কে আপনি পর্ব-০২

0
6031

#কে_আপনি
#পর্বঃ০২
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

“আমার ভাবনায় আসে আমার ফুপুর কথা। সে তো উঠে পড়ে লেগেছিল আমার বিয়ের জন‍্য। কেন জানি ফুপু আমার বিয়ে দেওয়ার জন‍্য পাগল ছিল। আমি যখন ক্লাস সেভেন এ পড়ি তখন থেকেই উনি পাএপক্ষ হাজির করা শুরু করে বাসায়। আম্মু বাবা রাজি না হওয়ায় ওনি সবসময় কালো মুখে চলে যেত। কিন্তু…..”

কথার মাঝখানে থেমে গেল শ্রেয়া। এতে যেন সামনে থাকা ব‍্যাক্তি কিছুটা বিরক্ত হলেন। যা তার মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারল শ্রেয়া।শ্রেয়া পাশের টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে পুরো গ্লাসের পানিটা খেয়ে নিল। ওনি কৌতুহল দমাতে না পেরে বলেই ফেললেন

“কিন্তু কি পরের টুকু বলো।”

শ্রেয়া শান্ত দৃষ্টিতে তাকাতেই ওনি মাথা চুলকালেন। সে আবার জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি রাখলো তারপর আবার বলা শুরু করল

“কিন্তু আজকেই যেন ফুপুর জয় হয়। ওনি শেষমেশ আমার বিয়েটা দিয়েই দিলেন। তবে এতো জঘন্য মিথ্যা একটা ঘটনা যে ওনি সাজাবেন আমি কল্পণাও করতে পারিনি। আমার বেস্টফ্রেন্ড মাহিরের সঙ্গে আমার নামে জঘন্য কথা জরিয়ে তিনি মিথ্যা ঘটনা বানান। আমি নাকি মাহিরের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত। ওনি কিছু ফেক পিকচার এডিট করে এমনভাবে কাহিনী সাজায় যে বাবার বিশ্বাস করা ছাড়া উপায় ছিল না। ওনি সমাজের সবার কাছে আমার বাবার মান সম্মান ধুলোয় মিশে দিতে চেয়েছিলেন। মাহির এর সঙ্গে আমার এমন মিথ্যা সম্পর্কের কথা শুনে আমি একদম ভেঙে পড়ি। আমি নিজের বাবার চোখে নিজের প্রতি অবিশ্বাস দেখতে পেয়েছিলাম। যদিও মা অনেকবার বলেছিল বাবাকে যে এগুলো মিথ্যা। কিন্তু ফুপু আরো কথা বলে বাবাকে ওনার দিকে ঘুরে নেয়। তিনি হুট করে সিদ্ধান্ত নেয় আমার বিয়ে দিয়ে দিবেন। আমি ওনাদের সঙ্গে অতিরিক্ত অভিমান করে আজই বিয়ের ব‍্যবস্থা করতে বলি। যদিও আপনারা আমাকে দেখতে এসেছিলেন। আমার জেদের জন‍্য বিয়ে আজকেই ঠিক করা হয়। এভাবেই বিয়েটা হয়ে যায়।”

শ্রেয়া সবকথা শেষ করে এইটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার চোখের কার্ণিশ বেয়ে যে কখন নোনা জল গরিয়ে পরা শুরু করেছে খেয়াল নেই। হঠাৎ সামনে থাকা ব‍্যক্তির হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠল শ্রেয়া। উনি ওনার আলতো হাতে শ্রেয়ার চোখের পানি মুছে দিলেন। শ্রেয়া পানিভরা চোখে তার দিকে তাকালো। উনি একটা মুচকি হেসে বলল

“এই চোখে যেন আমি আর কখনো পানি না দেখি। আমি চেষ্টা করবো তোমার সত্যিটা তোমার বাবা মার কাছে তুলে ধরতে।”

শ্রেয়া নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বলল “না আমি চাইনা আপনি কিছু করেন। ওনারা একদিন নিশ্চয়ই বুঝতে পারবে তাদের ভুল। যাইহোক বাদ দেন এইসব ভালো লাগছে না। আমার ব‍‍্যাপারে তো জানলেন এবার আপনার কথা বলুন ওহ হ‍্যাঁ ভালো কথা কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন জিঙ্গাসা করতে পারি।”

উনি স্মিত হেসে হ‍্যাঁ বোধক জাবাব দিলেন।

হ‍্যাঁবোধক উত্তর পেয়ে শ্রেয়া আমতা আমতা করে বলল “আপনার ব‍্যাপারে না আমি কিছুই জানিনা। আই মিন আমি আপনার নামটাও জানিনা।”

শ্রেয়া পিটপিট করে সামনে তাকাল। ছেলেটি হতভম্ব হয়ে বসে আছে। সে হ‍্যাঁ বলবে নাকি না বলবে বুঝতে পারছেনা এট লিস্ট সে তো নাম টাম জানতো আর এই মেয়ে। পরক্ষণেই নিজেকে স্বাভাবিক করে সে বলে উঠলো

“আমার নাম আলিফ হাসান। আমি দুবছর যাবত একটা কলেজে পড়াচ্ছি। কিন্তু তুমি কি বিয়ে পড়ানোর সময় আমার নামটা খেয়াল করোনি আমি কিন্তু খেয়াল করিছি। এমনকি আমি তোমার ড্রিম সম্পর্কেও আমি জানি।”

শ্রেয়া কিছুটা অবাক চোখে তাকালো আলিফের দিকে। আলিফ একটা মুচকি হাসি ঝুলিয়ে বলল

আমি চাই তুই দ্বিতীয়বার চেষ্টা করো। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তোমার জন‍্য ভালো কিছু ভেবে রেখেছেন। আমি জানি দ্বিতীয় বার দেওয়ার জন‍্য তোমাকে অনেকে অনেক কিছু বলতে পারে। এটা নিয়ে ভেবো না আমি থাকতে তোমাকে কেউ কিছু বলতে পারবেনা। তুমি শুধু পড়াশোনা চালিয়ে যাও আর আল্লাহ কাছে দোয়া করে যাও। আমি আছি তোমার পাশে।”

শ্রেয়া আলিফের কথায় মুগ্ধ হয়ে যায়। সে আবেগে আপ্লুত হয়ে কেঁদে দেয়। আলিফ একটা মুচকি হেসে শ্রেয়াকে টেনে নিজের বুকে শ্রেয়াকে আঁকড়ে ধরে।

শ্রেয়া প্রায় আধ ঘন্টা যাবত ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে। আলিফ এবার বলে উঠে

“ও হো আমার তো নামাজ পড়াই হলো না।”

শ্রেয়া আলিফের দিকে তাকিয়ে বলল “কিসের নামাজ!”

আলিফ শ্রেয়াকে তাড়া দিয়ে ওযু করার জন‍্য বাথরুমে পাঠিয়ে দেয়।

শ্রেয়াও ওযু করে আসে। আলিফ শ্রেয়াকে দেখে মুচকি হেসে নফল নামাজের কথা বলে। শ্রেয়াও বাধ‍্য মেয়ের মতো নামাজ পরতে লাগলো আলিফের সঙ্গে।

নামাজ শেষে আলিফ টানটান করে বেডে শুয়ে পরলো। কিন্তু শ্রেয়া দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাত কচলাচ্ছে। আলিফ ভ্রু কুচকে তাকালো শ্রেয়ার দিকে। আলিফ শ্রেয়াকে এমন ইতস্তত হতে দেখে লুকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। যা শ্রেয়ার চোখ পরলো না কারণ তার দৃষ্টি তো মেঝের দিকে। আলিফ এবার বলে উঠে

“কি হলো ওখানে দাড়িয়ে আছো কেন? এখানে এসে ঘুমিয়ে পরো। সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে একটু রেস্ট প্রয়োজন তোমার। আর রাতও হয়ে গেছে অনেক। একটু পর আবার ফজরের আযান দিবে।”

শ্রেয়া গুটিগুটি পায়ে বেডের দিকে এগিয়ে গেল ঠিকি কিন্তু তার ইতস্তত ভাবটা তার মধ্যে থেকেই গেল। সে গুটিসুটি মেরে বেডের এক কিনারায় শুয়ে পরে। কিছুক্ষণ বেডে শুয়ে ছটফট করে পরক্ষণেই ঘুমিয়ে পরে শ্রেয়া।

আলিফ তার চোখের উপর থেকে হাতটা উঠিয়ে পাশে থাকা শ্রেয়ার দিকে তাকালো। শ্রেয়াকে গুটিসুটি মেরে ঘুমাতে দেখে এক মুচকি হাসি ফুটে উঠে আলিফের ঠোঁটে। আলিফ শ্রেয়ার দিকে ফিরে শ্রেয়ার কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে টেনে আনে নিজের বুকের মধ্যে। শ্রেয়ার ঘন কালো চুলে নাক ডুবিয়ে একটা রহস্যময় হাসি দেয়। শ্রেয়াকে নিজের সঙ্গে আরো মিশিয়ে নিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠে

”অনেক সাধনার পর আজ তুমি আমার। শুধু আমার।”

ফজরের আযান দিতেই আলিফের চোখ খুলে যায়। সে শ্রেয়াকে ছেড়ে দিয়ে শ্রেয়াকে দুইবার ডাক দেয় কিন্তু শ্রেয়ার কোনো হেলদোল নেই। শ্রেয়া আবার নড়েচড়ে ঘুমিয়ে পরছে। আলিফ একপলক শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে ওর দিকে ঝুকে পরে। শ্রেয়ার কপালে আলতো করে ঠোঁটে ছোয়ায় সে। শ্রেয়া ঘুমের ভিতরেই কিছুটা কেঁপে উঠে। আলিফের ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে শ্রেয়ার এমন কাঁপাকাঁপি দেখে।

আলিফ নিজের ফোনটা তুলে নিয়ে শ্রেয়ার ঘুমন্ত মুখের কয়েকটি ছবি তুলে নেয়।

ছবি তুলতে তুলতেই মেসেজ টুং বেজে উঠে। আলিফ মেসেজটি দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে। তার মুখটা গম্ভীর হয়ে উঠে। সে বেড থেকে উঠে চোখমুখ শক্ত করে বারান্দায় চলে যায়। কাউকে একটা ফোন দিয়ে কিছু একটা বলে সে।

কথা বলা শেষে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে নেয় আলিফ। পর পর কয়েকটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে রুমের দিকে রওনা হয়। শ্রেয়াকে আর না ডেকে সে নামাজ পরে নেয়। নামাজ শেষে সে আলমারি থেকে কালো হুডি সঙ্গে কালো জিন্স বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়।

সে ফুল রেডি হয়ে এক পলক শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পরে।

কারো আলতো স্পর্শের ডাকে শ্রেয়া পিটপিট করে তাকায়।

চলবে……

( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে