কে আপনি পর্ব-০৪

0
3573

#কে_আপনি
#পর্বঃ০৪
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

শ্রেয়া অবাক করা দৃষ্টি আলিফের উপর ফেলে বলল “আপনি কিভাবে বুঝলেন যে আমি সারাদিন খাইনি!”

আলিফ একটা রহস্যময় মুচকি হাসি দিয়ে বলল “এখন এতো কথা না বলে চলো তো খাবার খাবো।”

শ্রেয়া কাচুমাচু করতে করতে বলল “কিন্তু আমি তো কিছু রান্না করিনি।”

আলিফ বলল “আরে আমি খাবার ওয়াডার করেছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। তুমিও ফ্রেশ হয়ে নেও। কান্না করে তো বন‍্যা বয়ে ফেলেছ।”

শ্রেয়াকে কিছু বলতে না দেখে আলিফ শ্রেয়ার নাক টেনে বলল “সরি বউপাখি আমি আর দেড়ি করে আসবো না। এরপর থেকে যত কাজই থাকুন না কেন। বুঝলে”

শ্রেয়ার নাক টেনে দিতেই সে গাল ফুলিয়ে বলল “আমার নাকে একদম হাত দিবেন না।”

আলিফ চোখ ছোট ছোট করে বলল “কেন!”

শ্রেয়া তখনই হাঁচি দিলো। আলিফ কিছুক্ষণ শ্রেয়ার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকলো। পরক্ষণেই হো হো করে হেসে দিলো। আলিফের হাসির মাঝেই কলিংবেল বেজে উঠলো। আলিফ হাসতে হাসতেই উঠে দাড়িয়ে মেইন দরজার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে শ্রেয়াকে আবার ফ্রেশ হতে বলল।

শ্রেয়াও বাধ‍্য মেয়ের মতো ফ্রেশ হতে চলে গেল। মাথাটা ধরে আছে তার অতিরিক্ত কান্না করার কারণে। সে চোখমুখে পানির ঝাপটা দিলো। কিছুটা ফ্রেশ লাগছে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো আলিফ টাওয়েল হাতে দাড়িয়ে আছে। শ্রেয়া বের হতেই তাকে একটা মুচকি হাসি উপহার দিয়ে শ্রেয়াকে পাশ কাটিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। শ্রেয়াও রান্না ঘরের দিকে চলে গেল।

—————————–

আহমেদ শাওন চৌধুরী তুমি খুব বেড়ে গিয়েছ। তুমি ভাবছ আমি এই তৌফিক তোমার চাল বুঝতে পারছিনা। একবার খালি দেশে যাই তোমার খেলা আমি খতম করেই ছাড়বো আহমেদ শাওন চৌধুরী। বলেই তৌফিক তার সামনে থাকা ছুড়ি দিয়ে আহমেদ শাওন চৌধুরীর ছবিতে দাগ কাটতে লাগলো। তৌফিকের চোখ থেকে যেন রক্ত ঝড়ছে।

———————-

আলিফ একটা কালো টিশার্ট আর কালো টাউজার পরে চুল ঝারতে ঝারতে খাবার টেবিলে এসে বসলো সে। সে শ্রেয়ার দিকে তাকাতেই তার কপাল কুচকে ফেলল। কারণ শ্রেয়া হা করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আলিফ কপাল কুচকে তাকিয়ে বলে উঠলো “কি হয়েছে এমন করে তাকিয়ে আছো কেন!”

আলিফের কথায় হুশ ফিরলো শ্রেয়ার। শ্রেয়া এতে অনেকটা লজ্জা পেল। আলিফ শ্রেয়াকে এমন লজ্জা পেতে দেখে ঠোঁটে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল “আমি শুধু তোমারই বউপাখি। আমাকে তুমি পরেও দেখতে পারবে। এখন খেয়ে নেও। তাছাড়া আবার অসুস্থ হয়ে পরবে।”

শ্রেয়া মাথা নিচু করে খেতে লাগলো।

আজও রাতে শ্রেয়া ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আলিফ তাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো তার বুকের মাঝে।

———————————

আজ আলিফ কলেজ থেকে ছুটি নিয়েছে। আজ সে তার সারাদিন কাটাবে তার সদ‍্য বিবাহিত বউ এর সঙ্গে। সকালে আলিফের দেওয়া নেভিব্লু রঙের বোরকা পরে রেডি হয়ে গিয়েছে শ্রেয়া। আলিফও আজ একটা নেভিব্লু রঙের পাঞ্জাবি পরেছে। শ্রেয়ার শুধু চোখটা দেখা যাচ্ছে। আলিফ তার চোখের চিকন ফ্রেম এর চশমা ঠিক করে শ্রেয়াকে পর্যবেক্ষণ করে নিলো। আর শ্রেয়া তো পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে আলিফের দিকে। উজ্জ্বল শ‍্যামলা গায়ে নেভিব্লু রঙ যে এতো মানাবে তা শ্রেয়ার অজানা ছিল। সঙ্গে আলিফের ঠোঁটের মুচকি হাসি। যা প্রতি মুহূর্তে ঘায়েল করছে শ্রেয়াকে। চিকন ফ্রেমের চশমাটা যেন তার জন‍্যই তৈরি বলে সময় সময় মনে হয় শ্রেয়ার। আজ তাদের বিয়ের তিনদিন চলছে। এই তিনদিনেই সে এক অদ্ভুত মায়ায় জরিয়ে পরেছে আলিফের সঙ্গে।

শ্রেয়াকে হা করে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আলিফ বলল “চলো এখন যাই। আমারও তো লজ্জা করে বলো। এভাবে তাকিয়ে থেকো না প্লীজ।”

আলিফের কথায় শ্রেয়া লজ্জায় কাচুমাচু করতে লাগলো। আলিফ একটা মুচকি হাসি দিয়ে শ্রেয়ার হাত ধরে বাহিরে চলে গেল। আলিফ মেইন রাস্তায় দাড়িয়ে একটা রিক্সা ডাক দিলো। হুট খোলা রিক্সায় বসে আছে আলিফ আর শ্রেয়া। হালকা বাতাস বইছে চারপাশে। আলিফ মনোমুগ্ধকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্রেয়ার দিকে। আর শ্রেয়া চোখ ঘুরেবেড়াচ্ছে রাস্তার চারপাশের দৃশ্যে। হঠাৎ আইসক্রিম এর দোকান দেখে শ্রেয়া চকচক দৃষ্টিতে আলিফের দিকে তাকিয়ে রইলো। আলিফ ব‍‍্যাপারটা বুঝতে পেরে মুচকি হাসি দিয়ে ওকে দুইটা আইসক্রিম কিনে দিলো। আলিফও শ্রেয়াকে খুশি হতে দেখে সেও হাসলো। একঅন‍্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে তাদের মধ্যে।

আজ সারাদিন ওরা দুইজন অনেক ভালো ভাবেই কাটলো। শ্রেয়াকে অনেক ফ্রেশ লাগছে। হয় তো তার মন থেকে এক পাহাড় সমান কোনো চাপ নেমে গেছে। মাইন্ডটা হয় তো ফ্রেশ হয়ে গিয়েছে।

কেটে গেছে সাতদিন। অনেক ভালোই কাটছে আলিফ আর শ্রেয়ার দিন। শ্রেয়ার দিন ভালোই যাচ্ছে। কিন্তু কেন যেন আলিফকে তার সন্দেহ হয় সময় সময়। শ্রেয়া ভেবে পাচ্ছেনা আলিফের ফ‍্যামিলি কোথায়। আর আলিফ তার ফ‍্যামিলির কথা শুনলে রেগে যায় কেন। আলিফকে দেখে এতোদিনে সে বুঝতে পেরেছে যে আলিফ সহজে রাগ করে না। এসবই ভাবছিল সে।

তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো। শ্রেয়া দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। আলিফের ক্লান্ত মুখ চোখে পরতেই শ্রেয়া মুচকি হাসি দিলো। আলিফ ক্লান্ত শরীরে ভিতরে আসলো।

——————————

রাত একটায় হুট করে শ্রেয়ার ঘুম ভেঙে গেল। পানির পিপাসা পেয়েছে তার। সে পাশে হাত রেখে আলিফকে পেল না। আপনাআপনি তার কপাল কুচকে এলো। সে ভাবলো হয় তো ওয়াশরুমে গিয়েছে। সে নিজের গায়ের ওরনাটা ঠিক করে বেড থেকে উঠে বসলো। রুমে পানি নেই বলে সে রুমের বাহিরে যেতে লাগলো। কিন্তু হঠাৎ কারো গম্ভীর কন্ঠে আতকে উঠলো। পরে ভালো ভাবে ভেবে বুঝতে পারলো এটা তো আলিফের গলা। কিন্তু এতটা গম্ভীর কেন! শ্রেয়ার কৌতুহলবশত বারান্দার দিকে এগিয়ে গেল। সে পর্দার পিছনে লুকিয়ে পরলো। আলিফের পিঠের দিকটা দেখা যাচ্ছে। হুট করে আলিফ উল্টো ঘুরে গেল কান থেকে ফোন রেখে। এতে শ্রেয়া আর আলিফের চোখাচুখি হলো। শ্রেয়া আচমকা আলিফের এমন ঘোরা দেখে চমকে উঠলো। আলিফ নিজেকে স্বাভাবিক করে মুচকি হাসি দিয়ে এগিয়ে এলো শ্রেয়ার দিকে।

শ্রেয়ার মাথায় কিছু প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু সে কেন যেন করতে পারলো না। সে ভাবনায় বিভর ছিল তখনই কোমরে শক্ত হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো। সে আতকে উঠে আলিফের দিকে তাকালো। আলিফের ঠোঁটে সেই আগের ন‍্যায় মুচকি হাসি ঝুলে আছে। শ্রেয়া আলিফের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। শ্রেয়া ওর চোখে এক নেশা দেখতে পেল। ওরা একজন আরেকজনের দিকে ঠিক কতক্ষণ তাকিয়ে ছিল তা ওরা বুঝতে পারলো না।

আলিফ আস্তে আস্তে শ্রেয়ার আরো কাছে এগোতে এগোতে বলল “তুমি আমার অন্ধকারাচ্ছন্ন দিনের আলো। তুমি তো আমার অশান্ত মনের প্রশান্তির ছায়া। ভালোবাসি ভালোবাসি প্রিয়সীর ঠোঁটে হাসি। চোখের ঝিলিক।”

আলিফের এই আস্তে আস্তে বলা কথায় কেঁপে উঠছে শ্রেয়া। কিন্তু পরক্ষণেই কিছুক্ষণ আগের আলিফের ওমন কন্ঠের কথা মনে পরতে সে আলিফের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কিছু বলতে নিবে তার আগেই আলিফ বলে উঠলো।

“বউপাখি ঘুম ভেঙে গিয়েছিল তো তাই এখানে দাড়িয়ে ছিলাম এখন চলো তো রুমে যাই। অনেক রাত হয়েছে।”

আলিফের এমন উত্তরে যেন শ্রেয়ার সন্দেহ আরো বেড়ে গেল। কিন্তু আলিফের সামনে তা প্রকাশ করলো না। সে চুপচাপ আলিফের সঙ্গে বেডে গিয়ে শুয়ে পরলো

চলবে……

(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে