ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল পর্ব_২০

0
2519

ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল
পর্ব_২০
লেখিকা : আফরোজা আক্তার

বেলীর কথা গুলোর মাঝে লুকায়িত কষ্টটা খুব সহজেই ইরফানের চোখে লাগে । তার চলে যাওয়ার পর রুবি যে এমন কিছুই করবে সেটা তার জানা ছিল । তবে এতে বেলীর না আছে কোন অভিযোগ না আছে কোন অনুযোগ । বেলী সবটাই মেনে নিয়েছে । ইরফান কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না । তবুও একটু চেষ্টা সেও করবে । বেলীকে জোর করে শোয়া থেকে তুলে সে । তারপর ইরফান তার সামনে সরাসরি বসায় বেলীকে । খুব শান্ত নজরে তাকিয়ে আছে সে বেলীর দিকে । আর বেলী তাকিয়ে আছে নিচের দিকে । চোখ মুখ ফুলে একাকার । মনে হচ্ছে কেঁদেছে অনেক্ষণ যাবত । নিরবতা ভেঙে ইরফানই বলে ওঠে ,

– এত কষ্ট কিসের , বলা যাবে আমায় ?
-…………….
– দেখি আমি অধম কষ্ট কমাতে পারি কিনা ?
-…………….
– কি হলো ? কথা বলবা না ?
– একটা প্রশ্ন ছিলো ।
– হ্যাঁ করো ?
– আমি হঠাৎ এত ভালো হলাম কেন আপনার কাছে ? আর রুবি আপু-ই বা কেন খারাপ হলো আপনার কাছে ?

বেলীর প্রশ্নের সঠিক উত্তরটা ইরফানের কাছে নেই । পরিস্থিতিটাই একদম অন্যরকম এখন । চাইলেও সব কিছু ঠিক করা যাবে না । আর গেলেও সময় লাগবে । আপাতত বেলীর প্রশ্নের উত্তর কি দিবে সেটাই ভাবছে ইরফান ।

– বেলী,,,,,,,,,,,,?
– হু ,
– সারাদিন খাও নি কেন ?
– আমি প্রশ্নটা করছি কি তার উত্তর দেন ।

বেলীর কথায় ইরফান বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় । বেলীর রুমে একটা জানালা আছে । সেই জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় ইরফান । হাতে ধোঁয়া উঠা কফির মগ , পরনে কালো টাউজার আর ব্রাউন কালারের টি-শার্ট । বেশ হ্যান্ডসাম লাগছিল ইরফানকে তখন । বেলী এক ধ্যানে তার বরকে দেখছে ।

– উত্তর দেন আমার প্রশ্নের ।

বেলীর এমন কথায় ইরফান মুচকি হেসে কফির মগে চুমুক দেয় । তারপর বলতে শুরু করে ।

– আমি ছোটবেলা থেকে বরাবরই একা থেকেছি । একা একা স্কুলে যাওয়া কলেজে যাওয়া , কি করার ছিল , আমাকে জন্ম দেয়ার পরেই নাকি মা মারা গেছেন । সেই থেকেই আমি একা একা বড় হয়েছি । মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি সম্পর্কে ততটা জ্ঞান নেই আমার । ভার্সিটিতে মেয়েদের চাল-চলনই ছিল এমন যে ভেবেছি হয়তো এটাই মেয়েদের আচরণ । হুট করেই বাবা বিয়ে করতে বললো , তাও গ্রামের একজন মেয়েকে । যেখানে ৫ বছরে আমি ঢাকার মেয়েদের চলাফেরা পোশাক-আশাক এ নিজেকে মানিয়ে নিয়ে ছিলাম । আমি সব সময় চাইতাম আমার বউ হবে হাই এডুকেটেড , চলাফেরা হবে স্ট্যান্ডার্ড , অনেকটা রুবির মতই । বাবার প্রতি অনেক মেজাজ খারাপ হয়েছে আমার , আমার অমতে আমাকে বিয়ে করতে বললো তাও তোমাকে । বার বার বলেছিলাম বিয়ে করবো না ও-কে আমার আব্বাজান শুনলেনই না আমার কথা । যাই হোক , বাবার সাথে জিদ করেই বিয়ে করলাম তোমাকে , কিন্তু মন থেকে মানতে পারতাম না । ওই জিদের জন্যেই তোমার সাথে এত খারাপ ব্যবহার করতাম সাথে মারধরও করতাম । অন্যদিকে রুবি আমার লাইফে এসেছে তুমি আসার পরে । ওর চলাফেরা কথাবার্তা স্ট্যান্ডার্ড সাথে ও অনেক মর্ডান ছিল যা দেখে মোহে পড়ে গেছিলাম । বিয়ে অবদি যাবো ভাবি নি । কিন্তু রুবি অনেকটাই বাধ্য করলো বিয়েটা করতে , ভাবলাম ভালোই থাকবো কিন্তু মন জিনিসটার উপর কারো হাত থাকে না । রুবি ব্যস্ত তার ফেসবুক , স্ট্যাটাস , বন্ধু-বান্ধব , ঘুরাঘুরি , শপিং এইসব নিয়ে । আমি নিজেও জানি না কেন এমন হচ্ছে , আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি , তার মানে এই নয় যে আমার কাছে রুবি খারাপ হয়ে গেছে । রুবি এই জিনিসটাই মানতে পারছে না যে , আমি তোমার কাছে থাকছি । ভুল আমার একটাই , দ্বিতীয় বিয়ে করা , আর গর্দভের মত দুই বউকে একই বাসায় রাখা । এই সিচুয়েশানটা আমি চাইলেও হয়তো ঠিক করতে পারবো না ।

ইরফানের কথা শুনতে শুনতে বেলীর চোখ থেকে নিজের অজান্তেই পানি পড়ে যাচ্ছে । বেলীও চুপ করে সব শুনলো । তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দেয় , আর তারপর সে বলে ,

– তাহলে কাজ করেন ,
– বলো কি ?
– আমাকে ডির্ভোস দিয়ে দেন , আর রুবিকে নিয়ে ভালো থাকুন ।
– হা হা , এটা তো কখনই সম্ভব না । কারণ তুমি সেই নারী যাকে আমার বাবা পছন্দ করে এনেছে । তোমাকে ছাড়া সম্ভব না ।
– বাবার পছন্দকে যখন সম্মানই করেন নি এখন আর বলে কি হবে ?
– শুনো বেলী , আমি তো রুবিকে বলি নি যে আমি ওর সাথে থাকবো না বা কিছু । আমি বলেছি আমি বেলীকেও সেই সম্মানটা দিবো যেটা ওর পাওনা ।
– কিন্তু সে তো এটা চায় না ।
– এটাই তো পয়েন্ট , বুঝো না কেন তুমি এটাই তো মেইন পয়েন্ট । সে চায় আমি শুধু তাকে নিয়েই মেতে থাকি । তো আমি ছিলাম তো মেতে তাকে নিয়ে , ফায়দা কি হলো , আমি যখন তোমাকে মারধর কর‍তাম আমি তখন ওর চোখে পৃথিবীর সেরা স্বামী । যখন সে দেখলো তার স্বামী তার সতীনকে প্রায়োরিটি দিচ্ছে তখনই আমি দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ খারাপ স্বামী ।
– কোন মেয়েই পারে না স্বামীর ভাগ দিতে ।
– তাহলে তো বলতে হয় , তুমিও তো মেয়ে , তুমিও তো স্বামীর ভাগ দিয়েছিলে , উহু তুমি তো পুরো স্বামীটাকেই দিয়ে দিছো ।
– আমি তো পরিস্থিতির স্বীকার মাত্র ।
– আমি জানি না কি করা উচিত আমার , তবে এতটুকু সিউর থাকো যে আমি তোমাকে ছাড়ছি না , কখনো না ।
– তাহলে রুবি আপু ?
– আমি তো রুবিকে বলিনি যে আমি রুবিকে ছেড়ে দিবো , সে চলে গেছে আবার তার বাপের বাড়ি । এখানে আমার কি করার আছে ।
– ফিরিয়ে নিয়ে আসেন ,
– এই থামো থামো , এটা মিনুর দেখা স্টার জলসার কোন সিরিয়াল না যে ন্যাকামি হবে এখানে । এটা বাস্তবতা , এখানে সব হয় শুধু ড্রামা হয় না । যেই মানুষকে ভালোবাসা যায় তাকে ছাড়া যায় না । তুমি ছাড়তে পারছো আমায় ? এত মারধরের পরেও কেন পড়েছিলে এখানে । যেখানে সে বার বার বাপের বাড়ি দৌড় দেয় । আর তুমি কাকে ফিরিয়ে আনতে বলো , যে তোমাকে ভাতের খোটা দেয় তাকে । এইসব আমায় বলো না বেলী ।
– কাউকে কষ্ট দিয়ে যে আমি ভালো থাকবো না । তার অভিশাপ লাগবে আমার উপর ।
– শকুনের দোয়ায় গরু মরে না । এইসব বাদ দাও ।

মানুষের তার স্বীয় কর্মের উপর হাত থাকে না । ভুল কৃতকর্মের জন্য সারাজীবন পস্তাতে হয় । আর সেই ভুল কৃতকর্মের মাশুল দিতে গিয়ে হয়তো সারাটা জীবন পার হয়ে যায় । ভিন্ন ভিন্ন সময়ে মন ভিন্ন ভিন্ন আবেগ পালে , কিন্তু একটা সময় আসে যখন সব আবেগ বিবেকের কাছে ধুয়ে মুছে যায় । তখন মানুষ শক্ত হয়ে যায় । ইরফানেরও একই অবস্থা । আগে সত্যিটাকে মানতে পারেনি , আর এখন মেনেছে তবে আরেকটা ভুল করার পর মেনেছে । যেই ভুলটা হয়তো ঠিক করা যাবে না আবার হয়তো যতদিন বাঁচবে ততদিন এই ভুলটাকে মেনে নিয়েই বাঁচাতে হবে । নিয়তির উপর কারো হাত থাকে না । ভাগ্য বড় স্বার্থপর একটা জিনিস । সে তার মত করেই সব নিয়ন্ত্রণ করে । মনের দিকটা বিবেচনা করার সময় এবং সুযোগ কোনটাই তার কাছেও থাকে না ।

বেলী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে । তারপর উঠে গিয়ে ইরফানের কাছে এসে তার পাশে দাঁড়ায় । ইরফানের দিকে চেয়ে আছে সে । আর ইরফান জানালার দিকে । দুচোখে ঘোর লাগানোর মত চেহারা ইরফানের । যেই চাহনির প্রেমে পড়তে বাধ্য যে কোন নারী । ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি টা বরাবরই মানায় ইরফানকে । বেলী কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর ইরফানকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলে উঠে ।

– ভালোবাসা এবং ভালোলাগা দুটো সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস । আপনার হয়তো আমায় ভালো লাগে । ভালোবাসা টা আপনার পক্ষ থেকে আমার জন্যে না ইরফান সাহেব ।

বেলীর কথা শুনে ইরফান ঘাড় ঘুরিয়ে বেলীর দিকে তাকায় । তারপর মুচকি হেসে কফির মগে চুমুক দেয় ।

– তুমি এই কয়েকদিনে অনেক ম্যাচুয়ার হয়ে গেছো বেলী । বড়দের মত কথা বলতে শিখে গেছো ।
– চাইলেও তো ছোট হয়ে থাকতে পারবো না । তবে আপনার আমাকে তুমি করে বলাটা কেমন জানি লাগে আজকাল । আপনি আমায় তুই করেই বলেন । ওইটাই আপনার মুখে বেশি মানায় ।
– তুই শব্দটা তোমার সাথে বেমানান যদিও আমিই তুই তুকারী করতাম বেশি , তবে কেন জানি এখন আর এইসব ভালো লাগে না ।
– অনেক কাছের আর আপন মানুষকেই মানুষ তুই করে বলে ।
– আচ্ছা বেশ , একটা কথার জবাব দেও , এই যে বললে ভালোবাসা আর ভালোলাগা দুটো সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস এটা কি তুমি ভেবে বললে ?
– হু ,
– ওকে , ভালোলাগা থেকেই কিন্তু ভালোবাসার জন্ম হয় । আমার কাছে তোমার সব কিছুই ভালো লাগে । এমনকি আমার কাছে গোটা তুমিটাকেই ভালো লাগে । তাই হয়তো ভালোবাসাটাও জন্ম নিয়ে নিয়েছে ।
– কি জানি , এত কঠিন ভাষা বুঝি না আমি ।
– এর থেকে বেশি বুঝেন আপনি , এখন খেতে আসেন । খাওয়ার পর মেডিসিন নিবেন । তারপর আবারও ঠিকঠাক মত একটা মাইর দিবো ।

এমন কথা শুনে বেলীর মনটা নিমিষেই কালো আঁধারে ছেয়ে যায় । ইরফান বেলীর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে বেলী হঠাৎ এমন হয়ে গেলো কেন । তারপর বেলীর হাতের আঙুলের ফাঁকে নিজের হাতের আঙুলগুলো রেখে শক্ত করে বেলীর হাতটা ধরে নেয় ইরফান । তারপর বেলীর দিকে চেয়ে বলে ,

– সারাদিন খান নাই কেন ? এর শাস্তি তো পেতেই হবে । আমি বলে গিয়েছিলাম যে ঠিকমত খেতে হবে এবং মেডিসিন নিতে হবে । কিন্তু আপনি কি করছেন ?
– রুবি আপু এমন ভাবে কথা বললো যে আর খাওয়া পেটে যায় নি ।
– রুবির কাজই এমন , কিন্তু তোমার খেয়াল রাখা উচিত ছিল । ডাইনিংয়ে চলো , আমি মিনুর সামনে একটু চিংগারি ফেলবো ওমনি মিনু জ্বলে উঠবে ।
– মিনু তো মিনুই ,
– মিনুর ভাষায় তুমি খবিশ মাতারি । আজ সকালে না বললো । আচ্ছা ওয়েট খবিশ মানে তো খারাপ কিন্তু মাতারি মানে কি ?

এইবার বেলী হাসতে বাধ্য হয় । খিল খিল করে হেসে দেয় । ইরফানের লক্ষ্য ছিল বেলীকে হাসানে । আর বেলী হেসেছে , এটাই অনেক তার কাছে । বেলীর দিক থেকে নজর সরিয়ে ইরফান এইবার রুমের দিকে নজর দেয় । বেলীর রুমটা সে সাজিয়ে দিবে । নিজের করা কিছু ভুল কিছুটা হলেও ঠিক করবে সে ।

– কি হলো , দাঁড়িয়ে গেলেন যে ?
– হু,,,,, বলো ,
– কি বলতাম ?
– নাহ , চলো ।

রাতে খাবার খেয়ে বেলী তার রুমে শুয়ে আছে । ভাবছে কিছু কথা । জীবন তাকে কোথায় এনে দাড় করিয়ে দিয়েছে । কি আছে তার জীবনে ? ইরফান কতদিন রুবিকে বুঝিয়ে যাবে ? আর রুবিকি এইভাবে চুপচাপ বসে থাকবে ? সব কিছু ঘুরেফিরে তার দিকেই আসবে । সে এখন নিরুপায় হয়ে গেছে । মনটা বার বার ইরফানকে চাইছে । সে সব ভুলে যেতে চায় । সে ভুলে যেতে যায় ইরফানের করা সব ভুলকে । সে ভুলে যেতে চায় ওইসব খারাপ দিন গুলোকে । তার ভেতরের আত্মাটা কেন জানি বার বার ইরফানকে খুজে । বেলী ভালোবাসে ইরফানকে , হ্যাঁ অনেক ভালোবাসে । এতটাই ভালোবাসে যে যার প্রতিক্রিয়া হয় না । ইরফান অনেক বদলে গেছে ইদানীং । এতটা বদলে যাবে আশা করেনি বেলী । হয়তো আল্লাহ পাক এটাই চেয়েছেন । আল্লাহ পাক নাকি পরীক্ষা নেন , তাহলে কি এটাই ছিল সেই পরীক্ষা । আল্লাহ পাক বলেছেন ধৈর্য ধারণ করো , অপেক্ষা করো । সেই অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয় । তাহলে কি এটাই ছিল সেই অপেক্ষার মিষ্টি ফল ।

এরই মাঝে রাজুর চিন্তা মাথায় চলে আসে বেলীর ।

– রাজু ভাই কি অন্যায় করেছিল ? রাজু ভাইয়ের তো কোন দোষ ছিল না ? সে তো ভালোবাসতো আমায় । তাহলে আল্লাহ পাক কেন আমায় ওনার সাথে জুড়ে দিলেন ?

মনে মনে ঘুরপাক খেতে থাকা প্রশ্ন গুলো বড্ড বেশিই জ্বালাচ্ছে বেলীকে ।

– নাহ , আমি রাজু ভাইকে নিয়ে ভাববো না । এইসব ভাবাও পাপ আমার জন্যে । আমি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে কি হবে যদি স্বামী ব্যাতিত অন্য কাউকে মনে ধারণ করি । রাজু ভাই আমার অতীত । আর সে আমার বর্তমান । সে যেমনই হোক সে আমার বর্তমান । এটা পাপ হয়ে যাবে ।

আবার নিজেকেই নিজে শান্তনা দেয় এইসব বলে । হঠাৎই বুকটা দুইপাশ থেকে চাপ দিয়ে নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসে বেলীর । উঠে তাড়াতাড়ি পানি খেয়ে নেয় সে । তারপর কিছুক্ষণ দম ধরে বসে থাকে বিছানার উপর । ইরফান হয়তো নিজের রুমে । খাবার সময়ই বলেছিল অফিসের কিছু কাজ আছে , বেলী যাতে চুপ করে ঘুমিয়ে যায় । ইরফান কাজ শেষ করেই আসবে । মিনুও গেষ্ট রুমে শুয়েছে । যদি মিনু বেলীর কাছে শোয় তাহলে তো ইরফান আসতে পারবে না তাই মিনু বেচারি গেষ্ট রুমেই ঘুমায় । ব্যাথাটা কমার পর বেলী উঠে জানালার পাশে এসে দাঁড়ায় । হঠাৎই নিজের মুখ থেকে বের হয়ে যায় ,

– আমি ওনাকে ভালোবাসি এটা আমার অপরাধ না । উনিও এখন আমায় চায় এটাও অপরাধ না । আমি বেলী কোথায় যাবো এখন , আমি যে তাকে মনে ধরেছি , মনের মাঝে বদ্ধ থাকা পুরো জায়গাতেই তার নাম । আমার তাকে চাই , একবার হলেও চাই ।

বেলী একবার হলেও চায় তাকে
একটু ভালোবেসে পেতে কাছে

বেলী চেয়ে আছে তার পানে
দৃষ্টি তাহার ওই দূরে

এক লহমার জন্যই হোক
তবুও বেলী একবার চায় সুখের মিলন হোক

বেলীর মুখ থেকে হঠাৎ করেই এইসব বের হয়ে যায় । তখনও দৃষ্টি তার রাতের আকাশে তারার দিকে । এমন সময় ,

” হোক না একবার সুখের মিলন , খুব বেশি কি ক্ষতি হবে ? ”

পিছন থেকে এমন কথা শুনে দ্রুত পিছনে তাকায় বেলী । টাউজারের দুই পকেটে হাত দিয়ে দরজা থেকে একটু ভেতরে এসে দাঁড়িয়ে আছে ইরফান । তার মানে ইরফান সবটা শুনে নিয়েছে । বেলী আর ইরফানের দিকে তাকানোর সাহস পায় নি । তাই আবার এক ঝটকায় জানালার দিকে ফিরে যায় সে । ইরফান আস্তে আস্তে হেটে বেলীর পিছনে এসে দাঁড়ায় । তারপর বেলীর কাঁধে হাত রেখে বলে ওঠে ,

– একটু সুখের মিলন হলে , খুব বেশি কি ক্ষতি হবে বেলী ?

.
.

চলবে…………………….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে