কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব-১৪

0
1150

#কেয়ারিং_হাসবেন্ড
[পর্ব – ১৪]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

নীলার মুখে এমন কথা শুনে সবুজ বলল — নীলা তুমি হয়তো ভুলে গেছো আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। আর আমি এখন অন্যের হাসবেন্ড। আর আমার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট। তুমি চলে যাওয়ার পরে আমি বিয়ে করার কথাও ভাবিনি। কিন্তু আমার লাইফে এমন একটা মেয়ে আসলো যে সে আমাকে অনেক ভালোবাসে। তোমার সাথে আমার যা হয়েছিলো সেটা এখন অতীত। অতীত থেকে মানুষ শিক্ষা পায়। তেমন আমিও পেয়েছি। তুমি যদি ভেবে থাকো আমি তোমাকে আবার গ্রহণ করব, তাহলে ভুল ভাবছো। আমি তোমার জন্য অনেক অপেক্ষা করছি কিন্তু তুমি আর ফিরে এলেনা। এখন আমি আমার এই পরিবার নিয়ে অনেক সুখে আছি। আমি আর তোমাকে আমার লাইফে চাইনা। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিবে। যার জন্য ভালোবাসা একবার হারিয়ে যায় সে ভালোবাসা আর কখনো ফিরে আসতে পারেনা।

সবুজের কথা শুনে নীলার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়তে থাকে।

নীলা বলল — সবুজ আমি আর তোমার সংসার ভেঙে দিতে চাইনা। তুমি সুখে আছো সেটাই অনেক। আর আমি যে কাজ করছি হয়তো তোমার পায়ের নিচেও যায়গা হবে না। আমি না হয় বাকিটা জীবন একাই কাটিয়ে দেবো। তুমি ভালো থেকো।

এই কথা বলে নীলা নেহার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল — বোন সবুজকে কখনো কষ্ট দিয় না। ওর খেয়াল রাখবে সব সময়। সবুজের মতো হাসবেন্ড পাওয়া সত্যিই অনেক ভাগ্যের বেপার। আমি পেয়েও আবার হারিয়ে ফেলছি। তুমি আমার মতো ভুল কইর না। ভালো থেকো বোন।

নেহাকে এসব বলে নীলা তার বাবাকে বলল — আব্বু চলো বাসায় চলে যাই। এখানে আমার আর ভালো লাগছেনা।

— তুই যা আমি আসছি।

নীলা কান্না করতে করতে বাহিরে চলে গেলো। হেলাল সাহেব সবুজের কাছে এসে বলল — বাবা ভালো থেকো। আমার আর কিছু বলার মুখ নেই আসি। আমি চাইলেও জোর করতে পারিনা। কারণ সেই ক্ষমতা আমার নেই। আসি বাবা।

এই কথা বলে হেলাল সাহেব বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলো। এই দিকে সবুজ নিজের রুমে গিয়ে কান্না করতে থাকে। নেহা সবুজের অবস্থা বুঝতে পেরে নেহাও সবুজের পিছনে রুমের দিকে চলে গেলো। সবুজ রুমে বসে কান্না করছে। এমন সময় নেহা সবুজের কাছে গিয়ে বলল — এতো কষ্ট যখন হচ্ছে তাকে ফিরিয়ে দিলেন কেন?

— আমার তো নীলার জন্য কষ্ট হচ্ছেনা।

— তাহলে?

— আমার এটাই খারাপ লাগছে যে আমার ভালোবাসা বুঝতে পারেনি নীলা। যার জন্য এতো কিছু করলাম। নিজের সব কষ্ট লুকিয়ে রেখে ওর মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করছি। কখনো মিথ্যা হাসি ছাড়া আর কিছুই পাইনি।

— যা হয়েছে বাদ দিন।

— সেটাই ভালো। মাইসা কোথায় ওকে তো দেখতে পারছিনা।

— মনে হয় অফসার কাছে আছে। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। সকাল থেকে তো কিছুই খেলেন না।

— আচ্ছা।

দেখতে দেখতে কয়েকমাস কেটে গেলো। সুন্দর ভাবে চলছে তাদের জীবন। এক মাস পরে নেহার ডেলিভারি হবে। সবুজ অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় চলে আসলো এক মাসের জন্য। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবুজ নেহা ঘুমাতে আসলো। নেহা সবুজের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে। আর সবুজ নেহার মাথায় বেনি কেটে দিচ্ছে। এমন সময় নেহা বলল — আচ্ছা আমি যদি মরে যাই আপনি কি আমাকে মিস করবেন?

নেহার মুখে এমন কথা শুনে সবুজ বলল — এসব কি কথা বলছো তুমি?

— কি বললাম? বাচ্চা ডেলিভারির সময় তো অনেকেই মারা যায়। তাই বললাম যদি আল্লাহ না করুক আমারো যদি মৃত্যু হয়ে যায়। তখন কি আপনি আমাকে মিস করবেন?

— এসব কথা আর কখনো বলবেনা। আমি তোমাকে হারাতে চাইনা নেহা।

— আমার যদি কিছু হয়ে যায়। আমার বাচ্চাদের দ্বায়িত্ব কিন্তু আপনাকেই নিতে হবে। ওদের খেয়াল রাখতে হবে।

— চুপ করো। এসব আমার ভালো লাগছেনা শুনতে।

— আচ্ছা বলবো না। এখন অনেক রাত হইছে আসেম ঘুমিয়ে যাই।

— হুম চলো।

তারপর নেহা আর সবুজ ঘুমিয়ে পড়ে। খুব ভোরে সবুজের ঘুম ভেঙে যায়। সবুজ দেখে নেহা এখানো ঘুমিয়ে আছে। সবুজ নেহার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো অনেক্ষন। সবুজ নেহাকে সরিয়ে উঠতে যাবে এমন সময় নেহা সবুজকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সবুজ ও না উঠে নেহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু খায়। কিছুক্ষণ পরে সবুজ নেহার থেকে নিজেকে কোনরকম ভাবে ছাড়িয়ে নিয়ে। মাইসার জন্য দুধ গরম করে আর নেহার জন্য নাস্তা রেডি করতে থাকে। সবুজ আজ প্রথম সবার জন্য নিজের হাতে রুটি বানালো। বেখেয়ালি ভাবে সবুজের মুখে ময়দা লেগে যায়। মুখের অনেক যায়গায় ময়দা লেগে যায়। আর রুটির যে সাইজ তা আর কি বলবো? রুটি তো নয় যেনো বাংলাদেশের মানচিত্র এঁকেছ সবুজ 🤣। ছেলেদের হাতে বানানো রুটি আর মেকন হবে। তাও অনেক কষ্ট করে সবুজ সবার জন্য রুটি বানাতে থাকে। এমন সময় আসফা রান্না ঘরে এসে দেখে সবুজ রুটি বানাচ্ছে। আসফা সবুজকে দেখে বলল — দুলাভাই আপনি এতো সকাল সকাল রান্না ঘরে কি করছেন?

সবুজ আসফার দিকে তাকাতেই আসফা সবুজের এমন বেহাল দশা দেখে হাসতে শুরু করে দিলো। সবুজ আসফার হাসির কারণ টা বুঝতে পারলোনা। এই দিকে৷ আসফা হাসতে হাসতে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে চলে গেলো। সবুজ সব রান্না শেষ করে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। নেহা এতোক্ষণে ঘুম থেকে উঠে গেছে। সবুজ রুমে গিয়ে দেখে নেহা খাটের উপরে শুয়ে আছে। সবুজ নেহার কাছে গিয়ে বলল — নাস্তা রেডি হয়ে গেছে। ফ্রেশ হয়ে নাও।

নেহা এবার সবুজের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে এমন সময় সবুজের বেহাল অবস্থা দেখে নেহাও হাসতে শুরু করে দেয়।

সবুজ নেহাকে বলল — হাসির কি আছে বুঝলাম না।

— এই অবস্থা কি করে হলো আপনার?

— কোন অবস্থা?

নেহা এবার সবুজকে আয়নার দিকে ঘুরিয়ে দিলো। সবুজ আয়নার দিকে তাকিয়ে বলল — এই জন্য আসফা এই ভাবে হাসছিল? এখন বুঝতে পারছি।

— আপনি কি রুটি বানিয়েছিলেন নাকি?

— হুম। আজ প্রথম।

— কি দরকার ছিলো এতো কষ্ট করার? নিজের কি অবস্থা করেছেন।

— এ তেমন কিছুনা উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও আজ সবাই এক সাথে নাস্তা করবো।

— আচ্ছা।

নেহা ফ্রেশ হতে চলে যায়। মাইসা এখনো ঘুমিয়ে আছে। সবুজ মাইসার পাশে বসে মাইসার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে মাইসাকে ঘুম থেকে উঠানোর চেষ্টা করে কিন্তু মাইসা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে।

নেহা ফ্রেশ হয়ে এসে বলে — একটু আগে ঘুম থেকে উঠে কান্না করছিলো আমি আবার ঘুম পাড়িয়ে দিছি। এখন ঘুমাচ্ছে। ডাকার দরকার নেই।

— ঠিক আছে চলো এবার।

সবুজ নেহাকে ধরে ধরে নাস্তার টেবিলের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। একটা চেয়ার টেনে নেহাকে সবুজ বসিয়ে দিয়ে সেই ও নেহার পাসে বসে পড়ে। একটু পরে আসফাও খেতে চলে আসে। আসফা চেয়ার টেনে বসে রুটির দিকে তাকিয়ে বলল — দুলাভাই দেখছি খুব ভালো মানচিত্র আঁকতে পারেন। আপু দেখ তোর জামাই রুটি বানাইছে।

এই কথা বলেই আসফা আবার খিলখিল করে হাসতে থাকে।

নেহা বলল — তাও খুব ভালোই বানিয়েছে। তোর সাথে অনেক ভালো হইছে।

— তুই তো এখন তোর জামাইয়ের হয়ে কথা বলবি।

— চুপচাপ খেয়ে নে।

— ঠিক আছে তোবে রুটি কিন্তু দারুণ হইছে এমন রুটি সব সময় খেতে চাই। হিহিহি

খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবুজ নেহাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। নেহা খাটের উপরে বসলো। হঠাৎ করে সবুজ নেহার পেটের উপরে কান লাগিয়ে দেয়।

নেহা বলল — কিছু কি শুনতে পাচ্ছেন?

— হুম।

— কি শুনতে পাচ্ছেন?

— তোমাকে বলতে হবে নাকি? আমি আমার আমার বাচ্চা কথা বলছি তোমাকে এর মধ্যে আসতে হবে না।

— বাচ্চা পেটে রাখি আমি আর উনি বলে ওনার বাচ্চা।

দুইজনই হাসতে শুরু করে দেয়। দেখতে দেখতে আরো অনেক দিন পার হয়ে গেলো। নেহার বাচ্চা হওয়ার ও সময় হয়ে এসেছে। রাতে নেহার হঠাৎ করে ব্যাথা শুরু হয়ে যেতে থাকে। সবুজ ঘুমিয়ে আছে। নেহা পেটে হাত দিয়ে কান্না করতে থাকে। হঠাৎ করে সবুজের ঘুম ভেঙে যায়। পাশে তাকিয়ে দেখে নেহা কান্না করছে।

চলবে??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে