ডাইনামিক হিস্ট্রি পর্ব ০৭

0
606

ডাইনামিক হিস্ট্রি

পর্ব ০৭

সানজানা জামান

ওমেগা প্রায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে।এরিন কোথায়,কিভাবে আছে আদো বেঁচে আছে কিনা সে তাও জানে না।প্রিয় মানুষ হারানোর বেদনা ভালো করে জানে সে।সে সময় এরিন ছিলো তাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য।কিন্তু এখন?এখন কে তাকে স্বান্তনা দিবে?এরিন যদি চিরকালের জন্য হারিয়ে যায়?মাথা ফেঁটে যাচ্ছে ওমেগার।পকেট থেকে সেলফোন টা বের করলো সে।লকস্ক্রিনে এরিনের হাস্যোজ্জ্বল ছবি দেখা যাচ্ছে।
-আই মিস ইউ মাই লাভ।আই নিড ইউ।

বলেই চোখের পানি ফেললো ওমেগা।চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার।কিন্তু কাঁদলে তাকে চলবে না।এরিন কে খুঁজে বের করতে হবে।

ফাদার যোসেফের সাথে গির্জায় দেখা করতে এসেছে ওমেগা।রাত প্রায় ১২টার কাছাকাছি।গির্জাটা একদম জনমানবহীন হয়ে আছে।এই গির্জাতেই তো সেদিন এরিন নিয়ে এসেছিলো ওমেগা কে।বিয়ে করার প্রস্তাব ও রেখেছিলো সেদিন।কিন্তু ওমেগা তাকে না করে দেয়।এখনো সে বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত না।এরিনের কিছুটা মন খারাপ হয় তাতে কিন্তু সে সামলে নেয় নিজেকে।আজ অনেক আফসোস করছে ওমেগা।সেদিন বিয়েটা করে নিলে হয়তো আজ এরিন তার চোখের সামনেই থাকতো।

-ফাদার যোসেফ কোথায়?
-উনি ওনার নিজস্ব কামড়ায় আছেন।

ওমেগা সন্ধিহানে পড়ে গেলো এই ভেবে যে তার কি ভিতরে যাওয়া উচিত হবে নাকি উচিত হবে না?ফাদার যোসেফের সাথে তার মোটামুটি ভালো সখ্যতা রয়েছে।সুতরাং গেলেও খারাপ হবে না।আর তাছাড়া তাকে যে এক্ষুনি এরিনের নিখোঁজ সম্পর্কে জানাতে হবে যদি তিনি কোনো পরামর্শ দেন।ওমেগা আর কিছু ভাবলো না।সোজা হাঁটা ধরলো ফাদার যোসেফের ঘরের দিকে…

———————————————-

আকাশে মেঘ গর্জন ডাকছে।মনে হচ্ছে তারা তাদের আর্তনাদটুকু গর্জনের মাধ্যমে বিলীন করছে।ওমেগা চুপ করে রাস্তায় হাঁটছে।আজ কান্না আসছে না তার।কান্না করে লাভ টা কি?কেউ স্বান্তনা দিতে আসবে না।এমনকি এরিনও না।কারণ এরিন যে আর এই দুনিয়াতেই নেই।তারা মেরে ফেলেছে।হ্যাঁ তারাই মেরে ফেলেছে।আর মেরেছে ফেলেছে তার সামনেই।সেদিন যেই মানুষটার মৃত্যু দেখে চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলো ওমেগা।সেই মানুষটা আর কেউ না তার এরিনই ছিলো।সেদিন সবচাইতে কাছের মানুষটার মৃত্যু দেখেও চিনতে পারলোনা সে।তারা তাকে দেখতে দেয়নি।আজ হয়তো চেহারাটা একবার দেখতে পেলে নিজের জীবন দিয়ে বাঁচিয়ে নিতো এরিন কে।বুক ফেঁটে কান্না আসছে তার।কিন্ত কিছুই যে হাতে নেই আর!!!কিছুই না!!!

প্ল্যানচ্যাটে বসেছে ওমেগা।উদ্দেশ্য একটাই এরিনের সাথে যোগাযোগ করা।সে মনোযোগ দিতে পারছেনা।ভিতরে থাকা আর্তনাদ যেন প্রাণ ভেদ করে বেরিয়ে আসতে চাইছে।কিন্তু তাকে যে মনোযোগ দিতেই হবে নাহলে চলবে না।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে।তারপর চোখ মুখ শক্ত করে এরিনের আত্না কে ডাকতে লাগলো সে।বাহিরের জানালা খুলে গিয়ে জোরে জোরে বাতাস বইছে।মাঝখানে থাকা মোমবাতিটাও প্রায় নিভু নিভু পর্যায়ে।আত্নাগুলো চারপাশে এসে চিৎকার চেচামেচি করছে।কিন্তু ওমেগা নির্বিকার।সে যে এরিনের জন্য অপেক্ষা করছে।অবশেষে সকল অবসাদ ঘটিয়ে এলো এরিন।
-এরিন মাই ডিয়ার!!!
চোখ দু’টো ঝাপসা হয়ে এলো ওমেগার।হাত বাড়িয়ে এরিন কে জড়িয়ে আহবান জানালো সে।এরিন কেবল হাসলো।
-আমি যে আর তোমাকে কখনো ছুতে পারবো না ওমেগা।তোমার হাত ধরে যে আর হাঁটতে পারবো না।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


এরিন যেন আর্তনাদ করছে।যেই আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে খুব ভয়ংকরভাবে।

-এরিন এগুলো সত্যি না।আমি স্বপ্ন দেখছি এরিন।বাজে স্বপ্ন!!!

হু হু করে কেঁদে উঠলো ওমেগা।এরিন এদিকে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।তার হাতে যে কিছু নেই।সে যে পৌঁছে গিয়েছে এক অন্য জগতে।যে জগত থেকে আর কখনো আসা যাবে না।

-কিছু স্বপ্ন না ওমেগা।সব সত্যি সব!!ওরা আমাকে মেরে ফেলেছে।ফাদার যোসেফ এবং তার ডাইনামিক দল আমার মাংসের টুকরা টুকরা করেছে সেদিন।
-তার মানে আমি একটু আগে দরজার আড়ালে যা শুনেছি সব অক্ষরে অক্ষরে সত্যি?
-হ্যাঁ সব সত্যি।এই যে এতো খুন এতো কিছু সব সত্যি সব!!!সেদিন তোমার সামনে যে মানুষটা খুন হয়েছিলো সেটা আমি এই এরিনই ছিলাম।তোমার দাদার দেওয়া যে রক্ষাকারী কবজ টা আছে তার জন্য তোমাকে কিছু করতে পারছে না।কিন্তু কবজের শক্তি শেষ হওয়ার সাথে সাথে তারা তোমাকেও মেরে ফেলবে।আমি এখন এর থেকে বেশি কিছু তোমায় বলতে পারবো না।ওরা আমাকে ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।আর তা নাহলে আমার আত্নাকে ধ্বংস করে দিবে।আর তাহলে আমি তোমাকে পরবর্তীতে কোনো সাহায্য করতে পারবো না।
-আমি এসবে যেতে চাই না এরিন।আমি শুধু তোমার সাথে থাকতে চাই।তোমার হাত ধরে হাঁটতে চাই অনন্তকাল।
-জীবনে কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনার ফলে বহু বিচ্ছেদ ঘটে ওমেগা।অনেক আশা ভরসা বিলীন হয়ে যায় তার যাতাকালে পড়ে।মনে করো যে আমরাও সেই যাতাকালে হারিয়ে গিয়েছি।
-আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না এরিন।ট্রাস্ট মি!
-আই ট্রাস্ট ইউ মাই লাভ।এখন এসব বলার সময় না।উঠে পড়।তোমার যে অনেক কাজ বাকি।ওই নোংরা খেল যে তোমাকে শেষ করতে হবে।।
-আমি পারবো না এরিন।আমি নিঃস্ব।আমাকে দিয়ে হবে না।
-আমি তো এই ওমেগাকে চিনি না।তোমাকে আমার জন্য লড়তে হবে।আমি যাদের কারণে তোমার থেকে দূরে সরে গিয়েছি তাদের জন্য লড়তে হবে।আর তাছাড়া তুমি একজন সাহসী অফিসার।তুমি কি চাও তোমার শহরের ক্ষতি হোক?
-আমি কিছু চাই না।আমার কিছু লাগবেনা।কাম ব্যাক এরিন।
-পাগলামি করো না ওমেগা।এখন পাগলামি করার সময় না।এতে তোমার সুযোগ নিবে তারা।যাও প্রিপেয়ার হও।ডাইনামিক দের বিনাশ করতে হবে তোমায়।আমাকে যেতে হবে এখন।পরে দেখা হবে কোনো এক সময়।

গায়েব হয়ে গেলো এরিন।ওমেগার চোখে মুখে এখন ভয়ংকর এক ছাপ।প্রিয় মানুষকে হারানোর স্পষ্ট বেদনা ভাষা যেন ফুটে উঠেছে।

#চলবে…..

(কাল শেষ পর্ব এবং সমস্ত রহস্য উদঘাটন হবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে