18.8 C
New York
Sunday, October 5, 2025

Buy now

spot_img







গোধূলি রাঙা দিগন্ত পর্ব-০৫

#গোধূলি_রাঙা_দিগন্ত
#পর্বঃ৫
#লেখিকাঃফারিহা_খান_নোরা
‘রাত্রি গভীর হলে বিরহে অন্তর কাঁদে!’

রাতের আকাশে ঝলমল করছে তারার মেলা। শুধু আরিবার জীবনটাই অন্ধকারে ঢেকে গেছে। না পারতে সব কিছু সহ্য করতে হচ্ছে।এই যেমন এখন ঘড়িতে বাজে রাত বারোটা এতোক্ষণেও প্রণয় বাড়িতে আসে নি যার জন্য প্রণয়ের মা কিছুক্ষণ আগেই তাকে বেশ কিছু কথা শুনিয়ে গেলেন।আরিবার জন্য‌ই নাকি তার ছেলে বাড়ি ছাড়া হচ্ছে।আরিবার ভেতর থেকে শুধু দীর্ঘশ্বাস‌ই বেরিয়ে আসে।যেখানে নিজের বাবার কাছেই তার গুরুত্ব নেই সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত শশুড়বাড়ি। বিয়ের পর এই বাড়িতে আসার সময় ফোনটাও নিয়ে আসে নি । সবার প্রতি তার বড্ড অভিমান জমিয়ে আছে। তবে জারিফকে বার বার মনে পড়ছে তার । ছেলেটা না জানি তাকে দেখতে না পেরে কতো বার কল করেছে আল্লাহ্ ভালো জানেন। ফোনটা না নিয়েই বড্ড বড় ভুল করেছে। সে তো চায় নি জারিফকে ব্যাতিত অন্য কোনো ছেলের সাথে জীবন বাঁধতে ।

ভাবনার মাঝেই আরিবা রুমে প্রণয়ের উপস্থিতি টের পায়। টাইয়ের নট ঢিল করতে করতে রুমে ঢুকে প্রণয়। তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে কতোটা ক্লান্ত সে।প্রণয়ের আজ অফিসে একটু ঝামেলা হয়ছে যার জন্য আসতে লেট হলো। টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।আরিবা নিচে যেয়ে প্রণয়ের জন্য প্রথমে ঠান্ডা পানি দিয়ে লেবুর সরবত করে তারপর খাবার গুলো গরম করে উপরে নিয়ে এসে সেন্ট্রার টেবিলে সাজিয়ে রেখে আবার বারান্দায় আসে।

প্রণয় ফ্রেশ হয়ে এসে তার প্রতি আরিবার কেয়ার দেখে মনে মনে খুশি হয়। যাক ব‌উ তার একটু হলেও যত্ন তো করছে। প্রফুল্ল চিত্তে সে সোফায় বসে পড়ে অতঃপর ডিনার শেষ করে ম্যাডমকে খুঁজতে বারান্দায় যায়।

_________________________

‘আকাশের দিকে তাকিয়ে কি খোঁজ ?’

প্রণয়ের কথায় আরিবা পিছন ফিরে তাকায়। প্রণয়ের দিকে এক পলক চেয়ে চোখ নামিয়ে নিয়ে আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে,

‘খুঁজি না! সুখ বির্সজন দেই।’

প্রণয় ঠাট্টার সুরে বলল,

‘আকাশের দিকে তাকিয়ে আবার সুখ বির্সজন দেওয়া যায়?’

আরিবার মেজাজ এমনি খারাপ ছিলো প্রণয়ের হাসি ঠাট্টায় যেনো মেজাজটা আর‌ও খা’রা’প হয়ে গেল। রাগান্বিত কন্ঠে বলল,

‘কেন দেওয়া যায় না?আপনিও দেন আসেন।আপনাকে বিয়ের করে আমি যেমন সুখ বিসর্জন দিচ্ছি ঠিক তেমনি আপনি ও দেন তবে আমার জন্য না আপনার অই সো কলড রূপার জন্য। তার সাথে বিয়ে না হ‌ওয়ার জন্য।যার সাথে প্রতি নিয়ত আমায় তুলনা করা হচ্ছে।তবে একটা কথা মাথায় রাখবেন মিস্টার শেখ রূপা কিন্তু রূপাই হয় আর সোনা সোনাই হয় যতোই ভেঙে যাক না কেন রূপা কখনো স্বর্ণের জায়গা দখল করতে পারবে না।’

প্রণয় হতভম্ব হয়ে যায়।রূপার কথা উঠতেই রে’গে যায়।রাগে গজগজ করে বলে,

‘অনেক রাত হয়েছে এসব আজেবাজে চিন্তা না করে যাও ঘুমিয়ে পড় আর আমাকেও ঘুমাতে দাও।লাইট অফ না করলে ঘুম হয় না আমার।

উচিত কথা বললেই ঘুমিয়ে পড়ে। আজব পুরুষ মানুষ নিজের মনে কথা গুলো বির বির করে বলে আরিবা প্রস্থান করল।

_______________________________

দেখতে দেখতে মাঝের দুটো দিন কেটে গেল। ও বাড়ি থেকে কেউ আরিবার খোঁজ নেয় নি এমন কিন্তু না। হাসান সাহেব ও রেবা বেগম প্রায় সময়ই আরমান শেখকে কল দিয়ে মেয়ের খোঁজ নিতেন।আরমান শেখ তাদের সাথে কথা বলার জন্য আরিবার কাছে ফোন এনে দিলে কোনো না কোনো ভাবে আরিবা ব্যাস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে যেত।আর বরাবরেই মতো বলত,

‘আমি রুমে যেয়ে ব্যাক করে নিবো।’

আরমান শেখ সবটা বুঝতেন তবুও চুপ থাকতেন।আরিবাকেও সময় দেওয়া উচিত তার।মেয়েটা হঠাৎ করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে এসে নতুন পরিবেশের সাথে যুক্ত হয়েছে। মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবেই।আর এসবের জন্য‌ই আরিবার বাবা মার প্রতি অভিমান হয়েছে যা স্বাভাবিক।

আর চার দিন পর বাড়িতে রিসেপশনের পার্টি রাখা হলো।সব মিলিয়ে বিয়ের সাত দিন পর রাখা হয়েছে।কারণ এই বাড়ির আরেকটা ছেলে প্রণয়ের ছোট ভাই প্রিতম বাড়িতে নেই। বাড়ির ছেলেকে ছাড়া এত বড় অনুষ্ঠান তো আর করা যায় না । আয়োজন বেশ বড় পরিসরেই। আরমান শেখের ছেলের বিয়ের রিসেপশন পার্টি বলে কথা বড় না হলে হয়?

_____________________________

শেখ বাড়ির মেহমান বলতে তেমন কেউ নেই। প্রণয়ের ফুফুর বাড়ি ঢাকার বাহিরে বলে তিনি থেকে গেছেন।বিকাল বেলা অবসর সময় আরিবা ও প্রেমা ড্রয়িং রুমে বসে চা খাচ্ছে ও টিভি দেখছে ।বাড়ির সবাইকে ছাড়া আরিবার শেখ বাড়িতে আজ তৃতীয় দিন।মুখে স্বীকার না করলেও বাড়ির সবার জন্য মন পু’ড়’ছে তবে অভিমান মনকে ঠিক সামলিয়ে নিয়ে তর স্থান শক্ত পোক্ত করেছে। নাসিমা বেগম কিচেনে । কিছুক্ষণ পর আরমান শেখ ও যোগ দিলেন। আরমান শেখ চা পান শেষ করে কাপটা টেবিলের উপরে রেখে পরম স্নেহের সহিত আরিবার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘আরিবা মা! মাঝখানে আর মাত্র দুই দিন বাকি। কেনা কাটার ও একটা ব্যাপার রয়েছে। স্বন্ধ্যার পর তুমি ও প্রেমা তৈরি থেকো আমি প্রণয়কে বলে রাখছি তোমাদের নিয়ে যাবে। নিজের পছন্দ মত শপিং করবে কারণ তোমাদের লাইফের একটি বিশেষ দিন আমি চাই আমার পুত্র ও পুত্রবধূ সেভাবেই নিজেদের উপস্থাপন করুক।’

কথার মাঝে হঠাৎ করে নাসিমা শেখ চলে এসে কাঠকাঠ কন্ঠে বললেন,

‘যতোই ভাল ভাবে উপস্থাপন করুক না কেন সেই তো কর্মচারীর মেয়েই থাকবে এর থেকে বেশি কিছু তো হবে না।’

আরমান শেখের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর।বলল,

‘যেমন তুমি! এতো বছর ধরে পেলে পুষে সেই রুনা খানের মতোই থেকে গেলে কবরী আর হতে পারলে না। আর ভুলে যেও না তুমি কোথায় থেকে উঠে এসেছে। অন্যকে কথা বলার আগে নিজের অবস্থান কোথায় ছিলো সেটা ভেবে দেখবে।’

‘সুযোগ পেলেই খোঁচা দেয় যত্তোসব।’

কথাটি বলেই নাসিমা শেখ গজগজ করতে করতে প্রস্থান করলেন। এই মহিলার কথায় আরিবার শুরুতে ভীষণ ক’ষ্ট পেত এখন রা’গ লাগে।তার মন বলছে সংসার জীবন প্রণয়ের মা’ই হবে তাঁদের একমাত্র বাঁধা। তবে আরমান শেখের কথা তার বেশ ভালোই লাগে। ভীষণ ভালো মানুষ তার হয়ে নিজের স্ত্রীকেও কথা বলতে ছাড় দেয় না। আরমান শেখকে বলে আরিবা রুমে চলে আসে।

প্রেমা এতোক্ষণ চুপ ছিলো তবে ভাবির সাথে মায়ের ব্যাবহার তার মোটেও ভালো লাগে না।মেয়েটা বয়সে তার থেকেও ছোট।মা কিন্তু চাইলেই পারে ভাবিকে নিজের মেয়ের মত ট্রিট করতে।

________________________________

এখন স্বন্ধ্যা সাতটা বেঝে পনের মিনিট! আরিবা কালো রঙের একটা জামা পড়েছে।ফর্সা শরীরে কালো রঙটা জেনো একটু বেশিই ফুটে উঠেছে। কোমড়ে ছড়ানো চুল গুলো আঁচড়ে ছেড়ে দেওয়া।চোখে আইলাইনার ও ঠোটে নুড লিপস্টিক দিয়ে তৈরি হয়ে নিলো।এর মধ্যে প্রেমা রুমে ঢুকে পড়ে।পেছন থেকে আরিবাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

‘বাহ্ ভাবি! এতো সুন্দর লাগছে তোমাকে।যদিও তুমি সুন্দরী।আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। এ অবস্থায় আমার ভাই তোমাকে দেখলে ফিদা হয়ে যাবে দেখে নিও।’

বলেই প্রেমা হাসতে নিলো।আরিবার মুখটা চুপসে যায়।আরিবার ফ্যাকাসে মুখ দেখে প্রেমা আরিবার হাত ধরে বুঝানো সুরে বলে,

‘ভাবি আমি জানি ভাইয়া ও তোমার মধ্যে এখনো স্বাভাবিক আর পাঁচ দশটা স্বামী স্ত্রীর মত সম্পর্ক তৈরি হয় নি।নিজের ভাই বলে বলছি না, আমার ভাই অনেক ভালো তুমি স্বাভাবিক ভাবে তার সাথে মিশো কেয়ার নাও দেখবে সে তোমায় ছাড়া কিছু চোখে দেখছে না।এমনিতেও তুমি যা সুন্দর ওই শাকচুন্নীর ঘোর থেকে আমার ভাই অলরেডি বের হতে চেষ্টা করছে।’

‘বুদ্ধি তো ভালোই দিলে ননদিনী কিন্তু তোমার ভাই যদি সারাদিন তার চোখে দিয়ে শুধু আমায়’ই দেখে তোমার মা’র তাহলে কি অবস্থা হবে ভেবে দেখেছো?’

বলেই আরিবা বাঁকা চোখে তাকায় তাঁর কন্ঠে হাস্যরসাত্মক বিরাজ করছে।আরিবার এমন তাকানো দেখে প্রেমা হেসে দেয় সাথে আরিবাও।নিচে থেকে প্রণয়ের কথা শুনে তারা গার্ডেনে গাড়ির কাছে যায়।প্রেমা গাড়ির পেছনে উঠে বসে। আরিবা বসতে নিলে প্রণয় একটু জোরেই বলে,

‘আমায় দেখে কি তোদের ড্রাইভার মনে হয়ে । তোরা দুইজন‌ই পেছনে বসছিস! শপিং এ যেতে হলে একজনকে সামনে বসতে হবে নয়তো নেমে পড়।প্রেমা অসহায় চোখে আরিবার দিকে তাকায় কারণ প্রেমা আগেই উঠে বসেছে।আরিবা প্রেমার চোখের ভাষা বুজতে পেরে সামনে যেয়ে প্রণয়ের পাশে বসে সিট বেল্ট বেঁধে নেয়।একপলক প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে ফর্মাল ড্রেস পড়া অবস্থায় আছে কারণ সে অফিস থেকে এসে বাড়ির ভিতরে না প্রবেশ করেই তাদের নিয়ে যাচ্ছে।প্রণয়ের উজ্জ্বল শ্যামলা মুখটা গরমে লাল বর্ণ ধারণ করেছে এই এসির মধ্যেও।

গাড়ি চলতে শুরু করল। প্রণয় মিররে আরিবাকে পর্যবেক্ষণ করল। মনে হচ্ছে তার পাশে কোনো অপ্সরা বসে আছে।মেয়েটা এতো সুন্দর কেন?আগে সে ভালো করে খেয়াল করে নি। গাড়ি চালানোর মাঝেই আড় চোখে বার বার আরিবার দিকে তাকায়।মেয়েটা এতো সুন্দর যে,তার দিক থেকে চোখ ফিরাতে ইচ্ছে করছে না। দুধে আলতা শরীরের সাথে কালো রঙের ড্রেসটায় মেয়েটিকে স্নিগ্ধ ফুলের মতো লাগছে ঠিক জেনো কালো গোলাপ। সুন্দরী মুখশ্রীতে তাকালেই মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে।হালকা মেকআপ করেছে যার জন্য আরো সুন্দর লাগছে।আর কাজলে আবৃত টানা চোখ গুলো মাশাআল্লাহ! প্রণয় শেখ এক পলক আরিবার কাজল টানা চোখের দিকে তাকিয়ে বির বির করে একটু জোরেই বলল,

‘চোখ তো নয় মনে হচ্ছে আমার জন্য পাতা সর্বনাশের ফাঁদ। ‘

আরিবা ও প্রেমা দুইজন‌ই একসাথে বলে উঠে,

‘কি বললেন,কি বললি!!!’

।চলবে।

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......

Related Articles

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Stay Connected

20,625ভক্তমত
3,633অনুগামিবৃন্দঅনুসরণ করা
0গ্রাহকদেরসাবস্ক্রাইব
- Advertisement -spot_img

Latest Articles