কবে হলো ভালোবাসা পর্ব-০৮

0
622

#কবে_হলো_ভালোবাসা
#তাশফিয়া_রহমান (লেখিকা)
#পর্ব :৮

(কপি করা নিষেধ)
দীবা কল্পনা করেনি এমন কথা বলবে ফাহাদ। কাপা কাপা হাতে আবার টাইপ করলো
– ফিলিংস ছিলো না তাহলে ,ভালোবাসার কথা কেনো বলেছিলেন?
ফাহাদ: সত্যি বলতে তোমার সৌন্দর্যের কারণে, তাছাড়া তোমার মতো ওল্ড কালচার বেকডেটেড মেয়ের সাথে কে রিলেশন এ জড়াতে চাইবে?

দীবা থমকে গেলো। এই মানুষটিকে এতটাই বিলিভ করেছিলো ,যে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডএর কথাও শোনেনি ।

অথচ ফাহাদ নিজেই বললো তার বহু রিলেশন ছিলো! এসব ভেবে আবার টাইপ করলো দীবা।
– বিলিভ মি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। প্লিজ এগুলো বলো না। আমি তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারবো না। তুমি আমার অভ্যাস। আমি কীভাবে বোঝাবো ,তুমি আমার উপর রাগ করে এগুলো বলছো তাই না?
ফাহাদ: রাগ ভালোবাসা কোন টায় না। আমি জাস্ট বিরক্ত হচ্ছি। আমার সাথে যোগাযোগ না রাখলে খুশি হবো।
– তুমি তো জানো সামনে আমার পরীক্ষা, দয়া করে এখন এমন করো না, আমার পরীক্ষা ভালো হবে না।
ফাহাদ: তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
দীবা আর কিছু টাইপ করতে পারলো না, কারণ আবার ব্লক দিয়ে দিয়েছে ফাহাদ।
দীবা সেদিন সারারাত কেদেছিলো । ভালোবাসার মানুষের কাছে বিরক্তিকর উপাধি পায়, যে সেই বোঝে কতটা কষ্ট হয়।

সেদিন গভীর রাতে জায়নামাজে বসে খুব কান্না করেছিলো।আর ফাহাদকে চেয়েছিলো।
পরের দিন ও তিশুকে সব জানায়।তিশুর দীবার কষ্ট সহ্য হচ্ছিলো না। তাই তিশু আবার ওর একটি আইডি খুলে ফাহাদকে নক করে।
তিশু:ফাহাদ ভাই আমি দীবার বেস্ট ফ্রেন্ড ।
ফাহাদ: ওর বিষয়ে কোন কথা যদি হয়, আমি শুনতে চাই না।
তিশু: ওকে তাহলে ঠকানোর কারণ কি?
ফাহাদ: এটাকে আদেও রিলেশন বলে, এটা ভারচুয়াল লাইফ নট রিয়েল ওকে।
তিশু: এটা যে ভারচুয়াল লাইফ ,সেটা কি দীবাকে জানিয়েছিলেন?
ফাহাদ: না জানানোর প্রয়োজন মনে হয় নি, আর তাছাড়া সে কি অবুঝ নাকি বাচ্চা, যে তাকে এসব বলে দিতে হবে। আমি জাস্ট টাইম পাস করেছি। এরকম টাইম পাস অনেক জন থাকে আমার সবসময়। কোথায় তারাতো কেউ এত বাড়াবাড়ি করে নি কখনো।

তিশু- কেনো করেনি বোঝেন না?
ফাহাদ : দেখো আমি এত কিছু বুঝতেই চাইনা। সব থেকে বড় কথা দীবার প্রতি আমার কোন ফিলিংস ছিলো না কখনো।
তিশু- তাহলে ভালোবাসেন এটা কেনো বলছিলেন?
ফাহাদ: ওর সৌন্দর্যের জন্য।
তিশু- তো এখন কি সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে?
ফাহাদ: না তবে ও আমার টাইপ না, আমার অনেক জি এফ তারা সবাই আমার একটা হাগ পাওয়ার জন্য পাগল । আর ও তার নাকি এসব পছন্দই না। কখনো কলেও কথা বলেনি।এটা কোন রিলেশন না।এসব ওল্ড কালচার আমার সাথে যায়না।
তিশু – আপনি তো ম্যাচুর সেটা আপনার আগেই বোঝা উচিত ছিল।ভাই বোঝার চেষ্টা করেন দীবা আপনার উপর ভীষণ উইক। কান্নাকাটি করেছে অনেক।
ফাহাদ: আমি ওর বিষয়ে কিছু বুঝতে চাইনা।আমার কিছু করার নেই। ও যে গায়ে পড়া আর ইর্রিটেটিং তা ব্রেক আপ না করলে জানতে পারতাম না।
তিশু- ওর সম্পর্কে ফারদার আর একটা বাজে কথা বলবেন না। আপনার ভাগ্য খারাপ তাই এত ভালোবাসা পাওয়ার পর ও হারালেন।
ফাহাদ হঠাৎ বলে উঠলো
ফাহাদ: তোমার পিপিতে এটা কি তুমি?
তিশু এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিল না। তবুও বললো
তিশু- হ্যাঁ। কেনো?
ফাহাদ: সুন্দরী আছো, তুমি চাইলে রিলেশন এ যেতে পারি। আমার আবার সৌন্দর্যের উপর ইন্টারেস্টি বেশি।
তিশুর ভীষণ রাগ উঠে গেলো তাই সাথে সাথে ব্লক দিয়ে দেয়।

এসব ঘটনা সব জানিয়ে দেয় দীবাকে। তিশু চাই ফাহাদ নামক ঐ ছেলেটির প্রতি, সকল উইকনেস কেটে যাক দীবার। এসব ফালতু ছেলের জন্য কষ্ট পাওয়ার কোন মানে হয় না। কিন্তু দীবার দুর্বলতা হলো ভালোবাসা । আর এই ভালোবাসা ঘৃণাতে পরিণত হলেই দীবা শক্ত হতে পারবে। আর ১০ দিন পর দীবার এস এস সি পরীক্ষা। কিন্তু কোন পড়াশোনা করতে পারে না। খাওয়া দাওয়া করে না ঠিক মতো। পরীক্ষার ৫ দিন আগে একদিন বাসাতেই জ্ঞান হারায়। সাথে সাথে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে গেলে ডাক্তার জানায়
প্রেশার একদম লো।

বাসা থেকে খুব বকাবকি করলেও ,দীবার থেকে কেউ জানতে পারেনি আসল কারণ, সবাই ভেবেছিলো হয়তো পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা করে এই অবস্থা।

দেখতে দেখতে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলো।
দীবা প্রথম পরীক্ষায় আধাঘণ্টা পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সার ম্যাম ও তিশু অনেক সাহায্য করে, মাথায় পানি ঢেলে, চোখে মুখে পানি দেয়, তারপর পরীক্ষা দিতে আবার বসে। আরো দু একবার মাথা ঘুরে ছিলো, কিন্তু আল্লাহ্ রহমতে মাথা ঘুরে পরে যায়নি।

এভাবেই এক মাস পরীক্ষা চললো। তবে বেশিরভাগ দিনই অসুস্থ হয়ে পরতো দীবা।
তিশু অল ওয়েজ সাপোর্ট করেছিলো।

রেজাল্ট এ+ হলেও গোল্ডেন হয়নি। এত ভালো পড়াশোনায়, আর তার আশানুরূপ রেজাল্ট না হওয়ায় আরো ভেঙে পড়ে দীবা।
একদিন কি মনে করে দীবা তার মায়ের আইডি দিয়ে ফাহাদ এর আইডিতে যায়। ফাহাদ এর ডে দেখে ভীষণরকম রাগ উঠে যায় এত খারাপ। একটি মেয়েকে কিস করছে গালে,সেটা আবার ডে দিয়েছে। ফেসবুকে বিভিন্ন কমেন্ট এ কিছু মেয়েদের সাথে জঘন্য ভাষায় কথা বলেছে।ছি :ভাবতেই দীবার ভীষণ রাগ হয়। সেদিন রাতে ও দীবা জায়নামাজ এ কেদেছিলো তবে সেটা ফাহাদকে ভুলে যাবার জন্য।

__________________
বর্তমান

দীবার চোখ ভরে পানি পড়ছে। দিবস এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবছে
“কেউ কাউকে এত ভালোবাসতে ও পারে “!
দীবা চোখ মুছে বললো
-এত ভালোবাসার পর ও সে ভাগ্যে ছিলো না। আমার ভালোবাসা কখনো বোঝেনি।
দিবস দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
দিবস:তুমি ভালোবেসেও সে তোমার ভাগ্যে ছিল না। কথাটা এমন না হয়ে এত ভালোবাসা পেয়েও সে তোমাকে হারিয়েছে কথাটা এমন হওয়া উচিত।

-আমার এসব কথা শুনে আপনার মনে হচ্ছে এটি নেহাতই একটা পাগলামী তাইনা?
দিবস মৃদু হাসলো, হেসে বললো
দিবস: উহুম, তুমি তাহলে দিবসকে এখনো চিনতে পারো নাই?
দীবা বুঝতে না পেরে বললো
– মানে?
দিবস: তোমার কথা গুলো শুনে, আমার মনে হলো কোন সত্যিকারের লাভ স্টোরি শুনলাম। এরকম ভালোবাসা ভুল মানুষ এর জন্য বাসলেও ,এটা তোমার জন্য একটা শিক্ষা ছিলো। আর একটা জিনিস কি যখন কেউ তোমাকে ছেড়ে চলে যায়, তখন পরবর্তীতে তোমার জীবনে তার থেকে উওম মানুষ আসবে এটা জেনে রাখো । জাস্ট অপেক্ষা করতে হবে।

দীবা অবাক হয়ে দেখছে ,এই মানুষটি এত বড় সেলিব্রেটি! সব দিক দিয়ে অলরাউন্ডার ,অথচ এক বিন্দু অহংকার নেই।
শুধু ফ্ল্যার্ট ছাড়া অনেক ভালো একজন মনমানসিকতার মানুষ।
দিবস দীবার মন ভালো করার জন্য মজা করে বললো দিবস:আই নো আম হ্যান্ডসাম তাই বলে এইভাবে চোখ দিয়ে খেয়ে নিবা।
দীবা দিবস এর কথায় ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এসে বললো
– আবার শুরু হয়ে গেলো। আর চোখ দিয়ে আবার খায় কীভাবে?
দিবস: তোমার এই ছোট মাথায় এসব ঢুকবে না।
– আসছে আপনার মাথা মনে হয় অনেক বড়!
দিবস মাথা এগিয়ে দেখাতে যেতেই ,দীবা দিবস এর চুল গুলো খামচে ধরলো।
দিবস: আরে দীবানিশি মাথা দেখতে বলেছি, আমার সেট করা চুল খামচে ধরতে বলেনি। ছাড়ো ব্যাথা পায় তো।
দীবা ছেড়ে দিতেই দিবসের ফোন বেজে উঠলো
ফোন হাতে নিয়ে দিবস দীবার দিকে তাকিয়ে, মনে মনে হেসে ফোন রিসিভ করেই বললো
দিবস: বকো।
দীবা অবাক হয়ে গেলো! দিবস এর কথা শেষ হলেই দীবা বলে উঠলো
– ফোন ধরে আমার জানামতে আমরা সবাই হ্যালো বলি। বকো তো কেউ বলে না।
দীবার এই বোকা বোকা প্রশ্ন শুনে দিবস ঠোঁট আটকে হাসলো, যা দীবার চোখে পড়লো না।
দিবস কোনরকম হাসি কন্ট্রোল করে বললো
দিবস: আমি বলি একচুয়ালি যাদের বেশি রেস্পেক্ট করি, তাদের বকো বলে সম্বোধন করি। এতে তারা খুশি হয়।
দীবা অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো, ভেবে বলে উঠলো
– সত্যিই মানুষ কিছু মনে করে না?
দিবস খুব কষ্টে হাসি কন্ট্রোল করে বললো
দিবস: উহুম মানুষ অনেক খুশি হয়। রেস্পেক্ট পেতে সবাই ভালোবাসে তাই না?
– হুম।
দিবস : তুমি বসো আমি কিছু খাবার নিয়ে আসছি। দীবাকে কিছু বলতে না দিয়ে একটু দূরে সরে গিয়ে হেসে ফেললো।

#চলবে ।। আশা করি কেউ কপি করবেন না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে