কেন আমি ডাকি তারে পর্ব-১৯+২০

0
1849

কেন আমি ডাকি তারে -১৯

না মানে, তুহিনকে তুমি এত ভালোবাসো যে আমার এমন অদ্ভুত শর্তে বিয়ে করে একবছর থাকতে রাজী হয়ে গেলে।
সেই ছেলেটা যখন তোমার সাথে ফোনে খারাপ ভাবে কথা বলে আর তুমি কষ্ট পাও, তখন আমার রাগ হয়, এটাই বলেছি৷ -রেহান একটু খোলাসা করে বলল।

নিতু বলল, ওহ, সেটাই বলুন। আমার আর তুহিনের মধ্যে একটা গ্যাপ হয়ে যাচ্ছে, আমি এত চেষ্টা করেও ওকে পাচ্ছি না আর ও যখন ফোন করছে, আমি টেম্পার লুস করে ফেলছি!

রেহান বলল, নিতু, বিয়ে সারা জীবনের সিদ্ধান্ত। একটু ভেবে নিও, তুমি আসলেই ভালো থাকবে কি না৷

নিতু বলল, তুহিনকে বলেছি, ও নিজেকে না শুধরে নিলে৷ আমি ওকে বিয়ে করব না।

বাহ, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছ!

হুম!

তাহলে কি করবে?

দেখা যাক, কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

আচ্ছা সে পরে দেখা যাবে, পায়ের ব্যাথা কমেছে, বাইরে যাবে?

না, হাঁটতে পারব না খুঁড়িয়ে৷ রুমে থাকি৷ আপনি ঘুরে আসুন।

চলো লনে বসি। দোলনায়?

আচ্ছা। কি ভাবছিলাম, আর কি হলো!রেহান আবারও লজ্জা পেয়ে বলল, সরি নিতু।

নিতু বলল, আপনি সরি বলছেন কেন, আপনার মত বয়ফ্রেন্ড, সায়রা কোনোভাবেই হারাতে চায় না।।তাই হয়তো রিএ্যাক্ট করে ফেলছে।

আমার মত! এটা বলে তুমি কি মিন করছ?

মানে আপনি খুব কেয়ারিং, সাপোর্টিং। বাই দ্য ওয়ে, আপনি আমাকে যেভাবে টেক কেয়ার করেন, সায়রা তো এটা জানলে আমাকে লাঠি দিয়ে পেটাতো! গলা চেপে ধরতো!

রেহান বিব্রত হয়ে বলল, সেভাবে কী করলাম, তুমি তো কাছেই আসতে দাও নি৷

দুজন কথা বলতে বলতে মধ্যকার জমাট বাধা মেঘ হালকা হয়েছে৷ নিতুর হাত ধরে রেহান বিছানায় বসালো।চুলগুলো খোলা ছিলো, হাত দিয়ে কানের পাশের চুল সরিয়ে গাল ছুঁয়ে দিলো।

নিতু কোনো অচেনা আবেশে কোমল হয়ে উঠলো। রেহান আরেকটু কাছে এগিয়ে নিতুর খুব কাছাকাছি এসে ওকে চুমু খেতে উদ্যত হলো।

দরজায় কেউ কড়া নাড়ল। সম্মোহন কেটে গিয়ে ওরা দুজন সরে গেল।

নিতুকে দেখতে এসেছে রেহানের দুই বন্ধু আর তাদের ওয়াইফ।

ভাবী এখন কেমন আছেন?

নিতু হেসে ঘাড় নাড়ল।

রেহান ভাই তো আর বের হবেন না আজ!

রেহান হেসে বলল, না সরকারী ডিউটি ফেলে কিভাবে বের হই।

নিতু বলল, কোনো ডিউটি নেই, বের হয়ে পড়ুন। আমি রুমেই আছি।

না একদম না।আমি বের হলে তোমাকে নিয়েই বের হবো।
কিছুক্ষণ থেকে ওরা বের হয়ে পড়ল। রেহান দরজা বন্ধ করে নিতুকে ডাকল, নিতু, এসো এদিকে।

নিতু বসে ছিল। নামতে গিয়ে মনে হয় পায়ে টান লাগল। রেহান এগিয়ে এসে ধরে ফেলল নিতুকে।

বুঝলে, আসেপাশের সবাই বেরসিক, মাত্র একটু কাছে আসছিলাম- বলে রেহান হাসল।

নিতু রেহানকে ধরে বলল, আপনি পারেনও!

রেহান অপেক্ষা না করে নিতুর ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেলো। নিতুর ভালো লাগছিল, ও তাই সাড়া দিলো। অনুভূতি ছাড়া যে কাছে আসা যায়, সেখানে ভালোলাগাও তৈরি হয়, এটা নিতু জানত না৷ অথবা এটাই অনুভূতি, সেটাও নিতু জানে না। অপরিচিত অনুভূতি কিভাবে সারাজীবন একা একা বয়ে নিয়ে যাবে, সেটাও নিতু জানে না।

চলবে

কেন আমি ডাকি তারে – ২০

নিতু বলেছিল নিতুর পায়ের ব্যাথা কমেছে, কিন্তু বিকেলের দিকে ওর গা কাঁপিয়ে জ্বর এলো। রেহান গিয়েছিল হালকা কিছু স্ন্যাকস নিয়ে আসতে সেই সাথে ডিনারের অর্ডার দিয়ে দিতে। অফ সিজনে আনলিমিটেড খাবার থাকে না। অর্ডার বেসিসে রান্না করা হয় এখানে।
সেখানে বন্ধুদের সাথে চা খেতে একটু দেরী হলো। নিতু ফোন করে নি৷ এমনিতেই বেচারা ঘুরতে এসে প্যাচে পড়ে গেছে৷

রুমে ঢুকে রেহান দেখল, নিতু লাইট নিভিয়ে শুয়ে আছে।

লাইট দিয়ে রেহান বলল, সন্ধ্যায় আলো জ্বালতে হয় রুমে।

নিতু অস্পষ্ট ভাবে কিছু বলার চেষ্টা করল।

কি হয়েছে নিতু?- রেহান এগিয়ে এসে দেখল, জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।

নিতু, এ্যাই নিতু!

নিতু চোখ মেলে বলল, জ্বর এসেছে!

হুম, আমাকে ফোন করো নি কেন! ওঠো, কিছু খেয়ে প্যারাসিটামল খেয়ে নাও!

নিতু উঠতে পারল না।

রেহান নিজে চেঞ্জ করে নিতুকে মাথায় কিছুক্ষণ জলপট্টি দিলো৷ গা মুছিয়ে দিলে ভালো হতো কিন্তু নিতু রাজি হবে কিনা! রেহান কি একটু জোর খাটাবে!নিতু নিষেধ করল না৷ রেহানকে দূরের কেউ মনে হচ্ছে না। তাছাড়া রেহান অনেকবারই নিতুর কাছাকাছি এসেছে। ওয়াশরুম থেকে এসে নিতুকে শুইয়ে দিয়ে রেহান সরে যাচ্ছিল৷ নিতু রেহানের হাত ধরে ফেলল।

রেহান নিতুকে বলল, আসছি।

রেহান সরে যেতেই নিতুর মনে হলো, রেহানকে ছেড়ে থাকা এতটাও সহজ হবে না তার জন্য।

★★★
শেষরাতে জ্বর ছাড়ল ঘাম দিয়ে৷ নিতুর ঘুম হয় নি, সারা রাত উল্টো পাল্টা স্বপ্ন দেখেছে, রেহান এক মুহুর্তেও কাছ থেকে সরে যায় নি৷ এখন একটু ঘুমিয়েছে। নিতু রেহানকে ডাকল না।

সকাল সকাল নিতু উঠে পড়ল। কাল চলে যাওয়ার কথা। এখানে এসে এই রুমের বাইরে যাওয়া হয় নি। রেহানও যায় নি। নিতু ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকল। আজ একটু বাইরে যাবে৷

রেহানের ঘুম ভাঙল নিতুর বড় ভাইয়ার ফোনে। রেহান উঠে বসল৷ ভীষণ খারাপ একটা নিউজ, নিতুর বাবার শরীরটা ভালো নেই, ভালো নেই মানে ভীষণ খারাপ। ডাক্তার লাইফ সাপোর্ট দিতে চাচ্ছে।

হুট করেই গতরাতে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে৷

নিতু বের হওয়ার পরে রেহান বলল, নিতু আমাদের এক্ষণি বের হতে হবে। বাবার শরীরটা ভালো না।

নিতু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, আমার আব্বা? উনি কি বেঁচে আছেন?

চলবে

শানজানা আলম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে