কে আপনি পর্ব-০৩

0
4064

#কে_আপনি
#পর্বঃ০৩
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

নিজের দিকে আলিফের কুচকে যাওয়া দৃষ্টি দেখে ধড়ফড় করে উঠে বসে। চোখ দুটো গোল গোল করে সে তাকিয়ে থাকে আলিফের দিকে। আলিফ তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল

“আচ্ছা তুমি এতো ঘুমাতে পারো কিভাবে বলো তো!”

শ্রেয়া আমতা আমতা করে বলল “কেন এখন কয়টা বাজে?”

আলিফ চোখ ছোট ছোট করে বলে “এখন সাড়ে দশটা বাজে। আমি ফজরের সময় তোমায় ডাক দিয়েছিলাম কিন্তু তোমার কোনো হেলদোল নেই। এখন আমি অনেকক্ষণ ডাকছি। আমি একদম ক্লান্ত হয়ে পরেছি তোমাকে ডাকতে ডাকতে।”
বলেই ফুস করে একটা শ্বাস ফেলে আলিফ।

শ্রেয়া কাচুমাচু গলায় সরি বলে। আলিফ মুচকি হেসে বলল “এখন চলো তো খেয়ে নিবে। তারপর আমাকে আবার একটু কলেজে যেতে হবে।”

শ্রেয়া ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নেয়। ফ্রেশ হয়ে রুমে আলিফকে দেখতে না পেয়ে সে রুমের বাহিরে রওনা হতে লাগলো। সে রুমের বাহিরে দাড়িয়ে ডানে বামে তাকাতে লাগলো। হাতের ডানে রান্না ঘর মনে হচ্ছে। সেখান থেকে খুটখুট শব্দ হচ্ছে। শ্রেয়া চুপচাপ করে গুটিগুটি পায়ে সেইদিকেই এগিয়ে যায়। আলিফ শ্রেয়াকে দেখে হাসিমুখে বলল

“তুমি গিয়ে বসো খাবার টেবিলে। আমি খাবার নিয়ে আসছি।”

শ্রেয়া বলল “আপনি রান্না করতে পারেন।”

আলিফ হ‍্যাঁবোধক উত্তর দিয়ে বলল “রান্না তো পারতেই হবে।”

শ্রেয়া প্রশ্নাক্ত দৃষ্টিতে আলিফের দিকে তাকিয়ে বলল “কেন পারতে হবে!”

আলিফ কাজ করতে করতেই বলল “কারণ আমার বিয়ে করা বউ তো খালি গোল গোল চোখে আর ভয়ে ভয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।” বলেই ফুস করে একটা নিশ্বাস ছাড়লো সে।

শ্রেয়া অপরাধী চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।

আলিফ শ্রেয়ার কাছে এসে ওর দুইবাহু ধরে বলল “আরে পাগলি মজা করছিলাম আমি। আমাকে দেখে এমন ভয় পাও কেন বলো তো আমি বাঘ ভাল্লুক নাকি।”

শ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো।

আলিফ আবারও বলল “তাহলে ভয় পাও কেন? আর ভয় পাবেনা ঠিক আছে।”

শ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে হ‍্যাঁবোধক জবাব দিলো।

আলিফ এবার শ্রেয়ার থুতনিতে হাত রেখে নিজের মুখের দিকে ঘুরিয়ে বলল “আমাকে বন্ধু ভাবো শ্রেয়া। এমন মাথা নাড়িয়ে এর পর উত্তর দিবে না ঠিক আছে।”

শ্রেয়া একটু খুশি হয়ে বলল “হুম”

শ্রেয়া আর আলিফ খাবার খেতে লাগলো। ওদের খাওয়ার মাঝেই শ্রেয়া আলিফকে উদ্দেশ্য করে বলল

“আচ্ছা আপনার পরিবার কোথায়? কাউকে তো দেখছিনা।”

শ্রেয়ার এই কথা যেন পছন্দ হলো না আলিফের। যা আলিফের চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। হঠাৎ আলিফের মুখ শক্ত হয়ে গেল। সে কাটকাট গলায় বলে উঠলো

“এরপর থেকে কখনো আমাকে ফ‍্যামিলির কথা জিঙ্গাসা করবেনা। এতো জেনে তুমি কি করবে! এতো আগ্রহ ভালো না। নেক্সট টাইম খবরদার আর ফ‍্যামিলি নিয়ে কোনো কথা যেন না শুনি।” বলেই খাবার প্লেটটা আধ খাওয়া অবস্থায় রেখেই উঠে দাড়িয়ে হনহন করে রুমে চলে গেল।

হঠাৎ আলিফের এমন রিএকশনে অনেকটা অবাক হলো। কারণ কাল থেকে আলিফের সঙ্গে যখনিই সে কথা বলেছে বা জিঙ্গাসা করেছে তখনই সে মুচকি হেসে কথা বলেছে। কিন্তু ফ‍্যামিলির কথায় এমন রিএকশন করলো কেন! এগুলো ভাবতে ভাবতেই খাবার খেয়ে আনমনে বাসাটা ঘুরেবেড়িয়ে দেখতে লাগলো। ফ্লাটটা ছোট হলেও অনেক সুন্দর। তিন রুমের ফ্লাট এটি। সাজানো গোছানো বিভিন্ন আসবাবপত্র। বাসাটায় কেমন যেন এক শান্তি শান্তি ভাব বিরাজ করছে। শ্রেয়া ড্রইংরুমে সোফায় পা তুলে বসে পরলো। টিভিটা ছেড়ে দিলো সে। সে টিভি ছাড়তেই আলিফ হনহন করে বাসার বাহিরে চলে গেল। শ্রেয়া একপলক আলিফের দিকে তাকিয়ে আবার টিভির দিকে চোখ স্থির করলো সে।

বিকেল পাঁচটা বাজে এখনো আলিফের বাসায় আসার নাম নেই। শ্রেয়া চিন্তিত হয়ে বারান্দা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো। অপেক্ষার প্রহর যেন কাটছেই না তার। একাএকা একদম ভালো লাগছে না তার। কান্না পাচ্ছে এবার তার। সে কখনোই এমন একা একা কোথাও থাকেনি। চোখ দুটো টলমল করছে তার। কিছুক্ষণের মধ্যেই যেন টুপ করে নোনা জল গড়িয়ে পরবে।

রাত দশটায় আলিফ বাসায় আসলো। খুব ক্লান্ত লাগছে তার। সে কেলিংবেল বাজাতে যাবে তার আগেই হুট করে কারেন্ট চলে গেল। এতে যেন কপাল কুচকে গেল আলিফের। আলিফ দরজায় টোকা দিতেই দরজা খুলে শ্রেয়া ঝাপিয়ে পরলো আলিফের বুকে। আচমকা এমন করে ঝাপিয়ে পরায় দুপা পিছিয়ে গেল আলিফ। আলিফ চমকে গেল শ্রেয়ার ফোপানো শব্দ শুনে। সে অস্থির হয়ে শ্রেয়ার মাথা হাত রেখে কি হয়েছে তা জিঙ্গাসা করছে। কিন্তু এতে যেন শ্রেয়ার ফোপানোর আওয়াজ যেন আরো বেড়ে গেল।

আলিফ হুট করে শ্রেয়াকে কোলে তুলে নেয়। শ্রেয়া চুপ করে ফোপাতেই আছে। আলিফ ভালো করে দরজা লাগিয়ে দিলো। সে আরো কয়েকবার শ্রেয়াকে জিঙ্গাসা করেছে যে কি হয়েছে। কিন্তু শ্রেয়া তখনোও নিশ্চুপ।

শ্রেয়াকে সোফায় বসিয়ে দিলো। এরমধ্যেই কারেন্ট চলে এলো। আলিফ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো শ্রেয়ার দিকে। শ্রেয়া ফর্সা মুখ লাল হয়ে আছে একদম। চোখমুখ ফুলে গিয়েছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেকক্ষণ যাবত কান্না করেছে সে। আলিফ হাটু গেড়ে বসে পরলো শ্রেয়ার সামনে। শ্রেয়া নিজের মন মতো ফোপাতেই আছে মেঝের দিকে তাকিয়ে।

আলিফ শ্রেয়া গালে আলতো হাতে ধরে বলল “কি হয়েছে? বলো আমাকে। হঠাৎ তুমি এমন করছো কেন!”

শ্রেয়া নাক টেনে বলতে লাগলো “আমি কতটা ভয় পেয়েছি আপনি জানেন। আমি সেই কখন থেকে আপনার অপেক্ষা করছি। আমি কখনোই এভাবে একা এতোক্ষণ থাকিনি। আপনি কিভাবে পারলেন এভাবে আমাকে একা রেখে এতক্ষণ বাহিরে ছিলেন। আপনার কি আমার জন‍্য একটুও মায়া হয় না। আর আমি মনে করেছি সকালে আমি আপনাকে ওইসব বলেছি বলে আপনি রাগ করে আমাকে একা ফেলে চলে গেছেন। তারউপর হুট করে কারেন্ট চলে যাওয়ায় আমি আরো ভয় পেয়ে যাই। তাই তো এমন করেছি।” বলেই ফোপাতে লাগলো আবার।

আলিফ ফুস করে একটা নিশ্বাস ছাড়লো। আলতো হাতে শ্রেয়ার চোখের পানি মুছিয়ে দিলো সে। এবার নরম সুরে বলল

“বউ আমি কি তোমাকে একা রেখে যেতে পারি। আসলে একটা কাজ পরে গিয়েছিল তো তাই বাসায় আসতে দেড়ি হয়ে গেল। কাল সকালে আমরা মার্কেট যাবো ঠিক আছে।”

শ্রেয়া প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আলিফের দিকে। আলিফ মুচকি হেসে বলল

“তোমার একটা ফোন কিনে দিবো। যখনি একা লাগবে বা ভয় করবে আমাকে ফোন দিবে। বুঝলে পাগলী বউ।”

শ্রেয়া বলল “আপনি কি এখনো আমার উপর রেগে আছেন!”

আলিফ বুঝতে পারলো শ্রেয়া সকালের ওই আচরণে অবাক হয়েছে। সে ডান হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে কপালে কিছুক্ষণ চুলকালো। তারপর কিছু একটা ভেবে নিলো সে। পরক্ষণেই মুখে মুচকি হেসে বলল “আরে বউ আমি কি তোমার উপর রাগ করে থাকতে পারি। আচ্ছা চল তো খেয়ে নিবো। আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে। তুমিও তো সারাদিন কিছু খাওনি।”

চলবে……

( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে