#কাছের_মানুষ_দূরে_থুইয়া
#পর্ব১০
#Raiha_Zubair_Ripti
রাজশাহীর ব্যাস্ত শহরে রিকশায় বসে বিরক্তিকর চাহনি নিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে তটিনী। পুরো রাস্তা জ্যামে আঁটকে আছে। বেশকিছুক্ষন বসে থাকার পর ও যখন জ্যাম ছাড়ার কোনো সম্ভাবনা দেখলো না তখন বিরক্তি নিয়ে রিকশা থেকে নেমে রিকশাওয়ালা কে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে হাঁটা ধরলো।
একে তো গরম তার উপর রিকশায় জ্যাম ছাড়ার জন্য বসে থাকলে রাগ তরতর করে আরো বেড়ে যেত। এরচেয়ে হেঁটে বাসায় গিয়ে বৈদ্যুতিক ঠান্ডা বাতাসের নিচে বসে থাকা ঢের ভালো।
তার উপর কাল থেকে রোজা। আজ একটু বেরিয়েছিল কেনাকাটা করার জন্য রোজার। বাসায় ফিরে শরীরের বোরকা টা খুলে ওয়াশরুমে ঢুকে আগে গোসল সেরে নেয়। তারপর ফ্রিজ থেকে নরমাল পানি বের করে এক গ্লাস পাতি লেবুর শরবত তৈরি করে ঢকঢক করে খেয়ে নেয়।
জোহরের আজান কানে আসতেই নামাজ পড়ে আলেয়া দের ফ্ল্যাটে চলে যায়।
আলেয়া ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিল। কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে তটিনী কে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ে। দরজা থেকে সরে তটিনী কে ভেতরে আসার জন্য জায়গা ছেড়ে দেয়। তটিনী ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে-
-“ ভুল টাইমে এসে পড়েছি কি?
আলেয়া দরজা লাগাতে লাগাতে জবাব দেয় –
-“ আরে না। আমি একটু পরই তোমার কাছে যেতে চাচ্ছিলাম। তুমি এসে ভালোই করেছো।
তটিনী সোফায় বসলো। আলেয়া কে রান্না ঘরের দিকে যেতে দেখে তটিনী বলে উঠে –
-“ কোথায় যাচ্ছ আপু?
-“ কফি নিয়ে আসি বসো।
-“ আমি খাবো না কফি। একটু আগেই ঠান্ডা শরবত খেয়ে আসছি। এখন কফি খাওয়ার মুড নেই।
-“ তাহলে কি খাবে?
-“ কিছুই না। তুমি বসো,আমি অতিথি নই যে এতো আপ্যায়ন করতে হবে।
আলেয়া মুখ ভার করে তটিনীর পাশে বসলো।
-“ কাল থেকে তো রোজা। উঠতে পারবে তো রাতে? নাকি ডেকে দিব?
-“ তুমি তো আপু রান্না করার জন্য উঠবে তাই না?
-“ হ্যাঁ,,রাতে তরকারি রান্না করে রাখবো সেহরির সময় শুধু ভাত রান্না করবো।
-“ ওহ্ আচ্ছা তখন তাহলে ডেকে দিয়ো।
-“ আচ্ছা। বাজার করা হয়েছে?
-“ সব করা হয় নি। আমি ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে কিছু নিয়ে এসেছি। উনি আসার পথে নিয়ে আসবে বাকিসব।
-“ ওহ্ আচ্ছা। তা তোমার ভার্সিটি বন্ধ দিবে কবে?
-“ জানি না,,আমি আর যাচ্ছি না এই রমজানের মধ্যে ভার্সিটি।
আলেয়া আর তটিনী বেশকিছুক্ষন গল্পগুজব করে। আছরের আজান কানে আসতেই নিজের ফ্ল্যাটে চলে যায় তটিনী।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাসফি ফিরে অফিস থেকে। হাতে তার রোজার বাজার। বাজার গুলো ফ্লোরে রেখে দরজায় কলিং বেল বাজায়। তটিনী দরজা খুলে দেয়। তাসফি একবার তটিনীর দিকে তাকিয়ে ফ্লোর থেকে বাজার গুলো হাতে নিয়ে ভেতরে ঢুকে। বাজার গুলো রান্না ঘরে রাখতে রাখতে বলে-
-“ এখনও রেগে আছো?
তটিনী কথা বললো না। পাশ কাটিয়ে রুমে চলে গেলো। তাসফি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুমে ঢুকে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।
রাতের খাবার খাওয়ার সময় তটিনী চুপচাপ নিজের মত খেয়ে দেয়ে রুমে এসে শুয়ে পড়ে। তাসফি নিরবে দেখে যায় তটিনীর কার্যকলাপ।
তটিনী চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে, ঘুমায় নি। তাসফি পাশে এসে শুতেই তটিনী উল্টোদিকে ফিরে যায়। তাসফি শোয়া থেকে উঠে বসে। তটিনীর দিকে তাকিয়ে তটিনীর বাহুতে হাত দিয়ে বলে-
-“ কথাও বলবে না? যা শাস্তি দিবে মাথা পেতে নিবো। কিন্তু তোমার এই নীরবতা সহ্য হচ্ছে না। একই সাথে দুজনে থাকছি,খাচ্ছি অথচ কথা হচ্ছে না। এটা কি মানা যায় তুমিই বলো?
তটিনী তাসফির হাতটা সরিয়ে দেয়।
-“ সেহরির সময় উঠতে হবে রান্না করারর জন্য। এখন এসব কথা বলে ঘুম নষ্ট করার কোনো মানেই দেখছি না।
-“ তোমার রান্না করা লাগবে না। আমি রাঁধবো নি। তবুও এর একটা মীমাংসা হোক।
তটিনী শোয়া থেকে উঠে বসলো। -“ কিসের মীমাংসা? পারবেন আদৌও মীমাংসা করতে? আমি এখনও স্বস্তি তে শ্বাস নিতে পারছি না। আপনারা দু’জন আমার সাথে এতো নিচু কাজ করবেন কল্পনাও করতে পারি নি।
-“ এরজন্য তো ক্ষমা চাচ্ছি রোজ।
-“ ধরুন আমি জেনেশুনে অন্যায় করলাম আর অন্যায় করার পর ক্ষমা চাইলাম আর পেয়ে গেলাম? আপনাকে আমার ক্ষমা করতে ইচ্ছে করছে না।
-“ আমি কি খুব বেশি অন্যায় করে ফেলছি? এর ক্ষমা কি পাবো না? তোমাকে পাওয়ার জন্য ই তো সব করেছি। একটু আমার ভালোবাসা টার গভীরতা টাও মেপে দেখো।
গলার স্বর নিচু করে বলে কথাটা তাসফি।
-“ এটাকে ভালোবাসা বলে না। ভালোবাসলে এমন নিম্ন কাজ করতে পারতেন না। বিয়ের আগে আমাকে বলে দিতেন।
-“ তুমি বুঝি বিয়ে করতে আমায়?
তটিনী এদিক ওদিক তাকায়। বিয়ের আগে জানলে সে কখনই বিয়ে করতো না।
-“ কি হলো চুপ কেনো? করতে আমায় বিয়ে?
-“ ব…বলেই দেখতেন।
-“ করতে না তো বিয়ে।
-“ আপনার সাথে প্যাঁচাল পারার ইচ্ছে নেই। নিজেও ঘুমান আর আমাকেও ঘুমাতে দিন।
কথাটা বলে তটিনী কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে। তাসফি তপ্ত শ্বাস ফেলে বেলকনি তে চলে যায়।
ঘন্টা খানেক বেলকনিতে একাকী কাটিয়ে তারপর নিশ্চুপে তটিণী-র পাশে এসে শুয়ে পড়ে।
রাত আড়াইটার দিকে তটিণী-র ঘুম ভেঙে যায়। মসজিদে ডাক দিচ্ছে সেহরির রান্নার জন্য। তটিনী বিছানা থেকে উঠে চুলায় ভাত বসিয়ে দিয়ে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে নেয়। তারপর ভাত হলে রাতে রান্না করে রাখা তরকারি গরম করে তাসফিকে ডাকতে যায়। তাসফি তটিনীর উঠার সময়ই জেগে গিয়েছিল কিন্তু চোখ মেলে তাকায় নি। তটিনী কাছে এসে ডাকতেই নড়েচড়ে উঠে।
-“ রোজা রাখবেন না? উঠুন।
তাসফি শোয়া থেকে উঠে বসলো। ওয়াশরুমে ঢুকে হাতমুখ ধুয়ে টেবিলে গিয়ে বসলো। তটিনী খাবার বেড়ে দিলো। তাসফও চুপচাপ খাবার খেয়ে নিলো। তটিনী নিজেও খাবার খেয়ে নিলো।
খাবার খাওয়া শেষে তটিনী এঁটো প্লেট গুলো বেসিনে নিয়ে যেতে যেতে বলল-
-“ আমি কাল বাসায় যাব। চাবি নিয়ে যাইয়েন অফিসে যাওয়ার সময়।
চকিতে ফিরে তাকায় তাসফি। বিরস মুখে বলে-
-“ আসবে না আর?
তটিনী জবাব দেয় না। আজান কানে আসতেই তাসফি মসজিদে চলে যায়।
তটিনী থালাবাসন মেজে নামাজ পড়ে নেয়।
তাসফি মসজিদ থেকে ফিরে দেখে তটিনী জানালার ধারে বসে আছে। তাসফি মাথার টুপি টা টেবিলের উপর রেখে তটিনীর সামনে দাঁড়ায়। তটিনী একবার তাকিয়ে ফের দৃষ্টি আগের জায়গায় স্থীর করে। তাসফি হাসফাস করে কিছু বলার জন্য। তটিনীর একই ভঙ্গির নীরবতা দেখে তাসফি ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে বলে-
-“ কখন যাবে? আমি কি ট্রেন অব্দি পৌঁছে দিয়ে আসবো?
-“ তার দরকার নেই।
তটিনী তাসফির দিকে না তাকিয়েই বলে।
-“ রোজা থেকে না গেলেই কি চলে না?
-“ না।
তটিনী কাটখোট্টা জবাব।
-“ ফিরবে কবে?
-“ জানি না।
-“ কি জানো তাহলে?
তটিনী রাগান্বিত হয়ে তাকালো। তাসফি সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলল-
-“ খুব কি আঘাত দিয়ে ফেলছি? কথা বলছো না ওকে ফাইন বলো না। প্লিজ দূরে গিয়ে থেকো না। ঘুম আসবে না রাতে আমার।
-“ আপনার ঘুম আসবে না তাতে আমার কি? আমার ঘুম আসলেই হলো।
-“ একটু আমার দিকটাও বুঝো।
-“ আমার এতো দিক বুঝার সময় নেই।
-“ তাহলে সত্যি যাবে?
-“ আপনার কি আমার কথা মিথ্যা মনে হচ্ছে?
তাসফি আর কথা বাড়ালো না।
তটিনী বসা থেকে উঠে কাপড়চোপড় গুছিয়ে নিলো। তাসফি সেদিকে চেয়ে রইলো।
#চলবে?