একা_তারা_গুনতে_নেই পর্ব-২০+২১

0
485

#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ২০
ইমাদ অবাক হয়ে বলল, “স্যরি?”
সুহা কি বলবে সাথে সাথে ভেবে পেল না। কয়েকটা মুহূর্ত নিরবে কেটে গেল। তারপর সুহা কথা পেয়ে গেল, “আপনি কি খুব বেশি ব্যস্ত? তাহলে পরে কল করি?”
ইমাদ বলল, “আগে বলুন আপনি কে? কেন ফোন করেছেন?”
“আমি কে তা জানতে হবে না। আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয়েছিল তাই কল করেছি।”
“মানে?” ইমাদের চোখ, মুখ বিরক্তিতে কুঁচকে গেছে।
“মানে কিছু না।” সুহা কল কেটে দিলো। ইমাদ কান থেকে মোবাইল সরিয়ে চোখের সামনে ধরে রাখল। কার নাম্বার এটা?
.
কাদিন আর দীপার মাঝে ভয়াবহ ঝগড়া এবং কথাকাটাকাটি হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে কাদের সাহেবের ইনসুলিন প্রয়োগ থেকে। দীপা শ্বশুরকে ইনসুলিন দিতে দিতে নাকি বলেছিল, “বাবা, আমরা ট্রেনে করে গেলে কেমন হয়?”
কাদের সাহেব এক পৃথিবী বিস্ময় নিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন। বললেন, “কোথায় যাওয়ার কথা বলছ?”
“আমাদের গ্রামের বাড়িতে।”
“আমাদের গ্রামের বাড়িতে?”
দীপা ঘাড় নাড়তে নাড়তে বলল, “জি, বাবা।”
কাদের সাহেবের ইনসুলিন দেয়া শেষ। তিনি চিন্তিত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালেন, “কি বলছ কী!”
দীপা চট করে কাদের সাহেবের হাত টেনে ধরে তাঁকে আবার সোফায় বসাল, “বাবা, বসুন না। কথা বলি।”
তারপর নিজে হাঁটুর উপর ভর দিয়ে কাদের সাহেবের মুখোমুখি মেঝেতে বসল। বলল, “বাবা, আমি না কোনোদিন ট্রেনে চড়িনি। কোনোদিন না। আমরা এবার ট্রেনে করে যাই? সবাই মিলে? পিকনিকের মত লাগবে।”
কাদের সাহেব থতমত খেয়ে অনেকক্ষণ দীপার দিকে তাকিয়ে রইলেন। ধীরে ধীরে তাঁর চেহারা শক্ত হয়ে আসছে। এই মেয়ে বলে কী! বলার আগে নিশ্চয়ই ভেবে কিছু বলে না। আবদার আর ছাগলামির মাঝে ফারাক আছে। চোয়াল শক্ত করে কাদের সাহেব না করতে যাচ্ছিলেন তার আগেই দীপা ঘাড় নত করে বলল, “স্যরি, বাবা। ভুল হয়ে গেছে। বুঝিনি যে এভাবে যাওয়া ঠিক হবে না।”
কাদের সাহেব বললেন, “হ্যাঁ আসলেই এভাবে যাওয়া ঠিক হবে না।”
দীপার মন খারাপ হলো তিনি বুঝতে পারলেন। তবুও অসঙ্গত প্রশ্রয় দিলেন না। উঠে চলে গেলেন। ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারত কিন্তু হলো না। রাতে ফিরে কাদিন দীপার উপর ক্ষেপে গেল, “এগুলো কোন ধরনের কথা, দীপা? তুমি নতুন বউ। তুমি ট্রেনে করে বউভাতের জন্যে আমাদের বাড়িতে যাবে? মানুষ কি বলবে?”
দীপা অবাক হয়ে বলল, “কই যাব? যাব না তো। শুধু আবদার করেছিলাম। পরে নিজেই ত না করে দিয়েছি।”
“বাবা সত্যি সত্যি ট্রেনের টিকিট কেটে বসে আছেন।”
“তাই নাকি?” দীপা খুশিতে বিছানা থেকে লাফিয়ে নামল।
আরো বলল, “উমা বাবা কী ভালো! আমি গিয়ে একটা থেঙ্কস দিয়ে আসি।”
দীপা আনন্দে আত্মহারা হয়ে ছুটে যেতে চাইল। কাদিন দেয়ালের মত সামনে দাঁড়িয়ে দীপাকে বাধা দিলো। দীপার দু’বাহু খামচে ধরে বলল, “আমার বউ এত উন্নত শ্রেণীর গাধী হতে পারে ভাবতেও পারছি না।”
তাহমিদও দীপাকে কথায় কথায় গাধী বলত। দীপা রাগে কেঁদে ফেলল, “আমি আর আপনার সাথে থাকব না।”
“যতসব, ধ্যাত।” কাদিন দীপাকে ছেড়ে দিয়ে তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে চলে গেল। সে রাতে দীপা খেল না। খাওয়ার সময় সবাই ডাকলেও খেতে গেল না। রাগে কাদিনের চোখ লাল আর মুখ তেতো হয়ে গেল। কড়ি ডাকতে গেলে দীপা চোখ মুখ শক্ত করে কঠিন গলায় বলল, “তোমার ভাই যে মেয়ের জন্য দিওয়ানা সেই মেয়েকেই বিয়ে করাতে। শুধু শুধু তাহমিদকে শিক্ষা দিতে এই বিয়েটা না হলেও চলত।”
কড়ি বিস্ময়ের শেষ সীমানায় পৌঁছে গেল, “মেজো ভাইয়ার আবার কবে পছন্দের কেউ ছিল?”
“ছিল না? না থাকলে সে এত দেবদাস কেন?”
কড়ি দীপার কান্নামোছা ফোলা মুখটার দিকে নিঃশব্দে তাকিয়ে রইল। দীপা রেগে গেল, “কি হলো চুপ করে আছো কেন?”
“কি বলব তাই ভাবছি।”
“দীপা ঘরের দরজা বন্ধ করে দরজায় পিঠ দিয়ে দাঁড়াল, “তোমার ভাইয়ের যদি আমাকে মনে নাই ধরে তবে আমায় বিয়ে করল কেন? তোমরা কেন জুরাজুরি করে এ বিয়ে করিয়েছ?”
কড়ি ভেবে দেখল সবকিছু খোলাসা করে বললেই ভালো। মিহি স্বরে বলল, “দেখো ভাবি, মেজো ভাইয়ার পছন্দের কেউ কখনোই ছিল না। ওর কাউকে পছন্দই হতো না। ও এত বেশি খুঁত ধরে মানুষের তার চোখে কেউ কখনো আটকে যেতে পারেনি। তার কাছে কারো হাসি সুন্দর ত, চোখ ভালো না। আরেকজনের নাকটা ভালো, ভ্রুগুলো যেন কেমন। এই মেয়ের হাঁটার ধরন ভালো না, ঐ মেয়ে বসতে হয় কি করে সেটা জানে না। এসব বলতে বলতেই ওর জীবন অর্ধেক কেটে গেল।”
“দেখো কড়ি একদম মিথ্যে বলবে না। তাৎক্ষণিক গল্প বানাতে তুমি অনেক পটু তা আমার জানা আছে।”
“মিথ্যে নয়। ভাইয়ার কখনো প্রেম ছিল না তা শতভাগ সত্য। ভাইয়া হলুদের রাত থেকেই ডিস্টার্বড। তাই হয়তো কেমন হয়ে আছে।”
“ডিস্টার্বড কেন?”
“কে যেন মোবাইল করে তোমার কথা বলে দিয়েছে।”
“আমার কথা?”
“হ্যাঁ।”
“কি কথা?”
“তোমার একটা প্রেম ছিল আর সেই প্রেমিকের জন্য তুমি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছ। তবে সেই প্রেমিক যে তার নিজেরই বন্ধু সেটুকু জানে না।”
দীপা স্তব্ধ হয়ে গেল। ওহ কাদিন সাহেব এজন্যই ত তার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকছে। দূরে থাকছে এতে সে যথেষ্ট আপ্লুত। এ যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। তবে এর পেছনের কারণটা জেনে রাগে তার শরীরের সবকটা লোম পুড়ে যাচ্ছে। দীপা শান্ত গলায় কড়িকে বলল, “সবাইকে বলে দিও আমার শরীর ভালো লাগছে না। তাই খাব না।”
কড়ি কথা বাড়াল না। খাবার টেবিলে গিয়ে বলল, “ভাবি ঘুমিয়ে পড়েছে তাই আর ডাকিনি। থাক ঘুমাক।”
কাদিন তখনি মনে মনে ঠিক করে ফেলল, “এই মেয়েকে সে উচিত শিক্ষা দিবে। খাওয়াটা শুধু শেষ হোক।”
চলবে…

#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ২১
কাদের সাহেব খুব দুঃখ পেলেন। আহারে মেয়েটা না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল! বড্ড আহ্লাদী এই মেয়ে। তাঁর সবকটা ছেলেমেয়ে ছেলেবেলা থেকেই বয়সের চেয়ে বেশি বুঝতো। কখনো কোনো অন্যায় আবদার ত দূরে থাক আবদার’ই করেনি। এটা কিনে দাও, ওখানে নিয়ে যাও জাতীয় কথা কখনো তাঁকে শুনতে হয়নি। গর্ব যেমন হয় তাদের নিয়ে, মাঝে মাঝে আফসোসও হয়। বাবা মানেই ত আলাদিনের চেরাগ। সন্তানেরা চেরাগ ঘষবে আর নিজের খায়েশ বলবে। বাবা সেটা পূরণ করবে, নাহয় পূরণ করতে না পারার অক্ষমতা নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলবে। এই ত পিতৃত্বের স্বাদ। বায়না না ধরা ময়নাদের কি ভালো লাগে? কাদের সাহেব মৃদু হাসলেন। তাঁর মেজোপুত্রবধূ দীপা হলো বায়না ধরা ময়না। এই ময়নার আবদার ফেলার কোনো মানে হয় না। পৃথিবী যাক ভেসে যাক।
.
বাতাসে গাছের পাতা দুলতেই চাঁদটা দেখা গেল। বাসটাও শব্দ করে দুলে উঠল। রামিমের মা রোকসানা বেগম জরুরি ভিত্তিতে কড়ির সাথে দেখা করতে চাইছেন। শুধু তার সাথে দেখা করতেই তিনি আজ দিনাজপুর থেকে কুমিল্লা যাচ্ছেন। এতদূর তিনি কখনো একা কোথাও যাননি। ভয় হচ্ছে। শুনেছেন কুমিল্লা নাকি অনেকদূর! আজ রাতে রওনা হলে কাল সকালের কোনো এক সময় গিয়ে পৌঁছাবেন তিনি। সারারাত বাস চলবে। বুঝাই যাচ্ছে দিনাজপুর আর কুমিল্লার দূরত্ব তাকে হাঁপিয়ে তুলবে।
.
কাদিন ঘরে ঢুকার আগেই দেখল দীপা দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কাদিন বিরক্তিতে বলল, “এমন ভূত হয়ে দাঁড়িয়ে আছ কেন? সরে দাঁড়াও।”
দীপা ফুঁসতে থাকা গলায় বলল, “আমাকে কেন বিয়ে করেছেন?”
কাদিন হাত দিয়ে ঠেলে দীপাকে ভেতরে নিয়ে নিজেও ঘরে এল। দরজা বন্ধ করে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, “খেতে যাওনি কেন? দোষ করবেন আপনি আবার রাগও দেখাবেন আপনি। বাব্বাহ্।”
“আমাকে কেন বিয়ে করেছেন?”
“তোমাকে একটা উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য।” রাগে কাদিন দাঁতে দাঁত ঘঁষল। এই মেয়ের উচিত শিক্ষা কি হতে পারে সেটাই সে খুঁজে পাচ্ছে না। ল্যাপটপ নিয়ে বিছানায় পা ছড়িয়ে বসল সে। এর চাইতে নিজের কাজ নিয়ে পড়ে থাকা ভালো। দীপা এসে ঠাশ করে ল্যাপটপটা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলল। কাদিন থ বনে গেল। দীপা এবার চেঁচাল, “কি শিক্ষা দিবেন আপনি আমাকে? আমিও দেখি কেমন শিক্ষা আপনি আমাকে দিতে পারেন।”
কাদিন উঠে দাঁড়িয়ে দীপার মুখ চেপে ধরল, “চেঁচাবে না। আমার বাসায় এমন চিৎকার চেঁচামেচি অ্যালাউড না।”
দীপা জোর খাটিয়ে মুখ থেকে কাদিনের হাত সরাল, “আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিন তাহলে।”
কাদিন চাপাস্বরে বলল, “শুনতে যেহেতু চাও বলছি। দুই পরিবারের কথা ভেবে বিয়েটা করেছি। একে ত এত বড় সত্য লুকিয়েছে তার উপর গলা উঁচু করে কথা বলছ।”
“কি সত্য লুকিয়েছি আমি? আপনার বোন ত সবই জানত।” দীপা বিস্ময়ে কথার খেই হারিয়ে ফেলল।
কাদিন বলল, “তুমি আমায় বলেছ?”
“আমি কি বলব আপনাকে? আমায় ত প্রশ্ন করেননি। আমি ভেবেছি কড়ি যেহেতু সব জানে আপনার কাছেও আর অজানা কিছু নেই।”
কাদিন ভেবে দেখল হ্যাঁ তাই তো। দোষটা ত দীপার নয়। দীপার এমনটা ভাবাই স্বাভাবিক। তাই এখানেই কথার ইতি টানল। বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়ল। দীপা অন্ধাকারে ডুবন্ত ঘরটার ঠিক মাঝখানে ধপ করে বসে পড়ল। কাদিন ওপাশ ফিরে শুয়ে রইল। কারো মুখ দেখা দেখি নেই। দীপা শুধু জানতে চাইল, “আপনার ধারণা আমার প্রেমিক আমাকে ভোগ করে ছেড়ে দিয়েছে বলেই আমি আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলাম। আপনারা সব ছেলেরাই এত নীচু মনমানসিকতার কি করে হোন?”
কাদিন থমথমে গলায় বলল, “তোমাকে এ ধরনের কোনো কথা বলেছি বলে আমার মনে পড়ছে না।”
“সবকিছু বলতে হয়না। আর আপনাদের আমি হারে হারে চিনেছি। পুরুষ মানুষের চিন্তার প্রসার কতটুকু কি তা আর বুঝতে বাকি নেই।”
কাদিন একদম চুপ হয়ে গেল। নিরবতার আড়ালে নিজেকে লুকাল। দীপা মেঝেতেই শুয়ে রইল। চোখের জলে মেঝে ভেসে যাচ্ছে। ভেসে যাচ্ছে রাত।
মাঝরাতে কাদিন বাতি জ্বেলে উঠে বসল। দীপা মেঝেতে ঘুমিয়ে সাবাড়। কাদিন বিছানা ছেড়ে নামল। পাঁজাকোলা করে দীপাকে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। বাতি নিভিয়ে নিজে গিয়ে বসে রইল বারান্দায়।
.
গেস্টরুমের বারান্দা থেকে নীচে তাকালে কিছু কাঠের সমিল দেখা যায়। মুবিন প্রতিদিন নিয়ম করে যেমন গেইমস খেলে তেমনি নিয়ম করে এই ঘরের বারান্দায় এসেও দাঁড়িয়ে থাকে। সমিল দেখে না, সে দেখে সমিল এর স্তূপ করে রাখা কাঠের উপর দাঁড়িয়ে পলিথিন দিয়ে খেলতে থাকা ছেলে দুটোকে। বয়সে তার চেয়ে ছোট মনে হয়। আবার বড়ও হতে পারে। ছেলে দুটো খুব হ্যাংলা যেন বাতাসে উড়ে। আলুথালু, ছেঁড়া প্যান্ট পরা। গায়ে কোনো গেঞ্জি বা শার্ট নেই। রোদে পুড়ে পুড়ে ছাই কালো দুজন। মুবিন উৎসুক হয়ে এই দুই ভাইয়ের খুনসুটি দেখে। মাঝে মাঝে দুই ভাই যখন ঝগড়া করে ও তাতেও মজা পায়। আর মন খারাপি নিয়ে ভাবে ওদের ঝগড়া গুলো কেন ওমন হয় না? ঘরের বাইরে মিলার কণ্ঠস্বর শোনা গেল, “মুবিন আয় না। স্কুলের দেরি হচ্ছে।”
মুবিন জবাব দিলো না। সে বিড়বিড় করল, “আচ্ছা ঐ পলিথিন দুটোতে খুব সুখ তাই না?”
দেরি হয়ে যাচ্ছে বলে মিলা নিজেই বারান্দায় চলে এল। তাড়া দিল, “মুবিন ব্যাগ কাঁধে নে তো।”
মুবিন ব্যাগ কাঁধে নিলো। স্কুলে গিয়েও তৃতীয় ঘণ্টায় ক্লাসের পেছনের দরজা দিয়ে লুকিয়ে বের হয়ে গেল। সোজা চলে গেল পেছনের দিকে। আশেপাশে তাকিয়ে মুবিন স্কুল ব্যাগটা দেয়ালের উপর থেকে ছুঁড়ে মারল। ব্যাগ গিয়ে দেয়ালের বাইরে পড়ল। ব্যাগকে অনুসরণ করে মুবিনও সতর্কতাসহিত দেয়াল টপকে নীচে নামল। মাটিতে পড়ে থাকা স্কুল ব্যাগটা তুলল সে। হাত দিয়ে ধূলো ঝাড়তে ঝাড়তে শিষ বাজাতে শুরু করল। গোবিন্দ স্যারের জীববিজ্ঞান ক্লাসে কোনোমতেই বসবে না সে। ব্যাটা একটা ঘুমের পিল, কিঞ্চিৎ অশ্লীলও। মেয়েদের নিয়ে উনার যত আগ্রহ! মুবিন হেঁটে চলল যেখানে দুচোখ যায়, পাতারা নাচে উল্লাসে আর ইচ্ছেরা ঘুড়ি উড়ায়। তার ইচ্ছে ঘুড়ি শেষ পর্যন্ত আটকাল ধর্মপুর রেলগেটে। দুহাত প্রসারিত করে রেললাইনের পাতের উপর কাকতাড়ুয়া হয়ে হাঁটছে সে। রেলগেটে সিগন্যাল পড়েছে। লাল সিগন্যাল। গেটম্যান রেলগেইট বন্ধ করে দিয়েছেন। মুবিন ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাল। শব্দ হচ্ছে। ট্রেন আসছে। রেললাইন থেকে তার এখন সরে দাঁড়ানো উচিত। কিন্তু ইচ্ছেঘুড়ি যে এখানেই আটকে আছে!
.
ট্রেন স্টেশনে এসে পৌঁছুতেই স্টেশনে একটা হুলস্থূল পড়ে গেল। পিঁপড়ের মত চারিদিক থেকে মানুষ এসে জমতে লাগল। কুলিদের ডাক পড়ছে। বাবা- মায়েরা ট্রেনের দরজার বদলে জানালা দিয়ে ব্যাগপত্র আর নিজেদের পাঁচ থেকে দশ বছর বয়সী বাচ্চাদের ট্রেনের ভেতর ঠেলে দিচ্ছে। তারপর নিজেরা দরজার কাছের ভিড়ের মাঝে যুদ্ধ করছে। দীপা মুখ হাঁ করে প্ল্যাটফর্মের ব্যস্ততা গিলছিল। তার মনে হচ্ছিল ট্রেন নয়, গোটা প্ল্যাটফর্মই বোধহয় কোথাও যাবে। কাদিন দীপার হাত ধরল। হেঁচকা টানে দীপাকে নিজের সাথে টেনে নিয়ে গেল। ভিড় ঠেলে নির্দিষ্ট বগিতে, নির্দিষ্ট কেবিনে পৌঁছে দিলো নিজের অর্ধাঙ্গিনীকে। কড়ি আগেই উঠে পড়েছে। অন্যরাও নিজের মত করে ফাঁকফোকড়ে উঠে গেল।
চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে