খোলা জানালার দক্ষিণে পর্ব-১৯+২০+২১

0
416

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_১৯
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

লা’শে’র ফ্রিজিং ড্রয়ার খুলতেই এক সুন্দর রমণীর মুখশ্রী ভেসে উঠল। সমস্ত মুখশ্রী ফ্যাকাশে হয়ে আছে। পুরো শরীর রক্ত বিহীন সাদা বর্ণের হয়ে গিয়েছে। সমস্ত শরীর পাথরের ন্যায় ঠান্ডায় জমে আছে। রক্তিম আঁখিযুগল রমণীর মুখশ্রীর দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। যখনই প্রতিশোধের নেশা দমে যায়। তখনই এই মুখশ্রীর দিকে দৃষ্টিপাত করলে, প্রতিশোধের নেশা দাউদাউ করে জ্বলে উঠে। চোয়াল শক্ত হয়ে এল যুবকের। সে ঘৃণা ভরা দৃষ্টি নিয়ে লা’শে’র গালে স্পর্শ করল। তাচ্ছিল্যের করে বলে উঠল,

–আমার অর্ধাঙ্গিনী হয়ে বেঁচে থাকার তোর খুব শখ ছিল তাই না। তোর শখকে আমি সারাজীবনের জন্য নিশ্চুপ করিয়ে দিলাম। আর আসবি না অর্ধাঙ্গিনীর অধিকার নিয়ে বাসবি না ভালো আমায়। তোর জন্য আমি নিজের প্রেয়সীকে নিজের করে পাইনি। তোকেও আমি বাঁচতে দেইনি। এখন তোর কেমন অনুভূতি হচ্ছে। আমি ভিষণ শান্তিতে আছি জানিস। তোর মুখশ্রীর দিকে দৃষ্টিপাত করলে ঘৃণায় আমার পুরো শরীর রি রি করে। তোর জন্য আজ আমি ত্যাজ্য পুত্র হয়েছি। শরীরটা নেতিয়ে গিয়েছিল। তোর বিশ্রী মুখশ্রীর দিকে দৃষ্টিপাত করলে প্রতিশোধের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে উঠে। তুই যতদিন বাঁচবি তোকে এভাবে জমে থাকতে হবে। এতটুকু মাটির ছোঁয়াও তোকে পেতে দিব না। আমার প্রেয়সী আমাকে না পাবার আক্ষেপে ধরণীর মায়া ত্যাগ করে বিদায় নিয়েছে। যার জন্য আজ আমাদের করুন অবস্থা হয়েছে। সেই মুনতাসিম
কে ধরণীর বুক থেকে বিতাড়িত করে, নিজেও বি’ষ পানে জীনের মায়া ত্যাগ করে ধরণী ছাড়ব। কথাগুলো বলেই শব্দ করে হাসতে শুরু করল যুবক। সে কি ভয়ংকর হাসি। যে কেউ দেখলে তার রুহু কেঁপে উঠবে। এই মায়াবী মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে যে কারো মায়া হবে। কিন্তু পাষাণ যুবকের মায়া হলো না।

সময় যেন স্রোতের বিপরীত চিহ্ন স্রোত যেমন কারো জন্য থেমে থাকে না। ঠিক তেমনই সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। প্রাকৃতিক নিয়মে নিজ গতিতে ছুটে চলে যায়। দেখতে নির্বাচনের সময় চলে আসলো। মুনতাসিম নিবার্চন নিয়ে ভিষণ ব্যস্ত। সেজন্য মেহেভীনের সাথে দেখা হয় না বহুদিন। প্রেয়সীকে না দেখায় তৃষ্ণায় মনটা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাকে দেখার অসুখ মুনতাসিমের কোনোদিনই সারবে না। তার শূন্যতায় ভেতরটা ছটফট করে। দৌড়ে গিয়ে প্রেয়সীকে বুকে আগলে নিতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সে নিরূপায় ইচ্ছে থাকলে-ও উপায় নেই। গোধুলি আলোয় চারদিক চকচক করছে। প্রাকৃতিক সুন্দর্য যেন ঝরে ঝরে পড়ছে। মেহেভীনের বাবা কালকে স্ট্রোক করেছেন। সে খবর পেয়ে মেহেভীন ছুটে আসছে নিজ মাতৃভূমিতে। নিজের মাতৃভূমিতে চরণ রাখতেই কিছু মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। চারদিকে পোস্টারের ছড়াছড়ি ভোট আসলে এ নতুন কিছু নয় স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু মেহেভীনের আঁখিযুগল থমকে গেল পোস্টারের দিকে। এই মানুষটাকে সে চিনে খুব ভালো করে। কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলো পোস্টটারের দিকে। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাড়ির দিকে চলতে শুরু করল। শত-শত মোটর সাইকেল নিয়ে মিছিল যাচ্ছে। এলাকার অলিতে-গলিতে শত-শত মানুষ তার আপনজনের জন্য ভোট চাওয়া ব্যস্ত। চারদিকে মাইকিং হচ্ছে ভোট চাই ভোটারের দোয়া চাই সকালের। আরো কিছু রেকর্ড করা বক্তব্য কর্ণে এসে পৌঁছাচ্ছে। কর্ণ একদম ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। মেহভীন সেগুলো মানুষকে উপেক্ষা করে বাসার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। একটু দূরে যেতেই নির্দিষ্ট মানুষের দেখা মিলল। কিছু মানুষ দলবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসছে। মুখশ্রীতে নিজের পছন্দের নেতার প্রতীকের প্রতিধ্বনি। সামনে থাকা মানুষটাকে চিনতে খুব একটা সময় লাগলো না। মুনতাসিম মেহেভীনকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেল। মুহুর্তের মাঝে অদৃশ্য মন খারাপ এসে তাকে আলিঙ্গন করল। এতদিন পর দেখা মানুষটা তার দিকে ফিরেও চাইল না। ভিষণ অভিমান হলো মেহেভীনের। বাবার কথা স্মরন হতেই সে বাসার মধ্যে চলে গেল। কলিং বেলে চাপ দিতেই মেহেভীনের মা এসে দরজা খুলে দিল। মেহেভীন কোনো বাক্য উচ্চারণ না করে দ্রুত বাবার কক্ষের দিকে অগ্রসর হলো। দীর্ঘদিন পর মেয়েকে দেখে জানে পানি আসলো। হাত বাড়িয়ে মেয়েকে ডাকলেন। বাবার আদুরে ভাবে ডাকটা মেহেভীন উপেক্ষা করতে পারল না। দৌড়ে গিয়ে বাবার বুকের মধ্যে গিয়ে মুখ লুকালো। কিছু সময় অতিবাহিত হবার পরে মেহেভীন রাগান্বিত হয়ে বলল,

–তোমাকে কতবার বলেছি আব্বু তুমি একদম চিন্তা করবে না। তোমার কিসের এত চিন্তা আমি তো আছি। তোমার মেয়ে কি ম’রে গিয়েছে। তোমাকে আর কোনো কাজ করতে হবে না৷ আমি প্রতি মাসে যে টাকা পাঠাই তার পরিমান আরো বাড়িয়ে দিব। তবুও তোমাকে আর কাজ করতে দিব না। তুমি যদি আমার কথা না শুনেছ। তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না আব্বু।

–আমার একটা কথা রাখবি মেহেভীন?

–তোমার একটা কথা কেনো আব্বু। আমি তোমার সব কথা রাখতে রাজি আছি।

–আমি মনে হয় বেশিদিন বাঁচব না। আমি মা’রা যাবার আগে তোকে একটা দায়িত্ববান পুরুষের হাতে তুলে দিয়ে যেতে চাই। আমার মতো তো সবাই হতে পারবে না। তবে আমার মতো করে তোকে যে ভালো রাখার চেষ্টা করবে। আমি তার হাতে তোকে তুলে দিতে চাই। পড়াশোনা করতে চেয়েছিস। আমি তোকে নিষেধ করিনি। বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে চাকরি করেছিস। তবুও আমি তোকে কিছু বলিনি। তোর ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়েছি। আজ যদি আমার কথা না শুনিস। তাহলে আমি ম’রা’র পরে যেন আবার না পস্তাস। সামনে ভয়ংকর রকমের ঝড় আসতে চলেছে। আমি চাইনা আমার করা পা’পে’র ঝড়ের প্রভাব তোর জীবনে এসে পড়ুক। তোর জীবনে ঝাড় আসলেও সে আগলে নিবে। এমন একটা মানুষ তোর জীবনে এনে দিতে পারলেই আমার শান্তি।

–একদম বাজে কথা বলবে না আব্বু। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কিভাবে বাঁচব। তুমি আমাকে বিয়ে দিতে চাইছ মানছি। তাই বলে আমাকে দুর্বল করার জন্য আঘাতপ্রাপ্ত করবে আব্বু। আমাকে কয়টা দিন সময় দাও আব্বু। আমি বিয়ে করব।

–তুই আমার অবস্থা বুঝতে পারছিস না মেহেভীন। আমার শরীরের অবস্থা ভালো না। বেলা যেকোনো সময় ফুরিয়ে যেতে পারে। তার আগেই তোকে বিয়ে দিয়ে যেতে চাই। কেউ তোর ক্ষতি করার চেষ্টা করলে, সে যেন ছাদ হয়ে তোকে আগলে নেয়। আমি জানতাম তুই আসবি। সেজন্য আমি হসপিটালে থাকি নাই। সব সময় শরীরের ঔষধে মানুষ সুস্থ হয় না৷ কিছু কিছু সময় মনের ঔষধে মানুষ সুস্থ হয়ে যায়। আর আমার মনের ঔষধটা কে জানসি? আমার মনের ঔষধ হচ্ছিস তুই। তোকে দেখেই আমি অর্ধেক সুস্থ হয়ে গিয়েছি।

–কাজটা তুমি একদম ঠিক করনি আব্বু। তুমি হাসপাতালে থাকলে যে সেবা গুলো পেতে, বাসায় কি সেই সেবা গুলো পাবে। তোমাকে কালকেই হসপিটালে রেখে আসব।

–শোন মানুষ মাত্রই ভুল করে আরিয়ানও করেছে। তার জন্য আরিয়ান ভিষণ কষ্ট পাচ্ছে। ছেলেটা আমার কাছে তোকে চাইছে। আমিও ভেবে দেখলাম ছেলেটা সত্যিই অনুতপ্ত। মানুষ একবার ভুল করলে তাকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিৎ। আমি আরিয়ানের সাথে তোর বিবাহ দিতে চাইছি। এতে তুই সবসময় আমার চোখের সামনে থাকবি৷ আমিও শান্তিতে থাকতে পারব। একবার আমাকে অসম্মানিত করেছিস। দ্বিতীয়বার এমন করার চেষ্টা করিস না। যদি করিস আমি দম বন্ধ হয়ে বোধহয় মা’রা’ই যাব। আমি এই বিষয়ে তোর বড় আব্বুর সাথে কোনো কথা বলিনি। তুই মতামত দিলেই সামনের দিকে আগাব। তোর পছন্দ থাকলে বলতে পারিস। আমি তোর পছন্দের মানুষের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে দেখব। তাকে যদি আমার যোগ্য মনে হয় তাহলে তার হাতে তোকে তুলে দিব। মুনতাসিম ছাড়া অন্য কারো হয়ে যাবে কথাটা ভাবতেই ভেতরটা হুঁ হুঁ করে উঠল। বুকের ভেতরটায় কেমন মোচড় দিচ্ছে। অসহনীয় যন্ত্রনায় সমস্ত শরীর কাতর হয়ে আসছে। কথা বলার শক্তি যেন সে হারাচ্ছে। সে বাবার মুখের ওপরে বলতে পারছে না। বাবা আমি একজনকে পছন্দ করি। কিন্তু বিপরীতে পক্ষের মানুষটা আমাকে পছন্দ করে কি না সেটা আমি জানিনা। সে কথা বললে তার বাবা মানবে কি? নিশ্চই দু’টো কড়া বাক্য শুনিয়ে দিবে। মেহেভীন কিছু বলতে পারল না। সে মলিন মুখশ্রী করে কক্ষ থেকে বের হয়ে গেল।

নিস্তব্ধ রজনী, বিষন্ন মন, বিষাদগ্রস্ত শরীর দিয়ে নিজের কক্ষে শুয়ে ছিল মেহেভীন। মুনতাসিম ছাড়া অন্য কারো ছায়াকেও তার অসহ্য লাগে। সে সহ্য করতে পারে না। সেখানে আরিয়ানকে সে কিভাবে নিজের অর্ধাঙ্গ হিসেবে মেনে নিবে। তার বাবা কি জানে না। আরিয়ান তাকে কি করতে চেয়েছিল। সবকিছু জানার পরেও কেন তার মতো নিকৃষ্ট মানুষের সাথে বিবাহ দিতে চাইছে। ভাবতেই পুরো শরীর ঘৃণায় রি রি করে উঠছে। অদ্ভুত ভাবে পুরুষ জাতির প্রতি ঘৃণা চলে আসছে। সবার মতো মুনতাসিমকেও নোংরা মনে হচ্ছে। মনের আড়াল থেকে ডেকে বলছে। সে-ও সব পুরুষের মতো হবে। তুই তাকে ভুলে যা নিজেকে গুছিয়ে নে। কিন্তু মেহেভীন মানতে নারাজ তার মহারাজ এমন হতেই পারে না। মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই মুঠোফোনটা জানান দিল মেসেজ আসছে। মেহেভীন বিরক্ত হয়ে ফোনটা হাতে তুলে নিল। অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ আসছে।

“কালকে পুকুর পাড়ে দেখা করতে পারবেন ম্যাডাম। আপনার সাথে আমার জরুরি কথা আছে। ” মেসেজটা কার বুঝতে বেগ পেতে হলো না মেহেভীনের। সে কিছুক্ষণ নিরুত্তর রইল। কিছুক্ষণ পরে ফোনটা আবার বেজে উঠল। আবার মেসেজ এসেছে। “আপনি কি আমার ওপরে রাগ করেছেন? মেহেভীন বিষন্ন মন নিয়ে জবাব দিল, ” রাগ করব কেন? আপনি কি রাগ করার মতো কোনো কাজ করেছেন? এবার আর দ্রুত মেসেজ এল না। মানুষটা হয়তো হাজারও ব্যস্ততা নিয়ে তাকে মেসেজ করেছিল। কথাটা ভাবতেই অজানা অনুভূতিতে মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল। দশ মিনিট পরে মেসেজ এল। “রাগ করবেন না ম্যাডাম। বাজে ভাবে মানসিক চাপে আছি। আমি কথা বলার মতো অবস্থাতে নেই। কালকে সকালে আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করব। আমার বিশ্বাস আপনি আসবেন। এই অবেলায় অবহেলা শুরু করবেন না। আমি শেষ হয়ে যাব। শুভ রাত্রী। ” মেহেভীন মেসেজটা দেখেই ফোনটা রেখে দিল। যাবে কি যাবে না সেটা ভেবেই দোটানায় ভুগছে। অদ্ভুত এক অনুভূতি রাতে আর ঘুম হলো মেহেভীনের। ভোরের মধুর স্বরে আজানের প্রতিধ্বনি কর্ণকুহরে আসতেই উঠে বসলো মেহেভীন। নামাজ আদায় করে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। রাজ্যের নিদ্রা এসে মেহেভীনের আঁখিযুগলে ধরা দিবে। তখনই মেসেজ আসলো, “একদম ঘুমাবেন না ম্যাডাম। আমি জানি আপনি-ও আমার মতোই নির্ঘুম রজনীর পার করেছেন। একটা রজনী না হয় আমার জন্য নষ্ট করলেন। প্রভাতের আলো ছড়াতে আর কিছুক্ষণ বাকি। উঠে গিয়ে কফি বানিয়ে খান। সকল নিদ্রা মামা বাড়ি পালিয়ে যাবে। মেহেভীন বিস্ময় নয়নে ফোনের স্ক্রিনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মানুষটা কিভাবে বুঝল একেই বুঝি বলে হৃদয়ের টান৷ মেহেভীন ছোট করে উত্তর দিল, “ঘুমাব না। বিপরীত পক্ষ থেকে কোনো উত্তর আসলো না। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নির্দিষ্ট সময় চলে এল। মুনতাসিম পুকুরের ধারে এসে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে ঘিরে চারপাশে গার্ড দাঁড়িয়ে আছে। এই পুকুর পাড়ের দিকটা বেশ নিরিবিলি। এখানে সচরাচর মানুষ খুব কমই আছে। সেজন্য মুনতাসিম ভোরে মেহেভীনের সাথে দেখা করতে চাইছে। সে এই মুহুর্তে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে মেহেভীনের ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসতে পারে না। কিছুক্ষণের মধ্যে মেহেভীন সেখানে এসে উপস্থিত হলো। মেহেভীনের পেছনে পেছনে আরিয়ান আসছিল। সেটা মেহেভীন টের পাইনি। সে তার নির্দিষ্ট মানুষটার কাছে পৌঁছানোর জন্য আকুল হয়েছিল। প্রভাতেরই আলো ফুটতেই ছুটে এসেছে। আরিয়ানকে দেখেই মুনতাসিমের মুখশ্রীতে আঁধার ঘনিয়ে এল। সে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–আপনি মেহেভীনের পেছনে পেছনে আসলেন কি কাজে? আমি কি আপনাকে ডেকেছি! মুনতাসিমের কথায় মেহেভীন হতভম্ব হয়ে গেল। পেছনে দৃষ্টিপাত করতেই বিস্মিত হয়ে গেল মেহেভীন। আরিয়ান কখন আসলো। অস্থিরতায় কোনোকিছু না দেখেই চলে আসছে। তখনই আরিয়ানের গম্ভীর কণ্ঠ স্বর শোনা গেল,

–আমার বউকে আমি একা একা কোনো পর পুরুষের সাথে দেখা করতে দিতে পারিনা। তাই নিজের সাথে করে নিয়ে আসছি। এত নামী দামি মানুষ হয়ে এত ভোরে একটা মেয়েকে ডাকতে আপনার লজ্জা করল না। যা বলার আমার সামনেই বলুন। আরিয়ানের কথায় মুনতাসিমের চোয়াল শক্ত হয়ে এল। মুহুর্তের মধ্যে আঁখিযুগল রক্তিম বর্ন ধারণ করল। তার যদি ক্ষমতা থাকতো। তাহলে আঁখিযুগল দিয়েই আরিয়ানকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতো।

চলবে…..

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_২০
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

ভোরের শীতল হওয়া মন,মস্তিষ্ক, শরীর সবকিছু শীতল করে তুলছে। হৃদয়ের অস্থিরতা দিগুণ ভাবে বেড়ে গিয়েছে। আরিয়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মুনতাসিম শান্ত মস্তিষ্কের মানুষ। সে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–আপনার বোন নিশ্চই ছোট বাচ্চা নয়। যে কেউ তাকে ডাকবে সে অবুঝের মতো চলে আসবে। আমি তাকে প্রয়োজনে ডেকেছি। সে জেনে-বুঝেই এসেছে। কারো অনুমতি ছাড়া তার পিছু করা দণ্ডনীয় অপরাধ। সেটা কি আপনি জানেন? ভয় পাবেন না ঘু’ষ দিয়ে জমি কিনে নেওয়া গেলে-ও মানুষের মন কিনে নেওয়া যায় না। আমি আপনার বোনকে খেয়ে ফেলছি না। আমি তার সাথে কিছু জরুরি কথা বলব। সেজন্য এখানে ডেকেছি। আপনি এখন এখানে থেকে আসতে পারেন। কাইন্ড ইওর ইনফরমেশন আমার মনে যদি পাপ থাকতো। তাহলে এতগুলো গার্ড নিয়ে এই খোলামেলা পুকুর পাড়ে দেখা করতে আসতাম না। আমি চাইলে আপনার বোনকে তুলে নিয়ে নিজের কাছে রাখতে পারতাম। কিন্তু আমি সেসব কিছুই করি নাই। মাথার মধ্যে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে বুঝে নিব। আপনি বুদ্ধিমান আর না বুঝলে নির্বোধ। এখন এখানে আমি আপনাকে পছন্দ করছি না। ভালোই ভালোই যাবেন নাকি তুলে ফেলে দিয়ে আসতে হবে। মুনতাসিমের কথায় অপমানে মুখটা চুপসে গেল আরিয়ানের। মুহুর্তের মধ্যে সমস্ত মুখশ্রীতে আঁধার ঘনিয়ে এল। ক্রোধে সমস্ত শরীরে কম্পন সৃষ্টি হয়েছে। তবুও মুনতাসিমের মুখের ওপরে কথা বলার সাহস হলো না। ঘন গাঢ় নিঃশ্বাস ফেলে দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করল। আরিয়ান চলে যেতেই পুরো পরিবেশ নিস্তব্ধতায় ভরে উঠল। মুনতাসিম মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। আঁখিযুগলে শত বছরের তৃষ্ণা। সারাজীবন মেহেভীনকে দেখলেও তার দেখার তৃষ্ণা মিটবে না। নিরবতা ভেঙে মেহেভীন বলল,

–কেনো ডেকেছে আমায়?

–আপনি আমার ওপরে রাগ করছেন? আপনার অভিমানের আঁখিযুগল আমাকে সারারাত নিদ্রা যেতে দেয়নি। আপনাকে দেখার কঠিন অসুখে আমি খুব বাজে ভাবে অসুস্থ হয়েছি। আমার অসুখ আপনি দ্রুত সুস্থ করে দিন। আপনার কি এতটুকুও রাগ হয় না। এই যে আমি মাসের পরে মাস আপনার খোঁজ রাখি না। আপনার সাথে কথা বলি না। তবুও আমি ডাকার সাথে সাথে আপনি অস্থির হয়ে, কেন আমার কাছে ছুটে আসলেন? কেন আমার ডাককে উপেক্ষা করতে পারলেন না৷ আমি কি আদৌও বন্ধু হবার যোগ্যতা রাখি। মুনতাসিমের কথায় মেহেভীন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তারপরে শান্ত কণ্ঠে বলল,

–ভালোবাসি বলার চেয়ে মানুষের কাজে ভালোবাসা প্রকাশ পাবার ব্যাপার টা একটু বেশিই সুন্দর। আমাকে আপনি একটু বেশিই বোকা ভাবেন। এই যে আপনি রোজ নিয়ম করে আমার খোঁজ খবর রাখেন। আমি কোথায় যাই, কি করি, কে আমার দিকে তাকালো, কে আমার খারাপ চাইলো, কিসে আমার ভালো হবে। আপনি সব দিকেই খেয়াল রাখেন৷ এগুলো কি একটা মানুষকে মুগ্ধ করার জন্য যথেষ্ট নয়। ভালোবাসি বললেই ভালোবাসার মানুষ হওয়া হয় না। ভালোবাসার আগে ভালো রাখার দায়িত্ব নিতে শিখতে হয়৷ সেটা আপনি ভালো করেই জানেন। কে বলেছে ভালোবাসলেই রোজ নিয়ম করে কথা বলতে হবে। নিয়ম করে প্রতিদিন দেখা করতে হবে। ঘুরাফেরা, খাওয়া-দাওয়া, হৈ-হুল্লোড় করলেই মানুষের মধ্যে ভালোবাসা প্রকাশ পায়! ভালোবাসার জন্য একটা সুন্দর পবিত্র মনের প্রয়োজন আছে৷ সেই পবিত্র মনটা আপনার কাছে আছে। ভালোবাসা দূর থেকেই সুন্দর কাছে আসলে তা পানসে হয়ে যায়। সম্পর্কটা তিক্ততায় ভরে উঠে গুরুত্ব বোঝার জন্য দুরত্বের প্রয়োজন আছে। অল্পতে পেয়ে গেলে সেই জিনিসের মূল্য থাকে না। আপনি আমার সাথে কথা না বলেও আমার খোঁজ খবর রেখেছেন। আপনি জানেন আমি ছোট বাচ্চা নয়। আমি একটা ভালো মানের কাজের সাথে যুক্ত আছি। আমাকে রক্ষা করার জন্য সরকার অনেক সুযোগ সুবিধা দিয়েছে। কাজেই আমার ক্ষতি করা এতটা সহজ নয়। এই যে আজ আমায় ডাকলেন। আমি অস্থির হয়ে ছুটে আসলাম। আমাদের নিয়ম করে দেখা হলে, এতটা অস্থিরতা এত গভীর টান হৃদয়ের গহীনে থেকে আসতো। মেহেভীন পুকুরের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলছিল। মুনতাসিম মেহেভীনের প্রতি আরো গভীর ভাবে মুগ্ধ হলো। সে নিষ্পলক চাহনিতে মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মেয়েটার মুখশ্রীতে অসম্ভব ভাবে মায়া জড়ানো আছে। এই মায়াতেই সে শত-শত বার আঁটকে গিয়েছে। তার শান্ত হৃদয়টা এই মুখশ্রী উথাল পাথাল করে দিয়েছে। মৃত অনুভূতি গুলো করেছে জাগ্রত। দিয়েছে স্বচ্ছ এক পবিত্র ভালোবাসার ছোঁয়া।

–আপনার সাথে আমার অনেক কথা আছে। সেগুলো আমি আপনাকে নির্বাচনের পরে বলব। তার আগে বলুন আপনি আমায় চিনেও কেন না চেনার ভান ধরে ছিলেন।

–আপনি গিরগিটি হলে আমি হয়েছি প্রজাতি। রং বদলের খেলা দু’জন মিলে খেলেছি। মন্ত্রীর এলাকায় মানুষ হয়ে যদি মন্ত্রীকেই না চিনি৷ তাহলে এই এলাকায় থাকা আমার জন্য বৃথা। যদিও আপনাকে সামনে থেকে দেখার সৌভাগ্য আমার কখনো হয়নি। আমি জন্মের পরে আমার মা ভিষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন আমরা পরিবার সহ ঢাকাতে চলে যাই। সেখানে থেকেই আমার পড়াশোনা। আমি পাঁচ বছর বয়স থেকে নানির বাসায় থাকি। মাঝেমধ্যে আব্বু আম্মুর কাছে বেড়াতে আসতাম। আমার একা একা ভালো লাগতো না দেখে, বড় আব্বু প্রাপ্তি আপুকে আমার জন্য ঢাকা পাঠিয়ে দিলেন। দু’বোন মিলে সেখানে পড়াশোনা শেষ করেছি। মাঝেমধ্যে গ্রামে এসে আপনার ছবি দেখতাম। চারদিকে পোস্টটারের ছড়াছড়ি। একদিন আপনার ছবির দিকে তাকিয়ে কি বলেছিলাম জানেন? মুনতাসিম উৎসুক দৃষ্টিতে মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। আঁখিযুগলে তার কত-শত আকুলতা। মুনতাসিম নরম কণ্ঠে বলল,

–কি বলেছিলেন?

–আজকে বলব না সময় হোক শুনতে পাবেন। আজকে কিসের জন্য ডেকেছেন সেটা বলুন?

–এই কয়টা দিনে উপলব্ধি করলাম। আপনার সাথে কথা না বলে থাক অসম্ভব ব্যাপার। দম বন্ধ হয়ে আসে আমার। আমি প্রহর গুনতে থাকি কখন আপনার কণ্ঠ স্বর শুনতে পাব। আমার অস্থির হৃদয়কে শীতল করব৷ অনেক তো হলো গুরুত্ব বোঝাবুঝির খেলা। এই কয়টা দিন আমি ভিষণ ব্যস্ত থাকব। হয়তো আপনার চেনা মানুষটাও অচেনা হয়ে উঠবে। আমার জীবনটা ভিষণ অশান্তির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। শান্তি হিসবে আপনার কাছে কিছু চাইব দিবেন?

–কি চাই আপনার?

–রাতে আমাকে একটু করে সময় দিবেন। বেশি পাঁচ দশ মিনিট করে আমার সাথে কথা বলবেন। যেন বুক ভরা শ্বাস নিয়ে রাতে ঘুমোতে পারি। দীর্ঘ রজনী আমি শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় নিদ্রা গিয়েছি। এবার আমাকে ক্ষমা করুন মহারাণী দয়া করে ফোন দিলে একটু ফোন ধরবেন। মুনতাসিমের কথায় মেহেভীন মলিন হাসলো। সে আহত কণ্ঠে বলল,

–আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে মন্ত্রী সাহেব। একা একা ঘুমোতে শিখুন। দু’দিন শশুর বাড়ি চলে গেলে, আমার স্বামী নিশ্চয়ই আপনাকে ঘুম পাড়ানোর জন্য আমাকে আপনার কাছে পাঠাবে না। মেহেভীনের কথায় মুনতাসিমের শান্ত হৃদয়টা মুহুর্তের মধ্যে রক্তাক্ত হয়ে গেল। অনুভূতিরা বিষাদে ছেয়ে গেল। ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠল। মেহেভীন অন্য কারো হয়ে যাবে। কথা টা মস্তিষ্কে বাজতেই রুহু কেঁপে উঠছে। বুকের মধ্যে চিনচিন করে ব্যথা করছে। মনের গহীনে সে কি অসহনীয় যন্ত্রণা। মুনতাসিমের আহত মুখশ্রী মেহেভীনের ভেতরটা চূর্ণবিচূর্ণ করে দিচ্ছে। সমস্ত শরীর অবশ হয়ে আসছে। হাওয়ার সাথে মিশে থাকা কোনো অজানা দেওয়াল মেহেভীনের দাঁড়িয়ে থাকার সমস্ত শক্তি শুষে নিচ্ছে। চারদিকে নিস্তব্ধতা ঘিরে ধরলো। মুনতাসিম আহত কণ্ঠে বলল,

–এই যে আমাদের দেখা হয়না কথা হয় না। তবুও আপনি আমার সাথেই থাকেন অসহনীয় যন্ত্রনায়, মন খারাপ করা গানের লাইনে, মাঝ রাতে বুকের ব্যথায় আপনি আমার সাথে থাকেন। আপনি আমার মনের অন্তরালে ছিলেন। আছেন আর সব সময় থাকবেন৷ আমি কিছু বলব না সময় কথা বলবে। আমি কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী। সূর্য তার কিরণ চারদিকে ছড়িয়ে দিতে শুরু করেছে। এখানে থাকাটা নিরাপদ নয়। আপনি বাসায় ফিরে যান। মেহেভীনের বিয়ের কথায় মুনতাসিমের কোনো ভাবান্তর হলো না। তা দেখে মেহেভীনের ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। মানুষটা কি তবে তার নয়। মানুষটা তো কোনো যন্ত্রণা পাচ্ছে না। তাহলে তার ভেতরটা যন্ত্রণায় কেন ছটফট করছে। কেন সারাক্ষণ মানুষটার কাছে থাকতে ইচ্ছে করছে। মেহেভীন একবার পেছন ফিরে তাকালো। মুনতাসিম অদ্ভুত দৃষ্টিতে মেহেভীনের দিকে চেয়ে আছে। মুনতাসিমের এমন চাহনিতে মেহেভীন আরো ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল। মানুষটার মনে কি চলে বোঝা বড় দায়৷ বুকভরা অজানা যন্ত্রণা নিয়ে মেহেভীন বাসায় দিকে যাচ্ছে।

মুনতাসিম আর মেহেভীনের ছবি আঁখিযুগলের সামনে স্পষ্ট হতেই সমস্ত শরীর জ্বলে উঠল তাহিয়ার। সে দাদুর বাসায় ফুফাতো ভাইয়ের বিয়ের কাজে ব্যস্ত ছিল। সেজন্য বাবা মায়ের সাথে চৌধুরী বাড়িতে আসেনি। অন্য নারীর পাশে মুনতাসিমকে দেখে মনের অজান্তেই আঁখিযুগল দিয়ে টপ টপ করে পানি গড়িয়ে পড়ল। মনটা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। যে মানুষটা শুধুই তার সেই মানুষটার পাশে অন্য নারী কি করে! তার জবাব সে চাইবে। খুব তাড়াতাড়ি সে চৌধুরী বাড়িতে যাবে। কেন যে বাবা মায়ের সাথে না গিয়ে এখানে আসলো। ভিষণ কষ্ট হচ্ছে তাহিয়ার দম বন্ধ হয়ে আসছে। সে কিভাবে অন্য কারো সাথে মুনতাসিমকে সহ্য করবে। সে রাগান্বিত হয়ে তার মাকে ফোন করল। দ্রুত গাড়ি পাঠাতে বলল সে আজই চৌধুরী বাড়িতে যাবে।

ঘড়ির কাঁটায় রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই। তখনই দরজায় অনবরত কলিং বেল বেজেই যাচ্ছে। মেহেভীনের বাবা অসুস্থ থাকার কারনে ঘুমের ঔষধ খেয়ে দ্রুত নিদ্র গিয়েছেন। রাইমা বেগম বেশি রাত জাগতে পারেন না৷ সে-ও অনেক আগেই নিদ্রা গিয়েছেন। মেহেভীনের রাত জাগার অভ্যাস আছে। সে কিছুটা অবাক হলো। বিরক্ততে মুখশ্রী কুঁচকে এল। সে হন্তদন্ত হয়ে দরজা খুলে একটা রমণীকে দেখে বিস্মিত হয়ে গেল। নেভি ব্লু জিন্স আর কলাপাতা রঙের ছোট টপসে মেয়েটিকে দারুন আকর্ষণীয় লাগছে। দুধে-আলতা গায়ের রঙ রাতের আঁধারেও চমক দিচ্ছে। মেহেভীন থমথমে মুখশ্রী করে বলল,

–কে আপনি?

–আপনি মেহেভীন তাই না৷

–জি, কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না আপু।

–আমি মুনতামিসের বউ। কথাটা কর্ণকুহরে আসতেই ভেতরটা ধক করে উঠল মেহেভীনের। অজানা ভয়ে ভেতরটা কাবু হয়ে আসতে শুরু করল। তবে কি সে আবার মানুষ চিনতে ভুল করল। ভেতরটা হাহাকার করে উঠল। মনের শহরে তাচ্ছিল্যের মিছিল শুরু হয়ে গিয়েছে। মেহেভীন ধরে আসা কণ্ঠে জবাব দিল,

–আপনি আমার সাথে ফাজলামি করছেন? চেনা নেই জানা নেই হুট করে এসে বলছেন। আপনি মুনতাসিমের বউ আমি কিভাবে বিশ্বাস করব?

–কি করলে আপনি বিশ্বাস করবেন? আপনি যা বলবেন আমি তাই করব। আপনি শুধু মুনতাসিমের জীবনে থেকে সরে যান। আমি মুনতাসিমকে ভিষণ ভালোবাসি। এভাবে আমার স্বামীকে আমার থেকে কেঁড়ে নিবেন না আপু। মুনতাসিম আমার থেকে দূরে সরে গেলে আমি দম বন্ধ হয়ে মা’রা যাব। এভাবে আমার স্বামীর ভালোবাসা থেকে আমাকে বঞ্চিত করবেন না। পৃথিবীতে এত পুরুষ থাকতে আমার স্বামীর দিকে কেন নজর দিলেন। আমি দুই মাসের অন্তসত্ত্বা এই অবস্থায় মুনতাসিম আমাকে ডিভোর্স ও দিতে পারবে না। আমার অনাগত সন্তান পৃথিবীতে আসার পরে, মুনতাসিম যদি আমাকে ডিভোর্স দেয়। তখন আমি আমার সন্তানকে নিয়ে কথায় যাব। আমাকে এতটুকু দয়া করুন আপু। এভাবে আমার সংসারটা ভাঙবেন না৷ এই যে মুনতাসিম আপনার কাছে যায়। আবার মাসের পর মাস তার খোঁজ থাকে না৷ সে কোথায় থাকে কার কাছে থাকে। সেটা কখনো ভাবেননি আপু। আজ আপনাকে দেখে সে আমাকে অবহেলা করছে। আমার শরীরে প্রহার পর্যন্ত করেছে। আমি যেন সবকিছু আপনাকে না বলি। কথা গুলো বলেই অশ্রুবিসর্জন দিতে লাগলো তাহিয়া। মেহেভীন কেমন নিস্তব্ধ হয়ে গেল। মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে পড়েছে। বুদ্ধি গুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। যে মেয়েটার গলায় এতটা জোর সে কিছুতেই মিথ্যা কথা বলতে পারে না। মেহেভীনের বুকটা ভারি হয়ে আসতে শুরু করল। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। তাহিয়া যদি তার সামনে না থাকতো। তাহলে এখনই ছটফট করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পড়তো। তার মস্তিষ্ক একটা কথায় বলছে। এত সুন্দর নিষ্পাপ চেহারা কিভাবে প্রতারণা করতে পারে। অসহনীয় যন্ত্রনায় ভেতরটা জ্বলে পুড়ে দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে।

চলবে…..

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_২১
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

আঁখিযুগল ঝাপসা হয়ে আসতে শুরু করল। মনের গহীনে থেকে ডেকে বলছে। এত সহজে বিশ্বাস করিস না মেহেভীন। ধোঁকার জগতে সহজ-সরল হতে নেই। মেহেভীনের মস্তিষ্কে সন্দেহের দানা এসে বাসা বাঁধলো। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাহিয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। আচমকা মেহেভীনের মুখশ্রী বিরক্তিতে ভরে উঠল। সে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–আপনার স্বামী আপনাকে এতরাতে একা ছাড়লো? আপনি বাসায় গেলে আপনার স্বামী আপনাকে মা’রবে না। চলুন আমি আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি। আর আপনার স্বামীর সাথে আমার কিছু বোঝাপড়া আছে। আজকে সেগুলো মিটিয়ে তারপরে আমি বাড়ি আসব। মেহেভীনের কথায় তাহিয়া থতমত খেয়ে গেল। সে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মেহেভীন এমন কিছু বলতে পারে, তা তাহিয়ার কল্পনার বাহিরে ছিল। প্রাপ্তি যে তাকে বলল মেহেভীন খুব সহজ সরল মেয়ে। তাহিয়াকে নিশ্চুপ হতে দেখে মেহেভীনের সন্দেহ দৃঢ় হলো। সে আরেকটু নিশ্চিত হতে বলল,

–আপনাদের বিয়ের ছবি আছে। থাকলে একটু দেখাবেন? মেহেভীনের কথায় তাহিয়া আশার আলো খুঁজে পেল। সে বিলম্ব করল না। দ্রুত ফোন থেকে একটা ছবি বের করে দেখালো। সেখানে তাহিয়া লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে আছে। শরীরে বাহারী রকমের অলঙ্কার। দু-হাত ভর্তি মেহেদী পুতুলে মতো লাগছে তাহিয়াকে। যে কেউ দেখলে বলবে নতুন বউ। তার পাশেই শুভ্র পাঞ্জাবি পড়া মুনতাসিম দাঁড়িয়ে আছে। ছবিটা দেখে মেহেভীনের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল। হৃদয় টা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। শরীর পুড়লে দেখা যায়। কিন্তু মন পুড়লে দেখা যায় না কেন? তাহলে মানুষ মানুষকে পোড়ানোর আগে দশবার ভেবে নিতো।

–হতেও পারে আপনি কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে বউ সেজে গিয়েছিলেন। আমি আপনাকে এভাবে কিভাবে বিশ্বাস করতে পারি। আপনি মুনতাসিমকে আমার সামনে নিয়ে এসে প্রমাণ করুন যে সে আপনার স্বামী। তাহিয়া নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না৷ সে রাগান্বিত হয়ে বলল,

–একটা মেয়ে কখনো তার স্বামী সন্তান নিয়ে মিথ্যা কথা বলতে পারে! আজকাল মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু একটা বিবাহিত ছেলের সাথে রঙ্গলীলা করতে খুব মজা লাগে তাই না। আমি বলছি আমি তার অর্ধাঙ্গিনী তার অনাগত সন্তানের মাতা। আমার কথা বিশ্বাস না করে আপনি আমাকে সন্দেহ করছেন?

–আমাকে খোঁচাতে এসে আপনার খুব ভালো লাগছে তাই না। ভেবেছিলেন মেহেভীন কতটা বোকা তাকে যা বোঝানো যায়। সে তাই বুঝবে আমাকে ছোট বাচ্চা মনে হয় আপনার। প্রমাণ ছাড়া একটা কথাও মেহেভীন বিশ্বাস করবে না। আপনি বিয়ের ছবি দেখিয়েছেন। বিয়ের কাবিন দেখাবেন। মুনতাসিমকে আমার সামনে নিয়ে এসে তার মুখে স্বীকার করাবেন। তারপরেই আমি বিশ্বাস করব সে আপনার অর্ধাঙ্গ। ক্রোধে চোয়াল শক্ত হয়ে এল তাহিয়ার। আঁখিযুগল রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে। আঁখির জলন্ত আগুন মেহেভীনকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে দিতে ইচ্ছে করছে। মস্তিষ্ক উত্তপ্ত হয়ে টগবগ করছে। সে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

–আপনি কয়টা দিন অপেক্ষা করুন। আমাদের বিয়ের কাগজ আমেরিকাতে আছে। সে তো আর আজকাল ধরে আমার স্বামী নয়। সে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আমার অর্ধাঙ্গ। তাহিয়ার কথায় মেহেভীনের মুখশ্রীতে তাচ্ছিল্যের ফুটে উঠল। তাহিয়া কোনো কথা বলার সুযোগ পেল না। যাবার সময় মেহেভীনকে হুমকি দিয়ে গেল। সে মেহেভীনকে দেখে নিবে। মেহেভীন তাচ্ছিল্যের সুরে জবাব দিল, “অপেক্ষায় থাকলাম।

তাহিয়া চলে যেতেই অজানা ভয়ে ভেতরটা কাবু হয়ে আসছে মেহেভীনের। তাহিয়া যদি সত্যি কথা বলে থাকে আর সেটা যদি প্রমাণ হয়ে যায়। তখন সে কি করবে? ভেতরটা হাহাকার করে উঠছে। অনুভূতি শূন্য হয়ে যাচ্ছে মেহেভীন। মনের গহীন অশান্ত হয়ে উথাল পাথাল করছে। মেহেভীনের হৃদয় শীতল করার জন্য মুনতাসিমের একটা কলই যথেষ্ট ছিল। সে কক্ষে এসে দেখলো মুনতাসিম ফোন দিয়েছে। কেন জানি মেহেভীনের ভিষণ রাগ হলো। সে নিজের মধ্যে কথা দমিয়ে না রেখে বলল,

–আপনি কি বিবাহিত মন্ত্রী সাহেব?

–এটা আপনি আজ জানলেন ম্যাডাম। আমি শুধু বিবাহিতই না চার সন্তানের বাপ আমি। ভিডিও কল দিব? দেখবেন আমার বউ বাচ্চাকে ভিষণ সুন্দর। একটা বাচ্চাকে আপনার ঘাড়ে তুলে দিব। আরেকটাকে আপনার মাথায়। তৃতীয় জনকে কোলে তুলে দিব। চতুর্থজনকে পায়ের সাথে গড়াগড়ি করতে লাগিয়ে দিব। আপনি চাইলে আমি আরো কয়টা বাচ্চা নিয়ে আপনার গলায় ঝুলিয়ে দিতে পারব। মেহেভীন মুনতাসিমকে অবাক করে দিয়ে বলল,

–ভিডিও কল দিন দেখব আমি। মেহেভীনের কথায় মুনতাসিম হতভম্ব হয়ে গেল। বিস্ময় কণ্ঠে আবার প্রশ্ন করল৷ মেহেভীনের উত্তর একই রইল। মুনতাসিম উঠে বসলো তারপর কিছুটা ব্যঙ্গ করে বলল,

–এভাবে নিজের ভূতের মতো রুপ দেখিয়ে আমাকে ভয় দেখাতে চান ম্যাডাম। যান গিয়ে ভালো করে আগে মেকআপ করে আসুন। তারপর না হয় ভিডিও কলে আসবেন।

–আমি কোনো বিশ্ব সুন্দরী নই বা নায়িকাও নই। কাজেই আমার মেকআপ করার প্রয়োজন নেই। আপনি দিতে পারবেন না বললেই হয়। কথা গুলো বলেই মেহেভীন কল কেটে দিল। সাথে সাথে মুনতাসিম ভিডিও কল দিল মেহেভীন কেটে দিল। কেটে দিতেই আবার কল আসলো। মেহেভীন ধরল মুনতাসিমের মুখের দিকে তাকাতেই মেহেভীনের সমস্ত রাগ হাওয়ার সাথে মিলিয়ে গেল। আচমকা অধরের কোণে হাসির রেখা দেখা গেল। অনুভূতিরা আনন্দে মেতে উঠল। মুনতাসিম গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–বলুন মহারাণী আপনার কি জানার আছে। আমাকে আর কি কি করতে হবে? মেহেভীন নিস্তব্ধ হয়ে গেল। অকারণে প্রচুর হাসি পাচ্ছে তার। সে নিজেকে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। তবে হাসি আজ তার সাথে বেইমানী করছে। এমন সিরিয়াস মুহুর্তে হাসি আসার বাজে ব্যাপারটা মেহেভীনকে অসহ্য করে দিচ্ছে। সে হাসি চেপে না রাখতে পেরে সমস্ত মুখশ্রী এক হাতে আড়াল করে নিল। বুকের মধ্যে তার ধুকপুক করছে। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে শুরু করছে। মেহেভীনের কান্ড দেখে মুনতাসিম শব্দ করে হেসে উঠল। মুনতাসিনের হাসোজ্জল মুখশ্রী হৃদয়ের গহীনে প্রশান্তির দোল খেলে গেল। মেহেভীন ভেতর থেকে অদ্ভুত এক শান্তি অনুভব করছে। মানুষটার সাথে কথা বললে মনেই হয় না। মানুষটা তাকে ঠকাতে পারে। মৃত্যুর মতো যেন সত্যি হয় মেহেভীনের মনের কথা। সারাজীবন বেঁচে থাকব। এমন আশা নিয়ে বলা কথা গুলো মিথ্যা হয়ে যাক তাহিয়ার কথা। মানুষটা তার একান্তই ব্যক্তিগত। সে তার ব্যক্তিগত চাঁদের পাশে অন্য একটা তারা কেও সহ্য করতে পারবে না। মুনতাসিম মেহেভীনের সাথে কথা বলে রেখে দিল। তখনই তাইয়ান আসলো মুনতাসিমের কক্ষে। তাইয়ানকে ভিষণ বিধস্ত দেখাচ্ছে। মুনতাসিম তাইয়ানের মুখ দেখলেই তার মন পড়ে ফেলতে পারে। মুনতাসিব সবকিছু বুঝে-ও নিশ্চুপ রইল। তাইয়ান মলিন কণ্ঠে বলল,

–আপনি সাবধানে থাকবেন স্যার। আপনার বিরুদ্ধে গভীর ভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আপনার পরিবারের ওপরেও আঘাত আসতে পারে। আপনি বাড়ির চারপাশে গার্ডের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। তাইয়ানের কথায় মুনতাসিম হালকা হাসলো। সে কি ভয়ংকর হাসি। তাইয়ান এই হাসির মানে জানে। মুনতাসিম শীতল মস্তিষ্কের লোক। সে ঠান্ডা মাথায় তাইয়ানের মনের কথা বুঝে গেল। তাইয়ানের ভেতরটা যন্ত্রনায় ছটফট করছে। তার ভেতরটা তীর দিয়ে কেউ ছিদ্র করে দিয়েছে। সেই মৃ’ত্যু যন্ত্রনা বুকে নিয়ে সে মুনতাসিমের থেকে সত্য কথাটা আড়াল করে গেল। মুনতাসিম তাচ্ছিল্য করে বলল,

–তুমি আমাকে ছোট বাচ্চা মনে করেছ তাইয়ান? আমি তোমার বোকা বোকা করে শুনে ভিষণ অবাক হচ্ছি! তোমার মতো সহজ সরল ছেলে আমার ব্যক্তিগত বডিগার্ড হলো কিভাবে সেটাই চিন্তা করছি? শত্রু, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ,এসব পুরোনো হয়ে গিয়েছে। নতুন কিছু থাকলে বলতে পারো। আমার যদি শত্রু না থাকে, তাহলে আমার মন্ত্রী হওয়া টাই বৃথা।

–জাফর সাহেব খুব শক্ত হাতে মাঠে নেমেছে। আপনার কাছের লোকই আপনার আড়ালে গভীর ষড়যন্ত্র করছে। আপনি কাছের মানুষদের থেকে দুরত্ব বজায় রাখবেন।

–সেই মানুষ টাকে তুমি চিনো তাইয়ান? মুনতাসিমের শান্ত কণ্ঠে বলা কথা গুলো তাইয়ানে কলিজা কেঁপে উঠল। সে জানে মনুতাসিম না জেনে কোনো কথা বলে না। তবে কি সে তার কথা জেনে গেল। সে যে মানুষটা কে ভিষণ ভালোবাসে। ভালোবাসার মানুষের শত অপরাধ সে ক্ষমা করতে প্রস্তুত। কিন্তু মুনতাসিমের ক্ষতি সে সহ্য করতে পারবে না। সে তার প্রেয়সীকে বলবে সে যেন এমনটা না করে। বুকের মধ্যে অশান্ত নদীর মতো উথাল পাথাল করছে। সে মুনতাসিমের সামনে আর কিছুক্ষণ থাকলে ধরা পড়ে যাবে। সে ভয়ার্ত কণ্ঠে মুনতাসিমের থেকে অনুমতি নিয়ে কক্ষ থেকে বের হয়ে গেল। মুনতাসিম তাইয়ানের দিকে তাকিয়ে, একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

প্রভাতের আলোয় চারদিক ঝলমল করছে। রৌদ্রের মিষ্টি কিরণ এসে মেহেভীনের মুখশ্রীতে আঁচড়ে পড়ছে। চারদিক সোনালী আলোয় মুখরিত হয়ে উঠেছে। সবুজ বর্ণের ধানের গাছ গুলো ধানসহ সোনালী বর্ণের রুপ নিয়েছে। মেহেভীন হালকা করে ধান গুলোকে ছুঁয়ে দিল। তাদের এলাকাটা তার ভিষণ ভালো লাগে। না শহর না গ্রাম দু’টোর মাঝামাঝি মনে হয় তার তাছে। শহরের মতো যানবাহন চলাচল করে। দোকানপাটের অভাব নেই। আবার থেকে থেকে একটু করে ফাঁকা জায়গায় আবাদ করা৷ এই জমির মালিক গুলো ভবিষ্যতে এখানে বাড়ি তুলবে। সেজন্য জমি কিনে রেখে দিয়েছেন। ফাঁকা থাকলে কাজে লাগবে না। সেজন্য আবাদ করে প্রতিবছর। সাথে পরিবেশকে করে তুলেছে মনোমুগ্ধকর কর। মেহেভীনের বাবা হাতে ডিম আর সয়াবিন তেল নিয়ে আসছিল। মেয়েকে ধানের জমির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মনোমুগ্ধকর হাসি উপহার দিলেন তিনি। মেয়ের কাছে এসে মেয়ের কাঁধে হাত রেখে বাসার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগলেন। মেহেভীন বাবার আদুরে হাতকে উপেক্ষা করতে পারল না। সে-ও প্রাকৃতিক সুন্দর্যকে উপভোগ করাকে বিদায় জানিয়ে বাবার সাথে ছুটলো।

–মেহেভীন বিয়ের সম্পর্কে কিছু ভাবলি?

–আমি আরিয়ান ভাইকে বিয়ে করতে পারব না আব্বু।

–কেন?

–তুমি এত তাড়াতাড়ি সবকিছু ভুলে গেলে! তুমি কিভাবে এমন নিকৃষ্ট মানুষের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করতে পারো? আমি তোমার বিবেকের তারিফ করছি।

–আমি জানি আরিয়ান জঘন্যতম অপরাধ করেছে। তার জন্য সে অনুতপ্ত। আমার কাছে প্রতিদিন মাফ চায়। আমাদের বিপদে এগিয়ে আসে। আমাকে কেউ কিছু বললে আরিয়ান আমার ঢাল হয়ে দাঁড়ায়।

–আর তোমার মেয়েকে অজ্ঞান করে বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল। তার বেলায় কিছু না। একটু সেবাযত্ন করেছে তার সাত গুন মাফ! তুমি একজন বাবা হয়ে কিভাবে পারলে আরিয়ান ভাইয়ের মতো মানুষের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করতে! আমাকে এতটা মানসিক চাপ দিও না আব্বু। প্রাপ্তি আপুর কথা মতো সত্যিই তোমাদের মুখ দেখতে চাইব না। তোমার ভাইয়ের ছেলের তোমার মায়া লাগতে পারে। সে আমার কেউ না। আমার তার প্রতি কোনো মায়া কাজ করে না। আমি তাকে ঘৃণা করি। যে ছেলে সামান্য টাকার লোভে আমাকে বিক্রি করে দিতে পারে। সেই ছেলে বিয়ের পরে নিজের বউকে টাকার বিনিময়ে অন্য পুরুষের ঘরে পাঠাবে না। তার কোনো নিশ্চয়তা আছে আব্বু।

–মুখ সামলে কথা বল মেহেভীন। আমি তোর বাবা ভুলে যাচ্ছিস তুই। আরিয়ান একটা অপরাধ করে ফেলছে। সে অপরাধবোধে ভুগছে। আমাদের উচিৎ তাকে ক্ষমা করে দেওয়া৷ আমার বিশ্বাস আরিয়ান এমন কিছুই করবে না।

–তোমার নিজের ছেলে নেই। তাই ভাইয়ের ছেলের প্রতি তুমি অন্ধ বিশ্বাসে ডুবে গিয়েছ। তোমার ভুলের মাশুল আমি আমার জীবন দিয়ে দিতে পারব না৷ একবার বিয়ে ঠিক করেছিলে কাপুরুষের সাথে। আরেকবার ঠিক করলে লোভী ছেলের সাথে। যে টাকা পেলে নিজের বউয়ের অন্য পুরুষের ঘরে পাঠাতে দু’বার ভাববে না। কথা গুলো শেষ হবার সাথে সাথে ফরিদ রহমান মেয়ের গালে ক’ষে থা’প্প’ড় বসিয়ে দিলেন। মেহেভীন বিস্ময় নয়নে বাবার দিকে দৃষ্টিপাত করছে আছে। মনের অজান্তেই বাবা নামক মানুষটার জন্য মনের মধ্যে ঘৃণা তৈরি হলো। সব সময় তার সিদ্ধান্তই কেন তাকে মেনে নিতে হবে। তার কি নিজস্ব কোনো মতামত নেই। মেহেভীন অশ্রুসিক্ত নয়নে বাবার দিকে তাকিয়ে নিজের কক্ষে চলে গেল। যাবার আগে ঘৃণা ভরা দৃষ্টি দিতে ভুলল না।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে