়া, গাড়ির এসিটা বন্ধ করে গাড়ির জানালা খুলে দেইনা?;
বলল তুতুন। ওর চোখ মুখ বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। যা দেখে বুঝতে অসুবিধা হলোনা, এসিটা ঠিক হজম করতে পারছেনা তুতুন। তানি বলল,
“কেন, এসির বাতাসই ঠিক আছে।;
“আমার বমি পাচ্ছে এসির গন্ধে!;
তানি আবারও বলল,
“এসির আবার গন্ধ আছে নাকি? অদ্ভুত কথা বলিস তো!;
কথাটা বলে থামলে পারলোনা তানি। এর মধ্যে বমির বেগ চাপলো তুতুনের। হা করতেই মৃদু গলায় চেঁচিয়ে উঠলো তানি। আরব পাশ থেকে তুতুনকে ধরে বলল
“আস্তে আস্তে! এখানেই বমি করিসনা, ড্রাইভার সাহেব? গাড়িটা সাইট করেন।;
ড্রাইভার গাড়ি থামালো চটজলদি। তুতুন লাফিয়ে পড়লো গাড়ির বাইরে। সঙ্গে সঙ্গে বমি! তানি ঘৃণার জন্য যেতে পারছেনা বোনের কাছে। আরব কি করবে যেন বুঝে উঠতে পারছেনা। এদিকে সোরগোল শুনে উঠে পড়লো ইশা। আশেপাশে তাকিয়ে কতক্ষণ বোঝার চেষ্টা চালালো কার কি হলো! অতঃপর যখন দেখলে তুতুন বমি করছে, একরকম দৌড়ে গেলো তুতুনের কাছে। দু’হাতে ওর মাথাটা চেপে ধরে গলা উঁচিয়ে পানি চাইলো। পানি নিয়ে গেলো শ্রাবণ। তুতুন দুই বার লাগাতার বমি করে শান্ত হলো। ইশা ওকে পানি খাওয়ালো। অতঃপর, চোখে মুখে খানিক পানির ছিটা দিয়ে কাছে টেনে জড়িয়ে রাখলো নিজের সাথে। স্নেহভরা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
“বেশি খারাপ লাগছে?;
তুতুন কাঁপছে। কাঁপতে কাঁপতে কোনো রকমে জবাব দিলো,
“আ্ আমি বাসায় যাবো আপা!;
ওর কথা শুনে ইশা শ্রাবণের পানে তাকালো। শ্রাবণ এগিয়ে এসে তুতুনের মাথায় হাত রাখলো। আলতো করে হাত বুলিয়ে বলল,
“একা বাসায় গিয়ে কি করে থাকবি? গাড়িতে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নে। দেখবি আস্তে আস্তে ভালো লাগবে।;
তুতুন কান্না করতে লাগলো। যা দেখে ইশা ওকে আগলে ধরে বলল,
“কাঁদছিস কেন সোনা? আমি আছি তো। তোর মেজ আপা থাকতে এতো চিন্তা করতে হয়?;
“আমার অনেক খারাপ লাগছে আপা! আমি আর ঐ গাড়িতে উঠবোনা।;
“শোনো মেয়ের কথা! আমরা এই গাড়িতে না উঠলে কি করে যাবো বড় আপার কাছে? বড় আপা যে আমাদের পথ চেয়ে বসে আছে।;
“বড় আপাকে চলে আসতে বলোনা প্লিজ!;
“চলে আসতে বললেই কি চলে আসা যায়? বড় আপা এখন শশুর বাড়িতে। ওখান থেকে ওকে আসতে হলে সবার অনুমতি লাগবে।;
বলল শ্রাবণ। তুতুন বুঝতে চাইলোনা যেন। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ইশা ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে নিয়ে গেলো গাড়ির কাছে। সাত-পাঁচ বুঝিয়ে আবারও উঠিয়ে দিলো গাড়িতে। তবে এবার সেও উঠলো তুতুনের সাথে। পেছন থেকে কয়েকজন সামনের সীটে পাঠিয়ে দিলো শ্রাবণের কাছে। বাচ্চাদের তুলে দিয়ে শ্রাবণ উঠতে নিলে ডেকে উঠলো তুতুন। বলল,
“তুমিও বসোনা আমার কাছে ভাইয়স! নয়তো আমার আরও খারাপ লাগবে!;
তুতুনের কথা ফেলতে পারলোনা শ্রাবণ। আরবকে বাচ্চাদের সাথে সামনে দিয়ে সে এসে বসলো তুতুনের আরেকপাশে। তুতুনকে আদর করে মাথায় বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“ইশার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়।;
তুতুন তাই করলো। ইশার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লে ইশা আস্তে আস্তে ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।
“তোরও তো গাড়িতে বমি করার স্বভাব আছে। বমি পেলে এক্ষনি করে আয়।;
রুক্ষ গলায় কথাটা ইশার উদ্দেশ্যে বলল শ্রাবণ। ইশা মুখ কুঁচকে তাকালো। নাক সিটকে বলল,
“ছিলো! এখন নেই। এখন আমার সব গাড়িতে চলার অভ্যাস হয়েছে।;
এ কথাটার পিঠে ইশাকে ক্ষেপানোর মতো আর কথা খুঁজে পেলোনা শ্রাবণ। ড্রাইভারকে বললে আবারও গাড়ি স্টার্ট দেয় সে। তুতুন ইশার কোলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়ে।
মোট চার ঘণ্টা পেছনে ফেলে অবশেষে এসে পৌঁছালো সবাই। তিতিরের শশুর বাড়ির লোক আগে থেকেই গেটে দাঁড়িয়ে ছিলো তাদের অপেক্ষাতে। এক এক করে সবাই গাড়ি থেকে নেমে এলে সবাইকেই মিষ্টি মুখ করিয়ে ভেতরে নিয়ে যায়। শাকিল এসে গুরুজনদের সালাম জানিয়ে শ্রাবণ এবং আরবের সাথে কোলাকুলি করলো। তিতির যেন তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় ছিলো তার বাবা-মা, ভাই বোন,এবং দাদা-দাদীকে দেখার জন্য। ইশাকে পেয়ে প্রায় দশ মিনিট জড়িয়ে রেখেছে নিজের সাথে। কতশত কথা জমে গেছে মাত্র একদিনের ব্যবধানে। সব এক এক করে উগরে দিচ্ছে বোনের কাছে। তিতিরের এহেম পাগলামি দেখে এক কোনে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে তার প্রাণপ্রিয় স্বামী। মাঝেমাঝে চোখাচোখি হলেই চোখ টিপে দিচ্ছে শাকিল। তিতির তখন লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে। সকাল থেকে দু’জনের মাঝে এরূপ খুনসুটি চলে আসছে।
তিতিরকে ভীষণ খুশি দেখাচ্ছে। বাবা-মা, দাদা-দাদি তিতিরের এই হাসিপূর্ণ মুখখানা দেখেই যেন শান্তি পেলেন। প্রত্যেক বাবা-মায়েরই আক্ষেপ থাকে, তাদের মেয়ের জীবনের আনন্দ কিংবা খুশি নিয়ে। তাদের দুশ্চিন্তা থাকে, তাদের মেয়ে কি স্বামীর বাড়িতেও যথেষ্ট আনন্দে থাকবে, যতটা তাদের কাছে ছিলো? এইদিক থেকে বাবা-মায়ের মন স্বার্থক হলো মেয়ের হাস্যজ্বল মুখখানা দেখে। স্বার্থক যেন ইশাও। ওমন একটা ঘটনাকে মনে রেখে যে তার আপা তার সুন্দর ভবিষ্যতটা কুৎসিত করে ফেলেনি, এটাই যে যথেষ্ট ওর জন্য।
“আসতে কোনো অসুবিধা হয়নিতো?;
জিজ্ঞেস করলো তিতির। তুতুন কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল,
“অসুবিধা হয়নি আবার? জানো আমি কত অসুস্থ হয়ে পড়েছি!;
তুতুনের কাঁদো কাঁদো মুখখানা দেখে বড্ড মায়া হলো ইশা এবং তিতিরের। দু’জনেই একসাথে কাছে এনে আদর করতে লাগলো তুতুনকে। তিতির বলল,
“ইশশ, আমার ছোট্ট পাখিটা কতো কষ্ট পেলো আমার জন্য।;
তুতুন বুঝদার মেয়ে। আপার মন খারাপ হলে তার আরও খারাপ লাগবে। তাই নিজেকে শক্ত দেখিয়ে বলল,
“আরে ধুর ঐ কষ্ট তো কিছুই না আপা। তোমাকে দেখার জন্য আমি তো এমন হাজার কষ্ট মুখ বুজে সহ্য করবো।;
শুনে হেসে উঠলো ইশা এবং তিতির। তিতির হাসিমুখেই তুতুনের কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“কত ভালোবাসে আমার পাখিটা আমাকে। দেখেছিস ইশু?;
“হ্যাঁ, তাই তো দেখছি।;
“কি ব্যাপার শালিকা, তুমি নাকি গাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েছো?;
উপস্থিত হলো শাকিল, আরব এবং শ্রাবণ। তুতুন মুখ তুলে তাকালো শাকিলের পানে। এখন তার লজ্জা লাগছে। সবাই কেন তার অসুস্থতা নিয়ে পড়ে রইলো।
শাকিলের প্রশ্নের পিঠে আরব বলে উঠলো,
“শুধু কি তাই? সে অসুস্থ হয়ে সাথে সাথে ঘোষণা দিলো সে বাসায় যাবে। এবং তার আপাকে যেন নিয়ে আসা হয়।;
বলেই হাসতে লাগলো তারা। তুতুন লজ্জা পেয়ে আবারও তার আপাকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো।
“এই যে বেয়ান, একা একাই মিষ্টি খেয়ে সাবাড় করবেন নাকি? আমাদেরও একটু সাধেন? আমরাও একটু খাই!;
বলেই শব্দ করে হেসে উঠলো একঝাঁক ছেলে। শাকিলের বন্ধুরা এবং কাজিনরা। তানি সবেই একটা মিষ্টি তুললো মুখে দিবে বলে। তার মাঝেই এহেম বানী ভেসে আসতে চোখ বড়বড় করে তাকালো সম্মুখে। বড্ড মিষ্টি পাগল সে। মিষ্টি দেখলেই অস্থির হয়ে যায়।
“এতো মিষ্টি খাচ্ছেন যে, পরে বর তো হিমশিম খাবে আপনাকে তুলতে!;
পূণরায় ভেসে এলো কথাটা। তানি লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো। মিষ্টি এখন আর তার গলা দিয়ে নামবেনা। এরা কি শুরু করলো!
লজ্জায় পড়ে মিষ্টির বাটিটা রেখে একটা মিষ্টি হাতে নিয়েই দৌড়ে পালালো ওখান থেকে। পেছন থেকে হোহো করে হাসির শব্দে ভেসে আসছে ক্রমশ।
“মা গো!;
ঝড়ের গতিতে কিছুটা একটা তেড়ে আসতেই হুমড়ি খেয়ে নীচে পড়ে গেলো ইশা। সেই সঙ্গে আসমানী রঙের সুন্দর শাড়িটাতে বেশ খানিকটা মিষ্টির ঝোল মেখে গেলো। হা করে তাকালো সে সম্মুখ পানে। মুখে হাত চেপে মৃদুস্বরে চিৎকার করে উঠলো তানি। ইশার পড়ে যাওয়াতে নয়, বরং তার খেতে না পারা মিষ্টিটা মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার কষ্টে। ঝাঁপিয়ে পড়লো নীচে। ইশা প্রথমে খুশি হয়ে গিয়েছিলো এটা ভেবে যে, তানি হয়তো তাকে তুলবে। কিন্তু না! ইশাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমান করে দিলো ক্ষনেই। তানি মিষ্টিটা উঠিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল,
“তুই একটু দেখে আসবিনা আপা! দেখ আমার মিষ্টিটার কি হাল হয়েছে? এখনও অব্দি একটা কামড়ও বসাতে পারিনি!;
তানির আক্ষেপ করা দেখে একহাত পানিতে ডুবে ম*র*তে ইচ্ছে করলো ইশার। নিজের অবস্থা দেখে এবার যে হাসবে না কাঁদবে তাই বুঝে কুলোতে পারছেনা।
“শিট! আপনি পড়ে গেলেন কিভাবে?;
একজোড়া হাত টেনে তুললো ইশাকে। ইশা বারন করার আগেই সে নিজেকে দাঁড়ানো অবস্থায় আবিষ্কার করলো। সামনে দাঁড়িয়ে আছে কেউ! ইশা ভ্রু কুঁচকে তার পানে তাকাতেই প্রদর্শিত হলো এক যুকবের মুখশ্রী। ইশা ভ্রু কুঁচকে তাকাতে সে ভ্রু কপালে তুলে নিলো। যেটা দেখে ইশা স্বাভাবিক ভাবে তাকালো লোকটার পানে। এবার লোকটাও তাই। ইশা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“ধন্যবাদ।;
এই বলে শাড়ির আঁচলটা ঝাড়তে ঝাড়তে চলে যেতে নিলেই লোকটা পিছু ডাকে তার।
“আপনি ইশানি, তাইনা?;
“কেন? আমার নাম দিয়ে আপনার কাম কি?;
গলার স্বর রুক্ষ করে বলল ইশা। লোকটা আমতাআমতা করে বলল,
“না মানে, আপনাকে শাকিলের বউয়ের ছবি দেখার টাইমে দেখেছিলাম। তখনই নামটা জেনেছি।;
“আপার ছবি আপনি কি করে দেখলেন?;
“ও সরি, পরিচয় দিতে ভুলে গিয়েছি.. আমি আলভি। শাকিলের বেস্ট ফ্রেন্ড।;
পূণরায় ভ্রু কুঁচকালো ইশা।
“আপনাকে তো বিয়েতে দেখিনি!;
“জি জি। আমি ইম্পরট্যান্ট কাজের জন্য আঁটকে পড়েছিলাম। বাই দ্য ওয়ে, আমি থাকলে কিন্তু বাকিদের এতো নাকানিচুবানি খাওয়াতে পারতেন না।;
ইশা হেসে উঠলো। ভাব নিয়ে বলল,
“ইশাকে মাত দেওয়া এতো সহজ নয় মশাই। আপনি কেন, আপনার মতো আরও দশ আপনি এলেও বরপক্ষের হারা তো লেখাই ছিলো।;
এই বলেই ভাবটা বজায় রেখে চলে গেলো ইশা। আলভি ইশার যাওয়ার পানে বাঁকা নজরে তাকিয়ে রইলো। মনেমনে হেসে বলল,
“ফাইনালি পাখি খাঁচার দিকে অগ্রসর হলো। লেটস্ সি।;
#চলবে
#ডাকপিয়নের_ছুটি_নেই ♥️
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব____১৩
“আন্টি, আপনাদের ওয়াশরুমটা কোন দিকে?;
শাকিলের মায়ের সঙ্গে দেখা হলো ইশার। শাড়িতে মিষ্টির ঝোলটা ভালো ভাবেই মেখেছে। এখনই না ধুতে পারলে আঠাল হয়ে থাকবে।
“ডানদিকে গিয়ে একটা রুম পাবে মা। ওখানেই আছে।;
“জি, ঠিকাছে।;
ভদ্রমহিলার দেখানো রাস্তাতেই চলে গেলো ইশা। তিনি যেভাবে বললেন, সেভাবেই দেখা মিললো ওয়াশরুমের। রুমটা ফাঁকাই আছে। ফ্রেশ হয়ে খানিকক্ষণ রেস্ট নেওয়া যাবে। এই শাড়ি পড়ে হাঁটাচলা করা মোটেও মুখের কথা নয়। ও ছাড়া এই কষ্ট আর কেউ বুঝবেনা।
“তুতুন, ইশা কোথায়?;
তুতুন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সবদিকে। এখন শরীরটা ঝরঝরে লাগাতে ওকে আর পায় কে। ওর সমবয়সী মেয়েও মিলে গেলো বেশ কয়েকজন। যার দরুন সারাক্ষণ খেলার মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে সে।
“মেজআপা এখানেই ছিলো ভাইয়া!;
শ্রাবণ আশেপাশে একবার নজর দিলো। এখানে কোথাও নেই ইশা। অনেকক্ষণ যাবত চোখের আড়াল হয়েছে সে।
“এখানে কোথাও নেই। একটু বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখবি?;
“আমি এখন খেলছি ভাইয়া।;
বৌভাতের অনুষ্ঠান করা হয়েছে বাড়ির সামনে বিশাল জায়গা জুড়ে। সেই সুবাদে বাড়ির ভেতরে মহিলাগন ব্যতীত আর কাউকে পাওয়া মুশকিল। এতো মহিলাদের মাঝে সে ইশাকে খুঁজতে যাবে ব্যাপারটা ভালো দেখায় না।
তুতুন দৌড়ে চলে গেলো তার সখীদের সাথে। শ্রাবণ একা একা দাঁড়িয়ে রইলো। আর কাউকে দেখছেওনা যে জিজ্ঞেস করবে।
“শাকিল?;
দেখা মিললো শাকিলের। শ্রাবণের ডাক পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো শাকিল। এগিয়ে এসে বলল,
“শ্রাবণ, কিছু লাগবে?;
“আব.. একটু প্রবলেম ছিলো!;
“হ্যাঁ হ্যাঁ, প্লিজ বলো কি প্রবলেম?;
“ইশাকে কোথাও দেখছিনা। হয়তো বাসার ভেতরে গিয়েছে।;
“হতে পারে। আমি কাউকে দিয়ে ডাকিয়ে দিচ্ছি?;
“না, তার দরকার নেই। আমিই যাচ্ছি যদি আমার যাওয়াতে কোনো প্রবলেম না থাকে!;
“আরে কোনো প্রবলেম নেই। নিজের বাসাই ভাবোনা প্লিজ।;
“আহ্ থ্যাংক্স।;
মৃদু হেসে,
“এনিটাইম ব্রো।;
ওয়াশরুমের দরজাটা খুলতেই খট করে একটা শব্দ হলো। ইশা শাড়ির আঁচলে কাঁধে তুলে ঝুলে থাকা অংশটা হাতে পেঁচিয়ে বের হলো। একটু ধুতে গিয়ে অনেকটা ভিজে গিয়েছে। এখন না শুঁকিয়ে তো বের হওয়া সম্ভব নয়। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আশেপাশে তাকাতে তাকাতে কাঁধ থেকে শাড়ির আঁচলটা নামিয়ে নিলো। কখন কে কোথা থেকে এসে পড়বে বলা যায়না।
উপরে তাকিয়ে দেখলো ফ্যান আছে। তাই চটজলদি সুইচ টিপে ফ্যানের নীচে এসে দাঁড়ালো। শাড়ির আঁচলটা ঝাড়তে ঝাড়তে সময় ব্যায়ের খাতিরে পাশে তাকাতেই চমকে উঠলো অপ্রত্যাশিত কাউকে দেখে। আলভি দরজার সাথে হেলান দিয়ে এক মনে তাকিয়ে আছে ইশার পানে। ইশা চটজলদি নিজের শাড়ি ঠিক করে নিয়ে বির*ক্ত স্বরে বলল,
“একি আপনি! আপনি এখানে কি করছেন?;
ইশার বির*ক্তিভাবে আলভির তেমন হেলদোল দেখা গেলোনা। সে একই ভাবে তাকিয়ে রইলো ইশার দিকে। তার দৃষ্টি বিচরণ করছে ইশার দেহে। ইশা অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। শাড়ি এপাশ-ওপাশ টেনেটুনে ঠিক করে পূণরায় বলে উঠলো আলভির উদ্দেশ্যে। তবে এবার একটু রা*গী গলায়।
“কি সমস্যা? এখানে কি চাই?;
এবার আলভির হুঁশ ফিরে। নড়েচড়ে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ঘোর লাগা নয়নে তাকালো ইশার পানে। ফের বলল,
“আপনি এতো সুন্দর কেন? আমার চোখ ফেরানো দায় হয়ে যাচ্ছে ম্যাডাম!;
চেতে গেলো ইশা। কারোর পারমিশন ছাড়া এভাবে কারোর ঘরের সামনে এসে অসভ্যের মতো তাকিয়ে থাকা মোটেও ভদ্রতার লক্ষণ নয়। সে আরও বির*ক্তি নিয়ে বলল,
“কোনো দরকার?;
“জি অনেক দরকার।;
এই বলে রুমের ভেতর ঢুকে এলো আলভি। ইশা ভড়কে গেলো। রাগ বির*ক্তি এক করে বলল,
“ক্ কি সমস্যা? ভেতর আসছেন কেন?;
“আপনাকে একটা কথা বলতে চাই।;
“আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা।;
এই বলে ইশা আলভির পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে আলভি পূণরায় বলে ওঠে,
“শুধু আপনাকে না, আমি আপনার ফ্যামিলির সাথেও কথা বলব, যদি দরকার হয়!;
ইশা দাঁড়িয়ে পড়লো। মহা বির*ক্তি নিয়ে বলল,
“মানে?;
“আপনি ভীষণ সুন্দর। একদম আমার মনের মতো। গায়ের রঙ থেকে শুরু করে, পায়ের নখ অব্দি। কোনো কমতি নেই আপনার।;
“আমার হাতের ঘুষিও খুব সুন্দর। একটা খেলেই তিনদিনের বেড রেস্ট।;
দাঁতে দাঁত চেপে বলল ইশা। আলভি হেসে উঠলো। ইশা নির্ঘাত মজা করছে।
“আপনি রা*গলেও কিন্তু আপনাকে ভীষণ সুন্দর লাগে।;
“আর কিছু?;
“আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই!;
ফট করে বলে বসলো আলভি। ইশা ভ্রু কুঁচকে তাকালো আলভির পানে। তেতে ওঠা গলায় বলল,
“আমি আপনাকে কেন বিয়ে করতে যাবো?;
“কারন আমিও অনেক সুন্দর। শ খানিক মেয়ে আমার জন্য পাগল। শ খানিক মেয়ে বিয়ে করতে চায় আমাকে। আমি হ্যান্ডসাম। ভালো জব আছে। মোটা অংকের মাইনে..;
“প্লিজ থামুন! আগে এই যে গোবর ঠাসা মাথাটা পরিষ্কার করুন। ভালো লুক, ভালো জব আর কি? শ খানিক মেয়ে আপনার পেছনে ঘুরঘুর করে! ব্যস? আর কিছু না? আপনি কেমন মানুষ, ভালো নাকি খারাপ এগুলোর তো কোনো প্রয়োজনই পড়েনা তাইনা? ভালো লুক, ভালো জব আর মোটা অংকের মাইনে পেলেই যেকোনো মেয়ে হাতের তুড়ি বাজাতেই আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবে! এটাই ভাবেন তো? আগে দেখান আপনি মানুষটা কেমন। শো অফ না করে আগে ভালো মানুষ হতে হবে। কি বললাম? ভালো মানুষ! বুঝলেন?;
“আপনার দেখি ভালো দেমাগ? কি রূপের অহংকার নাকি?;
“আপনার মতো গাধারা বুঝবেনা। বাদ দিন।;
আলভির মুখের রঙ পাল্টে গেলো ইশার কথাটা শুনে। তেতে উঠে ক্ষপ করে ইশার হাতটা চেপে ধরে রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
“আমাকে গাধা বললেন?;
ইশা দিগুণ তেতে উঠলো। নিজের হাতটা এক ঝাটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে ক্ষোভ মিশ্রিত গলায় বলে উঠলো,
“কি সাহস আপনার!;
আলভি এক পা এগোলো ইশার পানে। ভাবলো ইশা হয়তো টলবে তার জায়গা থেকে। কিন্তু না। ইশা এক ইঞ্চিও নড়লোনা। আলভি তা দেখে গলা মোটা করে বলে উঠলো,
“সাহসের দেখলেন কি? মেয়ে মানুষ বলে ভালো ভাবে কথা বলছিলাম আপনার সাথে। আর কিন্তু তা হবেনা।;
ফিক করে হেসে দিলো ইশা। আলভি রাগি চোখে তাকালো ইশার পানে। আরেকপা এগিয়ে আসলো। পরক্ষণেই দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,
“খুব ভাব তাইনা? আপনার ভাব..;
ঠাসস করে এক বিকট শব্দ হতেই দু’পা পিছিয়ে পড়লো আলভি। গালে হাত চেপে হাদার মতো তাকিয়ে রইলো সম্মুখে। ইশাও চকিত পাশ ফিরে তাকালো। চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে শ্রাবণ। ইশা চোখ নামিয়ে নিয়ে আঁড়চোখে তাকালো আলভির পানে। ওর কান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে বলে মনে হলো ইশার। হাসিটা যেন আরও দিগুণ চেপে বসলো।
শ্রাবণ লাল চোখ জোড়া নিয়েই তেড়ে গেলো আলভির পানে। আলভি “ওমা গো” বলে চেঁচাতে চেঁচাতে পিছিয়ে পড়লো দু-পা। ওর চেঁচানো দেখে আর এগোতে পারলোনা শ্রাবণ। ওখানেই দাঁড়িয়ে পড়লো সে। আলভির মুখ কাঁদো কাঁদো হয়ে উঠলো। কুকিয়ে বলো উঠলো,
“আমাকে মা*রবেন না প্লিজ!;
শ্রাবণ এবার রাগী নয়, প্রশ্ন বিদ্ধ মুখ করে তাকালো আলভির পানে। ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কেন?;
আলভি আমতাআমতা করছে। চোখে জল যেন চিকচিক করছে। ফের বলল,
“না ভাই, প্লিজ মাইরেন না!;
“কেন?;
পূণরায় কুঞ্চিত ভ্রু করে শুধালো শ্রাবণ। আলভি এবার ফুঁপিয়ে উঠলো। বলল,
“মা সবসময় কথা বলার আগে মে*রে নেয় ভাই!;
“একশবার মা*রা উচিৎ, এরকম কুলাঙ্গারকে মা*রবে না তো কাকে মা*রবে? এবার আমার হাতেও মা*র আছে তোর জন্য! এদিকে আয়!;
“না ভাই, আমি আসবোনা। আপনি মুখে বলেন। আমি শুনবো।;
শ্রাবণ গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়লো। পেছন মুড়ে একবার ইশার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
“তুই এখানে কি করছিস? বন্ধু পাতাচ্ছিস নাকি এই বলদের সাথে?;
ইশা এপাশ ওপাশ করে তুমুল গতিতে মাথা নাড়লো। অতঃপর বলল,
“আমি এখানে (শাড়ির আঁচল ধরে) শাড়ি ঠিক করার জন্য এসেছিলাম। আর এই বলদ তখনই এসে হাজির হয়!;
“কি বলছিলো তোকে?;
“আমাকে বিয়ে করতে চায়!;
“ও ওয়াও। বেস্ট জোড়ি ইন দ্য ওয়াল্ড! কি ভাই, পছন্দ হয়েছে পাত্রী?;
আলভি বোকা হাসি দিলো। মাথা চুলকে বলল,
“হ্যাঁ ভাই।;
ইশা জ্বলে উঠলো ওদের কথপোকথনে। রাগান্বিত গলায় বলে উঠলো,
“মানে কি শ্রাবণ ভাই? তুমি মজা করছো আমার সাথে।;
শ্রাবণ ইনোসেন্ট চোখে তাকালো। যেন সে কিছুই বুঝতে পারছেনা।
” মজা আর আমি? আমাকে দেখে কি মনে হয় তোর? আমি মজার মুডে থাকি?;
“ভাই, আপনি কি হন পাত্রীর? ভাই?;
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো শ্রাবণ। ইশা ফিক করে হেসে দিলো। শ্রাবণ রাগী চোখে তাকাতেই ইশার হাসি বন্ধ হয়ে গেলো। সামনে থেকে আলভি পূণরায় বলে উঠলো,
“ভাই না? তাহলে কি দুলাভাই?;
শ্রাবণ ফোঁস করে উঠলো। তেতে উঠে তেঁড়ে গেলো আলভির পানে। দাঁতে দাঁত চেপে আলভির কলার চেপে ধরে বলে উঠলো,
“দুলাভাই তোর বাপ শালা!;
হকচকিয়ে গেলো আলভি। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে হাত জোর করে মাফ চাইতে লাগলো শ্রাবণের পানে। ইশা আর নিজেকে সামলে রাখতে পারছেনা। জোরে জোরে হেসে উঠলো পরমুহূর্তেই।
_________
বৌ ভাতের অনুষ্ঠান শেষ করে তিতির এবং শাকিলকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হলো সবাই। আসার সময় গাদাগাদি করে এলেও যাওয়ার পথে মানুষ আরও বাড়াতে গাড়িতে জায়গা কম পড়লো। যার দরুণ গাড়ি থেকে নেমে যেতে হলো শ্রাবণ, আরব, ইশা আর তানিকে। শ্রাবণ দাদাজানকে জানালো, তারা ক্যাব বুক করে চলে আসবে। ওদের সঙ্গে তুতুন আসার জন্য জোরাজোরি করলে, শ্রাবণের এক ধমকে চুপচাপ চলে গেছে।
রাত সাড়ে এগারোটা। অর্ধেক পথ এসে দুর্ভাগ্যক্রমে বুক করা ক্যাবটাও খারাপ হয়ে গেলো তাদের। তাই অর্ধেক ভাড়া দিয়ে এখন গাড়ির খোঁজে চারজনেই হাঁটতে লাগলো মাঝরাস্তায়। এদিকে নেটওয়ার্কের অবস্থাও খুব বাজে। পূণরায় ক্যাব বুক করার জন্য যথেষ্ট নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না।
” ভাইয়া, আমার ক্ষুধা লেগেছে। সেই দুপুরে একটু খেয়েছি।;
পেট চেপে ধরে বসে পড়লো তানি। কথাটা বলে বড় একটা দম নিয়ে তাকালো শ্রাবণের পানে। ওর বসে পড়াতে বাকিদেরও দাঁড়াতে হলো। শ্রাবণ হাতের ঘড়িতে সময় দেখে বলল,
“হ্যাঁ, রাত তো কম হলোনা। দাঁড়া, দেখছি কিছু পাওয়া যায় কিনা!;
“জলদি কিছু করো।;
শ্রাবণ হোটেল খুঁজতে চলে গেলো। এর মাঝে আরব বলে উঠলো,
“এদিকে আমার একটা ফ্রেন্ডের বাসা আছে! ওকে একটা কল দিয়ে দেখি দাঁড়া।;
“দেখ দেখ। আমার আর বাসায় যেতে মোটেও ইচ্ছে করছেনা।;
আরবের কথার পিঠে অধৈর্য্য গলায় বলল তানি। ইশা তানির হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে বকার সুরে বলল,
“মাঝরাস্তায় এমন করে বসে পড়লি কেন? লোকে দেখছে যে।;
“আমি আর পারছিনা রে আপা!;
“ওদিকে দেখ, বেঞ্চ দেখা যাচ্ছে একটা। চল গিয়ে বসি।;
ইশার বলতে দেরী হলেও তানির দৌড়ে গিয়ে বসে পড়তে দেরী হলোনা। ইশা ওর দৌড়ে যাওয়ার পানে তাকিয়ে আরবের উদ্দেশ্যে বলল,
“বাসায় না ফিরতে পারলে নানাজান রাগবেন ভাইয়া। তুই কি ভুলে গেলি?;
“ভুলিনি, কিন্তু আমার যে আর পা চলছেনা। জানিস, এখনও কতখানি পথ? গাড়ি পেলেও জ্যাম ঠেলে মিনিমাম তিন ঘন্টা। আমিও আর নিতে পারছিনারে!;
“কষ্ট হলেও ফিরতে হবে, প্লিজ!;
“কোনো প্লিজ মানতে পারছিনা। আমি আর তানি আমার ফ্রেন্ডের বাসায় উঠে যাই। তুই আর ভাইয়া চলে যা।;
“মানে? আমরা দু’জনে গেলে নানাজান তোদের কথা জিজ্ঞেস করবেনা? তখন কি জবাব দিবো?;
“কাকে কিসের জবাব দিতে হবে?;
হাতে সমুচা নিয়ে হাজির হলো শ্রাবণ। ইশার কথার পিঠে প্রশ্ন করতে আরব আর ইশা মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো একে অপরের। ইশা আর জবাব না দিয়ে শ্রাবণের হাত থেকে সমুচার প্যাকেটটা নিয়ে গিয়ে চলে গেলো তানির কাছে। খাবার পেয়ে রাজ্য জয়ের হাসি দিলো তানি। অনন্তর, বিনা বাক্য খরচে খেতে শুরু করলো।
এখন বাজে ঠিক রাত বারোটা। একটা লেগুনায় উঠলো ইশা আর শ্রাবণ। আরব আর তানি চলে গেলো আরবের বন্ধুর বাসায়। একা চলল ইশা আর শ্রাবণ। আকাশের অবস্থা মোটেও ভালো নয়। লেগুনা ভাঙা রাস্তায় ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে চলছে। ইশার একপাশে শ্রাবণ আর অন্যপাশে একজন বয়স্ক লোক। ভাঙা রাস্তার বদৌলতে বেচারি একবার এপাশে ছিটকে পড়ছে তো একবার ওপাশে। যা দেখে বয়স্ক লোকটি শ্রাবণের উদ্দেশ্যে বলল,
“তোমার বউরে ধইরা বহো মিয়া! রাস্তার অবস্থা দ্যাখছো? পইরা যাইবো তো।;
লোকটার কথা শুনে চোখ বড়বড় হয়ে গেলো ইশার। শ্রাবণ মুচকি হেসে লোকটার কথা মোতাবেক ইশার কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নিলো। ফের লোকটার উদ্দেশ্যে বলল,
“আসলে চাচা নতুন বিয়ে করেছি তো! মাঝেমাঝে তো মনেই থাকেনা আমার একটা বউ আছে।;
শ্রাবণের কথাটা শোনা মাত্র আশেপাশের আরও অনেক আরোহীরা হো হো করে হেসে উঠলো। ইশা শক্ত করে হয়ে বসে রইলো। শ্রাবণের উষ্ণ হাতটা বিচরণ করছে ইশার কোমরে। ইশা শুঁকনো গলায় ঢোক গিলে পাশ ফিরে তাকালো শ্রাবণের পানে। তাকালো শ্রাবণও। দু’জনের চোখাচোখি হয়ে গেলো কয়েক লহমার জন্য। ইশা তার কম্পিত দৃষ্টি খানা নামিয়ে আনলো মাটিতে। ঠিক তখনই শ্রাবণ ইশার কাছে এসে ধীর কন্ঠে বলে উঠলো,
“ভয় নেই। পড়বিনা।;
ইশার বুকের ভেতরটা বেজে উঠলো। লজ্জা লাগছে তার। মাথা নীচু করে নিতে একঝাঁক চুল এসে ঢেকে দিলো তার মুখখানা। অমনি যেন স্বস্তি মিললো তার।
#চলবে