কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-০৭

0
2056

#কাঠগোলাপের_মোহে🌼
#মোনামী_শেখ
#part____7

কি আছে তোমার মাঝে?!যা আমাকে চুম্বকের মতো টানে তোমার কাছে।না চাইতেও তোমার কথা বারবার মনে পড়ে।কি আছে তোমার ঐ চোখে যা আমায় তার নেশায় মত্ত করতে চায়।একটা ছবি হাতে নিয়ে একদৃষ্টিতে চেয়ে কথাগুলো বলছে প্রণয়।হুটহাঠ কিছু মনে পড়াতে মুচকি মুচকি হাসছে প্রণয়।এবার সে নিজের আচরণে নিজেই অবাক!!!

🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁
বিকেল ৫টা________

ছাদের কর্ণিশ ঘেশে গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছি।আজকে প্রকৃতির এমন রূপ দেখে আশচার্য আমি।
আকাশের রং আজ ধূসরলাল আভায় ছেয়ে গেছে।
একঝাঁক পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে মুক্ত আকাশে।সাথে কয়েকটা ঘুড়িও উড়েছে।রঙবেরঙে ঘুড়িগুলো আকাশকে ছোঁয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করছে।যদিও সেটা অসম্ভব।হঠাৎ হঠাৎ দমকা হাওয়া এসে দোল দিয়ে যাচ্ছে গাছপালা ও মেলে দেয়া আধভেজা কাপড় গুলোকে।

ছাদের মধ্যে জমায়েত কিছু কিছু ফুলের টবে দু একটা করে ফুল বিদ্যামান।সেগুলো তো হেসে হেসে দোল খাচ্ছে হাওয়ার স্পর্শে… পূতলিকা,রেইনলিলি,মাসরোজ নাইটকুইন,নয়নতারা,গোলাপ,বেলি,অপরাজিতা,
বেবিটিয়ার্স,ইঞ্চিপ্লান্ট এইসব ফুলের গাছ আছে এই ছাদে। বেশির ভাগ সব গাছ আমি লাগিয়েছি।তাই এই গাছগুলোকে আমি খুবই ভালোবাসি আর যত্নও করি।কিন্তু এ কদিন গাছগুলোর যত্ন ঠিক ভাবে নিতে পারিনি। কিন্তু এখন নিবো।
গাছগুলোকে খুব মনে দিয়ে পর্যবেক্ষন করছি আমি।
কিছু একটা মনে হতেই গোলাপ গাছের কাছে গিয়ে একটা লাল গোলাপ ছিড়লাম।আর খোঁপায় গুজে নিলাম। সাথে কয়েকটা সেলফিও তুললাম।তখনি পাশের ছাদ থেকে ডাক পড়লো অরিনের।

কিরে অয়ত্রি আজ তোকে এত খুশি দেখাচ্ছে কেন রে??ভ্রু কুঁচকে বললো অরিন।

__কারণ তোর জন্য একটা সুখবর রয়েছে তাই।এক গাল হেসে অরিনকে উদ্দেশ্য করে বললাম।

__কি খবর রে অয়ত্রি??প্রণয় ভাইয়ার ব্যাপারে নাকি???ব্যাস্ত হয়ে বললো অরিন।

__এবারো একগাল হেসে বললাম— হুম রে অরিনোকো তুই ঠিক ধরেছিস।

__প্লিজ বলনা??প্রণয় ভাইয়া কি কিছু বলেছে???আমার কথাটা বলেছিস তাকে??চোখ দুটো গোল আলুর মতো করে বললো অরিন।

__প্রণয় ভাইয়া না কাল এটুকু বলেই থামলাম।

__কিকি কি বলেছে??থামলি কেন বল প্লিজ।অধিক পরিমাণে আগ্রহ নিয়ে বললো অরিন।

__এবার যা বলতে চলেছি তাতে মনে হয় তোর ক্রাশ খাওয়া পেটটার হাওয়া ফুসসস হয়ে যাবে।মুখ টিপে হেঁসে মনে মনে কথা গুলো বললাম।

__আসলে হয়েছে কি— পুনরায় এটুকু বলেই থামলাম।

__তুই মজা না করে বলনা প্লিজ।তোকে আমি ফুচকা ট্রিট দিবো বলনা কথাটা।

প্রণয় ভাইয়া কাল রাজশাহী চলে গেছেন।ওখানে তিনি জব করবেন।মুখটা কালো করে বললাম কথাটা।আর অন্যদিকে মনে মনে হাসছি।

নাআআআআ অয়ত্রি তুই মিথ্যে বলছিস।আমার সাথে মজা করছিস তাইনা??এখনি তো বললি আমার জন্য সুখবর আছে।তাহলে???

কেনো আমার কাছে তো সুখবরি।ভাইয়া জব পেয়েছেন তাও আবার বেশ ভালো পোস্টেই।এটা তো তোর কাছে সুখবর ওই।কেন তোর কাছে এটা সুখবর না??

জব পেয়েছেন ভালো কথা।কিন্তু তা বলে তিনি রাজশাহী চলে গেলেন।এখন তো ওনাকে আর এক নজর ও দেখতে পারবোনা।কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে বললো অরিন।

ওহ তাই বুঝি?? আমি ভেবেছিলাম তুই এই খবরটা শুনে খুশি হবি।কিন্তু তুই যে প্রণয় ভাইয়ার বিরহ সয্য করতে পারবিনা তা তো আমার জানা ছিলোনা।কিছু না জানার ভান করে বললাম।

ইশ আগে তো প্রণয় ভাইয়াকে দুদিনে একদিনে দেখতে পেতাম।কিন্তু এখন তো তাও হবে না।মুখটা হুতুম পেঁচার মতো করে কথাগুলো বললো অরিন।

মন খারাপ করিসনা অরিনোকো। ভাইয়া তো আর সারা জিনবনের জন্য রাজশাহী যাননি।প্রতি মাসে বা বছরে এখানে একবার হলেও আসবে তাইনা।

হুম রে অয়ত্রি। কিন্তু আমি তো হারিয়ে ফেলাম ওনাকে।যদি ওখানে গিয়ে কোনো মেয়েকে গার্লফ্রেন্ড বা বিয়ে করে নেয় তবে???বললো অরিন।

কি আর করার। তোর ক্রাশ বাঁশে পরিণত হবে।এই আরকি। বলেই গুনগুনকরে আস্তে করে ছাদ থেকে নেমে গেলাম।অরিনের মুখটা দেখার মতো ছিলো।আমার তো পেট ফেটে হাসি বেড়িয়ে আসতে চাইছে।প্রণয় ভাইয়া যাওয়ার কথাটা অরিন প্রণয় ভাইয়ার ক্রাশ খাওয়া মেয়েদের বলে বেড়াবে। আর সবার মুখে নেমে আসবে কালো আঁধার। হিহিহিহি…

৭টা বাজে এখন….
রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলাম।

____________________________________________

প্রণয় ইতিমধ্যেই তার গন্তব্য স্থলে পৌঁছে গেছে।কাল থেকে হাসপাতালে জয়েন করবে।

রাত দশটা বাজে_____

প্রণয় ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে বিছানার উপর থেকে ফোনটা নিয়ে বাড়িতে ফোন দিলো।তার মায়ের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোনটা রেখে দিয়ে ব্যালকানিতে গেলো।

আকাশে আজ থালার ন্যায় চাঁদ উঠেছে। তার আলো ছড়াচ্ছে চারিপাশে।চাঁদের আলো গিরিল ভেদ করে কিছুআংশ প্রণয়ের মুখে এসে পড়েছে।মৃদু বাতাসে প্রণয়ের সিল্ক চুল গুলো গাছাড়া ভাব নিয়ে আপন মনেদোল খাচ্ছে। ঠোঁটের নিচের তিলটা প্রণয়ের সৌন্দর্য আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। ডাগর ডাগর চোখের পাতা গুলো মাঝে মাঝে পাখির মতো ডানা ঝাপটাচ্ছে। ফার্সা নাকটা হালকা লাল আভায় ছেয়ে গেছে।ঠোঁটের কোণে লেগে আছে মুচকি হাসি। কোনো নায়কের থেকে কম লাগছেনা প্রণয়কে।

___ এ কেমন আসক্তি যা অন্য আসক্তিকেও হার মানায় নিমিষেই।তার কথা কেন এতো মনে পড়ছে??কি এক অদ্ভুত যন্ত্রনা হচ্ছে বুকে। যার নাম আমার অজানা। কি আছে তার ঔ কাজলরাঙা চোখে?? তার চুলের মাতাল করা ঘ্রাণ জড়িয়ে গেছে আমার প্রতিটা শ্বাস প্রশ্বাসে। তার ওই কাঁপা কাঁপা ঠোঁট বুকের হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। চোখ বুঝলেই তার মুখটাই ভেসে উঠে।সয়নে স্বপ্ননে শুধুই তার আনাগোনা।কেন?? কেন এমন হচ্ছে??? কেন???!!! বলেই মাথার চুল গুলো দুহাতে মুঠোবন্দি করে টানতে লাগলো প্রণয়।

___এ নিয়ে ৩টা সিগারেট শেষ করলাম।কিন্তু কিছুতেই তার চিন্তা মাথা থেকে নামছে না।

দেয়ালে একাটা লাথি দিয়ে রুমে গেলো প্রণয়…

_______________________________________________

ইশ মাথা ঘুরছে।এত এত পড়া কিভাবে এত তাড়াতাড়ি রিভেজ দিবো। বিশেষ করে আইসিটি। এই ব্যাটাTo👉আরো বেশি কইরা গিট্টু লাগায় দিসে।কিছুতেই মাথায় ধুকতে চায়না।বুঝিনা কি এমন শত্রুতা আমার সাথে এই আইসিটির।এক শত্রু তো আল্লাহর রহমতে বিদায় হইছে।এবার এই শত্রু বিদায় হইলেই বাঁচি। পড়ার টেবিলে আইসিটি বই সামনে রেখে গালে হাত দিয়ে বললাম কথাগুলো।

নাহ আর পড়বো এখন রিলাস্কে ঘুম দিবো বলেই পড়ার টেবিল থেকে উঠে বিছানায় গিয়ে সটান দিয়ে শুয়ে পড়লাম।

আস্তে আস্তে স্বইচ্ছায় ঘুমের দেশে তলিয়ে যেতে লাগলাম।

এভাবেই কেটে গেলো কয়েকটা দিন।পরিক্ষা চলেই এলো।আর আমার লো পেশার হাই পেশার পরিণত হলো😴!!রাতে ঘুম নেই দিনে খাওয়া নেই।শুধু পড়া আর পড়াহ।ধুতেরি জিবনটাই বদনা থুক্কু বেদনা। হিহিহিহিহি🙃…

🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁

আজ পরিক্ষার প্রথম দিন।সকালে উঠে গোসল করে নামাজ পড়ে ১৫ মিনিটের মতো বাংলা সাবজেক্ট রিভেজ দিয়েছি।

আমি তো খুব এক্সসাইটেড!!বুকটা দূরদূর করছে।হাত পা গুলো মৃগি রোগটির মতো কাঁপছে থেমে থেমে।ড্রোয়িংরুমে খালামনি,ছোটআব্বু,শাপলা দাড়িয়ে আছে।ছোট আব্বু আজ অফিসে যায়নি কারণ আজ আমায় পরিক্ষার হলে তিনিই নিয়ে যাবেন।

সবাইলে বললাম আমার জন্য দোয়া করতে।সবাই একগাল হেঁসে আমার মাথা হাত বুলিয়ে দোয়া করলো।এরপর খালামনি আমায় একটা সুন্দর কলম গিফ্ট করলো।ছোট আব্বু একটা ঘড়ি আর শাপলা একটা পেন্সিল বক্স।আমি অবশ্য এতেই বেজায় খুশি!!!হঠাৎ মনে পড়ে গেলো অতিতের কিছুআংশ।

যখন আমি ক্লাস এইটের পরিক্ষা দেই তখন আমার বাবা ১০০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন।মা তো সেদিন কিছুই দেননি।না মাথায় হাতবুলিয়ে আমার জন্য দোয়া করেছিলো।আর আপু একটা ৫টাকা দামি কলম দিয়েছিলো তাও আবার মুখটা বেঁকিয়ে । আর ছোট ভাইটা আমার গালে একটা চুমু দিয়ে বলেছিলো— আপু তুমি পরিক্ষায় অনেক ভালো রেজাল্ট করবে দেখিও।আমি না আজ সকালে নামাজ পড়ে তোমার জন্য দোয়া করছি। ছোট ভাইটার কথা শুনে খুশিতে আমার চোখ দুটো ছলছল হয়ে উঠেছিলো। মনে হয়েছিলো এই একজনই আমার অতি আপন।

এসব ভাবছি তখনি কারো ডাকে ধ্যান ভাঙলো আমার।

কিরে অয়ত্রি কি ভাবছিস???কখন থেকে ডাকছি সাড়াই দিচ্ছিন না??চিন্তিত কন্ঠে বললো খালামনি।

আমি কিছু না বলতেই ছোট আব্বু বললো ___ অয়ত্রি মা এত টেনশন করার কিছু নেই।এটা যাস্ট একটা পরিক্ষা এটাকে এত সিরিয়াস ভাবে নিওনা।না হলে পরিক্ষার হলে ধুকতে না ধুতেই সব পড়া মাথা থেকে বেড়িয়ে যাবে।

আমি ছোট আব্বুর কথায় হেসে ফেললাম।আর বললাম___ না ছোট আব্বু আর টেনশন করবোনা।

তো চলো লেট হয়ে যাচ্ছে। বলেই দরজা খুলে বেড়িয়ে গেলেন তিনি।আমি খালামনির কপালে একটা চুমু দিয়ে ভোঁ দৌড়। আমার এহেন কান্ডে উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো খালামনি তা আমি শুনতে পেলাম।

পরিক্ষা শেষে অরিন আর আমি একসাথে হল থেকে বেরোলাম।

অরিনের মুখটা চুপসে রয়ে আছে। তার কারণ অবশ্য আমি জানি।

কিরে অরিনোকো তোর কি হয়েছে এভাবে মুখটা গোল টমেটোর মতো করে কেন রেখেছিস???

কিছু না।মুখটা বেঁকিয়ে বললো অরিন।

আচ্ছা চল আইসক্রিম খাবো।পরিক্ষা যেহেতু ভালো হয়েছে সেহেতু তোকে আজ আইসক্রিম ট্রিট দিবো কেমন???মুচকি হেঁসে বললা আমি।

__আচ্ছা চল। বললো অরিন।

আইসক্রিমের ভ্যানের সামনে আসতেই কে যে আমাকে পিছন থেকে ডাক দিলো।আমি পিছন ফিরে তাকাতেই
সেই মানুষটাকে দেখে আমার চোখ দুটো ছলছল হয়ে উঠলো। সাথে অনেক অবাক হয়েছি।বুকে সেই ব্যাথাটা পুনরায় জেগে উঠছে!!!

👉To be continue…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে