কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-১৪

0
1885

#কাঠগোলাপের_মোহে🌻
#মোনামী_শেখ
#part:_____14

পেছন থেকে প্রণয় ভাইয়া আমার হাতটা মুছরে ধরেছেন।ব্যাথায় ঠোঁট কামড়ে চোখের জল ফেলছি।কিন্তু তার এতে কিছুই যায় আসেনা।তার তো এখন আমার উপর রাগ মেটানোর পালা।এবার প্রণয় ভাইয়া আমার হাতটা মুছরে দিলেন।আমি গগনবিদারী এক চিৎকার দিলাম।

চিৎকার দিয়ে উঠে বসলাম।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।গলা শুকিয়ে কাট হয়ে গেছে।বুকটা দুরুদুরু করছে।চারিপাশে চোখ বুলিয়ে বুঝলাম আমি স্বপ্ন দেখছিলাম এতক্ষণ।
কয়েকটা বড়বড় নিশ্বাস নিয়ে
নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম।বেডসাইডের পাশে টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে সবটুকু পানি শেষ করলাম।এখন একটু বেটার ফিল করছি।
এই খাটাশটা এখন ঘুমেও আমায় টর্চার করে।ইশশ মনে হয় কপালে শনি আছে।

নিরাপু বাইরে গেছে হয়তো।আর রুমটাও সাউন্ড প্রুভ তাই কেউ চিৎকার শুনতে পায়নি।বিকেলের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সন্ধ্যা ছয়টা বাজে।তাই ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকলাম।

ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে নিচে গেলান।নিচে ডয়িংরুমে প্রণয় ভাইয়া আর নিরাপু বসে কথা বলছে।নিরাপু আমাকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি দিলো।আর প্রণয় ভাইয়া আমাকে এক পলক দেখে চোখ নামিয়ে পুনরায় নিরাপুর সাথে কথা বলতে লাগলো।

আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে ফ্রিজ থেকে দুই বের করে কিছুটা বাটিতে নিয়ে বাকিটা ফ্রিজে ঢুকিয়ে ডয়িংরুমের দিকে গেলাম।

আমি গিয়ে নিরাপুর পাশে বসলাম। নিরাপু আর প্রণয় ভাইয়া নিজেদের মতো কথা বলেই চলেছে।হয়তো ইনর্পটেন্ট কিছু।যেহেতু প্রণয় ভাইয়া একজন ডক্টর আর নিরাপু ও ডাক্তারি পড়ছে।

আমি টিভি চালু করে মাছরাঙা চ্যানেলে দিয়ে মটুপাতলু দেখছি আর দুই খাচ্ছি। হঠাৎ মটুপাতলুর হাসির কিছু সিন দেখে গলা ফাটিয়ে হাসতে লাগলাম।আর সোফায় গড়াগড়ি খাচ্ছিলাম।
বিকজ এমন হাসির সিন দেখে নিজেকে আটকাতে পারিনি।আর আমার ক্রাশ পাতলু।পাতলুকে আমার খুব পছন্দ কারণ পাতলুর মাথায় অলটাইম বুদ্ধির বাতি জ্বলতে থাকে।চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা যেটা আমার খুবই পছন্দ।আর মুটুর শুধু খাই খাই সেটা বিরক্ত লাগে আমার।

হাসতে হাসতে হঠাৎ চোখ যায় নিরাপু আর প্রণয় ভাইয়ার দিকে।তারা চোখ ছোটছোট করে আমার দিকে চেয়ে আছে।মুখে তাদের বিষ্ময়।আমি তাদের এই অবস্থা দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম।এতক্ষণে মনে পড়ল আমি কি কন্ডটাই না করছিলাম।

চপাত করে টিভি বন্ধ করে দৌড়ে রুমে চলে গেলাম।

রুমে এসে বিছানায় সটান দিয়ে শুয়ে পড়লাম।লজ্জা করছে ভিষন না জানি আপু আর প্রণয় ভাইয়া কি ভাবছে আমাকে নিয়ে।

রাতে সবাই খেতে বসেছি।আমি নিজের মতো করে মাথা নিচু করে খেয়ে যাচ্ছি।হঠাৎ মনে হলে কে যেন আমার পায়ে স্লাইড করছে।আর বার বার কেঁপে উঠছি।সাথে রাগও হচ্ছে।সবার মুখের দিকে দেখলাম নাহ কারো মুখ দেখে সন্দেহ করার উপায় নেই।তবে??

আমার সামনা সামনি প্রণয় ভাইয়া বসেছেন।কিন্তু তিনি কি এমনটা করতে পারেন কি??এটাই ভাবাচ্ছে আমায়।
আবার পায়ে কেউ স্লাইড করতে লাগলো।এবার সয্য করতে না পেরে খাবার টেবিলে থেকে উঠে গেলাম।খালামনিকে বললাম আমার খাওয়া হয়ে গেছে।তাই তিনি আর কিছু বলেননি।

ব্যালকানিতে চেয়ারে বসে আছি।তখনকার বিষয়টা ভাবাচ্ছে আমায়।কিন্তু এর সমাধান কিছুতেই পেলামনা।তাই ওটা নিয়ে আর মাথা ঘামালাম নাহ।

আকাশটা আজ বড্ড মেঘ করেছে।সঙ্গে বাতাস ও বইছে।যেহেতু বর্ষাকালের শুরু তো বৃষ্টি হবেই।আমার তো বৃষ্টি ভালোলাগে।তাই এইরকম আবহাওয়া আমার খুব প্রিয়।চেয়ার থেকে উঠে ব্যালকানির লাইট অফ করে দিয়ে একটু এগিয়ে দুহাতে গিরিল মুঠোবন্দি করে আকাশের দিকে চেয়ে আছি।এরিমধ্যে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়তে শুরু করে দিয়েছে।বাতাসের ঝাপটায় সেই বৃষ্টির ফোয়ারা গুলো মুখে এসে পড়ছে।আমি আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম।অনুভব করছি চারিপাশের সবকিছু।

অতিতের সেই বিষাক্ত স্মৃতি আমাকে জোরপূর্বক হাতটেনে অতীতে নিয়ে গেলো।চোখে ভেসে উঠলো এক
ভয়ঙ্কর ঘটনা।ক্লাস নাইনে সবে উঠেছি।কিশোরী ভাবটা শরীর মন দুটোতেই বিরাজ করতে শুরু করেছে।অবুঝ মনটা যেন বুঝের পথে একপা একপা করে এগোতে লাগলো। সাথে সাথে কষ্টগুলোও দ্বিগুণ ভাবে চারা দিয়ে উঠলো আমার মনে। সেদিন ছিলো শুক্রবার। বাথরুমে নিজের কাপড়গুলো ধুচ্ছিলাম।তখনি বাইরে থেকে মায়ের কর্কশ কন্ঠ ভেসে আসলো আমার কানে তাই দৌড়ে মায়ে কাছে গেলাম।

মায়ের কাছে যেতেই তিনি বললেন__ তোকে আজ দেখতে আসবে।এই নে ধরে এই শাড়িটা পড়ে সেজেগুজে পাত্রপক্ষের সামনে আসবি। বুঝেছিস।

আমি সেদিন অনেকটাই অবাক হয়েছিলাম।কারণ সবে আমি ক্লাস নাইনে উঠেছি।বয়স ১৫ কি ১৬ হবে।আর আমার বড় আপু এবার এসএসসি পরিক্ষ দিয়ে কলেজে উঠেছে।আপুকে বিয়ের দেয়ার কথা মা বাবা কারো মুখে শুনিনি এখন পর্যন্ত।কিন্তু আমার!!!”

আর কিছু ভাবতে পারলাম না তার আগেই মা বলে উঠলো___ কিরে কথা কানে যায়নি??যা রুমে যা।

আমি আর কথা না বাড়িয়ে রুমে গেলাম।বাকি কাপড় গুলো ধুয়ে ছাদে মেলে দিতে গেলাম।

সেজেগুজে পাত্রপক্ষের সামনে বসে আছি।মুখ জুড়ে আমার বিরক্তর ছাপ।সামনে একজন বয়ষ্ক মহিলা তার সাথে একজন পুরুষ বসে আছেন।তাকে অবশ্য ছেলে বলা চলেনা।বয়স মনে হয় একটু বেশিই।

মহিলাটি আমাকে নানা ধরনের প্রশ্ন করছেন।হটাচ্ছেন।চুল দেখছেন।পরে তিনি বললেন___ বাবা নয়ন এই মেয়ে তো আগের বউয়ের চেয়ে হাজার গুণে সুন্দরী আমার তো মনে ধরেছে।তুই কি বলিস নয়ন??

আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হলো।
এই ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিতে চাচ্ছে মা বাবা!!!
যার কিনা আগেও একবার বিয়ে হয়েছে।বাবা,মার কি সামান্যতম মায়াটুকু কি আমার উপড় নেই।আমি এতটাই খারাপ।বোঝা হয়ে গেছি আমি বাবা মায়ের কাছে!!!মনে হাজারো পশ্ন,কষ্ট থাকলেও তা আমি কারো সামনে প্রকাশ করতে পারিনা।

ছলছল চোখে মায়ের দিকে তাকালাম।মায়ের চোখ খুশিতে চিকচিক করছে।হয়তো তিনি ভাবছেন এবার তার ঘার থেকে বোঝাটা নামবে।

রুমে শুয়ে কাঁদছি আর ভাবছি আমার ভাগ্যের পরিহাস।সবাই সবার মায়ের ভালোবাসা পেয়েছি এমনি কি আমার সামনেই আমার বড় বোন ভাইয়া তাদের কত আদর করে মা।কিন্তু আমি মায়ের ভালোবাসা বলতেই কিছু পাইনি।কোনোদিন আলতো করে মাথায় হাতটুকুও বুলিয়ে দেয়নি আমার মা।

তখনি হন্তদন্ত হয়ে রুমে ধুকলো মা।আমি চোখ মুছে শোয়া থেকে উঠে বসলাম।

পাত্রপক্ষ তোকে পছন্দ করেছে।কালকেই তোর বিয়ে।
বললেন মা।

কিন্তু মা আমি এই বিয়ে করতে পারবোনা।আমার এখনো বিয়ের বয়স হয়নি।আর ছেলের আগেও একটা বিয়ে হয়েছিলো।আমি ওই রকম ছেলেকে কিছুতেই বিয়ে করবোনা।কাঠকাঠ গলায় বললাম আমি”!!

সাথে সাথে মা আমার চুলমুঠি নিজের হাতে জোরে মুঠো করে ধরে হুঙ্কার দিয়ে বললো___ তুই বিয়ে করবিনা তোর ঘার করবে।নবাব নন্দিনী এসেছে বিয়ে করবেনা।ওই রকম ঘরে কপাল করে সমন্ধ পাওয়া যায়।আর ইনি কিনা বলছে বিয়ে করবেনা।হাহ!

__তাহলে আপুর সাথে বিয়ে দিয়ে দাও।যেহেতু তোমার মতে এই সমন্ধটা ভালো।

___কি কি বললি ওই রকম ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিবো?কক্ষনো না। আমার মেয়ে ফেলনা নাকি??

___তাহলে মা আমি কি তোমার মেয়ে নই??আমি কি তোমার কাছে ফেলনা??

___মা এবার আমার কথায় থতমত খেয়ে গেলো।আমার চুলের মুঠি ছেরে দিয়ে হনহন করে চলে গেলো।কিন্তু যাওয়ার আগে বলে গেলো এই বিয়ে আমাকে করতেই হবে!!!

কিন্তু আমি মনে মনে সিন্ধান্ত নিয়েছি এই বিয়ে আমি কিছুতেই করবোনা।সে যাই হয়ে যাকনা কেন!!!

২ দিন পর_______

আমাকে জোর করে বউ সাজিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
চোখে পানি টলোমলো করছে।হাজারো চিন্তা মাথার ঘুরপাক খাচ্ছে।

হঠাৎ শুনতে পেলাম বর এসেছে।বর এসেছে।আমার পাশে থাকা সব মেয়ে দৌড়ে গেলো সেখানে।আমি এখন রুমে একটা বসে আছি।এবার মাথায় একটা প্লান আসলো।তাই বিছানা থেকে নেমে জানালা খুলে দিলাম এক ঝাপ।দৌড়াতে দৌড়াতে পৌঁছালাম রাস্তার পাশে একটা পুকুর পাড়ে।ভেবে নিয়েছি বর যাত্রী ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত আমি এখানেই লুকিয়ে থাকবো।

রাত ১টা বাজে আমি এখনো এখানেই দাড়িয়ে আছি।ভয় লাগছে খুব কিন্তু কিছু করার নেই।একটু পর বাড়ির উদেশ্যে পা বাড়ালাম।বুকটা ধকধক করছে।পা দুটো থরথর করে কাঁপছে। বাড়িতে গেলেই আবার একটা ঝড় বয়ে যাবে আমার উপর তা আমি ভালো করেই জানি।

বাড়িতে পৌঁছাতেই মা তেড়ে আসলো আমার উপর।চুলের মুঠি ধরে খুন্তি দিয়ে একের পর এক ঘা দিয়ে যাচ্ছে আমার পিঠে। পিঠ দিয়ে রক্ত ঝড়ছে তা আমি ভালোকরেই অনুভব করছি।কষ্টের তারনায় চিৎকার করছি কিন্তু আমার সামনে দাড়িয়ে থাকা নিজের মানুষগুলোর এতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।বরং তারা আমার বেদনাভরা চিৎকারে মজা পাচ্ছে। তাদের হাড় জুড়চ্ছে হয়তো।বাবাও রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছে।

সেদিনের পর থেকে ১মাস বিছানায় পড়ে ছিলাম।বিছানায় পড়েছিলাম বললে ভুল হবে।কিছুটা সুস্থ হলেই বাড়ির সব কাজ আমায় দিয়ে করিয়ে নিতো মা।ফের অসুস্থ হয়ে পড়তাম।

অতিত থেকে ফিরে এলাম।

চোখ বুঝে এসব ভাবছিলাম কিন্তু চোখের কোণ বেয়ে জল পড়ছে ঠিকই।তখনি ঘাড়ে কারো হাতের স্পর্ষ পেয়ে চমকে উঠলাম।চোখের পানি মুছে পিছন ঘুরে দেখলাম নিরাপু। ব্যালকানির লাইট জ্বলছে।

নিরাপু কে দেখে মলিন হাসলাম।নিরাপু আমাকে পর্যবেক্ষন করছে।হয়তো কিছুর আছে পেয়েছে।

__কিরে অয়ত্রি এখানে কি করছিস?

___না আপু এনমিতেই দাড়িয়ে ছিলাম।

__তোর চোখ গুলো লাল কেন?? কাঁদছিলি নাকি তুই??

___ না আপু।আমার না খুব ঘুম পাচ্ছে চলো ঘুমি পড়ি হাই তোলার ভান করে বললাম।

___নিরাপু আর কিছু বললো না।আমি নিরাপুর হাত ধরে রুমে গেলাম।

👉to be continue…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে