<<<<<এর বেশি ভালবাসা যায় না>>>>>
পর্ব::(১১)
Written::Ar Limat
এভাবেই চলে গেল২ দিন তিশা আর রাজ এখন সবসময় একসাথেই থাকে ।।বিশেষ করে রিয়ার সামনে খুবই গলাই গলাই ভাব।
এসব রিয়া দেখতাছে এবং রাগে ফুলতাছে বাট ওর কিছু বলার মত কোন স্পেস নাই।।
ক্লাস শেষে রাজ আর তিশা ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিতাছে খুবই ক্লোজ হয়ে বসে আছে দুজন মনখুলে হাসাহাসি করতাছে ।খুবই প্রফুল্ল্য মনে দুজন।যেন এমন কপলের জুড়ি মেলা ভার।
তাদের এ মধুমিলন চোখ এড়ালো না রিয়ার।আর এড়াবেই বা কি করে ওরা তো রিয়াকে দেখানোর জন্যই এ গুলা করছে।এ আয়োজন তো তার জন্যই ।
নাহ আর সহ্য করতে পারছে না রিয়া সেতো এখন রাজকে চায়। আগেও হয়ত তার মন চাইতো বাট বুঝতো না। কারন নেহালের অভিনয় তাকে অন্ধ করে রেখেছিল।
খুব রাগ আর ক্ষোভ নিয়ে রিয়া ওদের সামনে উপস্হিত হল।
যেন তার চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে।এক ঝটকায় তিশাকে
টেনে তুলল কি করছ এসব লজ্জা করেনা বলেই একটা
চড় দিতে গেল ।
হঠাৎ তার হাতটা কে যেন ধরে ফেলল।হ্যা রাজ ই ওর হাত ধরে এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিল।
এসব কি করতাছো রিয়া আপু।আপু ডাকটা তার মোটেও ভাল লাগেনি ।আজ তুমি আমার বড় বলে সম্মান রক্ষা করলাম।না হলে আজ অন্য রাজকে দেখতে পেতে। বেশ রেগে বলল কথাগুলা।
রিয়াও রেগে বলতে লাগল..
– সমস্যা কি তোর? এই মেয়েটার সাথে এত গলাগলি করছিস কেন ?
সেটা একান্তই আমার মেটার এটার জবাব দিতে আমি কারো কাছে বাধ্য নয়।
আমরা দুজন দুজনকে ভালবাসি কাজেই আমাদেরকে আমাদের মত থাকতে দাও রিয়া চৌধুরী।
আমি বিশ্বাস করিনা তুই ওকে ভালবাসিস।তুই অন্য কাউকে ভালবাসতে পারিস না।
কেন আমি কাকে ভালবাসতে পারি।আমার ভালবাসা আমার মেটার আমি চাই না এতে কেউ নিজের নাক গলাতে আসুক।
– তুই অনেক পাল্টে গেছিস রাজ…
– পরিস্থিতি বাধ্য করেছে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো রাজ।
রিয়া কিছুটা হতাশ হয়ে সেখান থেকে চলে গেল..
আজ রাজ অনেকটা খুশি কারন আজ রিয়া বুঝতে পারছে অপমানের স্বাদ কতটা নির্মম।
রিয়া চলে যাবার পর সবাই অট্টহাসিতে মেতে উঠলো।
-অনেক মজা পাইলাম রে দোস্ত (আকাশ)
সালা এই মজার খেলা দেখার জন্যই তো নিজের গার্লফ্রেন্ডকে অন্যের কাছে দিলাম(রনি)
-আচ্ছা বাদ দে চল বাসায় চলে যায় ।
-সবাই যার যার বাসায় চলে গেল।
-রিয়া আজ অনেক কষ্ট পেয়েছে।বিকালে চুপটি মেরে ছাদে বসে আছে আর ভাবছে আসলেই আমার ওদের মাঝে যাওয়া উচিৎ হয়নি কারন সব দোষ তো আমারই।
এখন ও অন্য কাউকে নিয়ে সুখী হতে চাইছে তাহলে আমি কেন……..
কিন্তু রাজ কে ছাড়া আমি যে থাকতে পারব না।আমার যে ওকে চায় যেভাবেই হোক রাজকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনতেই হবে।।
-একটা ফন্দি আটলো রিয়া যে,ওর বাসার সবাইকে রিয়ার বাড়িতে আনবে একটা ওসিলা দিয়ে।।
সাথে রাজ ও আসবে তখনই রাজের কাছে ক্ষমা চাইবে ।।সব কিছু ঠিকঠাক করে নিবে।
-আব্বু আজ দ্রুত অফিস থেকে চলে আসলো মাও কেমন যেন সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছে ।কিছুই বুঝতে পারছে না রাজ।
একটু পর ,,,,,,,,,
রাজ,,, রাজ,,ঐ রাজ ।হ্যা কি হয়েছে আম্মু??
-জলদি রেডি হয়ে নে ।কেন কই যাবো ??
প্রশ্ন না করে জলদি গুছিয়ে নে বলছি।।
তোর মামা যাইতে বলছে রাতে ওখানে ডিনার করতে বলেছ।।
মানে রিয়াদের বাড়ি ??তোমরা যাও আমি যাব না।।
আমাদের কোন কথাটা তুই শুনিস আমাদের কোন মুল্য নেই তোর কাছে।।
-আব্বু আম্মুর অনেক জোরাজুরিতে যেতে রাজি হল রাজ।।
রিয়া তো মনে মনে অনেক খুশি যেভাবেই হোক আজ রাজকে ইমপ্রেস করতেই হবে।
রাজ এসে দেখল আসলেই জরুরি কিছুই না অযথা এখানে তাকে আসতে হয়েছে।।
-রাতে ডিনার করে গিয়ে ছাদের একপাশে মুখ গুমড়া করে বসে আছেরাজ। এতো বড় চিটিং সে মানতে পারছে না। রিয়া মুচকি হাসছে রাজের রাগ দেখে।
রিয়া গিয়ে রাজের পাশে বসলো। আলতো করে রাজের হাত ধরেছে তো সাথে সাথে এক ঝটকায় হাত টা ছাড়িয়ে নিলো রাজ। এইবার বেশ রেগে গেছে সে। রিয়া তাকিয়ে আছে রাজের দিকে। রাজ চেচিয়ে বলতে লাগলো..
– কি চেয়েছো কি তুমি? যখন যা ইচ্ছে হয় তখন তাই করবে? আমার পিছনে কেন পড়েছো এখন? আপনার ভালোবাসার নেহাল কোথায়?? ও কি জানে আপনি এখানে আমার সাথে এমন করছেন?
– ও আমার সাথে ছলনা করেছে রাজ, ও আমাকে নয়, আমার টাকাকে ভালোবাসতো। ইনফ্যাক্ট ওর আরেকটা গার্ফ্রেলন্ড আছে। নরম স্বরে বললো রিয়া।
.. হা হা হা ,,,,,,,,,,,
রাজ হাসলো। বললো..
– তাই? তাই এখন ওর জায়গাটা পুরন করতে আমার কাছে এসেছো?
– এইসব কি বলছো রাজ?
– আপনি কেন এমন করছেন এখন?
– জানিনা বিশ্বাস করবে কিনা, কিন্তু তোমাকে ইদানীং খুব মিস করছি রাজ, তোমাকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগছে না। আর জানিনা কেন, তোমাকে অন্য কোনো মেয়ের সাথে দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি রাজ। জানি তোমাকে অনেক অপমান করেছি। অনেক কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু সেগুলো মনে রেখে সারাজীবন কষ্ট পাওয়ার তো কোনো মানে নেই। সেগুলো ভুলে নতুন করে জীবনটা শুরু করি চলো..
– বাহঃ রিয়া বাহ। না হেসে পারলাম না। নেহাল আপনাকে ছেড়ে দিয়েছে দুদিন হলো। এরমধ্যেই আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা জন্মে গেলো?? ভালোবাসা কি এতোই সস্তা? .
– দুদিনে হয়নি। নেহাল যখন আমার জীবনে ছিলো তখন ও তোমাকে অন্যকোনো মেয়ের সাথে দেখলে খুব রাগ হতো। তখন ভেবে পেতাম না এই রাগের কারণ কি। কিন্তু আজ সবই বুঝতে পারছি। আর তাছাড়া, তুমিতো আমাকে ভালোবাসো রাজ। তাহলে আজ এমন করছো কেন? আমাকে কি মাফ করা যায়না??
– ভুল বললেন রিয়া চৌধুরী…। এই রাজ আপনাকে একসময় ভালোবাসতো ঠিকই। আজ আর আপনাকে ভালোবাসিনা।
আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল কি জানেন? আপনাকে ভালোবাসা। আসলে আমার মনটা বড়ই বোকা। না চাইতেও আপনাকে ভালোবেসে ছিলো। কিন্তু বার বার আপনি আমাকে অপমান করেছেন। ইভেন, আমার গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেছেন বহুবার। কিচ্ছু বলিনি আমি। সব সহ্য করেছি। আর তাই বলে এখনো আপনার সব আবদার মেনে নিবো যদি ভেবে থাকেন, তাহলে আপনি ভুল করছেন।
কথাগুলো বলেই হনহন করে ছাদ থেকে নিচে চলে গেল রাজ।।
রিয়া চুপ করে বসে রাজের চলে যাওয়াদেখতে লাগল আর অজান্তেই নিজের চোখের দু ফোটা জল ফেলল। তবুও মেনে নিল ও।
কারন এমন আচরনের জন্য তো ও নিজেই দায়ী ।তবুও হাল ছেড়ে দেয়ার মেয়ে নয় রিয়া ।
তাছাড়া ও ভাল করেই জানে এ গুলা রাজের অভিমান।কারন রাজ ওকে আসলেই অনেক বেশি ভালবাসে।
—–এ ভাবেই চলছিল।। রাজ কয়দিন যাবত ভার্সিটি আসতেছে না।
রিয়া ও রেগুলার ভার্সিটি আসেনা
..তারপরও মাঝে মাঝে যায় কিন্তু রাজ কে পায়না। রাজের কোনো সমস্যা হলো না তো? চিন্তায় পরলো রিয়া।
…
-রাজ ছাদে বসে ফোনে গান শুনছিলো… । রাজের মা এসে বললো…
– এই অসময় ছাদে বসে আছিস কেন?
– ভালো লাগছে তাই বসে আছি। কেন?
– রিয়া এসেছে। তোকে ডাকছে।
– কেন?
– সেটা আমি কি করে জানবো।। তুই গিয়ে দেখ কেন ডাকছে।
– আচ্ছা যাও, আমি আসছি…
মা চলে গেলো। রাজ মনে মনে ভাবছে, এই রিয়া আবার কেন আসলো। মনের মধ্যে অনেক দ্বিধা নিয়ে নিচে নেমে এলো রাজ। রিয়াকে কোথাও দেখতে পেলোনা সে। মাকে জিজ্ঞাসা করলো..
– রিয়া কোথায় মা?
– তোর রুমে আছে হয়তো..
– ওহ..
রাজ নিজের রুমে গেলো। খাটের উপর বসে আছে রিয়া। রাজের উপস্থিতি পেয়ে রাজের দিকে তাকালো রিয়া। রাজ বিনা সঙ্কোচে জিজ্ঞাসা করলো..
– কখন এলে?
– এইতো, কিছুক্ষন হলো।
– আমাকে ডেকেছো কেন?
– কেন, ডাকতে পারিনা?
– কোনো প্রয়োজন তো দেখিনা।
– কোথায় ছিলি এতোক্ষন?
– তোমার না জানলেও চলবে। কেন এসছো সেটা বলো?
– তুই কি আমাকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবি না?
– ক্ষমা করার মতো কিছু করেছো নাকি?
– ভার্সিটি যাস না কেন?
– ইচ্ছে করেনা তাই।
– আমাকে মাফ করা যায়না রাজ? আমি যে তোকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি…
– এইটা বলার জন্য এসেছো?
– প্লিজ রাজ, সিঙ্ক্রিয়েট করিস না… একবার ভেবে দেখ..
– কোনো ভাবনা চিন্তা ছাড়াই তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। সেটা এখন ছাই হয়ে গেছে। আর ভেবে দেখার কথা বলছো?. ভেবে চিন্তে কখনো ভালোবাসা হয়না। ভালোবাসা হটাৎ করেই হয়ে যায়। কিভাবে হয়ে যায় কেউ বুঝতেই পারেনা।
– ভালোবাসা হটাৎ করে হয়ে যায় ঠিকই, কিন্তু হটাৎ করে শেষ হয়ে যায়না। তুই তো আমাকে ভালোবেসেছিলি, তাহলে এখন কেন এমন করে পাল্টে গেছিস তুই?
রাজ জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। আনমনে বলতে লাগলো..
– কখনো যদি মনে হয়, আমি বদলে গেছি, তাহলে বুঝে নিও… তোমার করা সেই একটু একটু অবহেলা গুলো… আমাকে কঠিন করে বদলাতে বাধ্য করেছে।
কথাটা বলে একটা গভীর নিশ্বাস ছাড়লো রাজ। রিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে চলে গেলো নিজ গন্তব্যে।
নিরবে চোখের পানি ফেলতে লাগলো রাজ। যতোই বলুক ভুলে গেছে, কিন্তু ভালোবাসা ভুলা কি এতোই সহজ???
.সে আজ ও রিয়াকে অনেক বেশি ভালবাসে বাট রিয়াকে তো একটু বোঝাতে হবে কত কষ্ট পেয়েছিল সে……………………………
<<<<<<এর বেশি ভালবাসা যায় না>>>>>>>
পর্ব:: (১২)
Written::Ar Limat
কয়েকদিন পর রাজ আবার ও ভার্সিটি আসা শুরু করলো।।রিয়াও মাঝে মাঝে আসে রাজ কে দেখতে।।
রাজ আকাশ আর রনি বসে আছে ক্যান্টিনে
ঠিক তখনই তাদের তিনজনের দৃষ্টিই গেলো রিয়ার দিকে। মুহুর্তেই সবার মুখের হাসি মিলিয়ে মুখগুলো মলিন হয়ে গেলো।
রিয়া আকাশ আর রনিকে উদ্দেশ্য করে বললো..
– তোমরা একটু ওদিকে যাবে প্লিজ… ওর সাথে আমার একটু কথা আছে।
– ওরা কেউ কোথাও যাবেনা। কিছু বলার থাকলে সবার সামনেই বলো। রাজ বললো..
– প্লিজ… অসহায় ভাবে বললো রিয়া।
আকাশ আর রনি বললো..
– আচ্ছা, আমরা একটু দুরে গিয়ে দাড়াচ্ছি.. আপনারা কথা বলুন।।
ওরা চলে গেলো।
রাজ মুখ কালো করে বসে আছে। রিয়া দাড়িয়ে আছে ওর সামনে… রাজ কিছুটা রেগে রিয়াকে বললো..
– ওদের কেন এখান থেকে সরিয়ে দিলে?
– আমাদের দুইজনের মাঝে ওরা দুজন কাবাব মে হাড্ডি হোক সেটা আমি চাইনা।
– মানে কি?
– বুঝো না? আমরা এখন একটু পার্সোনাল কথা বলবো, ভালোবাসার কথা বলবো, ওরা কেন আমাদের মাঝে থাকবে?. এতে ওরাও লজ্জা পাবে আর আমাদের ও ব্যাঘাত ঘটবে। কথাটা বলেই একটা দুষ্ট হাসি দিলো রিয়া। রাজ যেনো রাগে ফেটে যাচ্ছে। তারপরও নিজের রাগকে কিছুটা কন্ট্রোল করে বললো..
– কি চাচ্ছো কি তুমি একটু বলবে আমায় প্লিজ…
– তোমাকে চাই..
– আমি কি কোনো বাজারের পণ্য, যে আমাকেচাইলেই পেয়ে যাবে??
– তুমি বাজারের পণ্য না বলেই আমি তোমাকে চাই। বাজারের পণ্য তো অহরহ .. অনেকেই পায় সেটা। কিন্তু এই পৃথিবীতে Just এক পিচ ই আছো তুমি…. আর তাই তোমাকে আমার চাইই চাই..
– পাগল হয়ে গেছো তুমি … পাবনা যাও.
– তুমি নিয়ে গেলেই যাবো..
– উফফফফ, এখন আমিই দেখছি পাগল হয়ে যাবো।
– তোমাকে পাগল হতে হবেনা। Just একবার বলে ফেলো..
– কি বলবো আমি?? ভ্রু কুঁচকে বললো রাজ
– এইযে, তুমি আমাকে ভালোবাসো, এইটা বলবা..
– কখনোই না।
– প্লিজ বলোনা..
– বললাম তো বলবোনা..
– বেশি বলতে হবেনা… শুধু_একবার_বলো প্লিজ …
রিয়ার এই কথায় রাজ অবাক চোখে রিয়ার দিকে তাকালো। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো..
– সেইম এই কথাটা একবার আমিও তোমাকে বলেছিলাম রিয়া। কিন্তু সেদিন ও তুমি আমাকে অপমান করে দুর দুর করে তাড়িয়ে দিয়েছিলে…
রিয়া রাজের হাতদুটি নিজের দুহাতের মধ্যে মুঠোবন্দী করে নিয়ে বললো..
– সেদিন আমি ভুল করেছিলাম রাজ। সেটা এখন তুমি আমাকে শুধরিয়ে দাও। আমার মতো একই ভুল তুমিও রিপিট করোনা প্লিজ…
রাজ নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। বললো..
– আমি কোনো ভুল করছিনা। আর একটা কথা..
ভাঙ্গা আয়না দেখেছো কখনো? হাজার চেষ্টা করেও কিন্তু সেটা জোড়া লাগানো যায়না। একটা মানুষের মন ও কিন্তু আয়নার মতোই। আশা করি তোমাকে আর কিছু ভেঙ্গে বলতে হবেনা।
রিয়া আশাহত হয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে রাজের দিকে । আর রাজ অন্যদিকে মুখ করে বসে আছে।
..
To be Continue …..
রাজ মুড অফ করে বসে আছে। আকাশ আর রনি অনেক চেষ্টা করছে রাজের মুড ভালো করতে। রিয়া চলে যাবার পরই ওরা রাজের কাছে চলে এসেছে। এসেই দেখে ওর মুড অফ। এতো করে জিজ্ঞাসা করছে রিয়া কেন এসেছিলো, নাহ উনি বোবা হয়ে বসে আছেন। এক পর্যায়ে আকাশ রেগে গিয়ে বললো.
– চল রনি, আমরা চলে যাই। কার সাথে থাকবো এখানে, যে আমাদের আপনই ভাবেনা তার কাছে থেকে লাভটাই বা কি…
– রাজ, দেখ তুই এমন করলে কিন্তু সত্যি সত্যিই চলে যাবো। আজ কতোদিন পর বসে একটু আড্ডা দিচ্ছলাম। আর তুই মন খারাপ করে বসে আছিস। কি হয়েছে কিছু বলছিস ও না. (রনি)
রাজ মুখ তুলে তাকালো। বললো..
– তোরা যাস না, প্লিজ..
– এখন বল কি হয়েছে, , রিয়া কেন আসছিলো?
রাজ কিছুক্ষন আকাশের দিকে তাকালো… তারপর সবটা ওদের কাছে খুলে বললো।
রনি বললো..
– ওর সাহস হয় কি করে তোকে ভালোবাসার কথা বলার? এতো অপমান করে কি মনের আশ মিটেনি?? এটা নিশ্চয়ই ওর আরেকটা চাল।
বেশ রেগে কথাগুলো বললো রনি। রাজ কিছু বললো না। পাশ থেকে আকাশ বলে উঠলো..
– আমার মনে হয়না ও মিথ্যে বলছে। ও হয়তো ভুল বুঝতে পেরেছে। তুই ওকে মাফ করে দে রাজ।
– এটা তুই বলছিস আকাশ??
– হ্যাঁ, , কেন আমি কি বলতে পারিনা??
– নাহ পারিস না। তুই জানিস ও আমার সাথে কি কি করেছে। ইনফ্যাক্ট ও তোদের সাথেও খারাপ বিহেভ করেছে। সবটা জেনেও তুই এমন বলছিস??
– হ্যাঁ বলছি। তখন ও তোর সাথে আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছিলো নেহালের খপ্পরে পড়ে। এখন তো ও ওর ভুল বুঝতে পেরেছে।
– আকাশ, তুই হয়তো ভুলে গেছিস, আমি রিয়া কে তখন থেকেই ভালোবাসি যখন ওর জীবনে নেহাল নামে কেউ ছিলোনা। তখনও ও আমাকে অপমান করতো। আর নেহাল, ওকে তো রিয়া ভালোবেসেছে আমাকে দুরে সরানোর জন্য।
– তোর কথা ঠিক রাজ। আমরা জানি রিয়া তোকে অনেক অপমান করেছে। কিন্তু এখন তো ও ওর ভুল বুঝে তোর কাছে ফিরতে চাইছে। একটা কথা কি জানিস রাজ, ভালোবাসা সবাই পায় না। আবার কারো কাছে ভালোবাসা না চাইতেও সেধে সেধে আসে। যেমন তুই তোর টাই দেখ,,, তুই রিয়াকে কতো ভালোবাসতি, কিন্তু ও তোকে বার বার ফিরিয়ে দিয়েছে। আর এখন দেখ,,, তুই না চাইতেও সেই ভালোবাসা তোকে বারবার হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এই ভালোবাসাকে অবহেলা করে নষ্ট করিস না রে রাজ।তুই ও তো ওকেই চাস…
.. রাজ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। কিছুই বললো না।
..
রিয়া বাড়িতে গিয়ে ছাদে বসে ছিলো। চিন্তার রেখা তার কপালে স্পষ্ট। রাজকে কিভাবে মানানো যায় সেটাই ভাবছে রিয়া। আচ্ছা, আর কি করলে ওর রাগ ভাঙবে ।কোনো কিছুই মাথায় আসছে না রিয়ার।বাট ওর যে ওর রাজ টাকেই চায়।
– এইসব নানান কিছু ভাবছিলো, এমন সময় রিয়ার ফোনে একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসলো। রিয়া কিছু না ভেবেই ফোনটা রিসিভ করলো । ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো রিয়া। ও পাশ থেকে একটা ছেলের কান্নাজড়িত কন্ঠের আওয়াজ পাচ্ছে সে। কন্ঠটা পরিচিত মনে হলেও ধরতে পারছে না এটা কে হতে পারে। তাই নিজেই জিজ্ঞাসা করলো..
– কে বলছেন? আর কাঁদছেন ই বা কেন?
– ওপাশে কান্নার আওয়াজ আরও বেড়ে গেলো।
রিয়া আবারও বললো..
– দেখুন, আপনার কান্নাকাটি শোনার মতো টাইম আমার নেই। কে বলছেন ঝটপট বলে ফেলুন..
– রিয়া, আমি তোমার ভালোবাসা। তোমার নেহাল। কান্না কমিয়ে বললো..
– what the hello … তোমার সাহস হলো কি করে আমাকে ফোন দেওয়ার?? আর এতোকিছু হওয়ার পরেও তুমি নিজেকে আমার ভালোবাসা বলে দাবী করছো… 😡
– আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি বাবু,, আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ…
– শুনো, আর কখনো আমাকে কল দিয়ে বিরক্ত করবেনা। রাখছি
– প্লিজ, ফোনটা কেটো না। আমার কথা শুনো ..
– তোমার কোনো কথা শোনার মতো টাইম আমার নেই।
– প্লিজ, একটা কথা শুনো..
– তারাতাড়ি বলো, আমার সময় নেই।
– আমার সাথে একটু দেখা করবে প্লিজ।
– sorry, রাখছি।
– দেখো, তুমি যদি আমার সাথে দেখা না করো, আমি নিজের জীবনটা নিজেই দিয়ে দিবো.
– what nonsence. তুমি কি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে দেখা করতে চাও.
– আমি সত্যি বলছি, তুমি যদি আমার সাথে দেখা না করো , আমি এইমুহুর্তে সুইসাইড করবো বলে দিলাম।
রিয়া বেশ বিরক্ত হলো নেহালের কথায়। তারপরও বললো..
– আচ্ছা ঠিকআছে, কোথায় দেখা করতে হবে?
নেহাল রিয়াকে একটা লেকের কাছে আসতে বললো, রিয়া ও মেনে নিলো।
.
বিকেলে লেকের পাড়ে বসে আছে রিয়া। রিয়ার সামনে বসে আছে নেহাল।
রিয়া বললো..
– কি বলবে বলো..
– বাবু, ও আমাকে ঠকিয়েছে। আমাকে ব্যবহার করেছে।ও আসলে অন্য একজনের সাথে ফন্দি করে আমাদের থেকে লুটেপুটে খেয়েছে।
– Just Shut Up. নিজের লিমিট ক্রস করবা না। আমার একটা নাম আছে, ওইসব আলতু ফালতু নামে আমাকে ডাকবা না।
– আগে তো ঐসবই ডাকতাম তোমাকে।
– আগের দিন ভুলে যাও। কেন ডেকেছো সেটা বলো,
– রিনি আমাকে ঠকিয়েছে রিয়া।
– তো?
– আমাকে ক্ষমা করে দাও বাবু, আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। কিন্তু আমার উপর রেগে আছো তুমি। সবকিছু ভুলে আসো আমরা নতুন করে সবটা শুরু করি।
– এইসব বলার জন্য আমাকে ডেকেছো?
– হ্যাঁ, আমাকে ক্ষমা করেছো বলো? রিয়ার হাত ধরে নেহাল বলতে লাগলো..
– Don’t Touch me, আমি চলে যাচ্ছি bye
– প্লিজ আরেকটু থাকো।
– সময় নেই..
– প্লিজ,
.
আকাশ রাজ ও রনি কি একটা উদ্দেশ্যে মার্কেটে যাচ্ছিল। একটা লেক পার করে তারপর মার্কেটে যেতে হয়। কেনাকাটা শেষ করা আসার পথে আকাশ বললো..
– চল একটু লেকের পাড়ে ঘুরে আসি।
– নারে, আমি যাবোনা। তোরা যা, (রাজ)
– মাইর চিনস হালায়? চল বলছি,
ওদের জোরাজুরিতে রাজও ওদের সাথে ভেতরে গেলো। কিছুক্ষন ঘুরে ফিরে যখন চলে যেতে লাগলো তখনই রাজ দেখতে পেলো লেকের পাড়ে বসে আছে রিয়া আর নেহাল। একটা বিদ্রুপের হাসি দিলো সে সেদিকে তাকিয়ে। আকাশ আর রনি ও সেদিকে তাকালো। হতবাক হয়ে গেলো ওরা.. নেহালের সাথে রিয়ার সম্পর্ক স্বাভাবিক। আর ও কিনা বলছে নেহালের সাথে ওর সব সম্পর্ক শেষ ।
.
রিয়া নেহালের বারন করা স্বত্বেও উঠে পরলো … সে আর একমুহুর্ত ও থাকবে না নেহালের পাশে। উঠে দাড়িয়ে পিছনে ফিরতেই ৪২০ ভোল্টের শক খেলো রিয়া। তাদের থেকে কয়েকহাত দুরে দাড়িয়ে আছে রাজ। কিছুক্ষন হতবাক হয়ে দাড়িয়ে থেকে তারাতাড়ি রাজের দিকে যেতে শুরু করলো রিয়া। ততোক্ষনে রাজ হনহন করে চলে যেতে লাগলো। রিয়া দ্রুত হেটেও রাজের নাগাল পেলোনা।
আকাশ আর রনির সামনে গিয়ে দাড়ালো রিয়া। রনি বলতে লাগলো,
– বাহ রিয়া চৌধুরী… গাছের ও খাবেন আর তলারও কুড়াবেন??
– মানে? অবাক হয়ে বললো রিয়া।
– মানে কি বুঝেন না? আপনি কি বলেছিলেন , আপনার আর নেহালের সম্পর্ক শেষ । আর আপনি কিছুদিন ধরে রাজের পিছনে পড়ে আছেন ভালোবাসার দাবী নিয়ে। বাহঃ সবটাই তো দেখলাম এখন..
– তোমরা যা দেখছো সবটা সত্যি.. কিন্তু যা ভাবছো তার সবটাই ভুল।
– কোনটা ভুল..?
রিয়া সবটা খুলে বললো আকাশ আর রনিকে। সবটা শুনে আকাশ বলল..
– আমরা নাহয় বিশ্বাস করলাম। কিন্তু ওকে কিভাবে মানাবেন? কিভাবে বিশ্বাস করাবেন আপনি ? এমনিতেই আপনার উপর ওর অভিমান পাহাড় সমান। তার উপর নেহালের সাথে একসঙ্গে বসে থাকতে দেখেছে ও। এখন কি ও বিশ্বাস করবে?
রিয়া বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো। তারপর ওদেরকে বললো..
– তোমরা প্লিজ ওকে একটু বুঝাও। ওকে আমার লাগবেই। আর ওই নেহালের কারণে যদি আমি আমার রাজকে হারাই, তাহলে ওকে আমি ছাড়বো না। খুন করে ফেলবো ওকে আমি।
– মাথা গরম করলে হবে? ঠান্ডা মাথাই ভাবতে হবে কিভাবে কি করা যায়।
রিয়া যেনো একটু ভরসা পেলো।
.
রাজ বাড়িতে গিয়ে বিকেল থেকে মনমরা হয়ে ছাদে বসে আছে। যেই একটু বিশ্বাস করতে যাচ্ছিলো, সেই বিশ্বাস টাও ভেঙ্গে দিলো রিয়া। রিয়া সেই কখন থেকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে রাজকে। কিন্তু ফোনটা তুলছে না রাজ। বেশ টেনশনে পড়ে গেলো রিয়া। অস্থিরতা কাজ করছে তার মনের ভিতরে। নিজের কোনো ক্ষতি করে দিলোনা তো রাজ। যা অভিমানী ছেলে। আমার উপর অভিমান দেখিয়ে যদি নিজের কোনো ক্ষতি করে দেয়? বেশ অস্থির হয়ে গেলো সে।
.
বার বার কল দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছেনা। যখন ভাবলো এখন ফোনটা রিসিভ না করলে সোজা ওর বাসায় যাবে তখনই ফোনটা রিসিভ করলো রাজ। রিয়া ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো..
– তুমি ঠিক আছো তো রাজ? ফোনটা ধরছিলে না কেন?
– কেন ফোন করেছো? ভাঙ্গা কন্ঠে কথাটা বললো রাজ। কিন্তু রিয়া ঠিক বুঝে গেছে রাজ খুব মন খারাপ করে আছে।
– তুমি কাদছো রাজ?
– আমি কাদবো কেন? আমার কিসের দুঃখ ?
– রেগে আছো?
– কল দিয়েছো কেন সেটা বলো..
– আই লাভ ইউ রাজ..
– বাহঃ একবার নেহাল, একবার রাজ.. কয়জন লাগে তোমার বলোতো? তোমাদের তো অনেক টাকা। তো কয়টা ছেলে যোগাড় করে নাও না। আমার পিছনে কেন পড়ে আছো?
রাজের কথায় রিয়া বেশ রেগে গেলো। অনেক কষ্তাট ও পেলো।তারপরও নিজের রাগকে মাটিচাপা দিয়ে রাজকে বললো..
– তুমি ভুল বুঝছো রাজ?
– ভুল? কোনটা ভুল? কিছুক্ষন আগে যেটা দেখলাম সেটা? নাকি এখন যেটা হচ্ছে সেটা?
– জানি রেগে আছো। আর তোমার রাগ করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভুল বুঝোনা আমায় প্লিজ।
– প্লিজ ফোনটা রাখো। আমি কথা বলার মুডে নেই রিয়া।
– তুমি কি আর কখনোই আমাকে তোমার রিয়া জানু বলে ডাকবে না?
– সেটা ডাকার অধিকার অনেক আগেই আমি হারিয়ে ফেলেছি রিয়া। বলেই ফোন টা কেটে দিলো রাজ। রিয়া আবারও Try করতে লাগলো রাজের ফোনে। আসল কথাটাই যে বলা বাকি। কিন্তু এখন ফোনটা অফ পাচ্ছে রিয়া। বেশ টেনশনে পরে গেলো রিয়া…………………..
.
To be Continue ..