কবে হলো ভালোবাসা পর্ব-০৪

0
599

#কবে হলো ভালোবাসা
#তাশফিয়া রহমান (লেখিকা)
#পর্ব :৪

(কপি করা নিষেধ)

দীবা গাড়ি থেকে নেমে একটু আগাতে, পেছনে ফিরে দেখলো দিবসও আসছে। তাই দাড়িয়ে পড়লো।
দিবস দাড়ানো দেখে বলে উঠলো
দিবস: হঠাৎ দাড়ালে কেনো? চলো।
– আপনিও যাবেন নাকি?
দিবস: হ্যাঁ কেনো যেতে পারিনা ?
দীবা কিছু বলার আগেই বাবলি একপ্রকার চিৎকার দিয়ে বললো
বাবলি : ওহ মাই গড! তুমি আমাদের বাসায় কতদিন পর। বলেই দিবস এর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে ভেতরে চলে যাচ্ছে ।এদিকে দীবার কথা যেনো খেয়াল করেনি। দিবস বুঝতে পেরে বাবলিকে থামিয়ে বললো
দিবস: তোমার কাজিন দীবা অসুস্থ।
বাবলি: তুমি আমার কাজিন দীবা আপুকে কোথায় পেলে?
দিবস: হুম আমাদের ভার্সিটি আই মিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়। আমি যেহেতু চিনতাম তোমার কাজিন হয় এজন্য আমার সাথে নিয়ে আসলাম।
বাবলি: ওহ। আপু কোথায়?
– এই যে আমি আমাকে তো ভুলে গেছেন। আমি কে হয় মনে রাখতে হবে।
বাবলি: সরি আপু। এই দেখো কান ধরছি। দুই বোনের খুনসুটি দিবস নীরব চোখে দেখছে, আর মিটিমিটি হাসছে। যা কারো চোখে পড়লো না।

দীবা কিছু বলার আগেই ,দিবস বলে উঠলো
দিবস: বাবলি আপুকে নিয়ে বাসায় যাও আমি গেলাম।

বাবলি: নো তুমি কতদিন পর আমাদের বাসায় সামনে এলে , সো এখন আমাদের সাথে আমাদের বাসায় যেতেই হবে।
দিবসকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে বাসায় ভেতরে চলে গেলো। দীবাও ভেতরে গেলো ।
দীবার ফুফু দিবসকে দেখার সাথে সাথে বললেন
দীবার ফুফু: কতদিন পর তোমার মুখটা দেখলাম বাবা। দিবস: আসসালামুয়ালাইকুম মনি কেমন আছেন?
দীবার ফুফু: ওয়ালাইকুমুসসালাম, আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
দীবাকে পেছনে দেখে বলে উঠলেন।
দীবার ফুফু: দীবা মা এত তাড়াতাড়ি বাসায় আসলে ক্লাস হয়নি?
দীবা কিছু বলার আগেই দিবস সব ঘটনা বললো। দীবাকে কাছে নিয়ে আদর করলেন। তারপর ওদের তিনজনকে রেখে দিবসকে উদ্দেশ্যে করে বললেন
খেয়ে যেতেই হবে।
দিবস: না মনি আজকে না অন্যকোন দিন।
দীবার ফুফু: কোন কথা না বসো আমি আসছি।
দীবা তার ফুফুর কথাবার্তায় বুঝলো দিবসের সাথে অনেক ভালো সম্পর্ক ।এসব ভাবনার মাঝেই দিবস বললো
দিবস: বাবলি কেউ কি চিন্তার সাগরে ডুবে গেছে নাকি, সে আবার সাতার জানেতো ?
বাবলি কিছু বুঝলো না ।
– কিছু মানুষ যে আসলেই পাগল, সে বার বার প্রমাণ করে বুঝছো বাবলি।
বাবলি: আমি তোমাদের কারো কথায় বুঝতে পারছি না। তোমরা থাকো আমার স্কুলে যেতে হবে। বাই। বলে চলে গেলো।

দীবা এখনও দিবসের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে দিবস বললো
দিবস: দীবানিশি আই নো আম হ্যান্ডসাম। তাই বলে এইভাবে নজর দিবে! যদি আমি অসুস্থ হয়ে যায়।
– হ্যান্ডসাম না একটা হনুমান। আর আমি মোটেও নজর দেয়নি ওকে।
দিবস:নজর কীভাবে দেয়গো দীবানিশি ? বলেই দিবস চোখ মারলো।
সাথে সাথে দীবা বলে উঠলো
– আপনি এত ফাজিল কেনো? আর চোখ মারলেন কেনো?
দিবস ইনোসেন্ট ফেইস করে বললো
দিবস: চোখ আবার কীভাবে মারে বুঝলাম না! চোখ মারা যায় নাকি?
– অসহ্য। চোখ মারলেন কেনো? ফাজিল তো বুঝছি। এখন কি আবার নিজেকে অসভ্য প্রমাণ করতে চাইছেন?
দিবস খুব সিরিয়াস হয়ে বললো
দিবস: আমি সত্যিই বুঝলাম না চোখ মারে কীভাবে একটু বুঝায়ে বলবে?
দিবস এর সিরিয়াস ভাব দেখে দীবা ভাবছে সত্যিই হয়তো জানেনা না বুঝেই ওমন করলো। দিবস আবার বললো
দিবস: কি হলো আমাকে কি বলার মতো না, আমি একটু বুঝতে পারিনি একটু দেখায়ে দিলেই বুঝবো প্লিজ ।
দীবা কি করবে বুঝতে পারছে না, লজ্জা লাগছে আবার দিবস এর মুখ দেখে দেখানোর সিদ্ধান্ত নিলো
দীবা দিবস এর দিকে চেয়ে, বাম চোখ খোলা রেখে ডান চোখ বন্ধ করলো। করার সাথে সাথে দিবস হাহা করে হাসতে শুরু করলো। দীবার আর বুঝতে বাকি নেই দিবস ইচ্ছা করে ওকে বোকা বানিয়েছে।

দীবা এক হাত দিয়ে দিবসের চুল টেনে ধরে বললো
– অসভ্য, ফাজিল হনুমান একটা , আপনি ইচ্ছা করে করলেন, ফাজিল ছেলে।
দিবস হাসছে আর বলছে
দিবস: আরে ছাড়ো দীবানিশি, আমার সেট করা চুলের কি অবস্থা করছো ! ব্যাথা পায়তো হানি।
ব্যাথার কথা শুনে চুল ছেড়ে দিয়ে দীবা বললো
– আমি আর কখনো কথা বলবোনা।
দিবস হাত দিয়ে চুল ঠিক করে বললো
দিবস: কিন্তু কথা না বললে তো
আর বলতে পারলো না কারণ তার মাঝে কেউ বলে উঠলো
:আমার আব্বা এখানে আর আমি জানি না।
দিবস চোখ তুলে সামনে তাকিয়ে দেখে ,ওর মা দাড়িয়ে তাই উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরে সব বললো। দিবস তার ফ্যামিলির সাথে ভীষণ ফ্রি তাই দীবার কথা আগেই বলেছিলো।
দিবসের মা সব শুনে দীবার মাথায় হাত রাখলেন।
দিবসের মা : খাওয়া দাওয়া করবে ঠিক মতো মা।
– জি আন্টি ।
দিবসের মা: তুমি আমাকে মামনি বলে ডেকো। আন্টি কেমন পর পর মনে হয় মা।
দিবসের মায়ের আন্তরিকতা দীবার মন ছুয়ে যাচ্ছে।
এসব ভাবনার মাঝেই দিবসের মা বললেন
দিবসের মা: মা তোমার ফুফু কোথায়?
– রান্না ঘরে আমি ডেকে আনছি।
দিবসের মা: না মা তুমি বসো আমি যেতে পারবো।
দিবসের মা যেতেই দীবা বলে উঠলো
– আপনার মা ভীষণ ভালো।
দিবস: কার মা দেখতে হবে তো বেইবস।
– আমার নাম কি ভুলে যান হুম ?
দিবস: কি নামগো?
-দীবা ।
দিবস: ওহ দীবানিশি সো কিউট নেম।
দীবা অবাক হয়ে তাকাতে দিবস বলে উঠলো
দিবস: ঐভাবে তাকিয়ো না প্রেমে পড়ে যাবোতো ।
– কি সব বলেন!.
দিবস: আমি কারো প্রেমে পরিনি কিন্তু তুমি যদি চাও ভেবে দেখতে পারি।
-জীবনেও না।

দিবস: ওহ আমি ভেবে দেখি এটা চাও না ।আমি ডাইরেক্ট তোমার প্রেমে পরি তাই চাও বুঝছি।
– কচু বুঝছেন।
আমি একদমই চাইবোনা আপনি আমার প্রেমে পরেন।
দিবস ভুরু কুচকে বললো
দিবস: তাহলে কি চাও ভালোবাসি।
দীবার মূহুর্তে কি হলো হার্ট বিট বেড়ে গেল।
দিবস দীবাকে চুপ থাকতে দেখে বললো
দিবস: যদি চাও ভালোবাসি ,তবে আমার মায়ের পরে তুমি হবা পৃথিবীর দ্বিতীয় নারী। যাকে আমি ভালোবাসবো।
দীবার অস্থির মুখ দেখে দিবস জোরে জোরে হেসে ফেললো। দীবা অবাক চোখে তাকাতে দিবস বললো
দিবস: আরে দীবানিশি আমি ফান করছিলাম। তুমি দেখি সিরিয়াস নিসো। তোমার মুখ দেখার মতো ছিলো। বলেই আবার হাসলো। দীবা নিজের বোকামি লুকানোর জন্য বললো
– আমিও জানি আপনি ফানই করছেন। ফান ছাড়া আর কি পারেন।
দিবস: মানে এটা ফান না হলে তুমি খুশি হতে এটা বুঝাতে চাইছো? মুখে এখনো হাসি।
– অসহ্য সরেন তো শুধু উলটো পালটা কথা।

ওদের কথার মাঝেই দিবস এর মা ও দীবার ফুফু এলো।
এসেই সব খাবার সার্ভ করে বসতে বললো সবাইকে।
দিবস এর মা বলে উঠলেন
: জোর করেই তোমার ফুফু খাওয়ায়ে ছাড়বে,,বুঝছো বলেই হাসলো। সাথে দীবাও হাসলো। খেতে খেতে দিবসের মা বললো আগামীকাল দিবস এর গানের কনসার্ট আছে। তোমরা সবাই আমাদের সাথেই যাবা কোন কথা শুনবো না।
দিবস: ওহ শিট বলতে ভুলে গেছিলাম। মনিরা সবাই আমার গান শুনলেও ,এখানে একজন আছে নতুন, তাকে আমি আমার সাথে নিয়ে যেতে চাই। আমার সাথে বাবলি আর দীবা যাবে পারমিশন আছে?
দীবা কিছু বলার আগেই দীবার ফুফু বললো
অবশ্যই যাবে।
বলার সাথে সাথে দিবস দীবার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো …

#চলবে ।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে