কে আপনি পর্ব-০৬

0
3629

#কে_আপনি
#পর্বঃ০৬
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

শ্রেয়া অনেকক্ষণ আলিফের কপাল জলপট্টি দিয়ে দিলো। আলিফের ঠোঁট লালবর্ণ ধারন করেছে জ্বরে। শ্রেয়া রান্না ঘরে গিয়ে কিছু নাস্তা বানিয়ে আলিফকে খাইয়ে দিলো। সঙ্গে ঔষধ খাইয়ে দিলো।

সে তার ফোনটা হাতে নিয়ে কল করলো চিত্তরঞ্জন দেওয়ানকে। গলা খাকিয়ে পরিষ্কার করে সে বলে উঠলো “স‍্যার আমি আজকে অফিসে যেতে পারবো না। শরীরটা একটু খারাপ।”

চিত্তরঞ্জন সাহেব গম্ভীর কন্ঠে বলল “আহমেদ শাওন চৌধুরীর ব‍্যাপারে কতটা এগিয়েছ। লোকটা কিন্তু ভয়াবহ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই কেসটা ভালো মতো সমাধান করো। আমি কিন্তু ভেবে চিন্তেই তোমাকে এই দ্বায়ীত্বটা দিয়েছি। তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো ব‍্যাপারটা। আর একটু সাবধানে থেকে লোকটা অসম্ভব চালাক। আমরা যেভাবে চলি তার দশগুন আগে সে চলে। আমাদের সিআইডি অফিসারদের কিন্তু সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। আবারো বলছি সাবধানে থেকো।”

শ্রেয়া ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল “হ‍্যাঁ বুঝতে পারছি আমি। স‍্যার আমি আহমেদ শাওন চৌধুরীর অফিসের সকল খবর বের করেছি। ওনার পিএ আরিশা ইসলামকে আমাদের আন্ডারে নিতে হবে। ওকে খোঁচালে অনেক কথা বের করা যাবে। শাওন চৌধুরীর মতো মাফিয়াকে আমি কখনো ছাড়বো না। আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো ওই লোককে তার যথাযথ শাস্তি দেওয়ার। আর আমাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমি নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারি।”

চিত্তরঞ্জণ সাহেব একটা সস্থির নিশ্বাস ছাড়লেন। সে শান্ত ও গম্ভীর কন্ঠে বলল “আচ্ছা ঠিক আছে তুমি তোমার কাজে এগিয়ে যাও। এতোদিন শুধু মাহিন ছিল তোমার গ্রুপে এখন থেকে নেহাল আর রামিজা তোমার গ্রুপেই থাকবে। ওদের আন্ডারে যে কেসটা ছিল। সেটা কালকেই ক্লোজ হয়ে গিয়েছে। তাই তোমার সঙ্গে দিলাম।”

শ্রেয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে “ওকে স‍্যার” বলে কল কেটে দেয়। কেন যেন শ্রেয়ার খুব বিরক্ত লাগছে সবকিছু। আলিফের সঙ্গে শাওনের সম্পর্ক আছে। এইজন‍্য এতো নাটক তার সাজানো। বাবা মাকে বুঝিয়ে এমন নাটকে সামিল করা তার। যদিও তারা রাজি ছিল না। আলিফের উপর এখন থেকেই তার নজর রাখা লাগবে। এতোদিন তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এই আলিফের কাহিনীও তাকে বের করতে হবে। তার ফ‍্যামিলি শাওন এগুলো সব জানতে হবে।

হঠাৎ কিছু পরার শব্দে শ্রেয়ার ভাবনায় ছেদ ঘটলো। সে সোফার রুমে গিয়ে দেখতে পেল আলিফে দাড়িয়ে নিচে পরে থাকা ভাঙা গ্লাসের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শ্রেয়া ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল “আমাকে ডাকলেই হতো। আপনার শরীর দুর্বল। আপনি এই শরীর নিয়ে উঠতে গেলেন কেন।”

আলিফ শ্রেয়ার দিকে না তাকিয়েই হনহন করে চলে গেল। শ্রেয়া শুধু তাকিয়ে রইলো আলিফের দিকে। হঠাৎ কি এমন হলো আলিফের। এগুলো ভাবতে ভাবতে মেঝে থেকে গ্লাসের টুকরোগুলো তুলছিল। গ্লাসের টুকরো হাতে ফুটতেই আহ করে কুকিয়ে উঠলো। শ্রেয়ার কোকানোর আওয়াজে আলিফ দৌড়ে এলো। শ্রেয়ার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে কড়া চোখে শ্রেয়ার দিকে তাকালো। শ্রেয়া তার মাথা নামিয়ে নিলো। আলিফ শ্রেয়ার বাহু ধরে ওকে নিয়ে সোফায় বসালো। যত্ন সহকারে তার হাতে ব‍্যান্ডেজ করে দিলো। আলিফ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো “একটা কথা কি জানো বিশ্বাস জিনিসটা বড়ই অদ্ভুত। বিশ্বাস করা যেমন সহজ। তেমনি বিশ্বাস ভেঙে গেলে তা জোরা লাগানো খুব কঠিন। আর নিজেকে নিজের যত্ন নিতে শিখতে হয়। সবসময় যত্ন নেওয়ার মতো মানুষ পাশে থাকে না।”

কথাগুলো বলেই আলিফ সোফা থেকে উঠে যেতে নিবে তখনই শ্রেয়া ওর হাত ধরে বলল “একটা মেয়ে চায় সবসময় এমন একজন জীবনসঙ্গী যে তাকে বুঝবে। তার মতামত গ্রহণ করে কাজ করবে। সেই মেয়ের মতামতের গুরুত্ব দেয়। কিন্তু আপনি কাল রাতে যা করেছে আপনার কি একবারও মনে হয়নি যে এতে আমার মতামত নেওয়া প্রয়োজন ছিল।”

আলিফ হুট করে হাটু গেড়ে বসে পরলো আর শ্রেয়াকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। এতে শ্রেয়া প্রথমে চমকে উঠলেও পরে স্বাভাবিক ভাবেই বসে থাকে। হঠাৎ ফোপানোর আওয়াজ আতকে উঠে শ্রেয়া। সে আলিফকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে “কি হয়েছে আপনার!”

আলিফ আবারও শ্রেয়াকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল “জানো আমার ভালোবাসা খুব ভয়ংকর। আমি যাকে ভালোবাসি তাকে অসম্ভব ভালোবাসি। কিন্তু যাকে ঘৃণা করি তাকে আমি চোখের সামনেও আসতে দেই না। আমি তোমাকে ছাড়া হয় তো বেঁচে থাকবো কিন্তু আমার প্রাণ থাকবে না। আমাকে একটা প্রমিজ করবে।”

শ্রেয়া কপাল কুচকে ফেলে। আলিফে আলতো হাতে শ্রেয়া গাল আকড়ে ধরে বলল “আমাকে কখনো ছেড়ে যেওনা।”

শ্রেয়া মুচকি হেসে বলল “আপনাকে তো আমি চাইলেও ছাড়তে পারবো না। কারণ আমরা জরিয়ে পরেছি এক পবিত্র বন্ধনে। যেটা আল্লাহ না চাইলে হতো না। যাইহোক আপনি এখন রেস্ট নেন তো। আপনার শরীর তো ভালো না।”

আলিফ মুচকি হেসে বলল “এখন আমি ভালো আছি। ফুচকা খেতে যাবে। মুখটা কেমন যেন হয়ে আছে। আর তারউপর তোমার তো ফুচকা পছন্দ।”

আলিফের এমন অফারে শ্রেয়ার চোখমুখ চিকচিক করে উঠলো। সে ফট করে আলিফের গলা জরিয়ে টুক করে ওর গালে চুমু বসিয়ে দিলো। এতে যেন আলিফের চোখ বড়বড় হয়ে গেল। শ্রেয়া কি করছে সেটা বুঝতে পেরে লজ্জায় মাথা নিচু করে দৌড়ে রুমে চলে গেল।

———————–

“আহমেদ শাওন চৌধুরীকে ধরা এতো সহজ না মিসেস শ্রেয়া রহমান। যতো তুমি রহস্যের প‍্যাচ খুলতে যাবে আরো প‍্যাঁচে জরিয়ে পরবে। তোমার ভাবনায়ও আসবে না এমন করে আমি নিজেকে হাইড করে রাখবো।” বলেই রহস্যময় এক হাসি ফুটে উঠলো শাওনের ঠোঁটে।

রেদোয়ান কপাল কুচ করে বলল “মেয়েটাকে অনেকটাই বুদ্ধিমতী মনে হলো আমার কাছে।”

শাওন বলল “আমি ওর থেকেও বেশি চালাক রেদোয়ান। তুমি শুধু দেখে যাও আগে আগে কি হয়।”

শাওনের কথায় রেদোয়ানও হাসলো।

————————-

আলিফ আর শ্রেয়া বেরিয়ে পরলো বাসা থেকে। ওরা অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বাসায় ফিরলো। বিকেলে রেদোয়ানের ওখানে পড়া ছিল ওখানে আলিফ শ্রেয়াকে নিয়ে গেল।

আজ শ্রেয়া সময় পেয়েছে রেদোয়ানকে পর্যবেক্ষণ করার। ক্লাস যদিও অন‍্য টিচার নিচ্ছে কিন্তু শ্রেয়া তাকিয়ে আছে রেদোয়ানের দিকে। রেদোয়ান গভীর মনোযোগ সহকারে কারো সঙ্গে কথা বলছে। সময় সময় রহস্যময় হাসিও দিচ্ছে। যা সব তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষণ করছে শ্রেয়া। এভাবেই ক্লাস শেষ করে শ্রেয়া। এবার সে বুঝতে পেরেছে রেদোয়ানকে শাওনের লোকদের সঙ্গে দেখেছিলো। যদিও এখনকার গোফ দাড়ি ছিল না। আর চোখের মনিও ভিন্ন। গভীর ভাবে না দেখলে চেনা সম্ভব না।

শ্রেয়া ওয়াশরুমে গিয়ে ফোন বের করে কল দিলো মাহিনকে। দুইবার রিং হতেই কল রিসিভ হলো। মাহিন বলে উঠলো “শ্রেয়া তুই যে রেদোয়ানকে সন্দেহ করেছিলি। ঠিক করছিলি রেএ। ও শাওনের বাম হাত। কিন্তু সবচেয়ে ভাবার বিষয় হচ্ছে শাওনকে কেউ দেখেনি। এমনকি ওর পিএ আরিশাও না। আরিশাকে জিঙ্গাসা বাদ করার পর এই টুকু বুঝতে পারলাম শাওনের গায়ের রঙ কি সেটাও কেউ বলতে পারেনা। আর হ‍্যাঁ শাওনের সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে তৌফিক হাসান। ওই ব‍্যাটাও একটা মাফিয়া। তবে সে শাওনের জায়গায় যেতে চায়। এইটুকুই খবর পেয়েছি ।”

শ্রেয়া ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল “হুম বুঝতে পারছি। তুই কাজে লেগে থাক যখনই কিছু ইনফরমেশন যোগাড় করতে পারিস যতো ছোটই হক না কেন আমাকে দিবি ঠিক আছে।”

মাহিন হ‍্যাঁবোধক উত্তর দিয়ে কল কেটে দিলো। শ্রেয়াও কোচিং থেকে বের হতেই দেখলো আলিফ বাহিরে দাড়িয়ে আছে হাতে গোলাপ ফুল সঙ্গে মুচকি হাসি নিয়ে। মুখটা এখনো শুকিয়ে আছে তার। হয় তো জ্বরের দুর্বলতাটা এখনো কাটেনি। তবে এই লুকেও শ্রেয়ার ভালো লাগছে আলিফকে। সেও ঠোঁটে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে এগিয়ে গেল আলিফের দিকে।

চলবে……

(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে