<<<<< এর বেশি ভালবাসা যায় না>>>>>
পর্ব::(৯)
Written:: Ar Limat
দুইদিন ধরে নেহালের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে রিয়া। নেহাল খুব করে চেষ্টা করছে রিয়াকে মানাবার। কিন্তু রিয়া যেনো একেবারেই বেকে বসে আছে। নেহাল খুব টেনশনে আছে। কিভাবে মানাবে সে রিয়াকে? শুরু হওয়ার আগেই যদি সব শেষ হয়ে যায় তাহলে সব স্বপ্ন বিফলে যাবে তার।
।।
রিয়া পার্কের একটা বেঞ্চে বসে আছে। কোথা থেকে নেহাল এসে যেনো রিয়ার পাশে বসে ওর হাতদুটো চেপে ধরলো। আকস্মিক কেউ হাত ধরায় প্রথমে কিছুটা ভয় পেলেও পরে নেহাল কে দেখে অনেকটা অবাকই হয় সে।
– তুমি? এখানে কি করছো?
– রাগ করেছো বাবু?
– দেখো, তোমার এইসব ন্যাকামি আমার একদম ভালো লাগছে না। আমাকে একা থাকতে দাও। বিরক্ত হয়ে বললো রিয়া।
– কি হয়েছে তোমার? তুমি কি কোন কারণে আমার উপর রেগে আছো?
রিয়া এইবার নেহালের দিকে ফিরে বসলো। বললো..
– নেহাল , তোমার মা তোমাদের ছেড়ে চলে গেছে অনেক আগেই। কিন্তু তাও তুমি কেন মায়ের অসুস্থতার মিথ্যা কথা বলে আমার কাছ থেকে টাকা নিলে।
রিয়ার কথায় নেহাল কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। তুতলাতে তুতলাতে বললো..
– তু তুমি কিভাবে জানলে?
– যেভাবেই জানি না কেন, কিন্তু জানতে পেরেছি এটাই সত্যি। তুমি মিথ্যে বললে কেন নেহাল ?
– আসলে, টাকাটা আমার দরকার ছিলো। মায়ের ব্যাপারে লজ্জায় তোমাকে আগে কিছু বলিনি। মাথা নিচু করে বললো নেহাল ।
– তোমার টাকার দরকার আমাকে বললেই তো হতো। আমি কি তোমাকে ফিরিয়ে দিতাম? কিন্তু মিথ্যা বলবে কেন? তোমার মা যদি তোমাদের ছেড়ে চলে যায় সেটাতে তো তোমাদের কোনো হাত নেই।
..
নেহাল কিছু বলছে না। রিয়া লক্ষ করলো নেহাল মন খারাপ করে বসে আছে। রিয়া এক হাতে নেহাল কে জড়িয়ে ধরে বললো..
– যখনই তোমার টাকার প্রয়োজন হবে আমাকে বলবে, আমি তোমাকে টাকা দিবো। কিন্তু মিথ্যা বলবে না ok..
– ok বাবু…
নেহাল রিয়ার গলা জড়িয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে আছে। রিয়া.ও নেহাল কে জড়িয়ে ধরলো। যদিও তার ইচ্ছা ছিলো না। নেহাল জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই উল্টো পাশে কাউকে চোখ মারলো , সাথে একটা শয়তানি হাসি।
.
নেহাল এসেছিলো তার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে পার্কে ঘুরতে। হ্যাঁ গার্লফ্রেন্ড, তবে রিয়া না, অন্যকেউ। একফাকে রিয়াকে চোখে পরলো নেহালের । তখনই নিজের গার্লফ্রেন্ড কে কোথাও লুকাতে বলে রিয়া কে ইম্প্রেস করতে তার কাছে চলে আসলো।
এই এক ঢিলে দুই পাখি মারা, এইরকম আরকি.. রিয়া কেও মানাতে পারলো,,, আর নেহালের আরেকটা সম্পর্কের কথাটাও রিয়া জানতে পারলো না।
..
বাসায় মা বাবার সাথে খেতে বসেছে রাজ । ইদানিং রাজ কে আগের রাজের সাথে মিলাতে পারছে না ওর মা বাবা। এ নিয়ে বাবার যেনো দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে যাচ্ছিলো রাজ । পিছন থেকে ওর বাবা ওকে ডাকলো..
– রাজ ,
– হ্যাঁ আব্বু, কিছু বলবে?
– হ্যাঁ বাবু , আয় আমার পাশে বস..
রাজের বাবা সোফায় বসে ছেলেকে পাশে বসতে বললেন । বাবার কথামত রাজ ও ওর বাবার পাশে গিয়ে বসলো..
– বলো আব্বু, কি বলবে?
– তোর কি কিছু হয়েছে রাজ ?
– নাতো, হটাৎ এই কথা বলছো কেন?
– তুই অনেক পাল্টে গেছিস তাই?
– কই আমি পাল্টেছি? আমিতো আগের মতোই আছি।
– তুই একদমই আগের মতো নেই। রিয়ার সাথে তোর কিছু হয়েছে?
বাবার মুখে রিয়ার কথা শুনে বিষম খাওয়ার মতো অবস্থা রাজের । তাও নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বাবাকে বললো..
– ওর সাথে আবার আমার কি হবে আব্বু?
– না, তবে তোরা দুটো তো সবসময় সাপে নেউলের মতো লেগে থাকিস তাই বললাম।
– না আব্বু, রিয়ার সাথে আমার কিছুই হয়নি। আমার এমনিতেই ভালো লাগছে না।
বাবার উত্তরের অপেক্ষা না করে রাজ নিজের রুমে চলে গেলো।
কিন্তু রাজের বাবা ঠিক বুঝতে পেরেছে রিয়ার সাথেই ওর কিছু হয়েছে। তা না হলে রিয়াকে রিয়া ডাকার ছেলে মোটেই না রাজ …
.
দিন গড়াতে লাগলো। রিয়া আর নেহালের সম্পর্ক ভালোই চলছে। প্রথমে মিম আর রিমা এই নিয়ে ওর সাথে তর্ক করলেও এখন আর করেনা। কারণ, অবুঝকে বুঝানো সম্ভব। কিন্তু যে সবটা বুঝেও অবুঝের মতো থাকে তাকে কোনো ভাবেই কিছু বুঝানো যায় না।
. ইদানীং নেহাল রিয়ার কাছ থেকে বিপুল পরিমানে টাকা নিচ্ছে। রিয়া যদিও মাঝে মাঝে অনীহা প্রকাশ করে তবুও নেহালের সাথে সেটা প্রকাশ করেনা। ছেলেটার মা নেই। টাকা লাগতেই পারে তার। না করলে হয়তো মন খারাপ করবে। তবে দিন দিন এমাউন্টের পরিমানটা বাড়তেই থাকলো।
একদিন দুই লাখ টাকা দাবী করলো নেহাল । সেদিন রিয়া আর নিজের রাগটা কন্ট্রোল করতে নে পেরে নেহাল কে জিজ্ঞাসা ই করে বসলো..
– এতো টাকা দিয়ে করো কি তুমি? মাসের মধ্যে চার পাঁচবার টাকা নেও আমার কাছ থেকে । কেন? আমি কি তোমার জন্য টাকা কামাই করে বসে আছি? বেশ রেগে বললো রিয়া। আর তখনই নেহাল খুব ই মন খারাপ করে বসলো । এবার রিয়া যেনো আরো রেগে গেলো। রেগে গিয়ে বললো..
– একদম নেকামি করবে না । কি ভেবেছো কি তুমি? যখন যত চাইবে তোমাকে আমার ততোই দিতে হবে? কোনো কমনসেন্স নেই তোমার? তুমি জানো আমি একটা মেয়ে এন্ড স্টুডেন্ট। আমি এতো টাকা কোথায় পাই তোমার কি সেটা বুঝা উচিৎ না?
নেহাল খুব কষ্ট পাওয়ার ভাণ করে বলতে লাগলো..
– তাই বলে এভাবে আমাকে টাকার খোঁটা দিবে? দিবেই তো, আমার তো আর মা নেই। থাকলে আর তোমার কাছে চাইতে হতো না। মাই দিতো।
মায়ের কথা শুনে আর নেহালের এইসব ইমোশন মার্কা কথা শুনে রিয়াযেনো গলে বরফ থেকে পানি হয়ে গেলো। বললো..
– দেখো, মন খারাপ করোনা। কিন্তু একবার ভেবে দেখো আমি এতো টাকা কোথা থেকে দিবো তোমাকে?
– কেন, তোমাদের তো অনেক টাকা,, অনেক বড় বিজনেস তোমাদের।
– সে নাহয় বুঝলাম। কিন্তু ওই বিজনেস তো আমার বাবার। আর সেখান থেকে টাকা আমাকে হিসেব করে আনতে হয়। তাছাড়া আমি একটা মেয়ে ।।ইদানিং তোমার জন্য বাবার কাছে বার বার মিথ্যা বলে টাকা আনতে হচ্ছে। বাবা বেশ রেগে আছে আমার উপর। তিনি আমাকে আর একটা টাকা ও দিবেন না।
– আপোষে না দিলে চুরি করে আনো। তবুও আমার টাকা লাগবেই। বেশ কড়া গলায় বললো নেহাল । কেমন যেন নিজের জাত চিনাইতেসে নেহাল
রিয়া এইবার বেশ রেগে গেলো। রাগের চোটে দিলো এক থাপ্পড়। থাপ্পড় খেয়ে মন খারাপ করে চলে গেলো নেহাল ।
তবে নেহালের জন্য কোনো মায়া হচ্ছে না রিয়ার । এতো টাকা দেয় তাও তার হয়না। এতো কি করে সে টাকা দিয়ে। আর এখন কিনা বলছে চুরি করে আনতে। সাহস কত বড় ওর।
রাগে ক্ষোভে বাসায় চলে এলো রিয়া।
পরের দিন ভার্সিটিতে আসার আগেই রনির সাথে একটা পাকা ডিল করে নিলো রাজ ।।
যে আজ থেকে তিশা আর রাজ প্রেমের অভিনয় করবে ।।
যদিও তিশা রনির প্রেমিকা তবে আজ থেকে রিয়ার সামনে রাজের সাথে প্রেমের অভিনয় করবে ।।
রিয়াকে বুঝাবে আসলে কতটা খারাপ লাগে।।
তিশাও রাজি আছে কারন সেও তো চায় রিয়াকে উচিৎ শিক্ষা দিতে।।
রাজ রনি তিশা সবাই ভার্সিটি চলে এসেছে।।
এখন অপেক্ষায় রিয়া কখন আসবে।
তিনজনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো এমন সময় রনি রাজ কে ইশারায় বললো রিয়া আসতেছে।।
তখনই রাজ তিশার হাত ধরে হাসাহাসি করতে করতে ক্যান্টিনের দিকে যেতে লাগল ।।
রিয়া তাদের দিকে তাকিয়ে আছে অবশ্য সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই রাজের।।
বসে ফুসকা খাইতেছে আর জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে রাজ এবং
তিশা।।
উদ্দেশ্য রিয়াকে জালানো আর বুঝানো দ্যেখ কেমনডা লাগে।।
অনেক কষ্ট দিয়েছিস।।দেখ কতটা খারাপ লাগে।।
এমনিতেই নেহালের প্যারা আবার এইসব দেখতে রিয়া মোটেও প্রস্তুত ছিল না ।।
নাহ আর নিতে পারছে না রিয়া।।
কিছু বলতেও পারছে আবার সইতেও পারছে না।।
নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেল রিয়া।।
রাজ তিশা আর রনি অট্টহাসিতে মেতে উঠলো ।।
আর বলল দ্যাখ কেমন লাগে……………….