এক শহর ভালোবাসা পর্ব-২৩+২৪

0
3135

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_২৩
#সুরাইয়া_নাজিফা

আমি, স্মৃতি আপু, আরশ ভাইয়া তিনজনই শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি শানের দিকে। আর শান রাগান্বিত হয়ে তাকিয়ে আমাদের দিকে। এক পা নড়ার শক্তি পাচ্ছি না।
আমি কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলাম,
“আপনি?”
শান গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
“আরশ তোর থেকে এটা মোটেও আশা করি নি।”
আর মাথা নিচু করে বললো,
“স্যরি ভাইয়া আসলে আমি ভয় পেয়েছিলাম এজন্য বলা হয়নি। ”
শান তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিল,
“তোর আর আমার সম্পর্কটা আমি অনেক
গভীর জানতাম আরশ। তোকে ছোট ভাইয়ের চেয়ে বন্ধু ভাবতাম বেশী আর সেই তুই বলছিস তুই আমাকে ভয় পাচ্ছিলি এজন্য কথাটা কেমন জানো হজম হলো না। ”
শানের এমন কাতর কথা শুনে আমার কান্না চলে আসল। মানুষটা হয়তো সত্যিই অনেক কষ্ট পেয়েছে। আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম,

“প্লিজ আপনি আমাদের কথাটাও শুনুন আমি বলছি….। ”

পুরো কথা বলার আগেই শান আমার দিকে রক্তবর্ণ চোখে তাকিয়ে বললো,
“জাস্ট শাট আপ। এতোদিন যখন কিছু বলোনি তখন তোমার মুখ থেকে আর কোনো কথা শুনতে চাই না। চুপই থাকো সেটাই ভালো। ”

শানের ধমক শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।আমার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে নিরবে অশ্রু জরাচ্ছিলাম। তখনই শান বললো,

“তোমাদের দুজনকেই আমি সব থেকে বেশী বিশ্বাস করতাম আর তুমরা কি করলে বিশ্বাসঘাতকতা যেটা আনু কখনো ভুলব না। ”

আরশ ধরা গলায় বললো,
“ভাই আমি যদি এটা তোকে বলতাম যে আমি স্মৃতিকে নিয়ে বিয়ের দিন পালাবো তাহলে সেটা তুই কখনো সাপোর্ট করতিস না আর….। ”

শান দুই পকেটে হাত দিয়ে বললো,
“আর সেই জন্য তুই আমাকে বলিস নি ওকে। কেন করবো তোকে হেল্প তোর যদি এতোই স্মৃতিকে পছন্দ ছিলো তাহলে সেরা বিয়ের আগে বলতে পারতিস পরিবারের সবাইকে তুই কি বলেছিস?বিয়ের দিন সবার মান সম্মান নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেললে কেন হেল্প করব তোকে? ”

আরশ বললো,
“ভাই প্লিজ একটু শান্ত হয়ে বসে আমাদের কথাটা শোন। স্মৃতি বলতে পারেনি ওর বাবার ভয়ে। তুই তো জানিস আঙ্কেলকে বিয়েটা এতো তাড়াতাড়ি এরেন্জ করলো যে ঐ সময়ে যদি বলতামও আঙ্কেল আমাদের কখনো বিশ্বাস করতো না। আর আমি বারবার চেষ্টা করেও বলতে পারিনি। ”
শান হাত দেখিয়ে আরশ ভাইয়াকে থামিয়ে দিলো,
“কোনো কথা শুনতে চাইনা আর অনেক বলেছিস আর বলিস না। ”

কথাটা বলেই শান চলে গেল। শানকে এভাবে রেগে বের হয়ে যেতে দেখে আমিও ছুটে গেলাম ওনার পিছন পিছন।

“প্লিজ শুনুন আমার কথাটা। ”

শান কোনো কথা না বলেই গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। আমি দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে থমকে দাঁড়ালাম। শান একবারও আমার কথাটা শুনার প্রয়োজন মনে করলো না এতোটা বিষ হয়ে গেছি আমি উনার নজরে। ভাবতেই আমার চোখ থেকে গলগল করে পানি পড়তে লাগল। তখনই পিছন থেকে এসে স্মৃতি আপু আমার কাঁধে হাত রাখল। আমি চোখের পানি মুছে স্মৃতি আপুর দিকে তাকালাম আর একটু হাসার চেষ্টা করলাম।

স্মৃতি আপু ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো,
“আমি আগেই জানতাম যে এই একটা কাজের জন আমাকে অনেক ভুগতে হবে। কিন্তু আমার ভুলের কারণে আমার ছোট্ট বোনটাকেও যে এতোটা ভুগতে করতে হবে সেটা আমি ভাবতেও পারিনি। এতোটাই পোড়াকপালি আমি। ”

আমি রেগে বললাম,
“এসব কি বলছিস তুই আপু কিছু হয়নি। দেখবি সব ঠিক গয়ে যাবে। এখানে কেউই ভুগবে না। আমাদেরর তো আরো ভালোই হলো শান আমাদের বিষয়টা আগেই জেনে গেছে নাহলে আমরা কখনোই হয়তো বিষয়টা সলভ করতে পারতাম না। এখন উনারও হেল্প পাওয়া যাবে। আর তুই তো জানিসই শান আরশ ভাইয়াকে কতটা ভালেবাসে। ঠিক উনার রাগ পড়ে যাবে আর তুই খুব তাড়াতাড়ি ঐ বাড়ির বউ হয়ে যাবি। এখন শুু সেটার প্রস্তুতি নে এতো না ভেবে। ”

স্মৃতি বিরক্ত হয়ে বললো,
“এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও তুই এখনো আমার কথা ভাবছিস কোন মাটি দিয়ে তৈরী তুই। আজকে যেটা হলো তারপর তোর আর শানের ভাইয়ার সম্পর্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ভেবেছিস একবারও। ”

আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম,
“কি আবার হবে কিছু না। উনি এখন একটু রেগে আছেন ঠিকই কিন্তু কিছুক্ষন পর উনার রাগ ঠিক কমে যাবে দেখিস। উনি আমার উপর রাগ করে থাকতেই পারবে না। তাই আমার কথা না ভেবে নিজেরটা ভাব। ”

আরশ ভাইয়া জল ভরা চোখে তাকিয় আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“প্লিজ ভাইয়া মন খারাপ করো না সব ঠিক হয়ে যাবে। ”

আরশ কান্না মাখা কন্ঠে বললো,
“না সোহা কিছু ঠিক হবে না। ভাই অনেক কষ্ট পেয়েছে আজ না জেনেই আমি ভাইকে চরম কষ্ট দিয়েছি। আর কাছের মানুষের দেওয়া কষ্ট মানুষ কখনে ভোলে না। ”

আমার চোখেও নোনা জলেরা এসে ভিড় করলো,
“হুম তবে যদি ভালোবাসা দিয়ে পুসিয়ে দিতে জানো সেই কষ্টটা ভুলতেও সময় লাগে না। তুমি এতদিনের মতো আজও একটু বিশ্বাস রাখো আমার উপর আমি সব ঠিক করে দেবো।”

আরশ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো,
“তুমি আছো বলেই এখনো সাহস পাচ্ছি। ”
“ব্যাস তাহলে হলো তো এইবার তোমরা বাড়ি ফিরে যাও। বাকি কথা ফোনে হবে। ”

কথাটা বলে আমিও গাড়িতে উঠে বসলাম। জানিনা এরপরে কি আছে ভাগ্যে। ওদের তো সাহস দিয়ে দিলাম এবার আমার কি হবে? শান যদি সত্যি না মানে। না না এমন বললে হবে না আমাকে পারতেই হবে।


বাড়ির ভিতরে আসতেই দেখি শানসহ সবাই স্বাভাবিকভাবে বসে আছে। আমার ভয় লাগছিল শান আবার সব কিছু বলে দেয়নি তো। আমি স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম ওনাদের দিকে চেয়ে ওনাদের রিয়েকশন বুঝার জন্য। বাট ওনারাও একই ভাবে আমার দিকে চেয়ে আছেন। বারবার হাত কাপালে দিচ্ছিলাম আর আরেক হাত দিয়ে ওড়নার খোঁট ধরে মোছড়া মুছড়ি করছিলাম। তখনই সবাই একসাথে উঠে দাঁড়ালো ভয়ে আমার হাত মুখ ঘামছিল। মা আমার দিকে এগিয়ে আসলো। আমি এক্ষন উনাদের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মাথানিচু করে নিলাম কারণ সব জানাজানি হওয়ার পর আমি সবার সাথে চোখ মিলাতে পারব না। সবাই একটাই প্রশ্ন করবে সব যদি জানতামই তাহলে কেন বলিনি?যার উত্তর নেই আমার কাছে

মা এসে বললো,
“এটা তোর থেকে আশা করিনি সোহা।এভাবে আমাদের সাথে মিথ্যা বললি কেন তুই? ”

মায়ের কথা শুনে আমার হমদস্পন্দনটা থেমে যাওয়ার উপক্রম। আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।আমার চোখ থেকে পানি পড়ে গেল আর মাথানিচু করে বললাম,
“স্যরি মা আসলে…। ”

মা দুই হাতে আমার মুখটা উপরে তুলে বললো,
“আরে বোকা মেয়ে কাঁদছিস কেন?তুই ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে যাবি সেটা বলে গেলে কি আমরা কেউ তোকে বারণ করতাম।”

মায়ের কথা শুনে আমি হা করে তাকিয়ে আছি। বিষ্ময় কাঁটছে না। আমি অবাক হয়ে বললাম,
“মানে?”
মা হেসে বললো,
“মানে তুই আজকে ভার্সিটিতে যাবি বলে ফ্রেন্ডেদের সাথে চলে গেলি কেন? আমাদের বলে যেতি।শান তোকে দেখতে পেয়ে রেগে গেছে একা একা যাওয়ার জন্য। ”

আমি খুব বড় একটা নিঃশ্বাস নিলাম। তারমানে উনি কিছু বলেনি তাহলে।কিন্তু কেন?উনার তো বলার কথা ছিল। আমি উনার দিকে তাকালাম জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে। উনি আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি এখান থেকে উঠে উপরে চলে গেলেন। আমি চোখ ফিরিয়ে মায়ের দিকে তাকালাম

মা বললো,
“সাংঘাতিক রেগে আছে। যা গিয়ে হ্যান্ডেল কর আর কখনো না বলে একা একা যাস না কোথাও।”

আমি মুখে কিছু বললাম না শুধু মাথা নাড়ালাম। তারপর আস্তে আস্তে পা বাড়ালাম রুমে যাওয়ার জন্য। জানি না আমার জন্য কোন জড় অপেক্ষা করছে।

রুমের সামনে এসে দরজায় হালকা ধাক্কা দিতেই খেয়াল করলাম দরজা বন্ধ অদ্ভুত এইসময় দরজা বন্ধ করলেন কেন উনি। আমি আরো দুই তিনবার নক করলাম বাট কোনো সাড়া শব্দ নেই। আর বেশী নক করাও যাবে না নিচ থেকে মা-বাবা যদি শুনতে পায় আর রক্ষে থাকবে না। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষন পরই খট করে দরজাটা খুলে গেল। আমি মাথা উপরে তাকালাম।

“আপনি দরজা আটকে রাখলেন কেন? ”

শান কথা না বলে চলে যাচ্ছিলেন আমি উনার সামনে দাঁড়ালাম,
“কি হলো আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি। ”
“যেকেউ চাইলেই আমার রুমে প্রবেশ করার অধিকার রাখে না অন্তত আমি থাকাকালীন তো নাই। ”

উনার কথাটা শুনে কোথাও আমার অভিমানটা ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইল। আমি চোখ মুখ কঠোর করে বললাম,
“ওহ তাহলে এই যে কেউয়ের জন্য নিচে মিথ্যা কথা বলে আসলেন কেন? ”

শান তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বললো,
“স্যরি আমি তোমার জন্য কিছু করিনি। যা করেছি আমার পরিবারের জন্য। কি বলে তো আমি নিতে পেরেছি তোমার বিশ্বাসঘাতকতা সেটা ওরা নিতে পারবে না। একটি বেশীই ভালোবাসে কিনা। ”

কথাটা বলেই উনি চলে গেলেন। আমার চোখের পানি ঝর্ণার ধারার মতো বইতে লাগলো। বারবার উনার” বিশ্বাসঘাতক ” শব্দটা কানে বাজছে যার জন্য হৃদয়ে কষ্টের পাহাড় ভেঙে পড়েছে। আরে আমি নিজেও তো জানতাম না ওরা পালিয়ে যাবে। তাহলে এখানে আমার দোষ কোথায়।


শান নিজের দুই পকেটে হাত দিয়ে একা একা রাস্তায় হাঁটছে । এদিকে তেমন একটা মানুষ নেই। থাকলেও মাঝে মাঝে দুই একজন আসছে যাচ্ছে। চারদিকে শীতল বাতাস বইছে। তবুও মনটাকে শীতল করতে পারছে না। বারবার এটাই মনে হচ্ছে ওর সবচেয়ে দুজন কাছের মানুষ ওর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

বিয়ের দুইদিন আগের কথা মনে করার চেষ্টা করছিলো শান।

শান সোহাকে ভালোবাসত তাই কখনোই স্মৃতিকে বিয়ে করতে পারবে না। কিন্তু এই কথা বাবা বা সোহার বাবাকে কিভাবে বলবে বুঝতে পারছিলো না শান। তাই স্মৃতিকে ডেকে পাঠালো।

স্মৃতি অন্যরুমে আরশের সাথে কথা বলছিলো তখনই একজন এসে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিলো যেটাতে লেখা “ছিল পুল সাইডে এসো কথা আছে” নিচে ছোট্ট করে শানের নাম লেখা। স্মৃতি ভয় পেয়ে গেলো এই এতো রাতে শান ডাকছে ব্যাপার কি? স্মৃতি আরশকে বলে ফোন কেঁটে শানের বলা জায়গায় চলে এলো। স্মৃতি এগিয়ে এসে বললো,

“ভাইয়া আপনি আমাকে ডেকেছেন? ”

শান পিছন ফিরে তাকালো,
“হুম। ”
স্মৃতি চিন্তা নিয়ে বললো
“কেন?”
শান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
“দেখো স্মৃতি তোমাকে কিভাবে যে কথাটা বলবো আমি বুঝতে পারছি না। কিন্তু তারপরও আমাকে বলতেই হবে।সবকিছু এত দ্রুত ঘটে যাচ্ছে যে কাউকে কিছু বলার সুযোগই পাচ্ছি না আসলে….। ”

স্মৃতি শানকে ইতস্তত করতে দেখে বললো,
“ভাইয়া কি হয়েছে আমাকে বলেন না? ”
“স্মৃতি আমি এই বিয়েটা করতে পারবো না আমি অন্যকাউকে ভালোবাসি প্লিজ বিয়েটা ভেঙে দেও। ”

সেদিন কথাটা শুনে স্মৃতির কোনো প্রতিক্রিয়া বা কোনো প্রতিবাদ করেনি যদিও করার দরকার ছিলো। ওর জায়গায় যেকেউ থাকলে করতো বিয়ের দুইদিন আগেই এসব কথা বললে। কিন্তু সেখানে স্মৃতি নিরবে মেনে নিয়েছিল। তখনই শানের খটকা লেগেছিল বাট সেটা এতো আমলে নেয় নি।ভেবেছে হয়তো স্মৃতি এই বিয়েটাতে রাজি না। অন্যদিকে আরশের ব্যাপারটা ও শান ক্লিয়ার ছিলো যে আরশ কখনোই সোহাকে বিয়ে করবে না কারণ সে জানত শান সোহাকে ভালোবাসে। শান ভেবেছিলো এজন্য হয়তো আরশ পালিয়েছে। কিন্তু আরশ যে ওর কাছ থেকে এত বড় একটা কথা লুকাবে সেটা ভাবতেও পারেনি। এটা কেন বললো না আরশ আমাকে যে ও স্মৃতিকে ভালোবাসে তাহলে হয়তো আমি ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করতে পারতাম তখন।আর সোহা সব জেনেও এতটা দিন এক ছাঁদের নিচে থাকার পরেও এতোবড় একটা ঘটনা চেঁপে গেল। একটাবার কি বলা যেত না। অভিমানটা এখানেই হচ্ছে। মাঝে মাঝে আমাদের কাছে ভালোবাসার থেকে অভিমানটা বড় হয়ে যায় আর শানেরও তাই হয়েছে।

রাত দশটার দিকে শান বাসায় ফিরে গেল। নিজের ঘরের প্রবেশ করেই সোফায় গিয়ে বসল। একবার আড়চোখে সোহাকে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে খুজে নিলো বাট কোথাও সোহা ছিল না। শানের অদ্ভুত লাগলো। তারপরও সেটা বেশী না ভাবলো না। কারণ অভিমানটা ভাবতেই দিচ্ছে না। তাই শান চুপচাপ নিজের কাজ করতে লাগলো। বাট অনেকক্ষন পরোও যখন সোহার কোনো সাড়া পাচ্ছিলো না তখনই ভয় পেলো। তাহলে কি ঐদিনের মতো আবারও কোথাও চলে গেল? শান সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালালো। একবার ওয়াসরুমে দেখে নিলো না সেখানেও নেই। তাহলে কি বাগানে আছে।কথাটা মনে হতেই শান এক পা বাড়াবে বাগানে যাওয়ার জন্য তখনই ওর কানে কারো ফুফিয়ে কান্নার আওয়াজ এলো। শান মনে মনে ভাবল এই রুমে কে কাঁদছে? শানের অস্তিরতা বেড়ে গেল। শান কান্নার আওয়াজ ভালো ভাবে শুনে বুঝার চেষ্টা করে বুঝলো আওয়াজটা বেলকনি থেকেই আসছে। শান আওয়াজটা অনুসরণ করে বেলকনি অব্দি গেল যেতেই চোখ পড়ল সোহার উপর। শানের চোখ বড় বড় হয়ে গেছে?সোহা ওখানে বসে বসে অশ্রু বিসর্জন করে যাচ্ছে।শানের রাগ হলো।
শান আস্তে আস্তে সোহার দিকে এগিয়ে গেল,

“ঐভাবে কান্নাকাটি করে কি প্রমান করতে চাইছো? ”

শানের কথা শুনে আমি মাথা তুলে তাকালাম। আমার চোখের পানি এখনো একবিন্দুও শুকায়নি।শানকে দেখে আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। শান আমার আরেকটু কাছে এসে বিরক্ত ভঙ্গিতে বললো,
“লিসেন এখানে কেউ মরে যায়নি যে এভাবে কান্না করে শোক পালন করছো। একদম কাঁদবে না। আমার কারো কান্না সহ্য হয় না। ”

আমি কান্না মাখা কন্ঠে বললাম,
“মরেছে তো এজন্যই কাঁদছি। ”
শান আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো,
“এতো হেয়ালি কথা শুনার কোনো সময় নেই আমার সরাসরি বলো কি বলতে চাও। ”
আমি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,
“সেটা তো আমার থেকে আপনি ভালো জানেন। কারণ আপনার কাছে তো আমি বিশ্বাসঘাতক। এখন আর আপনি আমাকে বিশ্বাস করেন না। আমাদের মধ্যে থাকা বিশ্বাস, ভরষা, বন্ধুত্ব সবটাই তো মরে গেল তাহলে শোক পালন করতেই হবে তাই না। ”
শান কঠোর গলায় বললো,
“তার জন্য শুধুমাত্র তুমি দায়ি। তুমি মেরেছো তাও নিজের হাতে তাই ডেই দোষ তুমি অন্যকাউকে দিতে পারো না । ”

আমি ঘাড় ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম। উনি আমার দিকে উনার রুমালটা এগিয়ে দিলেন,
“চোখের পানিটা মুছে নেও জলদি। ”

আমি উনার কথা শুনেও না শুনার ভান করে থাকলাম। শান উনার হাত দিয়ে আমার মুখের দুইপাশে হাত দিয়ে চেঁপে ধরে জোর করে ধরে উনার দিকে ফেরালেন। তারপর নিজের হাতে আমার চোখের পানি মুছে দিলেন। আমি উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম শূন্য দৃষ্টিতে। এই মানুষটাকে কখনোই কি আমি বুঝতে পারবনা। এতোটাই যত্ন যদি করবে তাহলে কেন মাঝে মাঝে এত অবহেলা করে। আমার ভাবনার শুতা কেঁটে শান বললো,

“কান্নাকাটি করে প্লিজ চেহারার নকশাটা পরিবর্তন করো না।নাহলে সেদিনের মতো মা ভাববে আমি তোমাকে মেরেছি। তাই দয়া করে কান্নাটা বন্ধ করো। ”

কথাটা বলেই উনি চলে যাচ্ছিলেন তখনই আমি উনাকে হাত ধরে আটকালাম।কান্না করে বললাম,
“প্লিজ একটাবার আমার কথাটা তো শুনুন।”

শান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
“আবার কি বলবে? নিশ্চয় নতুন কোনো মিথ্যা কথা। ”

উনার কথা শুনে আমি পুরো স্পিচলেস হয়ে গেলাম।এতোটাই অবিশ্বাস করেন উনি আমাকে জাস্ট ভাবতেও পারছি না। নিজের প্রতি নিজেরই রাগ লাগছে। উনার কথা বলার পরেও বেহায়ার মতো বললাম,

“আচ্ছা বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে বলছি অন্তত বন্ধু ভেবে নাহয় একটাবার আমার শেষ কথাটা শুনে নিন। ”

শান কিছু বললো না তবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল,

“আরশ ভাইয়া আর স্মৃতি আপু যখন পালিয়ে যায় আমি তখনও জানতাম না। আমি তাদের বারণ করেছিলাম বাট তারা আমার কোনো কথাই শুনেনি। পালিয়ে যাওয়ার পর জানতে পারি তখন চাইলেও কিছু করার ছিলো না। আর এই পরিবারের সবার কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি এরপর এই কথা বলার সাহস করতে পারিনি যদি সব হারিয়ে ফেলি।”

আমার চোখে জল ছল ছল করছিলো। আমি চোখের পানি মুছে বললাম,
” তবে গত একমাস আগে আমি আপনাকে বলার চেষ্টা করেছিলাম আপনার মনে আছে কিনা জানি না তবে কথাটা বলার আগেই আপনি কাজের জন্য চলে যান তখন আর বলা হয়নি। ”

সোহার কথাটা শুনেই শানের মাস খানিক আগের কথা মনে পড়ল। একদিন বিকালে সোহা হাতে দুইজনের জন্য দুই কাপ কফি নিয়ে এসে বললো,

“আপনি কি কাজ করছেন? ”
আমার হাতে ফোন ছিলো আমি ফোনটা পাশে রেখে বললাম,
“না। বসো না। ”

সোহা আমার সামনের চেয়ারে বসলো,
“এই নিন আপনার কফি। ”
“ধন্যবাদ। ”

সোহা একটু হাসলো।তারপর চোখে মুখে চিন্তা নিয়ে বললো,
“আচ্ছা আপনাকে একটা কথা বলবো আপনি রাগ করবেন না তো। ”

আমি সোহার হাতের উপর হাত রেখে আস্বস্ত করে বললাম,
“এতো ইতস্তত করছো কেন বলো না একদমই রাগ করবো না। ”

সোহা নিজের ঠোঁট কামড়ে বসে আছে।হয়তো ভয় পাচ্ছে। তখনই আমি আবার বললাম,
“বলো কি হয়েছে।”

সোহা চোখ মুখ ছোট করে বললো,
“আসলে ওই স্মৃতি আপু আ…..।”

সোহা সম্পূর্ন কথা বলার আগেই ফোনটা বেজে উঠলো। আমি ফোন হাতে নিয়ে সোহা কে বললাম,
“স্যরি একটু ইমপরটেন্ট কল পরে শুনছি। ”
কথাটা বলেই উঠে যাচ্ছিলাম তখনই সোহা বলে উঠল,
“বাট আমার কথাটাও ইমপরটেন্ট। ”

আমি ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভড করে কানে ধরে সোহাকে ইশারায় এককানে ধরে স্যরি বলে বেরিয়ে গেলাম।আর সোহা মন খারাপ করে তাকিয়ে রইল।সেদিন যদি জানতো এই কথা বলবে তাহলে হয়তো কথাটা সময় নিয়ে শুনত।হঠাৎ সোহার কথা শুনে ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে এলো শান,

“আমি জানি না আপনি আমার কথা বিশ্বাস করবেন কিনা তবে এটাই সত্যি। তবে এখন যখন ওরা একটা ভুল করেই ফেলেছে তাই আমাদেরও উচিত ওদের ভুলটা সুদ্রে ওদের মেনে নেওয়া। প্লিজ আমার কথা শুনে নাহলেও আপনার ভাইয়ের সুখের জন্য আমাকে একটু হেল্প করুন যাতে সবাই ওদের মেনে নেয়। নাহলে আমার একার পক্ষে কিছুই সম্ভব না। ”

আমি আর কিছু বলবো তার আগেই শান বললো,
“তোমার বলা শেষ হলে এইবার আমি যেতে পারি? ”

উনার কথা শুনে শূন্য দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। এমন ভাবে কথা বলছে যেন আমি কিছু বলিইনি। আমার উত্তরের কোনো তোয়াক্কা না করেই উনি দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। আর আমি ওখানেই আবার ধপ করে বসে পড়লাম।
.
.
চলবে

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_২৪
#সুরাইয়া_নাজিফা

“আরশের কন্টাক্ট নাম্বারটা দিও তো।”
আমি ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ শানের মুখে এমন কথা শুনে চমকে উঠলাম।শান আমার পাশে বসে ল্যাপটপের দিকেই চেয়ে আছে।আমি মুখ হা করে বললাম,
“কথাটা কি আপনি আমাকে বলেছেন? ”
“এখানে তুমি ছাড়া তো আমি আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি না তাহলে তোমাকেই বলব। ”
আমি দুই তিনবার চোখ পিটপিট করে উনার দিকে তাকালাম। এক অঙ্গে কত রূপ আল্লাহ জানে। আগে তো জানতাম মেয়েদের মুখে একরকম থাকে আর মনে। ছেলেরা সবসময় স্ট্রেট ফরওয়ার্ড আর এই লোকটা! কালকেই রাতে আমার সাথে কথাই বলছিলো না আর আজ নিজেই ইচ্ছা করে আরশ ভাইয়ার নাম্বার চাচ্ছে স্ট্রেঞ্জ।

আমি বললাম,
“হঠাৎ কেন?”

এইবার শান মাথাটা উপরে তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কেন মানে? আরশ আর স্মৃতি এই বাড়িতে ফিরে আসুক সেটা চাও না? আমার হেল্প লাগবে কি লাগবে না ? ”

ব্যাস এই কথাটাই শুনার বাকি ছিল।আমি ধপ করে আবার বেডে শুয়ে পড়লাম। শান বিরক্ত হয়ে বললো,
“এসব কি করছো বাচ্চাদের মতো। ”

আমি বিরবির করে বলে উঠলাম,
“কি করব আপনার কাজ কারবার দেখলে মাঝে মাঝে আমার মাথাটাই ঘুরে উঠে। অদ্ভুত প্রাণী।”

আমি উনার কথা শুনে আস্তে করে শোয়া থেকে উঠে বসলাম,
“কিছু না।কিন্তু আপনি আমাদের হেল্প করবেন কেন?”
“কালকেই তো বলছিলে হেল্প করার জন্য। ”
“হুম কিন্তু কালকে তো আপনি আমার কথাই শুনতে চাননি তাহলে আজ কি হলো?”

শান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
“হুম শুনতে চাইনি কিন্তু তুমি ছাড়লে কোথায় জোর করে শুনিয়েছো তো সেটা শুনেই মনে হলো যে একটা হেল্প করাই যায় আফটার অল প্রিয় মানুষ বলে কথা তোমরা আমার সাথে যা করেছো সেটা আমি তোমাদের সাথে করলে পার্থক্য কোথায় থাকলো। ”

উনার এমন খোঁচা দেওয়া কথা শুনলে মাথাটা গরম হয়ে যায়। কাল রাতে বুঝালাম কি আর বুঝল কি। আমি মুখ গোমড়া করেই বললাম,
“আমার কোনো দোষ ছিল না। আর এখানে দোষ কারোরই নেই এটা একটা পরিস্থিতির চক্র ছিলো যেটা আমাদের সবাইকে এমনটা করতে বাধ্য করেছে। ”

“হুম জানি তাই তো হেল্প করতে চাইছি তবে তোমাদের প্রতি আমার রিয়েকশনটাও ভুল ছিল না।তোমার সাথে এমনটা হলে তোমার কেমন লাগতো সেটা একটু ভেবে দেখো। যাইহোক আরশের কথা নাহয় বাদ দিলাম বাট তুমি? তুমি হয়তো কখনো আমাকে কাছের মানুষই ভাবোনি তাই কথাটা আমার সাথে শেয়ার করতে পারোনি। ”

আমি মন খারাপ করে বললাম,
“আমি আপনাকে কালকে রাতে বলেছি সব আমি….। ”
আমি পুরো কথা বলার আগেই শান আমার কথা কেড়ে নিয়ে বললো,
“কি যে তুমি বলার চেষ্টা করেছো বাট আমি শুনিনি এটাই তো?আচ্ছা তখন নাহয় শুনিনি এরপর তো তোমার সাথে আমার কথা হয়েছে দেখা হয়েছে তখন কেন বলোনি?”

আমি মাথানিচু করে রইলাম। শান আমার কাছে এসে উনার একহাতে আমার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা উপর উঠালো,

“চোখ নিচে নয়। চোখে চোখ রেখে কথা বলাটা উচিত।”
আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম,
“স্যরি।”
শান মাথা নেড়ে বললো,
“দরকার নেই। তবে একটা কথা দিতে হবে আমায়? ”
আমি ধীর কন্ঠে বললাম,
“কি?”
“এরপর থেকে আর কোনো কথা আমার থেকে লুকাবে না সেটা যেমনই হোক মনে থাকবে?”

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম। শান বললো,
“শুধু মাথা নাড়ালে হবে না প্রমিজ করতে হবে। ”
“বললাম তো বলবো আবার প্রমিজ করতে হবে কেন?”
“কেন আবার তুমিও তো করাও আমার থেকে এমনটা সবসময় তো আমি করবো না কেন?”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“তো আপনি আবার কবে থেকে এমন বাচ্চাদের মতো বিহেভ করছেন?”
“যবে থেকে তোমার মতো একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে সারাজীবনের জন্য আটকা পড়েছি তবে থেকে। ”
উনার কথা শুনে আমি খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম,
“আচ্ছা প্রমিজ। ”

তারপর আমি ফোনটা হাতে নিয়ে কন্টাক্ট নাম্বারে গিয়ে আরশ ভাইয়ার নাম্বারটা শানকে দিয়ে দিলাম।
“আচ্ছা কিভাবে কি করবেন?”
“সেটা তুমি আমার উপর ছেড়ে দেও।তবে তোমাদের হেল্প করলে আমি কি পাবো?”
আমি আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললাম,
“নিজের ভাইয়ের হেল্প করবেন তাতে আবার কিছু লাগবে কেন?”
উনি মুচকি হেসে বললেন,
“না আমার লাগবে। এমনি এমনি কারো জন্য কিছু করতে পারবো না। ”
“আচ্ছা বলুন কি চাই? ”
“যা চাই দেবে তো?”
উনি আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টমির হাসি দিলেন। আমি ভ্রু কুচকে সরু চোখে তাকিয়ে বললাম,
“কি চাই? ”

উনি আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। আমি একটু পিছিয়ে গেলাম। উনি আরেকটু এগিয়ে আসলেন আমি আরো পিছেয়ে গেলাম আর পিছাতে গিয়েই বেডে শুয়ে পড়লাম। শান আমার কাছে এসে আমার পাশে একহাতে ভর দিয়ে শুয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো আমি ভয়ে তাড়াতাড়ি চোখটা বন্ধ করে নিলাম। আমার হার্টবিট অস্বাভাবিক হারে বাড়ছিলো। নিঃশ্বাস নেওয়াটাও কষ্ট কর মনে হচ্ছিলো। শান একহাতে আমার সামনে পড়ে থাকা চুল গুলো আলতো হাতে সরিয়ে দিলো। আর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

“আমার সাথে লং ড্রাইভে যেতে হবে এবং এখন থেকে উনি, আপনি না বলে আমার নাম ধরে ডাকতে হবে। ”

উনার কথা শুনেই আমি উনার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকালাম তারপর উনাকে ধাক্কা দিয়ে আমার উপর থেকে সরিয়ে দিলাম।আমি উঠে বসে লম্বা শ্বাস নিলাম,

“হুম তা নাহয় গেলাম কিন্তু কথায় কথায় এভাবে হুটহাট কাছে চলে আসা এটা তো ঠিক না। ”

কথাটা বলতে না বলতেই শান আমার হাত টেনে উনার বুকের উপর নিয়ে আসল।
“বেঠিকেরই বা কি আছে? ”

উনি আমার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। আর আমি উনার দিকে তাকিয়ে। কিন্তু বেশীক্ষন পারলাম না উনার চোখে যেনো কি আছে যেটা আমাকে টানে বড্ড টানে উনার দিকে। উনার থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম,
“উফ কি করছেন বলুন তো ছাড়ুন আমাকে। ”
আমি উনার উপর থেকে উঠার চেষ্টা করতেই উনি আমাকে উনার দুই হাতদিয়ে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলেন,
“সবসময় এতো ছটফট করো কেন বলোতো? আমি ধরলে প্রবলেম কোথায়? ”
আমি ছোটার চেষ্টা করে বললাম,
“অনেক প্রবলেম ছাড়ুন আমাকে? ”

তখনই শান আমাকে নিচে ফেলে দিয়ে উনি আমার উপর চলে আসলেন।
“কি প্রবলেম আগে বলো যদি সুইটেবল হয় ছেড়ে দিবো। ”
আমি অসহায় ভাবে তাকিয়ে বললাম,
“আমার কাজ আছে কিচেনে যেতে হবে দেরী হলে কে কি ভাববে ছাড়ুন প্লিজ।”
“কে কি ভাবল তাতে কি আসে যায় আমরা হাজবেন্ড ওয়াইফ একসাথে থাকলে দেরী হতেই পারে। ”

উনি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে হেসে কথা গুলো বলছিলেন। আমি বেশ বুঝতে পারছি এসব উনি আমাকে লজ্জায় ফেলার জন্যই বলছে। আমি কঠোর গলায় বললাম,
“এইবার কিন্তু বেশী বেশী হচ্ছে।মজা করছেন কেন?”
“আমি সত্যি কথা বলেছি মজা করব কেন?”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
“উফ প্রশ্নের পরিবর্তে প্রশ্ন করছেন কেন? ছাড়ুন আমাকে।”

উনি তারপরও আমাকে একইভাবে ধরে রেখেছে। আর আমার চুলগুলো নিয়ে খেলা করে যাচ্ছে। এদিকে আমি যে চেঁচিয়ে যাচ্ছি সেটা উনার কানেই যাচ্ছে না যেন।
“কি হলো আপনি শুনতে পাচ্ছেন কি আমার কথা? ”
শান এইবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“শুনবো যদি উনি, আপনি বাদে ডাকতে পারো? ”
আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম,
“উনি আপনি বাদে ডাকবো কি করে?”
“কেন আমার কি ডাকার মতো কোনো নাম নেই? ”
“তো আপনার নাম ধরে ডাকি তো সবার সামনে আর কি করব? ”
“কই কখন বলেছো আমি তো শুনিনি কখনো? ”
“এখন কি আপনাকে শুনিয়ে বলতে হবে?”
“হুম হবে। ”
“পারবনা। আমি আগেই বলেছি আপনার সামনে আপনাকে নাম ধরে ডাকতে পারব না।আপনি কত বড় আমার। ”
শান অবাক হয়ে বললো,
“তো তাতে কি হয়েছে? ”
“বড়দের নাম ধরে ডাকলে আল্লাহ পাপ দেয়।”
শান আমার কপালে কপাল ঠেকিশে অভিমানি কন্ঠে বললো,
“আমি কি বললাম আর তুমি কি বলছো?তুমি এমন কেন বলোতো তোমার থেকে পুষ্পও অনেক ভালো বুঝে। ”
“ছাড়ুন তো।”
“ছাড়ব আগে বলো শান আমাকে ছাড়ুন তার পরই ছাড়ব। ”
“বলবো না। ”
“ওকে তাহলে আমি ছাড়বও না। ”

বলেই আমার বুকের উপর শুয়ে পড়ল আজব। উনার গরম নিঃশ্বাস আমার শরীরে লাগতেই আমি কেঁপে উঠছিলাম।আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম,
“আচ্ছা বলছি আগে উঠুন। ”
“নো আগে বলো। ”
আমি কোনো উপায় না পেয়ে তুতলিয়ে বললাম,
“শান আমাকে ছাড়ুন। ”
কথাটা বলতেই উনি মাথা তুলে আমার দিকে তাকালেন,
“কি বললে আবার বলো।”
“কানা নাকি একবার বললাম তো। ”
“একবার যখন পেরেছো দ্বিতীয়বার বলতে কি সমস্যা।”
উনার সাথে তর্ক করাটাও বেকার। আমি অসহায় হয়ে বললাম,
“শান আমাকে ছাড়ুন প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ। ”
“উফ এতো মিষ্টি করে বললে কেউ না ছাড়বে কিভাবে? আরো শক্ত ধরে জড়িয়ে রাখতে ইচ্ছা করছে। ”
আমি রেহে বললাম,
“আপনি কিন্তু চিটিং করছেন।এটা ঠিক না। ”
শান বিরক্ত হয়ে বললো,
“উফ এতো কথা বলে আমার মুডটার বারোটা বাজিয়ে দিছো। যাও আজকের মতো ছেড়ে দিলাম। ”

কথাটা বলেই উনি আমার গালে গভীর ভাবে একটা কিস করলেন। আমি নিজের চোখ বন্ধ করে নিলাম। মনের মধ্যে ঝড় বয়ে ঝাচ্ছিল।সব যেন এলোমেলো করে দিচ্ছিলো। নিঃশ্বাস দ্রুত গতিতে পড়ছিলো। হঠাৎ উনি এমনটা করে বসবেন বুঝতেই পারিনি। কিছুক্ষন পর উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন। উনি ছাড়তেই আমি এক লাফে উঠে নিচে নেমে ওনার থেকে অনেকটা সরে গেলাম। উনি ওভাবেই শুয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিলেন। আমি দরজার কাছে এসে উনাকে ইঙ্গিত করে বললাম,
“আপনার মতো এমন বেসামাল আর অসভ্য লোক আমি একটাও দেখিনি। ”
শান হেসেই বললো,
“নিজের বউয়ের কাছে এমন একটু বেসামাল আর অসভ্য হতে ক্ষতি নেই বরং লাভই হয়। ”
উনার কথা শুনে আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম উনাকে মুখ ভেঙিয়ে এক দৌঁড়ে নিচে চলে গেলাম।


ঐশী চুপচাপ বসে আছে একটা পার্কে। আশেপাশে তেমন কোনো মানুষ নেই দূরে দূরে কয়েকটা কাপল দেখা যাচ্ছে আর কিছু বাচ্চারা খেলছে। ঐশী বাচ্চাদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তখনই কেউ এসে ঐশীর পাশে বসে চকলেট এগিয়ে। ঐশী সেই ব্যাক্তির দিকে তাকিয়ে আছে ওর মুখে হাসি ফুটে উঠল।ঐশী হাত বাড়িয়ে চকলেট নিয়ে নিলো। একটু অভিমানি কন্ঠে বললো,

“কতক্ষণ ধরে ওয়েট করছি কোথায় ছিলে তুমি তিমির? ”
তিমির কানে হাত দিয়ে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে বললো,
“স্যরি আসলে তোমার চকলেট খুজতে খুজতে লেইট হয়ে গেছে।তবে অপেক্ষা করা ভালো কারণ অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়। ”
ঐশী বিষ্মিত হয়ে বললো,
“মিষ্টি?”
তিমির ইশারায় বললো,
“চকলেট। ”

তিমিরের কথা শুনে ঐশী খিলখিলিয়ে হেসে দিলো। ঐশীর হাসির দিকে তিমির মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো।ঐশীর মুখে হাসির একমাত্র কারণ তিমির। অবাক হচ্ছেন না যে মেয়েটা তিমিরের সাথে কথা বলতেই পছন্দ করত না সেখানে এতো সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে? আসলেই অবাক হওয়ার মতো।এই তিনমাসে ঐশী আর তিমিরের সম্পর্কটা ভালোবাসাময় হয়ে গেছে। ঐশী যখন অসুস্থ ছিল তিমির তখন সর্বস্ব দিয়ে ঐশীকে সুস্থ করে তুলেছে। কখনো ঐশীকে হার্ট করেনি।ঐশীর যত্ন করেছে। খেয়াল রেখেছে। যদিও তিমির ততদিনে বুঝতে পেরেছিল যে ঐশী শানকে পছন্দ করত। তাই এতো কষ্ট পাচ্ছে। তিমির সবসময় ঐশীকে সেই কষ্ট থেকে বের করতে চেয়েছে। খুব সুন্দর ভাবে ঐশীর মনটাকে জয় করেছে। কিন্তু কখনো কিছু জানতে চেয়ে ঐশীকে কষ্ট দেয়নি। না তিমির এতোসব কিছু পাওয়ার জন্য করেনি। তিমিরতো এমন নাম যে নিঃস্বার্থ ভাবে শুধু ভালোবাসার মানুষটাকে ভালো রাখার জন্য করে গেছে।সেটা রিটার্ন পাওয়ার জন্য নয়। হুম তিমির ভালোবাসে ঐশীকে এই কয়দিন ঐশীর সাথে থাকতে থাকতে বুঝেছে যে ঐশীর জন্য ওর অনুভুতি গুলো ভালোবাসা।তবে ঐশী কি ওর ভালোবাসা কি কখনো গ্রহন করবে সেটা ভেবেই কখনো বলা হয়নি।

আর ঐশী সে তো এখন তিমিরকে ছাড়া চলতেই পারে না। তিমির পাশে না থাকলে কিছু ভালো লাগে না। এই তিমির নামক মানুষটাই ওকে ডিপ্রেশন থেকে বের করেছে। শানকে ভুলতে সাহায্য করেছে। ঐশী ভাবতেই পারছে না শানকে জীবন থেকে হারিয়ে যখন নিজেকে নিঃস্ব মনে হচ্ছিল। নিজের জীবনটা শেষ করে দিতে চাইছিল তখন যদি সত্যিই সেই কাজটাতে সফল হয়ে যেত তাহলে হয়তো এই নামক ভালো মানুষের সাথে দেখাই হতো না।জীবনের কত ভালো সময় সুখ থেকে বঞ্চিত হতো।জানাই হতো না জীবনটা কতো সুন্দর। তাই জীবনে যে কোনো জিনিসের জন্যই বিফল হলেও কখনো এমন ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক না। কারণ সেই খারাপ সময়টা জীবন থেকে যাওয়ার পর জীবনে যতটা সুখ ধরা দেয় তার পরিমাপ কখনো করা যাবে না। তিমির ঐশীর জীবনে এসেছে এক আশীর্বাদ হয়ে যে ওকে আবার নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে। তবে শানকে পুরোপুরি ভুলে গেছে সেটা বলা যাবে না।কারণ প্রথম ভালোবাসা কখনো ভোলা যায় না। সেটা যেমনই হোক। এখন ও শানের কথা মাঝরাতে একা থাকলে মনে হয় কিন্তু সেটা স্থায়ী হয় না। সেখানে হৃদয়ের পুরোটা অংশ জুড়ে তিমির রয়েছে। তিমিরের যত্ন, ওকে আগলে রাখা, সবথেকে বেশী সব কাজের পর ওকে সময় দেওয়া, ঘুরতে নিয়ে আসা,ওর একাকিত্ব দূর করা যেটা ওর জীবনে সবচেয়ে বেশী অভাব ছিল। এই কয়েকমাসে সব অভাব পূরণ করেছে তিমির । আস্তে আস্তে তিমিরের প্রতি ঐশী দূর্বল হয়ে পড়েছে হয়তো ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটা মুখ ফুটে বলতে পারেনি।ভয় হয় যদি শানের মতো তিমিরও দূরে সরে যায়।তাই নিজের অনুভুতি গুলো নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে।

তখনই ঐশীর ফোনে রিং হওয়ার শব্দে ঐশীর ঘোর কাঁটে। ফোনটা রিসিভড করে কানে দিয়ে ঐ পাশ থেকে কারো কথা শুনেই চিৎকার করে বললো,

“কোনো প্রয়োজন নেই বাবা তোমার আসার। এখানের কাজ আমি সামলে নেবো। আমি সারাজীবন একা থেকেছি এখনও পারবো। শুধু টাকা পয়সা দিলেই সন্তানের প্রতি বাবা মায়ের দায়িত্ব শেষ হয়না। আজ আমার জন্মদিন ছিল আর আজ তুমি আমাকে একবার ফোনেও উইশ করলে না। কেমন আছি সেটাও জানতে চাইলে না। চাই না আমার তোমার থেকে কিছু রাখো ফোন। ”

ফোনটা ছুড়ে ফেলে দিলো।তিমির একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল এই তিনমাস ধরে এটাই দেখে আসছে কিন্তু ঐশীকে কখনোই জিজ্ঞেস করেনি। ও বুঝতে পারেনা ঐশীর বাবার সাথে ওর এতো অভিমান কিসের। ওর বাবার কথা বললেই ও কখনো কথাই বলতে চায় না ভালো করে। ঐশী বলতে চায়না তাই ও কখনো জোড়ও করেনি। তিমির ঐশীর আরেকটু কাছে গিয়ে বসল। ঐশীর কাঁধে হাত রাখতেই ঐশী তিমিরকে জড়িয়ে ধরল। এখন ওর একটা ভরষার হাত চাই যাকে ধরে একটু কাঁদতে পারবে। নিজের কষ্ট শেয়ার করতে পারবে। তিমির ঐশীর অবস্থা বুঝতে পেরে ঐশীর মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করতে থাকে।

“প্লিজ ঐশী চুপ হয়ে যাও আশেপাশে মানুষ দেখছে। ”

ঐশীর কান্না তবুও থামছে না। ঐশী কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“একটু কাঁদতে দেও তিমির মনের মধ্যে অনেক কষ্ট জমে আছে যেটা আমি এই কান্নার মাধ্যমে মন থেকে ধুয়ে ফেলতে চাই। ”
বলেই আবার কাঁদতে লাগলো। তিমিরের শার্ট ভিজিয়ে ফেলেছে। কিছুক্ষন পর ঐশী একটু শান্ত হলো। তিমির পানি এগিয়ে দিলো। ঐশী পানিটুকু মুখে দিলো। কিছুক্ষন দুজনেই চুপ।
হঠাৎ ঐশী বলে উঠল,
“আচ্ছা তিমির তুমি কখনো কেন জানতে চাও না কেন আমি বাবার সাথে এমন ব্যবহার করি?”
ঐশীর কথা শুনে তিমির স্বাভাবিকভাবে বললো,
“তুমি কখনো বলতে চাওনি এড়িয়ে গেছ তাই জিজ্ঞেস করিনি। ”
ঐশী অন্যদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“ছোট বেলায় আমার মা মারা যায়।এরপর থেকেই আমি একা হয়ে পড়ি। মা মারা যাওয়ার পর বাবা কখনো আমায় দিতোনা। সবসময় দূরে দূরে থাকতেন আমার থেকে।নিজের বিজন্যাস, সমৃদ্ধি এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। আমার দিকে ফিরে থাকানোরও সময় হতো না তার। সার্ভেন্টদের হাতে বড় হই। কখনো খেলে বা না খেলেও কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করত না আর না কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিত।অসুস্থ হলেও কেউ পাশে বসে শরীরের অবস্থা জানতে চাইতো না ।”

ঐশীর কন্ঠে অনেক অভিমান সাথে গলা ধরা ভাব। ঐশী একটু থামলো। অনেক কষ্ট হচ্ছে তারপরও বলতে হবে যদি একটু ভালো থাকা যায় ঐশী আবারও বলতে শুরু করল,

” স্কুলে যখন সবার বাবা মা সবাইকে নিতে আসত বাচ্চারা কত খুশি হতো কিন্তু আমি তখন একপাশে দাঁড়িয়ে অশ্রু বিসর্জন করতাম।চার দেয়ালে বন্দি ছিলাম। একদম একা ছিলাম আমি। কারো সাথেই কথা বলতাম না। না কেউ আমাকে বুঝত। সবসময় অপেক্ষা করতাম বাবার জন্য কখন বাবা আসবে দুটো কথা বলবে। বাবার সাথে জীবনের কিছু কথা শেয়ার করব কিন্তু কখনোই আমার সেই ইচ্ছাটা পূরণ হয়নি। সবসময় অবহেলা পেয়েছি। তাই এখন আর অপেক্ষা করি না আর না কোনো এক্সপেকটেশন রাখি। এখনও বাবা সেই ব্যস্ত রয়েই গেছে। দেখোনা আজ আমার জন্মদিন কিন্তু না একটা উইশ আর না একটু ভালো কথা। উনার প্রয়োজন না হলে উনি কখনোই আমার সাথে কথা বলেন না। হয়তো ভুলেই গেছেন আমার জন্মদিনের কথা। দুইহাতে টাকা উড়িয়েছি শুধু একটু সুখের জন্য বাট সেটা কখনোই হয়নি। কারণ আমরা চাইলেও কখনো টাকা দিয়ে তো সুখ কিনতে পারি না।আমি জীবনে সবসময় একটু সুখের অভাব রয়েই গেছে। না কখনো বাবার ভালোবাসা পেয়েছি আর না নিজের ইচ্ছা মতো ভালোবাসার মানুষ। জীবনে যা পেয়েছি তার চেয়ে বেশী হারিয়েছি। একটু ভালোবাসার কাঙাল আমি প্লিজ তিমির তুমি কখনো আমায় ছেড়ে যেও না তাহলে আমি হয়তো মরেই যাবো। ”

কথাটা বলেই ঐশী আমার কান্নায় ভেঙে পড়ল। তিমিরের চোখ দিয়েও এতক্ষনে অশ্রুধারা বয়ে যাচ্ছিল ঐশীর কথা শুনে। এই মেয়েটা সবসময় নিজেকে এতো হাসি-খুশি, স্ট্রং দেখাতে চায় সেই মেয়েটার জীবনে হাসির আড়ালে এতো কষ্ট লুকিয়ে ছিল সেটা কখনোই বুঝতে পারেনি তিমির।এতো স্ট্রং মেয়েটা যে এভাবে তিলে তিলে ভিতর শেষ হয়ে যাচ্ছিল সেটাও বুঝতে পারেনি। ভাবতেই অন্তরের ভিতরটা হুহু করে উঠল। তিমির নিজের চোখের পানি মুছে নিলো।ঐশী এখনো কেঁদে যাচ্ছে। তিমির ঐশীর হাতের উপর হাত রাখল। সাথে সাথে ঐশী তিমিরের দিকে ছলছল চোখে তাকালো।

তিমির বললো,
“কথা দিচ্ছি এখন থেকে তোমার চোখে কখনো পানি আসতে দেবো না। সবসময় হাসবে তুমি আজ থেকে। সবসময় পাশে থাকবো তোমার যতই কঠিন মুহূর্ত আসুক না কেন কখনো ছেড়ে যাবোনা। আজ থেকে তোমার জীবনে একটা নতুন অধ্যায় শুরু হবে নতুন করে যেখানে শুধু সুখ আর ভালোবাসাই থাকবে। এতোটা সুখ থাকবে যেটা তুমি পরিমাপও করতে পারবেনা। ”

তিমিরের কথায় আস্বস্ত হলো ঐশী। এখন এমন একটা মানুষের খুব দরকার ছিলো যে সবসময় শক্তি হয়ে পাশে থেকে আত্মবিশ্বাস বাড়াবে ঘুরে দাঁড়ানোর।এই হাত কখনোই ছাড়তে চায় না ঐশী কখনো না। ঐশীও নিজের দুইহাত দিয়ে তিমিরের হাতটা শক্ত করে আকড়ে ধরলো।
.
.
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে