#এই প্রেম তোমাকে দিলাম
#পর্ব_১৯
#আফিয়া_আফরিন
‘বিয়েটা আমরা একটু তাড়াতাড়ি দিতে চাই’ কথাটি শ্রবণ করা মাত্রই তিথির মনে হলো, কেউ তার বুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করছে।
দিগিদ্বিক জ্ঞান শূন্য হয়ে গেলো। মস্তিষ্ক ক্রমেই ফাঁকা হয়ে এলো। কি করবে সে এখন? আয়াশ কে বলতে ও কেমন জানি লাগছে। বারবার একটা দ্বিধা কাজ করছে। কিন্তু এমন দ্বিধা হওয়ার কারণই বা কি?
সৌরভের মা তিথিকে পছন্দের কথাটা সবাইকে জানিয়েছেন। আর বলছেন তিথি আর সৌরভকে আলাদাভাবে একদিন দেখা করাবেন। আজকে আর আপাতত দেখা করার দরকার নাই।
তিথি নিজেকে সামলে নিয়েছে। এভাবে জ্ঞানশূন্য হয়ে বসে থাকলে চলবে না। কিছু একটা করতে হবে, না হয় কিছু একটা বলতে হবে। সৌরভরা বিদায় নেওয়ার সময় তিথি ওদের সামনে উপস্থিত হলো।
সামনে থাকা প্রতিদিন মানুষের চোখে চোখ রেখে বললো, “আমি এই বিয়ে করতে পারবোনা।”
সবাই বিস্নিত হলেন। সৌরভের মা সামনে এগিয়ে এসে বললেন, “আমরা ছেলের বিয়ে তাড়াতাড়ি দিতে চাচ্ছিলাম। এখন মনে হয় এত তাড়াতাড়ি দেওয়া ঠিক হবেনা। তোমার দিকটাও ভাবা উচিত। তুমি সময় নাও, তারপর ভেবে বলো।”
তিথি কিছু বলতে যাবে তার আগে তিনি আবার বললেন, “এখানে এসো, দেখো তো আমার ছেলেকে তোমার পছন্দ হয় নাকি?”
তিনি তিথি কে নিয়ে গিয়ে সৌরভের সামনে দাঁড় করালেন। তিথি এক নজর তাকালো সৌরভের দিকে, কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে। যদিও তাদের নাকি অনেক বছর আগে দেখা হয়েছিল তবুও এই দেখাটা অন্যরকম মনে হচ্ছে। ইদানিং কালেই কোথাও যেন দেখেছে!
তিথি কিছু বলল না, চোখ নামিয়ে নিল।
সৌরভের বাবা বললেন, “মা, তুমি ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের জানিও।”
তিথি উপর নিচ মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো।
ওরা চলে গেলে ফারজানা বেগম তিথিকে ধমকা ধমকি করে বললেন, “তোর সমস্যা কোথায় তিথি? এতো ভালো একটা সম্বন্ধ আর তুই রাজি কেন হচ্ছিস না?”
তিথির ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে বললো, “আমি একজনকে ভালোবাসি!”
মনসুর সাহেব আর ফারজানা বেগম বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। তাদের মেয়ে যে আদিত্য পর ফের কাউকে ভালবাসতে পারে, এটা বোধহয় ধারণার বাইরে ছিলো।
ফারজানা বেগম বিস্ময় কাটিয়ে বললেন, “কে সে?”
“সময় হলে জানাবো। এখন না।”
তিথি রুমের ভেতর চলে গেল। আর কিছু বললো না।
.
.
.
আকাশে মেঘের আনাগোনা চলছে। সূর্য একদিকে হেলে পড়েছে। মৃদু বাতাস বইছে তবুও কি ভ্যাপসা গরম!
তিথি মাঠের কিনারে বসে আছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। চুলগুলো কপালের সাথে লেপটে আছে। আয়াশ দৌড়ে এসে তিথির পাশে বসে ওর হাত ধরলো।
তিথি আনমনে আয়াশের কাঁধে মাথা রাখলো। আয়াশ বেশ অবাক হলো। তিথি খুব শান্তশিষ্ট্য, লাজুক ধরনের মেয়ে। সামান্য একটু হাত ধরলেই হাঁসফাঁস করে, সেই মেয়ে কিনা নিজ থেকে এত কাছাকাছি এলো। অবাক করার মতন বিষয়!
তিথি এবার আয়াশ কে সপ্তাশ্চর্যের পর্যায়ে নিয়ে গেল। কাঁধে মাথা রাখা অবস্থায় আয়াশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। খুব শক্ত করে। হাতের বাঁধন আলগা হলেই যেন আয়াশ যোজন যোজন মাইল দূরে চলে যাবে।
আয়াশ পাল্টা তিথিকে নিজের এক হাত দিয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বললো, “কি হইছে তিথি?”
তিথি উত্তর দিতে পারল না। সে কাঁদছে। আয়াশ তিথির মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।
আয়াশের নিজেরই প্রচন্ড অস্থির লাগছে। এভাবে কাঁদছে কেন মেয়েটা?
আবার ভেবে নিল, ‘কাঁদুক। চোখের পানির সাথে মনের ভিতর জমে থাকা কষ্টগুলো ঝরে পড়ে হালকা লাগবে। হয়তো কিছু একটা হয়েছে তিথির। যাইহোক, ও ঠিক হলে নিজে থেকেই বলবো।’
কিছুক্ষণ পর তিথি মাথা উঠিয়ে চোখ নাক মুখ মুছে ফের আকাশের বুকে মাথা রাখলো। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বললো, “জানেন মা বাবা আমার বিয়ে ঠিক করছে।”
এবার আয়াশের অবাক হওয়ার পালা।
বললো, “মানে কি?”
“মানে কি বুঝাবো? শুনলেন ই তো আমার কথা।”
“বুঝেছি। তুমি কি বললে?”
তিথি মাথা তুলে তাকিয়ে বললো, “কি আবার বলবো?”
“সেটাইতো। কি বললে সেটাই শুনতে চাচ্ছি।”
“বলেছি যে বিয়ে করতে রাজি আমি। আমাকে এক্ষুনি বিয়ে দিয়ে দাও।”
আয়াশ হাসলো। তিথিকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে, চোখের পানি মুছে দিয়ে আলতো করে চুমু খেলো চোখের পাপড়িতে। তিথির সারা শরীরে অদ্ভুত ঢেউ খেলে গেল।
একটু সরে গিয়ে বললো, “এভাবে ধরে আছেন কেন?”
“একটু আগে যে তুমি আমায় জড়িয়ে ধরলে তার বেলায়___!”
“আমি ধরলে দোষ নাই।”
“তাই?”
“হ্যাঁ, আপনি তো বলছিলেন এক ভাগ ভালোবাসা ও নাকি প্রকাশ করতে পারি না।”
“ও আচ্ছা। এটা বুঝি ভালোবাসা প্রকাশ ছিল?”
তিথি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো। আয়াশ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তিথিকে জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো। এরপর নিজেই তিথির কাঁধে মাথা রাখলো। তিথির হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে নিজের হাতের আঙ্গুলগুলো রাখলো। তারপর হাতটা চেপে ধরলো।
“চিন্তা করো না তিথি। আছি তো আমি।”
“কি করবেন?”
“যাই করি না কেন, ভরসা নেই?”
“আছে।”
“তাহলে চিন্তা করো না। মা গ্রামের বাড়ি গেছে। মা ফিরুক, আমাদের ব্যাপারটা জানাবো মাকে।”
“আচ্ছা। আমি বাসায় মানা করে দিয়েছি।”
“তুমি না বললে তুমি রাজি আছো!”
তিথি এক হাত দিয়ে দুম করে আয়াশের পিটে কিল বসিয়ে বললো, “সেটা তো আপনাকে ফাইজলামি করে বলেছি।”
“তুমি আবার ফাইজলামি করতেও জানো?”
“নাহ, সেটা শুধু আপনি জানেন।”
আয়াশ তিথির গাল টিপে ধরে বললো, “হ্যাঁ জানি তো।”
.
.
আজ আকাশের বার্থডে। আকাশের মা না থাকায় কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো না। কিন্তু আকাশ দায়িত্ব দিয়েছে তিথিকে। তিথি বলেছিল তিথিদের বাসায় আসতে। কিন্তু আকাশ বেঁকে বসলো।
বললো, “বাসায় আয়। এখানে এসে আমাদের রান্না করে খাওয়াবি! সমস্যা কি? আসার সময় তানিশা কে ও নিয়ে আসবি।”
“ক্যান ডেটিং মারবি?”
“নারে। ঘুরতে যাব।”
“ঘুরতে যাবি নাকি ডেটিং মারতে যাবি সবই জানা আছে আমার!”
অরিন এসেছে ঢাকায়। আকাশের বার্থডেতে সেও উপস্থিত থাকবে। পুরনো বন্ধু-বান্ধব ফের একত্রিত হবে, সবাই বেশ এক্সাইটেড!
আয়াশ তিথিকে সকাল সকাল বাসার সামনে থেকে ড্রপ করে নিলো। মাঝপথে আসতেই আয়াশের ফোনে কল এলো, অফিস থেকে তার বন্ধু ফোন করেছে।
আয়াশ তিথিকে বললো, “চলো, অফিস থেকে ঘুরে আসি একটু।”
“আমিও যাব?”
“হ্যাঁ চলো।”
“আচ্ছা।”
আয়াশ বাইক ঘুরিয়ে উল্টো দিকে রওনা হল। অফিসের সামনে পৌঁছে মেইন গেট দিয়ে ঢুকে লিফটে করে ১১ তলায় এলো। লিফট থেকে নামতেই সামনে কেবিনে বসে থাকা মানুষটাকে দেখে চক্ষু চরক গাছে পৌঁছালো তিথির।
আমার সামনে এগিয়ে গিয়ে তার সাথে কোলাকুলি করল। তিথি ঠাঁয় দাড়িয়ে রইল ওখানে।
সামনে থাকা ঐ মানুষটির চোখে যাতে না পড়ে তাই একটু সাইড হয়ে দাঁড়ালো।
তিথির হঠাৎ মনে পড়ে গেল ওই দিনের কথা। আয়াশ যেদিন বস্তিতে মানুষের মাঝে কাপড় বিতরণ করছিল তখন এই ছেলেটা ছিল, তাইতো তার বাসায় সৌরভকে তখন চেনা চেনা লাগছিল।
কিন্তু সৌরভের সাথে আয়াশের কি সম্পর্ক? ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলো।
তখন আয়াশের মেসেজ এলো ফোনে।
“কোথায় তুমি?”
“নিচে নেমে আসছি।” তিথি রিপ্লাই দিল।
“আচ্ছা, আসছি আমি।”
মিনিট খানেকের মধ্যে আয়াশ নিচে নেমে এলে তিথি প্রশ্ন করে, “উনি কে হয় আপনার?”
“আমার কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড।”
“ও আচ্ছা। উনার নাম সৌরভ তাই না?”
“হ্যাঁ।”
তারপর ভুরু কুঁচকে বললো, “তুমি চেনো ওকে?”
“হ্যাঁ, চিনি।”
“কিভাবে?”
তিথি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “উনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করতে চাচ্ছে মা বাবা!”
আয়াশ অবাক হয়ে চেয়ে রইল তিথির মুখ পানে। তাকে দেখে যে কেউ বলতে পারবে, এত অবাক বোধ হয় সে বহু বছর হয় নাই!
আয়াশ কিছু বললো না। শুধু মাত্র তিথির হাত শক্ত করে ধরে মেইন গেট পার হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
.
.
.
.
চলবে……
#এই_প্রেম_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব_২০
#আফিয়া_আফরিন
মৃদু বাতাসে তিথির চুল গুলো উড়ছে। ছাদের রেলিং এ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। তিথির বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে বিকেল বেলা, আয়াশের সাথে কাটানো সেই মুহূর্তটা।
দুপুরের পর সবাই একসাথে অর্থাৎ আয়াশ তিথি আকাশ তানিশা একসাথে বসে আয়াশদের বাসায় গল্প করছিল। তখন তিথির ফোন এলে তিথি কথা বলতে বলতে ওই রুম পেরিয়ে ড্রয়িং রুমে আসে। এই ফাঁকে তানিশা আর আকাশ বাইরে চম্পট মারে। কথা শেষ করে ওই রুমে ঢুকতেই আয়াশের সাথে ধাক্কা খায়। দুজন মিলে একজন আরেকজনের উপর পড়ে যায়।
তিথি পড়ে গেল চরম অস্বস্তিতে। ওর মুখ কুঁচকানো দেখে আয়াশ হেসে দিল।
অতঃপর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
“আবার ধাক্কা খেলাম, দেখলা? প্রত্যেকবারের মতো এবারও তোমার দোষে। এভাবে চেউয়া মাছের মত লাফাচ্ছিলে কেন?”
তিথি ভুরু জোড়া কুঁচকে ফেলল।
“আপনি উঠুন।”
“না উঠবো না।”
“তো কি এভাবে ফেভিকলের মত চিপকে থাকবেন আমার সাথে?”
“ফেভিকল না, কাঁঠালের আঠার মতো চিপকে থাকবে তোমার সাথে।”
“ইসসস, এখন উঠেন তো আমার উপর থেকে। একেবারে ভর্তা বানিয়ে ছাড়লো আমারে।”
আয়াশ উঠে দাঁড়ালো। তিথি কেও হাত ধরে দাঁড় করালো।
তিথি দাঁড়িয়ে বললো, “আপনি কি জানেন যে আপনি খুব ফাজিল।”
আয়াশ তিথির দিকে একটু ঝুঁকে এসে বললো, “কতবার বলবে এই কথা আর!”
.
.
.
মধ্যাহ্ন বেলা পার হয়েছে। মিষ্টি রোদে ঘরের ভেতরটা ছেয়ে গেছে। তিথি আর আয়াশ কাছাকাছি, খুব কাছাকাছি।
আয়াশ আর একটু এগিয়ে এসে তিথির কাঁধে হাত রাখলো।
সামান্যটুকু দূরত্ব মিটে গেল দুজনের মধ্যে।
তিথি হাঁসফাঁস করতে লাগলো, কিন্তু মুখে কিছুই বলল না। শুধুমাত্র নিজেকে খুব সন্তর্পণে আয়াশের বুকে সঁপে দিল।
এই সামান্য মুহূর্তটুকু কি স্বর্গীয় ছিল!
বিকেলবেলা আয়াশ তিথিকে বাড়ি দিয়ে গেলে সে ছাদে উঠে, সেই স্বর্গীয় মুহূর্তটাকে বারবার অনুভব করছিল।
সন্ধ্যার পর ফারজানা বেগম তিথি কে ডেকে বললেন, “ঐদিন যে ভালবাসার কথা বললি, কে সেই ছেলে?”
“সময় হোক পরে বলবো।”
“কিসের সময় হবে? দুইদিন পর পর কি নাটক শুরু করিস তুই?”
“নাটক কই করলাম আম্মু? আর শোনো, বাবাকে বল সৌরভেদের না করে দিতে।”
“আমি পারবো না, তোর যা মন চায় তুই তাই কর। আমি তোর বাবাকে বলি, আর আমি কথা শুনে তাই না? ঠ্যাকা পড়ছে আমার?”
“তোমার বলতেই হবে মা।”
এমন সময় মনসুর সাহেব ঘরে ঢুকে তিথির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন।
তিথি চোখ নামিয়ে নিল।
মনসুর সাহেব বললেন, “কি হচ্ছে এখানে?”
তিথি পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে মনসুর সাহেব ডেকে বললেন, “তিথি!”
মুহূর্তেই সাইবেরিয়ার বরফের ন্যায় ঠান্ডা হয়ে গেল তিথি। যদিও সে তার বাবাকে ভয় পায় না, তবুও এখন ভয়টা লাগছে।
কে জানে মাথা গরম করে কি বলে বসে?
গম্ভীর গলায় ফের তিনি বললেন, “ছেলেটি কে?”
তিথি থতমত খেয়ে গেল। কথা বলতে পারল না।
“ছেলেটি কে সেটা আমি জিজ্ঞাসা করেছি তিথি?”
তিথি রোবটের মত উত্তর দিল, “আয়াশ।”
তিনি ভুরু কুঁচকে বললেন, “কোন আয়াশ?”
“আকাশের ভাই, সৌরভের বন্ধু।”
“সৌরভের বন্ধু মানে?” অবাক হলেন মনসুর সাহেব।
“হ্যাঁ, উনি সৌরভের বন্ধু হন।”
ভাবলেশহীন ভাবে মনসুর সাহেব উত্তর দিলেন, “আচ্ছা যা।”
তিথি রুম থেকে বের হয়ে বড় করে একটা নিশ্বাস নিল।
.
.
রাতের বেলা খাওয়া দাওয়ার পর মঞ্জুর সাহেব ডেকে পাঠালেন তিথিকে।
সোজা কথায় বললেন,”আমি সৌরভদের কথা দিয়েছিলাম। যাইহোক, এত কথার মধ্যে এখন না যাই। আমি ওদেরকে মানা করে দিয়েছি।”
তিথির চোখেমুখে ১০০ ওয়াটের এর আলো জ্বলে উঠলো। কিন্তু প্রকাশ করলো না।
চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজের ঘরে লাফালাফি করে সেলিব্রেশন করলো।
.
.
.
.
আয়েশা বেগম অনেকদিন ধরেই চাচ্ছেন আয়াশের বিয়ে দিতে। ছেলেটা তার বড়ই লাফাঙ্গা স্বভাবের, একমাত্র বিয়ে দিলেই হয়তো একটু মনোযোগী হবে। কিন্তু, মন মত মেয়ে খুঁজে পাচ্ছেন না।
গ্রাম থেকে ফিরেছেন আজ দুই দিন হল। অনেকগুলো মেয়ে দেখে এসেছেন, সবাই বেশ সুন্দরী আর শিক্ষিত। আয়াশকে ছবিও দেখাতে চেয়েছেন, কিন্তু সে ফিরেও তাকায়নি।
এই নিয়ে আয়েশা বেগমের আক্ষেপের শেষ নাই। আয়াশের সাথে তিনি কথাও বলছেন না।
এই সময় আয়াশ এসে মায়ের পাশে বসলো। মায়ের হাত ধরে বলল, “মা রাগ করে থেকো না, প্লিজ!”
তিনি ঝটকা মেরে হাত সরিয়ে নিয়ে বললেন, “কথা বলিস না যেন তুই আমার সাথে!”
“বিয়ে করবো না সেটা তো আমি বলি নাই। করবো তো।”
“কবে করবি?”
তখন আকাশ হাই তুলতে তুলতে এসে বললো, “যেদিন ভাইয়ার বয়স ৫০ পেরিয়ে যাবে সেদিন বিয়ে করবে।”
আয়াশ ভাইকে ধমকে বললো, “চুপ।”
আয়াশের মা বললেন, “বল বিয়ে করবি?”
“হ্যাঁ করব তো।”
“তাহলে ছবি দেখ। কাকে পছন্দ হলো বল আমায়।”
“ওদের কাউকে না। আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি।” মুখ কাচুমাচু করে উত্তর দিল আয়াশ।
আয়েশা বেগম বিস্মিত হলেন। বললেন, “ভালবাসিস? কাকে? আমি জানিনা কেন?”
“আছে মা একজন।”
“আমি জানিনা কেন? রায়ার পর কি সত্যি তুই কাউকে ভালবাসিস?”
“রায়ার কথা ভুলে যাও না মা। ও এখন শুধুমাত্র অতীত। জীবনের অধ্যায় থেকেও অনেক আগেই মুছে গেছে।”
“বুঝেছি, সেই মেয়েটা কে যাকে তুই ভালোবাসিস?”
আয়াশ কিছুক্ষন চুপ থাকার পর আনমনে উত্তর দিল, “তিথি!”
আয়েশা বেগম যতটা না অবাক হলেন, তার চেয়ে বেশি অবাক হলো আকাশ।
লাফিয়ে উঠে বলল, “তিথি মানে, আমাদের তিথির কথা বললা?”
আয়াশ তাকালো মায়ের দিকে, তিনিও জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।
আয়াশ ছোট্ট করে উত্তর দিল, “হুমম।”
আকাশ অবাক হয়ে বলল, “সত্যিই এসব?”
“হুমম।”
“তিথি জানে এই কথা?”
আয়াশ এবার অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো আকাশের দিকে। যার অর্থ, ‘মায়ের সামনে তোকে এত কথা কে বলতে বলছে?’
আকাশ চুপ করে গেল।
আয়েশা বেগম বললেন, “কবে থেকে?”
“মাস দুয়েক আগে থেকে।”
“আগে বলিস নি কেন?”
“না মানে এমনিতেই!”
“আচ্ছা, যা এখন আমার সামনে থেকে।”
“মা, রাগ করলে?”
“না, যা তুই। আকাশের সাথে কথা আছে আমার।”
আয়াশ কিছু না বলে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। কিন্তু পুরোপুরি এলোনা। দরজার আড়ালে এসে আড়ি পেতে দাঁড়িয়ে রইল।
.
.
আয়েশা বেগম আকাশকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “দেখলি চোখের সামনে মেয়ে থাকতে আমি অন্যান্য জায়গায় মেয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি।”
“একমাত্র ভাইয়ের চোখেই পড়ছে।”
“সেটাই, এতদিনে যে আমার ছেলের মাথায় সুবুদ্ধি উদয় হয়েছে, ভাবতেই অবাক লাগে।
যাই হোক তিথিদের বাসায় যাচ্ছি আমরা কাল। ওখানে গিয়ে কথা বলবো।”
“কিন্তু মা তিথি যদি রাজি না হয়?”
“রাজি হবে না কেন?”
“ও যে এক সময় আদিত্যকে ভালোবাসতো!”
“সেটা ভালোবাসতো, এখন তো আর ভালোবাসে না। তাহলে তো আমি আর কোথাও কোনো সমস্যা দেখতে পাচ্ছি না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
.
.
আয়াশ আড়াল থেকে শুনলো সবই।
এমন সময় ভেতর থেকে আইসা বেগম চিল্লায় বললেন, “দরজার আড়ালে এরকম চোরের মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ভেতরে আয়।”
আকাশ হাসতে হাসতে তাকালো ভাইয়ের দিকে। আয়াশ থতমত খেয়ে টুকুস করে নিজের ঘরের দিকে দৌড় দিল।
বিকেলের দিকে আয়াশ তিথিকে ফোন করে দেখা করতে বললো। কিন্তু তার মায়ের সাথে বলা কোন কথাই তিথিকে বলল না।
বিকেল বেলা।
আয়াশ বাইক পার্ক করতে করতে বললো, “তিথি তুমি সামনে এগোও, আমি আসছি।”
তিথি সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো। এমন সময় তার সামনে ভূতের মতো উদয় হলো আদিত্য।
.
.
.
.
চলবে…….