এক শহর ভালোবাসা পর্ব-২৫

0
3180

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_২৫
#সুরাইয়া_নাজিফা

সকালবেলা থেকে রান্না করতে ব্যাস্ত আমি।আজকে পুষ্পরা আসবে।অনেক খুশি লাগছে কতদিন পর পুষ্পকে দেখব।সাথে আমার বাবা মা ও আসবে। ছোট একটা গেট টুগেদারের আয়োজন করা হয়েছে। আমার সাথে রহিমা আন্টিও একটু সাহায্য করে দিচ্ছে। নিজেকে দেখে নিজেই অবাক হই তিনমাস আগেও যেই আমি রান্নার” র” ও জানতাম না। আর সেখানে আজ সব রান্নাই জানি। আসলেই মেয়েদের জীবনটাই অদ্ভুত। তবে শান যদি এখনও রান্না করতে দেখে খুব বকে আমাকে। কিন্তু আমি শুনলে তো।কারণ আমি জানি শান মুখে আমাকে বারণ করলেও সে আমার রান্না খেতে খুব পছন্দ করে। আর রীতিমত আমি রান্নাটাও এই জন্যই করি। আমারও ভালো লাগে শানকে রান্না করে খাওয়াতে।

এখন রান্না করছি মোরগ পোলাও। শান অনেক পছন্দ করে।আমি সব উপকরণ দিয়ে কসিয়ে রাখলাম। তারপর মাংসটা তুলে রেখে আগে থেকে আধ সেদ্ধ থাকা চালটা দিয়ে নাড়তে লাগলাম তখনই শ্বাশুড়ী মা এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন। মাকে দেখে আমি বললাম,

“কি ব্যাপার মা তুমি এখানে কেন তোমাকে না বললাম রেস্ট নিতে আবার রান্নাঘরে এলে কেন?”
“আরে আমি ঠিক আছি এখন এতো চিন্তা করিস না। তুই তো আমাকে পার্মানেন্টলি ছুটিই দিয়ে দিয়েছিস এখন সারাদিন বসে কি করব । ”
আমি হেসে বললাম,
“হুম এখন রেস্ট করো সারাজীবন তো করেই এসেছো এখন আমি আছি না আমি সামলে নেবো। ”
আমার কথা শুনে মাও হাসল। আমি আবার রান্নায় মন দিলাম।

কিছুক্ষন পর মা বললো,
“জানিস তো সোহা তোকে যখন আমরা দেখেছি তখন তুই অনেক ছোট ছিলি। এই ক্লাস এইট-নাইনে পড়তিস হয়তো। এতো দর্শী মেয়ে ছিলি তোর মা সবসময় বলতো তোকে কে বিয়ে করবে? কিভাবে সংসার সামলাবি? সেই চিন্তায় তোর মা চিন্তিত থাকত। কিন্তু আজ তোকে দেখে আমি আগের সোহা আর এখনের সোহাকে মিলাতেই পারছি না। কি সুন্দর একদম পাক্কা গৃহিনী হয়ে গেছিস। একদম নিজের হাতে নিজের সংসারটা গুছিয়ে নিয়েছিস। এটা দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি। সময়ের সাথে সাথে তোর ম্যাচিউরিটিটাও বেড়েছে। আশা করি শানকে তুই সবসময় ভালো রাখবি। ”

আমি মাথা নিচু করে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম।কিন্তু কিছু বললাম না।
শ্বাশুড়ী মা আবার বললেন,
“কিরে কথা বলিস না কেন? ”
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“হুম মা রাখবো খুশি। এইবার দেখো তো টেস্ট করে কেমন হয়েছে? ”
মা হেসে একটু খেয়ে বললো,
“তুই রেধেছিস ভালোই হবে। তা সব রান্না শেষ? ”
“হুম মা এইতো পোলাওটা হলেই অলমোস্ট কমপ্লিট। ”

তখনই রহিমা আন্টি এসে বললো,
“সোহা মা তোমারে শান বাবা ডাকে কফি লইয়া যাওয়ার লাইগা।”
আমি আরেকটা চুলায় কফি বানিয়ে মগে ঢেলে রহিমা আন্টির হাতে দিয়ে বললাম,
“আমার কাজ আছে এখন যেতে পারবো না তুমি গিয়ে দিয়ে দেও। ”
তখনই মা এগিয়ে এসে বললেন,
“তোকে নিয়ে যেতে বলেছে যখন তুই যা না। রান্নাটা আমি দেখছি। ”
“কিন্তু মা…..।”
“কোনো কিন্তু না যা এখন। ”

আমি কফিটা নিয়ে উপরে চলে এলাম।শান বসে বসে মোবাইল টিপছিল আমি গিয়ে ওনার সামনে কফিটা রাখতেই উনি মাথা তুলে তাকালেন।
আমি বললাম,
“আপনার কফি। ”
শান আমার দিকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একবার দেখে নিলেন ড্যাবড্যাব করে। উনার এমন তাকানো দেখে আমি একটু ইতস্তত করে বললাম,
“আরে এভাবে কি দেখছেন? ”
শান কোনো কথা না বলে হঠাৎ ফোনের ক্যামেরা অন করে আমার ছবি তুলে নিলেন। উনার ব্যবহারে আমি অবাক হলাম,
“আজব তো এই পাগলের বেশে আমার ছবি তুলছেন কেন?”
শান অবাক হয়ে বললো,
“পাগল?”
“তা নয়তো কি?”
শান নিজের ঠোঁট কামড়ে হালকা হেসে বললো,
“যে অবস্থা আছো সেটা দেখলে যেকোনো মানুষ হার্ট এট্যাক করবে। ”
আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম,
“মানে?”
“মানে একটা বাচ্চা মেয়েকে যখন কেউ একদম এমন গৃহিনী রূপে, চুল হাত খোপা করে, শাড়ি কোমড়ে গুজে সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাহলে সামনের মানুষটার কি হবে সেটা কি সে জানে তাই প্রমান রাখলাম যদি আমার কিছু হয় তাহলে সেই মেয়ের ঐ রূপটাই দায়ি। ”

শানের কথা শুনে আমি লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। তাড়াতাড়ি করে চুলটা খুলে দিয়ে কোমড় থেকে আঁচলটাও ছেড়ে দিলাম।
“এটা কি হলো?”
“কি হবে আমার কারণে কারো ক্ষতি হোক সেটা চাই না তাই ছেড়ে দিলাম। ”
শানও মুচকি হাসল আমার কথা শুনে।
“আজকে আরশ আর তিমির এই বাড়িতে আসবে জানো তো?”
শানের কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম আর চেঁচিয়ে বললাম,
“এই বাড়িতে আসবে মানে?”
“আস্তে বলো সবাই শুনবে। দেখো আজকে যেহেতু সবাই একসাথে একই জায়গায় থাকবো তাই যা ডিসিশন হওয়ার সেটা একসাথে হয়ে গেলেই ভালো হবে। পরে যখন ওরা ফিরবে ওদের আলাদা আলাদা বাড়িতে যেতে হবে। সেটা না করে আজকেই ওদের এই নাটকটা শেষ করা প্রয়োজন। এমন সুযোগ আর পাওয়া যাবে না। ”
“কিন্তু আমাকে আগে বলেননি কেন? ”
“আগে কখন বলবো সকালেই ঠিক করলাম তুমি বিজি ছিলে তাই বলা হয়নি এখন বললাম তো। ”
আমি হুট করে সোফায় বসে পড়লাম পাশে থাকা জগ থেকে পানি ঢেলে ঢকঢক করে একগ্লাস পানি খেয়ে নিলাম। শান আমার পাশে বসে বললো,
“কি হয়েছে তোমার? ”
“খুব ভয় করছে জানি না কি হবে।যদি কেউ না মানে?”
শান আমাকে আশ্বস্থ করে বললো,
“যা হবে ভালোই হবে আমি আছি তো।”
আমি শানের দিকে তাকাতেই উনি হাত দিয়ে ইশারায় হাসতে বললেন। আর আমিও ভরষা পেয়ে একটা ছোট্ট হাসি উপহার দিলাম।


শানের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে আবার রান্নাঘরে গেলাম। তারপর রান্না শেষ করে আমি গোসল করতে গেলাম। বেশ অনেক সময় নিয়ে শাওয়ার নিলাম। শাওয়ার শেষে বের হতেই কেউ এসে আমার কোমড়ে ঝাপটে ধরল। হঠাৎ এমন হওয়াতে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আমি কিছুটা চিৎকার করেই বললাম,

“কে?”
তখনই কেউ খিলখিলিয়ে হেসে বললো,
“ইয়ে মিষ্টি ভয় পেয়েছে মিষ্টি ভয় পেয়েছে। ”
পুষ্প হাত তালি দিচ্ছে আর লাফাচ্ছে। পুষ্পকে দেখে আমার মুখে এতক্ষনের ভয়ের জায়গায় হাসির রেখা ফুঁটে উঠল। আমি নিচে হাটু গেড়ে বসে পুষ্পকে ধরে বললাম,
“বাহ খুব মজা তাই না মিষ্টিকে ভয় দেখিয়ে আমি কতো ভয় পেয়েছি তুমি জানো?”
পুষ্প আমার গলায় জড়িয়ে বললো,
“স্যরি মিষ্টি একটু মজা করেছিলাম। ”
আমি পুষ্পর গাল টেনে বললাম,
“কেনো সমস্যা নেই সোনা। তা তোমরা কখন এলে। ”
তখনই একটা মেয়েলি কন্ঠে বললো,
“এইতো কিছুক্ষন আগে। সবার সাথে দেখা করে চলে এলাম তোমার কাছে। ”
আমি ভূমিকা আপুকে দেখে মুচকি হাসলাম তারপর উনার কাছে গিয়ে কুশল বিনিময় করে বললাম,
” কতো মিস করেছি করেছি তোমাদের। ”
“মিস করলে একবারও যাওনি কেন ঢাকায়। পুষ্প তো সবসময় তোমার কথাই বলে।স্কুল বন্ধ দিতে না দিতেই আমাদের তো পাগলই করে দিয়েছে নিয়ে আসার জন্য। ”
“হুম আমারও পুষ্পর কথা সবসময় মনে পড়ত কিন্তু এখানে এই কয়েকমাসে এতো ঝামেলা গেছে যে যাওয়ার সময়ই পাইনি। তা থাকবে তো কিছুদিন?”
“হুম তা তো থাকবোই। ”

আমি আর ভূমিকা আপু অনেকক্ষন আড্ডা দিলাম। তারপর খাওয়ার জন্য ডাকতেই আমরা সবাই নিচে নেমে গেলাম। আমি সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিলাম। ভূমিকা আপুরা জার্নি করে এসেছে তাই পুষ্পকে আমিই খাইয়ে দিচ্ছিলাম আর আপুকে খাওয়ার জন্য বসিয়ে দিলাম। সাম্য ভাইয়া খেতে খেতে বললো,
“ওয়াও রান্নাটা অনেক ভালো হয়েছে কে করেছে?”
মা বললো,
“আজকে সব রান্না সোহাই করেছে। ”
ভূমিকা আপু অবাক হয়ে বললো,
“বাবা সোহা এতদিন শুধু মায়ের মুখে তোমার প্রসংশাই শুনেছি এখন বুঝতে পারছি কেন এতো প্রসংশা। তুমি যখন এই বাড়িতে বিয়ে হয়ে এসেছিলে তখন কোনো রান্না জানতে না আমার বেশ মনে আছে। এই কয়েক মাসেই এতো পরিবর্তন। ”
আমি কিছু না বলে শুধু হাসলাম। শান মাথা নিচু করে খেয়েই যাচ্ছিল তখনই ভূমিকা আপু একটু কাশার অভিনয় করে বললো,
“তা শান বউয়ের রান্না পছন্দ হচ্ছে তো?”
শান খেতে খেতে বললো,
“কেউ ভালো রান্না করলে পছন্দ হতেই পারে। ”
“হুম দেখতেই পাচ্ছি এজন্যই তো কোনো কথা না বলে খেয়েই যাচ্ছো।এমন বউ হলে পছন্দ না হয়ে কোনো উপায় আছে। ”

ভূমিকা আপুর কথা শুনে সবাই খিলখিলিয়ে হেসে উঠল আর আমি লজ্জায় মাথা নিচে নামিয়ে নিলাম।আর শান দ্রুত খাবার টেবিল থেকে উঠে গেল বাঁচার জন্য।


বিকাল আর দুপুরের মাঝামাঝি সময়টাতে আমি,ভূমিকা আপু আর পুষ্প এসে পুল সাইডে বসলাম। আমাদের বিপরীতে শান আর আরশ ভাইয়া হয়তো বিজন্যাস সম্পর্কিত কথা বলছে। তাতে আমার কোনো আগ্রহ নেই। ভূমিকা আপুও অনেক কথা বলছে আমি শুধু হেসে হেসে তার কথার শায় দিচ্ছি ঠিকই কিন্তু আমার এক কানে কথা ঢুকছে অন্য কান দিয়ে কথা বেরিয়ে যাচ্ছে।আমি নখ কামড়াচ্ছিলাম আর আপুর কথা ভাবছিলাম। আমার তো প্রচুর টেনশন হচ্ছিল। আজকে যখন আরশ ভাইয়া আর স্মৃতি আপুকে সবাই একসাথে দেখবে তখন যে কি হবে ভাবতেই আমার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ার উপক্রম।

তখনই ভূমিকা আপু বললো,
“এই সোহা কি হয়েছে? আমার কথা শুনেছো তুমি। ”
ভূমিকা আপুর কথা শুনে আমি ঘোর থেকে বেরিয়ে সোজা হয়ে বসে বললাম,
“হুম হ্যাঁ শুনেছি তো। ”
ভূমিকা আপু বললেন,
“তারপর কি হয়েছে জানো পুষ্প তো ডিলই মেরে দিয়েছে ওই ছেলেটার কপালে। ”

শুনেই এতো টেনশনের মধ্য আমার হাসি এসে গেল। আর ভূমিকা আপুও হো হো করে হেসে উঠল। আসলে ভূমিকা আপু আমাকে পুষ্পর দর্শীপনার কথা বলছিলো। স্কুকে কোন ছেলের সাথে ঝগড়া করে মাথা ফাঁটিয়ে দিয়েছে।

“আচ্ছা আপু কমলাকে কি ঢাকায় রেখে আসছো? ”
“হ্যা তবে আমরা এখানে আসাতে ও ওর গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। নাহলে ওকেও নিয়ে আসতাম। ”
“ওহ। ”

এসব নিয়ে কথা বলতে বলতে তখনই পুষ্প দৌঁড়ে এসে বললো,

“মিষ্টি চলো আমরা খেলবো। ”
আমি ইনিয়ে বিনিয়ে বললাম,
“আমি এখন খেলবো না সোনা। আমার ভালো লাগছে না। তুমি একা খেলো না। ”
পুষ্প বায়না ধরে বললো,
“না না তোমাকে খেলতেই হবে আসো। ”

পুষ্প বেশী বায়না করছিলো আমি আর কি করবো কোনো উপায় না পেয়ে পুষ্পর সাথে খেলার জন্য উঠলাম। আমার মন একটু খারাপ ছিলো। শানের চোখ আমার চোখে পড়তেই শান ইশারায় বললো,
“কি হয়েছে? ”
আমি মাথা নাড়ালাম। কিন্তু উনি হয়তো বুঝতে পারলেন আমার চিন্তাটা কোথায় হচ্ছে তাই উনি আমাকে ইশারায় সাহস জোগানোর চেষ্টা করছিলেন। উনার আমার প্রতি এতো খেয়াল দেখে আমার মনটা খুশিতে নেচে উঠলো।

হঠাৎ শানের ফোনে কল আসতেই শান আমাদের থেকে একটু দূরে উঠে গিয়ে একবারে পুলের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।আমি পুষ্পকে উদ্দশ্যে করে বললাম,

“কি খেলা খেলবে বলো?”
“দৌঁড়া দৌঁড়ি খেলা। ”
আমি চমকে উঠে বললাম,
“এটা আবার কেমন খেলা? ”
“আছে আমরা স্কুলে খেলি। আমি দৌঁড়াবো আর তুমি আমাকে ধরবে ঠিক আছে। ”
আমি হেসে বললাম,
“আচ্ছা। ”

তারপর খেলা শুরু হলো। পুষ্প দৌড়াতে লাগলো আর আমি ওকে ধরার চেষ্টা করছি ও বারবার পুলের কাছে চলে যাচ্ছিল আর শানের চারপাশে ঘুরছিলো। আমি এতক্ষনের চিন্তা ভুলে গিয়ে পুরো খেলার মধ্যে ঢুকে গিয়ে ছিলাম।আমি পুষ্পকে ধরার চেষ্টা করছিলাম। বাট পুষ্প বারবার শানের পিছন পিছন লুকিয়ে যাচ্ছিল। তখনই পুষ্পকে ধরার জন্য যেই না হাত বাড়াতে যাবো হুট করে আমার পা শাড়ীর সাথে বেজে স্লিপ করে আমি পরলাম শানের গায়ের উপর। পুষ্প পেছন থেকে সরে যেতেই শান তাল সামলাতে না পেরে আমাকে নিয়ে পড়ল পুলের মধ্যে। আর আমার ঠোঁটটা গিয়ে লাগলো শানের লাগে।

পুলের মধ্যে পরেই কিছুক্ষন নাকানি চুবানি খেয়ে শান ঠিকঠাক ভাবে দাঁড়িয়ে একহাত দিয়ে আমার কোমড় ধরে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে রাখল। আমি ফ্যালফ্যাল করে শানের দিকে তাকিয়ে থাকলাম আর কিছুক্ষন আগের কথা ভেবে লজ্জায় আমি তাকাতে পারছি না শানের দিকে।এই প্রথম আমি শানকে কিস করলাম। যদিও এক্সিডেন্টলি তবে করেছি তো। শান আমার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে রইল। তখনই খিলখিলিয়ে কিছু মানুষের হাসির আওয়াজ শুনতে পেলাম। আওয়াজ শুনে আমরা দুজনেই পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখলাম ভূমিকা আপি, পুষ্প আর ভাইয়া দাঁড়িয়ে হাসছে। আমি আর শান দুজন দুজনের থেকে একটু দূরে সরে আসলাম। কিছুক্ষন পর ভাইয়া ওখান থেকে সরে যেতেই ভূমিকা আপু বললো,

“হাউ রোমান্টিক সিন। বৃষ্টি না হোক তবে পুলের এই ঠান্ডা পানিতে ভিজে পুরে এই শীতের মধ্যে দাঁড়িয়ে চোখে চোখে প্রেম করা হচ্ছে। ”

আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম,
“না তেমন কিছুই না। ওটা পুষ্পের জন্য….।”

আমি কথা শেষ করার আগেই ভূমিকা আপু বললো,
“থাক আর সাফাই দেওয়া লাগবে না এভার দুজনেই উঠে গিয়ে চেন্জ করে নেও নাহলে ঠান্ডায় মরে যাবে। ”

কথাটা বলেই ভূমিকা আপুও চলে গেল পুষ্পকে সাথে নিয়ে। এখন আমি আর শান আছি। শান আমার আগেই পুল থেকে উঠে গেল। কিন্তু এখন আমি শাড়ি পড়ে কেমনে উঠবো বুঝতেছি না। কারণ পুলের সিড়ি হচ্ছে অন্য সাইডে তাই আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম।

হঠাৎ শান বললো,
“কি ব্যাপার এই ঠান্ডার সময় ঠান্ডা পানিতে দাঁড়িয়ে থাকতে খুব মজা লাগছে বুঝি যে উঠতেই চাইছো না। ”
“উঠবো কেমনে শাড়ি পড়ে এভাবে উঠতে কষ্ট হচ্ছে। ”
“শাট আপ মেয়ে নিজেকেই সামলাতে পারো না আবার শাড়ীও পড়ো কি দরকার পড়ার। জলদি উঠে এসো। ”

উনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।আমার একটু রাগ লাগছিলো। আমি মুখ ফুলালাম। তবে এখন আমাকে উঠতে হবে যে শীত লাগছে।তাই আমিও শানের হাতের উপর হাত রেখে রেখে পুল থেকে উঠে এলাম। শান আর আমি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শান রেগেই বললো,

“বাচ্চাদের সাথে পুরো বাচ্চা হয়ে যাও কি করো না করো কোনো হুশ থাকে না। এখন যদি জ্বর হয় তখন কি হবে? ”

আমি কোনো কথা না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম শান আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। ভিজে যাওয়ার কারণে আমার শরীরে শাড়িটা পুরো বসে গেল। শীতে আমার কাঁপাকাঁপি অবস্থা।ঠোঁটও হালকা নীল বর্ণ ধারণ করেছে শান আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“দ্রুত রুমে চলে যাও সাবধান কেউ যেনো না দেখে। ”

শানের কথা শুনেই আমি বুঝতে পেরেছি উনি কেন এমন বলছিলেন। আমি শাড়িটা কোনোরকম গায়ে পেঁচিয়ে কোনোমতো দৌড়ে চলে গেলাম। রুমে গিয়েই শাড়ি একটা নিয়ে ওয়াস রুমপ চলে গেলাম। ফ্রেস হয়ে এসে শীতে কাঁপতে লাগলাম। সুয়েটার, চাদর যা ছিল সব বের করে পড়ে নিলাম। তখনই দেখলাম শান আসছে মাথা মুছতে মুছতে । শান হয়তো অন্য ওয়াশরুমে গেছিলো। আমি ঘুটি শুটি হয়ে বসে রইলাম তখনই শান আমার পাশে এসে বসলো। আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। উনার তাকিয়ে থাকা দেখে আমি বললাম,

“কি হয়েছে এভাবে কি দেখছেন? ”
শান গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“তোমার জন্য আজ আমার কত লস হয়েছে জানো তুমি। আমার ফোনটা গেল সাথে আমার একটা ইমপরটেন্ট ক্লাইন্টের সাথে কথা হচ্ছিল সেটাও গেল এখন এই ক্ষতিপূরণ গুলো কে দিবে?”
আমি মুখ গোমড়া করে বললাম,
“স্যরি আসলে খেয়াল করিনি। ”
“খেয়াল করিনি বললেই হলো নাকি ক্ষতি পূরণ চাই আমার। ”
আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম,
“কি দিবো আমি আমার কাছে কিছু নেই। ”
“আছে তোমার কাছেই আছে যেটা আমার সব ক্ষতিপূরণ করতে পারবে। ”
“আমার কাছে কি?”

শান আমার কাছে এসে একটু মুচকি হেসে বললো,
“তখন পুলে পড়ার আগে যেভাবে কিস করে ছিলে সেভাবে কিস করতে হবে তবে এভার ঠোঁটে। ”

উনার কথা শুনে আমার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম আমি চিৎকার করে বললাম,
“ওটা এমনি হয়ে গেছে ইচ্ছা করে করিনি আমি পারবো না।”
শান রেগে বললো,
“পারবে না মানে আমি তো আমার ক্ষতিপূরণ না নিয়ে ছাড়ছি না। ”

বলেই শান আমার দিকে আগালো। আমি একটু সরে গিয়ে বললাম,
“দেখুন এতে আমার দোষ নেই আমি তো পুষ্পর জন্য পড়েছি। ”
“তুৃমি কার জন্য পড়েছো সেটা দেখে তো আমার কোনো লাভ নেই। আমি তোমার জন্য পড়েছি এটাই বড় কথা। এভার আমার ক্ষতিপূরণ দেও। ”

শান কথা বলতে বলতে আরেকটু আগালো আমার দিকে। আমি উপায় না পেয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বেরোতে যাবো ঠিক তখনই শান হাত ধরে টান দিয়ে উনার বুকের উপর নিয়ে ফেললো। আর আমার দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো,
“তোমার কি মনে হয় আমি না চাইলে তুমি পালাতে পারবে। ”

উনার কন্ঠ শুনে আমার বুকের ভিতর ধুকধুক করতে লাগল। উনি আমার কোমড় ধরে আরো কিছুটা শক্ত করে ধরে উনার দিকে এগিয়ে নিলেন। আস্তে আস্তে উনি আমার দিকে এগিয়ে আসছিলেন। আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। উনার গরম নিঃশ্বাস আমার মুখে পড়ছিলো তখনই পুষ্প দৌঁড়ে এসে বললো,

“মিষ্টি চলো তোমাদের নিচে ডাকছে। ”

হঠাৎ পুষ্পের কন্ঠ শুনেই আমি আর শান দুজন দুজনের থেকে ছিটকে দূরে সরে গেলাম। পুষ্পকে দেখে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠল। শানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম শান মুখ গোমড়া করে আছে।শানের অবস্থা দেখে আমার পেট ফেটে হাসি চলে আসল।

আমি পুষ্পকে বললাম,
“হ্যাঁ সোনা চলো আমাদের দেরী হচ্ছে। ”

আড়চোখে শানকে একবার দেখে পুষ্পর হাত ধরে বেরিয়ে গেলাম। ওরা বেরিয়ে যেতেই শান বিরবির করে বললো,

“উফ মেয়েটা আর আসার টাইম পেলো না ধ্যাত। ”


ড্রয়িংরুমে আমরা সবাই বসে আছি। কিছুক্ষন আগেই আমার বাবা মা ও এসেছে। আমি সবার সাথে কুশল বিনিময় করে সবার সাথে বসে আছি। সবাই হাসি মুখে গল্প করছিলো হঠাৎ করে দরজার দিকে চোখ যেতেই সবার চোখ আটকে গেল। সবাই বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। আমার বাবার হাতে একটা পানির গ্লাস ছিলো সেটাও ঠাস করে হাত থেকে পড়ে দুই ভাগে ভেঙে গেল। সবাই অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে আছে আরশ আর ম্মৃতির দিকে। আমি ভয়ে শক্ত করে শানের হাত চেপে ধরলাম। জানি না এরপর কি হবে?
.
.
চলবে

গল্পটা কেমন হলো সেটা জানাতে ভুলবেন না। গঠনমূলক কমেন্ট করে সাথেই থাকুন। আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্য আমাকে লেখার প্রেরণা জোগায়। রিচেক দেওয়া হয়নি বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে