এই_ভালো_এই_খারাপ পর্ব-১৩

0
454

#এই_ভালো_এই_খারাপ (১৩)
#Jannat_prema

ঘুম ভাঙ্গতেই শরীরে ভারি বস্তুর আভাস পেয়ে হকচাকালো ভোর। তব্দা মেরে কিছুক্ষণ আবদ্ধর ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে জড়িয়ে ধরে ছেলেটা কি সাচ্ছন্দ্যে ঘুমোচ্ছে। মনে হচ্ছে তার কোনো কিছুর তাড়া নেই৷ নেই কোনো কিছুর চিন্তা।
ভোর মুচকি হেসে মুখটা এগিয়ে নিয়ে আবদ্ধর গালে চট করে একটা চুমু খেলো। লজ্জায় হেসে মুখ লুকালো আবদ্ধর বুকে। আবদ্ধ ঘুমের মাঝেই হাসলো। নিজের আরেকটু কাছে টেনে নিলো ভোরকে। আবদ্ধর এহেন কাজে ভোর দ্বিগুণ লজ্জায় হাসফাস করে উঠলো। ইশ! আবদ্ধ বুঝে গেছে। সে তো ভুলেই গেছে আবদ্ধর ঘুম পাতলা। তার মতো তো আর মরার ঘুম না। ভোরের আফসোস হলো। যদি তার ঘুমটা আবদ্ধর মতো পাতলা হতো। তাহলে সেদিন সকালকে খাট থেকে ফেলে দিয়েও অন্তত টের পেতো সে । এতোটা ঘুম সে কিভাবে যায়। ভোর দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো। সকাল ছয়টা বাজে। আজকে ফজরের নামাজটা পড়া হলো না৷ ভোর আবদ্ধর বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলো পারলো না। আরো শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরলো৷ ভোর নিজেকে আবারো ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,

” এই আবদ্ধ কি করছি…না না করছো? ছাড়ো! এখন উঠতে হবে। নতুন বউ এতো বেলা করে ঘুমালে সবাই কি মনে করবে। ”

আবদ্ধ ঘুমের মাঝেই চোখ মুখ কুঁচকালো৷ ভোরের খুব হাসি পেলো। আবদ্ধকে এখন পাঁচ বছরের একটা বাচ্চার মতো লাগছে। যেনো কেউ তার মুখ থেকে ললিপপ নিয়ে নিয়েছে। যার কারণপ সে চোখ মুখ কুঁচকে রেখেছে তার ললিপপ নেওয়ার কারণে৷ আবদ্ধ চোখ মুখ কুঁচকেই বললো,

” সবাই আর কি মনে করবে? তারা মনে করবে আমরা এখন রোমান্স করছি৷ নতুন বউ আর জামাই বলে কথা। এখন এতো নড়াচড়া না করে আমার বুকের মাঝে চুপটি করে শুয়ে থাক। ”

আবদ্ধর এমন অকপটে বলা কথা শুনে ভোর বিরক্ত হলো৷ যত্তসব লাগামহীন কথা বার্তা। ভোর জোর করে আবদ্ধর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। শাড়িটাকে ঠিকঠাক করে তাকালো আবদ্ধর দিকে। আবদ্ধ ভ্রু কুঁচকে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আছে৷ আবদ্ধ কিছু বলতে গেলেই ভোর মুখ ভেঙ্গিয়ে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। আবদ্ধ সেদিকে হা করে তাকিয়ে আছে৷ ভোর এমন কিছু করবে সেটা ভাবেনি৷ আবদ্ধ বাঁকা হাসলো। বললো,

” তোকে ছাড়বো না দেখিস। ”

.

ভোর ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখলো আবদ্ধ আবারো ঘুমিয়ে গেছে৷ হাতের ভিজা জামা কাপড় গুলো বারান্দায় নেড়ে দিয়ে আসলো৷ মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি আবিষ্কার হতেই ছোট ছোট কদমে এগিয়ে গেলো আবদ্ধর কাছে। আবদ্ধর এমন সুন্দর ঘুমখানা পছন্দ হলো না ভোরের৷ চুল থেকে তোয়ালে খুলে হাতে নিলো। সদ্য গোসল করে আসায় এখোনো চুল থেকে পানি ঝরছে৷ ভোর আস্তে করে ঝুকলো। চুলগুলো পিছন থেকে সামনে এনে আবদ্ধর নাকের কাছে নিবে ওমনি আবদ্ধ ভোরকে হেচকা টানে নিজের পাশে শুয়ে দিলো। আবদ্ধর কাজে থতমত খেয়ে ভোর ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। আবদ্ধ হেসে ফেললো। বললো,

” চালাকের সাথে চালাকি করতে আসলে এমনই হবে। এখন শাস্তি হিসেবে পাক্কা আধ ঘন্টা তোকে আমার সাথে থাকতে হবে৷ ”

কথাটা বলেই আবদ্ধ ভোরে ভেজা চুলে মুখ ডুবিয়ে দিলো। কেঁপে উঠল ভোর। আবদ্ধ ভোরের ঘাড়ে চুমু খেয়ে বললো,

” আজকে চুলে শ্যাম্পু করেছিস?”

ভোর চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। আবদ্ধের প্রশ্নের জবাবে তোতলানো সুরে বললো,

” হহ্যাঁ। ”

” তুই ডাভ শ্যাম্পু ব্যবহার করিস? ”

” হ্যাঁ! এখন ছাড়ো আমাকে। দেরি হয়ে যাচ্ছে। ”

আবদ্ধ হাসলো। ভোরের মুখ থেকে তুমি ডাক শুনলেই তার প্রচন্ড হাসি পায়। আবদ্ধকে হাসতে দেখো ভোর বললো,

” হাসছি..হাসছো কেনো? ”

আবদ্ধ ভোরের ঘাড়ে থাকা কালো তিলটা গভীর চুমু খেয়ে বললো,

” তোর মাথায় তুমি ডাকটা কে ঢুকালো? ”

ভোর চোখ বন্ধ করে থাকা অবস্থায় বললো,

” ককই কেউ না। আমার ইচ্ছে হলো তাই বলছি। এখন ছাড় আমাকে। ”

কথাটা বলেই নিজেই আবদ্ধর কাছ থেকে সরে গেলো। গায়ের শাড়িটা খানিকটা এলো মেলো হওয়ায় ভোর বিরক্ত হলো। মাত্রই শাড়িটা সুন্দর করে গুছিয়ে পড়েছিলো। এখন আবার আবদ্ধর কারণে এলোমেলো হলো। নতুন বউ দেখে তাকে এখন শাড়ি পড়তে হচ্ছে। ভোর গায়ের শাড়িটা ঠিকঠাক করার মাঝে আবদ্ধ আচমকা বলে বসলো,

” তোর পেটের কাছের তিলটা দারুণ সুন্দর! ”

কুচি ঠিক করতে থাকা হাতটা কেঁপে উঠলো। চট করে নিজের পেটের দিকে তাকালো। শাড়ির কুচি ঠিক করার সময় কখোন যে বেখেয়ালিতে শাড়ির আঁচল কাঁধের উপর উঠিয়ে রেখেছে খেয়াল করেনি। ভোর তাড়াতাড়ি করি আচঁল নামিয়ে চোখ পাকিয়ে তাকালো। দাঁত কটমট করে বললো,

” অসভ্য ছেলে কোথাকার। ”

বলেই হনহনিয়ে রুম থেকে বাহিরে চলে গেলো। আবদ্ধ সেদিক পানে তাকিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো। মেয়েটাকে রাগাতে এতো ভালো লাগে কেনো? আবদ্ধ মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে বললো,

” আমার মিষ্টি ভোর পাখি। ”

.

আজকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেলো নায়েলি বেগমের। ফজরের নামাজ পড়ে তসবিহ পড়তে পড়তে কখোন যে আবার ঘুমিয়ে গেলেন টের পেলেন না। ঘুম ছুটে যেতেই দেখলেন সাড়ে ছয়টার উপরে বাজে। তাড়াতাড়ি করে উঠে ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরের উদ্দেশ্যে হাটা দিলেন। আফিল রহমান তখন ঘুমে। এখনো কেউ উঠেনি। সবার জন্য নাস্তা বানাতে বানাতে আরো দেরি হয়ে যাবে। ড্রয়িং রুমে তখন তার বোড় বোন নারগিস বেগম বসে ছিলেন। নায়েলি বেগম এসব ভাবতে ভাবতে রান্না ঘরে আসতেই ভোরকে দেখে চমকে গেলেন। মেয়েটাকে এমন সময় এখানে আশা করেন নি তিনি। শ্বাশুড়ি মাকে দেখে বিস্তর এক হাসি দিলো ভোর। নায়েলি বেগম মুগ্ধ হলেন। তিনি নিজেও হাসলেন। বললেন,

” এতো তাড়াতাড়ি উঠে গেলি কেনো? আমার মেয়ের মতো তুই এতো তুমি বলতে পারবো না। ”

ভোর চায়ের জন্য চুলোর উপরে পানি বসিয়ে তাকালো শ্বাশুড়ির দিকে। মুচকি হেসে বললো,

” তুমি করে বলতেও হবে না। সেটা নাহয় আমি বলবো। আমার মাকেও আমি তুমি করেই বলি। ”

নায়লি বেগম খুশি হলেন। ভোরকে চুলোর কাছ থেকে সরিয়ে দিয়ে বললেন,

” নতুন বউ এতো কাজ করতে হবে না। আমি রুটি বানাচ্ছি। তুই গিয়ে বিশ্রাম নে। ”

ভোর শ্বাশুড়ির কথা মানলো না। আস্তে করে বললো,

” তুমি এতোজনের নাস্তা একা কিভাবে বানাবে? আমি একটু সাহায্য করি মা? ”

নায়েলি বেগমের হৃদয় জুড়িয়ে গেলো এতো মিষ্টি করে মা ডাক শুনে। আলিফাও ঠিক এমন করে বলতো, ” একটু সাহায্য করি মা? “তখন তিনি আর না করতেন না। আজকেও না করেন নি। রুটি বানাতে বানাতে বললো,

” আচ্ছা। কিছু করতে হলে, আমি রুটি বানাচ্ছি তুই সেঁকে দিস। আপাতত এখন তোর হাতে এক কাপ চা বানিয়ে তোর খালাশ্বাশুড়িকে দিয়ে আয়। তোর হাতে চা খেতে চেয়েছে। ”

ভোর মাথা নাড়লো। মাথায় ভালো করে ঘোমটা দিয়ে সবার জন্য চা বানিয়ে এক কাপ নিয়ে গেলো আবদ্ধর বড় খালার কাছে। তিনি তখন টিভিতে মোশাররফ করিমের নাটক দেখছিলেন। ভোরকে দেখে হাসলেন। ভোরের হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে বললেন,

” তুমি বাংলা নাটক দেখো? ”

” জ্বি দেখি মাঝে মাঝে। ”

” ওহ! আবদ্ধ বাবা উঠছে? ”

” জ্বি খালা উঠেছে। ”

নারগিস বেগম চায়ে চমুক দিলেন। ভোর কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে আছে। মা বলতো তার হাতের চা নাকি অসাধারণ। এখন খালা শ্বাশুড়ি কি বলেন সেটার অপেক্ষায়। নারগিস বেগম চোখ বন্ধ করে আরেকবার কাপে চুমুক দিলেন। চোখ খুলে ভোরের দিকে তাকিয়ে বললেন,

” এ চা তুমি বানাইছো তো? ”

ভোর শুকনো ঢোগ গিললো। চা খারাপ হয়েছে কি? ভোর জবাব দিলো,

” জ্বি আমি বানিয়েছি। চা টা কি ভালো হয়নি খালা? ”

নারগিস বেগম হেসে দিলেন। মেয়েটা কেমন চুপসে গিয়েছিল। তিনি খুশি মনে বললো,

” এতো ভালো চা তো মনে হয় আমিও বানাতে পারি না। যত দিন থাকবো ততদিন তোমার হাতের চা বানিয়ে খাওয়াইও। ”

ভোর খুশি হয়ে বললো, ” জ্বি অবশ্যই। ”

সবাই ততক্ষণে উঠে গেছে। ভোর একবার দোতলায় তাকালো। আবদ্ধ এখনো নিচে আসেনি। সবাই টেবিলে যার যার আসন গ্রহন করে বসে আছে। ভোরকে এমন বারবার দোতলায় তাকাতে দেখে আলিফা বললো,

” আবদ্ধ উঠেছে ভোর? ”

আলিফার প্রশ্নে ভোর বললো,

” উঠেছে তো সেই কখোন। ”

” তাহলে ডেকে আনো ওকে। ”

আলিফার সাথে তাল মিলিয়ে নায়েলি বেগম বললেন,

” যা তো মা। আবদ্ধকে ডেকে আন। ”

ভোর সায় জানিয়ে দু কদম এগোতেই আবদ্ধ নিচে চলে আসলো। আবদ্ধ কালো টিশার্টের সাথে কালো টাউজার পড়েছে, চুলগুলো এক সাইডে করে রেখেছে। ভোর অপলক তাকিয়ে আছে আবদ্ধর দিকে খানিকক্ষণের জন্য ভুলে বসলো সবার কথা। আবদ্ধ ভোরকে এভাবে হা করে থাকতে দেখে খুক খুক করে কেশে উঠলো। ভোর নিজেকে সংযত করে বললো,

” এতো দেরি করলি__”

অকপটে থেমে গেলো ভোর। সবার দিকে তাকিয়ে দেখলো সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলতে যাচ্ছিলো সে। সবার সামনে স্বামীকে তুই করে বলতো যাচ্ছিলো। ছিঃ। মনে মনে জ্বীভ কাটলো ভোর। মেকি হাসি দিয়ে বললো,

” এতো দেরি করলেন যে? সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলো। ”

হাসি হাসি মুখটা চুপসে গেলো আবদ্ধর। এই মেয়ে তাকে সোজা আপনি করে বলা শুরু করলো। তুমি তো ঠিক ছিলো। তাহলে এখন আপনি! ভোরও এখন মনে মনে খুব হাসছে। তাকে ফ্যাসাদে পড়তে দেখে তো খুব হাসছিলো। এখন বুঝ হাসি কাকে বলে।

চলবে!

( গঠনমূলক মন্তব্য করার অনুরোধ রইলো।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে