ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল
পর্ব_১৮
লেখিকা : আফরোজা আক্তার
বেলীর পুরো শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে । বিছানায় আধ-মরা হয়ে থাকা বেলীকে দেখে বড্ড বেশি মায়া হচ্ছে ইরফানের । শরীর হাত পা কেমন ঠান্ডা হয়ে গেছে বেলীর । অনেক ভয় পাচ্ছে ইফরান । কি করবে না করবে বুঝতে পারছে না সে । নিশ্চুপ হয়ে পড়ে থাকা বেলী একবারের জন্যেও চোখ খুলছে না ।
অন্যদিকে অফিস থেকে এসেই ইরফানের বেলীর রুমে যাওয়া একদম সহ্য হয় নি রুবির । সে রুমের মধ্যে বসে থেকেই নিজের তেজ কমাচ্ছে জিনিসের উপর । সে শুধু অপেক্ষায় আছে কখন ইরফান এই রুমে আসবে আর সে ইরফানকে ধরবে । অনেক হিসেব নিকেশ বাকি আছে তার ইরফানের সাথে । সব কিছুর শোধ তুলতে হবে তাকে । আজ এক্ষুনি এবং এই মুহুর্তে ।
ইরফান তাড়াতাড়ি নিজের রুমে আসে থার্মোমিটার নেয়ার জন্যে বেলীর জ্বর মাপবে বলে । আর কোন রকম চেঞ্জ করে বেলীর কাছে যাবে বলে । কিন্তু ইরফান রুমে আসার সাথে সাথে রুবি দরজা আটকে দেয় । মোট কথা সে এই রুম থেকে আজ ইরফানকে বের হতে দিবে না । রুবিকে দেখে ইরফানের মেজাজ এমনিতেই অনেক খারাপ তার উপর এইভাবে দরজা আটকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকায় আরও মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে তার । প্রথমে কিছুই বলে নি ইরফান । ওয়াসরুমে গিয়ে কোন রকম ফ্রেশ হয়ে টাউজার আর গেঞ্জি পরে থার্মোমিটার হাতে নিয়ে দরজার কাছে যায় ইরফান । রুবি এত পরিমান ঠ্যাটার ঠ্যাটা যে সে ওইখানেই এখন অবদি দাঁড়িয়ে আছে । এইবার ইরফান আস্তে করেই কথা বলে রুবির সাথে ,
– কি ব্যাপার , এইখানে এইভাবে দাঁড়িয়ে কেন আছো ?
– কোথায় যাচ্ছো তুমি ?
– বেলীর কাছে ।
– কি কারণে , আমি যে তোমার ঘরে আছি , এতে তোমার হয় না ?
– দেখো রুবি রাত সাড়ে ৯ টা বাজে । আমি খুব ক্লান্ত , তার উপর বেলীর প্রচন্ড জ্বর । আমাকে যেতে দাও ,
– ও মরে যাক , তবুও তুমি যাবে না ।
রুবির কথা শুনে ইরফানের পায়ের রক্ত মাথায় চড়ে যায় । এটা কি বললো রুবি , এ কেমন মানুষ যে অন্য আরেক মানুষের মৃত্যু কামনা করে । তবুও নিজের মেজাজ কন্ট্রোলে রেখে ঠান্ডা মাথায় আবারও রুবিকে বোঝাতে থাকে সে ,
– রুবি আমি এখন ঝগড়ার মুডে নাই , প্লিজ আমাকে যেতে দেও ।
– তুমি যাবে না ,
– আমি তো যাবোই রুবি ,
– নাহ যাবা নাহ ।
– তোমার সমস্যা কোথায় ?
– আমার সমস্যা ওই বেয়াদব মেয়েটা , ও কি তাবিজ করেছে তোমাকে যে আমি থাকা স্বত্ত্বেও তুমি ওর দিকে যাচ্ছো । আগে তো ও-কে দেখতেই পারতা না , এখন কি হয়েছে ইরফান ।
– একটা কথা আছে জানো তো রুবি , যার চিন্তাভাবনা যেমন সে বলবেও তেমন । তুমি একজন এডুকেটেড মেয়ে হয়েও এইসব নোংরা মানসিকতার চিন্তাভাবনা নিয়ে পড়ে আছো ।
– হ্যাঁ আমি নোংরা মানসিকতার মানুষ তবুও তুমি যাবা না ওর কাছে ।
– লাষ্ট টাইম বলতেছি আমি , তুমি সরে যাও আর আমায় যেতে দাও ।
– তুমি যাবা না , যাবা না , যাবা না ।
– আমি যাবো , যাবো , যাবো ।
– ইরফান তুমি বদলে গেছো , ওই গাইয়া মেয়েটার জন্যে তুমি বদলে যাচ্ছো ইমরান
– হ্যাঁ , আমি বদলে গেছি । আমি আগে জানোয়ার ছিলাম এখন মানুষ হচ্ছি ।
বিগত ৫ মিনিট যাবত একই বিষয়ে ঘ্যান ঘ্যান করেই যাচ্ছে রুবি যা আর সহ্য হয় নি ইরফানের । ইরফান এইবার ধাক্কা দিয়ে রুবিকে সরিয়ে দেয় ।
– বলেছিলাম না , বেশি বিরক্ত করো না আমাকে ।
– তুমি আমাকে ধাক্কা দিলা ?
– মাত্র তো ধাক্কা দিলাম , এরপর বেশি বাড়াবাড়ি করলে পা ভেঙে হাতে ধরিয়ে দিবো । মাথায় রাখবে কথাটা ।
– ইরফান তুমি যাবা না ,
– আমি যাবো , বিয়ে যেমন দুইটা করেছি । দায়িত্বটাও সমান ভাবেই নিবো আমি ।
– হয় তুমি ওরে রাখবা নয়তো আমায় ।
– তুমি থাকতে চাইলে থাকবে না থাকতে চাইলে চলে যাবে , ব্যাস ।
– ইরফান ,,,,,,,,,,,,?
– গলা নামিয়ে কথা বলো , বার বার বলেছি আমি ক্লান্ত আমি ক্লান্ত , ডিস্টার্ব করো না আমায় । মেয়েটা জ্বরে অচেতন হয়ে পড়ে আছে আর তুমি এখানে আমায় আটকে রেখেছো , এইগুলা কি মানুষের কাজ ?
– আজ হঠাৎ মানুষ হয়ে গেলে , অন্যান্য দিন তো বেলী বলতেই মারধর আর আজ আদর যত্ন , ব্যাপার কি ?
– আগে অমানুষ ছিলাম , এখনও অমানুষই আছি আমি । মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি শুধু । বাকি উত্তর গুলো সময় অনুযায়ী পেয়ে যাবে ।
ইরফান রুবির সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে । আর রুবি রুমের মধ্যে থেকেই সব তোলপাড় করে ফেলছে । তার একটাই সমস্যা ইরফান কেন বেলীর কাছে যায় । ইরফান এই মুহুর্তে আর অন্য কিছু ভাবতে ভালো লাগছে না । সে এখন থেকে এই মুহুর্ত থেকে শুধুই বেলীকে নিয়ে ভাবছে ।
বেলীর রুমে এসে অচেতন বেলীর শরীরের তাপমাত্রা চেক করার জন্যে থার্মোমিটার কাজে লাগায় ইরফান । ওয়াসরুম থেকে বালতি ভরে পানি নিয়ে আসে বেলীর মাথা ধুইয়ে দিবে বলে । বেলীর শরীরের বিন্দুমাত্র শক্তি নেই যে সে উঠে বসবে বা শুয়ে থেকেই শরীর নাড়াবে । থার্মোমিটারে ১০৩ ডিগ্রী জ্বর দেখে ঘাবড়ে যায় ইরফান । ধরেই জ্বর ১০৩ এ পৌঁছে গেছে । এইজন্যই হুশ নেই বেলীর , হু , হা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছে না সে । ইরফান মিনুর কাছ থেকে পলিথিন নিয়ে এসে বেলীকে ঠিক করে শুইয়ে দেয় বিছানায় । আজ ইরফান কফিও খায় নি । মিনু এসে দেখে ইরফানের কফির মগে কফি পড়ে আছে ।
– ভাই , কফি খাইলেন না ?
– নাহ , নিয়ে যা ।
– আপনের তো কফি না খাইলে হয় না ।
– কফি না খেলে মরে যাবো না , তুই নিয়ে যা । আর ও কিছু খেয়েছে ?
– নাহ ভাই , ভাবী তো কিছুই খায় নাই ।
– আচ্ছা যা , আমি ওর মাথায় পানি দিয়ে দেই আর তুই ওর খাবারের ব্যবস্থা কর ।
– আইচ্ছা ভাই ।
এই সময়েই মিনুর মাথায় চট করে বুদ্ধি আসে । এই সুযোগ , সুযোগটা কাজে লাগাবে সে । আজ রুবি যা যা বেলীকে যা যা বলেছে যা যা করেছে সব বলে দিবে সাথে বাড়তি কথাও বলবে । মিনু মানেই ধামাকা , তাই সে আর সময় নষ্ট করে নি ।
– হায়রে ভাবী , যত কইলাম আমি ধুইয়া দেই আমি ধুইয়া দেই হুনলেন না আমার কতা ।
– কি হইছে , কি ধুয়েছে ও ?
– আর কইয়েন না ভাই , রুবি ভাবী আইয়া এইযে শুরু করছে , বেলী ভাবীরে যা মুখে আইছে তাই কইছে । তারপর ভাবীরে দিয়া সেতির সব জামা কাপড় ধোয়াইছে তাও অবেলায় । এল্লাই মনে হয় জ্বর আইছে ।
– কিহ !!
– হ ভাই , ছে ছে কি বিচ্চিরি গালি দিছে ভাবীরে , ভাবী চুপ কইরা আছিলো । কিছুই কয় নাই । খালি কানছে ,
– তুই যা , বাকি কাজ কর ।
মিনুর কথা গুলো শুনে ইরফানের শরীরটা রাগে কাঁপতে থাকে । ইচ্ছা করছিলো রুবিকে এক লাথি মেরে ঘর থেকে বের করে দিতে । কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই তার । রুবিও তার স্ত্রী , তার উপর ভালোবেসে বিয়ে তাদের । এখন চাইলেও এইভাবে কিছুই করা সম্ভব না । সব ভুলে গিয়ে বেলীর মাথায় পানি ঢালে ইরফান । মেয়েটা এত অসুস্থতার মাঝেও টু-শব্দও করছে না ।
– তুই এত সহজ সরল কেন বেলী , কেন আমাদের জীবনটা এমন হয়ে গেলো ? আমি এত অবুঝ হয়েছিলাম যে তোকেই বুঝলাম না । এত মারধরের পরেও আমার কাছেই আছিস , এত চুপচাপ কি করে থাকিস তুই ? এত চাপা স্বভাবের কেন তুই বেলী ? আমার মনটা কেন জানি তোর দিকেই ঘুরে যাচ্ছে রে । প্লিজ ভালো হয়ে যা তুই ।
এই কথাগুলো মনে মনে বলতে থাকা ইরফানের অন্তরটা হু হু করে উঠে । বেলীর জন্যে তার মায়া দিনকে দিন বেড়েই চলছে । কেন যেন নিজের মনকে সে বশে রাখতে পারছে না । বার বার মন তার বেলীর দিকেই টানছে । আসলে সবাই ঠিকই বলে , বেলীফুল সবার মাঝে শুধু সুবাস ছড়াতেই পারে বিনিময়ে তার কিছুই চাই না ।
প্রায় এক ঘন্টা সময় নিয়ে ইরফান বেলীর মাথায় পানি দিয়েছে । তারপর টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছে দিয়েছে । শরীরে অনেক তাপমাত্রা বেলীর , তাই ভাবছিল যদি পুরো শরীরটা মুছে দেয়া যায় তাহলে ভালো হতো । এই এত দিনের মাঝে বেলীকে এত অসুস্থ হতে সে আজ দেখলো । ফার্মেসিতেও যাবে সে জ্বরের মেডিসিন নিয়ে আসবে বেলীর জন্যে ।
মিনুকে ডেকে বেলীর কাছে মিনুকে রেখে ইরফান বাসা থেকে বেরিয়ে যায় । ওইদিকে রুবির মেজাজ তুঙ্গে পৌঁছে গেছে । সে এইসব কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না । তার এই মুহুর্তে বেলীকে গিয়ে বিষ দিতে মন চাইছে । কিন্তু উপায় নেই ।
আধা ঘন্টা পর ইরফান মেডিসিন নিয়ে বাসায় আসে । মিনুকে খাবার আনতে পাঠিয়ে দিয়ে সে বেলীর পাশে বসে যায় । বেলী তখনও জ্বরের ঘোরেই আছে । মিনু এইদিক দিয়ে বেলীর শরীরটা মুছে দেয় । মিনু ভাত নিয়ে এলে বহু কষ্টে ইরফান বেলীকে ভাত খাওয়াতে পারে । বেলী তো ঠিকমত বসতেই পারে না ভাত খাবে কি । তার একটাই কথা ,
– এইগুলা সরান সামনে থেকে , আমি খাবো না ।
– মেডিসিন নিতে হবে তো , অল্প কয়টা খাও ।
– খাবো না সরান এইগুলা সামনে থেকে ।
– অল্প কয়টা ভাত খাও বেলী এমন করো না , হা করো ।
– এইগুলা কি ?
তখন মিনু বলে উঠে ,
– অকি ভাবী , আপনেই তো রানলেন , মুরকার মাংস । লন ভাত খাইয়া লন ।
– এইগুলা সরান সামনে থেকে , গন্ধ লাগে এইগুলা ।
– অকি , কি সব কয় মাতারি । ভাবী পোলাপাইনের মত কইরেন না তো । খাইয়া লন হেরফরে ওষুধ খান ।
বেলী খাবেই না , তরকারি দিয়ে তো আরও আগেই খাবে না । তাই ইরফান ভাতে পানি দিয়ে পানিভাত করে খাইয়ে দেয় বেলীকে । বেলীর জ্বরের ঘোর প্রকট হলেও সে বুঝতে পেরেছে ইরফান তাকে খাইয়ে দিচ্ছে । আর ইরফানের হাত থেকে বিয়ের এতদিন পর সে খাচ্ছে । মুহুর্তেই তার চোখে পানি চলে আসে । তবে ইরফান ভাবছে শরীরের যন্ত্রণার জন্য বেলী কাঁদছে । সর্বোচ্চ ৬/৭ লোকমা ভাত খায় বেলী । তারপর আর পেটে যায়নি তার । ইরফানও আর জোর করে নি । যতটুকু পেরেছে খেয়েছে । তারপর ওষুধ খাইয়ে দেয় বেলীকে সে ।
কিছুক্ষণ পর বেলী চাপা আর্তনাদ শুরু করে । পুরো শরীর ব্যাথা তার । ব্যাথার চোটে কাঁদছে সে । ইরফান তখনও বেলীর পাশেই বসা । বেলীর কান্না সহ্য হচ্ছে না তার । আজ রাতে সে ভাতটাও খায়নি । সেই যে বেলীর কাছে বসা ছিল তখন থেকে এখন অবদি বসেই আছে সে । ঘড়ির দিকে নজর দিতে দেখে ঘড়িতে তখন ১২ টা বেজে ৫৫ মিনিট বাজতেছে । এতটা সময় পাড় হয়ে গেছে অথচ ইরফান বলতেও পারবে না । বিছানায় বেলী শরীর ব্যাথায় কাঁদতে থাকে ।
– বেলী কি হইছে ?
– আমার পুরো শরীর ব্যাথা করতেছে । উফফফ রে কি ,
– কোথায় কোথায় ব্যাথা ?
– পুরো শরীরটাই ব্যাথা , আল্লাহ রে ।
– বলো ,
– মাজাটা ফেটে যাইতেছে , পায়ের গিট গুলা ব্যাথা করতেছে ।
জ্বরের সময় অনেকের শরীর হাত পা অনেক ব্যাথা করে । তেমনটাই বেলীর হচ্ছে । এর আগের বারের কথা মনে পড়ে যায় ইরফানের । ঠিক এইভাবেই মান্থের পেইন সহ্য করতে হয়েছিল ও-কে । আর আজ আবার জ্বরের তাড়ণায় পাগল হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা । ইরফান মুভ এনে বেলীর হাতে পায়ে মালিশ করে দেয় । বেলীকে কাত করে এক পাশ করে শুইয়ে দিয়ে বেলীর কোমড়ে মুভ মালিশ করে দেয় সে । প্রায় অনেক্ষণ পর বেলী একটু শান্ত হয় । জ্বরটাও একটু নিয়ন্ত্রণে আসে আর শরীর ব্যাথাটা কিছুটা হলেও কমে বেলীর । শুয়ে শুয়ে ইরফানকে দেখছিল বেলী । ভেতরটা কেমন জানি করে উঠে তার । খুব খারাপ লাগছে ইরফানের জন্যে । নিজেকে অনেক বেশি অসহায় মনে হচ্ছে তার । ইরফানের মুখটাও কেমন শুকিয়ে আছে ।
– আপনি খাইছেন ?
– উহু ,
– মিনু কোথায় ?
– গেষ্ট রুমে , ঘুমাইতেছে ।
– চলেন আপনাকে খেতে দেই আমি ।
বেলীর মুখ থেকে এমন কথা আশা করেনি সে । নিজেই অসুখে মরে যাচ্ছে আর এখন সে ইরফানের খাবারের কথা ভাবছে । একি মানুষ নাকি অন্যকিছু । অবশেষে ইরফান নিজেই বলে ,
– কথা কম বলে শুয়ে থাকো ।
– খাবেন না তাই বলে ,
– ক্ষুধা লাগলে খেয়ে নিবো আমি । শুয়ে থাকো তুমি ।
– হু ,
ইরফানের কেন জানি বেলীকে কিছু বলত ইচ্ছে হচ্ছে । বেলীর কাছে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে । বেলীকে জড়াতে ইচ্ছে হচ্ছে ।
– বেলী ,,,,,,,,?
– হু ,
– একটা কথা বলি ?
– হু ,
– আমি তোমাকে ভালোবাসি ।
জ্বরের মাঝেও এমন কথা শুনে শরীরের তাপমাত্রা আরও বেড়ে যায় বেলীর । ইরফানের মুখ থেকে এই কথাটা তাও এই মুহূর্তে সে একদম আশা করেনি । এরই মাঝে ইরফান আবারও বলা শুরু করে ।
– ভালোবাসি তোমাকে আমি !
এর পর বেলীও বলতে শুরু করে ,
– এটা শুধুই আবেগ ,
– আবেগ নয় , সত্যিই আমার মনটা বার বার তোমার দিকে ঘুরে যাচ্ছে ।
– আমরা আর দুজন নেই , আমরা এখন তিন জন কেন বুঝেন না আপনি ?
– তিন জন কিভাবে ?
– আপনার দ্বিতীয় স্ত্রী , সে কি দোষ করেছে , সেও আপনাকে ভালোবাসে ।
– কিন্তু আমি যে তোমায় ভালোবাসি ।
– আপনি আমার ভালোবাসেন না , ভালোবাসলে আমি সতীন নিয়ে সংসার করতাম না ।
– এই ভুল টাই আমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
– বেলী ফুল ঝরে যায় , দিন শেষ সে ঝরে যায় । আমিও ঝরে যাবো । জানি না কবে তবে আমিও ঝরে যাবো , যাওয়ার আগে আপনাকে অনেক কিছু দিয়ে যাবো ।
– বেলী ,,,,,,,,,?
– ঘুমাবো একটু , অনেক ঘুম পাচ্ছে । আপনি রুবি আপুর কাছে যান ।
– আমি তোমার কাছে এসেছি আর তুমি আমায় ওর দিকে পাঠাচ্ছো , কেন বেলী ?
– বেলীফুল তার সুগন্ধে সবাইকে মাতায় বিনিময়ে সে নিঃশেষ হয়ে যায় ।
– সেই ৯ টা থেকে এখন অবদি আমি তোমার কাছে বসা আর এখন তুমি আমায় রুবির কাছে যেতে বলো ?
– আমার কথা বলতে ভালো লাগে না , আমি ঘুমাবো ।
– ঘুমাও , আমি আছি এখানে ।
– কতক্ষন বসে থাকবেন ?
– শুতেও তো বলছো না ,
– আমি কে যে আমার কাছে শুবেন আপনি ?
– মাইর খাবা কিন্তু ,
– ওইটাই কপালে আছে আমার ।
এই বলে বেলী চুপ করে চোখ বুজে যায় । বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে তার । মানুষটাকে আজ কেন যেনো খুব কাছে পেতে ইচ্ছ্ব করছে তারও । কিন্তু আবার কেন জানি সংকোচ লাগছে । বন্ধ চোখের কোণা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে বেলীর । আজ নিজের শরীরে ইরফানের হাতের ছোয়াটার মায়ায় পড়ে গেছে ।
অন্যদিকে ইরফানের মনটাও বেলীর কাছে যেতে চাইছে । বেলীকে জড়াতে চায় সে । বেলী তার বিবাহিতা স্ত্রী । অন্য নারী নয় । তাই সে লাইট অফ করে দরজা লাগিয়ে বিছানায় গিয়ে বেলীর পাশে শুয়ে পড়ে । বেলী টের পেয়েও চুপ করে পড়ে থাকে । ইরফান আচমকাই বেলীকে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে । জড়িয়ে ধরে বেলীকে সে ।
– ছাড়েন ,
– ঘুমাও তুমি ।
– এইভাবে থাকলে আমার ঘুম আসবে না ।
– আমি কি তোমাকে কামড়াচ্ছি নাকি ? চুপ করে শুয়ে থাকো ।
ইরফানের এমন কথায় বেলী চুপ হয়ে যায় । তাই বেশি কিছু বলেনি সে । এমনিতেও অনেক রাত হয়ে গেছে । তার উপর নিজের শরীরও ভালো না । তাই আর বাড়াবাড়ি করেনি সে । হঠাৎ করেই ইরফান বলে উঠে ,
– তোমার প্রতি আমার করা অন্যায় গুলো খুব বেশিই ছিল । হয়তো এর ক্ষমা হয় না । এত মারধর করেছি যে নিজের দিকে তাকাতেও এখন লজ্জা লাগে আমার । বার বার বোঝাতে চেয়েও মনটা বুঝে নাই আমার । বার বার তোমাকেই পেতে চায় । কেন জানি তুমি নামক ফুলটা আমার জীবনে সুবাস ছড়িয়ে দিয়েছো । আমি ভালোবাসি তোমাকে বেলী । তোমাকে ফুল ভেবে নয় ভালোবাসার কলি করে কাছে পেতে চাই আমি । আমি শান্তি পাই তোমার মাঝে বেলী । জানি না কেন , কিন্তু আমি শান্তি পাই তোমার মাঝে ।
বেলীর পিঠের সাথে ইরফানের মুখটা লেগে আছে । বেলীর পিঠের ভেজা ভাবটাই বেলীকে জানান দিচ্ছিলো ইরফানের চোখের পানি তার শরীর স্পর্শ করছে । বেলীর বুকের ভেতরটা কাতর হয়ে আছে । আর সহ্য করতে পারেনি সে । এইদিক ফিরে জ্বরের মাঝেই জড়িয়ে ধরে নিজের স্বামীকে সে । ভালোবাসে বেলী মানুষটাকে । কি করে আর দূরে থাকতে পারে সে । বেলীর জড়িয়ে ধরা দেখে ইরফান আরও জড়িয়ে নেয় বেলীকে । কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে ,
– ঘুমিয়ে যাও তুমি , আমি আছি এখানে ।
বেলী চুপ করে চোখ বুজেই ইরফানকে ধরে রেখেছে । আর মনে মনে বলছে ,
– কি ঠিক কি ভুল জানি না । কিন্তু মানুষটাকে আমি ভালোবাসি অনেক । তাজে ছাড়তে পারবো না । ভালোবাসি আমি আপনাকে , অনেক ভালোবাসি ।
পরে নিজেই মুখ খুলে বলে ,
– আমি মরে যাবো আপনাকে ছাড়া । শুধু পালটে যাইয়েন না । আমি মরে যাবো , একদম মরে যাবো ।
বেলীর কথা শুনে বেলীকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দেয় ইরফান । তার নিজের অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে আসে ,
– ভালোবাসি রে বেলীফুল , তোকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি আমি । তোকে ছেড়ে কোথাও যাবো না আর তোকেও কোথাও যেতে দিবো না । ভালোবাসি অনেক তোকে ।
বেলীও পরম মমতায় নিজের হাতের বাধনে আবদ্ধ করে নেয় ইরফানকে । সেখানেই আস্তে করে ঘুমিয়ে যায় বেলী ।
.
.
চলবে……………………..
[ বিঃদ্রঃ দয়া করে কেউ হাইপার হবেন না । এটাই বাস্তবতা । স্বামী স্ত্রী শত ঝগড়া মারামারির পরেও এক হয় । আর বাংলাদেশে এখনও অনেক মেয়েরাই আছে যারা সতীন নিয়ে সংসার করে । আমার নিজের চোখে দেখা এমন ৪ টা পরিবার আছে যারা এখনও সতীন নিয়ে ঘর করছে । তাই এটাকে বাস্তবতার দিক থেকে দেখবেন সবাই । একজন পুরুষ একজন নারীর সান্নিধ্য যেমন ছাড়তে পারে না তেমন একজন নারীও তার স্বামীর সান্নিধ্য ছাড়তে পারবে না । তাই সবাই যখন পড়বেন তখন বুঝবেন , আর রইলো কথা রোমান্টিকতা আর কাল্পনিকতা । তাও হালকা পাতলা দেয়া হবে । রোমান্টিকতা ছাড়া গল্প জমে না । আর আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বিবাহিত আপু+ভাইয়াদেরও কিন্তু রোমান্টিক মুহুর্ত আসে । সো এটাও কিন্তু বাস্তবতার মাঝেই পড়ে । তাই সবাই উপভোগ করবেন ।
আর এখন আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ আছি চেষ্টা করবো রেগুলার গল্প দিতে । আপাতত বুলবুলের টেনশনে আছি । কখন না জানি উড়িয়ে নিয়ে যায় । দোয়া করবেন সবাই । আর আমার পক্ষ থেকেও সবার জন্যে দোয়া রইলো ]