এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-০৮ (শেষ পর্ব)

0
1878

#এই মন তোমাকে দিলাম (শেষ পর্ব)
#ঈপ্সিতা মিত্র

এই কথায় হিয়া কি বলবে বুঝতে পারেনি সেই মুহূর্তে! তাই কিছুটা সময় নিয়ে বলেছিল,
—–” আমি পুরনো ব্যাপার নিয়ে কোন কথা আর বলতে চাই না। যাইহোক, তুমি খাবে কি? কাজের মাসি রান্না করে দিয়ে গেছে তো?”
এই প্রশ্নে স্পন্দন একটু কিন্তু কিন্তু করে বলেছিল,
—–” না মানে, আগের মাসে রান্নার মাসি কাজ ছেড়ে দিয়েছে। আর আমি তো রান্না পারি। তাই মা বাবা নিশ্চিন্তেই গেছে কোচবিহার! এরপর যে এরকম এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে, কে জানতো! যাইহোক, প্রব্লেম নেই। আমি অনলাইনে অর্ডার করে নেব কদিন।”
কথাটা শুনে হিয়া সাথে সাথেই বললো,
——” তুমি বাইরের খাবার খাবে রেগুলার! কেন? আমাদের বাড়ি আছে। আমি মা কে বলে দেব, কদিন তোমার জন্য রান্না করতে। আমি এসে দিয়ে যাবো। ”
কথাগুলো শুনে স্পন্দন বেশ আপত্তি করে বলে উঠেছিল,
——-” না না প্লিজ! তুই কাকিমা কে কিছু বলিস না। আমার খুব অস্বস্তি লাগবে। আর কদিনের ব্যাপার, আমি ম্যানেজ করে নেব। ”
এই কথায় হিয়া বুঝেছিল স্পন্দন অকয়ার্ড ফিল করছে। তাই অন্য একটা কথা বলে উঠেছিল এই মুহূর্তে,
——” ঠিক আছে। আমি মা কে কিছু বলবো না। তাহলে এই কদিন আমি এসে তোমার জন্য রান্না করে যাবো। এবার তো কোন অস্বস্তি নেই?”
এটা শুনে স্পন্দন কি বলবে বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে বলেছিল,
——-” তুই করবি! তোর পড়াশোনা আছে। না না, তোর প্রব্লেম হবে। এসবের কোন দরকার নেই।”
এই কথায় হিয়া এবার বেশ জোর দেখিয়ে বললো,
——” কোন প্রব্লেম নেই। আর কাল থেকে পুজোর ছুটি পড়ে যাচ্ছে। আমার তো ইউনিভার্সিটিও নেই। আর একজনের রান্না করতে কত টুকু সময় লাগে!”

কথাটা বলেই সেদিন হিয়া নিজে থেকে রান্না ঘরের দিকে গেছিল। তারপর স্পন্দনের জন্য চারটে রুটি আর ডিম ভাজা করে রেখে দিয়েছিল। স্পন্দন এই সময় ড্রইং রুমে বসেছিল। আসলে হাতে এত জ্বালা আর যন্ত্রণা করছে আজ, যে সত্যিই বেশিক্ষণ দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। তবে এই সময় হিয়া এসে বলেছিল,
——-” তোমার জন্য রুটি ডিম ভাজা করে চাপা দিয়ে রেখেছি। খেয়ে নিও। আসলাম।”
কথাটা বলেই হিয়া চলে যাচ্ছিল। তখনই স্পন্দন বলে উঠলো আলতো স্বরে,
——-” তুই আমার জন্য এখনও এত চিন্তা করিস! ”
হিয়া এই কথায় ঠিক কোন উত্তর না দিয়ে অল্প কথায়ই বললো,
——” আসছি। আর কোন দরকার লাগলে কল কোরো। সাবধানে থেকো। ”
কথাগুলো বলে সেদিন হিয়া থাকেনি আর। চলে গেছিল বাড়ি। তবে স্পন্দনের হাতে যন্ত্রণা থাকলেও আজ মনের যন্ত্রণাটা কমেছিল কিছুটা। হিয়া যে আজও ওকে নিয়ে সেই আগের মতন কনসার্ন, এটা বুঝতে অসুবিধা হয়নি একটুও।

তবে এরপরের দিন হিয়া সকাল সকাল এসেছিল আবার স্পন্দনদের বাড়ি। আজ চতুর্থী। তাই পাড়ার মণ্ডপে মাইক বাজানো শুরু হয়ে গেছে। চারিদিকে পুজোর আমেজ। তার মধ্যেই হিয়া রান্না করছিল নিজের মনে। সেই সময় হঠাৎ স্পন্দন এসে হাজির রান্না ঘরে। যদিও হিয়া খেয়াল করেনি প্রথমে। ও তখন আটা মাখতে ব্যাস্ত ছিল। কিন্তু ওই সামনের চুলগুলো মাঝে মাঝেই চোখের কাছে এসে ডিস্টার্ব করছিল। হিয়া আটা হাত দিয়েই সেটা ঠিক করার চেষ্টা করছিল এলোমেলো ভাবে। কিন্তু তখন স্পন্দন হঠাৎ এসে ওর কপালে হাত দিয়ে চুলটা সরিয়ে দিল আলতো করে, আর তখনই হিয়া অল্প ইতঃস্তত হয়ে বললো,
——” তুমি?”
স্পন্দন এই প্রশ্নে এক কথায় বললো,
—–” হ্যাঁ, আমি। ”
হিয়া এরপর কি বলবে বুঝতে না পেরে বললো,
——” কোন দরকার ছিল?”
এটা শুনে স্পন্দন একটু ভারী গলায় বললো,
——-” কেন? দরকার ছাড়া কি তোর সাথে আর কথা বলা যাবে না? না কি এখনও রেগে আছিস আমার ওপর সেইদিনের জন্য। ”
কথাগুলো বলতেই হিয়ার কেমন খারাপ লাগলো যেন। ছেলেটার মুখটা কেমন ফ্যাকাসে যেন আজ! তাই স্পন্দনকে শান্ত স্বরে বললো,
——” পুরনো কথাগুলো আর তুলো না। আর আমি রেগে নেই একদম। ”
কথাটা শেষ হতেই ও খেয়াল করলো স্পন্দনের হাতটা। ব্যান্ডেজটা লাল হয়ে গেছে হাতের ছেলেটার! ব্লিডিং হচ্ছে না কি আবার! কথাটা ভেবেই হিয়া বেশ চিন্তা নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
——” তুমি হাতের ড্রেসিংটা চেঞ্জ করোনি? ওষুধ লাগাওনি জায়গাটায়?”
এই কথায় স্পন্দন কিছুটা অগোছালো হয়ে বললো,
—— ” না, মানে! করা হয়নি আর।”
হিয়া এবার তাড়াতাড়ি নিজের সমস্ত কাজ ফেলে বললো, ——” ড্রইং রুমে চলো। এক্ষুণি জায়গাটা ড্রেসিং করতে হবে! ওষুধ ঠিকভাবে না লাগালে কখনোই শুকোবে না জায়গাটা!”
কথাগুলো বলে হিয়া সত্যিই এবার রান্না ছেড়ে এসেছিল স্পন্দনের কাছে, ছেলেটার হাতে ব্যান্ডেজ করে দেওয়ার জন্য। তবে আজ পুরনো ড্রেসিং টা খুলে ও যেন আঁতকে উঠেছিল ছেলেটার হাতটা দেখে! কতটা জায়গা জুড়ে পুড়ে গেছে ওর! তার ওপরে কিছু কিছু জায়গায় চামড়া গোলে ব্লাড বেরোচ্ছে অল্প অল্প। দৃশ্যটা দেখেই হিয়ার চোখে জল চলে এসেছিল হঠাৎ! কত কষ্ট হচ্ছে স্পন্দনের! কতটা যন্ত্রণা ওর হাতে! এই ভাবনার ভিড়েই খুব সাবধানে যত্ন করে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছিল হিয়া স্পন্দনের হাতে। তবে এই মুহূর্তে স্পন্দন খেয়াল করেছিল হিয়ার ভেজা চোখ দুটো। ওর যন্ত্রণায় তার মানে হিয়ার এতটা কষ্ট হয় যে মেয়েটার চোখে জল জমে! এটা দেখে স্পন্দন যেন কেমন নির্বাক হয়ে গেছিল আজ। তাহলে কি হিয়া ওকে আজও ভালোবাসে! এত দূরত্ব তৈরির পরেও ফিল করে ওর জন্য! কথাগুলো মনে হয়েছিল হঠাৎ। তবে এই ভাবনার ভিরেই হিয়া ওর ড্রেসিং করে দিয়েছিল হাতে। তবে তারপর খেয়াল করেছিল স্পন্দন ওর দিকে নিস্পলক ভাবে তাকিয়ে আছে এখন। এটা দেখে হিয়া কিছু না বুঝতে পেরেই জিজ্ঞাসা করেছিল,
——-” কি হলো? লাগছে খুব?”
এই প্রশ্নে স্পন্দন আলতো হেসে বলেছিল,
——-” না, এতদিনে যন্ত্রণাটা কমলো একটু। ”
কথাটা শুনে হিয়া আর ঠিক কিছু বলতে পারেনি ওকে। স্পন্দন কি আলাদা করে কিছু বোঝাতে চায় আজকাল! এইভাবে তো আগে কথা বলতো না ছেলেটা! কথাগুলো মনে আসতেই হিয়া নিজের ভাবনাটা কে থামিয়ে দিয়েছিল সেই মুহূর্তে। মনে হয় একটু বেশিই ভাবছে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে চলে এসেছিল রান্নাঘরে।
<১৩>
তবে এরপর পুজো এসে হাজির হয়েছিল বাঙালির দরজায়। আজ সপ্তমী। সকাল থেকে কলা বৌ স্রান, ঢাকের আওয়াজ, মাইকে মন্ত্রচ্চারণের শব্দে যেন পাড়াটা গমগম করছে! তার মধ্যেই স্পন্দনের মুখ ভার। হিয়া আজ সকাল থেকে এসে এটা খেয়াল করেছিল। কিন্তু কিছু বলেনি নিজে থেকে। তবে রান্না করে বাড়ি যাওয়ার আগে ও যখন ড্রেসিং করতে গিয়েছিল ওর হাতের, তখন স্পন্দন বেশ অন্ধকার মুখে বলেছিল,
——” ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করার দরকার নেই আর নতুন করে। ঠিক আছে হাত। ”
এই কথায় হিয়া এবার একটু জোর দেখিয়ে বলেছিল,
——-” ঠিক আছে বললেই হবে! কিভাবে পুড়েছে জায়গাটা! রোজ ওষুধ না লাগালে ইনফেকশন হয়ে যাবে।”
এটা শুনে স্পন্দন এক কথায়ই বলেছিল,
——-” ভালো হবে। বাঁচা যাবে। ”
কিন্তু এরপর হিয়া আর না জিজ্ঞেস করে পারেনি। ও একটু বিরক্ত হয়েই বলেছিল,
——–” কি হয়েছে তোমার বলবে একটু? এইভাবে মুড অফ করে বসে আছো কেন? আর হাতটা দাও। ওষুধটা এখন লাগাতেই হবে। ”
কথাটা বলে হিয়া আর অপেক্ষা না করে নিজেই স্পন্দনের হাতটা ধরে টেনেছিল কাছে। তারপর ওর আপত্তির তোয়াক্কা না করেই পুরনো ড্রেসিং টা খুলতে শুরু করেছিল। কিন্তু স্পন্দন এই মুহূর্তে কিছুটা আনমনেই বলে উঠেছিল,
——–” পুজোর দিনেও আমি একা। মা বাবাও নেই; সেই কোচবিহার! কবে যে ফিরবে দেশের বাড়ি থেকে কে জানে! আর তুইও তো যাবি না আর ঠাকুর দেখতে আমার সাথে। আমি তো এখন সব থেকে দূরের লোক। এখন তো অন্য অনেক নতুন বন্ধু হয়েছে।”
শেষ কথাটা যে স্পন্দন উজান কে মিন করে বললো সেটা হিয়া খুব সহজেই বুঝেছিল। তবে এই নিয়ে বেশি রিয়্যাক্ট না করে বললো,
——-” আমার কোন নতুন বন্ধুর সাথে কিছু প্ল্যান নেই। আর তোমার তো আগের বছর অব্দিও ভিড়ের মধ্যে ঠাকুর দেখতে ধৈর্য্য থাকতো না! আমি জোর করতাম বলেই বেরোতে, বাধ্য হয়ে। যাইহোক, এবার যদি ঠাকুর দেখতে ইচ্ছে হয় তাহলে ইউনিভার্সিটির অনেক বন্ধুই আছে! তাদের সাথে ঘুরতে যাও। সুচেতাদি কে ফোন করো। তুমি ডাকলেই ও চলে আসবে। তারপর একসাথে ঘুরবে দুজন। ”
কথাগুলো বেশ সহজভাবে বলার চেষ্টা করেছিল এই মুহূর্তে হিয়া। তবে স্পন্দন ওর কথা শেষ হতেই হঠাৎ ওর হাতটা ধরেছিল শক্ত করে। তারপর খুব স্থির গলায় বলেছিল,
——” সুচেতার সাথে কোন কথা নেই আমার। যে তোর সঙ্গে মিস বিহেভ করেছিল তার সাথে আমি বন্ধুত্ব রাখবো, এটা তুই ভাবলি কি করে! যাইহোক, আমি শুধু তোর সাথে এই শহরটা ঘুরতে চাই, নতুন করে। একটা দিন দিবি আমাকে, এই পুজো থেকে? শুধু তোর আর আমার জন্য!”
কথাগুলো কিরকম হিয়ার চোখে চোখ রেখে বলেছিল স্পন্দন। তবে আজ হিয়া ভীষণ ভাবে খেয়াল করেছিল ছেলেটার বদলটা! স্পন্দন ওর কাছ থেকে আলাদা সময় চায়! এরকম তো আগে বলেনি কখনো! তবে আজ কেন জানে না হিয়াও পারেনি আর দূরে সরে থাকতে। কেউ এইভাবে বললে কি খুব কঠিন হয়ে থাকা সম্ভব! তাই আলতো স্বরে বলেছিল,
——” আজ সন্ধ্যে ছটায় আসবো। যাবো একসাথে ঠাকুর দেখতে।”
এই কথায় স্পন্দনের মুখে হাসি; সেই একজন কে কাছে পাওয়ার জন্য।
যাইহোক, সেদিন ওরা একসাথে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিল এরপর। স্পন্দন আজ অনেক কথা বলছিল। তবে হিয়া খেয়াল করছিল ভিড়ের মধ্যে ছেলেটা ওকে কেমন আগলে আগলে রাখছে। অনেকের ভিড়ে হাতটা শক্ত করে ধরছে ওর বার বার। এলোমেলো কথার ভিড়ে চেষ্টা করছে দূরত্ব গুলোকে কমিয়ে ফেলার! তবে এই স্পন্দন কে খুব নতুন লাগছিল হিয়ার। ছেলেটা যে ওর কাছে আলাদা হয়ে ধরা দিতে চাইছে, এটা বুঝতে পারছিল হিয়া আনমনে।
এরপর অষ্টমীর অঞ্জলীর দিনও স্পন্দন অঞ্জলীর লাইনে ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল নিজে থেকে। তারপর হঠাৎ হিয়ার কানের কাছে এসে বলেছিল আস্তে গলায়,
——–” নীল রংটা খুব মানিয়েছে তোকে। ভীষণ সুন্দর লাগছে শাড়িতে। ”
কথাটা বলেই ও চোখ বন্ধ করে ফেলেছিল নিজের। মন দিয়েছিল অষ্টমীর অঞ্জলিতে। কিন্তু হিয়া একটু অবাক হয়ে তাকিয়েছিল কয়েক সেকেন্ড স্পন্দনের দিকে! কি হয়েছে ছেলেটার! এর আগে এতগুলো বছর গেল! হিয়া প্রত্যেকবার অষ্টমীর দিনটা স্পন্দনের কথা ভেবে সেজেছে। কিন্তু কোনদিন তো ও নিজে থেকে নোটিশ করেনি হিয়াকে! কখনো বলেনি ‘ ভালো লাগছে ‘ । তাহলে আজ কি হলো!
কথাগুলো হঠাৎ করে মনে হচ্ছিল ওর। যাইহোক, এরপর নবমী কাটিয়ে দশমীর দিনটা চলে এসেছিল শহরে। আজ ঢাকের তালে বিষাদের সুর। মা আসবে আবার এক বছর বাদে! তাই প্রত্যেকের মতন হিয়ার মনটাও খারাপ অল্প। কিন্তু তাও দাঁড়িয়ে মণ্ডপে। সবার ভিড়ে মায়ের বরণ দেখছে চুপচাপ। স্পন্দনও এই সময় মণ্ডপে ছিল। আজ মনে মনে মায়ের কাছে হিয়াকেই চাইছিল ভীষণভাবে। মেয়েটার জন্য নিজের ফিলিংস গুলো বুঝতে অনেকটা সময় পার করে দিয়েছে অজান্তে। না বুঝে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে হিয়াকে। তবে আর না। এবার হিয়ার সাথে একটা নতুন শুরু করতে চায় স্পন্দন। এইসবই ভাবছিল, তখনই খেয়াল করলো ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ উজান এসে হাজির। ও সবার মধ্যে গিয়ে হিয়ার পাশেই দাঁড়িয়েছিল আজ। তারপর হিয়ার কানে কি যেন একটা বলছিল! হিয়া সেটা শুনে উজানের সাথে বেরিয়ে গেল মণ্ডপ ছেড়ে। তবে স্পন্দনও আর নিজেকে আটকাতে পারলো না! এই ছেলেটাকে দেখলেই কেমন ইন্সিকিউরিটি তৈরি হয় মনে। তাই চুপচাপ ওদের ফলো করেছিল আজ একটু দূর থেকে। তারপর খেয়াল করলো ওদের পাড়ার ছোট্ট পার্কটায় হিয়া ঢুকলো উজানের সঙ্গে। স্পন্দনও এবার আলতো পায়ে এলো সেখানে। হঠাৎ ছেলেটা হিয়াকে এখানে নিয়ে এলো কেন! কিছুই বুঝতে পারছিল না ঠিক। তাই একটু দূরে একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে রইলো স্পন্দন। কিন্তু এবার হঠাৎ দেখলো উজান নিজের পকেট থেকে একটা গোলাপ ফুল বার করে হিয়ার সামনে ধরলো। দৃশ্যটা দেখেই স্পন্দনের চারিদিকটা এলোমেলো হয়ে গেল যেন! তাহলে কি ছেলেটা ওকে প্রপোজ করার জন্য এখানে নিয়ে এসেছে! আর হিয়াও কি হ্যাঁ বলে দেবে উজানকে! কথাটা ভাবতেই শুনতে পেল উজানের কথা। উজান এই মুহূর্তে নিজেকে কিছুটা গুছিয়ে বললো,
——-” আমি জানি, তুমি হয়তো এক্সপেক্ট করোনি এইসব। কিন্তু যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম সুকন্যা মাসির ফ্ল্যাটে, সেদিন থেকেই আই লাইক ইউ.. তুমি খুব স্পেশ্যাল আমার জন্য। প্লিজ খারাপ ভেবো না!”
কথাগুলো ভীষণ মন থেকে বললো উজান। তবে স্পন্দনের চারিদিকটা এই মুহূর্তে ঝাপসা হয়ে গেল যেন! তাহলে কি ওর গল্পটা শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাবে আজ! কথাটা ভাবতেই হিয়া বললো,
——-” এম সরি.. আমি তোমাকে হার্ট করতে চাই না। কিন্তু আমি কখনো তোমাকে আলাদা ভাবে দেখিনি। তুমি খুব ভালো বন্ধু আমার। ”
এটা শুনে আড়ালে দাঁড়ানো স্পন্দনের মুখে একটা হাসি চলে এলেও উজানের মন টা ভেঙে গেল কেমন। ও তাও নিজেকে সামলে বললো,
——-” আমি জানি ভালোবাসতে সময় লাগে! আমি ওয়েট করবো তোমার জন্য।”
কিন্তু এই কথায় হিয়া সঙ্গে সঙ্গেই বললো,
——-” প্লিজ এইসব বোলো না! আমি অন্য কাউকে কোনদিন ভালোবাসতে পারবো না হয়তো; বিকজ আই লাভ সমওয়ান.. হাজার চেষ্টা করেও আমি এই ফিলিংস গুলোকে ভুলতে পারিনি। আই এম সরি উজান.. আমি জানি ভালোবাসা এক তরফা হলে ঠিক কতটা কষ্ট হয়! আর আমি সত্যি তোমাকে এই কষ্টটা দিতে চাইনি।”
কথাগুলো শুনে উজান এবার কিছুটা সময় নিয়ে একটাই প্রশ্ন করে উঠলো,
——-” তুমি কি আজও স্পন্দনকেই ভালোবাসো?”
এই প্রশ্নে হিয়া ঠিক আর কোন উত্তর না দিয়ে বললো,
——” আমি মণ্ডপে যাচ্ছি। নইলে বিসর্জন হয়ে যাবে।”
কথাটা বলেই হিয়া আর দাঁড়ালো না। প্রশ্নটা এড়িয়েই চলে গেল উজানের সামনে থেকে। কিন্তু আড়ালে দাঁড়ানো স্পন্দন যেন হিয়ার নিঃস্তব্ধতার মানেটা বুঝে গেল এক মুহূর্তে। তার মানে হিয়া আজও ওকেই ভালোবাসে! ওর জন্যই ফিল করে। হিয়ার মনে আজও শুধু স্পন্দনই আছে। আর কেউ না। কথাটা ভেবে স্পন্দন আর অপেক্ষা করলো না। জোরে পা চালিয়ে এলো মণ্ডপে। ততক্ষণে সিঁদুর খেলা শুরু হয়ে গেছে দশমীর। চারিদিকে অনেকের ভিড়। তার মধ্যেই স্পন্দনের চোখ খুঁজছিল সেই একজনকে! আর কয়েক মুহূর্ত পর অবশেষে দেখা পেল স্পন্দন হিয়ার। মণ্ডপের একটা কোণে দাঁড়িয়ে ও। এক দৃষ্টিতে দুর্গা মায়ের দিকে তাকিয়ে। স্পন্দন এবার কিছু না ভেবেই ঠাকুরের সামনে বরণের থালা থেকে সিঁদুর নিল এক মুঠো। তারপর হিয়ার অগোচরে ওর কাছে এসে লাগিয়ে দিল মুঠো ভর্তি সিঁদুর কপালে। ততক্ষণে ঢাকের আওয়াজে মণ্ডপে নাচ শুরু হয়েছে সবার। সিঁদুর রঙে প্রত্যেকটা মুখ রঙিন আজ। তার মাঝেই হিয়া অপলকভাবে তাকিয়ে ছিল স্পন্দনের দিকে। সেই সময় স্পন্দন ওর কানের কাছে এসে বললো আস্তে গলায়,
——-” ভালোবাসি তোকে। আর তুই শুধু আমার। আজ থেকে প্রত্যেকটা দিন, প্রত্যেকটা মুহূর্তে শুধু আমার।”
কথা গুলো বলেই হাতটা শক্ত করে ধরলো হিয়ার এই মণ্ডপের ভিড়ে।

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে