#কবে হলো ভালোবাসা
#তাশফিয়া রহমান (লেখিকা)
#পর্ব :৩
(কপি করা নিষেধ)
রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিতে গেলেই, রিকশাওয়ালা দীবাকে জানালো- যে রিকশা ঠিক করেছিলেন ,সে আগেই ভাড়া দিয়েছেন।
এদিকে দীবা মনে মনে ভাবতে লাগলো
– দিবস কখন ভাড়া দিলো!আমি ঠিক ও পেলাম না।
এসব ভেবে গেইটের সামনে চোখ তুলে তাকাতেই, আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেল! অস্ফুট সুরে মুখ থেকে বের হলো একটি নাম ফাহাদ! চারিপাশে মনে হলো অন্ধকারে ছেয়ে গেলো আর কিছু মনে নেই।
_____
চোখ খুলতেই আমার আশে পাশে অনেক মানুষ দেখলাম । কিন্তু শুধু পাশে বসে আছে তিশু। তিশুকে কান্না করতে দেখলাম। আমি কিছু বলার আগেই কারো ভয়েস কানে এলো। তিশুর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে তাকিয়ে দিবসকে দেখলাম।
দিবস: অবশেষে জ্ঞান ফিরলো। তা কি এমন হয়েছিলো যে মাথা ঘুরে গেলো! খাওয়া দাওয়া কিছু করো না নাকি?
আমার মনে পড়ে গেলো, আমি ফাহাদকে দেখেছিলাম। ভাবতেই ভীষণ অস্থিরতা শুরু হয়ে গেলো। যা কারো চোখে না পড়লেও দিবসের চোখে পড়লো।
দিবস কিছু ভেবে সবাইকে বললো দীবাকে সে বাড়ি পৌঁছে দেবে। সবাই বেশ অবাক হলো বিশেষ করে মেয়েরা, তাদের যেনো দীবাকে হিংসা হলো।
সবাই যার যার মতো চলে গেলেও ,তিশু দীবাকে পাশে নিয়ে বসে থাকলো।
দিবস এগিয়ে এসে, দীবার অস্থিরতা দূর করার জন্য বললো
দিবস: দীবানিশি বাই এনি চান্স, তুমি কি আমার কোলে উঠার জন্য মাথা ঘোরার নাটক করছো?
দীবা চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো
– আপনার কোলে উঠার চেয়ে মাথা ঘুরে রোডে পরে গিয়ে ব্যাথা পাওয়া আমার জন্য বেটার।
দিবস কিছু বলতে যেতেই আমি থামিয়ে বললাম
– এই আপনার কোলে মানে বুঝলাম না! এই তিশু আমার মাথা ঘোরার পর আর কিছু মনে নেই কি হয়েছিলোরে?
তিশু এদের দুজনের খুনসুটি বেশ উপভোগ করছে। একটু হেসে বললো
তিশু: তুই মাথা ঘুরে পড়তে যাবি ,এমন সময় আমিও দৌড়ে আসছিলাম। কিন্তু আমার আগেই দিবস হিরোর মতো এন্ট্রি নিয়ে তোকে ধরে ফেললো। উফ কি রোমান্টিক সিন ! ওর কথা শুনে দীবাতো লজ্জা পাচ্ছে সাথে দিবস ও খুক খুক করে কেশে উঠলো, বাহানা দিয়ে বললো
দিবস: তিশা তোমার বান্ধবীর আরেকটূ রেস্টের প্রয়োজন। আমার একটু কাজ আছে। একটু পরে এসে নিয়ে যাবো।
দীবা জানে তিশুর মুখে কোন কন্ট্রোল নেই। তাই বলে দিবস এর সামনে এসব বলবে ও ভাবেনি। দীবা এসবের মাঝে, ফাহাদ এর কথা ইতিমধ্যে ভুলেও গেছে।
– এই তিশু তোর মুখে কিছু আটকায় না ,সেটা তোর বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে আমি তো জানিই। বাইরের মানুষদেরকে জানানো কি খুব জরুরি!
তিশু : কে বাইরের লোক!
– দিবস আবার কে !
তিশু: আমার তো মনে হয়, এই বাইরের মানুষটি আবার তোর সবচেয়ে কাছের মানুষ না হয়ে যায় দেখিস।
– আজেবাজে কথা বলিস না।
তিশু : তোর হঠাৎ মাথা ঘুরে গেলো কেনো বাবু? দীবা আবার অস্থির হয়ে আমতা আমতা করে বললো
– আ আমি ফাহাদকে দেখেছি। জানিনা আমার চোখের দেখার ভুল কিনা ।
তিশু চমকে উঠলো এক প্রকার! কারণ সে ফাহাদ সম্পর্কে সবটাই জানে।
তিশু দীবাকে বোনের মতো ভালোবাসে। তাই দীবাকে স্বাভাবিক করার জন্য বললো
তিশু: দিবস এর কোলে তোরে দারুণ লাগছিল।
– তাই আমি নাচবো।
বলার সাথে সাথে দিবস রুমে এসে বললো –
দিবস: তুমি এত ডাই হার্ট ফ্যান যে আমাকে ইমপ্রেস করার জন্য নাচতে চাইছো ওয়াও দীবানিশি।
দীবা ভাবতে লাগলো ,সব কথা শুনে ফেলেনি তো! এর মাঝেই দিবস আবার বললো-
দিবস: ভাবনার সাগর থেকে বের হলে আমরা যেতে পারি ।
দীবাও আর কোন কথা না বলে, এগিয়ে গেলো।
– একি গাড়ি কেনো! আমি আপনার সাথে গাড়িতে যাবো না।
দিবস: দেখো সবসময় সফট্ লি কথা বলি, তার মানে এই না যে এখন তোমার এই আবদার মেনে নিবো। তুমি অসুস্থ আর এই অবস্থায় তোমার একা রিকশা করে যাওয়া ঠিক না । আর বাসায় কল করে গাড়ি আনিয়েছি শুধু তোমার জন্য।
– আমার জন্য এত ভাবতে কে বলেছে আপনাকে?
দিবস: আমি তোমার জন্য না শুধু ,যেকোন মেয়ে অসুস্থ হলে হেল্প করতাম। হয়তো বাসায় পৌঁছে দিতাম না নিজে ,কিন্তু তোমার জন্য করছি।
– কেনো করছেন?
দিবস: আমি তোমাকে চিনি ,আর তাছাড়া আমার বাড়ির কাছে তুমি থাকছো।
দীবার যেন বিলিভ হলো না কথাগুলো। তবুও গাড়ির কাছে এগিয়ে যেতেই হুট করে কোথা থেকে একটি মেয়ে এসে দিবসকে জড়িয়ে ধরলো। দীবা অবাক চোখে চেয়ে থাকলো! এদিকে দিবস ও দীবার সামনে ওক ওয়ার্ড ফিল করলো। তাই মেয়েটিকে জোর করে ছাড়িয়ে বললো
দিবস: কি সমস্যা রেবা এটা পাবলিক প্লেস ।ফারদার এগুলো করবানা আমার পছন্দ না।
রেবা : আমি তোমার জিএফ বেইব।
দিবস: জিএফ হাহ একটা কথা মনে রেখো, আমি তোমাকে জিএফ হওয়ার জন্য বলিনি। তুমি আমার পিছনে ঘুরছো কান্না করছো । সফট্ মনের জন্য জাস্ট একসেপ্ট করছি। এর বেশি কিছু এক্সপেক্ট করবা না তাহলে ব্রেকাপ ।
এদিকে দীবা নিরব দর্শক এর মতো সব দেখছে।
দিবস এর কথা শুনতেই ,মেয়েটি সাথে সাথে বললো
রেবা: নো নো বেবি প্লিজ ব্রেকাপ করো না। আমি তোমার জিএফ এই পরিচিতি টা ঠিক আছে। আর কিছু চায় না। বলেই দিবসকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে চলে গেলো।
দিবস গিয়ে ড্রাইভারকে টাকা দিলো। বাসায় চলে যেতে বললো। তারপর দিবস সামনে বসে দীবাকে পাশে বসতে বললো। দীবা এখনো ঐ মেয়ের কথা ভাবছে , ভাবতে ভাবতে দিবস এর পাশে বসলো।
দিবস অনেক সময় নিয়ে খেয়াল করছে দীবাকে।
দীবা জানালা দিয়ে বাইরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
দিবস ভাবছে কি এত ভাবছে , ও কি এখনো কোন বিষয় নিয়ে আপসেট। যে জন্য অসুস্থ হলো। তাই মজা করে বললো
দিবস: দীবানিশি
দীবা অন্যমনস্ক থাকায় উওর দিলো
– হুম।
দিবস অবাক হয়ে গেলো যে মেয়েকে এসব নাম ধরে ডাকলে ঝগড়া শুরু করে, সে এত কি ভাবছে, তাই আবার বললো
দিবস: দীবানিশি আমার দেয়া নাম তোমার এত পছন্দ। বলেই হাহা করে হাসলো। দীবা এবার বুঝলো মনের ভুলে উওর করে ফেলেছিলো। তাই কথা ঘোরানোর জন্য বললাম
– ছি : আপনার দাত কি পচা ব্রাশ করেন না নাকি?
দিবস: আজেবাজে কথা বাদ দাও। আমার এই হাসি দেখার জন্য কত মেয়ে পাগল, ধারণা থাকলে এটা বলতে না।
– পাগলীরায়তো পাগলের ফ্যান হবে।
দিবস: যে মন তুমি।
– আপনার মাথা।
দিবস: আমার মাথা আমার কাছেই আছে। দিবস কিছু আবার বলতে গেলে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম
– আপনার জিএফদের কেনো ঠকাচ্ছেন? ওরা তো আপনাকে ভালোবাসে হয়তো।
দীবার কথায় ভীষণ অবাক হলো! এমন কোন প্রশ্ন করবে আশা করে নি। দিবস আবার ভাবলো তাহলে এতসময় কি দীবা এসব ভাবছিলো !
– কোন উওর নেই?
দিবস: থাকবে না কেনো অবশ্যই আছে।
– তাহলে কি বলতে চাইছেন না।
দিবস: ওরা কেউ আমাকে ভালোবাসে না।
– কীভাবে বুঝলেন?
দিবস: আমার নাম, খ্যাতি, আমাদের স্ট্যাটাস এসব দেখে আমার জিএফ হয়েছে।ওরা নিজেরাও ফ্ল্যার্ট করে আর আমিও এছাড়া কিছু না।আজ আমার কিছু না থাকতো, কেউ পাশে থাকতো না। দুনিয়ায় যার টাকা আছে, তার পিছনে এরকম হাজারো মেয়ে আছে, এদের মধ্যে আর যাই থাকুক ভালোবাসা থাকে না। আমার মা আমাকে অলওয়েজ বলে ,কখনো কোন মেয়ের সাথে খারাপ বিহেভ বা অসম্মান হয়, এমন কিছু করবি না। আমি সবসময় সেই কথা মাথায় রাখি।
দীবা মুগ্ধ হয়ে দিবস এর কথা শুনছে । যতটা খারাপ ভেবেছিলো ,ততটা নয়। শুধু ফ্ল্যার্ট করে এই যাহ । এসব ভাবনার মাঝেই দিবস আবার বললো
দিবস: ওরা আমার নামমাত্র জিএফ। ওরা অনেক এই আমার কাছে আসার অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমি অলওয়েজ একটা দূরত্ব তৈরি করে রেখেছি। ঐ যে মায়ের কথা মাথায় থাকে।
আমার কাছে সেই আসতে পারবে, যে আমার মনের কাছে আসতে পারবে।
দীবার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে দেখলো এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
দিবস: অনেক সিরিয়াস কথা বললাম। এই তোমার কি পাপিয়া ঝাপিয়া লাগবে নাকি? (বাকা হাসি)
– মানে সেটা আবার কি?
দিবস দুষ্টু হেসে বললো
দিবস: পাপিয়া আই মিন কিসি, আর ঝাপিয়া মানে হাগ।
– ফাজলামি না করলে চলে না। আপনাকে ভালো ভাবাটায় ভুল অসহ্য।
দিবস: এই এক মিনিট ,তুমি আমাকে ভালো ভাবো নাকি? কবে থেকেগো দীবানিশি!
– অসহ্য।
এইভাবে খুনসুটির মধ্যে দীবার ফুফুর বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো দিবস।
#চলবে ।।