আলো-আঁধার পর্ব-১৮+১৯

0
932

#আলো-আঁধার🖤
#লেখিকা: সালসাবিল সারা

১৮.
রাণীর হাত,পা বাঁধা। সাথে সে নিজেকে আবিষ্কার করলো চেয়ারে বসা অবস্থায়।রাণী তার শরীরে এক প্রকার ব্যাথা অনুভব করছে।কিন্তু, কিসের ব্যাথা; সেটা সে জানে না। তার মাথায়ও রাণী বড্ড ভার অনুভব করছে।অনেক কষ্টে রাণী তার মাথা উঠাতেই তার একটু সামনে দেখতে পেলো,তূর্যয়কেও কেউ বেঁধে রেখেছে চেয়ারের সাথে।তূর্যয়ের উদোম গায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছে রাণী।সে ভেবে পাচ্ছে না তারা দুইজন এইখানে কিভাবে এলো?যতটুক মনে আছে তার,তূর্যয় ঐ লোককে গুলি করেছিল।তাহলে তাদেরকে আটক করলো কে?রাণী কপাল বেয়ে কিঞ্চিৎ ঘাম পড়তে শুরু করলো।তূর্যয়ের হাতের দিকে তাকালে রাণী দেখতে পেলো তূর্যয়ের দুই হাতের উপরের পিঠে একদম চামড়া উঠে আছে।এই দৃশ্য দেখে রাণীর বুক কেঁপে উঠলো।রাণীর জন্যেই তো আজ তূর্যয়ের এই অবস্থা হয়েছে।না রাণী মিশনে আসতো,না তূর্যয়ের আজ এই অবস্থা হতো!রাণী কান্না করা শুরু করলো।ধীর গলায় সে তূর্যয়কে ডাকতে লাগলো,
–“তূর্যয় বস!তূর্যয়?”
তূর্যয় একটু নড়ে উঠলো।ধীরে ধীরে মাথা উচু করে তূর্যয় তাকালো।তূর্যয়ের মুখ দেখে আতকে উঠলো রাণী।তূর্যয়ের কপাল কেটে রক্ত ঝরছে।সাথে সে তূর্যয়ের নাকে,ডান পাশের গালে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছে।রাণীর কান্নার বেগ আরো বাড়তে লাগলো তূর্যয়ের এমন অবস্থা দেখে।রাণী তূর্যয়ের দিকে তাকিয়ে তাকে বললো,
–“আমরা এইখানে কিভাবে এসেছি?আর আপনার গায়ে এতো আঘাতের চিহ্ন কেনো?”
তূর্যয় কিছু বলার জন্যে তার মুখ খুলতেই তার মুখ থেকে গলগল করে রক্ত বের হতে শুরু করলো।এই দেখে রাণী জোরে চিল্লিয়ে বললো,
–“আপনার মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে, তূর্যয়।দুঃখিত আমি!আমার জন্যেই তো আপনার এই অবস্থা হয়েছে।আপনি পালিয়ে যান।আমি এখানে একাই মরবো।”
রাণীর কান্নার বেগ বাড়তে লাগলো।তূর্যয় চুপ করে রইলো।তার মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না।কিন্তু, রাণীর জোরে কান্নার শব্দে সেই বদ্ধ ঘরে কেউ প্রবেশ করলো।রাণী সেদিকে তাকাতেই দেখলো,সেই লোকটা এই ঘরে এসেছে;যে লোকটা রাণীর গলায় ছুরি ধরেছিল।
লোকটাকে দেখে রাণী বলতে লাগলো,
–“তোকে না তূর্যয় গুলি করেছিল?তাহলে তুই বেঁচে আছিস কিভাবে?”
লোকটা হা হা করে হেসে উঠলো।পুরো ঘরে লোকটার সেই হাসি প্রতিফলিত হচ্ছে।রাণীর ভয় আরো বাড়তে লাগলো।তূর্যয়ের কোনো নড়চড় নেই।রাণী ভেবে পাচ্ছে না তূর্যয় আজ এত দুর্বল কিভাবে হলো?
–“আমাকে মারবে এই তূর্যয়?তোর এই তূর্যয়কে তো মারবো এখন আমি?”
কথাটা বলেই লোকটা দ্রুত এগিয়ে আসতে লাগলো তূর্যয়ের দিকে।রাণী মাথা নাড়িয়ে “না” দেখালো লোকটিকে।কিন্তু লোকটি থেমে নেই।রাণী কান্নারত অবস্থায় লোকটিকে বলতে লাগলো,
–“তাকে মারবেন না।আমাকে মেরে ফেলুন উনার বদলে।প্লিজ!মারবেন না উনাকে।তূর্যয়?কি হয়েছে আপনার আজ?উঠুন না!”
কিন্তু বেশ দেরী হয়ে গেলো রাণীর কথাগুলো বলতে। ছুরি হাতে লোকটা, তার ছুরি চালিয়ে দিলো তূর্যয়ের গলায়। তূর্যয়ের চাপা আর্তনাদে রাণীর যেনো জগৎ ঘুরে উঠলো।সাথে সাথেই রাণী জোরে চিৎকার দিলো,
–“তূর্যয়!”

ধপ করে শোয়া থেকে উঠে বসলো রাণী।একপ্রকার কাঁপছে রাণীর সম্পূর্ণ শরীর।রাণী নিজের হাত পা ভালো করে দেখতে লাগলো।সাথে তার চোখ খুঁজছে তূর্যয়কে।রাণী আশে পাশে তাকাতেই দেখলো সে তাদের এতিম খানার রুমে আছে।রাণীর বুকটা ধুকধুক করছে। খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসলো রাণী।দুইহাতে নিজের মাথা চেপে ধরলো সে।জানালা দিয়ে আসা আলোতে সম্পূর্ণ ঘর আলোকিত হয়ে আছে।রাণী বুঝতে পারছে একটু আগে তার দেখা দৃশ্যগুলো স্বপ্ন ছিল।রাণীর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে।মাথা থেকে হাত সরিয়ে আবারও রুমের চারদিক দেখলে রাণী কাউকে দেখতে পেলো না।রুমে লাগানো ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে ঘড়িতে এখন সকাল নয়টা বাজে।এতিম খানার সবাই অনেক আগেই ঘুম থেকে উঠে যায়। যার কারণে তার বান্ধুবিরা কেউ নেই রুমে।ঘড়ির সময় দেখে রাণীর মাথায় এলো,
তূর্যয়ের ঘরে যেতে হবে তাকে।বিছানা থেকে পা নামাতেই দূর্বল অনুভব করতে লাগলো সে।বিছানার সাথে আবারও মাথা দিয়ে হেলান দিয়ে সে ভাবতে লাগলো,
–“এতো ক্লান্ত লাগছে কেনো আমার? কাল আমার সাথে কি হয়েছিল?তাছাড়া এতো খারাপ একটা স্বপ্ন দেখেছি আমি,তূর্যয়ের কিছু হলো না তো? গতকালের সেই গুলির শব্দে আমার কানে কিছু শুনতে পাচ্ছিলাম না।এরপর নিজের গায়ে তূর্যয়ের স্পর্শ পেয়েছিলাম।তাকে আঁকড়ে ধরতেই কি হলো আমার,কিছুই তো আর মনে নেই।আমাকে এইখানে কে নিয়ে এসেছিল?তাছাড়া তূর্যয় কি ঠিক আছে?আমাকে বাঁচাতে গিয়ে তূর্যয় কোনো বিপদে পড়েনি তো?”
রাণী বিছানা থেকে নেমে নিজের ব্যাগের ভেতর থেকে নিজের মোবাইল বের করলো।কিছু না ভেবেই তূর্যয়ের মোবাইলে ফোন লাগালো সে।যদিও তার ভেতর একটু অনুশোচনা বোধ হচ্ছে এইভাবে তূর্যয়কে ফোন দেওয়ার কারণে।কিন্তু,কিছুই তো করার নেই।হাজার হলেও,
রাণীর প্রাণ বাঁচিয়েছে তূর্যয়।তাছাড়া,তূর্যয়ের প্রতি এখন রাণীর চিন্তাটা; রাণীকে অন্য এক আবেগপ্রবণ অনুভূতি দিচ্ছে।তাই সবকিছু একপাশে ঠেলে রাণী ফোন লাগালো তূর্যয়কে।


বড় এক মাঠের এক পাশ ধরে জগিং করছে তূর্যয়।রাগে তার শরীর গিজগিজ করছে কাল রাতের এক ঘটনার কারণে।এর মধ্যেই মোবাইল বেজে উঠলে তূর্যয় থেমে গেলো।তার পড়নে ট্রাউজারের পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখতে পেলো আননোন নাম্বার।বিরক্তি নিয়ে তূর্যয় ফোন রিসিভ করে মোবাইল কানে লাগাতেই তার কানে ভেসে এলো একটা মেয়েলি কণ্ঠ,
–“হ্যালো তূর্যয়,আপনি ঠিক আছেন?সরি,তূর্যয় বস;
আপনি ঠিক আছেন?দুঃখিত আপনাকে আমি ফোন করেছি।”
রাণীর কণ্ঠ চিনতে পেরে তূর্যয় কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো।তূর্যয়ের বুকে চাপা কষ্ট অনুভব হচ্ছে।সে মোবাইল হাতে নিয়ে মাঠের পাশে থাকা বেঞ্চে বসে পড়লো।একহাতে কপালে চলে আসা লম্বা চুলগুলোকে ঠেলে দিয়ে মাথার উপর উঠিয়ে দিলো সে।চোখ বন্ধ করতেই তূর্যয়ের চোখে ভেসে এলো কাল রাতের মিটিং এর কিছু দৃশ্য।

রাণীকে এতিম খানায় নামিয়ে দিলে রাণীর বান্ধবীরা এসে তাকে এতিম খানার ভেতর নিয়ে যায়।হ্যারি আগেই ফোন করে সিমিকে জানিয়ে দিয়েছিল রাণীর অবস্থার কথা।এরপর তারা এতিম খানার সামনে আসতেই সিমিদের দেখতে পেয়েছিল, আর রাণীকে দিয়ে দেয় তাদের কাছে।রাণীকে নামিয়ে দিয়ে তূর্যয় আর হ্যারি চলে যায় তাদের ব্ল্যাক কোম্পানির মিটিং এ।সেখানে বিপরীত পক্ষের সাথে কথা কাটা কাটি হয়।এক পর্যায়ে লেগে যায় তুমুল মারপিট।তূর্যয় তার বুলেটের মাধ্যমে নিয়ে নিয়েছিল অনেকের প্রাণ,যেখানে ছিল আকবর হুসাইন এর ছোট ভাইও।আকবর হুসাইন আর আজমল হুসাইন অন্যতম নাম করা কালো বাজারের ব্যাবসায়ী।আজমলের গুলিবিদ্ধ লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় আকবর হুসাইন রক্তচক্ষু নিয়ে তূর্যয়কে বলেছিল,
–“পরিবার বলতে কিছু তো নেই তোমার।যাদের সাথে থাকো তারাই তো তোমার সবচেয়ে বড় শত্রু।তাই তাদের মেরেও আমি তোমার মনে কষ্ট দিতে পারবো না।কিন্তু হ্যাঁ,যদি কখনো সন্ধান পায় তোমার জীবনের কোনো গুরুত্বপূর্ণ মানুষ আছে,সেদিনই সেই মানুষটার শেষ দিন হবে।আর তুমি বুঝতে পারবে আপন মানুষ হারানোর কষ্ট কি?”

–“হাহাহা, ইঁদুরের মুখে ইঁদুরের ডায়লগ মানায় আকবর হুসাইন।সাহস থাকলে আমাকে মেরে দেখা।একটা বুলেট,একটা বুলেট আমার গায়ে লাগিয়ে দেখা তুই!”
তূর্যয় রাগী ভাব নিয়ে বলেছিল আকবরকে।তখন আকবর হেসে বলেছিল,
–“তোমাকে মারলে তুমি মরে যাবে।কষ্ট পাবে না। তোমাকে জীবিত অবস্থায় যে কষ্ট অনুভব করাতে চাই,তোমাকে একবারে মেরে ফেললে সেই কষ্ট তুমি পাবে না।কারণ,একটা কথা কি জানো?নিজের মৃত্যুর চেয়ে আপনজনের মৃত্যু দেখা বেশি কষ্টকর।দ্রুতই বুঝতে পারবে এই যন্ত্রণা।অপেক্ষায় রইলাম তোমার আপন মানুষের।এখন থেকে তোমার উপর আমার নজর থাকবে চব্বিশ ঘণ্টা।”
আকবর তূর্যয়ের আর কোনো কথা না শুনে নিজের ভাইয়ের লাশ নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

তূর্যয় অন্য সবার লাশকে ঠিকানা লাগাতে বলে নিজে তার অফিস রুমে চলে গিয়েছিল।চেয়ারে বসে নিজের মাথার চুল টানতে থাকলো সে।কাঁচের টেবিলে করে ঘুষি দিয়ে রাগী কণ্ঠে সে চিল্লিয়ে উঠেছিল,
–“কেনো কেনো?আমার সাথেই সব সময় এমন হয় কেনো?আমি কি আল্লাহ্ এর কাছে এতই অপ্রিয়?যে জিনিস আমার কাছে ভালো লাগে,যাদের আমি ভালোবাসি, তারা কেনো থাকে না আমার সাথে?যেভাবে হোক,রাণীকে আমার বাঁচাতে হবে।রাণীর প্রতি আমার এই অনুভূতি এখনই প্রকাশ করা যাবে না।আকবর যদি জেনে যায় কোনোভাবে রানীর কথা,তাহলে রাণীকে সে শেষ করে দিবে।আমার চোখের সামনে আমি এটা কখনোই হতে দিবো না।কিন্তু, আমার চোখের আড়ালে এমন হলে আমি কী করব?আমার জন্যে সেই মাসুম মেয়ের কোনো ক্ষতি আমি হতে দিবো না।আমার কাছে নিয়ে এনে তাকে রাখলে বিপদ কমবে না বরং বাড়বে। ঐ শালা আমাকে আপনজনের মৃত্যু বুঝায়?সেই ছোট কালে কষ্ট কি জিনিস আমি বুঝেছি।এখন সেই কষ্ট দ্বিতীয়বার অনুভব করার শক্তি নেই আমার।আকবর হুসাইন আমাকে কিছু করার আগে,আমাকে কষ্ট দেওয়ার আগে আমি তোকেই শেষ করে দিবো।”
তূর্যয় কথাগুলো ভেবে নিজের হাত মুঠ করে নিলো।নিজের শার্টের তিনটা বোতাম খুলে দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসেছিল সে।এরপর সে শয়তানি হাসি দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো,
–“এতো বছর পর নিজের সুখকে খুঁজে পেয়ে,আমি কখনো আমার থেকে দূরে যেতে দিবো না তাকে।আমার রোদ্র কন্যার কোনো ক্ষতি আমি হতে দিবো না।আমার মনে তার জন্যে জমানো ভালোবাসা, জমানোই থাক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।দূর থেকেই নাহয় আমি তাকে ভালোবাসবো?আমি তাশরীফ তূর্যয়,মাফিয়া লিডার।আমার জন্যে এখন পরিবার হলেই বড় সমস্যা দেখা দিবে।তাই, নিজের যতো ক্লোজ শত্রু আছে,আগে তাদের ধুলোয় মেশাতে হবে।হ্যাঁ তূর্যয়,তোকে তোর রোদ্র কন্যার থেকে দূরে থাকতে হবে; যতক্ষণ পর্যন্ত না এই আকবর হুসাইন আর বাকি শত্রুর কাহিনী শেষ না হয়।কিন্তু, এরপর কি হবে?কালকে তো সে অজ্ঞান থাকায় মুখে ভুলভাল যা এসেছে তাই বলেছি।আদৌ আমি কি এই হিংস্র রূপ থেকে বের হয়ে রাণীর সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ভালোবাসার কথা বলতে পারবো?তার মতে,আমি দানব,আমি পাথর।তাকে নাহয় আমি আমার দানবীয় কায়দায় ভালোবাসবো!এর আগে আমার সব শত্রুকে এই দুনিয়া থেকে বিদায় করতে হবে।দ্বিতীয়বার কোনো আপন মানুষকে আমি হারাতে পারবো না।”
এটাই ছিল তূর্যয়ের শেষ প্রতিশ্রুতি নিজের প্রতি।এই প্রতিশ্রুতি করার সময় তূর্যয়ের চোখজোড়া ছিল লাল,চোখের কোণায় জমেছিল নিজের ভালোবাসা কাছে থেকেও নিজের করে নিতে না পারার কষ্ট।কারণ,
তূর্যয়ের জীবনে ভালোবাসার,যত্ন নেওয়ার মানুষের খুব অভাব। সে হিংস্র হলেও, তারও তো একটা ছোট্ট হৃদয় আছে!যে হৃদয়ের কথা হার মানায় সকল হিংস্রতাকে।

আবারো মোবাইল বেজে উঠলে তূর্যয় নিজের হুঁশে ফিরে এলো।মোবাইলের দিকে তাকালে আবারও সেই নাম্বার অর্থাৎ রাণীর নাম্বার দেখতে পেলো সে। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে তূর্যয় সেই নাম্বারের দিকে তাকিয়ে রইলো।আরো কিছুক্ষণ মাঠে জগিং করে তূর্যয় নিজের “ডার্ক হাউজে” চলে এলো।বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই সে রাণীকে দেখলো টেবিলে কিছু রাখছে।রাণীকে বড্ড ক্লান্ত মনে হচ্ছে তার।টেবিলে কিছু রাখার পাশাপাশি রাণী বকবক করছে নিজে নিজে।এইসব দেখে তূর্যয় অস্ফুট কন্ঠে বলে উঠলো,
–“পাগলী একটা।”
তূর্যয় সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো তৈরি হতে।

একটু পরে হ্যারি এসে পৌঁছালো।রাণীকে একা বিড়বিড় করতে দেখে হ্যারি তাকে প্রশ্ন করলো,
–“সিস,একা একা কি বলা হচ্ছে?”

রাণী নিজের কোমরে হাত রেখে বলতে লাগলো,
–“দুইবার ফোন দিয়েছি আপনার ব্রোকে আমি।প্রথমে এতিম খানায় থাকা অবস্থায় আর দ্বিতীয় বার এইখানে এসে।প্রথমে ফোন ধরেছিল কিন্তু কোনো কথা বলেননি উনি।আমিও আর ফোন না দিয়ে দ্রুত তৈরি হয়ে এইখানে চলে এসেছি।এখানে এসে দেখি উনি তখনও এই বাসায় ছিলেন না।আজ আমার অনেক দেরী হয়েছে এই বাসায় আসতে।তাই উনি কি নাস্তা করবেন নাকি করবেন না, এটা জানার জন্যে উনাকে ফোন দিলে ফোন তুলেননি উনি। পরে ওয়াচম্যান কাকা থেকে জানতে পারলাম উনি এখনো বাসায় আসেননি।আপনাকেও তো ফোন করেছি।আপনি নিজেই কোথায় হাওয়া হয়ে গিয়েছিলেন।”

–“আচ্ছা ,আচ্ছা রিল্যাক্স।আমি বাইকে ছিলাম।তাই হয়তো খেয়াল করিনি তোমার কল,সিস।আর আজকে হঠাৎ আমার ব্রো এর জন্যে এতো চিন্তা?”
হ্যারি হেসে বললো।
–“এই রাণী তো সবার চিন্তা করে।কিন্তু রাণীর চিন্তা করার জন্যে কেউ নেই।থাকবে কিভাবে?এতিম মানুষদের জন্যে কি চিন্তা করার কেউ থাকে?থাকে না।যাক এই নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই আমার।যদিও ভেবেছিলাম আপনার ব্রো আর আপনি একটু আধটু আমার জন্যে চিন্তা করেন,কিন্তু এটা আমার ভুল ধারণা ছিল।”
কথাগুলো বলতে বলতে রাণীর কণ্ঠস্বর ভার হয়ে গেলো।
তূর্যয় রাণীর পিছনেই দাঁড়িয়ে তার কথাগুলো শুনছিল।তাই তো হ্যারি সুযোগ বুঝে তূর্যয়ের টপিক তুলেছিল রাণীর কাছে।কিন্তু এখন রাণীর কথা শুনে হ্যারি আর তূর্যয় দুইজনের মনেই কষ্ট হানা দিলো।
হ্যারি চেয়ার থেকে উঠে রাণীর কাঁধে হাত রেখে বললো,
–“আমি আর ব্রো অনেক কেয়ার করি তোমার।আমার কেয়ার তো আমি উপরেই করি।কিন্তু, আমার পাথর ব্রো এর কেয়ার একদিন ঠিক বুঝতে পারবে তুমি।”

তূর্যয়কে চেয়ারে বসতে দেখে রাণী তূর্যয়ের দিকে তাকিয়ে হ্যারিকে বলতে লাগলো,
–“দরকার নেই আমার আপনার ব্রো এর কেয়ার।সামান্য একটা ফোন তুলতেই উনার যতো অহংকার।আমার মতো এতিমের ফোন ধরলে উনার তো কান খসে পড়ে যেতো। খুব বড় লোক আপনার ব্রো।”
রাণীর কথায় তূর্যয় রাগী কণ্ঠে বলে উঠলো,
–“চুপ!এইখানে কি শুধু তুই একা এতিম?নিজেকে এতিম এতিম বলা বন্ধ কর।”
–“হ্যাঁ।শুধু আমি একাই এইখানে এতিম।আপনি তো অনেক বড় বংশের ছেলে।আর আমার ভিনদেশী ভাই তো অনেক ভালো পরিবারের ছেলে।তো,এইখানে এতিম আমিই আছি।এখন চুপচাপ নাস্তা করে নিন,দানব একটা।ফোন পর্যন্ত ধরতে পারে না।স্বাভাবিক মানুষের চিন্তা আপনি কিছু বুঝেন?জানেন, আপনার জন্যে কতটা দুশ্চিন্তা হচ্ছিলো আমার?জানবেন কিভাবে আপনার কি মন আছে?আমাকে আর না বকে নিজের নাস্তা করুন।আল্লাহ্ জানেন রাতে কিছু খেয়েছেন, নাকি শুধু মদ গিলেছেন?”
রাণী এক দমে কথাগুলো বলে রান্না ঘরে চলে গেলো।এরপর সে কানে আঙ্গুল দিয়ে দিলো।কারণ সে জানে এখন তূর্যয় বোম্ব ফাটাবে।ঠিকই হলো তাই,তূর্যয় চিল্লিয়ে বলতে লাগলো,
–“এই চঞ্চল মেয়েটার মুখটা এতো চলে কিভাবে?অন্যকে দানব ডেকে,উল্টো পাল্টা কথা বলে একটা ফোন দিলেই কি কেয়ার করা হয়ে যায়?তূর্যয়ের কারো কেয়ারের দরকার নেই।শুনেছে কি মেয়েটা?”

রাণী তার বন্ধ করা কানেও তূর্যয়ের এইসব কথা শুনে ফেললো।রাণীর মুখে হাসি ঝুলে আছে।কেনো যেনো তূর্যয়কে জ্বালাতে রাণীর অনেক ভালো লাগে।আর তূর্যয়ের প্রতি রাণীর মায়াকে রাণী এখন একদমই অস্বীকার করছে না।রাণী রান্নাঘর থেকে উঁকি দিলো তূর্যয় নাস্তা করছে কিনা দেখতে।তূর্যয়ের চেহারায় গভীর দৃষ্টি দিতেই রাণী যেনো তূর্যয়ের মধ্যে ডুবে গেলো।মাথায় তালুর উপর এক ঝাঁক চুল,আবার মাথার দুইপাশে সেখানে একেবারে ছোট চুল আছে তূর্যয়ের।মাঝে মাঝে বেশি নড়াচড়া করলে সেই মাথার তালুর উপরের কিছু ছিল তূর্যয়ের কপালের সামনে নাক পর্যন্ত চলে আসে।এইযে এখনো,গতকাল মারপিটে তূর্যয় হাতে ব্যাথা পেলে সেখানে ব্যান্ডেজ করেছিল।হ্যারি এখন তূর্যয়ের হাতের ব্যান্ডেজ খোলার সময় তূর্যয় হাত ঝাড়া দিতেই তূর্যয়ের নাক বরাবর চলে এলো কিছু চুল।অন্য হাতে তূর্যয় সেই চুলগুলো উঠিয়ে নিল মাথার উপর।রাণী অবশ্য জানেনা তূর্যয়ের হাতে কিসের ব্যান্ডেজ। তবে,এই দৃশ্য দেখে রাণী আপন মনে বলে উঠলো,
–“উফফ!”
এরপর সে আরো ভালো করে তূর্যয়কে দেখতে লাগলো।কালো রঙের শার্টটা তূর্যয়ের হাতের দিকে একদম টাইট হয়ে আছে তার হাতের খন্ড মাংসের জন্যে।তূর্যয়ের গালের খোঁচা খোঁচা দাড়ি তূর্যয়ের চেহারার মায়া যেনো আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।রাণীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তূর্যয়ের চোখ বরাবর দিতেই রাণীর মনটা মায়ায় ভরে গেলো।তূর্যয়ের চোখজোড়া বড্ড নিষ্পাপ লাগে রাণীর কাছে।সেই চোখের দিকে তাকালেই তার বুকের স্পন্দন বাড়তেই থাকে।তূর্যয়ের চোখে রাণী অনেক কষ্ট আর অসহায়ত্ব দেখতে পায়।রাণী নিজে রান্নাঘরের মধ্যখানে চলে এলো।ধুকধুক করা বুকে হাত রেখে রাণী ভাবতে লাগলো,
–“তূর্যয়ের চোখজোড়া বলে দেয় উনার জীবনের শত কষ্টের কথা।এখন শুধু সুযোগ বুঝে উনাকে এই কষ্ট থেকে মুক্ত করতে হবে আমার।আমি বেশ ভালো জানি তূর্যয়ের এমন হিংস্র হওয়ার পেছনে এক বড় রহস্য রয়েছে।আর তূর্যয়কে সেইসব কষ্ট থেকে উদ্ধার করতে আমার যা করার দরকার হয় আমি তাই করবো।দরকার হলে নিজের মায়ায় জড়িয়ে নিবো আমি তূর্যয়কে।এই হিংস্র দানবের সকল কষ্ট দূর করতে যদি আমাকে উনার কাছাকাছি যেতে হয় তাহলে আমি তাও যাবো।এমনিও আমার উনার জন্যে বড্ড মায়া লাগে।শুনেছি এই মায়া থেকেই জীবনের সবচেয়ে গভীরতম অনুভূতির সৃষ্টি হয়?”
রাণী নিজের মনটা শান্ত করার চেষ্টায় আছে।রাণীর মনে হচ্ছে সে একটা প্রশ্নের সাগরে ডুব দিয়েছে।তার বুকে তূর্যয়কে ঘিরে এমন একটা জায়গা তৈরি হয়েছে,যেটা আর কারো জন্যেই কখনো তৈরি হয়নি।
;
রাত দশটা।রাহেলাকে ফোন করেছে মমতা এতিম খানার একজন। সে ফোন দিয়ে রাহেলাকে বললো,
–“কবে আসবেন?আমাদের শিকার এখনো প্রমাণ জোগাড় করতে পারেনি।তাকে অসম্মান করার এই সুযোগ বারবার আসবে না কিন্তু।রাণী খুব খাটছে এখন,টাকার জন্যে।দিনে অফিসের কাজ করে আর রাতে এসে মাটির জিনিস বানায়।অনেক আয় হচ্ছে তার।তার এইসব কিছু বন্ধ করতে হবে।”

রাহেলা বিশ্রী হাসি দিয়ে বলে উঠলো,
–“কাল রাতে আইতেছি আমি ঐখানে।সাবিনা মালকিনের লগেও কথা হইসে আমার।রাণী এতদিন প্রমাণ জোগাড় করে নাই কাইলো পারবো না জোগাড় করতে প্রমাণ।তূর্যয়রে আমি ভালা চিনি।হেই এইসবে পড়বো না কখনো।ছোট সাহেব মানে আহমেদ সাহেবের খাওন হইবো কাল এই রাণী।হাহাহা।”
রাহেলার কথায় অপর পাশের মানুষটি ফোন কেটে দিলো।আর দাতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো,
–“মান সম্মান একবার হারালে কখনোই উঠে দাঁড়াতে পারবি না তুই, এটা আমি বেশ জানি।কালকে তোর জন্যে মরণ আছে রাণী।”

মাটির কাজ শেষ করে রাণী গোসল সেরে চুল মুছতে লাগলো।হঠাৎই রাণীর চোখে ভেসে এলো আজ তূর্যয়ের একটা হাসিমাখা চেহারা।অফিসের সুইপার একজন মহিলা।উনার বাচ্চাটা ছোট হওয়ায় উনি বাচ্চাটাকে নিয়ে এসেছিলেন অফিসে।বাচ্চাটা আদৌ আদৌ হাঁটে।রাণী,হ্যারি আর তূর্যয় অফিসে ঢুকতেই সেই বাচ্চাটা দৌড়ে এসে তূর্যয়ের পা জড়িয়ে ধরেছিল।সুইপার মহিলাটি দৌড় দিয়ে আসতে আসতেই তূর্যয় বাচ্চাটাকে কোলে নিয়েছিল।যদিও রাণী জানতো তূর্যয় বাচ্চাটিকে কিছু করবে না। তাও তূর্যয়কে বিরক্ত করার জন্যে রাণী তূর্যয়কে চিল্লিয়ে বলেছিল,
–“ফেলবেন না বাচ্চাটাকে।আমাকে দিন তাকে।”
তূর্যয় ভ্রু কুঁচকে এক নজর রাণীর দিকে তাকিয়ে বাচ্চাটাকে তার মাকে দিয়ে দিলো।সাথে বাচ্চাটার হাতে গুঁজে দিলো এক হাজার টাকার একটি নোট।বাচ্চাটা তূর্যয়ের দিকে তাকিয়ে হাসতেই তূর্যয় বাচ্চাটার গাল ধরে নিজের ঠোঁট বাঁকা করলো।আর এই হাসি দেখেই রাণীর ছোট খাটো একটা হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল।তূর্যয়কে হাসতে দেখে রাণী যেনো মুহূর্তেই তূর্যয়ের সেই মুচকি হাসির প্রেমে পড়ে গেলো।পরক্ষণে তূর্যয় তাকে কড়া ভাষায় বলেছিল,
–“আমি যতো হিংস্র হই না কেনো,অকারণে কাউকে খুন করিনা।মাথা নষ্ট মেয়ে একটা!”
রাণীর মন তখন তূর্যয়ের হাসির পেছনে ছুটলেও এখন রাণী রেগে বললো,
–“আমার না আপনার মাথা নষ্ট।দানব সন্ত্রাসী একটা।হাসতেও পারেন উনি!হিংস্র মানুষের ঠোঁট বাঁকানো হাসি কি সত্যি এতো মনোরম হয়?নাকি শুধু তূর্যয়ের হাসিটাই এমন,এতো মনোরম ছিল?কি সুন্দর ছিল সেই হাসি!!ইসস,সুন্দর হিংস্র সন্ত্রাসী একটা!”
রাণী কথাগুলো বলে নিজের আনমনে হাসতে লাগলো।

রাণীকে খুশি হতে দেখে দরজার আড়াল থেকে কেউ মনে মনে বলতে লাগলো,
–“কাল তোর এই হাসি একেবারেই বিলীন হয়ে যাবে।আহারে বেচারা রাণী।”

চলবে….

#আলো-আঁধার🖤
#লেখিকা: সালসাবিল সারা

১৯.
দুইদিন ধরে রাণী চেষ্টা করছে তূর্যয়ের সাথে কথা বলার জন্যে।কিন্তু,তূর্যয়ের ব্যস্ততার কারণে কোনো ভাবেই রাণী তূর্যয়ের সাথে কথা বলতে পারেনি।তাছাড়া তূর্যয় আগে থেকে আরো বেশি রাণীর সাথে খারাপ ব্যবহার করতে লাগলো।সাথে রাণীর কোনো কথায় শুনতে নারাজ তূর্যয়।রাণী ভেবে পাচ্ছে না তূর্যয় হঠাৎ তাকে এমন করছে কেনো?রাণীর মনে তূর্যয়ের জন্যে একটা ভালো জায়গা তৈরি হয়েছে।আর এখনই তূর্যয় রাণীর সাথে এমন এমন ব্যবহার করছে,যার কারণে রাণীর মন একেবারে খারাপ থাকে। তাছাড়া রাহেলার ব্যাপারটা নিয়েও রাণী চিন্তিত অনেক।রাণী বেশ বুঝতে পারছে,
তূর্যয়ের এমন কিছু হয়েছে যার কারণে তূর্যয়ের মেজাজ খারাপ থাকে।তূর্যয় স্বাভাবিক থাকলেও সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। আর এখন যেহুতু তূর্যয়ের মেজাজ খারাপ, তাই রাণী কোনো কালেই এখন তূর্যয়ের পক্ষ থেকে ভালো ব্যবহার আশা করছে না।কিন্তু,রাণীর মাথা থেকে রাহেলার কথাটা যাচ্ছেই না।গত দুইদিন ধরে রাণী নিজের মাথার মধ্যে রাহেলার চিন্তা নিয়ে ঘুরছে।রাণীর মনে ভয় হচ্ছে,সামনে তার সাথে নিশ্চয় খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে।তবে রাণীর এখন কিই বা করার আছে?তূর্যয় কিছুতেই রাণীর সাথে কথা বলছে না।একদিকে তূর্যয়কে দেখলে রাণীর বুকের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। আর অন্যদিকে রাণীর মনটা আকুপাকু করছে রাহেলার ব্যাপারে। মোট কথা,রাণীর এখন নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে।তূর্যয়কে দেখলে তার মনের যে অনুভূতি হয়,এটা রাণী একদমই সামলাতে পারছে না।তূর্যয়কে দেখলেই কেমন যেনো হাঁ করে তাকিয়ে থাকে রাণী।যে দানব সন্ত্রাসীকে রাণী এতো ঘৃণা করতো, সেই দানব সন্ত্রাসী তথা তূর্যয়কে দেখলে রাণীর এখন শুধু বুকে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

তূর্যয়ের বাড়িতে এসে রাণী সকালের নাস্তা বানিয়ে নিলো।চেয়ারে বসে সে তূর্যয় এবং হ্যারির অপেক্ষা করছে।কিছুক্ষণ পরে হ্যারি আর তূর্যয় এলে রাণী তাদের নাস্তা এগিয়ে দিলো।রাণীর নজর তূর্যয়ের দিকে।তূর্যয় এক হাতে পরোটা দিয়ে ডিমভাজি খাচ্ছে আর অন্য হাতে মোবাইলে কিছু করছে।মোবাইলের দিকে তাকিয়ে তূর্যয়ের বিভিন্ন রকম মুখভঙ্গি রাণীকে আরো বেশি তূর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।রাণী বুঝতে পারে না,তূর্যয় হঠাৎ রাণীকে কি এমন করলো যার কারণে রাণী চেয়েও তূর্যয়কে আর ঘৃণা করতে পারছে না! রাণীকে বারবার সবকিছু থেকে বাঁচানো,রাণীর প্রতি তূর্যয়ের রাগ মাখা চিন্তা সবটা যেনো রাণীকে তূর্যয়ের প্রতি বেশ দূর্বল করে দিয়েছে।রাণীকে তূর্যয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে হ্যারি রাণীকে বলে উঠলো,
–“শুধু ব্রোকে দেখলে হবে? ব্রেকফাস্টও তো করা লাগবে। তাই না,সিস?”
হ্যারির কথায় রাণীর হুঁশ ফিরে এলো।রাণী নিজের দৃষ্টি নিচে নামিয়ে নিলো।সে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে হ্যারিকে জবাব দিলো,
–“আমার ক্ষিদে নেই,ভিনদেশী ভাই।আপনারা করুন নাস্তা।”

রাণীর কথায় তূর্যয়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো।রাণীর কণ্ঠ শুনে তূর্যয়ের মনে হচ্ছে,রাণী কিছু একটা নিয়ে চিন্তা করছে।রাণীর জবাবে তূর্যয় রাণীকে রাগী কণ্ঠে বললো,
–“কেনো নেই ক্ষুদা?এতিম খানার বাতাসে কি নাস্তার মতো পেট ভরে?”

–“আপনাকে এতো দরদ দেখাতে হবে না।নিজের খাওয়ার নিজে খান আপনি।দুইদিন ধরে তো আমার সাথে কথা বলারই ফুরসৎ নেই আপনার।আর এখন এসেছেন ঢং করতে?”
রাণীর উল্টো জবাব শুনে তূর্যয়ের মেজাজ ভীষণ চটে গেলো।তূর্যয় জোরে একটা থাপ্পর দিলো টেবিলে আর বেশ কর্কশ স্বরে রাণীকে বলে উঠলো,
–“এই মেয়েটার সাহস দেখে অবাক হই আমি। যেখানে বড় বড় দলের মানুষ আমার দিকে চোখ তুলে তাকায় না,সেখানে এই ছোট্ট -কোন দেশের রাণী এসেছে আমার সাথে তর্ক করতে?হ্যারি,এই মেয়ের এতো সাহস কিভাবে হয়?”
তূর্যয়ের ধমকে রাণীর অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো।রাণীর মনে তূর্যয়ের জন্যে ভালোলাগার অনুভূতি থাকলেও,
অন্য সবার মতো তূর্যয়কে প্রচন্ড ভয় পায় সে।শুধু বাহিরে সেই ভয় প্রকাশ করে না রাণী।রাণীর চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে।রাণী ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে তূর্যয়কে বলল,
–“আমি নাস্তা করবো না।আমি কিছু বলতে চাই আপনাকে।আপনার সা…”
রাণীর সম্পূর্ণ কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই তূর্যয়ের ফোন বেজে উঠলো।ফোনের নাম্বারটি দেখে তূর্যয়ের মাথায় নানান কথা ভর করলো।কারণ, তূর্যয়কে ফোন করেছে তার আন্ডারে কাজ করা গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান। যাকে তূর্যয় কাজে লাগিয়েছিল আকবর হুসাইন আর তার অন্য সব শত্রুপক্ষের খোঁজে।তূর্যয় সাউন্ড বাটন টিপে তার মোবাইলের রিং বন্ধ করে দিলো কিন্তু কল কাটলো না।মোবাইল হাতে দাঁড়িয়ে পড়লো তূর্যয়।এরপর রাণীর দিকে তাকিয়ে তূর্যয় রাণীকে বলে উঠলো,
–“নাস্তা করা ছাড়া এইখান থেকে উঠতে পারবি না।আর তোর অহেতুক ক্যাঁচ ক্যাঁচ শোনার সময় নেই আমার।”
কথাটা বলে তূর্যয় কল রিসিভ করে অন্য দিকে চলে গেলো।

রাণী তূর্যয়কে বকে যাচ্ছে তার কথা শুনে।এই দেখে হ্যারি রাণীকে বললো,
–“কি হয়েছে তোমার,সিস?”
–“যেই কারণে আমি আপনাদের অফিসে এসেছিলাম,
সেই কারণটা আমি জানাতে চাই আপনার ব্রোকে।অর্থাৎ,আমার সাহায্য লাগবে তূর্যয়ের।নাহলে,নাজানি কি হয় আমার সাথে! আপনার ব্রো আমার কোনো কথা শুনতেই রাজি না।এইভাবে চললে আমাকে কোনো এক খারাপ জায়গায় বিক্রি করে দিবে রাহেলা, সুষ্টু প্রমাণ দিতে না পারলে।আপনি কি আমার হয়ে আপনার ব্রোকে কথাগুলো বলবেন?”
হ্যারি রাণীর কথা শুনে ভাবতে লাগলো,
–“ইয়াহ, ইটস এ গ্রেট অপরচুনিটি ফর মাই ব্রো অ্যান্ড সিস।এই সাবজেক্টে কথা বললে,তারা দুইজন একসাথে এই প্রব্লেম সলভ করবে। এতে দুইজনের মধ্যে ক্লোজনেস বাড়বে।”

হ্যারি কেঁশে উঠলো হালকা।এরপর রাণীকে সে বললো,
–“তুমি বলো, সিস। ব্রোকে আমি বললে ব্যাপারটা ভালো দেখাবে না।যেহুতু,ব্রো তোমাকে বাঁচিয়েছিল ঐ রাস্কালের হাত থেকে; তাই তুমি বলো তাকে তোমার হেল্প দরকার।ব্রো অবশ্যই তোমাকে হেল্প করবে।”
রাণীর মাথায় তীরের মতো প্রবেশ করলো হ্যারির কথা।সে আপনমনে ভাবছে,
–“ঠিক বলেছে, ভিনদেশী ভাই।আমার সমস্যার কথা,
সাহায্যর কথা, আমাকেই বলতে হবে উনাকে।এই দানবের মেজাজ ঠিক হোক প্রথমে।”
–“আচ্ছা, আমিই বলবো উনাকে।”
রাণী হ্যারিকে বললো।

অন্যদিকে গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের সাথে সব কথা শেষ করার পূর্বে তূর্যয় তাকে নির্দেশ দিলো,
–“যতো ফোর্স কাজে লাগাতে হয় লাগাও।তবে আকবরকে যেনো খুঁজে পায় দ্রুত।আর আমার যেসব শত্রুর খোঁজ পেয়েছো তাদের তালিকা আমার ইমেইলে পাঠিয়ে দাও।যে যেখানে লুকিয়ে থাকুক না কেনো,
সবাইকে যেনো জীবিত পায় আমার সামনে।”
–“ঠিক আছে,বস।কাজ হয়ে যাবে।”
অপর পাশ থেকে লোকটি বললো।

ফোন কেটে দিয়ে তূর্যয় আবারও খাবারের টেবিলে চলে আসলো।এসে দেখে,তূর্যয়ের খাবার ছাড়া আর বাকি সব কিছু গোছানো হয়ে গেলো টেবিল থেকে।রাণী,হ্যারি কাউকে দেখতে পাচ্ছে না সে।নিজের নাস্তা শেষ করে তূর্যয় ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।বাড়ির সামনে তূর্যয়ের গাড়ি রেডি করা আছে।সে দেখতে পেলো,রাণী আর হ্যারি সেই গাড়িতে না উঠে; রাণী এবং হ্যারি বসে রয়েছে
হ্যারির মোটর সাইকেলে। যা দেখে মেজাজ প্রচুর খারাপ হলো তূর্যয়ের।নিজের চোখ থেকে খয়েরী রঙের চশমা খুলে সেটি শক্ত হাতে ধরে হ্যারির উদ্দেশ্যে সে বললো,
–“বাইক সবসময় আমার এইখানে পার্ক করা থাকে।তাহলে আজ বাইকে উঠেছো কেনো তুমি?সাথে এই মেয়েকেও নিয়েছো!এই মেয়ে জীবনে এইসবে উঠেছে কখনো?পড়ে রাস্তায় চ্যাপ্টা হলে,দুইজনের মনে বেশ আনন্দ লাগবে তাই না?”
তূর্যয়ের কথায় হ্যারি বলে উঠলো,
–“ইয়াহ ব্রো।আজকে আমার সিস বায়না করেছে সে আমার বাইকে করে যাবে।সো,আমরা আজ এটা করেই মিশনে যাবো। লেটস গো,এমনিও লেইট হয়ে যাচ্ছে আজ মিশনের জন্যে।প্রত্যেকদিন রাতে এইখানে এসে আমি বাইক পিক করি।টুডে নাহয় বাইক নিয়ে একেবারে মিশনে যায়?”
হ্যারির কথা মোটেও পছন্দ হলো না তূর্যয়ের।তার ধারণা মোটর সাইকেলে রাণী একেবারে ঠিক ভাবে বসতে পারবে না।তাছাড়া রাণীকে হ্যারি যতোই নিজের বোন বলে মনে করুক না কেনো,তূর্যয় চায় না মোটর সাইলেকে বসে রাণী হ্যারির কাছাকাছি যাক।কারণ,
তূর্যয় ভালো জানে,মেয়েরা মোটর সাইকেলে ঠিকভাবে বসতে হলে সামনের জনকে আকড়ে ধরতে হয় শক্ত ভাবে,যেটা রাণীর ব্যাপারে তূর্যয় কিছুতেই সহ্য করে নিবে না।তূর্যয়ের পুরো শরীর রাগে গিজগিজ করছে।সে দেরী না করে এগিয়ে গেলো তাদের দিকে।রাণীর হাত ধরে নামিয়ে নিলো মোটর সাইকেল থেকে।রাণী তূর্যয়ের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু রাণী ব্যর্থ হয়ে তূর্যয়কে বললো,
–“হাত ছাড়ুন!আমি আমার ভাইয়ের সাথে যাবো।”
তূর্যয় রাণীর হাত ধরে তাকে নিজের দিকে টেনে নিলো।রাণীর হাত পেছনে মুচড়ে ধরে তূর্যয় রাণীকে জবাব দিলো,
–“তূর্যয় যা বলে তাই করে।তুই,তোর ভাই দুইজনই আমার সাথে যাবি।আমার গাড়ি করে।”
তূর্যয়ের কথায় হ্যারি সুরসুর করে বাইক থেকে নেমে গেলো।আর আগে ভাগে উঠে পড়লো তূর্যয়ের গাড়িতে।তূর্যয় রাণীর হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে গাড়ির দিকে।রাণী তূর্যয়ের হাতে কিল দিয়ে যাচ্ছে সাথে রাণী চেঁচিয়ে যাচ্ছে তূর্যয়কে,
–“সন্ত্রাসী একটা,ছাড়ুন আমার হাত।দরকার হলে আমি হেঁটে হেঁটে যাবো।তাও আমি আপনার সাথে যাবো না।”
–“তূর্যয় আজ পর্যন্ত কারো কথা শোনেনি। সেখানে তোর কথা শুনবে, তূর্যয়?”
তূর্যয়ের রাগী জবাব।
–“হ্যাঁ,তূর্যয় তো জলহস্তী। তাই,অন্য মানুষের কথা শোনার সময় নেই তার কাছে।”
রাণী মুখ ভেংচিয়ে বললো।

তূর্যয় রাণীর হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।এরপর নিজেই রাণীর পাশে চেপে বসলো।হ্যারি মুখ চেপে হাসছে তূর্যয়ের কান্ড দেখে।তূর্যয়কে নিজের পাশে চেপে বসতে দেখে রাণীর শরীর কাঁপছে। আড় চোখে তাকাতেই রাণী দেখলো তূর্যয় নিজের পিস্তল ঠিক করে নিচ্ছে।তূর্যয়ের বাহুর সাথে নিজের হাত লাগতেই রাণী নিজের জামা খামচে ধরলো।রাণীর এমন অবস্থা দেখে তূর্যয় আনমনে হাসলো।
রাণী তার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে থাকার কারণে খুব সহজেই সে তূর্যয়ের হাসি দেখতে পেলো।এই নিয়ে সে দুইবার তূর্যয়কে হাসতে দেখেছে।তূর্যয়ের হাসি দেখে রাণীর সম্পূর্ণ শরীর যেনো প্রশান্তিতে ভরে গেলো।রাণী জানালার দিকে ফিরে মুখে হাত দিয়ে মনে মনে ভাবছে,
–“এই সন্ত্রাসী মানুষটা আমাকে তার হাসি দিয়েই মারবে।আমার কথা শোনার সময় নেই তার,আবার আমাকে তার পাশেই বসিয়েছে।জলহস্তী একটা!”

তূর্যয় ইচ্ছা করেই রাণীর সাথে আরো চেপে বসছে।রাণীর হাতের সাথে তার বাহু লাগতেই তূর্যয়ের বেশ সুখ অনুভব হচ্ছে। সে আপনমনে চিন্তা করছে,
–“হ্যারিকে বারবার ধন্যবাদ জানাতে ইচ্ছে করে আমার।যাক,আমার রোদ্র কন্যাকে আমার পাশে বসিয়ে বেশ আরাম পাচ্ছি।এই শত্রু পক্ষের কারণে আমার রোদ্র কন্যাকে আমি নিজের মনের কথা বলতে পারছি না। কবে আমি আমার জীবনে সুখ খুঁজে পাবো?”
কথাগুলো ভাবতে তূর্যয়ের মনে আবারও আঁধার ছেয়ে গেলো।

মিশন স্পটে পৌঁছে হ্যারি রাণীকে বলে উঠলো,
–“সিস,তুমি গাড়িতে বসে অপেক্ষা করো।আমরা আসছি।গুড বাই।”
হ্যারি চলে যেতে নিলে তূর্যয় হ্যারির মাথা ধরে তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
–“কাজে রেখেছো তাকে গাড়িতে বসিয়ে রাখার জন্যে?মিশনে যাবে রাণী আমাদের সাথে।”
হ্যারি মাথা চুলকালো তূর্যয়ের কথায়।আর রাণী গাড়িতে বসে আছে, কি সিদ্ধান্ত নিবে সেই দুইজন তার আশায়।হ্যারি মাথা চুলকিয়ে তূর্যয়কে বললো,
–“বাট ব্রো!সেদিন দেখলে না আমার সিস সেন্সলেস হয়েছিল?তাহলে?”
–” বেশি কথা বলতে আমি পছন্দ করি না, হ্যারি। এটা কি তোমার অজানা?”
কথাগুলো বলে তূর্যয় উল্টো দিকে ফিরে দাঁড়ালো।তূর্যয় ভেবে চলছে,
–“রাণীকে একা রাখা একদম রিস্কের ব্যাপার।আকবর কই,কিভাবে আমার উপর হামলা করবে কিছুই বুঝতে পারছি না।গোয়েন্দা এখনো তাকে খুঁজছে।তাই,গাড়িতে বোম্ব লাগালে বা গাড়িতে হামলা করলে রাণীর ক্ষতি হতে পারে।তাছাড়া রাণীকে সুরক্ষিত জায়গায় দেখে,শত্রু পক্ষ ঠিকই বুঝে যাবে রাণী আমার আপন কেউ;নাহলে আমি রাণীকে কখনোই গাড়িতে সুরক্ষিত অবস্থায় রাখতাম না।গুড জব,তূর্যয়।তাছাড়া এতিম খানার বাইরে যতক্ষণ রাণী বাহিরে থাকবে ততক্ষণ আমি তার সাথে থাকবো।”

তূর্যয়কে উল্টো দিকে দাড়াতে দেখে রাণী হাতে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে বেরিয়ে এলো গাড়ি থেকে।রাণীর মনে সেদিনের ভয়ংকর দিনের ভয়টা এখনো নাড়িয়ে তুলছে।রাণী হ্যারির উদ্দেশ্যে বললো,
–“ভিনদেশী ভাই,আমি কিন্তু আপনার সাথে থাকবো।”
হ্যারি রাণীর হাত ধরে তাকে আশ্বাস দিলো,
–“অবশ্যই।”

সবাই মিলে হেঁটে যাচ্ছে সামনে একটা গোডাউনের দিকে।তূর্যয় সামনে যেতে যেতে নিজের কোমরের পিছে থেকে পিস্তল বের করে নিলো।সামনে এগিয়ে গিয়ে তূর্যয় রাণীকে ইশারা দিলো তার অন্য গার্ডের সাথে দাঁড়াতে।
কিন্তু, একটু পরে রাণী সেই গোডাউনে ঢুকলো অন্য গার্ডদের সাথে একটু দেরি করে।ভেতরে ঢুকতেই রাণীর বুক ধক করে উঠলো।অনেক লোকের লাশ নিচে পড়ে আছে।কিছু লোককে তূর্যয় বেঁধে রেখেছে নিজের সামনে।লোকগুলোর মুখ,কপাল বেয়ে রক্ত পড়ছে।চেয়ারের উপর বসে পায়ের উপর পা তুলে তূর্যয় বেশ রিল্যাক্স হয়ে সামনে থাকা লোকদের বলে উঠলো,
–“অস্ত্র পাচার করার সময়,তার সাথে ড্রাগস সাপ্লাই দিতে বলেছিল কে তোদের?”
লোকগুলো চুপ করে রইলো।হ্যারি একজন লোকের চুল টেনে ধরে তাকে বললো,
–“বেশি পেইন সহ্য করতে না পারলে,আনসার দে ব্রোকে।নাহলে এমন টর্চার সহ্য করতে পারবি না।”
হ্যারির কথা তাও কেউ কিছু বললো না।এইবার তূর্যয় পাশে থাকা গার্ড থেকে একটা “ফিঙ্গার কাটার” নিলো।এই দেখে রাণী,সাথে উপস্থিত সবাই ঢেঁকুর গিললো।তূর্যয়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসা লোকটার হাতের বাঁধন খুলে দিলো একজন গার্ড।এরপর লোকটার হাত এনে ধরলো তূর্যয়ের সামনে।তূর্যয় শেষবার বললো,
–“লাস্ট বার বলছি।কে ছিল তোদের লিডার?”
লোকটা কিছু না বলাতে,তূর্যয় লোকটার বাম হাত ধরে মধ্যখানের একসাথে তিনটা আঙ্গুলই কেটে দিলো।তূর্যয়ের গার্ড লোকটার মুখ চেপে রাখায় লোকটির আর্তনাদ শোনা গেলো না।কিন্ত,রাণীর মুখ বন্ধ নেই।এমন নৃশংস ঘটনা দেখে রাণী জোরে চিল্লিয়ে উঠলো,
–“ইয়া আল্লাহ্!”
রাণীর চিৎকারে সবাই রাণীর দিকে ফিরলো।রাণীকে তূর্যয় এইখানে দেখে বেশ ভরকে গেলো।কারণ,রাণীর উচিত ছিল তার গার্ডের সাথে বাহিরে থাকা।রাণী তার মুখ চেপে রইলো দুই হাত দিয়ে।তূর্যয়ের শরীর রাগে কাঁপছে।স্বাভাবিক মানুষের কাছে এইসব কাটাকাটি মোটেও সুবিধার লাগে না।তূর্যয় নিজে মাফিয়া সাথে এইখানে সবাই গ্যাংস্টার দলের মানুষ হওয়ায় তাদের কাছে এইসব একেবারে সহজ বিষয়।কিন্তু,রাণীর মতো সাধারণ মানুষের কাছে এইসব বিষয় বেশ ভয়ানক।তূর্যয় রক্ত চক্ষু দিয়ে তাকালো গার্ডদের দিকে।এরপর সে চিল্লিয়ে গার্ডদের বললো,
–“এই মেয়ের সেন্স হারানোর আগে তাকে এই জায়গা থেকে সরিয়ে নে।এই মেয়ের কিছু হলে আমি কাউকে ছাড়বো না।”
গার্ডরা রাণীকে বলছে সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে তাদের সাথে।কিন্তু রাণী এখনো মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তূর্যয় ইশারা করলো হ্যারিকে।সাথে সাথে হ্যারি রাণীর হাত ধরে বাইরে নিয়ে গেলো সাথে কিছু গার্ডও সেখানে গিয়েছে।সেদিক থেকে নজর সরিয়ে তূর্যয় তার হিংস্র নিয়মে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করলো।

রাণী ‘ থ ‘ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।একটু আগের দৃশ্য যেনো রাণী কিছুতেই ভুলতে পারছে না। পারবেই বা কিভাবে?এমন নৃশংস দৃশ্য রাণী আগে কখনোই দেখেনি।ভেতরটা কাঁপছে তার।রাণী গোডাউনের সামনে থাকা একটা বেঞ্চে বসে পড়লো।সে তার মাথায় হাত দিয়ে আনমনে বলতে লাগলো,
–“হায়রে,এই কোন জল্লাদের মায়ায় পড়লাম আমি?কিভাবে আঙ্গুল কেটে ফেললো?উনার কি একটুও দয়া হয়নি এই কাজ করতে?আমি কিনা শেষ পর্যন্ত এই হিংস্র লোকের মায়ায় পড়লাম,আল্লাহ্ রে! কিন্তু, উনারও কি করার আছে?উনি হলেন মাফিয়া লিডার।উনার মন মানসিকতা কি আর আমার মতো সাধারণ মানুষের মতো হবে?থাক রাণী,সমস্যা নেই।এই হিংস্র মানুষকে নিজের ভালোবাসা দিয়ে কাবু করে নিবি তুই।তোকে এই কাজ করতেই হবে।তোর ভালোবাসায় যদি এই লোকের হিংস্রতা একটু কমে!”
শেষের কথাগুলো ভাবতেই রাণী বসা থেকে উঠে পড়লো।সে নিজের দিকে আঙুল দিয়ে বলতে লাগলো,
–“ক..কি,কি বল.. বললি তুই?ভালোবাসা?তুই তাহলে তূর্যয়কে ভালবেসে ফেলেছিস?কিন্তু কিভাবে?উফফ, না।এখন কিছু বলা যাচ্ছে না।তূর্যয়ের প্রতি আমার মনের অনুভূতি একেবারে নতুন।এই অনুভূতি বুঝতে আমার আরো সময় লাগবে।আগে আগে কথা বলিস না তুই, মন।দয়া করে চুপ করে থাক।সেই হিংস্র দানব যদি জানে তোর এইসব মনের কথা!তাহলে,তোকেই ঝুলিয়ে রাখবে গাছের সাথে।”
রাণী নিজের বুকে হাত দিয়ে বুকের ধুকধুক ভাব কমানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
একটু পরেই তূর্যয় আর বাকি সবাই বের হলো গোডাউন থেকে।তূর্যয় রাণীর দিকে এক নজর তাকিয়ে হাত ধুয়ে নিল।তূর্যয়ের হাত থেকে সকল আলগা রক্ত পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে।রুমালে হাত মুছে তূর্যয়কে তার এক গার্ড সিগারেট ধরিয়ে দিল।তূর্যয় সিগারেটে দুই তিন টান দিয়ে হ্যারিকে বললো,
–“সকল গার্ডকে নিয়ে গোডাউনের চারদিক ভালো করে সার্চ করে দেখো ড্রাগস এর বক্সগুলো কোথায় আছে।তাদের মতে,তারা ড্রাগস এর বক্সগুলো গাছের গোড়ায় মাটির নিচে লুকিয়ে রেখেছিল।এইখানে তেমন গাছ নেই।কাজটা সহজ হবে তোমাদের।আমরা সামনে ছাউনির দিকে থাকবো।সেদিকটা একেবারেই জনমানবহীন আর সুরক্ষিত।কাজ শেষে সেখানে চলে এসো।”
হ্যারি সিরিয়াস মুড নিয়ে বললো,
–“ওকে ব্রো।”
হ্যারির পিছু পিছু রাণী যেতে নিলেই তূর্যয় রাণীকে বলে উঠলো,
–“রাণী,তুই আমার সাথে থাকবি।”
রাণী তূর্যয়ের কথা পাত্তা না দিয়ে চলে যেতে নিলে তূর্যয় রাণীর হাত চেপে ধরলো।বাকি সবাই চলে গেলো তূর্যয়ের ইশারা পেয়ে।রাণী বকবক করে যাচ্ছে।কিন্তু তূর্যয় সেদিকে পাত্তা না দিয়ে একটু সামনে হেঁটে ছাউনির পাশে চলে এলো।সেখানের বেঞ্চে তূর্যয় বসে নিজের গায়ের কোট খুলে পাশে রাখলো।রাণী মুখ ফুলিয়ে তূর্যয়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।তূর্যয় রাণীর দিকে তাকিয়ে তাকে বললো,
–“বসে পড়।”
রাণী অনেকক্ষণ চুপ করে থাকলেও এখন রাণীর মুখে বুলি ফুটলো,
–“নাহ বসবো না।বাবা গো বাবা!কিভাবে আঙ্গুল কেটেছেন আপনি ঐ লোকের।আপনার কি একটুও ডর ভয় নেই?মায়া দয়া নেই?”

–“সেই লোকগুলো যদি নিজেদের বাজে কাজের জন্যে কোনো নিরীহ মানুষের জান নিয়ে নেয়,নিরীহ মানুষকে ষড়যন্ত্রের জালে ফেলে,তাদের পরিবারে ক্ষতি করে তখন তাদের মনেও তো কোনো দয়া মায়া থাকে না।আমি জাস্ট,আসল কাহিনী উদ্ধারের জন্যেই তাদের মেরেছি।কারণ,তাদের মারার আগে তারা নিজেই অনেক নিরীহ মানুষকে ফাঁসিয়েছে।এইসব অনিয়ম আমি সহ্য করিনা।তাই তো তোর মতো মানুষের কাছে আমি খারাপ।আর হ্যাঁ,আমি মাইন্ড করিনা খারাপ মানুষ হতে।তোকেও এই খারাপ মানুষকে সহ্য করতে হবে সারাজীবন।আফটার অল,আমি তোর মতে; দানব সন্ত্রাসী, তূর্যয়।”
রাণী অবাক হলো তূর্যয়ের কথায়।কি সুন্দর করে রাণী তূর্যয়কে খারাপ ভেবেছিল।কিন্তু এইখানে কাহিনী সম্পূর্ণ বিপরীত।এখন রাণীর মনে হচ্ছে তূর্যয় যা করেছে একদম ভালো করেছে।
তূর্যয় নিজের মোবাইল বের করে কমিশনারকে ফোন দিলো। অপর পাশে ফোন ধরতেই সিগারেটে টান দেওয়ার মাঝে তূর্যয় বলে উঠলো,
–“কমিশনার সাহেব!কাজ শেষ। ঐ মানুষগুলো নির্দোষ ছিলো।ড্রাগস তাদের কাছে আছে।হ্যারি নিয়ে যাবে সেগুলো আপনার কাছে।আমার পেমেন্ট আর একটু বাড়াতে হবে।কারণ,যে নির্দোষ মানুষের প্রাণ গেলো তাদের পরিবারকে আমি কিছু সাহায্য করতে চাই।”
অপর পাশ থেকে কমিশনার মুচকি হেসে বলল,
–“কোনো চিন্তা করবে না পেমেন্ট নিয়ে।তুমি আছো তাই আমি টিকে আছি।তুমি হিংস্র হলেও তোমার মধ্যে অন্যরকম একটা স্টাইল আছে।সুযোগ পেলে এসো কোনোদিন আমার বাড়িতে। কারো সাথে দেখা করাবো আমি তোমাকে।”
তূর্যয় ঠোঁট বাঁকা করে উত্তর দিলো,
–“দেখি।”
রাণী তূর্যয়ের কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে রইলো।সে মনে মনে ভাবছে,
–“আসলেই তূর্যয় যতো হিংস্রতা দেখাক না কেনো,উনার মনটা ভীষন ভালো।নাহলে,আজকাল আপন মানুষেরা অন্যের চিন্তা করে না।সেখানে উনি সেই পরিবারের কথা চিন্তা করছে,যাদের উনি কখনো দেখেননি।বাহ্,আমার সন্ত্রাসী।মনটা খুশি হয়ে গেলো আমার।”

অল্প সময়ের মধ্যে আকাশের রং পরিবর্তন হতে লাগলো। হালকা বাতাস আর মেঘলা আবহাওয়ায় বিকালের পরিবেশটা বেশ সুন্দর লাগছে।হঠাৎ করে রাণী দেখলো তিন চারটা খরগোশের বাচ্চা।সে খুশি হয়ে তূর্যয়ের কাঁধে হাত রেখে তূর্যয়কে বলে উঠলো,
–“তূর্যয়, দেখুন কি সুন্দর খরগোশ!”
তূর্যয় রাণীর দিকে তাকাতে তাকাতেই রাণী তার পাশ থেকে উঠে দৌড় লাগালো খরগোশগুলোর দিকে।সবুজ রঙের ঘাসের উপর বসে পড়লো রাণী খরগোশের বাচ্চাগুলোর কাছে।ঘাস ছিড়ে রাণী অল্প অল্প করে সেই খরগোশদের মুখে ঘাস তুলে দিচ্ছে।তূর্যয় অবাক হয়ে রাণীর হাসিমুখ দেখছে।সারাদিনের এই মারপিটের পর রাণীর হাসিমুখটা দেখে তূর্যয়ের মনের,শরীরের সকল হিংস্রভাব আর ক্লান্তি যেনো নিমিষেই মিশে যাচ্ছে।তূর্যয় নিজের মোবাইলে রাণী আর খরগোশ ছানার ছবি তুলে নিলো।তূর্যয় মিনমিন করে বলতে লাগলো,
–“অতীতে যেমন তোমায় দেখে আমার সব কষ্ট চলে যেতো,এখনো তোমাকে দেখলেই আমার সকল ক্লান্তি চলে যাচ্ছে। আমার জীবনে সেই একটু আলোর আগমন আমি আবারও পেয়ে গিয়েছি,রোদ্র কন্যা।অনেক ভালোবাসি।”

হঠাৎ করেই তূর্যয় দেখলো বৃষ্টি নেমেছে।রাণী এখনো বসে আছে সেখানে।তূর্যয় জোর গলায় দুইবার রাণীকে ডেকে উঠলো,
–“রাণী!রাণী,বৃষ্টি নেমেছে। চলে আয়।”

কিন্তু রাণীর তূর্যয়ের কথায় কান না দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।দুইহাত মেলে দিয়ে বৃষ্টি উপভোগ করতে লাগলো সে।ঝপঝপ বৃষ্টির পানিতে ভিজে যেতে লাগলো রাণীর সম্পুর্ণ সত্ত্বা।তূর্যয়ের চোখে ঘোর লেগে যাচ্ছে রাণীকে এমন দেখে।বৃষ্টিতে তূর্যয়ের সমস্যা থাকায় সে এতক্ষণ ছাউনিতে দাঁড়িয়ে রাণীর বৃষ্টি উপভোগ করা দেখছিলো। কিন্তু,এখন রাণীর মুখে ভেজা চুল লেপ্টে যাওয়া,রাণীর খিলখিল হাসি,বৃষ্টির পানি নিয়ে খেলা,
রাণীর ভেজা সত্ত্বা সবটা যেনো তূর্যয়ের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিলো। বেঞ্চে রাখা কোটের উপর নিজের মোবাইল রেখে তূর্যয় ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো রাণীর দিকে। খরগোশগুলো ছানা দৌড়ে পালিয়ে গেলো তূর্যয় আসতেই।অল্পতেই তূর্যয়ও ভিজে চুপচুপ হয়ে গেলো বৃষ্টির পানিতে।তূর্যয় রাণীর কাছাকাছি যেতেই রাণী তূর্যয়কে বললো,
–“আপনি কেনো এসেছেন?বৃষ্টিতে আপনার সমস্যা হয়,এটা ভুলে গিয়েছেন?যান,ছাউনিতে যান!”
রাণীর কথায় তূর্যয় রাণীর কোমর চেপে ধরে তাকে তার কাছে নিয়ে নিলো।রাণী গিয়ে ঠেকলো তূর্যয়ের বুকে।রাণীর দুই হাত তূর্যয়ের বুকের সাথে লাগিয়ে রাখলো রাণী।তূর্যয়ের চোখে চোখ পড়লে রাণী তূর্যয়ের নজরে হারিয়ে গেলো।তূর্যয়ের গোছানো চুলে বৃষ্টির পানি লাগার কারণে সব চুল এলোমেলো হয়ে কপালের সামনে চলে এসেছে।রাণী ঘোর মাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তূর্যয়ের দিকে।ঠান্ডায় রাণীর ঠোঁট ঠকঠক করে কাঁপছে।যা দেখে তূর্যয়ের সকল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। ধীরে ধীরে সে রাণীর দিকে নিজের মুখ নিয়ে যাচ্ছে।রাণীর কোমরটাও শক্ত করে আকড়ে ধরেছে সে।ব্যাথায় রাণীর চোখে পানি জমেছে।কিন্তু তাও সে তূর্যয়ের দিক থেকে নজর ফেরাচ্ছে না।রাণী মুখ চেপে ধরে তূর্যয় রাণীর মুখ উঁচু করে নিলো।সে ধীর গলায় বললো,
–“কেনো এতো নেশা লাগাচ্ছিস আমাকে?তোর নেশাতে বুদ হয়ে যেতে যে আমার মন একটুও অপেক্ষা করতে চাইছে না।কেনো আমাকে এতো পাগল করছিস?”
তূর্যয়ের কথায় রাণী কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠলো,
–“কো..কোমরে ব..ব্যাথা লাগছে।”
–“আমার মনের ব্যাথার থেকে এই ব্যাথা কিছু নাহ,রোদ্র কন্যা!”
রাণী অস্ফুট কন্ঠে তূর্যয়কে প্রশ্ন করলো,
–“বুঝিনি আমি।কি বলছেন এইসব?”
তূর্যয় রাণীর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বললো,
–“বুঝতে হবে না, তোর।সব আমি পরে বুঝিয়ে দিবো সুদে আসলে।”
কথাগুলো বলে তূর্যয় রাণীকে ছেড়ে দিয়ে হাঁটতে লাগলো।
এরপর পেছনে ফিরে আবার চেঁচিয়ে বললো,
–“এখনই ছাউনিতে আয়।আমি নিয়ে আসলে কিন্তু সহ্য করতে পারবি না।”
রাণী তূর্যয়ের দিকে প্রশ্নের চোখে তাকিয়ে তূর্যয়ের পেছনে হাঁটতে লাগলো।তূর্যয়ের বলা কথাগুলো রাণীর হজম হচ্ছে না।আর না হজম হচ্ছে তূর্যয়ের এই আকর্ষণীয় রূপ।তূর্যয়ের কপাল বেয়ে পানি পড়ছে।আর সে এই পানিকে হাত দিয়ে মুছে নিচ্ছে।চুলের উপর হাত চালিয়ে তূর্যয়ের মাথার পানি সব সে রাণীর গায়ে ঝাড়লো।রাণীর শরীর কেঁপে উঠছে। তার কপালে তূর্যয়ের ঠোঁটের ছোঁয়াটা যেনো আগুনের মতো তাপ সৃষ্টি করছে।তূর্যয়কে এতো বেশি মোহনীয় লাগছে তার কাছে, সে বারবার জিহ্বা দিয়ে নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে নিচ্ছে।তূর্যয়কে এইসব ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার সাহস আপাতত রাণীর নেই।তাই সে গায়ে ওড়না পেঁচিয়ে বসে রইলো।তার দিকে তূর্যয় গভীর দৃষ্টিতে দেখে আছে এটা রাণী বেশ বুঝতে পারছে।তাই সে তূর্যয়কে বলে উঠলো,
–“এইভাবে তাকিয়ে থাকলে কিন্তু আমি আবারও চলে যাবো বৃষ্টিতে।”
–“ওড়না দিয়ে ঢেকে লাভ কি? সবই তো বোঝা যাচ্ছে।”
তূর্যয়ের কথায় রাণীর মাথা ফাঁকা লাগছে।লজ্জায় চোখ নিচে নামিয়ে নিলো সে।

তূর্যয় রাণীকে লজ্জায় ফেলতে পেরে বেশ মজা পেলো।সে ধীর পায়ে এসে বেঞ্চ কোট নিয়ে রাণীর গায়ে তার কোট দিয়ে দিলো।রাণী আকড়ে ধরলো তূর্যয়ের কোট।রাণী মাথা নিচু করে একটু আগের ঘটনা ভাবছে।তূর্যয় তার কপালে ঠোঁট ছুঁয়েছে,এটা যেনো তার কাছে অন্যরকম এক ভালোলাগা সৃষ্টি করেছে।রাণীর প্রতি তূর্যয়ের এমন যত্নে রাণী নিজের মনকে তূর্যয়ের প্রেমে পড়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারলো না।রাণী আপনমনে ভেবে উঠলো,
–“শেষ পর্যন্ত এই দানব সন্ত্রাসীর প্রেমে পড়লি তুই, রাণী?এই লোককে কিভাবে সমলাবি তুই?পারবি এই লোকের আঁধার জীবনে নিজের আলো দিয়ে লোকটার জীবনের সকল কষ্ট দূর করতে?হ্যাঁ,তোকে পারতেই যে হবে।তোর দানব সন্ত্রাসীর জীবনে সুখটা যে তোকেই আনতে হবে।পারবি তুই সব পারবি।কিন্তু,এই হিংস্র লোককে কিভাবে মনের কথা বলবি তুই?উফ, শেষে কিনা এক পাথরকে নিজের মন দিয়ে বসে আছি আমি!হায়রে রাণী,তোর জন্যে সামনে কি অপেক্ষা করছে আল্লাহ্ ভালো জানে।কিন্তু,আমার মনের বিশ্বাস; আমার সন্ত্রাসী সবার থেকে একেবারে আলাদা।তার হিংস্র মনেও যে আছে একরাশ মায়া।”
রাণী আপনমনে ভাবতে লাগলো কথাগুলো।

আর তূর্যয়! সে তো দেখে আছে তার রোদ্র কন্যাকে।যে এখন গায়ে বৃষ্টি মেখে এক অন্য রূপ ধারণ করেছে।তার সেই রূপের প্রেমে যেনো তূর্যয় নতুনভাবে আবারও নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।রাণীর দিকে নেশাগ্রস্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে তূর্যয় মনে মনে বলতে লাগলো,
–“তূর্যয়ের রাণী তুই!”
.
রাহেলাকে আজ আবারও মমতা এতিম খানা থেকে কেউ ফোন দিলে, রাহেলা রাগী গলায় সে মানুষকে খেঁকিয়ে বলতে লাগলো,
–“আরে কইছি তো আজ আসতাছি।দুইদিন ধইরা বাতের ব্যথায় আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা।তবে,আজ আসমু আমি রাত এগারোটায়।এরপর রাণীকে শায়েস্তা করমু।আজ কেউ রক্ষা করতে পারবো না তারে।”

–“হুম ভালো।অপেক্ষায় রইলাম।আজই আসবেন কিন্তু।রাণীর সম্মানহানি দেখার জন্যে আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।”
কথাগুলো বলে মানুষটি ফোন কেটে দিলো।
–“আজ তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না,রাণী। ও আমাদের সর্বগুণ সম্পন্ন রাণী, তোকে আজ কে বাঁচাবে?হাহাহা।”
মানুষটি বিকট শব্দে হাসতে লাগলো।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে