কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-১৬

0
1864

#কাঠগোলাপের মোহে🌻
#মোনামী শেখ
#part:16

নিরাপু সহ আজ একটু বেড়িয়েছি।
অনেকদিন কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়না তাই আজ দুজনে ঘুরতে বেড়িয়েছি।

বাড়ির গাড়ি নেইনি।রিকশা করে ঘুরে বেড়াবো।ফুচকা খাবো,আইসক্রিম খাবো।ভাবতেই মনটা খুশিতে নাচতে চাইছে।

নিরাপু শাড়ি পড়েছে সাথে আমিও শাড়ি পড়েছি।
গোল্ডেন পাড়ে ব্লাক কলারের হাফসিল্ক শাড়ি সাথে স্টোনের দুল,কালো চুড়ি,চোখে কাজল,চুলগুলো পিঠ পর্যন্ত ছেড়ে দেয়া,ঠোঁটে হালকা পিংক কালারের লিববাম।ব্যাস এটুকু সাজেই আমারা দুজন কম্মিলিট।

দুজনে ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে নামছি আর টুকটাক কথা বলছি।হঠাৎ চোখ পড়লো সোফায় বসে থাকা প্রণয় ভাইয়ার উপর।তিনি কেমন যেন অদ্ভুদ ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।তার চোখে না রাগ আছে না অবকতা আছে একরাশ মুগ্ধতা।এটা বুঝতে পেরেছি।

মনে হঠাৎ একটা শয়তানি বুদ্ধির আগমন ঘটলো।মুচকি হেসে টুপ করে ডান চোখটা টিপে দিলাম
প্রণয় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে।আমার এহেন কান্ডে হচকচিয়ে উঠলেন তিনি।চোখ রাঙালেন।আমি তা দেখে
মুচকি হেঁসে একটা ফ্লাইংকিস ছুড়লাম।তিনি এবার কিছুনা না বলে হনহন করে বসা থেকে উঠে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলেন।

আমি এবার হেসেই দিলাম।মনে অনেক শান্তি পাচ্ছি।যাক এই এলিয়েনটাকে তো একটু হলেও জ্বালাতে পেরেছি।নিরাপু আমার কান্ড দেখে কেন জানি কিছু বললো না শুধু মুচকি হাসলো।আমি একটু অবাকই হলাম কিন্তু তা মুখে প্রকাশ করলাম নাহ।

বাড়ি থেকে বেড়িয়ে রাস্তার মোড়ে গিয়ে একটা রিকশা নিলাম।সাভার সৃতিসৌধ পার্কে যাবো দুজনে আজ।

৩০ মিনিট পৌছে গেলাম ওখানে।প্রথমে গেলাম নাগরদোলার কাছে।দুজনে চড়ালাম।ভয়ে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা কারণ নাগরদোলা আমাদের একবার নীচে একবার উপরে।কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে প্রতিবার ওই।নিরাপুর হাতটা শক্ত করে ধরে আছি।যেই না নাগরদোলা নিচে নামছে চোখ খিঁচে বন্ধ করছি।
কিছুক্ষণ পর নাগরদোলা থেকে নেমে সামনে এগিয়ে স্পিড বোডে চড়ালাম। আহা কি যে মজা লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না।

স্পিড বোড থেকে নেমে দুজনে পাপর নিয়ে খেতে খেতে হাঁটছি আর টুকটাক কথা বলছি।এখানে এসেই মনটা অনেক ভালো হয়ে গেলো। কত কাপল চোখের সামনে আসছে যাচ্ছে তা দেখে নিজেকে সিঙ্গেল সিঙ্গল মনে হলো।বাট এটা কোনো বিষয় না।

চোখ দিয়ে টুপটুপ করে জল পড়ে মুখ দিয়ে শোনানোর আওয়াজ বেড়োচ্ছে না চাইতেও।ফুচকায় এত পরিমাণ ঝাল নিয়েছি তা বলার মতো না।নিরাপু আমার ফুচকা খাওয়া দেখে কনফিউশনে পড়ে গেছে।কারণ আমার মতো একটা মেয়ে এত ঝাল খাচ্ছে এটা তার চিন্তার বাহিরে ছিলো।

এক বোতল পানি এক নিশ্বাসে খেয়ে ফেললাম।তবুও ঝাল কমছে না।তাই নিরাপু কে বললাম একটা আইসক্রিম আনতে।নিরাপুও ছুটে গেলো সাথ সাথ আইসক্রিম আনতে।

আইসক্রিম আমার চোখের সামনে দেখতে পেয়েই ঝট করে নিরাপুর হাত থেকে নিয়ে মুখে পুরে দিলাম।কিছুক্ষণ পর ঝালের কোনো অস্তিত্বই রইলো নাহ।

একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে মাথা তুলে উপরে তাকাতেই দেখলাম নিরাপু কোমরে হাত রেখে রাগি ফেস নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি তা দেখে মুচকি হেসে বললাম___সরি নিরাপু আর এই ভুল হবেনা।প্লিজ রাগ করিও না।

নিরাপু আমার কথা শুনে বললো__ তুই আজ যে কান্ডটা করছিস তাতে আমার বুকটা কাপছিলো।তুই এত ঝাল কবে খাওয়া শিখলি??বাড়িতে তো একটু ঝাল খেতেই হা হু শুরু করে দিস আর বাহিরে ঠিকি টেম্পু চালাস হা???এত ঝাল খাওয়া সাস্থের জন্য ক্ষতিকর বুঝেছিস???

___আপু সরি বললাম তো।আর এই কাজ করবোনা কোনো দিনও।কান ধরে ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে কথাটা বললাম আমি।

এবার আপু আমার কথায় কিছু বললো না শুধু মুচকি হাসলো।

আরো কিছুক্ষণ পার্কে থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়না হলাম।হঠাৎ আমার চোখ গেলো রাস্তার পাশে একজোড়া জুটির উপর।দুজন দুজনকে জড়িয়ে আছে।সে আর কেউ নয় আহান।আহান একটা মেয়েকে জড়িয়ে মুচকি হাসছে।যা দেখে আমার বুকটা ছেৎ করে উঠলো।

আহানের গার্লফ্রেন্ড থাকা সত্বেও সে আমার সাথে কথা বলতো।এমন ভাব করতো যেন সে আমাকে পছন্দ করতো।কিন্তু আমার ধারণা আজ ভুল প্রমাণিত হলো।নিজেকে খুব ছোট মনে হলো আমার।একজনের বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে বা মিশতে।হ্যাঁ আমি তাকে পছন্দ করি কিন্তু ভালোবাসি কিনা তা জানিনা।
তবুও আমার চোখের কোনে পানি জমে গেলো।ভিতরে কষ্ট অনুভব করছি।এতদিন ভুল করছিলাম।হে আল্লাহ আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও।মনে মনে বলেই চোখের পানিটুকু মুছলাম।

নিরা অয়ত্রি সাড়াশব্দ না পেয়ে বললো___কিরে অয়ত্রি কথা বলছিস না যে??এনমি হলে তো সারাক্ষণ বকবক করেই যাস।

__নাহ আপু কিছু হয়নি এমনিতেই।টায়ার্ড লাগছে তো তাই।মিহি গলায় জবাব দিলাম আমি।

___ এই অয়ত্রি তোর শরীর খারাপ লাগছেনা তো??একটু আগে এত ঝাল খেয়েছিস।

___ না আপু এসবের কিছুইনা।যাস্ট একটু টায়ার্ড লাগছে।এই আর কি।

___ওহ আচ্ছা।সন্দিহান কন্ঠে বললো নিরাপু।

বাড়িতে পৌঁছালাম ৩০ মিনিট পর।দরজার সামনে দাড়িয়ে কলিং বেলে চাপ দিলাম।কিছুক্ষণ পর শাপলা এসে দরজাটা খুললো।

আমি সরাসরি রুমে চলে গেলাম।রুমে গিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে পড়লাম।আমি ফ্রেশ হয়ে বেরোতেই নিরাপু ওয়াশরুমে ধুকে পড়লো।

হঠাৎ পুষির কথা মনে পড়লো।তাই ব্যালকানিতে গেলাম কিন্তু নাহ পুষি ব্যালকানিতে নেই আর ঘরেও নেই।তাহলে কোথায় গেলো পুষি??চিন্তা হচ্ছে এবার।

হঠাৎ মনে পড়লো পুষি আমার রুম ছারা একমাএ প্রণয় ভাইয়ার রুমে যায়।তাই প্রণয় ভাইয়ার রুমের দিকে গেলাম।দরজার সামনে দাড়িয়ে দরজাটা হালকা একটু ঠেলে উঁকি দিয়ে যা দেখলাম তা বলার মতো নয়??

প্রণয় ভাইয়া বিছানায় বসে পুষিকে নিজের কোলে রেখে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এটা স্বপ্ন দেখছি নাকি সত্যি তা যাচাই করতে হাতে একটা জোরে চিমটি কাটলাম।জোরে চিল্লিয়ে উঠলাম। হাতে খুব জোরে লেগেছে তার মানে সত্যি দেখছি!!!চোখ দুটো তো অটমেটিকলি বড়বড় রসগোল্লার মতো হয়ে গিয়েছে।

ঠোঁট কামড়ে হাতের চিমটি কাটা জায়গাটায় হাত বুলাচ্ছিলাম।আচমকা মাথা তুলতেই দেখলাম প্রণয় ভাইয়া আমার সামনে পকেটে দুহাত গুজে নায়ক স্টাইলে দাড়িয়ে বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে।তা দেখে শুকনো ধোক গিললাম আমি।আজও আমায় এই শয়তান পুষির জন্য শাস্তি পেতে হবে।আর এই এলিয়েনটা দেখো কিভাবে তাকিয়ে আছে হুহ।

আ-আ আসলে ভাইয়া হয়েছে কি!আজ একটু বেরিয়ে ছিলাম। আর এই সুযোগে পুষি তোমার রুমে এসে পড়েছে।সরি।প্লিজ আমায় শাস্তি দিওনা।আর কোনো দিন পুষি তোমার রুমে আসবেনা।এই আমি কথা দিচ্ছি।ভয়ে ভয়ে বললাম আমি।

__ এখন থেকে পুষি আমার রুমেই থাকবে।গম্ভীর ভাবে উওর দিলেন প্রণয় ভাইয়া।

__ তার কথায় আমি আরেক দফা অবাক হলাম।কারণ যে পুষিকে তিনি দু’চোখে সয্যই করতে পারেননা।এমন কি বাড়িতে কোনো পশু পাখি রাখা তিনি অপছন্দ করেন। সেই কিনা পুষিকে তার ঘরে রাখতে চাইছেন?

ইনি প্রণয় ভাইয়া তো???
একটু এগিয়ে গিয়ে প্রণয় ভাইয়ার সামনে দাড়ালাম।তারপর তার গালে আমার হাত রাখলাম।তিনি হয়তো কেঁপে উঠলেন।তার চুল, চোখ,মুখ,হাত দিয়ে ছুঁয়ে ছুয়ে দেখছিলাম।তার ঠোঁটে আমার হাত পড়তেই কেঁপে উঠলাম।হুশ আসতেই পিছনে ছিটকে গেলাম।এতক্ষণ তাহলে আমার হুশ ছিলো না!!
নিজের কান্ড কারখানায় নিজেই লজ্জায় মরি মরি অবস্থা!!!

ভাইয়া আমার ভুল হয়ে গেছে।আমার হুশ ছিলোনা।আমি পরিক্ষা করছিলাম তুমি আমাদের প্রণয় তো??মিহি গলায় বললাম আমি।
আমার কথায় তার মুখে ভঙ্গি একদম স্বাভাবিক রয়েছে।

তিনি এবার আমার কোমর জরিয়ে ধরে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন। আমি তাকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়েই আছি।

তিনি ফট করে আমার নাকের নিচের তিল টায় চুমু খেয়ে বললেন___ তো বল আমি কে??

__ আবব আপনি কে?আমি তা জানবো কি ককক করে??আপনি প্রণয় ভাইয়া নন তাইনা??ভয়ে ভয়ে বললাম আমি।

তিনি আবার আমার গালে একটা চুমু দিয়ে বললেন__আমিই তোর প্রণয় ভাইয়া নই।আমি তোর প্রণয়।

তার মুখটা আমার কানের কাছে নিয়ে এসে ফিসফিস করে কথাটা বললেন তিনি।আমি কেঁপে উঠছি বারবার।কেমন যেন এক অনুভূতি হচ্ছে।তার কারণ খুঁজছিনা আপাতদ… আমি তো তার কথা গুলোর উওর খুজতে মত্ত!!!

__আপনি কি সত্যি প্রণয় ভাইয়া নন??কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে বললাম আমি।

___ তিনি এবার আমার কপালে চুমু দিয়ে একগাল হেসে বললো তোমার এখন এসব নিয়ে ভাবা লাগবেনা।কদিন পরেই সব বুঝতে পারবে।তিনি আমার নাকে তার নাক ষসতে ঘসতে বললেন।

__ছেরেদিন আমায়।ঘরে যাবো।বললাম আমি।তিনি আমায় ছেরে দিলেন।

আমি পেছন ঘুরে নিজের রুমের দিকে পা বাড়াতেই তিনি আমার হাত টেনে পেছন থেকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে আমার কাঁপালে চুমু দিয়ে বললেন__এখন যাও!!আমি হতভম্ভ হয়ে নিজের রুমে গেলাম।আমি এখনো শকে আছি।

হার্ডবিড দ্রুত চলাচল করছে।মাথা ভনভন করছে।দরজার সামনে আসতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলাম।

ওমা গোওওও কোমর টা বুঝি গেলরে গেলো।মেঝেতে বসে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো শাপলা।
আমার এবার হুশ ফিরলো।ইশশশ কি হচ্ছে এসব আমার সাথে আল্লাহ প্লিজ বলো???!!!
________________________________

এদিকে ইভানি হাসপাতালে বেডে শুয়ে আছে।তার পাশে কান্নারত অবস্থায় বসে আছে তার মা।
ইভানি শুধু প্রণয় প্রণয় করছে।ডাক্তার নার্স ও তার এই কান্ড দেখে অবাক +বিরক্ত!!কেউ কেউ বলছেন ইভানি ম্যাডাম সত্যিই খুব ভালোবেসে ফেলেছেন প্রণয় স্যার কে।

👉সরি গাইস গল্পটা রিচেই করিনি…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে