কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব-০৫

0
1158

#কেয়ারিং_হাসবেন্ড
[৫ম পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

আমি ফোন রিসিভ করে কানের কাছে নিয়ে আসতেই নীলা আমার থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে চলে গেলো। আমি হতবাক হয়ে গেলাম নীলার এমন কাজ দেখে। নীলা সাথে সাথে ফোন কেটে দিয়ে ফোন নিজের কাছে রেখে দিলো। আমি নীলাকে বললাম — এতো রাতে কে কল দিয়েছে নীলা?

— আরে কেউ না ঘুমাও তো।

— তাহলে এই ভাবে ফোন কেড়ে নিয়ে যাওয়ার কারণ কি?

— আরে ঘুমাও তো৷ কে নাকি কে কল দিয়েছে। আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমালাম।

নীলা এই কথা বলে অন্যদিকে ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে। আমার কেনো জানি সারারাত ঘুম আসেনি। ঘুমানোর অনেক চেষ্টা করেও আমি ঘুমাতে পারলাম না। দেখতে দেখতে সকাল হয়ে গেলো। সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছু না খেয়ে অফিসে চলে গেলাম। কিন্তু নীলা আমার কোনো খোঁজ নিলনা। দেখতে দেখতে অনেক দিন পার হয়ে গেলো। আমাদের বিয়ের প্রায় এক বছর ছুঁই ছুঁই। আমি অফিসের কাজ শেষ করে বাসায় এসে মাত্র বসলাম এমন সময় নীলা আমার এসে বলল — কাল তুমি আমার সাথে হাসপাতালে যাবে।

— কেন কি হইছে? তোমার শরীর খারাপ নাকি নীলা?

— না। কাল তোমার একটা টেস্ট করাবো।

— কিসের টেস্ট?

— আমাদের বিয়ের প্রায় এক বছর হতে চলছে আমি কেন এখনো মা হতে পারছিনা?

— সন্তান তো আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত। সময় হলে ঠিকি হবে। একটু অপেক্ষা করো।

— আমি আর পারছিনা। আমার মনে হয় তোমার কোনো সমস্যা আছে। তুমি আমার সাথে কাল ডাক্তারের কাছে যাবে এতো কিছু আমি জানিনা।

— আচ্ছা ঠিক আছে যাবো।

এই কথা বলে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি নীলা আমার আগে ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে আছে। আমি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নীলার সাথে হাসপাতালে গিয়ে টেস্ট করে আমি আমার অফিসে চলে গেলাম। অফিসের কাজ শেষ করে আমি বাসায় এসে দেখি নীলা বসে আছে। আমি নীলার কাছে গিয়ে বললাম — কি রিপোর্ট আসছে?

— এখনো আসে নাই। কাল আসবে।

— আচ্ছা আমি অফিসে যাওয়ার সময় নিয়ে নেবো। তোমার আর কষ্ট করে যেতে হবে না।

— না আমি গিয়ে নিয়ে আসবো। তুমি সোজা অফিসে চলে যাবে৷ আর আমাকে হাসপাতালের সামনে নামিয়ে দিবে।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে নীলাকে নিয়ে বের হয়ে গেলাম। নীলাকে হাসপাতালের সামনে নামিয়ে দিয়ে আমি অফিসে চলে গেলাম। নিজের অফিসে গিয়ে কাজ শুরু করে দিলাম। কিন্তু আজ কাজে মন দিতে পারছিনা। খুব চিন্তা হচ্ছে রিপোর্টে কি আসলো? এবার নীলাকে ফোন দিলাম কিন্তু নীলার ফোন ওয়েটিং। আর ফোন না দিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলাম। অফিসের কাজ শেষ করে বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে দেখি নীলা বসে আছে।

আমি নিজের কোটের বোতাম খুলতে খুলতে বললাম — রিপোর্ট আসছে নীলা?

এই কথা বলতেই নীলা আমার দিকে রিপোর্টের খাম সহ আমার দিকে ছুড়ে মারল। আমি হতবাক হয়ে গেলাম নীলার এমন আচরণে। আমি রিপোর্ট বের করে দেখি। রিপোর্টে আমার সমস্যা আছে। আমি বাবা হতে অক্ষম। নিজের অজান্তেই আমার চোখ দিয়ে দুফোটা পানি বের হয়ে গেলো।

নীলা আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল — তোমার সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না সবুজ। কারণ আমি তো আর তোমার জন্য মা ডাক শোনা থেকে বঞ্চিত হতে পারবোনা।

— কি বলছো এসব নীলা? আমরা প্রয়োজন হলে একটা সন্তান দত্তক নেবো। একটা সন্তানের জন্য কেন আমাদের সম্পর্ক টা শেষ করতে চাও? আল্লাহ আমাকে অক্ষম বানিয়েছে সেটা কি আমার দোষ?

— আমি এতো কিছু জানিনা। আমি আর তোমার সাথে থাকতে চাইনা। আমি ডিভোর্স চাই।

নীলা মুখে ডিভোর্স এর কথাটা শুনে বুকের ভিতরটা কেপে উঠলো। কি বলব বুঝতে পারছিনা। ডিভোর্স এর কথা বলার আগে ওর মুখে একটুও আটকালো না।

নীলা আবার বলল — কালি ডিভোর্স পেপার চলে আসবে৷ আমি আর এই সংসার করতে চাইনা।

— নীলা একটা সন্তানের জন্য আমাদের সংসার ভেঙে ফেলতে চাও। আমার ভালোবাসা কি কম ছিলো? আমি তো তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমার ভালোবাসার কি কোনো মূল্য নেই আজ? একটা বাচ্চার জন্য আমার ভালোবাসা আজ তোমার কাছে তুচ্ছ মনে হচ্ছে ?

এসব বলছি আর আমার চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে। নীলা আমার কষ্টটা বুঝতে পারছেনা। সে তো একটা সন্তানের নেশায় অন্ধ হয়ে গেছে। আমার ভালোবাসার মূল্য নেই তার কাছে এখন।

— সবুজ বুঝার চেষ্টা করো আমি নিজের বাচ্চার মা হতে চাই৷ আর তুমি যেহেতু বাবা হতে অক্ষম সেখানে আমাদের সংসার টিকিয়ে রাখা সম্ভব না।

— ঠিক আছে আমার আর কিছু বলার নাই। আমি চাইনা তুমি আমার জন্য মা হওয়া থেকে বঞ্চিত হও। আমি ডিভোর্স পেপারে সিগনেচার করে দেবো।

নীলা আর কোনো কথা না বলে খাটের উপরে গিয়ে শুয়ে পড়ে৷ আমি ছাদের উপরে চলে গেলাম। চিৎকার দিয়ে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আমি পারছিনা। ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে কান্না করছি। নিজের কাছেই আজ নিজেকে বড্ড বেশি অসহায় লাগছে। নীলার বলা কথা গুলো বার বার কানের মধ্যে বেজেই চলেছে। কিছুক্ষণ পরে আমি নিজের রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে দেখি নীলা ঘুমিয়ে আছে। নীলার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। নিজের চোখের পানি মুছে আমি নীলার পাশে এসে শুয়ে পড়লাম। সকালে চোখ খুলে দেখি নীলা ব্যাগ ঘুছিয়ে রেডি হচ্ছে।

আমি নীলাকে বললাম — নীলা তুমিকি সত্যি চলে যাবে?

– হ্যাঁ, টেবিলের উপরে ডিভোর্স পেপার রাখা আছে আমি সিগনেচার করে দিয়েছি। তোমার যখন ইচ্ছে হবে সিগনেচার করে আমার বাসায় পাঠিয়ে দিয়ো। ভালো থাকবে আমি আসি আল্লাহ হাফেজ।

এই কথা বলে নীলা নিজের ব্যাগ নিয়ে আমার রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো। খুব কষ্ট হচ্ছিলো আমার। ইচ্ছে করছিলো নীলাকে আটকাতে কিন্তু আমি পারছিনা। নীলা যাওয়ার সময় একটি বার ও পিছনে ফিরে তাকায়নি। আজকে আমার কান্না দেখার মতো কেউ নেই।

ফ্ল্যাশব্যাক থেকে বাস্তবে ফিরে আশি এবার।

নেহাকে কথা গুলো বলতে বলতে নিজের চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো কখন বুঝতেই পারিনি।আমার এসব কথা শুনে নেহার চোখেও পানি চলে আসলো। নেহা আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল — তারপর কি আর তার সাথে যোগাযোগ করেননাই?

— আমি অনেক বার নীলার খোঁজ নিয়েছিলাম। শুনেছি অন্য কাওকে সে বিয়ে করে নিয়েছে। তারপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। যানি ও হয়তো এখন অনেক ভালোই আছে৷ স্বামী সন্তান নিয়ে।

— আসলেই খুব খারাপ হয়েছে আপনার সাথে। এটা নীলা না করলেও পারতো। নীলা আপনার ভালোবাসা বুঝতে পারেনি। একটা সন্তানের জন্য কাওকে এই ভাবে ছেড়ে চলে যায়না। অনেক মানুষ আছে যাদের সন্তান হয়না তারা তো এই ভাবে কাওকে ছেড়ে চলে যায়না।

— হয়তো ছেড়ে যাওয়ার জন্য অন্য কোনো কারণ ও ছিল। কিন্তু আমি সেটা বুঝতে হারেনি। অনেক রাত হয়েছে এবার চলুন রুমে যাই।

— হুম চলুন।

নেহা আর সবুজ নিজেদের রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে দু’জনেই ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে সবুজের ঘুম ভেঙে গেলো। পাশে তাকিয়ে দেখে নেহা তার সামনে চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷

চলবে??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে