কবে হলো ভালোবাসা পর্ব-০২

0
668

#কবে হলো ভালোবাসা
#তাশফিয়া রহমান (লেখিকা)
#পর্ব :২

রুমে এসে ফুফুর সাথে একটু গল্প করলাম । সারাদিন এর ঘটনা সবটাবললেও দিবস এর বিষয়ে কিছু বললাম না। কেনো বলিনি জানিওনা । খাওয়া দাওয়া করে বাবলির পাশে শুয়ে পড়তেই বাবলি বললো
বাবলি : আপু তোমার ফোনটা একটু দাও তো।
-কি করবা এখন অনেক রাত।
বাবলি: আরে কি বলো আপু এখন মাএ ১১ টা বাজে। ঢাকা শহরে মাএ সন্ধ্যা বুঝছো ।
মনে মনে ভাবছি এই মেয়ে এত পাকনা হয়েছে, এসব ভাবনার মাঝেই বাবলি আবার বললো
বাবলি: কি হলো আপু ফোন দাও। আসলে আমার ফোন এ চার্জ আউট হয়ে গেছে।
আমি অবাক হয়ে বললাম !
– তোমার ফোন আছে?
বাবলি: একচুয়ালি ফোনটা মাম্মাম এর কিন্তু স্কুল এর সব খবর জানতে + বিভিন্ন পড়ার জন্য গুগুল এর প্রয়োজন হয় এই জন্য বেশীরভাগ সময় ফোন আমার কাছে থাকে।
ফোনটা বাবলিকে দিয়ে ভাবছি এমনি পাকনা আবার ফোন ইউস করছে।

এদিকে বাবলি ফোন নিয়ে দীবার ইনস্টাগ্রাম এ যেয়ে দিবসের আইডিতে ঢুকে পিক দেখতে দেখতে ভুলে গেছে এটা দীবার ফোন ও নিজের ফোন ভেবে দিবস এর ১ ঘন্টা আগে আপলোড দেয়া পিকে লাভ রিয়াকশন দিলো ও একটা কমেন্ট করে। তারপর ইউটিউব এ গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যায়।

দীবার চোখ এ ঘুম নেই আজ। কেনো এমন হচ্ছে জানা নেই। হয়তো নতুন জায়গা বলে। বাবলির দিকে চোখ যেতেই দেখে বাবলি ঘুমিয়ে গেছে। তাই ফোনটা নিয়ে গান অফ করতেই একটা নটিফিকেশন এলো।
নটিফিকেশন অন করে অবাক হয়ে গেলাম!
ফারদিন আহমেদ দিবস রিপ্লে ইউর কমেন্ট। আমি ভাবছি আমি কখন কমেন্ট করলাম। কমেন্ট ওপেন করতেই যা দেখলাম বিস্ময় এর চরম পর্যায়ে গেলাম।
কমেন্ট এ লেখা
আর ইউ এ ম্যাজিসিয়ান? ইট’স দি স্ট্রঙ্গেস্ট থিং, বাট এভরি টাইম ই লুক এট ইউ, এভেরিওনে এলসি ডিসপেয়ার্স.
আর রিপ্লে দিবস লিখেছে
দিবস:ইয়েস বেবি আই এম এ ম্যাজিসিয়ান, এ ম্যাজিসিয়ান হু স্টিলস ইওর মাইন্ড।

মেজাজ খারাপ হয়ে ফ্ল্যার্ট করছে তাও আমার সাথে কত বড় সাহস! হনুমান একটা কি বলছে আবার ম্যাজিসিয়ান হাহ কিন্তু আমি ভাবছি কমেন্ট করলো কে একটু ভাবতেই বাবলির কথা মাথায় এলো, বাবলি!
বাবলি এখন ঘুমের অতলে বাবলির দিকে তাকিয়ে বলছি
_
-কেনো কমেন্ট করলে বোন। দিবস এবার কালকে সিউর আবার মজা করবে।
আবার কমেন্ট এ রিয়াকশন ও দিছে। অনেক ভেবে আবার কমেন্ট করলাম
হনুমান আবার ম্যাজিসিয়ান ! লিখে চলে আসতে নিতেই সাথে সাথে রিপ্লে দিলো
এখন এসব বলেও লাভ নাই বেবস্ আই নো আই এম দি ম্যাজিসিয়ান অফ ইউর মাইন্ড হানি।
অনলাইন থেকে বের হয়ে আসলাম। এই বাবলিটার জন্য এখন দিবস এর পাগলামী দেখতে হবে।

ফজরে আযানের সময় ঘুম ভাঙলো। উঠে ওয়াশরুমে যেয়ে ওযু করে নামাজ আদায় করে,একটু কোরআন তেলাওয়াত করলাম। ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে গোসল করে রেডি হতে হতে তিশুর কল আসলো। গতকাল ই দুজন দুজনের নাম্বার নিয়েছিলাম। তো তিশুর ফোন ধরতেই বললো
তিশু: বের হয়ছিস কিউটি।
– রেডি হচ্ছি।
তিশু : এখনও সময় আছে ধীরে ধীরে রেডি হতে থাক।
ফোন রেখে রেডি হতে শুরু করলাম।
আজকে কালো রঙের একটি গোল জামা, চুড়িদার , মাথায় ম্যাচিং হিজাব। চোখ এ হালকা কাজল, ঠোঁটে হালকা লিপ বাম দিয়ে ফুফুর বাসা থেকে বের হয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করতে করতে হঠাৎ দিবস ওর বাইক নিয়ে আমার সামনে দাড়ালো আচমকা আসার জন্য হার্ট বিট বেড়ে গেছে।
আমি ভয় পেয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি তখন দিবস বলে উঠলো
দিবস: তুমি আমি আমার ডাই হার্ট ফ্যান আবার প্রমাণ করলে দীবানিশি হানি বানি।
– একদম উলটো পালটা নামে ডাকবেন না।

দিবস: উলটো পালটা কি বেইবস্ ?
– ফালতু হনুমান।
দিবস: হনুমান এর মধ্যে ফালতু/ ভালো আছে নাকি হানি?
– উফ আবার আপনার সমস্যা কি পরিস্কার করে বলবেন?
দিবস: তুমি দীবানিশি না দীবা?
আমি ভালো মন নিয়ে বললাম
– আমি দীবা।
বলার সাথে সাথে হাহা করে হেসে বললো
দিবস: কী দীবা?
-আপনার মাথা ফাটাবো অসহ্য।
দিবস: মাথা ফাটায়ে দিলে তো আমার ব্রেন ডেমেজ হবে আমি তখন সব ভুলে যাবো। আমি হারিয়ে গেলে কি তুমি আমাকে তোমার হৃদয় এর রাস্তা চিনতে দিবে দীবানিশি?বলার সাথে হাহা করে হাসতে লাগলো।
আমি মনে মনে ভাবছি কীভাবে পারে এত ফ্ল্যার্ট করতে একটা মানুষ!
-সরেন তো আপনার ক্লাস করার ইচ্ছা না থাকতে পারে কিন্তু আমার আছে।
দিবস: এখন এসব ভাব দেখায়ে কোন লাভ নাই দীবানিশি। কারণ গতকাল তুমি নিজেই কমেন্ট করছো।
– ঐ কমেন্ট আমি করিনি।
দিবস: আমি জানতাম তুমি আমাকে হনুমান বলতেই পারো না। আফটার অল মাই ডাই হার্ট ফ্যান তুমি।
– ও হ্যালো হনুমান লিখেছি আমি, কিন্তু ম্যাজিসিয়ান ওটা আমি না বাবলি করেছে।
দিবস: আহ দীবানিশি এখন আমার কিউটি বাবলির নামে কোন দোষ দিবানা, আমি জানি মনের কথা লিখে এখন লজ্জা পাচ্ছো এম আই রাইট বেইব?
মনে মনে ভাবতে লাগলাম এই ছেলেরে কিছু বলা আর না বলা সমান এ নিজের মতো বুঝবে অসহ্য।
আমার ভাবনার মাঝেই বললো
দিবস : দীবানিশি এটা কিন্তু ঠিক না?
আমি বুঝতে না পেরে বললাম
– কি ঠিক না?
দিবস: এইযে আমাকে নিয়ে জেগে জেগে তাও আবার আমার সামনে ড্রিম দেখছো। বলেই হাসলো।
– উফ এই আপনি কি অল টাইম মজার মুডে থাকেন আশ্চর্য !
দিবস একটু সিরিয়াস ভাব নিয়ে বললো
দিবস: ভার্সিটি তুমিও যাবে আর আমিও, যেহেতু একি ভার্সিটি আমার বাইকে আসতে পারো।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগে আবার বললো
দিবস: আমি নরমালি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছাড়া কাউকে বাইকে উঠায় না, ইভেন রেবা, মিমি, তানিয়া আর জিনিয়াকেও বাইকে বসায় না।

আমি অবাক হয়ে বললাম
– এরা কারা?
দিবস একটু দুষ্ট হাসি দিয়ে বললো
দিবস: তুমি কোন যুগের মানুষ বলোতো! মানে এতগুলো মেয়েদের নাম শুনলে বাবলিও বুঝবে আর তুমি! অবশ্য দোষ তোমার না এত ক্রেজি ফ্যান যে অন্য কোন মেয়েকে আমার পাশে নিতে পারো না । আই লাইক ইট।
– ফালতু কথা বাদ দেন।
দিবস : ওরা আমার জিএফ ।
– এতজন একসাথে কীভাবে!
দিবস: ঐভাবেই একচুয়ালি আমার মন অনেক সফট্, তাই ওরা যখন প্রপোজাল দেয় আমি একসেপ্ট করি, কারো মনে কষ্ট দেওয়া তো ঠিক না।
আমার কি হলো জানিনা মুখ ফসকে বলে ফেললাম
– ভালোবাসেন?
আমার কথায় দিবস অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো যেই চোখে এক দৃষ্টিতে চোখ রাখা আমার সম্ভব হলো না। আমি চোখ সরিয়ে নিতেই দিবস সাথে সাথে বললো
দিবস: সরি বুঝলাম না।
আমি কি বলেছি বুঝতে পেরে আমতা আমতা করে বললাম
– আমি বলছি যে স সবা ইকে কি ভালোবাসেন মানে আপনার সব জিএফকে ?
দিবস খুব সহজেই বললো
দিবস: নো ঐসব ভালোবাসা আমার জন্য না আর সত্যি বলতে ওরকম ফিলিংস এখনও কারো জন্য তৈরি হয়নি।
আমি কিছু বলতে যেতেই আবার বললো
দিবস :আরে তুমি কালো রঙের ড্রেস পড়ছো! আমার ফেভারিট কালারো জেনে গেছো নট ব্যাড।
– এহ মোটেওনা আপনার ফেভারিট জন্য পরিনায়, এটা আমার ফেভারিট কালার ওকে। আপনি থাকেন আমি গেলাম। আমি পা বাড়াতে দিবস বলে উঠলো
দিবস: আমি রিকশা ঠিক করে দিচ্ছি। দীবানিশি এটা ঢাকা শহর এখানে তোমার একা যাতায়াত করা ঠিক না।
– কারো উপর নির্ভরশীল হওয়া কি ঠিক?
দিবস এর মাঝে রিকশা ঠিক করে রিকশা উঠতে বলে বললো
দিবস: না কারো উপর নির্ভর করাও ঠিক না তবে জীবনে চলার পথে কেউ না কেউ পাশে থাকলে জীবন উপভোগ করা যায় ভালোভাবে।
আমি কথার মানে বুঝতে না পেরে কিছু বলতে নিতেই দিবস বললো
দিবস: আর ২০ মিনিট পর তোমার ক্লাস। আর কোন কথা না ভালোভাবে রিকশাতে উঠো। আমি পিছনে আসছি।
আমিও আর টাইমের কথা ভেবে কিছু না বলে রিকশায় উঠে পড়লাম।
রিকশা থেকে নেমে গেইটের সামনে তাকাতে আমার মনে পায়ের নিচে মাটি সরে গেলো!মূহুর্তেই সব অন্ধকার হয়ে গেলো…

#চলবে ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে