কে আপনি পর্ব-০৫

0
3306

#কে_আপনি
#পর্বঃ০৫
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

“তোকে বললাম না ওকে আজই আক্রমণ করতে। আর তুই শুধু ওর খবর নিয়ে এলি আমার কাছে। জানিস না আমার কোনো কিছুর উত্তরে না পছন্দ না। আর আহমেদ শাওন চৌধুরীর ব‍্যাপারে তো কখনই নয়।” কথাগুলো বলছে আর রাগে থরথর করে কাঁপছে তৌফিক। আর সামনের লোকটা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। তৌফিক তার হাতে থাকা গান হুট করে সামনে থাকা লোকটির মাথায় রাখলো। দাঁত কিটমিট করে বলল “ওকে আমি আমার সামনে চাই। তোর কাছে আছে মাত্র সাতদিন। সাতদিনের মধ্যে হয় তুই ওকে আমার সামানে আনবি না হয় তোকে আমি শেষ করে দিবো। বলে দিলাম মাথায় ঢুকিয়ে নে।

—————————–

সকাল সকাল আলিফ উঠে রেডি হয়ে নিলো। আলিফ এক পলক বেডের দিকে তাকালো। শ্রেয়া এখনো ঘুমাচ্ছে। আলিফ গিয়ে শ্রেয়ার বাহু টেনে উঠিয়ে বসালো। হুট করে এমন করাতে শ্রেয়া থতমত খেয়ে যায়। ওর স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লেগে যায়। শ্রেয়া চোখ ছোট ছোট করে আলিফের দিকে তাকালো। আলিফ বলল

“রেডি হয়ে নেও তোমাকে একটা কোচিং এ ভর্তি করে দিবো। তোমাকে আজকে সবকিছু চিনিয়ে আসবো। সাথে বইখাতা কিনে দিবো। যা যা লাগবে আজকেই সব শেষ করে কাল থেকে পড়া শুরু করবে। আমি খোঁজ নিয়েছি মেডিক্যালে এখন তুমি যদি দ্বিতীয় বার ট্রাই করো তাহলে তোমাকে অনেক খাটাখাটনি করতে হবে। ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করলেই পারবে। এখন চটপট করে উঠে পড়ো তো।”

শ্রেয়া উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো। তারপর আলিফের বাইকে করে তারা রওনা দিলো। শ্রেয়া আজ একটা কালো রঙের বোরকা পড়েছে। আলিফ ও আজ কালো শার্ট কালো প‍্যান্ট আর কালো কোর্ট পড়েছে। আলিফ তার বাইকের সামনের গ্লাসটা দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর শ্রেয়ার দিকে তাকাচ্ছে। শ্রেয়া তো ওর মতোই পকপক করছে। এখন আলিফের সঙ্গে শ্রেয়া অনেকটাই ফ্রি হয়ে গিয়েছে। সে এখন সারাক্ষণ আলিফের সঙ্গে বকবক করে। আর আলিফ চুপ করে ওর সব কথা মন দিয়ে শুনে।

আলিফ তার বাইক থামতেই শ্রেয়া চুপ করে গেল। চারপাশে তাকিয়ে একবার দেখে নিলো সে। আলিফ বাইক থেকে নেমে হেলমেড খুলে শ্রেয়ার হাত ধরে ওকে নিয়ে যেতে লাগলো।

একটা রুমে এসে আলিফ একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠলো “কিরে রেদোয়ান, কি খবর!”

লোকটা এতক্ষণ উল্টো পিঠে ঘুরে ছিল বলে শ্রেয়া তাকে দেখতে পারছিলো না। কিন্তু যখনি সে সামনের ব‍্যক্তিকে দেখলো তার কপাল কুচকে এলো। কেন যেন তার মনে হচ্ছে রেদোয়ান নামক ছেলেটাকে সে মনে হয় আগেও কথায় দেখেছে। শ্রেয়ার এসব ভাবনার মাঝেই রেদোয়ান বলল “এই দোস্ত ভালো। তোর খবর কি! বিয়ে করলি একবার বললিও না। আর ভাবিকেও দেখালি না।”

আলিফ হেসে রেদোয়ানের সামনে চেয়ারে বসালো আর শ্রেয়াকেও বসালো। সে বলতে লাগলো “বিয়েটা হুট করেই হয়ে গেল। সে যাইহোক আমি তো আগেই বলেছি আমি আমার বউকে একা দেখবো তোদের কেন দেখাবো। তুই বিয়ে করে তোর বউকে দেখ গিয়ে।”

আলিফের কথা রেদোয়ান হেসে বলল “থাক ভাই হইছে। এবার আমাকে ভাবির সঙ্গে কথা বলতে দে।” বলেই রেদোয়ান শ্রেয়ার দিকে ঘুরে ওর সঙ্গে পরিচয় হতে লাগলো। পরিচয় পর্ব সেরে সবকিছু ফিক্সড করে আলিফ আর শ্রেয়া বাহিরে চলে এলো। শ্রেয়া মাথায় এখনো ঘুরছে সে রেদোয়ানকে কোথায় দেখেছে। কিন্তু কিছুতেই তা সে মনে করতে পারছে না। শ্রেয়ার ভাবনায় আবারও ছেদ ঘটে আলিফের ডাকে। আলিফ তাকে বইয়ের দোকানে নিয়ে গিয়ে তার প্রয়োজনীয় বই খাতা কলম সব কিনে দিলো। এতে শ্রেয়া মুখে এক চিলতে হাসি দেখা গেল।

আলিফ শ্রেয়াকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে সে চলে গেল। শ্রেয়া তার ফোনটা বের করে কাউকে কোনো কিছু মেসেজ করে ফোনটা রেখে দিলো। সে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাড়ে এগারোটা বাজে। আলিফ কলেজে গিয়েছে ফিরে আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে আলিফের। ভেবে এক রহস্যময় হাসি দিয়ে একটা হুডি আর জিন্স চোখে সানগ্লাস পরে নিলো। ফোনটা জিন্সের পকেটে রেখে হাতের ঘড়িটা ঠিক করে নিলো। তার লম্বা চুলগুলো ভালো ভাবে বেধে নিলো। মুখে মাক্স ঠিক করে সে রওনা হলো বাহিরের দিকে। বাড়ির বাহিরে মাহিনকে দেখে মুচকি হেস ওর বাইকের পিছনে উঠে বসে শ্রেয়া।

যা সবকিছুই একজনের চোখ এরালো না। সেই ব‍্যক্তির চোখ থেকে যেন রক্ত পরবে এমন লাল হয়ে আছে। সেই ব‍্যক্তি রাগে কটমট করতে করতে রাস্তার পিলারে একেরপর এক ঘুসি বসিয়ে দিলো। সে হনহন করে চলে গেল।

—————————–

ঘড়িতে বাজে বিকেল পাঁচটা। পরিবেশটা কেমন যেন থম মেরে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি আসার সম্ভবনা। মেঘ অসম্ভব কালো হয়ে আছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে শ্রেয়া তাড়াহুড়ো করে বাসায় ঢুকে পরলো। তাড়াতাড়ি সে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। সে জিন্স আর হুডি চেন্স করে সালোয়ার কামিজ পরে নিয়েছে। নিজেকে গুছিয়ে নিলো। রুমটা ঠিকঠাক করে সে ছুটলো রান্না ঘরে। ঝটপট সে রান্নার কাজে। বিদ‍্যুত চমকাচ্ছে অসম্ভব বিকটভাবে। শ্রেয়া রাতের খাবার রেডি করে নিলো। এরপর রুমে এসে সে ফোনটা তুলে নিলো সে মাহিনকে কল দিয়ে কিছু কথা বলে নিলো। ততক্ষণে বৃষ্টি নামতে শুরু হয়ে গিয়েছে। শ্রেয়া এক কাপ কফি বানিয়ে এনে বারান্দায় থাকা চেয়ারটা টেনে বসে পরে। এখন আর বিদ‍্যুত চমকাচ্ছেনা। তবে বৃষ্টি একটু জোরেই পরছে। ফোনে সে তার কিছু প্রিয় গান ছাড়ে সে। অন্ধকারেও রাস্তার লাইটে বৃষ্টি দেখতে অনেকটা ভালো লাগছিল। কিন্তু হঠাৎ আলিফের কথা মনে পরতেই আতকে উঠলো সে। কারণ ঘড়িতে দশটা বেজে গেছে। এতো দেড়ি তো আলিফ করে না। চিন্তা হতে লাগলো শ্রেয়ার। শ্রেয়া আলিফকে কয়েকবার কল করলো কিন্তু আলিফের ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।

কলিংবেল এর আওয়াজ পেয়ে শ্রেয়া দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। শ্রেয়া হতভম্ব হয়ে গেল আলিফকে দেখে। আলিফ বৃষ্টিতে ভিজে চিপচিপ করছে। কালো শার্টটা গায়ের সঙ্গে লেপটে আছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পরে আছে আলিফের প্রশস্ত কপালের উপর। আলিফ টুলছে। ওর গা দিয়ে মদের গন্ধ পেয়ে নাক শিটকে আসলো শ্রেয়ার। শ্রেয়া কিছু বলতে নিবে তার আগে আলিফ ছুটে এসে শ্রেয়াকে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো। শ্রেয়া যেন এক ধাক্কা খেল এতে। আলিফ দরজা বন্ধ করে। আবার দৌড়ে এসে শ্রেয়াকে চুল ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো। এতে শ্রেয়া ব‍্যাথায় কুকিয়ে উঠলো। আলিফের চোখমুখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে। আলিফ চেচিয়ে দাঁতে দাঁত পিশে বলতে লাগলো “তোকে ছাড় দিয়েছি বলে বেড়ে গিয়েছিস। আমি বলেছিনা আমার বউকে শুধু আমি দেখবো।”

বলেই রাগে একহাত শ্রেয়ার কামিজ তুলে ওর কোমরে রেখে খামছে ধরে। শ্রেয়ার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে। ক্রমাগত কামুড় দিয়ে চলছে আলিফ শ্রেয়ার ঠোঁটে। শ্রেয়া ব‍্যাথায় কান্না করে দিয়েছে। বিদ‍্যুত আরো জোরে জোরে চমকাতে লাগলো। বৃষ্টির গতি যেন আরো একধাপ বেড়ে গেল। আলিফ আর শ্রেয়া মেতে উঠেছে আদিম যুগের সেই খেলায়।

—————————–

সকাল নয়টায় শ্রেয়ার ঘুম ভেঙে যায়। সারা শরীর ব‍্যাথায় সে উঠতে পারছেনা। সে চোখও খুলতে পারছেনা। হয় তো জ্বর এসেছে ব‍্যাথায়। শ্রেয়া আশপাশ তাকিয়ে আলিফকে দেখতে পেল না। আলিফ হঠাৎ এমন কেন করলো বুঝতে পারলো না শ্রেয়া। সে খুব কষ্টে ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে সে চলে গেল রান্না ঘরে ক্ষুধা লেগে গিয়েছে তার। রাতেও পেটে কিছু পরেনি তার। রুম থেকে বের হতেই শ্রেয়ার চোখ পরে সোফার দিকে সোফায় আলিফ ঘুমিয়ে আছে। কাপছে সে। শ্রেয়া একটা কম্বল নিয়ে আলিফের গায়ে জরিয়ে দিলো। আলিফের গায়ে হাত লাগতেই চমকে উঠে শ্রেয়া। আলিফে গায়ে প্রচন্ড জ্বর। শ্রেয়া চলে যেতে নিবে তখন আলিফ ওর হাত ধরে ওর একদম কাছে নিয়ে আসে শ্রেয়াকে। চোখ বন্ধ তার। শ্রেয়া খেয়াল করলো আলিফ কিছু বিড়বিড় করছে। শ্রেয়া তার কান আলিফের মুখের কাছে নিতেই সে শুনতে পেল আলিফ বলছে

“ভালোবাসি অনেক বেশি ভালোবাসি। তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে আমি শেষ হয়ে যাবো।”

শ্রেয়া বুঝলো জ্বরের ঘোরে এগুলো বকছে আলিফ। শ্রেয়া গিয়ে একটা পাতলা কাপড় ভিজিয়ে কপাল

চলবে…..

(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে