জ্যামিতিক ভালোবাসা পর্ব-০২

0
1501

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা-২য় পর্ব
©শাহরিয়ার

— ইকরা চমকে ঘুরে তাকাতেই দেখতে পেলো বাবা তার হাত চেপে ধরেছে।

বাবা:- কিরে মা এতো রেগে আছিস কেন?

ইকরা:- তোমার ছোট মেয়ে দিন দিন বড্ড বেশী ফাজিল হয়ে যাচ্ছে।

বাবা:- ওহ ছোট মানুষ একটু ফাজলামো করবেই তার জন্য মারতে হবে?

ইকরা:- সব সময় তুমি ওর আর সোহান ভাইয়ার সাপোর্ট নাও এটা ঠিক না।

বাবা:- এ কি সোহানের কপালে কি হয়েছে কি করে এমনটা হলো ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলি?

ইকরা:- এতো উত্তেজিত হবার কিছু নেই, দুষ্টমি করতে যেয়ে সামান্য কেটে গিয়েছে ব্যান্ডেজ করে দিছি ঠিক হয়ে যাবে। সব সময় এদের নিয়ে আমার কথা ভাবার এ বাড়িতে কেউ নেই (মনে মনে)

বাবা:- উত্তেজিত হবো না মানে কতখানি কেটে গেছে আর তুই বলছিস একটুখানি।

সোহান:- চাচা তুমি বসোতো, মা, চাচী চাচার জন্যও চা নিয়ে এসো। আমার সত্যিই তেমন কিছু হয়নি, তুমি শুধু শুধু এতো উত্তেজিত হইও না।

চাচা:- তুই বলছিস তাহলে ঠিক আছে।

— বাবার এমন কথা শুনে ইকরা রেগে টেবিল ছেড়ে উঠে সোজা ছাঁদের দিকে হাঁটা দিলো। বাবা পেছন থেকে বেশ কয়েকবার ডাক দিলেও পেছনে ফিরে তাকায়নি ইকরা। ছাঁদের ডান পাশের শেষ কর্ণারটায় যেয়ে দাঁড়িয়ে সূর্যি ডোবার দৃশ্য দেখছে দাঁড়িয়ে আর মনে মনে ভাবছে কিভাবে সোহানকে জব্দ করা যায়। এমন সময় সোহান পেছন থেকে বলে উঠলো এই মাথা মোটা না খেয়ে চলে আসলি কেন?

ইকরা:- পেছনে ঘুরেই তোমার কি তাতে আমি না খেলেতো তোমার লাভ আমার ভাগেরটা সহ খেতে পারবে।

সোহান:- ইকরার ডান বাহু ধরে ঘুরাতে ঘুরাতে তাই?

ইকরা:- চোখের পানি মুছতে মুছতে তাই নয়তো কি? সবাইতো তোমার পক্ষে, মা বাবা, ছোট বোন সবাই, এ বাড়িতে তো আমি একা। যেদিন থাকবো না সেদিন বুঝবে।

সোহান:- হাত দিয়ে ইকরার মুখ চেঁপে ধরে বড্ড বেশী কথা বলতে শিখেছিস। সবাই আমার পক্ষে আর আমি যে তোর পক্ষে এটা তুই কি বুঝিস?

ইকরা:- হয়েছে আর মিথ্যা বইলো না। আমিতো তোমার শত্রু, আমি না থাকলেই ভালো তোমার জন্য।

সোহান:- কত সুন্দর গৌধূলি সূর্যটাও ডুবি ডুবি করছে, তুই কাঁদছিস বলে ডুবতে পারছে না। বলেই ইকরার একটা হাত ধরে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো ছাঁদের মাঝে থাকা টেবিলটার সামনে এসে ইকরারকে একটা চেয়ারে বসিয়ে সামনা সামনি মুখ করে নিজেও একটা চেয়ার টেনে নিলো। ডান হাত বাড়িয়ে দিলো ইকরার চোখের নিচে জমে থাকা পানির দিকে মুছে দিয়ে চায়ের একটা মগ ইকরার দিকে এগিয়ে দিয়ে, মুখটা কি করেছিস জানিস?

ইকরা:- কি করেছি?

সোহান:- চোখের সব কাজল মুছে পুরো গাল কালো হয়ে গেছে। বলেই হা হা হা করে হেসে উঠলো।

ইকরা:- সত্যি?

সোহান:- চায়ের মগ থেকে ঠোঁট সরিয়ে চা খেয়ে নে। তারপর ঘরে যেয়ে আয়নাতে নিজেই দেখে নিবি।

ইকরা:- কেন তুমি বলতে পারো না? আর নিচে গেলে সবাই দেখবে তার চেয়ে বরং তুমি মুছে দাও। বলেই নিজের মুখটা সোহানের দিকে এগিয়ে দিলো।

— সোহান চায়ের মগটা টেবিলের উপর রেখে দু’হাতে ইকরার গাল দু’টো চেয়ে কালি মুছে দিতে যেতেই ইকরার ঠোঁট দু’টো সোহানের ঠোঁটের খুব কাছে চলে আসলো। ইকরার নিঃশ্বাস ছাড়ার বাতাস সোহানের নাকে মুখে এসে লাগছে। সোহান হঠাৎ করেই আজ লক্ষ করলো ইকরাকে বেশ রূপবতী লাগছে। আজ প্রথমবারের মত মনে হলো ইকরা বড় হয়ে গেছে। প্রথমবারের মত মনে হলো ইকরার ভেজা ঠোঁট দু’টো প্রভল ভাবে আকৃষ্ট করছে তাকে। সোহান একদম স্থির হয়ে ইকরার ঠোঁটের নিচের কালো তিলটার দিকে চেয়ে রইলো। এক কথায় অপূর্ব সুন্দর লাগছিলো হালকা চাঁদের আলোয় ইকরাকে।

ইকরা:- কি হলো এভাবে আছো কেন? মুছে দাও।

সোহান:- লাগবে না, এমনিতেই ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে তোকে বলে ইকরার গাল থেকে হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়ালো সোহান।

— ইকরা সোহানের এমন আচরণে কিছুটা বিব্রত হলো। সোহানের দিকে তাকিয়ে কি হয়েছে তোমার?

সোহান:- কিছু না চল নিচে নেমে যাই, শুনেছি এ সময় ছাঁদে নাকি শাঁকচুন্নিরা ঘুরাঘুরি করে।

ইকরা:- হাসতে হাসতে আমিইতো শাঁকচুন্নি বলেই বেঁধে রাখা চুল গুলো খুলে দিতেই বাতাসে উড়তে শুরু করলো।

— মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইলো সোহান। চুল গুলো এলোমেলো উড়েই চলেছে।

ইকরা:- কি শাঁকচুন্নি দেখেছো?

সোহান:- শাঁকচুন্নি খুঁজতে এসে আমি আজ মায়াবতীকে দেখেছি। বলেই পেছন ফিরে নিচের দিকে হাঁটতে শুরু করলো।

— ইকরা পেছন থেকে ডেকেই চলেছে সেদিকে সোহানের কোন খেয়াল নেই। ইকরা মনে মনে পাগল হয়ে গেছে। ইকরাও আর একা একা ছাঁদে না দাঁড়িয়ে নিচে নেমে আসলো। রাতের খাবার টেবিলে খেতে বসে সোহান যতটা না খাচ্ছে তার চেয়ে বেশী সময় ধরে ইকরার দিকে চেয়ে রয়েছে। ইকরা বিষয়টা খেয়াল করতে পেরে চোখের ইশারায় সোহানকে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে।

সোহান:- মাথা নাড়িয়ে বুঝালো কিছু না।

— রাতের খাবার শেষে সবাই যখন নিজের রুমে চলে গেলো। ইকরা তখন এগিয়ে গেলো সোহানের রুমের দিকে। দরজায় হালকা হাত দিতেই দরজা খুলে গেলো। রুমে ঢুকে দেখলো সোহান ওয়াশ রুমে গেছে। ইকরা তাড়াতাড়ি টেবিলের উপর রাখা খাতায় লেখতে শুরু করলো। এভাবে তাকিয়ে কি শাঁকচুন্নি দেখো? কামড়ে দিবো তখন বুঝবে। এতো টুকু লেখেই ইকরা খাতাটা খাটের উপর রেখে দ্রুত সোহানের রুম থেকে বের হয়ে দৌঁড়ে নিজের রুমে চলে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে একা একা হাসতে লাগলো।

— এদিকে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে খাটের উপর খাতাটা দেখে চমকে উঠলো। খাতাটা হাতে নিতেই ইকরার লেখাটা চোখে পড়তেই হাসতে হাসতে নিজে নিজেই বলতে শুরু করলো মাথা মোটা একটা, মায়াবতী আর শাঁকচুন্নির মাঝে পার্থক্যই এখনো বুঝে না। দাঁড়া এখুনি তোকে মজা বুঝাচ্ছি বলেই রুম থেকে বের হয়ে সোজা ইকরার রুমের দরজায় এসে ধাক্কা দিলো। ভিতর থেকে দরজা বন্ধ দেখে দরজায় নক করলো।

ইকরা:- ভিতর থেকে সব বুঝতে পেরে দৌঁড়ে দরজার সামনে এসে কে?

সোহান:- দরজা খোল।

ইকরা:- মজা করে কে আপনি?

সোহান:- আমি।

ইকরা:- আমিটা আবার কে নাম নাই।

সোহান:- এবার কিছুটা রেগে যখন গাল দু’টো লাল বানিয়ে দিবো তখন বুঝবি আমি কে।

ইকরা:- কি আজব আপনি আপনার পরিচয় দিতে পারছেন না? এতো রাতে একটা মেয়ের দরজায় এসে ধাক্কাচ্ছেন।

সোহান:- মাথা মোটা তুই দরজা খুলবি নাকি আমি ভেঙে ভিতরে ঢুকবো?

ইকরা:- এই খবরদার মাথা মোটা বলবে না।

— বলেই দরজা খুলে দিতেই সোহান অপর প্রান্ত থেকে জোড়ে ধাক্কা মারতে গেলো অমনি ইকরাকে নিয়ে ফ্লোরে পরে গেলো। পরে যেতেই সোহানের ঠোঁটে ইকরার ঠোঁট স্পর্শ করলো। সোহান অপলক ইকরার দিকে চেয়ে রইলো।

ইকরা:- ব্যথায় উফ করে উঠে বললো, তাড়াতাড়ি উঠো আমার কোমড়টা মনে হয় ভেঙেই গেলো।

সোহান:- কিছুটা লজ্জা পেয়ে নিজেকে কোন রকমে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে সরি সরি আমি ইচ্ছে করে এমনটা করিনি। বলেই ইকরার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।

— ইকরা সোহানের বাড়িয়ে দেয়া হাত শক্ত করে চেঁপে ধরে উঠে দাঁড়ালো।

ইকরা:- আমি জানি সব তুমি ইচ্ছে করেই করেছো। তুমিতো চাওই আমি ব্যথা পাই, হাত পা ভেঙে ঘরে বসে থাকি।

সোহান:- একদম উল্টা পাল্টা কথা বলবি না, বললামতো আমি ইচ্ছে করে এমনটা করিনি। আর সরিতো বলছি।

ইকরা:- হয়েছে হয়েছে বুঝছি, এখন বলো এতো রাতে কেন ডাকছো?

সোহান:- কিছুনা এমনি এসেছিলাম, আচ্ছা থাক চলে যাচ্ছি।

ইকরা:- চলে যাচ্ছিা মানে আমার ঘুম ভাঙিয়ে এখন বলছো এমনি ডাকছি।

সোহান:- ইকরার দুই গাল ধরে টান দিয়ে তুই ঘুমালে কোন শাঁকচুন্নি আমার ঘরে গিয়েছিলো?

ইকরা:- উফ ছাড়ো ব্যথা পাচ্ছি। আমি কেন তোমার রুমে যাবো আমার কি ঠ্যাকা পরছে নাকি?

সোহান:- ইকরার গাল ছেড়ে দিতেই দেখতে পেলো গাল দু’টো লাল টকটকে হয়ে গিয়েছে, তাতো আমি দেখতেই পেয়েছি খাটের উপর খাতা পেয়ে। আমার ঘরে কোন শাঁকচুন্নি ঢুকেছিলো।

ইকরা:- এই তুমি আমাকে এসব নামে কেন ডাকো? আমার নামটা কত সুন্দর।

সোহান:- ইকরার রুম থেকে বের হতে হতে তোর সাথে যে নাম যায় আমি সে নামেই তোকে ডাকি বুঝলি, এবার ঘুমিয়ে পর আমি গেলাম।

ইকরা:- দরজা লাগাতে লাগাতে তুমি আস্তো এতটা গাধা, মাথা আসলে আমার মোটা না তোমার মোটা।

— সোহান কোন রকম প্রতিবাদ না করে হাসতে হাসতে নিজের রুমের দিকে রওনা হলো। ইকরা সোহানের এমন ব্যবহারে চরম আশ্চর্য হয়ে গেলো। পেছন থেকে চিৎকার করে বলতে থাকলো তাহলর তুমি সত্যি সত্যিই মাথা মোটা গাধা। সোহান পেছনে ফিরে তাকিয়ে তার ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করলো। ইকরা একদম স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো সোহানের দিকে। সোহান রাজ্য জয়ের হাসি হেসে হেঁটে চললো নিজের রুমের দিকে। ইকরার মাথায় কিছু না ঢুকলেও মাথাটা যে ঘুরছে তা বেশ বুঝতে পারলো।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে