এক শহর ভালোবাসা পর্ব-২৮+২৯

0
2915

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_২৮
#প্রোপোজ_স্পেশাল_১
#সুরাইয়া_নাজিফা

“আমি যে তোমার সাথে এভাবে একসাথে একবাড়িতে থাকছি এতে তোমার বাবা কিছু মনে করবে না তো আফটার অল আমরা উপযুক্ত ছেলে মেয়ে। ”

কথাটা শুনে ঐশীর এতক্ষনের হাসি খুশি মুখটা বেজার হয়ে গেল।আজকে ঐশী অফিসে যায়নি সাথে তিমিরও তাই দুজনে মিলে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। তিমিরের সাথে প্রতিটা সময় কাঁটাতে খুব ভালোলাগে ঐশীর আসলে ব্যাপারটা শুধু সময় কাঁটানোর না ও বুঝতে চাইছে তিমির ওকে ভালোবাসে কিনা নাকি শুধুই বন্ধুত্বের খাতিরে করছে ওর জন্য এতোসব। কিন্তু হুট করেই তিমির এমন একটা কথা বলে দিলো যে ঐশীর মনটা আবারও খারাপ হয়ে গেল।

ঐশী মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বললো,
“হঠাৎ এমন প্রশ্ন করছো কেন? তোমার কি আমার সাথে থাকতে কোনো সমস্যা হচ্ছে? সমস্যা হলে যেতে পারো আমার এতো উপকারের দরকার নেই। ”

“সমস্যা হবে কেন ঐশী আমি তো শুধু একটা প্র্যাকটিক্যাল প্রশ্ন করছি। এভাবে একটা উপযুক্ত মেয়ের ঘরে একটা উপযুক্ত ছেলে দিনের পর দিন থাকছে যেখানে তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই সেটা সমাজও তো ভালো চোখে দেখবে না। তাই বললাম তোমার বাবা কিছু মনে করবে না তো। ”

“দেখো তিমির সমাজের কথা আমি ভাবিনা। তাদের মুখ আছে তারা বলবেই। কই কখনো তো তারা আমার কষ্টে বা বিপদে এগিয়ে আসেনি তাহলে কেন ভাববো তাদের কথা।আমি আমার কাছে ঠিক থাকলেই হলো। তোমার আর আমার মধ্যে এমন কোনো অবৈধ সম্পর্ক নেই যে কারো কথায় কিছু যাবে আসবে আর বাকি রইল বাবা! উনি কখনোই আমার প্রতি কোনো আগ্রহ দেখাননি সেটা তোমাকে আমি আগেই বলেছি তাই উনার কথা বলো না। আমার লাইফে আমি কি করব সেটা আমি ভাববো। সারাজীবন খোঁজ খবর না নিয়ে এইবেলা এসে যদি হম্ভিতম্ভি করে আমি তো মানবো না। ”

তিমির ঐশীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সমানের টি-টেবিল থেকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো,
“ওকে কুল। নেও পানি খাও তুমি সব কথায় এতো রেগে যাও কেন? বাবা মা যেমনই হয় বাবা মা হয়। তাই তুমি এভাবে বলতে পারো না। উনি যদি কোনো বিষয়ের জন্য বারণ করে তাহলে তোমার শুনতে হবে। তোমার বাবার সাথে সম্পর্কটা ভালো করার চেষ্টা করো হয়তো সব আবার আগের মতো হতে পারে। ”

ঐশী বিরক্তি হয়ে বললো,
“প্লিজ তিমির তুমি যেটা জানো না দয়া করে বলো না। বাবা আর আমার সম্পর্ক কখনে ভালো ছিলই না যে আজ ভালো হবে। তারপরেও শান অনেক চেষ্টা করেছিল বাট সেও ব্যার্থ হয়েছিল তাই প্লিজ তুমি এই বৃথা চেষ্টা করো না। আমার বাবা থেকেও নেই আমি এতিম সেদিনই হয়ে গেছি যেদিন আমার মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। ”

বলেই ঐশী হুহু করে কেঁদে উঠল। তিমির ঐশীকে জড়িয়ে ধরল। উফ কি দরকার ছিল কথা গুলো বলার না চাইতেও ঐশীকে বারবার কষ্ট দিয়ে দেয়। কিন্তু ও ভেবেছিলো হয়তো ঐশীর বাবার সাথে সব ঠিক হলে ঐশীই ভালো থাকবে বাট হয়ে গেল উল্টা।

তিমির ঐশীকে শান্তনা দিয়ে বললো,
“আচ্ছা দেখো স্যরি আমি আর কখনো বলবো না প্লিজ এভাবে কেঁদো না প্লিজ।তোমাকে এভাবে কাঁদতে দেখলে আমারও অনেক কষ্ট হয়। ”

তিমিরের কথা শুনে ঐশীর কান্নাটা বন্ধ হয়ে গেল।ঐশী নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
“আচ্ছা তুমি বসো আমি একটু আসছি।”

“কোথায় যাচ্ছো?”
“রান্নাঘরে। ”
“হঠাৎ রান্নাঘরে কেন?”
“রান্না করব তাই। ”
তিমির অবাক হয়ে বললো,
“তুমি রান্না করতে পারো কখনো বলোনিতো? ”
“তুমি তো জিজ্ঞেস করোনি কখনো বলবো কি করে?”
“তাও ঠিক বাট আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে তুমি রান্না জানো?”
ঐশী চোখ ছোট ছোট করে বললো,
“কেন?”
“বর্তমান মেয়ে গুলো এমনিতেও তেমন একটা রান্না জানে না।সময় থাকলেও করতে চায় না। তারউপর তুমি একজন বিজন্যাস ওমেন হয়ে রান্না জানাটা একটু অস্বাভাবিক ব্যাপার সারাদিন তো এসব নিয়েই ব্যাস্ত থাকো সুযোগ কখন পাও। ”
ঐশী হেসে বললো,
“যে রাধে সে চুলও বাঁধে। রান্নাটা একটা আর্ট বুঝেছো। সেটা ভালোবেসে করতে হয়। যাদের ভালো লাগে না তারা করেনা। কিন্তু আমার অনেক ভালো লাগে তাই কাজের ফাঁকে সময় পেলে নিজের রান্ন। নিজেই করেই খাই কি বলো সবসময় তো আর অন্যের হাতের রান্না ভালো লাগে না। ”
“হুম তাহলে আজকে আমাকে রান্না করে খাওয়াও দেখি কেমন রান্না পারো। ”
ঐশী একটি ভাব নিয়েই বললে,
“ওকে। রান্না খেয়ে প্রশংসা না করেছো তো আমার নামও ঐশী না। ”
তিমির হেসে বললো,
“আচ্ছা দেখা যাবে। ”


আরশ অভিমান নিয়ে বললো,
“কালকে যাওয়ার সময় আমাকে বলে গেলে না কেন?”

“ক্ষেপেছো কিভাবে বলতাম যে মিথ্যা কথা বলেছি তার উপর সবাই ওখানেই উপস্থিত ছিল একবার যদি ধরা পড়ে যাই সব শেষ।”

“তাই বলে ইশারায়ও বলা যেত না। ”

“না যেত না। তোমার মতো আমার এতো সাহস নাই। অনেক কষ্টে সব ঠিক হয়েছে আর কোনো ভুল করতে চাই না। ”

“হুম আমিও বাট অনেক মিস করছি তোমাকে কালকে দেখা করি? ”

স্মৃতি মজা করে বললো,
“শান ভাইয়া কি বলেছে ভুলে গেছ এখন নো দেখা দেখি একবারে বিয়ের পর দেখা হবে। ”

আরশ উত্তেজিত হয়ে বললো,
“হোয়াট? বিয়ে কোন বছর হবে তার কোনো ঠিক নেই এতোদিন আমি তোমাকে না দেখে থাকতে পারবো না।আমি জানি না কালকেই দেখা করব। ”

“বাবা এতো উতলা হচ্ছো কেন বলোতো তিনমাস তো একসাথেই ছিলাম এখনো একদিনও হয়নি তারপরও এতো মিস কি ব্যাপার মিস্টার। ”

“সিরিয়াসলি একসাথে ছিলাম বলেই হয়তো তোমাতে এতো আসক্ত হয়ে গেছি।তোমাকে ছাড়া এখন কিছুই ভালো লাগছে না।দিনকে রাত মনে হয় আর রাতকে দিন। মনে হয় পাগল হয়ে গেছি। এখন আর তোমাকে ছাড়া থাকা সম্ভব না প্রিয়তমা। ”

আরশের কথা শুনে স্মৃতি খিলখিলিয়ে হাসলো। আর টোন কেঁটেই বললো,
“বাবা কবি কবি ভাব কবিতার অভাব। ”
“আমি কিন্তু মন থেকে বলেছি। এই বলোতো ওই কথাটা। ”
স্মৃতি না বুঝার ভান করে বললো,
“কোন কথাটা? ”
“যেটা তুমি সবসময় বলো।”
স্মৃতি মজা করেই বললো,
“কি বলি আমি সবসময়? ”
আরশ রাগ করে বললো,
“এখন ডং করছো তাই না। ”
“কিসের ডং। ”
“একদম না বুঝার ভান করবে না তাড়াতাড়ি বলো ঐ থ্রি ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ড। ”

“আমার তো মনে পড়ছে না। ”
আরশ রাগান্বিত হয়ে বললো,
“আচ্ছা তাহলে রাখি শুধু একবার তোমাকে হাতের কাছে পাই হচ্ছে তোমার। ”
আরশ ফোন কাঁটতে যাবে তার আগেই স্মৃতি বললো,
“এই ওয়েট ওয়েট ওয়েট এতো রাগ করছো কেন আমি তো মজা করছিলাম। ”
“আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।। ”
স্মৃতি মন খারাপ করে বললো,
“প্লিজ স্যরি তো। ”
“চাই না আমার কোনো স্যরি। ”
হুট করে স্মৃতি বলে উঠল,
“আই লাভ ইউ।এইবার তো শুনবে। ”
“কি বললে ভালো করে শুনতে পেলাম না একটু জোরে বলো।”
“আই লাভ ইউ। ”
“আরেকটু জোরে? ”
“আরশ আম্মু বাসায় যেকোনো সময় শুনে নিবে কি শুরু করেছো বলোতো।প্লিজ এইবার রাগটা কমাও। ”
স্মৃতির কথা শুনে আরশ হো হো করে হেসে উঠলো আর হাঁসতে হাঁসতে বললো,
“আমি রাগ করেছি সেটা তোমাকে কে বললো?”
স্মৃতি অবাক হয়ে বললো,
“এক্ষুনি তো তুমি রেগে কথা বলছিলে। ”
“ওটা তো তোমার মুখ থেকে ঐ কথাটা শুনবো বলে। একটা কথা বলো কেউ কখনো তার আত্মার সাথে রাগ করতে পারে তাহলে আমি কি করে করব? ”
স্মৃতি রেগে বললো,
“ইউ চিটার। ”
“হুম নিজের পাওনা আদায় করার জন্য একটু চিটিং করলে তাতে দোষের কিছু না। ”
“তুমি না অনেক খারাপ বুঝেছো তো। ”
“প্রেমিকরা একটু খারাপই ভালো এতে প্রেম জমে ক্ষীর হয়ে যায় বুঝলে প্রিয়া। ”

আরশ ফোনের উপর থেকে স্মৃতিকে একটা কিস করল। আরশের কর্মকান্ডে স্মৃতি লজ্জা পেয়ে গেল। এই ছেলেটাও পারে বটে একবারে তো মারবে না এভাবে তিলে তিলে মারবে। আরশ বললো,
“কি ব্যাপার স্মৃতি তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো? ”
স্মৃতি কোনো কথা বললো না। আরশ ঐশীর চুপ থাকতে দেখে আবারও হেসে ফেললো,
“ফোনের ওপারেও এতো লজ্জা পাচ্ছো।তাহলে সামনা সামনি হলে কি হতো। আমার তো তোমার মুখটা এখনি দেখতে খুব ইচ্ছা করছে লজ্জামাখা মুখ খানি। ”

আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সেই কখন থেকে উদ্ভট কথা গুলো শুনে যাচ্ছি। লজ্জা কান থেকে ধোয়া বের হচ্ছে ভাবা যায় নিজের দুলাভাই আর বোনের প্রেম ও আজকাল দাঁড়িয়ে দেখতে হচ্ছে। আমও আর শুনতে পারছিলাম না তাই দরজায় জোরে টোকা দিয়ে একটু গলা খাঁকারি দিলাম। আমার গলার আওয়াজ শুনে আরশ ভাইয়া তাড়াতাড়ি ফোনটা কেঁটে দিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলাম,

“আরে ভাবিজি আপনি এখানে? ”

“ডিসটার্ভ করলাম বুঝি মিস্টার দেবর?কি করবো বলো ভাবী আর শালীদের রাইট আছে তাদের দুলাভাই আর দেবরদের বিরক্ত করার আর সেইদিক থেকে আমার তো আরো বেশী অধিকার কারণ তোমার সাথে তো আমার দুটো সম্পর্কই আছে তাই না? সেদিক থেকে দেখতে গেলে এমন একটি ডিসটার্ভ তুমি ওলওয়েজই পাবে ধরে রাখো। ”

বলে আমি একটু হাসলাম। আরশ ভাইয়া একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“আসলেই তোমার আর আমার সম্পর্কটা এতো কনফিউজিং আর মজবুত না যে আমি না চাইলেও তুমি আমাকে জ্বালাতে এক পাও পিছু ছাড়বে না। ”

এইবার আমি একটু খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম,
“ইয়ে হুই না বাত। আশা করি এরপর থেকে আর বিরক্ত হবে না। ”

“চাইলেও না আফটার অল বড় ভাবী বলে কথা। তা এই টাইমে আমার রুমে কি ব্যাপার? ”

“তোমার চা দিতে আর একটা কথা বলতে এসেছিলাম। ”

“তাই বলে এমন ভুলবাল টাইমে। ”

“আমি কি করে জানবো তোমরা এই টাইমেও প্রেম করছো।এজন্য তো আমাকে এতো কষ্ট করে উপরে আসতে হলো তোমার খাবার দিতে। আফটার অল আবার দেবর আর জিজু বলে কথা বা খাইয়ে তো রাখতে পারি না। ”

আরশ ভাইায়াও কিছুটা মজা করে বললো,
“আহা কতো যত্ন করে আমার। এমন শালী পেলে আর বউয়ের কি প্রয়োজন। ”

“হয়েছে হয়েছে অভিনয় ছাড়ো। এখন কথাটা শোনো। ”

আরশ ভাইায়া একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
“বলছিলাম কি আমার কথা বাকি আছে এখনও কথাটা শেষ করেনি। তুমি ততোক্ষণ ঘুরে আসো। ”

আমি মুখ ভেঙিয়ে বললাম,
“আমার এতো ঠেঁকা পড়ে নাই। কথাটা আপুর সম্পর্কে ছিল শুনলে তুমি নাচতে শুরু করতে। বাট তুমি না শুনতে চাইলে কি আর করার আমি আসি তাহলে। ”

বলেই যেতে নিবো তখনই আরশ ভাইয়া আমার সামনে এসে বললো,
“এটা কি বলছো ভাবীজি আমার কোনো তাড়া নেই প্লিজ বলো। ”

“না না তুমি কথা বলো শুনে কাজ নেই তোমার। ”

“স্যরি কিউটিপাই এইবার বলো। ”
“ভুলে গেছি। ”

“আরে মেরি মা স্যরি বললাম তো প্লিজ বলে দে। ”

কথাটা শুনে আমি মুখ চেঁপে হেসে দিলাম,
“আচ্ছা যাও এইবারের মতো মাফ করলাম। কিন্তু নেক্সট থেকে এমন করলে খবর আছে।”

আরশ ভাইয়া মাথা নাড়ালো। আমি আবারও বললাম,
“আজকে আমরা আমাদের বাড়ি যাচ্ছি ।পারলে শান তোমাদের বিয়ের কথাটা তুলবে হয়তো। ”

কথাটা শুনেই আরশ ভাইয়া খুশিতে আত্মহারা হওয়ার উপক্রম।খুশিতে তো বাচ্চাদের মতো লাফালাফি করছে। উনার অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে আমার পেট ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। আমি নিজের হাসি থামিয়ে বললাম,

“এতো লাফালাফি করার কিছু নেই এখনও এই বিষয়ে কেউ রাজি হবে কি না বলা যাচ্ছে না। ”

“প্লিজ এমনটা বলো না সব ভালো ভালো হোক। ”

“হুম তবে আপুকে বলার দরকার নেই আমরা যাচ্ছি।এটা আমাদের তরফ থেকে ওর জন্য সারপ্রাইজ। ”

“ওকে বলবো না। ”


ঐশী দুপুরে রান্না করে সেটা সার্ভ করে দিলো। তারপর চেয়ার টেনে তিমিরের পাশে বসে পড়ল হাত দুটো টেবিলে ভাজ করে রেখে।
“খাও। ”

“হুম খেতে তো হবেই দেখতে হবে না শুধু মুখেই বড় বড় কথা নাকি কাজেও। ”

ঐশী তিমিরকে মুখ ভেঙালো। তিমির এক লোকমা মুখে দিল কিন্তু মুখ আর তুললো না। ঐশী ভয় পেয়ে গেল। ঐশী তিমিরের দিকে তাকিয়ে বললো,
“কি হলো ভালো হয়নি?”

তিমির মুখ উপরে তুললো। ঐশীর দিকে কিছুক্ষন তাকালো।ঐশী ভ্রু কুচকে বললো,
“কি হলো কথা বলছো না কেন?”

তিমির চোখ মুখে উত্তেজিত হয়ে বললো,
“অনেক ভালো হয়েছে। আমি জাস্ট ভাবতেই পারছি না তুমি এতো ভালো রান্না করতে পারো। ”
ঐশী খুশি হয়ে বললো,
“হুম তাহলে আমি জিতে গেলাম তো? ”
“সেটা তো অবশ্যই। ”
ঐশী নিজের এক পাশের চুল ফু দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো,
“এরপর আমার সাথে চ্যালেঞ্জ নিও না। ”

তারপর ঐশী বসে নিজের প্লেটে খাবার বেড়ে নিলো। ঐশী এক চমচ মুখে দিল তখনই ঐশী বললো,
“তাহলে কি বলো তোমার জন্য ছেলে দেখা শুরু করি। তোমার মতো এতো গুনি মেয়েকে যে ছেলে পাবে সে ধন্য হয়ে যাবে। ”
ঐশী দাঁত দাঁত চেপে রইল এতো রাগ লাগছে। শয়তান ছেলে একটা আসছে আমার জন্য ছেলে খুজতে? কেন তুই বিয়ে করলে কি ক্ষতি হবে।তাহলে কি তিমির আমাকে পছন্দ করে না। ভাবতেই ঐশীর কান্না এসে যাচ্ছে চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে এই বুঝি কান্নারা নামবে ঝমঝমিয়ে। ঐশীর রাগে নাকের পাটা ফুলে যাচ্ছে। ঐশী রেগে তিমিরের কথায় তালে তাল মিলিয়ে বললো হাসার চেষ্টা করে বললো,

“তাই নাকি? ”

“অবশ্যই। ”

“কে বিয়ে করবে আমার মতো এমন রগচটা মেয়েকে সামলাতে পারবে কখনো?”

“হুম কেউ না কেউ তো আছেই তোমাকে সামলাতে পারে এমন? ”

ঐশী আনমনে নিচের দিকে তাকিয়ে নখ দিয়ে টেবিলে আছড় কাঁটতে লাগল
“ওহ আমার কথা ছাড়ো তুমি কেন বিয়ে করছো না? ”

“বিয়ে করবো ভাবছি কিন্তু যে মেয়েকে ভালোবাসি মনে হয় না সেই মেয়ে আমার ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিবে। ”

তিমিরের কথায় এইবার ঐশীর হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে মন চাইছে। তাহলে তিমির অন্য কাউকে ভালোবাসে? আমার সাথেই কেন বারবার এমন হয়। ঐশী নিজের ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করতে লাগলো। তিমির ঐশীর অবস্থা বুঝতে পেরে ঐশীকে বললো,

“ঐশী কি হয়েছে তোমার? কান্না করছো কেন?”

ঐশী কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
“কই না তো?”
“মিথ্যা বলছো কেন? ”

ঐশী কথা এড়ানোর জন্য বললো,
“কত বছর ধরে পছন্দ করো?”

তিমির হেসে বললো,
“বছর না মাস। তিন মাস তবে এই তিনমাসে আমি তাকে এতোটা ভালোবেসেছি যে তারজন্য নিজের জীবন বিলিন করতেও একটুও কষ্ট হবে না।”

ঐশী না চাইতেও খানিকটা হাসলো,
“আচ্ছা তাহলে তুমি যে মেয়েটাকে ভালোবাসো এতো না ভেবে বলে দেও যে তুমি তাকে ভালোবাসো আশা করি তোমার মতো এতো ভালো একটা মানুষকে সে ফেরাবে না। ”

তিমির জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“বলছো?”

ঐশী মুখে কিছু না বলে মাথা নাড়ালো। তিমির বললো,
“তাহলে বলেই দেই বলো?”

ঐশী পারবে না নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যকে প্রোপোজ করার জন্য টিপস দিতে। তাই পালানোর জন্য বললো,
“আচ্ছা আমি রান্নাঘর থেকে আসছি। ”

কথাটা বলে ঐশী উঠে যেতে নিতেই তিমির ঐশীর হাত চেপে ধরলো পিছন থেকে। ঐশী পিছন ফিরে তাকালো আর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তিমিরের দিকে। তিমির নিজের পকেট থেকে একটা আংটি বের করলো ঐশীর সামনে হাটু গেড়ে বসে বললো,

“তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি সেদিন থেকেই তেমার মাঝে অদ্ভুত একটা টান অনুভব করি। না চাইতেও তোমার সাথে ঝগড়া করতে ভালো লাগতো। তোমার রাগ দেখতে বালো লাগতো তাই আবল তাবল কথা বলে তোমাকে রাগাতাম তখনে বুঝতে পারিনি আমি তোমার জন্য কি ফিল করি। কিন্তু যেদিন তুমি এক্সিডেন্ট করো তোমার রক্ত মাখা মুখটা দেখে মনে হয় আমি মরে যাচ্ছিলাম। আমার অন্তর থেকে রক্তক্ষরণ হতে শুরু করলো। পাগলে মতো ছুটলাম তোমাকে নিয়ে।আর ভাবছিলাম যেভাবে হোক তোমাকে বাঁচাতে হবে।অন্তত আমার ভালো থাকার জন্যও তোমাকে বাঁচতে হবে। কারণ তুমি আমার ভালো থাকার ঔযুধ। তখন অনুভব করলাম যে তোমার জন্য আমার মনে যে অনুভুতি সেটা নিছক কোনো বন্ধুত্বের অনুভিতি নয় সেটা হলো ভালোবাসার অনুভুতি। আজ আমি জোর গলায় বলতে পারি আমি তোমাকে ভালোবাসি ঐশী। আই লাভ ইউ। উইল ইউ মেরি মি? ”

ঐশীর হার্টবিট যেন থেমে গেছে ও কি নিজের কানে ঠিক শুনছে? তিমির ওকেই প্রোপোজ করলো। ঐশী আর নিজের কান্না গুলো আটকে রাখতে পারলো না। ধুম করে নিচে হাটু গেড়ে বসে তিমিরের হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে একটা চুমু দিলো। তারপর তিমিরের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আজ প্রথম নিজেকে ভাগ্যবতী বলে মনে হচ্ছে যে ও তিমিরের ভালোবাসা পেয়েছে।
.
.
চলবে

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_২৯
#সুরাইয়া_নাজিফা

“আই লাভ ইউ কথাটা তিন অক্ষরের হলেও এর মর্মার্থ অনেক বেশী। শুধু ভালেবাসি বললেই হয় না এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্যও বুঝতে হয় নাহলে সে সম্পর্ক বেশীদিন টিকে না। আমাকে কেউ যদি সারাজীবন শুধু ভালোবাসি ভালোবাসি বলে যায় আমি সেটা কখনো বিশ্বাস করবো না যতক্ষন না সেটা আমি তার ছোঁয়ায় অনুভব করব, তাকে বিশ্বাস-ভরষা করব, তাকে অন্তর থেকে আপন করে নেবো। কারণ আমি চাই আমাদের সম্পর্কটা শুধু একে অপরের মোহ নয় সত্যিকারের আত্মিক ভালোবাসা হোক যে ভালোবাসা অমর হয়। ”

আমার কথা শুনে শান আমার দিকে কয়েকবার চোখ পিটপিট করে তাকালো। যদিও কথা গুলো বলার সময় আমি উনার মুখের অভিপ্রায় খেয়াল করিনি দূরের ঐ আকাশের দিকে তাকিয়ে শুধু নিজের মনের জমানো কথা গুলো বলছিলাম হঠাৎ উনার দিকে তাকাতেই উনার চাহনি দেখে আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

“কি হলো ওভাবে কি দেখছেন? ”
“না ভাবছি একটা বাচ্চা মেয়ে ভালোবাসা সম্পর্কে এতো জ্ঞান রাখে জানা ছিল না তো। আসলেই বুঝতে হবে বাচ্চাদের মাথা সবসময়েই একটু বেশী চলে তবে এসব জিনিসে বেশী না চলাই ভালো পেঁকে যাচ্ছো দিনদিন। ”

উনার কথা শুনে আমি কোমড়ে হাত দিয়ে ফুঁসতে ফুঁসতে বললাম,
“একদম ফালতু কথা বলবেন না আমি কোনো বাচ্চা নই বুঝেছেন আমার বয়স উনিশ আমি এখন ভার্সিটিতে পড়ি।”

আমার কথা শুনে শান খিলখিলিয়ে হেসে কার্নিশে হেলান দিয়ে বললো,

“শুধু হাতে পায়ে বড় হলে আর ভার্সিটিতে পড়লেই কেউ বড় হয়ে যায় না। বাচ্চাদের দেখলেই বুঝা যায় সে বাচ্চা তার কোনো প্রমান লাগে না। ”

আমি চোখ মুখ কুচকে উনার দিকে তেড়ে গিয়ে বললাম,
“তাহলে একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করেছেন কেন? আপনার নামে তো বাল্যবিবাহের মামলা দেওয়া উচিত। ”

শান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
“হ্যাঁ তোমার মতো বাচ্চাকে বিয়ে করলে এমনটা তো ফেস করতেই হবে এরচেয়ে ভালো কিছু কপালে কি জুটবে। ”

“ওহ তাহলে জানেনই যখন আমি বাচ্চা তো বাচ্চাদেরকে ওমন প্রশ্ন করার দরকার কি ছিল?”

“আমি তো জাস্ট তোমাকে আপ্লাই করে দেখলাম যে আজকাল পড়ালেখা হচ্ছে না মাথায় শুধু এসবই চলছে।”

আমি দাঁতে দাঁত চেপে একটা চিৎকার দিয়ে বললাম,
“আপনাকে কে বলেছিল অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে।সব সময় শুধু জ্বালাবেন। আপনি না আমার হাজবেন্ড মাঝে মাঝে বাচ্চা বাচ্চা না বলে একটু আদর -ভালোবাসাও তো দিতে পারেন। ধ্যাত ভালো লাগে না। ”

আমার কথা শুনে শান স্পিচলেস হয়ে গেছে। গোল গোল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন আমার বলা কথা গুলো সে বিশ্বাসই করতে পারছে না।শান আমার দিকে আগাতে আগাতে বললো,
“কি বললে তুমি? ”

হঠাৎ উনার কথা শুনে আমার হুশ এলো আমি কি বলতে কি বলে ফেলেছি। ভাবতেই আমি জিভ কাটলাম। উফ আমার এই মুখটা জানিনা এতো বেফাঁস কেন? এমন একটা কথা উনার সামনে বলাটা কি খুব জরুরী ছিল। উনাকে আমার দিকে এগোতে দেখে আমি পিছাতে পিছাতে তুতলিয়ে বললাম,

“ক কি ব বলেছি আ আমি? ”
শান আমার দিকে অদ্ভুত চাহনিতে তাকিয়ে বললো,
“জানো না তাই না। ”

আমি কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়ালাম। পিছাতে পিছাতে হঠাৎ আমি ফুলের একটা টবের সাথে পা ভেজে উল্টে পড়ে যেতে নিতেই শান আমার হাত ধরে বসল। আমার বুক ধুকধুক করে কাঁপছিলো। সাথে সাথে শান আমার হাত টেনে উনার বুকের মাঝে এনে ফেললো। আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম। আমি শক্ত করে উনার টি-শার্টটা খাঁমচে ধরলাম।

উনি উনার একহাত আমার পিঠে দিয়ে আরেকহাতে আমার হাত ধরে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসে বললো,
“ভয় পাচ্ছে কেন তুমি?”
আমি মাথা নিচু করেই কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
“ভয় পাবো কেন?”
“হুম সেটা তো তোমার শরীরের কাঁপাকাঁপিই জানান দিচ্ছে। ”
আমি উনার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেলাম। উনার থেকে ছোটার চেষ্টা করে বললাম,
“ছাড়ুন আমাকে যাবো আমি? ”
উনি আমাকে আরেকটু শক্ত করে কাছে টেনে বললো,
“কেন ছাড়বো কেন?তোমার না আদর-ভালোবাসা চাই। ”

উনার কথা শুনে আমার শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল। হৃদপিন্ড এখন প্রথমের তুলনায় আরো দ্রুত গতিতে চলতে শুরু করল।উনি আস্তে আস্তে উনার হাত দিয়ে আমার চুল গুলো সামনে থেকে সরিয়ে দিল। দুই হাতে আমার মুখটা উপরে তুলে ধরল। তারপর পলকহীন ভাবে কিছুৃক্ষন তাকিয়ে রইলেন।তারপর উনার বুড়ো আঙ্গুলো দিয়ে আমার ঠোঁটে স্লাইড করতে লাগলেন আস্তে আস্তে উনার মুখটা এগিয়ে নিয়ে আসলেন আমার দিকে।আমি আমার চোখ বন্ধ করে নিলাম। আজ কেমন এক অজানা শিহরণে শরীর মন কেমন আন্দোলিত হচ্ছে। অদ্ভুত সব ইচ্ছা জাগছে। বাঁধা দিতে চাইছি কিন্তু কোনো অজানা শক্তিতে যেন হাত পা বেঁধে আছে।

হঠাৎ শান আমার কাছে এসে আমার কানে কানে বললো,
“এমন বাচ্চা মেয়েদের উপর আমার কোনো রুচি নেই আগে বড় হয়ে যাও তারপর ভেবে দেখবো। ”

কথাটা বলেই উনি চলে গেল। আমি এখনও ওখানেই স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে আছি।হঠাৎ অনুভব হলো আমার চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল।কি ভেবেছিলাম আর কি হলো?উনি এমন কেন?সবসময় এমন করেই আমাকে দূরে সরিয়ে রাখে। আমিও মেয়ে আমারও ইচ্ছে হয় আমার স্বামীর ভালোবাসা পেতে বাট উনি? এভাবে ইগনোর করলো আমার অনুভুতি গুলোকে।নিজের কাছে নিজেকেই ছোট লাগছিলো ভাবতেই আমি ওখানেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে অশ্রু বিসর্জন করতে লাগলাম।


নিচে নামতেই হঠাৎ ফুফু শ্বাশুড়ীর আগমন দেখে আমি কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম। এই মহিলা বিয়ের পরের দিন আমায় কম কথা শুনায় নি। সবসময় ফোঁড়ন কাঁটতে প্রস্তুত থাকে এখন আবার এখানে কি করতে এসেছে কে জানে? আমি গিয়ে দ্রুত উনাকে সালাম করে উনাকে ড্রয়িংরুমে এনে বসালাম। উনি কর্কশ কন্ঠে বললো,

“তোমার শ্বাশুড়ী কই? আর আরশ?”

আমি নিচু স্বরে বললাম,
“উনারা সবাই যার যার রুমে আছেন। ”
“রুমে থাকলে হবে। যাও গিয়ে ডেকে নিয়ে এসো তোমার শ্বাশুড়ীকে কথা আছে আমার। ”

উনার কথা শুনে আমি একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে শ্বাশুড়ী মাকে ডাকার জন্য উপরে যেতেই দেখলাম মা নিচে আসছে। তাই আমি ওখানেই দাঁড়িয়ে গেলাম। মা ফুফিকে দেখে বললো,

“আরে ননদিনী এই সময় তুমি।আজ আসবে সেটা বলে আসোনিতো। ”
“এখানে এসেছিলাম আমার এক বান্ধবীর বাসায় ভাবলাম তোমাদের দেখে যাই তাই এলাম। শুনলাম আরশ ফিরেছে?”

আমি মনে মনে বিরবির করে বললাম,
“দেখতে এসেছে না কথা শুনাতে এসেছে সেটা তো আমরা ভালোই জানি। ”

শ্বাশুড়ী মাও হয়তো বুঝতে পেরেছে।কারণ এই কয়দিনে আত্মীয়-স্বজনদের ফোন কলের জ্বালায় টিকাই দায় হয়ে যাচ্ছিল। সবার এক কথা আরশ নাকি নতুন বউয়ের বোনকে নিয়ে পালিয়েছে এখন আমার তিনমাস থেকে ফিরে এসেছে? তা কি ডং জিজ্ঞেস করার। উত্তর দিতে দিতেই অতিষ্ট হয়ে গেছে সবাই। তাই মা একটু ইতস্তত করেই বললো,
“হুম। ”

ফুফু মায়ের কান ভাঙাতে বললো,
“দেখছো ভাবী আগে আগেই বলছিলাম না আরশ ওই নতুন বউয়ের বোনের সাথেই পালিয়েছে আমার কথা তখন তো কেউ বিশ্বাস করো নাই। গরীবের কথা বাসি হলেই ফলে।নাহলে এমন বিয়ে থেকে দুজনেই গায়েব হয়ে যায়। ”

“তোরা একটা কথা ভালো করে শুনে নে ওরা পালায়নি বুঝলি এগুলা সব শানের কথা মতো করছে। শান সোহাকে ভালোবাসত তাই স্মৃতিকে বিয়ে করতে চায় নি। ”

“হুম আর মিথ্যা বলে লাভ নেই আমরা ঘাসে মুখ দিয়ে চলি না সব বুঝি।

মা বিরক্ত অনুভব করছে সেটা ভালোই বুঝতে পারলাম তাই আমি মুখ তুলে বললাম,
“মা যেটা বলছে সেটা সত্যি ফুফু। ওরা পালায়নি। ”

ফুফি আমার দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে বললো,
“তুমি তো চুপই করো। তোমাদের বাড়ির মেয়েদের শিক্ষা কি সেটা তো আমি বেশ বুঝেই গেছি। হুটহাট একজন বিয়ের দিন এক ছেলেকে নিয়ে চলে গেছে আরেকজন বাড়ির সেনার টুকরা ছেলেকে বিয়ে করে রাজত্ব ফলাতে এসেছে। ”

উনার কথাটা শুনে রাগে আমার চোখের থেকে পানি চলে আসল। উনি তো কথাটা এমন ভাবে বলছে যেন ওনাদের বাড়ির ছেলেকে আমি কিডন্যাপ করে বিয়ে করেছি। আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল। তখনই শান সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো,

“এই বাড়ির ছেলেরা কেউ বাচ্চা নয় আর না অবুঝ ফুফি যে যেকেউ চাইলে তাদের ভুলিয়ে ভালিয়ে নিজের আয়ত্বে আনতে পারবে। তাই এসব কথা কখনো বলো না। তেমাদের যেটা বলা হয়েছে সেটাই সত্যি। এখন বিশ্বাস করো বা না করো সেটা তোমাদের চয়েজ বাট আমাদের কাছে আর এসব কথা বলতে এসো না তাহলে কিন্তু আমি চুপ থাকব না। ”

শানের কথা শুনে ফুফি একটু নরম হয়ে গেল। কারণ ফুফি শানের রাগ সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানে। ফুফি এভার নরম স্বরে বললো,

“আরে এই কথা কি আমি বলছি নাকি এটা তো বাহিরে সবাই বলাবলি করছে। কোথাও যাওয়াও দায় হয়ে পড়েছে সবাই শুধু একই কথা বলে। তাই তো আমি আসল কথা জানতে এলাম। ”

শান শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে বললো,

“জানা শেষ তাহলে বাহিরে গিয়ে এটাই সবাইকে বলে দিও ওকে। আর তারপরও যদি কেউ এমন কথা বলে তাহলে বলে দিও ওরা যদি পালায় ও তাতে যখন আমাদের কারো সমস্যা হচ্ছে না তাহলে তোমাদের এতো কি সমস্যা। এতো সমস্যা হলে আমার কাছে পাঠিয়ে দিও সব প্রবলেম সলভ করে দেবো অনেক সুন্দর করে খাতির যত্ন করে। ”

ফুফি ভিত চাহনিতে খানিকটা হাসার চেষ্টা করে বললো,
“আচ্ছা আমি বলবো এখন আসি।”
শান হেসে বললো,
“না না এতো তাড়া কিসের এখনও আমাদের খাতিরযত্ন করার সুযোগ দেও। ”
“আরে বাবা কি যে বলিস না বাসায় বলে আসিনি তো বসতে পারবো না পরে আসব এখন যাই। ”

কথাটা বলেই উনি চলে গেল। আমি মুখ টিপে খানিকটা হাসলাম।
“একদম ঠিক হয়ছে। কুটনিবাজ আত্মীয়-স্বজন। ”

হঠাৎ মা ধপ করে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল আমি মায়ের কাছে এগিয়ে গেলাম,

“মা আপনি ঠিক আছেন তো?”
“মান -সম্মানের আর ছিঁটাফোঁটাও রইল না। কিসব কথাবার্তা বলতেছে সবাই। আমাদের নাম তো খারাপ হচ্ছেই সাথে স্মৃতিরও।”
শান রেগে বললো,
“আম্মা তোমাকে এতো চিন্তা করতে হবে না। এমনিতেও অসুস্থ তুমি। ঝামেলাটা যখন আমার জন্যই হয়েছে তাহলে আমিই সলভ করব। ”

কথাটা বলেই উনি চলে গেলেন। আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম কত সহজে আরশের দোষটা নিজের ঘাড়ে নিয়ে নিলো একটু অভিযোগও নাই এমন মানুষের সাথে কি করে রাগ করে থাকব?


শান বসে বসে কাজ করছে। আমি বুঝি না মানুষ সারাদিন এতো কাজ কেমনে করে। হয় অফিসে নাহয় বাসায়। কখনো আমার সাথে বসে তো একটু কথা বলতে পারে। আমি উনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম এমন ভাবে যেন আমি উনাকে দেখতেই পাইনি।

আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ি একটার পর একটা ট্রায়াল করেই যাচ্ছি আর নিজেকে দেখছি কিন্তু একটা শাড়ীও পছন্দ হচ্ছে না। ইতিমধ্যে পুরো ঘরের মধ্যে শাড়ী ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে আমি পুরো নাজেহাল হয়ে গেলাম।হঠাৎ আমার পিছন থেকে কেউ বলে উঠল,

“কি ব্যাপার ভাবীজান পুরো ঘরে শাড়ী ছড়িয়ে রেখেছো কেন? ভাইয়া শাড়ীর নতুন বিজন্যাস শুরু করেছে নাকি? ”

কথাটা শুনে আমি পিছন ফিরেই দেখলাম আরশ ভাইয়া। আমি একবার দেখে আবার আয়নার দিকে তাকিয়ে বললাম,

“তোমার ভাইয়াকেই জিজ্ঞেস করো।তার আগে আমাকে এই শাড়ী গুলার মধ্যে থেকে একটা শাড়ী চয়েজ করে দেও আমার একটাও পছন্দ হচ্ছে না। ”
“আজব সামনে প্রাণ প্রিয় স্বামী থাকতে দেবরকে জিজ্ঞেস করছ এটা কিন্তু ঘোর অন্যায়। ”
আমি রেগে বললাম,
“ভাইয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু তোমাকে যেটা বলেছি করো। ”
আরশ ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“কুল ভাবীজান কুল এতো রাগার কি আছে? ”
আমি চোখ টাটিয়ে বললাম,
“একবার বলেছি না ভাবীজান ডাকবে না আমাকে ভালো লাগে না। এই সম্পর্ক ছাড়াও তোমার সাথে আমার আরো অনেক সম্পর্ক আছে। ”

আমার কথা শুনে শান কাজ ফেলে আমার দিকে তাকালো ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,
“ভাবীকে ভাবী ডাকবে না তো কি ডাকবে? ”

উনার কথাটা কানে আসতেই আমি অন্যদিকে ফিরে তাকালাম। এমন একটা ভাব করলাম যেন আমি তাকে দেখতেই পাইনি। আমি আরশ ভাইয়াকে দুটো শাড়ী হাতে নিয়ে বললাম,
“দেখো তো কোনটা ভালো? ”
আরশ ভাইয়া আমার কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,
“কি বলোতো ঝগড়া হয়েছে নাকি বরের সাথে? ”

কথাটা বলতেই আমি আরশ ভাইয়ার দিকে রাগান্বিত হয়ে তাকাতেই ভাইয়া খানিকটা হেসে বললো,
“আরে আমি তো এমনিই বললাম এতো সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই। ”

আরশ ভাইয়া শাড়ী চয়েজ করছে তার আগেই শান বললো,
“কি কাজে এসেছিস শেষ হলে যা নিজের বউয়ের শাড়ী চয়েজ কর অন্যের বউয়ের এতো হেল্প তোকে কেউ করতে বলেনি। ”

শানের কথাটা শুনেই আরশ ভাইয়া অবাক হয়ে বললো,
“ভাই তুই আমাকে নিয়ে জেলাস ফিল করছিস। ”

শান অন্যদিকে তাকালে। আরশ ভাইয়া খিলখিলিয়ে হেসে দিল। শান বিরক্ত হয়ে বললো,
“তোর কোনো কাজ আছে আধোও নাকি যাবি?”

আরশ ভাইয়া অনেক কষ্টে কোনো মতে নিজের হাসি আটকে বললো,
“না তোমার কালেকশনে নিউ কোনো রিস্ট-ওয়াচ আছে আমার কালেকশন গুলা সব পূরণ হয়ে গেছে।”

“ওয়েট। ”

কথাটা বলেই শান নিজের কাবার্ড খুলে সেখান থেকে একটা ঘড়ি বের করে আরশ ভাইয়ার হাতে দিয়ে দিল। আরশ ভাইয়া ঘড়িটা নিয়ে যাবে এমন সময় আমি আবার বলে উঠলাম,
“ভাইয়া আমার শাড়ীটা চুজ করে দিয়ে যাও।”
শান কর্কশ কন্ঠে বললো,
“আরশ তোকে যেতে বলেছি না? ”
“যাচ্ছি বাবা। জামাই বউ দুইটাই পাগল। ”

আরশ ভাইয়া বেরিয়ে গেল। আমি শানের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
“এখন আমাকে শাড়ী চুজ করে দেবে কে?”

শান আমার দিকে না তাকিয়ে বললো,
“সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না। ”

শান কোথাও একটা গেল।আমার প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে শানের বিহেভ গুলো দেখে।উনি কি চায় নিজেও জানে না। বিরক্ত হয়ে আমি আবার শাড়ী দেখতে লাগলাম। কিন্তু তখনের মতোই নিরাশ হলাম।

তখনই শান আমার সামনে একটা শপিং ব্যাগ ধরে বললো,
“এটা পড়ে নেও। ”

আমি কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম প্যাকেটের দিকে।হঠাৎ আমার জন্য শপিং কি ব্যাপার? তখনই শান ধমক দিয়ে বললো,
“কি হলো নিচ্ছো না কেন? নেওয়ার পর দেখতে পারবে না? ”

উনার ধমক শুনে রাগ উঠে গেল। আমি রেগে বললাম,
“আপনার জিনিস আপনিই রেখে দেন চাই না আমার। ”

কথাটা বলে যেতে নেবো তখনই শান আমার হাতটা ধরে টেনে উনার সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করালেন দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“তোমার কথা কে শুনতে চেয়েছে আমি বলেছি মানে পরতে তো পড়বে দ্যাট’স ইট। তোমাকে যেন এটা পড়েই নিচে দেখতে পাই। ”

কথাটা বলেই উনি নিজের জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে গেলেন। আমি রেগে বিছানার উপর বসে রইলাম। আর নিজের মনে মনে বিরবির করে বললাম,
“পড়বো না আপনার দেওয়া কিছু। সব কথা আপনার মতো হবে না। আমি তখনের অপমানের কথা ভুলে যাইনি। ”

কিছুক্ষনের মতো শান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দুই মিনিটে হিরোর মতো রেডি হয়ে বেরিয়ে গেল। শানকে এতো ভালো লাগছিলো বলার বাহিরে। একটা শেরওয়ানি পড়েছে। পুরোটা কালোর উপরে লাল কুটি, সাথে ঘড়ি, চুল গুলো একপাশ করে কিছু কপালের উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা, খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে ফর্সা মুখ জাস্ট স্পিচলেস।এমনিতে পাঞ্জাবী আমার উইক পয়েন্ট।পাঞ্জবী পড়া সব ছেলেকেই আমার ভিষণ ভালো লাগে সেখানে যদি নিজের হাজবেন্ড নিজের পছন্দ মতো সাজে তাহলে তো কথাই নেই। ইশ ইচ্ছা করছে দৌড়ে গিয়ে উনার কানের নিচে একটু কালো কালি লাগিয়ে দেই না জানি কোন শাকচুন্নির নজর পড়ে আমার জামাইটার উপর বাট নিজের ইমোশন চেপে নিলাম কারণ এখন আমাকে ইগনোর করতে হবে। এতো সহজে তো আমার অপমানের কথা ভুললে চলবে না। আমি আড়চোখে দুইতিনবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম উনিও চলে গেল।

উনি যাওয়ার পর আমি উনার শাড়িটা বাদ নিয়ে নিজের পছন্দ মতো একটা শাড়ী পড়ে একটু হালকা মেকাপ, লিপস্টিক,জুয়েলারি, আর চুল গুলো সুন্দর করে সামনে দিয়ে কার্ল করে কিছু চুল মুখের সামনে ফেলে রাখলাম আর বাকি হাত খোঁপা করে নিলাম। একদম পারফেক্ট লাগছে। তারপর হ্যান্ডব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বেরিয়ে গেলাম।

নিচে গিয়েই দেখলাম সবাই নিচেই আছে শুধু শান ছাড়া। আমি মায়ের কাছে গিয়ে বললাম,
“কি হলো দাঁড়িয়ে আছো যে। ”
“তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। শান বাহিরে ওয়েট করছে চল লেইট হয়ে গেছে আরো দেরী হলে বকা শুরু করবে। ”

আমি মুখ ভেঙিয়ে মনে মনে শানকে অকথ্য ভাষায় একটা গালি দিলাম,
“অসামাজিক লোক একটা। সবসময় এতো অহংকার কোথায় থেকে আসে কে জানে?”

আমরা সবাই গাড়ির কাছে এলাম। শান গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ফোন টিপায় ব্যাস্ত ছিল হঠাৎ আমাকে দেখেই উনি প্রচন্ড রেগে গেলেন। কটমট চোখে কিছুক্ষন আমাকে আগা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলেন। আমার সাথে কোনো কথা না বলে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,

“তোমরা গিয়ে গাড়িতে বসো আমি এক্ষুনি আসছি। ”

কথাটা বলেই উনি আবার চলে গেলেন বাড়ির ভেতরে।সবাই গাড়িতে বসল। যেহেতু একটা গাড়িতেই সবাই যাচ্ছি তাই আরশ, বাবা, মা বসার পর সামনের শানের পাশের সিট ছাড়া আর বসার জায়গা পেলাম না। কিছুক্ষন পর শান এসে গাড়িতে বসে ঠাস করে দরজাটা বন্ধ করলেন। আমি নিজের কানে হাত দিয়ে উনার দিকে তাকালাম। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন নিজের সব রাগ ঐটার উপরেই ছাড়লেন। অদ্ভুত লোক। তারপর উনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন।


কিছুক্ষন পর গাড়ি এসে থামল আমাদের বাড়ির সামনে। সবাই গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে গেল মাঝে আমার শাড়ীটা ঠিক করতে গিয়ে আমি একটু পিছনে পড়ে গেলাম। কাজ শেষ করে এগোতে যাবো। হঠাৎ করে আমাকে টান দিয়ে কেউ গাড়ির আড়ালে নিয়ে গাড়ির সাথে চেপে ধরল আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম।কিন্তু যখন আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখলাম তখন মনটা শান্ত হলো না আমি সেইফ আছি।

আমি বললাম,
“এমনটা কোনল মানুষ করে আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছি?”

শান আনার হাত দুটো শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
“দুপুর থেকে আমাকে এভাবে ইগনোর করার মানে কি?”
আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,
“আপনাকে ইগনোর করব কেন আপনি কি কিছু করেছেন?”
শান রেগে বললো,
“লিসেন একদম কথা ঘুরাবে না শাড়ীটা পড়নি কেন? পড়তে বলেছিলামতো? ”
আমি দৃঢ় কন্ঠে বললাম,
“আপনার সব কথা শুনতে আমি বাধ্য নই। ”

কথাটা বলতেই শান আমার দিকে হিংস্র চোখে তাকালো। আমার দুপাশে হাত রেখে জোড়ে গাড়িতে ঘুশি মারল আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম। শান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
” কি চাও তুমি? ”

উনার কথা শুনে আমি মাথা তুলে ছল ছল চোখে উনার দিকে তাকালাম। কিছু বলব তখনই একটা মেয়েলি কন্ঠে আমার নাম ধরে ডাকতে শুনলাম। আড়াল থেকে মাথাটা একটু উঁচিয়ে দেখলাম স্মৃতি আপু। আমি আওয়াজ দিয়ে বললাম,
“আসছি। ”

স্মৃতি আপুর আওয়াজ শুনে শান আমার থেকে দূরে সরে দাঁড়ালো। আমি পাশ কেঁটে যাওয়ার সময় বললাম,
“আপনার স্ত্রী হওয়ার সম্মান। ”
.
.
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে