#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্বঃ১০
#Arshi_Ayat
বিকেল পাঁচটা বাজে ঘড়িতে।সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে।আকাশ ফাইল ঘুছিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়লো।এখন ল’য়ার এর সাথে দেখা করতে হবে।অতি শীঘ্রই ডিভোর্স কার্যকর করতে হবে।আকাশ অফিসের সামনে এসে রিকশা নিলো।কিছুদূর যেতেই হঠাৎ দেখলো একটা হুডতোলা রিকশায় নাতাশার মতো একটা মেয়ে আর পাশে একটা ছেলেও আছে।রিকশাটা দ্রুত ক্রস করে যাওয়ায় আকাশ ভালো করে বুঝতে পারলো না আসলেই কি নাতাশা নাকি অন্য কেউ।আকাশ শিউর হওয়ার জন্য নাতাশাকে কল দিলো।নাতাশা রিসিভ করতেই আকাশ বলল”কি করো জান?”
“হসপিটালে আছি।কেন?”
“না এমনিতেই।আচ্ছা কতক্ষণ থাকবে?”
“এইতো আরো একঘন্টা।”
“ও,আচ্ছা আমি ল’য়ার সাথে কথা বলে হসপিটালে আসছি।একসাথে বাসায় যাবো ওকে?”
“না জান।আজকে পারবো না।আম্মুর সাথে শপিংয়ে যেতে হবে।”
“আচ্ছা ঠিকাছে।তাহলে রাতে ফোন করবো।”
“আচ্ছা জান।”
বলে নাতাশা ফোন রেখে দিলো।আকাশ ফোনটা পকেটে রেখে একটা মুচকি হাসি দিলো।এখন ও নিশ্চিত নাতাশা হসপিটালেই আছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই আকাশ ল’য়ারের অফিসে পৌঁছে গেলো।
—————
অরুণী আর রুহি বাসায় ফিরছে।প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র গুলো গুছিয়ে নিয়ে একসাথে বাইরে দুপুরের খাবার খেয়ে কতক্ষণ ঘুরাঘুরি করে এখন বাসায় ফিরছে।হঠাৎ অরুণীর ফোনে ওর মায়ের কল আসলো।অরুণী রিসিভ করে কথা বলা শুরু করলো।অরুণীর কথায় যতোটুকু বোঝা গেলো তাতে মনে হচ্ছে ওর বাসায় কিছু একটা হয়েছে।অরুণী ফোন রাখতেই রুহি বলল”কি হইছে অরু?”
অরুণী কাঁদতে কাঁদতে বলল”আব্বুর বুকে ব্যাথা উঠছে।ওনাকে মামা আর আম্মু মিলে হসপিটাল নিচ্ছে।”
রুহি রিকশাওয়ালাকে হসপিটালের দিকে রিকশা ঘোরাতে বলে। অরুণীর মাথাটা নিজের কাধে রেখে বলল”কাঁদিস না।আঙ্কেলের কিছু হবে না।আল্লাহকে ডাক।”
অরুণী কাদছে রুহির কাঁধে মাথা রেখে।আর রুহি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।রুহির নিজেও খুব টেনশন হচ্ছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা হসপিটালে পৌঁছে গেলো।হসপিটালে পৌঁছেই অরুণী দৌড়ে ভেতরে গেলো।অরুণীর পেছনে রুহিও আসলো তবে দৌড়ে নয় একটু দ্রুত হেটে।
রিসেপশন থেকে জেনে দোতলায় চলে গেলো।দোতলার একবারে কর্নারের রুমের সামনে অরুণী নিজের মা আর মামাকে দেখে দৌড়ে গিয়ে মা’কে বলল”মা আব্বু কোথায়?কি হইছে আব্বুর?”
অর্না রহমান ভেজা গলায় বললেন”এখনো জানি না।ডাক্তার সাহেব ভেতরে আছেন।বের হলে জানতে পারবো।”
অরুণী মায়ের পাশে চুপচাপ বসলো।পাশে রুহিও বসলো।সবাই বেশ চিন্তিত।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বেরিয়ে আসতেই অরুণী এগিয়ে গিয়ে বলল”কি অবস্থা ডাক্তার সাহেব?”
“তেমন কিছু না।বুকে ব্যাথা হয়েছিলো। এখন ঠিকাছে।”
“আমরা দেখা করতে পারবো?”
“জ্বি আপনারা দেখা করে আসুন।চাইলে নিয়েও যেতে পারেন।”
“আচ্ছা।”
রুহি,অরুণী আর অর্না রহমান আর অরুণীর মামা ভেতরে গেলো।অরুণীর বাবা বেডে বসে রয়েছেন।অরুণীর মা কাছে গিয়ে বলল”এখন কেমন আছো?”
অরুণীর বাবা হেসে বলল”ভালোই।তেমন কিছু হয় নি।তোমরা মা মেয়ে শুধু শুধুই কান্না করো।”
অরুণীর মা কপট রাগ দেখিয়ে বলল”তুমি তো হাসবেই।আমাদের জায়গায় থাকলে বুঝতে।”
অরুণীর মায়ের কথায় সবাই হেসে দিলো।অরুণীর বাবা হাত বাড়িয়ে অরুণীকে ডাকতেই অরুণী গিয়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।অরুণীর বাবাও মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন।তিনি জানেন মেয়েটা তাকে যে কি পরিমাণে ভালোবাসে!!অরুণীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে রুহির দিকে তাকিয়ে বলল”কেমন আছো মা?অনেকদিন দেখি না তোমাকে?”
“আলহামদুলিল্লাহ আক্কেল ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?”
“দুই এদের দুই মা মেয়েকে নিয়ে ভালোই আছি।চলো আমাদের সাথে বাসায় চলো।”
“না আঙ্কেল আব্বু আম্মু চিন্তা করবে।আমাকে যেতেই হবে।”
“আচ্ছা মা বাসায় এসো।”
“আচ্ছা।”
রুহি অরুণীর থেকে বিদায় নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে পড়লো।মূলত রুহির বিয়ের বিষয়ে অরুণী ওর বাবা মাকে কিছুই বলে নি।এইজন্যই ওনারা এগুলো নিয়ে কিছু বলে নি।
অরুণী হসপিটাল থেকে বেরিয়ে হাঁটতে লাগলো।একটু হেটে সি এন জি নিয়ে বাসায় যাবে।হঠাৎ কেউ একজন এসে ওকে ধাক্কা দিতেই ও রাস্তার একপাশে পড়ে গেলো।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতেই দেখলো প্রিয়ম ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।রুহি প্রিয়মের হাত ধরে উঠে দাড়াতেই প্রিয়ম বলল”যদি আপনাকে ধাক্কা না দিতাম আরেকটু হলেই আপনাকে পিষে দিয়ে যেতো।”
“ধন্যবাদ।”
“কোথায় যাচ্ছিলেন?”
“বাসায়।আপনি?”
“আমি থানায় যাচ্ছিলাম।একটু আগে এসেছিলাম একটা ইনভেস্টিগেশনের জন্য।”
“ওহ!আচ্ছা তাহলে আমি আসি।”
এটা বলে রুহি হাটা শুরু করলো।রুহি যেতেই প্রিয়ম ফোন বের করে কাকে যেনো কল দিয়ে বলল”৩০৯৮ এই টুলেট নাম্বারের গাড়ি কার।এটা বের করো।কুইকলি।”
বলেই ফোনটা রেখে গাড়িতে উঠে বসলো থানায় যাওয়ার জন্য।থানায় পৌঁছাতেই প্রিয়মের ফোনে কল এলো।প্রিয়ম রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল”স্যার ৩০৯৮ এটা ভাড়া গাড়ি।এটার মালিক গাড়িটা ভাড়ায় চালায়।”
“আচ্ছা।ঠিকাছে।”
বলে প্রিয়ম ফোন রেখে দিলো।ফোন রেখে ভাবতে শুরু করলো।মার্ডারটা নিয়ে।বিকেলে যে কেসটা হাতে পেলো এতে ভিকটিমের লাশের পাশে ৩০৯৮ লেখা ছিলো।৩০৯৮ দিয়ে কি বোঝাতে চাচ্ছে সেটাই বুঝতে পারছে না প্রিয়ম। মেয়েটাকে কে বা কারা মেরেছে সেটারও হদিস পাঁচ্ছে না।লাশটা ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে আর রিসাদকে পাঠিয়েছে মেয়েটার বয়ফ্রেন্ডকে ধরে আনার জন্য এসব কেসে প্রথমেই বয়ফ্রেন্ড তা নাহলে স্বামীরাই ফাঁসে।কিন্তু কেনো জানি প্রিয়মের মনে হচ্ছে এটা অন্যকেউ করেছে।মেয়েটার খুন ওর নিজের বাসাতেই হয়।বাসায় কেউই ছিলো না।সবাই দাওয়াতে গিয়েছিলো কিন্তু মেয়েটা যায় নি।বাসায় একাছিলো।এরকম ঘটনা এর আগে আর ঘটে নি।
পুরো জিনিসটা প্রিয়মকে ভাবাচ্ছে।প্রিয়ম চোখ বন্ধ করে ভাবছে।হঠাৎ রিসাদের ডাকে চোখ খুলতেই দেখতে পেলো রিসাদের সাথে একটা ছেলে।প্রিয়ম বুঝতে পারল এই ছেলেটাই মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড।প্রিয়ম ছেলেটাকে বসতে বলল।ছেলেটা বসতেই প্রিয়ম সোজা হয়ে বসে বলল”তুমিই অনিক?”
“জ্বি স্যার।”
“তুমি ইশার বয়ফ্রেন্ড?”
“না স্যার ওর সাথে আমার পনেরোদিন আগে ব্রেকাপ হয়েছে।”
“কেনো?”
“ও একাধিক রিলেশনে ছিলো।”
“কিন্তু ওর বান্ধবীরা যে তোমার কথা বলল। আর ওর ডায়েরিতেও কিন্তু তোমার নাম ছাড়া আর কোনো ছেলের নাম পাই নি আমরা।”
“স্যার আমি সত্যি বলছি।
এভাবেই প্রিয়ম অনিককে জেরা করা শুরু করলো।
——————-
অরুণীরা বাসায় চলে আসলো।বাসায় এসে নিজের রুমে চলে অরুণী।ফ্রেশ হয়ে বের হতেই অরুণীর মা বলল” অরু তোর বাবা ডাকছে তোকে।”
অরুণী মুখ মুছে বাবার ঘরে গিয়ে বলল”আব্বু ডেকেছো?”
“হ্যাঁ বস।”
অরুণী ওর আব্বুর সামনে বসলো।ওর বাবার পাশে ওর মামাও বসেছে।অরুণীর পিছনে ওর মা দাঁড়িয়ে।অরুণীর বাবা একটু কেশে বলল”দেখলি তো আজকে কি হলো।হঠাৎ করেই বুকে ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে।আল্লাহই জানে কয়দিন বাঁচি।তাই যাওয়ার আগে আমার ফরজ কাজটা করে যেতে চাই।তোর মামা তোর জন্য একটা সম্বন্ধ এনেছে।তোর যদি কোনো পছন্দ থাকে তাহলে বল।”
ওর বাবার কথা শেষ হতেই অরুণী বলল”না বাবা আমার কোনো পছন্দ নেই।তুমি ছেলে দেখতে পারো।তোমার পছন্দই আমার পছন্দ।”
ওর বাবা মা আর মামা একসাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলেন।অরুণীও একটু হেসে নিজের ঘরে চলে গেলো।ঘরে এসেই দেখলো ফোনে প্রণয়ের কল এসেছে।অরুণী রিসিভ করতেই প্রণয় বলল”কোথায় ছিলে?এতক্ষণ ফোন ধরছিলে না কেনো?”
“আমার ইচ্ছা আমি ধরি নাই।আপনাকে কৈফিয়ত দিবো না।”
“আচ্ছা দিয়ো না।কিন্তু একটু ভালো করে তো কথা বলতে পারো।”
“আপনি না আমাকে আর ডিস্টার্ব করবেন না প্লিজ।আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।”
প্রণয় বুকটা ধড়াস করে উঠলো অরুণীর কথা শুনে।প্রণয় উত্তেজিত হয়ে বলল”সত্যি!ইয়ার্কি করো না প্লিজ।”
“আমি আপনার সাথে কখনো ইয়ার্কি করি না তাই না তাহলে আজ কেনো করবো।এটাই সত্যি।”
বলেই অরুণী ফোন রেখে দিলো।ফোন রেখে দিয়ে অরুণী মনে মনে বলল”আল্লাহ বাচাইছে।এখন আর ডিস্টার্ব করবে না।”
কিন্তু না অরুণীর কথাকে ভুল প্রমাণ করে প্রণয় আবার কল দিলো।অরুণী ফোনটা সাইলেন্ট করে পড়তে বসে গেলো।আর এদিকে প্রণয় এক হাত দিয়ে পুরো ঘরের জিনিসগুলো ভাঙছে আর আরেক হাত দিয়ে অরুণীকে ফোন করছে।
চলবে…..
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)