#চুপিসারে ভালবাসি
–পর্বঃ৫
Sadia afrin nishi
_________________
শুনশান নীরবতা বিরাজমান চারিধারে। বাইক চলছে নিরব গতিতে। থেকে থেকে শোনা যাচ্ছে শুধু নাক টানার আওয়াজ। নীল বাইকের মিররে বারংবার দৃষ্টি ফেলে দেখে নিচ্ছে তার গোলাপরানির মায়াবিনী রুপ। সোহার চোখ, মুখ দিয়ে লাল রক্তের ন্যায় আভা ঝড়ে পরছে। একদম পাকা টমেটো হয়ে আছে তার মুখশ্রী। নীল নিঃশব্দে কিঞ্চিৎ হাসল। তারপর সোজা তাকিয়ে বলল,
“এভাবে কান্না করার কী আছে? কেউ কিছু বলেছে কী?”
সোহা নিশ্চুপ। নীল আবারও সেইম প্রশ্ন করল। সোহা এবারেও নিশ্চুপ। নীলের হঠাৎ ভীষণ রাগ উঠল। স্বজোরে বাইকের ব্রেক কষল। টাল সামলাতে না পেরে সোহা ঝুঁকে পড়ল নীলের কাঁধের ওপর। নীল চটজলদি বাইক থেকে নেমে পরল। সোহাকেও টেনে নামিয়ে একদম তার সম্মুখে দাড় করিয়ে বলল,
“কী সমস্যা তোর? এমন ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদছিস কেন? সেই থেকে দেখছি কেমন অদ্ভুত বিহেভ করছিস। কেউ কিছু বলে থাকলে আমাকে বল আমি দেখছি তার কী করা যায়।”
সোহা এখনো কিছুই বলছে না। কিন্তু ধীরে ধীরে তার কান্নার গতি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঠোঁট চেপে ধরে কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে। সোহার নিরবতা নীলকে প্রচন্ড ভাবাচ্ছে। সে মনে মনে ভাবল, “নাহ, এভাবে হবে না। অন্য ওয়ে তে কথা বের করতে হবে।”
নীল একদম সোহার কাছাকাছি এসে দাড়াল। সোহা পেছতে চাইলে দেখা যাচ্ছে নীল তাকে আরও কাছে টেনে নিল। সোহার অভিমানী মন বুঝতে অক্ষম নীলের হাবভাব। সে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। ততক্ষণাৎ নীল তার কোমল,তুলতুলে দু গাল নিজের হাতের তালুর বন্ধনে আবৃত করে নিল। সোহা এবারেও ছাড়াতে চেষ্টা করে বিফল হলো। অতঃপর স্থির রুপ ধারণ করল।
“এমন কেন করছিস গোলাপ রানি? কেউ কী কষ্ট দিয়েছে তোকে? নাকি আমি কোনো ভুল করেছি? বল কী হয়েছে? আই প্রমিস সবটা ঠিক করে দিব। শুধু একবার বল।”
সোহা তেঁতে উঠল। নীলের হাত নিজের মুখ থেকে ঝটকা মে’রে সরিয়ে দিয়ে অন্য পাশে মুখ ঘুরিয়ে বলল,
“তোমাকে কিচ্ছু করতে হবে না। ভুল তোমার নয় ভুল হয়েছে আমার। এবার দুরে যাও আমার থেকে। বাড়িতে ফিরে যাব আমি।”
নীল এবার সোহাকে টেনে ধরে এক ঝটকায় নিজের সঙ্গে মিলিয়ে নিল। সোহা সঙ্গে সঙ্গে ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। নীলের শার্টের কলার ধরে জোরে টেনে ধরল। তার এই মুহুর্তে নীলকে খু*ন করতে ইচ্ছে হচ্ছে। সে সেভাবেই কাঁদতে কাঁদতে নীলের বুকে মুখ গুজে দিল। নীল বুঝতে পারছে না কিছুই। সে আলতো হাতে সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
“কী হয়েছে বল না প্লিজ?”
সোহা মুখ তুলে চাইল নীলের দিকে। অভিমানে ধাক্কা মে’রে সরিয়ে দিল নীলকে অদুরে। অতঃপর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,
“কেন যাও তুমি আমার স্কুলের সামনে? নিশ্চয়ই সুন্দরী সুন্দরী মেয়েদের দেখতে যাও। সবাই তোমার নামে কত-শত কমেন্ট’স করে সেগুলো শুনতে বেশ মজা পাও তাই না? শার্টের বোতাম খুলে এভাবে নিজেকে শো অফ করতে বেশ লাগে তাই না? তোমার জন্য আমাকে কত কী সহ্য করতে হয় তা কী তুমি জানো?”
“ওহ তাহলে এটাই কারণ। আচ্ছা আমি মেয়েদের দেখতে যাই বা নিজেকে শো অফ করতে যাই তাতে তোর এত কিসে প্রবলেম বলত? তুমি কেন এতটা ডেস্পারেট হচ্ছিস?
সোহা থতমত খেয়ে গেল নীলের প্রশ্নে। নীল কি কিছুই বুঝতে পারছে না। অন্যের মুখে নীলের প্রশংসা শুনাটা যে সোহার ভীষণ অপ্রিয়। রাগে,দুঃখে আচমকা আবারও কাঁদতে শুরু করল সোহা।
নীল পুরোই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে। সোহা জেলাস তাকে। তার মানে সোহার মনেও তাকে ঘিরে কিছু আছে। নীলের আজ খুশির দিন। ভীষণ খুশির দিন। এবারে আর সে সোহার কান্নায় ব্যাঘাত ঘটালো না। অন্য সময় হলে সোহার কান্নায় তার হৃদয় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যেত। কিন্তু আজ ব্যাপারটা ভিন্ন। আজ সোহার চোখের পানি তার অন্তরে চরম প্রশান্তি বয়ে আনছে। এই অশ্রুই তো সে দেখতে চেয়েছিল এতদিন। হঠাৎই অজানা প্রশ্ন তার মাথায় নাড়া দিয়ে গেল৷ সোহাকে আদৌ বুঝতে পারছে সে নীলকে ঘিরে কিছু ফিল করে নাকি খামখাই এমন করছে? থাক এই মুহুর্তে এসব ঘাটবে না নীল। আপাততঃ যেটুকু জেনেছে এতেই সন্তুষ্ট সে। বেশি পাগল হলে শেষে দেখা গেল আম, ছালা দুটোই গেল।
___
বাইক রেখে ফাঁকা রাস্তায় আপন মনে হেঁটে চলেছে নীল আর সোহা। সোহার কান্নার গতি কমে আসলেও মুখটা এখনো গম্ভীর করে আছে। নীল ব্যাপারটা লক্ষ্য করছে। আজ আলাদা আনন্দে বারংবার নেচে উঠছে নীলের অন্তঃস্তল। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে সে সোহাকে। সোহার দৃষ্টি একবারও নীলের দিকে ভিড়ছে না। সে তার অভিমান অব্যাহত রাখতে ব্যস্ত।
“গোলাপ রানি”
আচমকা ডাকটি শুনে পাশ ফিরে চাইল সোহা। সে সময়ও নীল একবার তাকে এ নামে ডেকেছিল। তখন অতটা খেয়াল না করলেও এবারে এই ডাকটি তাকে ব্যাপক ভাবাচ্ছে। সোহা ভ্রু সংকুচিত করে বলল,
“কে গোলাপ রানি?”
নীলের সাবলীল উত্তর,
“এখানে তুই ছাড়া নিশ্চয়ই আর কেউ নেই?”
সোহা এদিকে ওদিক দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেখল। সত্যিই তো আর কেউ নেই। পুরো রাস্তাই তো ফাঁকা। সোহা গলা ঝেড়ে বলল,
“তো আমাকে এ নামে ডাকার কী আছে? সোহা নামটা কী বেটার নয়?”
“বেটার তবে আমার ক্ষেত্রে স্পেশাল। তুই যেমন আমায় নীলাদ্রি বলিস ঠিক সেভাবেই আমি তোকে গোলাপ রানি বললাম।”
সোহা ফুঁসে উঠে বলল,
“আমি মোটেই তোমাকে নীলাদ্রি বলি না। আমি তো তোমায় নীলাদ্রি দা বলি।”
“ওই হলো এক।এখন বল আমার দেওয়া নামটা কেমন?”
“ভালোই”
“শুধু ভালোই।”
“উহুম,অনেক সুন্দর।”
নীলের ওষ্ঠে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা ফুটে উঠল। সে আচনকা সোহার এক হাত নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিল। হতভম্ব সোহা ভীতিগ্রস্ত কন্ঠে শুধাল,
“কী করছ টা কী? এভাবে হাত ধরছ কেন?”
নীল কোনো উত্তর দিল না। সোহার আঙুলের ভাঁজে আঙুল রেখে হেঁটে চলেছে দুর নীলিমায়।
হঠাৎই সোহার মনে পড়ল নীলের তো জ্বর ছিল। সোহা থম মে’রে দাঁড়িয়ে পড়ল। নীলের উদ্দেশ্যে বলল,
“তোমার না জ্বর ছিল? এখন কেমন আছে শরীর? জ্বর কী কমেছে? নাকি জ্বর নিয়েই মেয়েদের পেছনে লাইন মা’র’তে চলে এসেছ?”
নীল কিঞ্চিৎ হাসল। যেই হাসিতে ঝড় বয়ে গেল সোহার অন্তরে। অন্তঃকরণে সুক্ষ্ণ অনূভুতির জন্য দিল।
“এতক্ষণে মনে পড়ল বুঝি?”
নীলের কথায় সোহা জিভে কামড় কাটল। অতঃপর বলল,
“ইয়ে মানে আসলে…. ”
“থাক আর কিছু বলতে হবে না। জ্বর কমেছে আমার। শরীরটাও এখন ঠিক আছে।”
“আলহামদুলিল্লাহ”
“গোলাপ রানি একটা জায়গায় যাবি আমার সঙ্গে?”
“কোথায়?”
“গেলেই দেখতে পাবি।”
“কিন্তু এখন তো বাড়িতে ফিরতে হবে নয়তো আম্মা টেনশন করবে।”
“আমি ফুপ্পিকে বলে দিয়েছি তুই আমার সঙ্গে। এখন বল যাবি কিনা?”
সোহা ভাবনায় পড়ে গেল।
চলবে,