কিশোরী কন্যার প্রেমে পর্ব-২৫+২৬

0
774

#কিশোরী_কন্যার_প্রেমে
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_২৫
.
নিধি চুপচাপ বসে আছে অভ্রর সামনে। অভ্র শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। পুরো বাসা সুনশান। অভ্রর বাবা ব্যবসার কাজে বেরিয়েছে। অভ্রর মা গিয়েছেন হয়তো তার কোনো বান্ধবীর বাসায়। এখন সারা বাসায় শুধুমাত্র অভ্র আর নিধি উপস্থিত। মিনিট দশেক হয়েছে তারা বাসায় এসেছে। বাসায় ঢুকেই অভ্র নিধির হাত টেনে ধরে তাকে সোফায় বসিয়েছে। নিজেও চুপ করে বসে আছে সামনে। এখন নিধির মনে হচ্ছে সে বেশি বলে ফেলেছে তখন। ওদের পার্সোনাল কথার মাঝে তার ঢোকাটা উচিত হয়নি। কিন্তু তখন তার মাথাও তো ঠিক ছিল না। দু’জনের মাঝে দাঁড়িয়ে পিষতে হচ্ছিল তাকে। এত চেঁচামেচি একাধারে শুনতে শুনতে মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিল তার। তাই তো মুখ ফসকে গিয়েছিল।
অভ্র সোফায় আরাম করে হেলান দিয়ে বসল। গলা ঝেড়ে নিয়ে বলল,
-“আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে এসো।”
-“জি!”
-“পানি নিয়ে এসো।”
অভ্রকে এক পলক দেখে নিয়ে নিধি উঠে রান্নাঘরের দিকে গেল পানি আনতে। মিনিটের মাঝেই গ্লাস ভরতি পানি নিয়ে হাজির হলো। গ্লাসটা অভ্রর দিকে বাড়িয়ে দিতেই নিয়ে নিল। তৃপ্তি সহকারে পানি খেয়ে গ্লাস টেবিলের উপর রেখে বলল,
-“বসো।”
-“জি!”
-“কানে সমস্যা আছে? কথা বারবার রিপিট করা লাগছে কেন?”
ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে চুপচাপ অপর পাশের সোফায় বসল। অভ্র দু’হাত ওপরে তুলে আড়মোড়া ভাঙল। হাই তুলল। নিধির মাথায় ঢুকছে না অভ্রর কাজকর্ম।
-“কী বলছিলে তখন রিয়াকে?”
ভয়ে গলা শুঁকিয়ে এলো নিধির। এখন কী তাকে বকবে নাকি লোকটা? এমনিতেই তো অকারণে সবসময় এই ভয়েই থাকে সে। আজ কী তবে ভয়টা সত্যি হতে চলল? মিনমিনে গলায় সে বলল,
-“সরি। আসলে তখন আপনাদের কথা কাটাকাটি শুনে আমারই মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তাই আরকি…! আপনি বললে আমি রিয়া আপুকে সরি বলে দিব।”
-“আর সেটা কীভাবে? ওকে পাবে কোথায় তুমি?”
-“আপনি বলবেন আসতে। তারপর নাহয় সরি বলব।”
-“আমি কেন আসতে বলব? আমার ঠ্যাকা পড়েছে নাকি? ওসব ফাতরা মেয়েদের নাম্বার আমি আমার ফোনে রাখি না।”
নিধি অবাক হয়ে বলল,
-“আপনি না আপুকে ভালোবাসেন?”
-“ঘটনাটা কয় বছর আগের সেই হিসাব আছে? তখন ভালোবাসতাম। কিন্তু এখন আর ওকে ভালোবাসি না আমি। ওর প্রতি থাকা অনুভূতিগুলো ও-ই নষ্ট করে দিয়েছে।”
-“মানে আমি আপুকে যে এত কথা বলে আসলাম, আপনি রাগ করেননি?”
-“উঁহু! একটু না। উল্টো আমার হাসি পেয়েছে। কিন্তু বিস্ময়ের চোটে হাসতে ভুলে গিয়েছিলাম। এখন তুমি আরেকবার কথাগুলো রিপিট করো। আমি একটু হেসে নিই।”
নিধি ভ্র কুঁচকে তাকাতেই হেসে উঠল অভ্র। প্রাণখোলা হাসি তার। সেই হাসি দেখে নিধির মুখেও সুক্ষ্ম হাসির রেখা দেখা গেল। শরীর দুলিয়ে হাসছে অভ্র। এর আগে কখনো এত কাছ থেকে অভ্রকে এভাবে হাসতে দেখা হয়নি। হঠাৎ হাসি বন্ধ করে অভ্র বলে উঠল,
-“উইল ইউ ম্যারি মি?”
