কোন কাননের ফুল গো তুমি পর্ব-০৬

0
560

#কোন_কাননের_ফুল_গো_তুমি
#পর্ব_৬
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
____________
সম্পূর্ণ রাস্তা হেঁটে হেঁটেই ভার্সিটিতে পৌঁছাল মিতুল। সঙ্গে রূপকও। মমতা বেগমের সাথে কথার ছলে সেদিন সে মিতুলের ভার্সিটির নামও জেনেছিল। তাই মিতুলকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন হয়নি। হেঁটে আসার দরুণ প্রথম ক্লাসের অর্ধেক সময় শেষ মিতুলের। ভার্সিটি লাইফে টাইম নিয়ে এত প্যারা নেই। তবে অর্ধেক সময় যখন চলেই গেছে তখন মিতুল আর প্রথম ক্লাসটা করবে না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ভার্সিটির গেইটের কাছে এসে পরপর তিনটা হাঁচি দিল রূপক। মিতুল মুখ গোমড়া করে বলল,

“বেশ হয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে অন্যকে সাহায্য করার মজা বোঝেন এখন।”

রূপক কিছু বলতেই যাবে এরপূর্বেই আবারও হাঁচি দিল। নাক টেনে হাত ঘড়িতে সময় দেখে বলল,

“প্রথম ক্লাস তো মনে হয় করবে না আর।”

মিতুল সরু দৃষ্টিতে তাকাল। এই ছেলে কি মনও পড়তে পারে নাকি? তাছাড়া ক্লাস কয়টা থেকে শুরু হয় এসব তো সে রূপককে বলেনি। এতকিছু সে জানে কী করে? কৌতুহল প্রবণতা প্রকাশ না করে বলল,

“না।”

“তাহলে আমার সাথে এসো।”

“কোথায়?”

“কফি খাব। এক কাপ কফি না হলে এখন আমার চলবেই না।”

সময় কাটানোর জন্য হলেও মিতুল রাজি হয়ে গেল। এছাড়া তার নিজেরও আজ ক্লাস করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। ওরা দুজন ভার্সিটির সামনেই ক্যাফেতে গেল। এখানে কফি ছাড়াও সিঙারা, সমুচা পাওয়া যায়। এখন ক্যাফ সম্পূর্ণ ফাঁকা। কলেজ, ভার্সিটির সব স্টুডেন্টস-ই তো ক্লাসে। ওরা নিরিবিলি একটা টেবিল দখল করে বসল। রূপক দুটো কফি অর্ডার দিতে চাইলে মিতুল বাধা দিয়ে বলল,

“উঁহু! আমি কফি খাব না।”

“কেন?”

“তিতকুটে কফি আমার পছন্দ না।”

“আমি খুব ভালো কফি বানাতে পারি।”

“আপনি কি চীনে কফি বিক্রি করেন নাকি?”

“বোকার মতো কথা বলো কেন? কফি বিক্রি না করলে কি কফি বানানো যায় না?”

“যেভাবে বললেন আমি ভাবলাম আপনি বেশ প্রফেশনাল হবেন।”

রূপক কোনো উত্তর দিল না। কফি দিতে বলল একটা। মিতুল চুপচাপ বসে আছে। সকালে না খাওয়ার দরুণ পেট পাকাচ্ছে এখন। খাবারের সঙ্গে রাগ করলেই হয়তো ক্ষুধা তখন বেশি লাগে। রূপকের ওপর মিতুলের কিঞ্চিৎ রাগও হলো। সে বলেছে সে কফি খাবে না। সিঙারা, সমুচা কিছু যে খাবে না তা তো বলেনি একবারও। তার কি উচিত ছিল না মিতুলকে খাবার সাধা? কোনো ম্যানার্স নেই, কিচ্ছু না। মিতুল নিজের ওপরই বিরক্ত হলো। রূপক এর মাঝে একটা কথাও বলল না। মিতুলের ফোন বাজছে। মমতা বেগম ফোন করেছেন। মিতুল দু’বার কল কেটে দেওয়ার পরও তিনি কল করে যাচ্ছেন। অগত্যা মিতুলকে কল রিসিভ করতে হলো। রূপক তখন বলল,

“তুমি একটু বসো। আমি নাপা নিয়ে আসি। ভীষণ মাথা-ব্যথা করছে। জ্বর আসবে বোধ হয়।”

মিতুলের রাগ হলো। এত কৈফিয়ত কে চেয়েছে ভাই? নিজের পেট শান্তি করে এখন তুই ওষুধ খাবি নাকি বৃষ্টির পানি খাবি খা। সে রূপকের কথার জবাব দিল না। মমতা বেগম ফোনের ওপাশ থেকে বলছেন,

“কোথায় আছিস এখন?”

“ক্যাম্পাসে।”

“রূপক ছাতা দিয়েছে তোকে?”

“তুমি তাকে কেন ছাতা দিয়ে পাঠিয়েছ?”

“ও নিচে যাচ্ছিল তাই। তুই তো ছাতা নিলি না।”

“ইচ্ছে করেই নিই-নি।”

“রাগ করে খেলিও না।”

“তুমি বাসায় ঘুমাও মা। আমি রাখছি।”

মিতুল ফোন কেটে দিয়ে আবারও চুপ করে বসে রইল। একবার ভাবল সে নিজেই সিঙারা কিনে খাবে। পরে আবার ভাবল, রূপক এসে দেখলে তাকে নিয়ে মজা উড়াতে পারে। রূপক যাওয়ার পরই না হয় খাবে।

সে বাইরে তাকাল। বৃষ্টি বেড়েছে আবার। এক পশলা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে একটা সুন্দরী মেয়ে ক্যাফেতে এলো তখন। পেছনে এলো একজন পুরুষ। পুরুষটি মিতুলের চেনা। প্রথম বয়সের আবেগ, ভালোবাসা; যার নাম নওশাদ। সে একটু নড়েচড়ে বসল। কেমন যেন অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে তার। একা বলেই হয়তো অস্বস্তিটা ক্রমান্বয়ে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। রূপকটা কেন এখনো আসছে না? অন্তত তার উপস্থিতিতে এরকম অস্বস্তি তো হবে না। ভেতরে আসার পর নওশাদের সাথে তার চোখাচোখি হয়ে গেল। নওশাদ যে মিতুলকে দেখে অবাক হয়েছে সেটা তার চোখের ভাষাতেই স্পষ্ট।

“এখানে বসব?”

চৈতির প্রশ্ন শুনে নওশাদ দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। স্মিত হেসে বলল,

“বসুন।”

চৈতি বসেছে মিতুলের দিকে পিঠ করে। আর ওর সম্মুখের চেয়ারে নওশাদ। এখান থেকে স্পষ্টই সে মিতুলকে দেখতে পাচ্ছে। চৈতিকে রেখে যে মিতুলের কাছে আসবে সেটাও পারছে না আপাতত।

সেই মুহূর্তে মিতুলকে অসম্ভব রকম অস্বস্তির হাত থেকে বাঁচাতে রূপক চলে আসে। তার হাতে প্যাকেট। মিতুল জানতে চাইল,

“কী এগুলো?”

“পরোটা আর ডিম ভাজি। খেয়ে নাও।”

সামনের চেয়ারে বসে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বলল রূপক।

“আপনি না ওষুধ আনতে গেলেন?”

“এনেছি। সঙ্গে তোমার খাবারও। সকালে তো খাওনি।”

“এটাও কি মা আপনাকে বলেছে?”

“তোমার কি ধারণা আমি মন বিশেষজ্ঞ? মন পড়তে পারি? আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং- এ পড়ছি। এসব মন-টন আমি বুঝি না।”

“সে তো আপনাকে দেখলেই বোঝা যায়। এতদূর গিয়ে এগুলো না এনে সিঙারা, সামুচা খাওয়ালেই তো হতো।”

“ওগুলো বাসি।”

“হু! বলেছে আপনাকে।”

“তোমার সঙ্গে তর্ক করতে চাইছি না। চুপচাপ খেয়ে নাও।”

পেটে ক্ষুধার যন্ত্রণা থাকায় মিতুল নওশাদের কথা যেন বেমালুম ভুলে গেছে। সে খাবার খাচ্ছে চুপচাপ। রূপকও ওষুধটা খেয়ে নেয়।

চৈতি কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,

“আমার হয়তো এভাবে চলে আসা ঠিক হয়নি তাই না?”

নওশাদের মন মিতুলের দিকে পড়ে আছে। তারচেয়েও বেশি মনে কৌতুহল হচ্ছে এটা জানার জন্য যে, সাথে ছেলেটা কে! সে উদাসীনভাবে চৈতিকে বলল,

“না, না। ইট’স ওকে।”

“ঐদিন বাসায় চলে গেলাম। আজ আবার কলেজে। নিজের কাছেই বিষয়টা খারাপ লাগছে। আপনিই বা আমাকে কীভাবে দেখছেন কে জানে!”

নওশাদ এবার চৈতির দিকে তাকাল। বিনয়ী হয়ে বলল,

“আমি সত্যিই আপনাকে নিয়ে কিছু ভাবছি না। সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছি। আপনি শুধু শুধু নিজেকে ব্লেইম করবেন না প্লিজ!”

“আমি আসলে যে কথা বলতে এসেছি। আপনি নাকি এখন বিয়ে করতে চাচ্ছেন না?”

নওশাদ মিতুলের দিকে তাকিয়ে বলল,

“হ্যাঁ।”

“কারণটা কি জানতে পারি?”

“বিশেষ কোনো কারণ নেই। আসলে বিয়ের জন্য মেন্টালি যেই প্রিপারেশনটা দরকার সেটা এখন আমার নেই। সংসার, দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আমার সময়ের দরকার।”

“কতটা সময় দরকার?”

নওশাদের চোখে চোখ রেখে জানতে চাইল চৈতি। ঐ চোখে আবেদন, আকুলতা। ভালোবাসা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা স্পষ্ট। নওশাদ বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। দৃষ্টি সরিয়ে বলে,

“আমি আসলে সময়টা সঠিক জানিনা।”

“যদি বলি আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করব?”

“এটা না করলেই বোধ হয় ভালো হবে। আমি কবে না কবে বিয়ে করি তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই।”

“আমি ঠিক-ঠিকানা ছাড়াই অপেক্ষা করতে চাই। আপনার হয়তো আমাকে এখন অনেকটা ছোটো কিংবা ছেচ্রা টাইপ মেয়ে মনে হতে পারে। কিন্তু আমি আসলে স্পষ্টভাষী। মনের মাঝে কিছু লুকিয়ে রাখতে পারি না। আমার মা নেই। ছোটোবেলা থেকেই বাবার কাছে বড়ো হয়েছি। মনের সকল কথা বাবাকে বলা যায় না। তাই আমি নিয়মিত ডায়েরি লিখতাম। এখনো লিখি। বাবা যেদিন আপনার ছবি দেখাল, আপনার সম্পর্কে আমায় বলল আমার কেন জানিনা আপনাকে সামনে থেকে না দেখেই ভালো লেগে গেছে। আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, আপনাকে নিয়ে অনেক কথাই আমার ডায়েরিতে লেখা আছে। এখন এত অল্প সময়ের ভালোলাগাকে আপনি ভালোবাসা, পাগলামি, মোহ যা ইচ্ছে বলতে পারেন। কিন্তু আপনার জন্য অপেক্ষা করতে নিষেধ করতে পারবেন না।”

নওশাদ বাকহারা। তার শব্দ ভাণ্ডারে উত্তর দেওয়ার মতো কোনো শব্দ নেই যা দিয়ে সে বাক্য বুনবে। হঠাৎ করে মনে হচ্ছে দমকা হাওয়া এসেছে। আচ্ছা মিতুলের সাথে যদি তার দেখা না হতো? তাহলে কি সে চৈতিকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যেত? শুধুমাত্র মিতুলের জন্যই কি সে সবকিছু থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চাইছে?

চৈতি নওশাদের নিস্তব্ধতাকে মুচকি হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলল,

“আমার কোনো উত্তরও চাই না। আচ্ছা আমরা চাইলে কি এখন বন্ধুর মতো থাকতে পারি না?”

বন্ধুত্বের আবদার ফেরানো মুশকিল। তারচেয়েও বেশি মুশকিল হয়ে যায় যখন একটা মেয়ে যেচে বন্ধুত্বের হাত বাড়ায়। নওশাদ চৈতির মনঃকষ্ট আর বাড়াতে চাইল না। সহাস্যে বলল,

“অবশ্যই।”

চৈতির ঠোঁটে ঈষৎ হাসি। এতটুকু হাসিও নওশাদ খেয়াল করল। যার মা নেই তার হয়তো দু’কূলে কেউ থেকেও নেই। এই একটা জিনিসই নওশাদকে ভেতর থেকে আঘাত করেছে। সে পুরোদমে বলতে পারছে না, ‘আপনি আমার জন্য অপেক্ষা করবেন না প্লিজ!’

মিতুলের খাওয়া শেষ। সে ফোনে সময় দেখে বলল,

“আমার ক্লাস শুরু হবে এখন। উঠতে হবে।”

রূপকও উঠে দাঁড়াল। ছাতা এগিয়ে দিয়ে বলল,

“এটা রাখো।”

“আমার ছাতা লাগবে না। এক দৌঁড়ে ক্লাসে চলে যাব আমি।”

“পা পিছলে পড়লেই আলুর দম।”

“কিছু হবে না। আপনি ছাতা নিয়ে যান। আর বৃষ্টিতে ভেজার প্রয়োজন নেই। আপনার মা যদি জানতে পারে, আমার জন্য আপনার জ্বর এসেছে তাহলেই হলো! একদম কাবাব বানিয়ে ফেলবে আমাকে।”

“আমার মা এতটাও রাগী নয়।”

“ঘেঁচু! আচ্ছা যাই এখন আমি। টাটা।”

“মিতুল…ছাতা নিয়ে যাও।”

মিতুল বৃষ্টির মধ্যে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে উত্তর দিল,

“লাগবে না। আপনি নিয়ে যান। জ্বর যেন না আসে খবরদার!”

মিতুলের বলা কথাটি রূপক ছাড়াও আরও দুজন শুনেছে। নওশাদ এবং চৈতি। যদিও মিতুল রূপকের মায়ের ভয়ে জ্বর না আসার সতর্কতা জারি করেছে, তথাপি চৈতি বিষয়টা নিল অন্যভাবে। মুচকি হেসে বলল,

“কী কিউট!”

নওশাদ শুনে বলল,

“কী কিউট?”

“আপনি শুনলেন না মেয়েটার কথা? নিজে বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে। অথচ ছেলেটাকে বলছে জ্বর যেন না আসে। এই ছোটোখাটো কেয়ারগুলো আমার ভীষণ ভালো লাগে। তাহলে আপনিই বলুন এই বিষয়গুলো কিউট নয়?”

নওশাদ না চাইতেও ঈষৎ হাসি ঠোঁটে রেখে বলল,

“হুম।”
____

বাড়িতে ফিরে টানা দু’ঘণ্টা ঘুমাল রূপক। ঘুম যখন ভাঙে মাথা তখন প্রচন্ড ভারী হয়ে আছে। শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেশি। নাপাতে কাজ হয়নি। জ্বরে পেয়ে বসেছে তাকে। টিয়া বেগম রূপকের রুমে এসে গায়ে হাত রেখে বললেন,

“কিরে এতক্ষণ ধরে শুয়ে আছিস কেন? ওঠ খাবি না?”

রূপক ঘুম জড়ানো গলায় বলল,

“ভালো লাগছে না।”

টিয়া বেগম ছেলের কপালে হাত রেখে বিস্মিতকণ্ঠে বললেন,

“জ্বর এসেছে! বৃষ্টিতে কেন ভিজেছিস তুই?”

“অনেকদিন হয়েছে ভিজি না। তাই আজ হঠাৎ ইচ্ছে হলো।”

“এখন ইচ্ছের ফল ভোগ করতে মজা লাগছে না?”

“এইটুকুন জ্বর! ঠিক হয়ে যাবে। তুমি চিন্তা কোরো না তো।”

“হ্যাঁ। তুই তো চিন্তা কোরো না বলেই খালাস! জ্বালা-যন্ত্রণা সব আমার।”

রাগে গজগজ করতে করতে তিনি ড্রয়িংরুমে গেলেন স্বামীকে ডাক্তারের কাছে পাঠানোর জন্য।

রূপক ওয়াশরুমে গিয়ে মাথায় পানি দিয়ে এলো। এ জ্বর সহজে ছাড়বে বলে মনে হয় না। সে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল। এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। আজ কি আকাশের খুব বেশিই মন খারাপ? মিতুল তো সম্ভবত এখনো বাড়ি ফেরেনি। সাথে ছাতাও নেই। আসবে কী করে মেয়েটা?
.
.
ক্লাসের এক কোণে মনমরা হয়ে বসে আছে মিতুল। আজ রায়া, আর্শি কেউই আসেনি। এমনিতেও ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি আজ একেবারে কম। কোনোভাবেই মিতুলের রাগ কমছে না। মেজাজ শান্ত হচ্ছে না। সকাল থেকেই একটার পর একটা মেজাজ খারাপের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। ক্লাসে আসার পর থেকেই তার মেজাজ খারাপ হয় রায়া এবং আর্শির ওপর। ওরা কেন আসলো না ক্লাসে? এখন নিজেকে কতটা একাকি লাগছে।

সে তিনটে ক্লাস করে বৃষ্টির মধ্যেই বেরিয়ে গেল। আর বসে থাকা সম্ভব নয়। নিচে নেমে বারান্দায় এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। এরকম ঝুম বৃষ্টিতে একা একা ভিজে বাড়িতে ফেরা কি ঠিক হবে? ক্লাস করতেও তো ভালো লাগছে না। কী করা যায়!

“ক্লাস নেই?”

আচানক প্রশ্নের বাণে মিতুল ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে তাকাল। অনিককে দেখে অবাক হয়ে বলল,

“আপনি এখানে!”

“অবাক হয়েছেন?”

“ভীষণ!”

“আচ্ছা! তা এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”

“বৃষ্টির মধ্যে বাড়ি ফিরব কী করে বুঝতে পারছি না। ছাতাও আনিনি।”

“আপনি চাইলে আমি সাহায্য করতে পারি।”

“কীভাবে?”

“বাড়িতে পৌঁছে দেবো।”

“না, না লাগবে না। আমি যেতে পারব।”

“যেতে পারবেন জানি। কিন্তু বৃষ্টির মধ্যে একা একা বাড়িতে না ফেরাই ভালো।”

“কেন? একা গেলে কী হবে?”

“আগুন সুন্দরী মেয়ে বৃষ্টিতে একা বাড়ি ফিরবে বলা তো যায় না কার আবার নজর পড়ল!”

মিতুল ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,

“ফ্লার্ট করছেন?”

অনিক হেসে বলে,

“হ্যাঁ, একটু। ভবিষ্যৎ বেয়াইন হবেন বলে কথা। একটু-আধটু ফ্লার্ট তো করাই যায় তাই না?”

“রিনভী আপু বিয়েতে রাজি হয়েছে?”

“হয়ে যাবে। বাবা-মায়ের আদর্শ এবং বাধ্যগত মেয়ে কিনা।”

“আমার তো ভেবেই খুশি লাগছে। আপনার বোন যা কিউট! মাশ-আল্লাহ্।”

“দেখতে হবে না কার বোন?”

মিতুল হাসল। অনিক জিজ্ঞেস করল,

“তো এখন কি আপনাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার অনুমতি পেতে পারি ম্যাম?”

মিতুল হেসেই বলল,

“হ্যাঁ।”

“ঠিকাছে। আপনি এখানে দাঁড়ান। আমি বাইক নিয়ে আসছি।”

মিতুল মাথা নাড়াল। অনিক যখন বাইক নিয়ে এলো তখন মিতুল বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। এ তো সেই ছেলে যে তাকে পরপর দু’বার সাহায্য করেছিল। তার মানে বাইকওয়ালা এবং অনিক একজনই! এজন্যই কি সেদিন অনিককে তার খুব চেনা চেনা লাগছিল? মিতুলকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে অনিক হেসে বলল,

“আসুন।”

“আপনি!”

“হ্যাঁ, আমি। এবার চিনতে পেরেছেন?”

“আপনি গতকাল পরিচয় দেননি কেন?”

“এইযে সারপ্রাইজ দেবো তাই।”

“আপনি ভীষণ ফাজিল! আমরা ভিজে ভিজে যাব?”

“আমার কাছে ছাতা আছে। চাইলে নিতে পারেন।”

“উঁহু, না! বাইকে ছাতা নিয়ে যেতে ভালো লাগবে না। আজ বরং ভিজেই যাই।”

মিতুল যখন অনিকের বাইকে উঠে বসছিল নওশাদ তখন ক্লাস নিতে যাওয়ার জন্য টিচার্স রুম থেকে বের হয় এবং তার চোখের পলকেই অনিক মিতুলকে নিয়ে চলে যায়। মিতুল তাকে না দেখলেও নওশাদ ঠিকই ওদের দেখেছে।

ভারী ভারী বৃষ্টির ফোটা মিতুলের চোখে-মুখে আছড়ে পড়ছে। অনিক তখন বলল,

“আমার হেলমেট খুলে ফেলুন তো।”

“কেন?”

“বৃষ্টিতে পুরোপুরি ভিজতে পারছি না।”

“বাইক চালাতে অসুবিধা হবে। বৃষ্টির জন্য আমিই ঠিকমতো চোখ মেলে তাকাতে পারছি না।”

“তাহলে থাকুক। চা খাবেন?”

“উঁহু! আমি বাইরে চা খাই না।”

অনিক আর কিছু বলল না। একবার শুধু যাওয়ার পথে বাড়ির ঠিকানাটা জেনে নিল। আর কোথাও না থেমে অনিক সরাসরি মিতুলদের বাড়ির সামনে বাইক থামাল। ওপরের বারান্দা থেকে তখন দুজনকে একসঙ্গে দেখতে পায় রূপক।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে