এক শহর ভালোবাসা পর্ব-২৬+২৭

0
3304

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_২৬
#সুরাইয়া_নাজিফা

স্মৃতি আপু আর আরশ ভাইয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর সবার রাগ আর কৌতুহলী দৃষ্টি তাদের দুজনের দিকেই তাক করে আছে। থাকবেবাই না কেন সেই যে বিয়ের দিন উদাও হয়ে গেল দুজনেই আর আজ তিনমাস পর একসাথে ফিরে এলো অবাক তো হওয়ারই বিষয়।

হঠাৎ শ্বাশুড়ী মা ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে উঠলেন,
“আরশ তুই? এতদিন কই ছিলি আর স্মৃতিকে কই পেলি?”

আমি বড় বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে শানের গা ঘেঁসে দাঁড়ালাম। হয়তো এখনও কেউ বুঝতে পারেনি কিছু। তখনই আরশ বললো,
“আসলে মা আমি আর স্মৃতি….। ”

আরশ ভাইয়া কিছু বলার আগেই বাবা কাছে এসে বললো,
“ব্যাস আর কিছু বলার দরকার নেই।আর কি শুনবে তুমি মায়মুনা দেখে বুঝতে পারছ না এরা দুজন একসাথেই পালিয়ে ছিল। ”

শ্বাশুড়ী মা আঁতকে উঠে বললেন,
“মানে?
তিনি যেন এখনো বিশ্বাসই করতে পারছে না। বাবা মাকে বললো,
“হ্যাঁ মাইমুনা এটাই সত্যি নাহলে একই দিনে দুজনে একসাথে কোথা থেকে আসবে তুমিই বলো? ”
শানের বাবা ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো আরশ ভাইয়ার দিকে,
“তোমার লজ্জা করল না আরশ সেদিন সোহা নামের এই ফুলের মতো মেয়েটাকে বিয়ের আসরে ফেলে রেখে পালিয়ে গেলে।কারো কাছে মুখ দেখানোর যোগ্য রাখোনি আমার প্রাণের বন্ধুর কাছেও ছোট করেছো। তোমার যদি সোহাকে পছন্দ নাই হবে তাহলে বিয়ের আগে কেন বলোনি আমাদের। কেন এই নাটকটা করলে তোমরা দুজন মিলে? ”

আরশ আর স্মৃতি একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে যেন ওরা জানেই না এখানে কি হচ্ছে। হঠাৎ আপু চিৎকার করে বলে উঠল,
“এসব কি বলছেন আপনারা সবাই আমরা দুজনেই কেন পালাবো?”
আরশ ভাইয়াও বললো,
“হ্যাঁ বাবা আমরা পালাবো কেন?আমাদের মধ্যে থুরি না পালানোর মতো কোনো সম্পর্ক আছে। তোমরা কেন এভাবে হা হুতাশ করছো। ”
ওদের কথা শুনে শ্বশুর মশাই অবাক হয়ে বললো,
“তাহলে তোমরা দুজনেই একসাথে কোথায় গায়েব হয়ে গেছিলে সেদিন বিয়ের আসর থেকে ?আর এখনই বা কোথায় থেকে আসলে?”
আরশ হেসে বললো,
“আমি তো ট্যুরে গেছিলাম। তুমি তো জানো বাবা আমার ঘুরতে কতো ভালো লাগে তাই শান ভাইয়া টাকা দিতেই আমি ট্যুরে চলে গেলাম। ”

ওদের দুজনের কথা শুনে আমার মাথায় যেন আসমান ভেঙে পড়ল। মানে? কোন ট্যুরে গেছিলো? আর কি বলে এদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিলো না মানে? আমার মাথা গোল গোল ঘুরতে লাগল। এদের কথা গুলো আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কালকে পর্যন্ত যখন এদের সাথে কথা বলছিলাম এরা টেনশনে মরে যাচ্ছিল।কেউ মেনে না নিলে একে অপরকে ছেড়ে থাকতে পারবে না বলে। মরে যাবে বলছিলো। আর আজ এমন ভাবে কথা বলছে যেন দুজন দুজনকে চিনেই না। না আমার ছোট্ট মাথাটা আর এই চাপ নিতে পারতেছে না। আমি শানের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললাম,

“এসব কি হচ্ছে?”
শান আমার কথা শুনে শুধু হাসছিলো কিন্তু কোনো কথা বললো না।তবে ইশারায় বললো সামনে তাকাতে। আমি পুরা বেকুবের মতো একবার সামনে তাকাচ্ছি একবার শানের দিকে।এরা সবাই মিলে কি কারসাজি করছে সেটাই তো মাথায় আসছে না। তখনই ভূমিকা আপুর কথা শুনে আমি ওদের কথায় মনোযোগ দিলাম।

ভূমিকা আপু কিছুটা টোন কেটেই বললো,
“তা স্মৃতি তুমিও বুঝি ট্যুরেই গিয়েছিলে? ”
ভূমিকা আপু কথা শুনে স্মৃতি আপু থতমত খেয়ে খানিকটা তুতলিয়ে বললো,
” ঐ ম মানে হ হ্যাঁ। আমিও ট্যুরেই গিয়েছিলাম তবে ভার্সিটির ফ্রেন্ডদের সাথে? ”
ভূমিকা আপু একহাতে নিজের নাকটা খানিক চুলকে হেসে বললো,
“আর তোমাকেও টাকাটা নিশ্চয়ই শানই দিয়েছে? ”
স্মৃতি আপু জোরে জোরে মাথা ঝাকিয়ে বললো,
“শান ভাইয়া। ”

ওদের কথা শুনে এইবার সবার টনক নড়ল। আর আমার মাথার স্ক্রু নড়ে উঠল। আপাতত আমার দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। তাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দর্শকের ভূমিকা পালন করছিলাম। এতক্ষন আমার বাবা চুপ থাকলেও এইবার উনি এগিয়ে এসে বললেন,

“তোমরা কি আমাদের সাথে মজা করছো?বিয়ের দিন রাতে তোমরা দুজনেই পালিয়ে গেলে আর এখন এসে বলছো শান তোমাদের টাকা দিলো যাতে ঘুরতে যেতে পারো। তোমরা কি ভেবেছো একটা কথা বললেই আমরা বিশ্বাস করে নেবো।শান তোমাদের মতো কাণ্ডজ্ঞানহীন নয় যে বিয়ের আসর থেকে তোমাদের দুজনকে ঘুরতে পাঠাবে।তোমরা কি ছোট নাকি কি করে এমন একটা জঘন্য কাজ করতে পারো। ”

আপু একটু ভয় পেয়ে গেল। আপুকে সামলাতে আরশ ভাইয়া আমার বাবার কাছে এসে বললো ,
“আরে আঙ্কেল গল্পের মেইন টুইস্টই তো আপনারা জানেন না কেউ। এখানো তো আসল ঘটনা বলা বাকি আছে।”

বাড়ির সবাই একসাথে বলে উঠল,
“আসল ঘটনা মানে? ”

আরশ ভাইয়া একটা দীর্ঘচ্বাস ফেলে বললো,
“শুনুন তাহলে সেই দুঃখের ঘটনা। আমার বিয়ে ঠিক হলো আমি তো অনেক খুশি হলাম এট লিস্ট এই ছাব্বিশ বছরে এসে আমার বিয়ের ফুল ফুটল। বিয়ের জন্য সব প্লান প্রোগ্রাম করে ফেললাম, বন্ধুদের বলা হয়ে গেল, নিজে পছন্দ করে শেরওয়ানি কিনলাম, নিজের বিয়েতে নিজেই নাচানাচি করলাম খুশিতে। কিন্তু কে জানতো আমার সেই খুশি বেশীক্ষন টিকবে না।”
সবাই গোল গোল অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,
“টিকবে না কেন?”
আরশ ভাইয়া কান্নার ভঙ্গিতে বললো,
“সেটাই তো দুঃখের কথা বিয়ের দিন সকালে শান ভাইয়া আমার রুমে আসল। ভাইয়াকে দেখে আমি একটু অবাক হলাম যে সকাল সকাল আমার রুমে কি? ভাইয়ার কি বিয়ের খুশিতে ঘুম আসছে না। ”

তখনই ভাইয়া এসেই বললো,
“আরশ প্লিজ তুই এই বিয়েটা করিস না। ”
ভাইয়ার কথা শুনে আমার খুশিতে একজগ ঠান্ডা ঠান্ডা পানি পড়ে গেল এই শীতের দিনে। আমি মুখ গোমড়া করে বললাম,
“কেন?”
ভাইয়া বললো,
“দেখ আরশ আমি সোহাকে অনেক ভালোবাসি। সোহাকে ছাড়া আমি বাঁচব না। তাই আমি চাই না তুই সোহাকে বিয়ে করিস। তাই তুই বিয়ের দিন রাতে পালিয়ে যা। ”
“কিন্তু আমি যাবো কোথায়?আর সবাই কি বলবে?”
ভাইয়া আমার হাতে ক্রেডিট কার্ডটা দিয়ে বললো,
“যেখানে খুশি সেখানে যা এটা নিয়ে আর বাকি সব আমি সামলে নেবো। ”

তারপর আর কি আমিও চলে গেলাম ওইদিনই ট্যুরে। ”

এইবার আমার শ্বশুরমশাই বললো,
“আর স্মৃতি কেন পালালো?”
স্মৃতি আপু মন খারাপ করে বললো,
“কেন আবার সোহা বিয়ের দিন এসে বললো প্লিজ আপু তুমি বিয়েটা ভেঙে দেও।শানকে বিয়ে করো না। ”
আমি বললাম,
“কেনো?”
সোহা কান্না করে বললো,
” আমি শানকে ভালোবাসি কিন্তু বাবার ভয়ে এটা বলতে পারছি না এখন যদি আরশ ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে হয় আমি কিন্তু সুইসাইড করব বলে দিলাম। ”

ব্যাস ছোট বোনের মুখে এমন কথা শুনলে আর ভালো থাকা যায়,আর ছোট বোন যাকে ভালোবাসত তাকেই বা আমি কি করে বিয়ে করতাম লজ্জা বলতে তো একটা কথা আছে। এখন যদি আমি বিয়ে ভাঙ্গতে চাইতামও বাবা কখনো সেটা হতে দিতো না। তাই আমিও চলে গেলাম আর আমার সব খরচের টাকা শান ভাইয়া দিলো এটাই।

এটাই শোনার বাকি ছিল। এই কথা আমি কখন বলছিলাম।আমি শানের কনুইয়ে জোরে একটা চিমটি কেটে বললাম,
“ওরা এসব কি বলছে মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি?আমি স্মৃতি আপুকে এসব কথা কখন বললাম আর ওরা ট্যুরেই বা কবে গেল? ”

শান হাত ঢলতে ঢলতে বললো,
“উফ কি করছো তুমি চামড়া তুলে ফেলবে তো।”
আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
“বেশ করবো? আগে কারণ বলুন আমাকে?”
শান আমার কানে ফিসফিস করে বললো,
“জাস্ট সি সুইটহার্ট। এখনো অনেক কিছু দেখার বাকি আছে। ”

কথাটা বলেই উনি আবার সামনে তাকালেন। আর এতক্ষনে যে টেনশন স্মৃতি আপু জন্য হচ্ছিল সেটা এখন নিজের জন্য হচ্ছে না জানি বাবা মা আমাকে কি বলে। আমি নিজের নখ খুটতে লাগলাম।

তখনই দুই বাবা আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়ালাম তারা গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে। আমার বুক কাঁপছে তখনই তারা দুজনেই খিলখিলিয়ে হেসে দিলো। এভাবে হাসির শব্দ শুনে আমি দ্রুত মাথা তুলে তাকালাম। বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

“বাবাকে এতো ভয় পাস কেন মা? আমরা কি তোর পর। তুই যদি আমাকে আগেই বিষয়টা বলতি আমি সামলে নিতাম এত কিছু করার কারণই ছিল না। ”

আমি মিনমিনিয়ে বললাম,
“স্যরি বাবা। ”
তখনই আমার শ্বশুরমশাই বললো,
“আরে স্যরি বলার কিছু নাই আমরা কিছু মনে করিনি। হ্যাঁ আমরা রাগ করতাম যদি এটা তোদের বিয়ের আগে জানতে পারতাম আমাদের ডিসিশনের বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য। কিন্তু বিয়ের পর আমরা বুঝেছি সেদিন যদি বিয়েটা হতো তাহলে তোরা কখনোই সুখি হতি না কারণ শান আর সোহার জুটিই বেষ্ট জুটি সেটা আমরা এই কয়েকমাসে বুঝে গেছি। সোহার জন্য শানই পারফেক্ট যে তাকে সবসময় সুখে রাখবে। ”

আমি মাথানিচু করে খানিকটা হাসলাম। বাহ আমি যেই ঘটনাটা নিয়ে এতো ভয় পাচ্ছিলাম সেটা এতো ইজিলি মিটে যাবে বুঝতে পারিনি তো।


আজকে একসাথে সব খুশি ফিরে এসেছে। এই পরিবারের এতদিন যেই অপূর্ণতা ছিল সেটাও পূর্ণতা পেয়ে গেছে।নতুন বছরে সব কিছু এতো ভালো ভালো হবে সব যে নতুন করে ফিরে পাবো সেটা ভাবতেই পারিনি। সবার মুখে হাসি দেখা যাচ্ছে আমারও খুব ভালো লাগছে। শুধু একটা কথা জানার জন্য মনটা আকুপাকু করছে। কিন্তু এদের একজনকেও ভাগে পাচ্ছি না যে জিজ্ঞেস করব। কিন্তু জানতে না পারলেও শান্তি লাগছিলো না।

হঠাৎ দেখলাম শান উঠে চলে গেল রুমের দিকে। শানকে যেতে দেখে চুপিচুপি আমিও রুমে চলে এলাম। রুমের ভিতরে ডুকেই ধুম করে আমি দরজাটা আটকে দিলাম। আমি দরজাটা আটকাতেই শান চমকে উঠে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

“কি করছো এসব? এভাবে দরজাটা আটকালে মানুষ কি বলবে? সবাই নিচে আছে? ”
“কিছু বলবে না আগে আপনি বলুন এসব কি থেকে কি হচ্ছে। ”
শান কিছু না বলে একটা ভাব নিয়ে আবার নিজের ল্যাপটপে চোখ দিয়ে বললো,
“বলেছিলাম তো হেল্প করব করেছি আর কি চাও। ”
আমি উনার সামনে বসে উনার ল্যাপটপটা বন্ধ করে দিয়ে বললাম,
“জানতে চাই মেইন কথা। আপনি সকালে তো এই বিষয়টা আমাকে বলেনি।”
শান ভ্রু কুচকে বললো,
“ল্যাপটপটা বন্ধ করলে কেন?”
“আগে আপনি বলুন। ”

শান নিজের পায়ে পা তুলে বললো,
“অনেক প্লান প্রোগ্রাম করে এই প্লানটা করতে হয়েছে আর তোমাকে বলিনি একটা সারপ্রাইজ দিবো বলে।”
“সারপ্রাইজ? ”
“হুম। দেখো আজকে যদি সত্যিটা বলে দিতাম তাহলে যেই জিনিসটা এতো সহজে মিটেছে সেটা কিন্তু এতো সহজে মিটতো না। সবাই ওদের উপর রাগ করে থাকত। হয়তো ওদের বিয়েটাও আর কখনো মেনে নিতো না। তাই ভাবলাম আমরা চরিত্রগুলোই নাহয় অদল বদল করে নি। এতে বাবা মা আমাদের উপর রাগ করলেও সেটা স্থায়ী হবে না কারণ এতোদিনে তাদের হৃদয়ে তুমি আর আমি এতটুকু জায়গা তো বানিয়েই নিয়েছিলাম। আর আমাদের একটা সেফটি ছিলো আমাদের বিয়েটা হয়েগেছিলো তাই তিনমাস আগে যেটা করেছি সেটা এতো হাইলাইট হতোও না তাই ভেবেই এতো প্লান। ”

আমার চোখ খুশিতে চকচক করে উঠলো,
“ওয়াও জাস্ট মাইন্ড ব্লোইং আমি তো এই প্লান ভাবতেও পারতাম না। ”
শান কিছুটা টোন কেটে বললো,
“মাথায় যদি গোবর ভরা হয় তাহলে এসব প্লান মাথায় আসবে কেমনে? ”
উনার কথা শুনে আমি উনার দিকে তেড়ে গিয়ে উনার কলার ধরে বললাম,
“কি বললেন আপনি? ”

শান আমার কোমড় দুইহাতে জড়িয়ে ধরে আমাকে একটু উনার কাছে নিয়ে আসলেন আর ঠোঁট কামড়ে হেসে বললেন,
“কিছু বলিনি তো তবে এভার বলবো। ”
হঠাৎ উনার কন্ঠে অন্যসুর শুনে আমি উনার কলার ছেড়ে সরতে চাইলাম তখনই উনি আমাকে বললো,
“কি এইমাত্রই তো শেরনী হয়ে ছিলে এরমধ্যেই ভেজা বিল্লি হয়ে গেলে। এতো রূপ বদলাও কেন?”
আমি ধীর কন্ঠে বললাম,
“কোনো রূপ বদলাইনি । ”
“বদলেছো তোমার এই নতুন নতুন রূপে আমি তোমার মাঝে নতুন করে বারবার হারিয়ে যাই আর তোমার সব রূপেই আমি তোমার জন্য পাগল হয়ে যাই। ”
“আচ্ছা এভার ছাড়ুন। ”
“নো এতোটা হেল্প করলাম আমার পাওনাটা বুঝিয়ে দেও আর তারউপর তখনকার ক্ষতিপূরণও তো আছে তাই এখন তুমি আমাকে দুটো কিস করবে হুম নাউ শুরু করো। ”
উনার কথা শুনে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। এমন ভাবে বলছে যেন ছোট বাচ্চা চকলেট চাইছে।
“বাসাভর্তি মানুষ নিচে কে কি ভাববে। এখন না পড়ে দেবো কেমন? ”
“স্যরি বাকির নাম ফাঁকি সোনা আর এইমাত্র আমি এই কথা বলায় কে যেন বলছিলো যে কোনো সমস্যা নেই তাহলে এখন কি হলো। ”

আমি নিজের চোখ সরিয়ে নিলাম। উফ এভাবে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারবো জানলে জীবনেও আসতাম না এখানে। শান আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কি হলো শুভ সময়ের অপেক্ষা করছ নাকি? তাড়াতাড়ি করো। ”

আমি তখনও চুপ ছিলাম। শান আবারও বললো,
“বুঝেছি তোমাকে দিয়ে হবে না আমাকেই করতে হবে। ”
ওনার কথা শুনে আমি দ্রুত বলে উঠলাম,
“না লাগবে না আমি করব। ”
“শিউর। ”

আমি মাথাটা উপর নিচ নাড়ালাম। মুখ গোমড়া করে বললাম,
“এটা একটু বেশী হয়ে যাচ্ছে না পাওনা হিসেবে। ”
“একদমই না এতো হেল্প করলাম এতটুকু তো পেতেই পারি। এইবার কথা না বাড়িয়ে শুরু হয়ে যাও। ”
“আগে আপনি চোখ বন্ধ করেন। ”
“চোখ বন্ধ করতে হবে কেন?”
আমি রেগে বললাম,
“তাহলে কিস করতে পারবো না। ”
শান হেসে বললো,
“ওকে ওকে এতো রাগ করার কিছু নেই। এই নেও বন্ধ করলাম। ”

শান চোখ বন্ধ করতেই আমি ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম উনার দিকে। আমার হৃদপিন্ডটা এতো জোরে জোরে সংকোচন প্রসারণ হচ্ছে বলার বাহিরে। আমি আস্তে করে উনার গালে ঠোঁট ছোঁয়ালাম। হঠাৎ উনার হাতটা আলগা হয়ে আসতেই আমি উনাকে একটা ধাক্কা দিয়ে দরজাটা খুলে বাহিরে চলে গেলাম। আর খিলখিলিয়ে হেসে বললাম,
“এতটাই পাওনা ছিল। ”
শান কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,
“এটা কিন্তু চিটিং হলো এখনি এসো বলছি। ”
আমি হেসে বললাম,
“আপনি বললেই হলো নাকি কোনো চিটিং হয়নি। ”
তারপর আমি নিচে চলে গেলাম।শান নিজের গালে হাত দিয়েই মুচকি হাসল।


নিচে গিয়ে আবার সবার সাথে আড্ডায় যোগ দিলাম। কারো কথা যেন আজ ফুরাচ্ছেই না। এভাবেই কথাবার্তা বলতে বলতে কখন যে রাত বারোটা বেজে গেল কারোরই জানা নেই। আমার বাবা, মা, আপু খাওয়া দাওয়া করে বেরিয়ে পড়ল। যাওয়ার আগে অবশ্য আপু আমাকে জড়িয়ে বলেছিলো,
“তোদের কি বলে ধন্যবাদ দেবো জানা নেই আজ যদি তোরা না থাকতি আমাদের কি হতো গড নোজ। নিজেদের ঘাড়ে দোষ নিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে দিলি। তুইও যেমন শান ভাইয়াও তেমন সত্যিই পারফেক্ট জুটি তোরা।সারাজীবন তোদের যেন এভাবেই দেখি সেই প্রার্থনা করি। ”

আমি আপুর কথার বিপরীতে কিছু না বলে শুধু হাসলাম। সত্যিই শানের মতো মানুষকে হাজবেন্ড হিসেবে পেয়ে আজ নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে।

ঘুমে আমার কিছুই ভালো লাগছিলো না শুধু অপেক্ষা করছিলাম কখন গিয়ে বিছানায় শুবো। আমি একজগ পানি নিয়ে রুমের দিকে যাচ্ছিলাম তখনই ভূমিকা আপু এসে আমার হাত ধরে আড়ালে নিয়ে গেল। হঠাৎ এমন হওয়ায় আমি ভয় পেয়ে বললাম,
“কি হয়েছে এমন করছো কেন? ”
“কিছু হয়নি আমি তো শুধু একটা কথা জানার জন্য তোমাকে এখানে এনেছি। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“কি কথা? ”
ভূমিকা আপু সরু চোখে তাকিয়ে বললে,
“স্মৃতি আর আরশের কথা গুলো মিথ্যা তাই না। তোমরা ওদের বাঁচিয়েছো। ওরা দুজন বিয়ের আসর থেকে একসাথে পালিয়েছিলো? ”
ভূমিকা আপুর কথায় ভয় পেয়ে গেলাম কি বলবো? উনি যদি এসব বাবা, মা কে বলে দেয়। ভূমিকা আপু বললো,
“কি হলে বলো?”
“না তো কে বলেছে তোমায়?”
“দেখো মিথ্যা বলবে না আমি কিন্তু বুঝেছি।”
আর কোনো উপায় না পেয়ে বললাম,
” প্লিজ আপু এই কথা যেন বাবা,মা না জানে। ”
ভূমিকা আপু হেসে বললো,
“পাগলি কেন বলবো? আমি তো জাস্ট বিষয়টা শিউর হওয়ার জন্য তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি বর কিছুই না। এইবার রুমে যাও। ”

ভূমিকা আপু যেতেই আমি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম তারপর রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে দেখলাম রুমে শান নেই হয়তো ওয়াসরুমে। আমি গিয়ে চিৎপটাং হয়ে কোনো রকম চাঁদরটা গায়ে দিয়েই শোয়া মাত্র ঘুম। হঠাৎ চাঁদরে কারো জোরে টান পড়তেই আমি ভয়ে ঘুম থেকে উঠে গেলাম আর রেগে তাকিয়ে থাকলাম মানুষটার দিকে। ইচ্ছা করছে এখনই লবন মরিচ ছাড়া কাঁচা চিবিয়ে খাই।
.
.
চলবে
রিচেক দেওয়া হয়নি বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_২৭
#সুরাইয়া_নাজিফা

উনি আমার শরীর থেকে সম্পূর্ন ব্লাঙ্কেটটা টেনে নিয়ে ওপাশ হয়ে সুন্দর করে শুয়ে পড়ল। এমন ভাবে শুয়ে আছে যেন বিছানায় উনি ছাড়া আর কেউ নাই।আমি রেগে বললাম,
“এটা কি রকম হলো আপনি দেখলেন না আমি ঘুমাচ্ছিলাম ব্লাঙ্কেটটা সম্পূর্ন নিয়ে নিলেন কেন? ”

উনি কোনো উত্তর দিলো না। আমি আরো দুই তিনবার ডাক দিলাম তারপরও সাড়া নেই। আমি বিরবির করে বললাম,
“ওমা এরই মধ্যে ঘুমিয়ে গেল? ”

আমার এতো ঘুম পাচ্ছিল যে আর কথা না বাড়িয়ে উনার কাছ থেকে ব্লাঙ্কেটটা কিছুটা টেনে নিয়ে নিজের গায়ে দিলাম। দিয়ে শুয়ে পড়লাম ঠিক তখনই আমার ব্লাঙ্কেটে আবার টান পড়ল। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাতেই দেখলাম উনি আগের মতোই শুয়ে আমি কোনো কথা না বলে ব্লাঙ্কেটটা আবারও টেনে আবার গায়ে দিলাম রীতিমতো আবার টেনে নিয়ে নিলো এইবার আর রাগটা কন্ট্রোল করতে পারলাম না আমি আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে ব্লাঙ্কেটটা উনার থেকে টেনে নিয়ে বললাম,

“কি সমস্যা কি আপনার? ”
কথাটা বলতেই উনি হুরমুড়িয়ে উঠে বসল। বসেই আমার দিকে ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে বললো,
“দেখলে তো ঘুমাচ্ছিলাম তাহলে এমন করলে কেন?”
“আপনি যে এতক্ষন টানাটানি করে আমার ঘুমটা নষ্ট করেছেন তার বেলা? ”
“তো আমার গায়ে যদি ব্লাঙ্কেটটা না হয় তাহলে আমার কি করার আছে?এতো দূরে গিয়ে শুয়েছো বলেই এমন হচ্ছে। ”
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
“ওমা তাই নাকি?কই এতোদিন তো কোনো প্রবলেম হচ্ছিল না আজই হয়ে গেল?”
শান সরু চোখে তাকিয়ে বললো,
“তোমার কি মনে হয় আমি মিথ্যা বলছি? ”
“আমি কি করে বলবো সেটা তো আপনি জানবেন?”
কথাটা বলতেই শান অন্যদিকে ফিরে নিজের মাথা চুলকালো। আমি উনার কান্ড দেখে ভ্রু কুচকে বললাম,
“আচ্ছা আপনিই রাখুন এটা আমি অন্য আরেকটা নিয়ে আসছি। ”

বলেই আমি অন্য আরেকটা ব্লাঙ্কেট নেওয়ার জন্য উঠতেই উনি আমার হাত ধরে আবার বসিয়ে দিলেন। আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
“কি ব্যাপার? ”
“কোথায় যাচ্ছো তুমি?”
আমি চোখ মুখ কুচকে বললাম,
“ব্লাঙ্কেট আনতে।”
“কেন আমি বলেছি তোমাকে?”
“আপনাকে বলতে হবে কেন আমি কি এই শীতের মধ্যে ব্লাঙ্কেট ছাড়া ঘুমাবো। আপনার নাকি হচ্ছে না তাই আমি আমারটা জন্য আনতে যাচ্ছি। ”
শান রাগি চোখে তাকিয়ে বললো,
“একদম না এখানেই এই ব্লাঙ্কেটের মধ্যেই শুয়ে পড়ো। ”
“কিভাবে আপনি না বললেন দুজনের হচ্ছে না। ”
“হবে যদি তুমি আমার গা ঘেসে এসে ঘুমাও তাহলেই। ”
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
“আপনার সাথে একসাথে? ”
“হুম আমার সাথেই। শুয়ে পড়ো আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে। ”
বলেই উনি শুয়ে পড়ল। আমি কি করব বুঝতে পারছি না তাই বসেই রইলাম। শান আবার ধমক দিয়ে বললো,
“কি হলো ওখানেই সারারাত বসে থাকার ইচ্ছা আছে নাকি? ”
“দেখুন…।”
“নো মোর টক। তাড়াতাড়ি এসো। ”
উনার কথা শুনে আমি উনাকে মুখ ভেঙালাম আর কোনো উপায় না পেয়ে গিয়ে উনার পাশে শুয়ে পড়লাম তবে একটু ফাঁকা রেখে। শান আমারও রাগান্বিত হয়ে বললো,
“মাঝে এতো ফাঁকা রেখেছো কার জন্য।আরো কাছে এসো। ”
আমি উনার আরেকটু কাছে গিয়ে শুলাম। উনি আবারও বলে উঠলো,
“আরো কাছে আসতে পারছো না? ”
এইবার আমি রেগে বললাম,
“অদ্ভুত এইবার কি আপনার বুকের ভিতরে ঢুকে যাবো নাকি?”
শান রাগি চোখে তাকিয়ে বললো,
“প্রয়োজন হলে তাই। শীতকালে একটু গা ঘেসে শুতে হয় তাহলে শীত কম লাগে বুঝেছো। ”

আমি কোনো কথা না বলে চোখ বুজে নিলাম।ঘুমের জন্য কথা কাঁটাকাঁটি করা দায় হয়ে যাচ্ছে আমার। হঠাৎ মনে হলো আমাকে কেউ আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল। আমি দ্রুত শানের দিকে ফিরলাম,

“এটা কি হলো?”
“কি হবে? ”
“এভাবে ধরেছেন কেন?”
শান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
“আমার কোলবালিশ ধরে ঘুমানোর অভ্যাস আজ কোলবালিশ নেই তাই তোমাকে ধরেছি ব্যাস এইবার ঘুমাও। ”
উনার কথা শুনে আমার একটু রাগ হলো,
“মানে আপনি কোলবালিশের পরিবর্তে আমাকে ধরেছেন? এমন অপমান ন। করলে চলছিল না। দেখি ছাড়ুন।”
আমার কথা শুনে শান চোখ বড় বড় করে বললো,
“মানে তুমি কি চাও আমি তোমাকে তুমি ভেবে ধরি। ”
আমি কান্না মাখা কন্ঠে বললাম,
“অবশ্যই আপনি যখন আমাকে ধরেছেন তাহলে আমাকে ভেবেই ধরবেন অন্য কাউকে ভেবে ধরলে তো আমি মেনে নেবো না। ”

শান আমার কথা শুনে ঠোঁট কামড়ে খানিকটা হাসলো। উনার হাসি দেখে আমার আরো জোরে কান্না পাচ্ছে তাহলে জামাই কি আমার হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে?

“বলছি কোথায় যেন পোড়া পোড়া গন্ধ আসছে? ”

“পোড়া গন্ধ মানে? ”

“সেটা তোমাকে জানতে হবে না। ঘুমাও তুমি চুপটি করে।”

“আগে ছাড়ুন আপনি আমাকে। ”

আমি উনার হাত নিজের শরীরের উপর থেকে সরানোর চেষ্টা করতে লাগলাম অনেক অভিমান হচ্ছে আমার। শান রেগে বললো,
“লিসেন আর একবার যদি নড়েছো তো হাত পা বেঁধে শুইয়ে রাখব একদম চুপচাপ থাকো। ”

ওনার ধমক শুনে আমি একদম চুপ হয়ে গেলাম। অভদ্র লোক একটা সবসময় আমার সাথেই এমন করে।
শান কিছুটা বিরক্তির সাথে বললো,

“উফ তুমি মনে মনেও এত জোড়ে জোড়ে কথা বলছো যে আমার ঘুমের প্রবলেম হচ্ছে চুপ করে ঘুমাতে পারছো না। ”

আমি উনার কথা শুনে চোখ পিটপিট করে বললাম,
“আপনি জানলেন কি করে আমি কথা বলছিলাম। ”
“তোমার না জানলেও চলবে ঘুমাও। ”
“না ঘুমাবো না আপনি আমাকে ছাড়ুন আগে আমি কারো সাবস্টিটিউশন হিসেবে থাকতে চাই না। ”
শান চোখ ছোট ছোট করে বললো,
“কি বলছো এসব? তোমার সাথে কারো কোনো তুলনাই হয় না সেখানে তুমি কারো সাবস্টিটিউশন হবে কি করে?”
আমি অভিমান করে বললাম,
“আপনিই বলেছেন। ”
শান হেসে বললো,
“আমি তোমাকে তুমি ভেবেই ধরেছি ওকে এইবার ঘুমাও। ”

কথাটা বলেই উনি আমাকে আরো শক্ত করে উনার বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলেন। আমি উনার বুকে মুখ গুজেই খানিকটা হাসলাম। এটাই তো শুনতে চাইছিলাম আমি। আমার মনের মধ্যে অদ্ভুত একটা সুখানুভূতি হলো আর সাথে ভয়ও। আজ প্রথম উনার এতো কাছে। আমিও আস্তে করে কাঁপা কাঁপা হাতে ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম। হঠাৎ একটা কথা মাথায় আসতেই আমি উনার বুক থেকে মাথা সামান্য উঠিয়ে বললাম,

“আচ্ছা আজকে যে এত কাহিনী হলো তারপর ওদের বিয়ে হবে কিভাবে?”
শান আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“এতো চিন্তা তোমাকে করতে হবে না যখনেরটা তখন দেখবো এখন ঘুমাও। ”

তারপর আমিও উনার বুকে চুপটি করে মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।


সকালে ঘুম থেকে উঠতেই শানের মুখটা আমার চোখে ফুঁটে উঠলো। আজ মনে হচ্ছে অনেকদিন পর এতো শান্তিতে ঘুমালাম আমি। আমি পলকবিহীন শানের মুখপানের দিকে তাকিয়ে আছি। একদম বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে। উনার চোখগুলো অনেক সুন্দর বিশেষ করে চোখের পাপড়ি গুলো।গায়ের রং একদম ফর্সা। কি দরকার একটা ছেলের এতো সুন্দর হওয়ার সেটাই বুঝতে পারিনা আমি। কত মেয়ের আমার বরটার উপর নজর পড়ে কে জানে। আমি আমার এক আঙ্গুল দিয়ে উনার কপাল থেকে স্লাইড করতে করতে ঠোঁট পর্যন্ত আনলাম। হঠাৎ উনি খানিকটা নড়ে উঠতেই আমি হাত সরিয়ে নিলাম। আর নিজের কাজে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলাম।

তিনমাস আগেও যখন উনার সাথে আমার বিয়ে হয় তখনও আমি ভাবিনি আমি উনার সাথে থাকব। এমনটা নয় যে উনার জন্য আমার মনে কোনো অনুভুতি ছিল না তাই।উনার জন্য আমার অনুভুতি ছিল প্রয়োজনের চেয়েও বেশী। আর সেটা একদিনের নয় অনেক বছর আগে থেকে।একটু একটু জমিয়ে ছিলাম। তাই তো উনি যখন আমাকে শাসন করতেন আমার ভালো লাগত, উনি আমাকে কোনো জিনিসের জন্য যদি বারণ করত সেটাই আমি বেশী বেশী করতাম কারণ আমি চাইতাম উনি বারবার আমার কাছাকাছি থাকুক। কলেজে পড়াকালিন যখন কোনো ছেলের সাথে কথা বললে উনি বারণ করতো ওই ছেলেকে বকাবকি করত খুব মজা পেতাম উনার জেলাসি দেখে। তাই উনাকে জ্বালানোর জন্যই বারবার ইচ্ছাকৃত একই কাজ করতাম যাতে উনি আমার উপর অধিকার দেখাতে পারে। উনার আমার প্রতি যত্ন, আমাকে আগলে রাখা, আমার উপর অধিকার দেখানোটাই কংন আমার কিশোরী মনে ওনার জন্য ভালোলাগা তৈরী হয়ে যায় বুঝতেই পারিনি। অনেকবার চেয়েছিলাম উনাকে সবটা সত্যি সত্যি বলতে কিন্তু ভয় হতো যদি সে আমাকে ভালো না বাসে। তাই আর কখনো বলা হয়নি।উনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা, উনার সাথে সবসময় কথা বলার জন্য ঝগড়ার আশ্রয় নেওয়া, উনার কাছে থাকার জন্য উনাকে প্রতি মূহূর্তে বিরক্ত করা আরো কত কি নিজের ব্যবহারে নিজেই অবাক হয়ে যেতাম তবে ওনাকে কখনো বুঝতে দিতাম না।

তবে হুট করে বাবা একদিন বিয়ে ঠিক করে দিল। উনার বিয়ে আপু সাথে ঠিক হয়েছিল বলে খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম ভিতর ভিতর শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম আমি। মনে মনে একটাই প্রার্থনা করছিলাম যে যেকোনো একটা মিরাক্কেল হয়ে যদি এই বিয়েটা না হতো জানি না আমার প্রার্থনাটা কোনো ভবে আল্লাহ শুনে নিয়েছে। বিয়ের দিনই আপু পালিয়ে যাওয়াতে ওনার সাথে আমার বিয়েটা হয়ে যায়। এতো সহজে যে আমি উনাকে পেয়ে যাবো ভাবতেই পারিনি।এইবার ভাবলাম যে না উনাকে সবটা সত্যি বলে দিবো যে উনাকে আমি কতটা ভালোবাসতাম।তাই ফুলসজ্জার ঘরে উনার জন্যই অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম।

কিন্তু উনি যে ব্যবহারটা করলো তাতে আমার সব আশা, আকাঙ্খা এক নিমিষে শেষ হয়ে গেল। উনার কথাগুলো আমাকে সবচেয়ে বেশী ক্ষত বিক্ষত করেছিল উনার গার্লফ্রেন্ড আছে শুনে। সেদিন থেকেই উনার সাথে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করি সাথে ইগনোর তো আছেই। আমার মনে হতো আমার জন্য উনি হয়তো উনার ভালোবাসার মানুষকে পায়নি। আর ঐশীর সাথে দেখা হওয়ার পর সেটা আরো বেশী শিউর হয়ে গেছিলাম। ঐশীর কথা শুনেই বুঝেছিলাম ও শানকে ঠিক কতটা ভালোবাসে। কিন্তু আমি শানকে চিনতাম শান হয়তো আমার প্রতি অবিচার করতে পারবেনা বলে উনার গার্লফ্রেন্ডকে ছেড়ে দিয়েছে আর না চাইতেও আমার জন্য নিজের মনে জায়গা তৈরী করছে এটাই ভেবেছিলাম আমি। তাই সবসময় চাইতাম শান যেন আমাকে কখনো ভালো না বাসে।আমি চাইনি দুজন ভালোবাসার মানুষের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে। তারউপর আপুদের বিষয়টা তো ছিলই। সেটাও শানকে বলা হয়নি যদি শান আমাকে ভুল বুঝে। তাই ভেবেছিলাম আপুদের বিষয়টা মিটমাট হয়ে গেলে আমি চলে যাবো শানকে ছেড়ে। কিন্তু সেটা যে এতো সহজ হবে না সেটা শানের সাথে থাকতে থাকতে আরো তীব্র ভাবে অনুভব করলাম। তাই উনার থেকে দরত্ব বাড়াতে লাগলাম। কিন্তু যতোই দূরত্ব বাড়াচ্ছিলাম শান কেমন যেন ততোই কাছে চলে আসছিলো যেটা আমাকে আরো দূর্বল করছিলো। শান আরো বেশী যত্নশীল হয়ে পড়ল আমার উপর, আরো বেশী অধিকারবোধ দেখাতে লাগলো যার জন্য উনার থেকে দূরে সরতে হবে সেটা ভাবিইনি কখনো।

কিন্তু আমি যে এতটা বোকা সেটা আমি বুঝতেই পারিনি। আমি শুধু শুধু নিজের এতো সুন্দর হাজবেন্ডকে ভাগ বাটোয়ারা করতে চাইছিলাম শুধু মাত্র একটা ভুল বুঝে। যার মনে আমার জন্য এতোটা ভালোবাসা ছিল সেটাকে আমি অন্য কারো জন্য ভেবেছিলাম।ভাবতেই নিজের মাথা ফাঁটাতে মন চাইছে। ভাগ্যিস ঐদিন ওনার কাবার্ড থেকে শাড়ি আর চিরকুটের সাথে একটা ছবিও পেয়েছিলাম।ছবিটা দেখে অবাক হয়েছিলাম এই ছবি উনার কাছে এলো কি করে। এটা তখনের ছবি ছিল যেদিন উনি আমাকে একটা ছেলের সাথে কথা বলার জন্য রাস্তায় সবার সামনে বকে ছিলেন।আমি মুখ গোমড়া করে গালে হাত দিয়ে পড়ার টেবিলে বসে ছিলাম। বাট ছবিটা তু্ললো কখন ছবিটা পেয়ে আমার কৌতুহল হলো তাই তাড়াতাড়ি সেটার পিছন উল্টাতে দেখলাম,

“ভালোবাসি বড্ড আমার বেখেয়ালি। খুব তাড়াতাড়ি তুমি শুধু আমার হবে শুধু আমার। সেদিন তোমাকে আদর সোহাগে সব রাগ ভুলিয়ে দিবো প্রমিজ। ”

লেখাটা দেখেই আমার মনের মাঝে যেই অনুভুতি গুলো সুপ্ত করে রেখেছিলাম এক মূহূর্তে সেটা আবারও জেগে উঠলো। আবার মন বললো উনাকে ভালোবাসতে। আমি যেন প্রাণ ফিরে পেলাম। তবে হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ শুনেই আমি দ্রুত ছবিটা সরিয়ে রেখেছিলাম বাট চিরকুট আর শাড়িটা সরানোর টাইম পাইনি। সেটাই উনি আমার হাতে এসে দেখেছিলেন। তবে উনার উপর আমি খুব রেগে আছি উনি এখনো আমাকে প্রপোজ করেনি। যদিও বেচারা নিজের কাজের মাধ্যমে সেটা অনেকবার বুঝিয়েছে বাট যতক্ষন উনি নিজের মুখে না বলবে ততোদিন পর্যন্ত আমিও কিছু বলব না।

এতক্ষনে তিনমাস আগের কথা গুলো ভাবতেই আমার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। আর লজ্জায় আমি আমার মুখটা নিজের দুইহাত দিয়ে ডেকে নিলাম। ভাবতেই পারছি না এখন এই বদমেজাজি, এরোগ্যান্ট, কিউট, সুইট ছেলেটা শুধু আমারই আমার বর।

“হুম আজকাল আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে আমাকে এভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাওয়া হচ্ছে জানতাম না তো।”

উনার কথা শুনে আমি দ্রুত আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে দেখলাম উনি জেগে আছে।আমি অবাক হয়ে বললাম,
“আপনি না ঘুমাচ্ছিলেন? ”
“হুম ঘুমাচ্ছিলাম তো ভাগ্যিস ঘুমটা ভাঙলো নাহলে তো দেখতেই পেতাম না। ”
“হুম আর ঘুম ভেঙেই উল্টা পাল্টা দেখেছেন শুধু শুধু অশ্লীল কথা বার্তা না বলে ছাড়ুন আমাকে লেইট হচ্ছে। ”
“অশ্লীল কথা এখনো বললাম কই?আমি কি তোমার বডি পার্ট নিয়ে কথা বলেছি না সি…..।”
উনার সম্পূর্ন কথা বলার আগেই আমি লজ্জা পেয়ে উনাকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত উঠে গিয়ে বললাম,
“আপনি সত্যিই অসভ্য। ”

আর একমিনিটও দাঁড়ালাম না। যা বলেছি এরপর না সত্যি সত্যি অসভ্যতামি শুরু করে তাই সরে গেলাম উনার সামনে থেকে। ”


উনি অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলেন তখনই আমি উনার জন্য কফি নিয়ে রুমে ডুকলাম,

“আপনার কফি।”
“টাইম নেই আজ লেইট হয়ে গেল শুধু তোমার জন্য। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“আমি কি করেছি? ”
“কি করোনি তাই বলো আমাকে তোমার নেশায় মাতাল করে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছো তাই তো উঠতে পারলাম না।”
“ওমনি আমার দোষ না। এমন হলে আমাকে ধরে না ঘুমালেই হয়।আমি অন্য রুমে চলে যাই। ”
“স্যরি সুইটহার্ট সেটা পসিবল নয়। আমার ঘুমপরী ছাড়া আমার ঘুম হবে না তাই ভুলেও এই কাজ করবে না তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে। ”
“হুম। ”
“আচ্ছা তুমি টাই বাঁধতে পারো?”
“না। আমার ভালো লাগে না স্কুলে যখন যেতাম আম্মু পড়িয়ে দিতো আর তারপরে তো আর লাগেওনি। ”
“আচ্ছা প্রবলেম নেই আমি শিখিয়ে দিচ্ছি। আমার টাইটা বেঁধে দেও। ”
“আপনি তো পারেন তাহলে আমি কেন?”
“আমি বলছি তাই।কথা না বলে এগিয়ে এসো। ”

আমি আর কথা না বলে উনার কাছে গিয়ে টাইটা নিয়ে নিলাম উনি আমার কোমড়টা শক্ত করে ধরে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন আর বলে দিচ্ছিলেন কিভাবে কি করতে হবে। টাই বাঁধা শেষ হলেও উনি এখনো আমাকে দেখে যাচ্ছে আমি গলা একটু খাঁকারি দিয়ে বললাম,

“বলছি এখন লেইট হচ্ছে না আপনার? ”
“ক্ষতি নেই বরং লাভই হচ্ছে। ”
“কিসের লাভ? ”
“সেটা তোমার মোটা মাথায় ডুকলে তো হয়েই যেত। ”

আমি উনাকে মুখ ভেঙালাম। শান একটু মুচকি হেসে বললো,
“আজ রাতে প্রস্তুতি নিয়ে রেখো কোথাও যাবো। ”
“কোথায়? ”
“পরেই দেখতে পাবে।নাউ বাই ”

কথাটা বলেই উনি আমার গালে একটা ডিপ কিস করে চলে গেলেন।উনি যাওয়ার পরই আমি গালে হাত দিয়ে লজ্জা পেয়ে আয়নার সামনে থেকে সরে গেলাম।
.
.
চলবে

বিঃদ্রঃ অনেক তাড়াহুড়া করে লিখেছি রিচেক দেওয়া হয়নি। বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে