#কাঠগোলের_মোহে🌼
#মোনামী শেখ
#part:____5
আজ এই এলিয়েনটাকে মজা দেখাবো।খালামনির কানে আমার নামে বিষ ঢেলে এখন শান্তিতে ঘুমোচ্ছিস??দ্বারা তোর ঘুমের ১২ টা ৫০ বাজাবো হুহ।
এসব বলতে বলতে নিজের রুমে চলে গেলাম।
বৃষ্টিতে ভিজবার কারণে খালামনি আজ আমায় ইচ্ছে মতো বকেছে।প্রণয় ভাইয়া আমার নামে খালামনিকে বিচার দিয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজেছি জন্য। আর খালামনিও আমার কান ধরিয়ে রেখে ইচ্ছে মতো বকেছে।
যার কারণে মাথায় আমার নিভৃত আগুন জ্বলছে।রাগ টাকে সামলানোটা বড় দায় হয়ে পড়েছে।
আমি সহজে যেমন রাগি না।তেমনি রাগলেও সহজে সেই রাগ কমে না।এটাই আমি।তাই ঠিক করেছি আজ প্রণয় ভাইয়াকে জব্দ করবোই।
প্রণয় ভাইয়ার ঘরে একবার উঁকি দিয়ে দেখে এসেছি।
তিনি শান্তির ঘুম ঘুমোচ্ছেন। যেটা দেখে আমার মাথায় আরো একধাপ বেশি রাগ ও জেদের সৃষ্টি হলো।
এখন রাত ১২ঃ৩০ বাজে __ ঘরে পায়চারি করছিলাম আর মনে মনে এসব ভাবছিলাম। হঠাৎ মাথায় একটা জব্বার আইডিয়া এলো।পৈশাচিক হাসি দিলাম।
ড্রেসিংটেবিল থেকে লিপস্টিক ও আইসেডো টা নিলাম।
তারপর আস্তে আস্তে প্রণয় ভাইয়ার রুমের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।
প্রণয় ভাইয়ার রুমের দরজার সামনে আসতে পা দুটো কাঁপা কাঁপি শুরু করে দিলো। তবুও নিজেকে সামলে দরজাটা হালকা খুলে নিস্বশব্দে রুমে প্রবেশ করলাম।
এবার গুটিগুটি পায়ে প্রণয় ভাইয়ার খাটের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। আস্তে করে ফ্লোরে হাটু গেরে বসলাম।
প্রণয় ভাইয়া উপুর হয়ে মুখটা ডান কাত করে শুয়ে আছে। আমি খুব সাবধানে লিপস্টিকের ঢাকনাটা খুলে হাত বাড়িয়ে প্রণয় ভাইয়া ঠোঁটের কাছে ধরলাম।হাতটা থরথর করে কাঁপছে। তবুও থামলাম না। লিপিস্টিকটা আস্তে আস্তে প্রণয় ভাইয়ার ঠোঁটে ছোঁয়াতে লাগলাম।
প্রণয় ভাইয়া হালকা নড়ে উঠলো।তা দেখে আমার আত্মাটা কেঁপে উঠল। যদি জেগে উঠে তাহলে আর আমার রক্ষে নেই। আমি নিশ্চিত!! তাই আস্তে করে প্রণয় ভাইয়ার খাটের তলায় ধুকে পড়লাম। কিছুক্ষণ পড় খাটের তলা থেকে বেড়িয়ে প্রণয় ভাইয়ার দিকে তাকালাম। নাহ তিনি এখনো বেঘোরে ঘুমোচ্ছেন।
এবার আইসেডো টা তার চোখে মুখে দিয়ে দিতে লাগলাম। নির্বিঘ্নে কাজটা সম্পন্ন করলাম।
কাজ শেষে প্রণয় ভাইয়ার দিকে একবার তাকালাম।পেট ফেটে হাসি বেরিয়ে আসতে চাইছে। মুখ টিপে নিজের হাসি থামাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এরপর ফোনে প্রণয় ভাইয়ার কয়েকটা ছবি তুলেই আমি ভাগালটু।
রুমে এসেই হাসতে শুরু করলাম।হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হওয়ার উপক্রম।সাথে উরাধুরা ডান্স ও করলাম।
মনটা আমার এখন শান্ত অনুভব করছে।আর রাগ নেই।
সব রাগ হাসির ছলে ফুসসস করে হাওয়া হয়ে গেছো!!
জানি সকালে উঠে প্রণয় ভাইয়া লঙ্কাকান্ড বাজিয়ে দেবে।বাট সেটা কালকের ব্যাপার সেহেতু কাল দেখা যাবে। আমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকাল ৮টা আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠলাম। পুরো শরীরটা ম্যাজ ম্যাজ করছে।জ্বর আসার সব লক্ষন ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে আমার শরীরে তা আমি খুব ভালো ভাবেই অনুভব করছি। কাল বৃষ্টিতে ভেজার ফল সরূপ এগুলো ঘটছে।
বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে গেলাম।ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে সোজা ব্যালকানিতে গেলাম।
আজ আকাশের বুক জুড়ে সাদা মেঘের ভেলা ভাসছে।
রোদের ঝিলিক এসে পড়ছে সবুজ গাছপালার উপর।ক্ষনে ক্ষনে দমকা হাওয়া এসে নাড়িয়ে যাচ্ছে গাছের পাতাগুলোকে।সাথে আমার এলোমেলো চুল গুলোও বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে আপন মনে উড়ছে।
খুব করে প্রকৃতির এই দৃশ্য আমি উপভোগ করছি। হঠাৎ নিচ থেকে চিল্লাচিল্লি আওয়াজ আমার কানে এলো।তার তারাহুরো করে নিচে গেলাম।
নিচে গিয়ে দেখলাম। প্রণয় ভাইয়া চিৎকার করছেন আর বলছেন__ কার এতো বড়ো সাহস আমার মুখের এই অবস্থা করছে।এসব থার্ডক্লাস জিনিস আমার মুখে মাখিয়ে জোকার বানিয়ে দিয়েছে।এক্ষনি তাকে আমার সামনে নিয়ে এসো…ফাস্ট।
প্রণয় ভাইয়ার এমন কথায় একটা শুকনো ধোক গিললাম। সকালে উঠে আমার এই ব্যাপারটা মাথাই ছিলোনা।
সামনেই খালামনি কাচুমাচু মুখ নিয়ে প্রণয় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন।ছোট আব্বু মুখ টিপে হাসছেন ক্ষনে ক্ষনে।আর শাপলা ভিত চোখ নিয়ে প্রণয় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।আর আমি সবার মুখ গুলো পরিদর্শন করছি।
হঠাৎ চোখ পড়লো প্রণয় ভাইয়া দিকে।তিনি রক্তচক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ফোঁস ফোঁস করছে। বুকটা ধক করে উঠলো। সাথে সাথে অটোমেটিকলি আমার হাত পা কাঁপা কাঁপি শুরু করে দিলো।
তুই এসব করেছিস তাইনা অয়ত্রি? রাগি গলায় বললো প্রণয় ভাইয়া।
না না ভাইয়া আমি কেন এসব করতে যাবো বলোতো??
আমার কি খেয়েদেয়ে কাম নেই যে এই কাজ করতে যাবো।ভীত কন্ঠে বললাম আমি।
এই বাড়িতে লিপিস্টিক কে ইউস করে??? মা তুমি কি লিপস্টিক ইউস করো.?
না না বাবা কি বলিস এসব!! আমি এই বয়সে এসে লিপস্টিক ইউস করবো?? বললো খালামনি।
শাপলা তুই কি লিপস্টিক ইউস করিস??
না না ভাইজান।আমি তো এইখানে থাকি ওই না।লিপস্টিক তো আমার বাড়িতে আছে।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জবাব দিলো শাপলা।
এবার প্রণয় ভাইয়া পুনরায় আমার দিকে তাকালো।আর বললো— অয়ত্রি তুই লিপস্টিক ইউস করিস না??
হ্যাঁ হ্যাঁ কিকি কিন্তু__ আর কিছু বলার আগেই প্রণয় ভাইয়া আমার হাতটা শক্ত করে ধরে উপরে নিয়ে যেতে লাগলো। খালামনি ছোট আব্বু শাপলা সবাই আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।।
আমি অসহায় ফেস নিয়ে পিছন ফিরে তাদের দেখছি।
প্রনয় ভাইয়া তার রুমে আমাকে নিয়ে গিয়ে ধুকে দরজাটা ঠাসস করে লাগিয়ে আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম।পিঠে খুব জোরই ব্যাথা পেয়েছি।
কিন্তু তাতে প্রণয় ভাইয়ার কিছু যায় আসেনা। তিনি এখনো রাগি দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছেন।
ভাভা ভাইয়া আপনি আমায় এ এ এখানে কেন নিয়ে এলেন আর দরজাটাই বা কেন বন্ধ করলেন।বললাম আমি।
__ সেটা একটু পড়েই বুঝতে পারবি।আমার সাথে ফাজলামো করার ফল তুই হারে হারে টের পাবি। শক্ত গলায় বললো প্রণয় ভাইয়া।
আমি কিছু করিনি ভাইয়া বিশ্বাস করো।আমি তো কাল সারা রাত ঘুমিয়ো ছিলাম।চট করে কথাটা বলে ফেললাম।
তিনি এবার আস্তে আস্তে তার মুখটা আমার মুখের দিকে এগোতে লাগলেন।
২ ইঞ্চি দূরত্ব এখন আমাদের মধ্যে।অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি।
এবার স্লো বয়েসে বললেন— কি বললি আরেক বার বল।
আমি ধোক গিলো বললাম— ভাইয়া এই শেষ বারের মতো ক্ষমা করে দাও প্লিজ।আমি জিবনেও আর এমন জঘণ্য কাজ করবোনা।প্লিজ কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে বললাম আমি!!!
সব ভুলের ক্ষমা হয়না।আমি! এই প্রণয় প্রহসন নিজের অপমান কখনো সয্য করেনা।বললেন তিনি।
কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আচমকাই আমার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো প্রণয় ভাইয়া।আমি কেঁপে উঠলাম। বাকরূদ্ধ হয়ে রইলাম।
কিছু বুঝে উঠার আগেই তিনি👇
জোরে জোড়ে আমার ঘাড়ে কামড়াতে লাগলো প্রণয় ভাইয়া।আমি ব্যাথার চোটে কেঁদেই দিলাম। প্রণয় ভাইয়াকে নিজের থেকে ছাড়ানোর জন্য অনবরত তার পিটে কিল ঘুসি মেরেই চলেছি কিন্তু সে কিছুতেই আমাকে ছাড়ছে।
এদিকে আমার জান যায় যায় অবস্থা।ঠোঁট চেপে সহ্য করছি প্রণয় ভাইয় এমন নৃশংস অত্যাচারে আমার চোখে বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু যা ব্যাথার বহিপ্রকাশ ঘটাচ্ছে।
২ মিনিট পড় প্রণয় ভাইয়া ছাড়লো আমায়।আমার শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে।
ব্যাথার চোটে পুরো দুনিয়াটা কেমন জানি বিষাদময় লাগছে।ঘারে কামড়ানো অংশ গুলো জ্বালা পোড়া করছে।
প্রণয় ভাইয়া ডোন্টকেয়ার ভাব নিয়ে সোফায় বসে আছে। আমি ঘৃণার দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছি।
আর একমুহূর্তে আমি আর তার রুমে থাকলাম না দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে ঠাসসস করে দরজা লাগিয়ে বিছানায় ঝাঁপিয়ে পড়ে কাঁদতে লাগলাম।
আজ নিজেকে খুব করে একা লাগছে। মনে পড়ছে বাবা মায়ের কথা।তারাও তো আমাকে অবহেলায় আলগোছে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো। একটুও দয়ামায়া সেদিন তাদের চোখে মুখে দেখিনি আমি।বরং শুধু হিংস্রতা দেখেছিলাম।
অতিত পুনরায় আমায় মস্তিষ্কে কালবৈশাখী ঝড় তুলছে।অতিতের কথা মনে পড়লেই নিজেকে আর সামলে রাখতে পারিনা। ওই দূর্বিষহ কষ্টময় অতিত এখনো আমার হৃদয়কে জ্বালিয়ে পুরিয়ে খাক করে দেয়।
কষ্টের একখন্ড কালো মেঘ এখনো আমার হৃদয়ের আকাশে ভেসে বেড়ায়। বাবা মায়ের অভাবটা খালামনি আর ছোট আব্বু পুষিয়ে দিয়েছে তাদের ভালোবাসা দিয়ে। কিন্তু তবুও বাবা মায়ের কথা খুব মনে পড়ে।
আমি আসলেই অভাগী।ভাগ্যটাও আমার সহায় নয়।বাবা মা ভাই বোনের ভালোবাসাটা আমার ভাগ্যে ছিলোনা!!!
বাহির থেকে নিজেকে খুব হাসি খুশি স্বাভাবিক দেখাই।
কিন্তু ভিতরের অবস্থা আমার আল্লাহ আর একমাএ আমি জানি। আর কেউ জানেনা।
👉continue👈 💯