-“হুঁ!”
বিস্ময়ের চোটে হকচকিয়ে গেল নিধি। সে ঠিক শুনেছে না ভুল শুনেছে বুঝতে পারছে না। প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে অভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে সে। অভ্র মৃদু হেসে বলল,
-“আমার কথাকে মজা ভেবে উড়িয়ে দেওয়ার মতো ভুল করো না কিন্তু। আমি সিরিয়াস। এসব ব্যাপার নিয়ে মজা করার বয়স আমার নেই। বিয়ের বয়স অলমোস্ট পার হতে চলল।”
নিধি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। তাকে দ্বিতীয় বারের মতো চমকে দিয়ে আবারও একই প্রশ্ন করল অভ্র।
-“সো, উইল ইউ ম্যারি মি?”
দ্বিধান্বিত নিধির গলার আওয়াজ যেন হারিয়ে গেছে। বহু কষ্টে মিনমিনে আওয়াজে সে বলল,
-“মা..মানে আম..আমি! আহ..আসলে…”
-“আমাকে কী কোনো কারণে অপছন্দ তোমার?”
-“না তা নয়।”
-“আমি কী ছেলে হিসেবে খারাপ বা তোমার অযোগ্য?”
-“একদমই না। আপনার মতো ছেলে সব মেয়েই চায়। আর আপনি আমার অযোগ্য হতে যাবেন কেন? বরং আমি আপনার অযোগ্য।”
-“তুমি অযোগ্য হলে নিশ্চয়ই তোমাকে বিয়ের প্রপোজাল দিতাম না?”
-“কিন্তু আপনার মা?”
-“তার মানে মায়ের কথা বাদ দিলে তোমার কোনো আপত্তি নেই তাই তো?”
পুনরায় হকচকিয়ে গেল নিধি।
-“না মানে… আসলে…”
-“আসল নকলের কথা পরে হবে। এখন সিরিয়াস মোমেন্ট চলছে। সো, জলদি জলদি বলো। এই অফার কিন্তু সীমিত সময়ের জন্য।”
-“আপনি কী সিম কার্ড নাকি?”
-“সিম কার্ডের চেয়েও সীমিত এই অভ্রকে বিয়ে করার অফার।”
অস্বস্তি এবং চিন্তায় হাত ঘামতে লাগল নিধির। দু’হাত সমানে কচলে যাচ্ছে সে। কী বলবে না বলবে তা নিয়ে দ্বিধান্বিত তার মন। গলা খাদে নামিয়ে বলল,
-“আপনি কেন আমায় বিয়ে করতে চাইছেন?”
-“বিয়ে মানুষ কেন করে? বিয়ে করে বাসর করব। তারপর বছরখানেক বাদে দু’একটা বাচ্চা ফুটিয়ে বাবা ডাক শুনব। হ্যাঁ, তুমি চাইলে ওরা তোমাকেই মা বলে ডাকবে। তার জন্য তোমাকে এই বিয়েতে রাজি হতে হবে। নাহলে তো মা ডাক শুনতে পারবে না।”
নিধি বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অভ্রর দিকে। তার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। লজ্জায় গাল দু’টো গরম হয়ে গেছে। অভ্রর মুখ থেকে এমন লাগামহীন কথা সে আগে কখনো শোনেনি। তাই তার মানতে কষ্ট হচ্ছে। অভ্র তাকে বিস্ময়ের আরও এক ধাপ ওপরে পৌঁছে দিতে বলল,
-“আচ্ছা বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলতে হবে না। অন্য একটা প্রপোজাল দিই তোমায়। আমার বাবুর আম্মু হবে?”
এবার নিধির মন চাইছে নিজের মাথা দেয়ালে গিয়ে ঠুকতে। একটু ভালোভাবে বললে হয়টা কী? আজব লোক তো!
-“অফার কিন্তু শেষ হতে চলল। এত বড় একটা অফার হাতছাড়া করতে চাইছ নাকি তুমি? সেম অফারটা তুমি যদি আমায় দিতে তাহলে আমি সাথে সাথে লুফে নিতাম।”
-“আম..আমি আসলে বুঝতে পারছি না।”
-“তুমি যদি মা’কে নিয়ে চিন্তায় থাকে তাহলে বলব সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। আমি ম্যানেজ করে নিব।”
-“হুম।”
-“হুম কী? রাজি?”
ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বসে আছে নিধি। কী বলবে বুঝতে পারছে না। মন একবার বলছে রাজি হয়ে যেতে। আবার আশেপাশের লোকজনের কথার ভয়ে না করে দিতে ইচ্ছে করছে। তার চিন্তা-ভাবনার মাঝেই অভ্র উঠে এসে তার পাশে বসল। একদম গা ঘেঁষে। চমকে উঠল নিধি। মুহূর্তেই তার গাল জ্বলে উঠল। গলা শুঁকিয়ে আসতে লাগল। শুঁকনো ঢোক গিলে কম্পিত কণ্ঠে বলল,
-“আপ..আপনি এখানে কেন? দূদ..দূরে স..রে বসুন।”
-“কেন?”
-“পিপ..প্লিজ!”
-“অফার টাইম কিন্তু শেষ হতে চলল।”
-“আপনি..”
বুকের ভেতরটা বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে নিধির। ভয়, অস্বস্তি, উত্তেজনা সব মিলিয়ে নাজেহাল অবস্থা তার। শরীরের লোম সব দাঁড়িয়ে গেছে। কেমন যেন ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। তার আবার জ্বর আসছে না তো?
-“আমি কী তাহলে তোমার উত্তর ‘না’ ধরে নিব?”
-“নাহ্!”
মৃদুস্বরে চেঁচিয়ে উঠল নিধি। হেসে ফেলল অভ্র। দুষ্টু সুরে বলল,
-“তাহলে ‘হ্যাঁ’ ধরে নিব?”
অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল নিধি। এমন কেন করছে লোকটা? এভাবে মজা নিচ্ছে তার নার্ভাসনেসের? অভ্র আলতো ভাবে নিধির হাত ধরে জোরে হেসে ফেলল।
-“হাত-পা তো পুরো ঠান্ডা হয়ে গেছে তোমার। দেখো আবার স্ট্রোক করে বসো না যেন।”
অভ্র মাথা ঝুঁকিয়ে টুপ করে নিধির গালে চুমু খেয়ে বসল। নিধির মাথায় যেন এবার পুরো বিস্ময়ের পাহাড়টাই ভেঙে পড়ল। হা করে গালে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সে। তার চুল ঠিক করে কানের পেছনে গুঁজে দিতে দিতে অভ্র বলল,
-“উত্তরটা তাহলে আমি ‘হ্যাঁ’ হিসেবেই ধরে নিলাম। পরে কিন্তু এর নড়চড় করা যাবে না। আর নিজেকে প্রস্তুত করো জলদি।”
নিধি ভয়ার্ত চোখে প্রশ্নসূচক দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই অভ্র হেসে বলল,
-“বিয়ের জন্য। মায়ের জন্য হয়তো অতো ধুমধাম করে বিয়ে করতে পারব না। কিন্তু বিয়ে আমরা করছি খুব শীঘ্রই।”
-“কিন্তু…”
-“আর কোনো কিন্তু নয়। এতদিন আমার চোখের সামনে অনেক ঘুরঘুর করেছ। এবার থেকে নাহয় আমার মনের ভেতরে ঢুকে ঘুরঘুর করবে।”
পরপর নিধির আরেক গালে চুমু খেয়ে উঠে নিজের রুমে চলে গেল অভ্র। নিধি তখনো বিস্ময়ের ঘোরে রয়েছে। সে ওখানেই গালে হাত রেখে বসে রইল। বারবার চোখের পলক ফেলে একটু আগের সম্পূর্ণ ঘটনাটা পুনরায় ভাবার চেষ্টা করছে। ঘটনা পুরোটা মস্তিষ্ক ধারণ করতেই তার অধর কোণে স্মিত হাসি দেখা গেল। তার জীবনেও বুঝি অবশেষে একজন নিজের মানুষের আগমন ঘটল, যাকে সে একান্তই নিজের বলে দাবি করতে পারবে?
___
ঘরের দরজা লাগিয়ে বিছানায় গিয়ে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল অভ্র। তার মুখের হাসিই বলে দিচ্ছে সে আজ কতটা খুশি। তার এই খুশির কারণটাও স্পষ্ট। নিধি! এত বছর মেয়েটাকে চোখের সামনে ঘুরঘুর করতে দেখে কবে আর কখন যে মেয়েটাকে মনে ধরে গেল বুঝতেই পারল না। নিধির প্রতি সে দূর্বল বিষয়টা বুঝেছে খুব বেশিদিন হয়নি। এইত মাস দুয়েক আগে তার অফিস ছুটি থাকায় অর্ঘমা আর নিধিকে ভার্সিটি থেকে তাদের নিয়ে আসতে গিয়েছিল। ভার্সিটির সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসার সময় খেয়াল করেছিল নিধি একটা ছেলের সাথে খুব হেসে কথা বলছে। পাশেই অর্ঘমা ফোনে কারও সাথে কথা বলছে। নীরদ হবে হয়তো। কিন্তু নিধি ছেলেটার সাথে এত হেসে কথা বলতে দেখে তার সারা শরীর যেন মুহূর্তেই জ্বলে উঠল। এক অদৃশ্য হিংসে এসে দানা বাঁধল তার মনে। কিন্তু কেন? এই কেন এর উত্তর সেদিন সারাদিন ভাবার পর গিয়ে পেল। নিধির সাথে তার খুব একটা কথা হয় না। বাসায় প্রায় প্রায়ই তাকে চা বানিয়ে দেওয়ার অথবা এটা-সেটা বানিয়ে খাওয়ানোর দায়িত্বটা নিধির ঘাড়েই পড়ে। কারণ তার রান্নার হাত চমৎকার। দায়িত্বটা অবশ্য অভ্র নিজেই দেয়। এই এতটুকুতেই সে ফেঁসে গেছে নিধি নামক মায়াজালে। সামান্য একটা কারণ, তবুও ভালোবাসার জন্য যথেষ্ট অভ্রর কাছে। এটা ঠিক যে অভ্র রিয়াকে ভালোবাসত। কিন্তু রিয়া নিজেই অভ্রর মনে নিজের প্রতি থাকা অনুভূতিগুলো নষ্ট করে দিয়েছে। এরপর নিশ্চয়ই অন্য কারও প্রতি নতুন করে অনুভূতি জন্মানো অন্যায় কিছু নয়?

নিধিকে আজ বারবার বিস্মিত হতে দেখে বেশ মজা লাগছিল অভ্রর। ও এভাবে নিজের মনের কথা জানাতে চায়নি। আবার সরাসরি বলতেও ভয় পাচ্ছিল পাছে যদি তাকে আবার প্রত্যাখ্যান করে বসে নিধি তখন? তাই একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলে দেখল নিধি কী বলে। কিন্তু নিধির কনফিউশান দেখে তার সকল কনফিউশান দূর হয়ে গেছে। নিধি তাকে অপছন্দ তো করে না এটাই যথেষ্ট। যেভাবে নিধিকে ঘোল খাইয়ে এসেছে এরপর নিধি তাকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য। তার প্রতি অন্যরকম অনুভূতি অনুভব করতেও বাধ্য। নিধির বিস্ময়কর চেহারাটা মনে করে নিঃশব্দে হেসে উঠল অভ্র।

চলবে…

#কিশোরী_কন্যার_প্রেমে
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_২৬
.
মাঝরাস্তায় চলন্ত রিকশা থামিয়ে কয়েকজন ছেলে মিলে রিকশাওয়ালাকে পিটিয়ে জোর করে অর্ঘমাকে নিয়ে মাইক্রোতে উঠে চলে গেল। ঘটনাটা এতটাই দ্রুত ঘটল যে আশেপাশের লোকজনও ঠিকভাবে কিছু বুঝে উঠতে পারল না। যতক্ষণে বুঝতে পারল ততক্ষণে মাইক্রোটা তাদের চোখের আড়াল হয়ে গেছে। দিনে দুপুরে মাঝরাস্তা থেকে একটা যুবতী মেয়েকে অপহরণ? তৎক্ষণাৎ কয়েকজন লোক মিলে আলোচনা করে ব্যাপারটা পুলিশকে জানাল।
___
প্রায় অনেকক্ষণ যাবৎ দাঁড়িয়ে আছে নীরদ। অর্ঘমার কোনো খবরই নেই। বেশ কয়েকবার কল দিয়ে ফেলেছে অর্ঘমার ফোনে। প্রথমবার অর্ঘমা রিসিভ করে ‘আসছি’ বললেও এরপরে প্রতিবারই নাম্বার বন্ধ বলছে। চিন্তায় এই শীতের মাঝেও নীরদের কপালে ঘামের রেখা দেখা গেল। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা রাস্তা এগিয়ে গিয়েছে কিন্তু তবুও অর্ঘমার কোনো দেখা নেই। তাই বাধ্য হয়ে এবার অভ্রকে কল করল।
-“হ্যালো, নীরদ!”
-“ভাই একটু বের হতে পারবে?”
-“কেন কী হয়েছে? অর্ঘমা ঠিক আছে তো?”
-“ভাই ওর জন্যই কল করেছি। ওর আজ আসার কথা ছিল আমার সাথে দেখা করতে। কথা হয়েছিল যে ও রিকশা নিয়ে আমার অফিস পর্যন্ত আসবে। তারপর আমরা দু’জন একসাথে ক্যাফেতে যাব। কিন্তু গত একঘন্টা যাবৎ অপেক্ষা করেও ওর কোনো খবর পাচ্ছি না। প্রথমে একবার ফোন করেছিলাম। তখন বলল রিকশায় আছে। এরপর যতবারই কল দিচ্ছি নাম্বার বন্ধ বলছে। চিন্তায় অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার। হাঁটতে হাঁটতে অলমোস্ট ওর ভার্সিটির সামনেই চলে এসেছি আমি। তাও ওর দেখা নেই। তুমি কী একটু বের হবে? আমার মাথা কাজ করছে না।”
-“আসছি আমি। তুই ভার্সিটির সামনেই দাঁড়া। আসিফ ওদের কল দিয়ে আসতে বল।”
কলে থাকা অবস্থায়ই একপ্রকার দৌড়ে বেরিয়ে গেল অভ্র। পেছন থেকে নিধির গলা ভেসে আসছে। সেদিকে এখন মননিবেশ করার বিন্দুমাত্র সময় নেই তার হাতে। তার কাছে এই মুহূর্তে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো অর্ঘমা। না জানি মেয়েটা কোথায় গেল? অভ্রর সারা শরীর চিন্তায় অবশ হয়ে আসতে লাগল।
___
বিবস্ত্র অবস্থায় অর্ঘমার নিথর দেহটা পড়ে আছে বিছানায়। সারা শরীরে অসংখ্য কামড় আর খামচির দাগ। ঘরে অন্য কারও উপস্থিতি নেই। বাইরের ঘর থেকে গানবাজনার আওয়াজ আসছে। সাউন্ড বক্সে ফুল সাউন্ডে গান ছেড়ে উল্লাসে মেতে আছে তারা। রক্তিম চোখজোড়া বন্ধ করে হাতে মদের গ্লাস নিয়ে মাতাল অবস্থায় বসে আছে শাকিল। তার বন্ধুরা নাচানাচি করছে অন্যান্য মেয়েদের সাথে। সবার অবস্থাই আউট অফ কন্ট্রোল। শাকিলের এক বন্ধু এসে তার পাশে বসে জড়ানো গলায় বলল,
-“দোস্ত ওই মেয়েটাকে নিয়ে আবারও একটু মজা করতে মন চাইছে।”
-“তো কর গিয়ে। না কে করেছে? আজ তো ওকে আনাই হয়েছে মজা করার জন্য।”
শাকিলের বন্ধু হু হা করে হেসে উঠে চলে গেল অর্ঘমাকে যে রুমে রাখা হয়েছে সেই রুমে। শাকিল নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে দেখল তার বন্ধু রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিল। সে আবারও মদের নেশায় মত্ত হয়ে গেল।

আজ শাকিলের কলিজা ঠান্ডা হয়েছে। বিগত চার বছর যাবৎ ভেতরে জ্বলতে থাকা আগুনটাকে থামিয়ে রেখেছিল। অপেক্ষায় ছিল একটা ভালো সুযোগের। আজ তা পেয়ে গেছে। সেদিন অর্ঘমার বাবা আর ভাইয়ের করা অপমান সে ভুলেনি। ভুলেনি নীরদের করা অপমানও। আর না ভুলেছে নীরদ আর নীরদের বন্ধুদের সেই মা’র। যার জন্য পুরো সাড়ে চারটা মাস লেগেছিল তার সুস্থ হতে। সেই থেকে অর্ঘমার প্রতি তার ভীষণ রাগ। রাগটা এতদিন মনের কুঠুরিতে পুষে রেখেছিল। অর্ঘমার দিকে তার নজর বরাবরই ছিল। এতদিন তাকে উড়তে দিয়েছে নিজের মন মতো। এখন ডানা ভাঙার সময় এসে গিয়েছিল বলে ভেঙে দিয়েছে। অর্ঘমাকে নিজের লোক দিয়ে তুলে এনে সকল বন্ধুরা মিলে মেয়েটার দেহটাকে খুবলে খেয়েছে। যেই পর্যন্ত না মন ভরবে সেই পর্যন্ত এভাবেই সবাই মিলে অর্ঘমার উপরে জোর চালাবে। এক ঢিলে সবগুলো পাখিকে সে মেরে ফেলেছে। অর্ঘমা, অর্ঘমার বাবা, অভ্র আর নীরদ সবাইকে একসাথে শিক্ষা দেওয়া গেছে ভেবে মাতাল অবস্থায়ই হাসতে লাগল শাকিল।

শাকিলকে এখন ছোঁয়ার সাহস কারও নেই। সে এখন রাজনীতিবিদ। বড় বড় নেতাদের সাথে তার ওঠাবসা। টাকা থাকলে কী না হয়? আইন, নিয়ম-কানুন এসব তাদের জন্য না। এসব তারা পকেটে নিয়ে ঘোরাঘুরি করে। ওসব তো শুধু সাধারণ জনতাদের জন্য। আজকে মূলত চার বছর আগের অপমানের বদলা নেওয়ার উপলক্ষেই এই সেলিব্রেশন চলছে তার ফার্ম হাউসে। মদ্যপান করার মুহূর্তে এক মেয়ে এসে তার গলায় হাত রাখতেই এক চুমুকে সবটুকু তরল নিজের গলায় ঢেলে মেয়েটাকে নিয়ে অন্য রুমে চলে গেল শাকিল। আজ সারারাত এসবই চলবে এখানে।
___
অর্ঘমা নিখোঁজ হওয়ার আজ তৃতীয় দিন। অর্ঘমার বাবা, অভ্র আর নিধির অবস্থা খুব খারাপ। সবথেকে খারাপ অবস্থা হয়েছে নীরদের। তার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। তিন দিনের ব্যবধানে চোখমুখ শুকিয়ে জঘন্য অবস্থা হয়ে গেছে। নির্ঘুম রাত পার করার জন্য চোখের নিচে কালি পড়ে গিয়েছে। পেটে একটা দানাপানিও পড়েনি অর্ঘমার চিন্তায়। মনে মনে বারবার নিজেকে দোষ দিচ্ছে। সে যদি অর্ঘমাকে একা একা বের হতে না বলতো তাহলে এমন কিছুই হত না। এটা নীরদের ধারণা। তার পরিবারের সবাইও গত দু’দিন যাবৎ অর্ঘমাদের বাসায়। সবারই টেনশনে মাথা নষ্ট হওয়ার জোগাড়।

মিনা বেগম বরাবরের মতোই নির্বিকার। তার এসবে কিছুই যায় আসে না। তিনি তার মতো বেশ আছেন। পায়ের উপর পা তুলে খাচ্ছেন। বাইরে গিয়ে স্বামীর কামানো টাকা উড়াচ্ছেন বান্ধবীদের নিয়ে। নিজের সকল শখ, আহ্লাদ পূরণ করছেন। এসবেই তিনি সময় পার করছেন। অন্যসব দিকে খেয়াল করার সময় কোথায় তার?

পুলিশকে জানানোর পরও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি অর্ঘমার। শুধু এতটুকুই জানা গেছে যে মাঝরাস্তা থেকে অর্ঘমাকে তুলে নিয়ে যেতে দেখেছে কয়েকজন। রিকশাওয়ালার সাথেও কথা হয়েছে পুলিশের। তেমন কিছুই জানতে পারেন নি তারা। অর্ঘমাকে খোঁজার কোনো ক্লু নেই তাদের কাছে। তবুও তারা খুঁজে চলেছে। যদিও এটা তাদের মুখের কথা।

নীরদ আর অভ্রর ক্লোজ ফ্রেন্ডরা সবাই নিজেদের সাধ্য মতো চেষ্টা করছে অর্ঘমাকে খোঁজার। নিজেদের যত বড় বড় সোর্স ছিল সব কাজে লাগিয়ে চেষ্টা করছে। তারাও এখনো পর্যন্ত কোনো ক্লু পায়নি। সবার মাথা থেকে শাকিলের কথা সরে গিয়েছে। এত টেনশনে এসবের খেয়াল থাকে নাকি?

আসিফের মাথায় শাকিলের নামটা আসলেও সে বারবার উড়িয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু তবুও বন্ধুর করুণ অবস্থা দেখে আর নিজের মনকে শান্ত করতে শাকিলের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে এখন দ্বিধাদ্বন্দ ও চিন্তার মাঝে ডুবে আছে তার সারা শরীর ও মন। যা জেনেছে তাতে শাকিলের পক্ষে এমন একটা কাজ করা অসম্ভব কিছু না। অর্ঘমাদের বাসায় ঢুকে আসিফ চুপচাপ সোফায় গিয়ে বসল। সেখানে অভ্র, নীরদ আর তাদের কিছু বন্ধুরা রয়েছে। আসিফ গলা ঝেড়ে বলল,
-“আমার কিছু কথা ছিল।”
সবার নজর এখন আসিফের দিকে। কপালে চিন্তার রেখাটা আরেকটু গভীর হলো তার। আমতা আমতা করে বলল,
-“আসলে আমার মাথায় একটা নাম ঘুরছে।”
-“কার?”
অভ্রর তীক্ষ্ণ আওয়াজে খানিকটা নড়েচড়ে বসল আসিফ। নীরদের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলল,
-“শাকিল। আমার কেন যেন ওকেই সন্দেহ হচ্ছে। আর এই সন্দেহ কাটাতেই আমি ওর ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছি। এখন সন্দেহ কমার বদলে উল্টো সন্দেহর পাশাপাশি চিন্তাটাও বেড়ে গেছে।”
-“কী জেনেছিস জলদি বল আসিফ। এটা আমার বোনের ব্যাপার। আমি আর পারছি না এভাবে বসে থাকতে। কিছু করতেও পারছি না। নিজেকে ঠিক কতটা অসহায় লাগছে বোঝাতে পারব না তোকে।”
-“শাকিল এখন রাজনীতিবিদ। বড় বড় সব নেতাদের সাথে তার ওঠাবসা। চরিত্রের কথা তো বললামই না আর। প্রতিদিন তার শয্যাসঙ্গীর জন্য নতুন নতুন মেয়ে লাগে। এখন আমার মনে হচ্ছে অর্ঘমাকে কিডন্যাপ করার পেছনে ওর হাত আছে। হয়তো পুরোনো রাগ মেটাতে। চার বছর আগের অপমানের বদলা নিতে এই কাজ করেছে। আর তাছাড়া ও জানে এখন কেউ ওর কিচ্ছু করতে পারবে না। তাই হয়তো এই সাহসটা দেখিয়েছে। এটা সম্পূর্ণ আমার অপিনিয়ন। আ’ম নট শিওর।”
সকলে চিন্তায় পড়ে গেল। নীরদের হাতের মুঠ ততক্ষণে শক্ত হয়ে গেছে। এখন তার ভেতরে ভালোমন্দ বোঝার ক্ষমতা নেই। অর্ঘমাকে ছাড়া সে অচল। ঠিক এতটাই ভালোবেসেছে সে অর্ঘমাকে। শাকিলের নাম শুনতেই তার হাত ও কপালের রগ ফুলে নীল হয়ে উঠেছে মুহূর্তেই। চোখগুলো আগে থেকেই রক্তিম বর্ণ ধারণ করে আছে। ফর্সা চেহারাটা পুরো লালচে হয়ে উঠল ধীরে ধীরে। শাকিলকে এখন সামনে পেলে বোধহয় লাশ ফেলে দিত তার।

এসব চিন্তা ভাবনার মাঝেই অভ্রর সেলফোন বেজে উঠল সশব্দে। পুলিশ অফিসারের কল। দ্রুত রিসিভ করে ফোনটা কানে ধরল। বুকের ভেতরটা ভীষণভাবে কাঁপছে। অর্ঘমার হয়তো কোনো একটা খবর পাওয়া যাবে এই আশায় তার সারা শরীর কাঁপতে লাগল। ওপাশ থেকে অফিসার যা বলল তা শুনে অভ্র যেন নিজের বোধশক্তি হারিয়ে ফেলল। মলিন মুখশ্রী ক্রমশ ফ্যাকাশে হয়ে উঠতে লাগল তার। নিঃশব্দে ফোনের লাইন কেটে স্তব্ধ হয়ে বসে রইল কিছু সময়। চোখ ভরতি জল। নীরদের রক্তিম মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“হসপিটালে যেতে হবে আমাদের।”
সবার আতঙ্কিত চোখ এখন অভ্রর দিকে। কান্নাটা গিলে ফেলে অভ্র ভাঙা গলায় বলল,
-“অফিসার কল করেছিল। আমাদের হসপিটালে যেতে বলেছে। চলো।”
-“অর্ঘমাকে পাওয়া গেছে?”
শান্তস্বরে প্রশ্ন নীরদের। অভ্র তাকাল তার দিকে। নীরদের মন পড়ার ক্ষমতা তার নেই। অর্ঘমাকে নীরদ ঠিক কতটা চোখে হারায় সেটা তার অজানা নয়। মেয়েটা নিখোঁজ শুনে সবথেকে বেশি ভেঙে পড়েছে এই নীরদই। কিন্তু তার গলার স্বর এখনো এত বেশি শান্ত দেখে অভ্রর বুঝতে বাকি রইল না নীরদ কিছু একটা আন্দাজ করে ফেলেছে। নীরদের প্রশ্নের উত্তরে অভ্র কেবল মাথা নাড়াল। বাসার সকলকে জানিয়ে সবাই মিলে হসপিটালের উদ্দেশ্য বের হলো। সবারই মনের ভেতরটা খচখচ করছে। কোনো দুঃসংবাদ শুনতে হবে না তো? হসপিটালে কেন যেতে বলল অফিসার? অর্ঘমা ঠিক আছে তো?
___
হসপিটালের করিডোরে এতগুলো মানুষকে একসাথে দেখে সবাই ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে। ডাক্তার এত মানুষ দেখে অফিসারের দিকে তাকালেন। চোখের চশমাটা ঠিক করে মলিন মুখে বললেন,
-“পেশেন্টের পরিবারের যেকোন দু’জন আসুন আমার সাথে।”
নীরদ আগেই এগিয়ে গেল। তা দেখে অভ্রও গেল তার পেছনে। বাকিরা অপেক্ষায় রইল তাদের। ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে অভ্র, নীরদ আর অফিসার পাশাপাশি বসলেন। ডাক্তার নিজের চেয়ারে বসে আগে পানি পান করলেন। তার জন্যও বিষয়টা বলা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রতি মাসে নাহলেও এমন একটা না একটা কেস আসেই হসপিটালে। নীরদ সবকিছু শুনতে প্রস্তুত এমন একটা দৃষ্টি ডাক্তারের দিকে নিক্ষেপ করে বসে আছে। প্রথমে অফিসার বললেন,
-“অর্ঘমাকে আমরা নিস্তেজ ভাবে ওর ভার্সিটির সামনের রাস্তায় পেয়েছি।”
নীরদ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বসল। তার ভেতরের শক্তি হুট করে যেন ফুরিয়ে আসতে লাগল। জিহ্ব দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে নিল। হাত-পা কেমন যেন ঠান্ডা হয়ে আসছে। ডাক্তার এবার অত্যন্ত আফসোসের সুরে বললেন,
-“রেপ কেস। পেশেন্টকে গত তিনদিন কন্টিনিউয়াসলি টর্চার করা হয়েছে। কাজটা একজনের না। বেশ কয়েকজন মিলে করেছে। সারা শরীরে অসংখ্য দাগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জ্বলন্ত সিগারেট নেভানোর দাগও রয়েছে। ফিজিক্যালি এন্ড মেন্টালি দুইভাবেই পেশেন্টকে প্রচুর টর্চার করা হয়েছে। পালস রেট খুবই স্লো চলছে। তাকে আইসিইউতে চিকিৎসায় রাখা হয়েছে। আমরা শিওর ভাবে কিছুই বলতে পারছি না। পেশেন্ট যদি নিজে থেকে রেসপন্স না করে তাহলে আমাদের হাতে নেই কিছুই।”
ডাক্তারের কথা শেষ হতেই অভ্র ও নীরদ পাথরের মতো বসে রইল। কিছুক্ষণ বাদে নীরদ উঠে দাঁড়াল। বিনাবাক্যে চলে গেল কেবিন থেকে। বাইরে আসা মাত্রই পরিবারের সকলে প্রশ্ন শুনে তাদের দিকে একবার তাকিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল হসপিটাল থেকে। কেউ আটকাতে পারল না তাকে।
___
বাসায় এসে রুমের দরজা লাগিয়ে বিছানার পাশ ঘেঁষে ফ্লোরে বসে পড়ল নীরদ। দু’হাত হাঁটুর ওপরে রেখে চুপচাপ বসে রইল। পার হলো কিছু সময়। নীরদের চোখ বেয়ে একফোঁটা, দু’ফোঁটা করে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল নিঃশব্দে। একটা সময় এসে আর চুপ থাকতে পারল না। মাথার চুল খামচে ধরে চিৎকার করে কেঁদে উঠল। অর্ঘমার এমন অবস্থা মেনে নেওয়া তার কাছে মৃত্যুসম। বারবার তার মনে একটা কথাই আসছে—সে পারেনি অর্ঘমাকে রক্ষা করতে, পারেনি অর্ঘমার খেয়াল রাখতে। সে একজন ব্যর্থ প্রেমিক। তার জন্যই আজ অর্ঘমার এই অবস্থা। সে যদি অর্ঘমাকে একা আসতে না বলতো তাহলে হয়তো এমন কিছুই হতো না।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে