আলো-আঁধার পর্ব-১৪+১৫

0
905

#আলো-আঁধার🖤
#লেখিকা: সালসাবিল সারা

১৪.
দুইদিন ধরে রাণী অফিস যাচ্ছে না।তূর্যয়ের কোনো খবর পেলো না সে এই দুইদিনে।তূর্যয়ের শরীরের কি অবস্থা এটাও রাণীর জানা নেই।হঠাৎ কি হলো তূর্যয়ের সেদিন, এই নিয়েই রাণীর যতো চিন্তা।যদিও সে তূর্যয়কে অনেক ঘৃণা করে।কিন্তু হাজার হলেও,রাণী তো একজন সাধারণ মানুষ।মনুষত্ববোধ আছে তার মাঝে।তাই তো আজ দুইদিন ধরে রাণী তূর্যয়ের চিন্তায় আছে।অফিসে জয়েন করার দ্বিতীয় দিনে হ্যারি তাকে একটা মোবাইল দিয়েছিল।তূর্যয়ের অফিসের সব স্টাফদের মোবাইল ফোন হয় তূর্যয়ের দেওয়া।সেই মোবাইলের সিম পর্যন্ত অফিস থেকে দেওয়া হয়।যে সিমে শুধু তূর্যয়, হ্যারি,
অফিসের ওয়াচম্যান এবং ম্যানেজারের নাম্বার থেকে ফোন আসতে পারবে। সেই সিম থেকে অফিসের সকল স্টাফ শুধু তাদেরকেই ফোন দিতে পারবে।রাণী অফিস থেকে দেওয়া সেই মোবাইল হাতে নিয়ে বারান্দায় বসে আছে।একটু পর পর সেই মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে রাণী।সে ভাবছে,হ্যারিকে ফোন দিয়ে তূর্যয়ের কথা জিজ্ঞেস করবে কিনা! বাহিরে অনেক বৃষ্টি হচ্ছে।যাকে বলে তুমুল বৃষ্টি।রাণী সেই বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে নিজের মনের সাথে নানান কথা বলে যাচ্ছে।সে ভেবে পাচ্ছে না আদৌ তূর্যয়ের জন্যে হ্যারিকে ফোন করা তার ঠিক হবে কিনা! রাণী মনে মনে ভাবছে,”লোকটা,সেদিন এমন করলো কেনো?এর উত্তর আজ দুইদিনেও পেলাম না।ভিনদেশী ভাই থেকে শুনলাম লোকটা হাসপাতালে ভর্তি আছে।কিন্তু,কি হয়েছে উনার!কি কারণে সেখানে ভর্তি আছে কিছুই জানিনা আমি।আর না জানি তূর্যয়ের ভেতরকার রহস্য।আমার মনে হয়,তূর্যয়ের এমন হিংস্র হওয়ার পেছনে একটা রহস্য আছে।তাছাড়া উনার মা অনেক কম বয়সেই মারা গিয়েছে।তার মানে,তূর্যয় ছোট কাল থেকেই নিজে নিজেই মানুষ হয়েছে।সাবিনা ভুটকির সাথে তূর্যয়ের কথা শুনে মনে হয় তারা দুইজন দুইজনকে সহ্য করতে পারে না।কিন্তু,হাসান সাহেব?উনি তো তূর্যয়ের আসল বাবা। উনি কি পারেননি তূর্যয়কে একটা সুন্দর জীবন দিতে?নিজের ছেলেকে এইভাবে সন্ত্রাসী হতে কিভাবে উনি সমর্থন করলেন?আমার এখনো মনে আছে,তূর্যয়ের সাথে তার বাবার সম্পর্কও ঠিক নেই।তূর্যয় তার বাবাকে নাম ধরে ডেকেছিল সেদিন।কিজানি বাবা!তাদের মধ্যে কি সমস্যা আছে,
আল্লাহ্ ভালো জানেন।নাহলে,কি সুন্দর একটা পরিবার হতো।তূর্যয়ের জীবনটাও আজ স্বাভাবিক হতো।” বজ্রপাতের তীব্র শব্দে রাণী হালকা কেঁপে উঠলো আর রাণী বেরিয়ে এলো নিজের কল্পনা থেকে।রাণী একবার বাহিরে তাকিয়ে আবারও তাকালো মোবাইলের দিকে।রুমে এসে মোবাইলটা রেখে দিলো সে।হ্যারিকে ফোন করতে মোটেও ইচ্ছে করছে না তার।একে তো হ্যারি ফোন করা নিয়ে কি না কি ভাববে,আর দ্বিতীয়ত তূর্যয়ের মতো শক্তিশালী লোক এতো সময় ধরে অসুস্থ থাকবে, এটাও রাণীর মানতে কষ্ট হচ্ছে।রাণী ভাবছে,”হয়তো বা সেই দুইজন কোনো গোপন মিশনে গিয়েছেন,তাই তাদের আর খবর নেই।গোপন মিশন থাকায়, হতে পারে ভিনদেশী ভাই আমাকে মিথ্যে বলেছেন ঐ তূর্যয় দানবের কথায়।নাহলে তূর্যয়ের মতো দানবের আবার শরীর খারাপ হবে নাকি?আমিও না অন্যের চিন্তায় মরিয়া হয়ে যাচ্ছি।নিজের চিন্তা কর তুই রাণী।কিভাবে নিজের সবকিছু ঠিক করবি!সারাজীবন তো এইভাবে এতিম খানায় বসে থাকলে আর চলবে না।নিজের জীবনকে আমার নিজেই গড়তে হবে।” রাণী আবারও বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে।বৃষ্টির পানি ছুঁয়ে দিচ্ছে রাণীর সম্পূর্ণ শরীর।রাণীর ইচ্ছে করছে এক কাপ গরম চা আর কিছু ভাজা পোড়া খেতে এখন।কিন্তু,রাণী থাকে তো এতিম খানায়।এইখানে সে নিজের ইচ্ছে মতো কিছুই কি খেতে পারবে?পারবে না।তাছাড়া এতিম খানার সবাই এখনো রাণীর দিকে নিচু চোখে তাকায়।তাই খাবারের সময়, আর মাটির কাজ করার সময় ছাড়া রাণী তার রুম থেকে বের হয় না।রাণী চুপ করে বাহিরে দেখছে। আশে পাশের সবকিছুই বৃষ্টিতে চুপচুপ হয়ে আছে।হঠাৎই দ্রুতগামী একটা জিপ দেখে রাণীর চোখ থমকে গেলো।এক মিনিটের জন্যে মনে হলো,সে তূর্যয়কে দেখেছে।কিন্তু নাহ!রাণীর মনের সাথে সত্যিটা মিলল না।জিপে বসা ছেলেগুলো ছিলো অন্য ছেলে।অজান্তেই রাণীর বুক চিড়ে বেরিয়ে এলো একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস।রাণী হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ধরছে।চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে বৃষ্টির ঝপঝপ শব্দ আর এই ঠান্ডা বৃষ্টির পানি।রাণীর বন্ধ চোখে ভেসে এলো এমনই একদিন বৃষ্টির কাহিনী।যেদিন রাণীর সাথে তূর্যয়ও বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়েছিল।যদিও সেদিনের বৃষ্টিতে ভেজার কোনো স্মৃতি রাণীর মনে নেই।কিন্তু রাণী এখনো পাঞ্জাবি পড়া তূর্যয়ের চেহারাটা ভুলতে পারেনি।চোখ বন্ধ অবস্থায় তূর্যয়কে বড্ড শান্ত লাগছিল সেদিন।সাথে তূর্যয়ের মুখে যেনো ভর করেছিল এক মায়া!যে মায়াময় চেহারা আজও রাণী ভুলতে পারেনি।রাণী একটু মুচকি হাসছিল সেদিনের কথা ভাবতেই।আর আপনমনে সে বললো,”তূর্যয়!” নিজের মুখের কথায় নিজেই চমকে উঠলো রাণী।চোখ খুলতেই রাণী দেখলো, সে আপাতত বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গেলো।রাণী জলদি রুমে চলে এলো।গায়ে থাকা ভেজা কাপড় খুলে রাণী শুকনো কাপড় পড়ে নিলো। বিছানায় শুয়ে আবারও রাণী মোবাইল নিয়ে বারবার হ্যারির নাম্বার দেখছে।এইভাবে নাম্বার দেখতে দেখতেই হঠাৎ করে রাণীর আঙ্গুলের চাপে হ্যারির নাম্বারে ফোন চলে গেলো রাণীর মোবাইল থেকে।রাণী কিছু বুঝে উঠার আগেই হ্যারির মোবাইলে গড়গড় করে রিং বাজছে।রাণী যেই কাটতে যাবে ফোন,এর আগেই হ্যারি কল রিসিভ করে ফেললো।যার কারণে রাণী আর ফোন কাটতে পারলো না।রাণী কানে ফোন ধরতেই শুনতে পেলো হ্যারির কথা,”হ্যালো,সিস। হাউ আর ইউ?” হ্যারির কথায় রাণী নরম কণ্ঠে বললো,”আছি ভালো। আপনার কি খবর?” হ্যারি দ্রুত কণ্ঠে বলে উঠলো,”আমি ফাইন আছি। বাট, ব্রো সিক।কালকে ব্রোকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দিবে।” রাণী অবাক হলো হ্যারির কথা শুনে। এই মুহূর্তে রাণীর নিজের প্রতি খুবই অনুশোচনা বোধ হচ্ছে। বরাবরের মতো রাণী আজও তূর্যয়কে ভুল বুঝলো।রাণী কিছুক্ষণ চুপ থাকলে হ্যারি বলে উঠলো,
“হ্যালো সিস! ক্যান ইউ হেয়ার মি?” রাণী প্রথমে আনমনে বললো,”উম!” পরক্ষণে রাণী আবারও হ্যারিকে বললো,
“আসলে আমি ফোন করেছিলাম, অফিসে কবে থেকে আসবো সেই ব্যাপার নিয়ে। কিন্তু এখন তূর্যয়ের কথা শুনে খুবই খারাপ লাগলো।উনার আসলে কি হয়েছিল?” হ্যারি মুচকি হাসলো রাণীর কথায়।হ্যারি বুঝতে পারছে,
রাণী অফিসে নয় বরং তূর্যয়ের খোঁজেই ফোন দিয়েছে।হ্যারি রাণীকে জবাব দিলো,”কালকে হাসপাতাল আসো। আমি হাসপাতাল আসার সময়, তোমাকে এতিমখানা থেকে পিক করে নিবো।এরপর ব্রোকে নিয়ে তার বাড়িতে যাবো।ব্রো যেদিন সুস্থ হয়ে অফিসে যাবে তুমিও সেদিন অফিসে যাবে।আর এর আগ পর্যন্ত তাকে বাসায় টেক কেয়ার করতে হবে তোমার।তুমি আমাকে ফোন না দিলে আমি নিজেই তোমাকে ফোন দিতাম আজ।আমার ব্রোকে কিন্তু খুব ভালো টেক কেয়ার করতে হবে। গট ইট?” রাণী ছোট্ট করে “হুঁ” বললো হ্যারির কথায়।রাণীর “হুঁ” শুনে হ্যারি আবারও রাণীকে বললো,”ভাইয়ের প্রেসার লো ছিলো অনেক।যার কারণে সেদিন ব্রোয়ের সেন্স চলে গিয়েছিল। হয়তো, ব্রোয়ের অতীত নিয়ে কিছু মনে এসেছিল যার কারণে ভাই সেন্সলেস হয়েছিল।” রাণী এইবার নিজের মুখ খুললো। সে নরম কণ্ঠে বললো,
“তূর্যয়ের অতীত কি খুবই ভয়ংকর?” যার কারণে এই অতীতের কথা মনে আসতেই উনি এতটা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন?” হ্যারির কন্ঠ গম্ভীর হয়ে গেল রাণীর কথা শুনে। হ্যারি দৃঢ় গলায় রাণীকে বলল,”আমার নিজেরেই সবটা জানা নয় ব্রোয়ের অতীত সম্পর্কে। বাট ডোন্ট ওয়ারী। আমি আর তুমি মিলে সব ইনভেস্টিগেশন করে বের করবো। এখন রাখছি। টুমোরো সকাল নয়টায় পিক করবো,সিস। স্টে ব্লেসড।” হ্যারির কথায় রাণী বিদায় জানিয়ে হ্যারির ফোন রেখে দিলো।গায়ের উপর কাঁথা টেনে রাণী বিছানায় শুয়ে পড়লো।তূর্যয়ের ব্যাপারটায় বড্ড ভাবাচ্ছে রাণীকে।রাণী আনমনে বলতে লাগলো,
“কি এমন মনে এসেছিল সেদিন উনার অতীত সম্পর্কে, যার কারণে উনি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়লেন?উফ,
আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।আচ্ছা,তূর্যয় যতোই হিংস্র হোক না কেনো;উনি কি সত্যি অনেক একা?উনার সাথে কথা বলার মানুষ কি খুবই কম? উনি যে এইভাবে সবার সাথে গম্ভীর আর রাগীভাবে কথা বলেন,উনার মনের কথাগুলো শোনার মতো কি কেউ নেই?উনি কি ছোট কালের কোনো ঘটনার জন্যেই এতো হিংস্র দানবে পরিণত হয়েছেন?কি হয়েছিল উনার জীবনে?তোকে এইসব বের করতেই হবে রাণী।তূর্যয় যেমন হোক, দানব হোক আর হিংস্র হোক এর আগে উনি একজন মানুষ।তুই যতটুকু পারবি রাণী,উনার এই রহস্য বের করার চেষ্টা করবি।” রাণী তার মনে হাজারো কথা ভাবছে। আজ রাতের খাবার খাওয়া হলো না রাণীর।নানান কথা ভাবতে ভাবতে রাণী ঘুমের দেশে চলে গেলো।

হ্যারির ফোনে ঘুম ভাঙলো রাণীর। হ্যারির সাথে কথা বলে মোবাইলে চোখ পরতেই সে দেখতে পেলো ঘড়িতে নয়টা পনেরো বাজে।তাড়াহুড়ো করে রাণী নিজের বিছানা ছাড়লো।কোনো মতে হাত মুখে ধুয়ে কাপড় চেঞ্জ করেই রাণী নিজের ব্যাগ আর অফিস থেকে দেওয়া মোবাইল ফোন নিয়ে নিলো। তার এমন তাড়াহুড়া দেখে সিমি রাণীকে জিজ্ঞেস করলো,”আরে এমন করছিস কেনো?কোথাও যাবি?” রাণী বোতল থেকে অল্প পানি খেয়ে সিমিকে বললো,”হ্যাঁ,অফিস যেতে হবে।ভিনদেশী ভাই এসেছে নিতে।” সিমি মুখ বাঁকালো রাণীর কথায়,
“আচ্ছা, পরে যাবি অফিসে।আগে নাস্তা করে নে।তোর সেই ভিনদেশী ভাইয়ের সাথে আমি কথা বলে আসছি।” রাণী মাথা নাড়ালো,”নাহ,আমার খাওয়ার সময় নেই।আর দেখা করবি তো জলদি আয় আমার সাথে।” রাণী নিজের পায়ে জুতা জড়িয়ে নিয়ে দ্রুত হাঁটতে লাগলো।রাণীর পিছে সিমি হুইল চেয়ার নিয়ে যতো সম্ভব জলদি আসতে লাগলো।এতিম খানার গেইটের সামনে আসতেই হ্যারি গাড়ির জানালা থেকে মুখ বের করে রাণীকে বললো,”হারি আপ, সিস।ব্রো অপেক্ষা করছে।” সিমির সাথে হ্যারির চোখাচোখি হতেই সিমি মুচকি হাসলো।সিমিকে দেখে হ্যারির বুক ধুক করে উঠলো।আর সিমির এমন হাসি দেখে হ্যারি তার বুকে হাত রেখে বললো,”ডোন্ট স্মাইল কিউটি।এইখানে হার্ট করে অনেক।” রাণী হ্যারির কথা শুনে হাসলো।গাড়ি চলে যাওয়ার সময় হ্যারিকে হাত নাড়িয়ে “বিদায়” বলে উঠলো সিমি।আর এতেই হ্যারি খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো।গাড়ি চলতেই হ্যারি মাথা ঘুরিয়ে পেছনে ফিরে রাণীকে জিজ্ঞেস করলো,”সেই প্রিটি মেয়েটি কে?” রাণী দাঁত দেখিয়ে হ্যারিকে বললো,আমার বান্ধবী।কলিজার বন্ধন আমাদের।” হ্যারি আরো খুশি হয়ে রাণীকে আবারও জিজ্ঞেস করলো,”ইজ সি সিঙ্গেল? আই মিন কিউট মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড নেই তো আবার?” হ্যারির কথায় রাণী জোরে হেসে বললো,”উহু,ভিনদেশী ভাই।আমার বান্ধবী পিউর সিঙ্গেল।” হ্যারি মুচকি হেসে রাণীকে বলে উঠলো,”ইয়াহু,বাসায় গিয়ে আস্ক করবে তাকে,তার আমাকে ভালো লেগেছে কিনা?দা ওয়ে সি ওয়াজ স্নাইলিং!ওহ গড, আই অ্যাম ডেড। আই থিংক ইটস মাই,লাভ এট ফার্স্ট সাইট।” রাণী অবাক হলো হ্যারির কথায়।রাণী অবাক হয়ে হ্যারিকে বললো,
“এইভাবে এক নজর দেখার পর কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারে?আমার মনে হচ্ছে,আপনি বেশি তাড়াহুড়ো করছেন।” হ্যারি নিজের কপাল চুলকিয়ে বলতে লাগলো,”হুইল চেয়ারে বসা ডলের মতো দেখতে একটা মেয়ে।আমাকে দেখে আবার স্মাইল করলো,তখন মেয়েটাকে দেখতে মনে হয়েছিল একটা ফেইরি।হাত নাড়িয়ে যখন আমাকে বাই বলছিল,তার লিপ্স দেখে আমার হার্ট জাস্ট ব্লাস্ট হওয়ার অবস্থা হয়েছিল।” কথাগুলো বলে হ্যারি, রাণীর হাত ধরে আবারও বলে উঠলো,”উফ,সিস!তোমাকে আমার হেল্প করতে হবে কিন্তু।বাসায় গিয়ে আমার নাম্বার দিয়ে আসবে তাকে। গট ইট?” হ্যারির কথায় রাণী মুখে হাসি ঝুলিয়ে বললো,”ওকে,ভিনদেশী ভাই।” হ্যারির মুখ চিকচিক করে উঠলো রাণীর উত্তর শুনে।

হাসপাতালে পৌঁছে রাণীকে হ্যারি নিয়ে গেলো তূর্যয়ের কেবিনের সামনে। হ্যারি রাণীকে ভেতরে ঢুকতে বললে রাণী মাথা নাড়িয়ে ভেতরে ঢুকলো।কিন্তু,হ্যারি কেবিনে যাওয়ার আগেই ডাক্তার তাকে ডেকে নিয়ে গেলো।অন্যদিকে রাণী কেবিনে ঢুকতেই দরজা নিজে নিজে বন্ধ হয়ে গেলো।রাণী অবাক হয়ে দরজার দিকে একবার তাকিয়ে সামনে ফিরতেই রাণীর চোখ যেনো রসগোল্লার আকার ধারণ করলো।রাণী তার অবাক হয়ে যাওয়া চোখজোড়া দিয়ে দেখছে তার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা তূর্যয়কে।তূর্যয় অন্যদিকে ফিরে নিজের কাপড় চেঞ্জ করছে।অন্যদিকে ফিরে থাকায় তূর্যয় না রাণীকে দেখতে পেলো,না শব্দহীন দরজার কোনো শব্দ শুনতে পেলো।তাই এই রুমে এখন রাণী আছে এটা তূর্যয়ের একেবারেই অজানা।রাণী অবাক হয়ে দেখছে তূর্যয়ের পিঠ।তার পিঠের বেশির ভাগ অংশই মোটা মোটা লাঠির আঘাতের মতো দাগ।আবার কিছু সেলাইয়ের দাগ দেখতে পাচ্ছে রাণী তূর্যয়ের গায়ে।তূর্যয় তার হাতে থাকা শার্ট পড়ার জন্যে সামনে ফিরতেই রাণীকে দেখে অবাক হলো।আর রাণী!সে তো তার ছলছল চোখে তূর্যয়ের গায়ের দাগ দেখে যাচ্ছে।তূর্যয় এখন সামনে ফিরতেই তার পেটের খন্ড খন্ড মাংস আর হাতের, বাহুর খন্ড মাংসেও অনেক দাগ দেখতে পাচ্ছে সে।রাণী ভেবে পাচ্ছে না,তূর্যয়ের গায়ে এইসব কিসের দাগ?রাণী মনে মনে ভাবছে,”এই লোককে কেউ মারবে, এমন দুঃসাহস কারো নেই।তাহলে উনার গায়ে এইসব কিসের দাগ?দাগগুলো দেখে তো মনে হচ্ছে, এই দাগ অনেক আগের।” দাগ থেকে চোখ সরাতেই রাণীর চোখ আটকে গেলো তূর্যয়ের চোখের দিকে।তূর্যয়ের চোখজোড়া এখন আপাতত রাণীর দিকেই।
রাণীর ঘুম ঘুম চোখ,এলোমেলো চুল সবটাই যেনো তূর্যয়কে বিধ্বস্ত করে দিচ্ছে।রাণীর হাত দিয়ে চুল সরানোটা তূর্যয়ের কাছে জগতের সবচেয়ে সুন্দর জিনিস বলে মনে হচ্ছে।কিন্তু তূর্যয়ের ভাবনায় ইতি ঘটলো রাণীর কথায়,”আপনার গায়ে এইসব কিসের দাগ?আপনাকে কি ছোটকালে কেউ মারতো?” রাণীর কথায় ঘোর ভাঙলো তূর্যয়ের।ছোটকালের কথা তার কানে প্রবেশ করতেই তূর্যয়ের ভেতরকার রাগ,দানবী ভাব যেনো আবারও তাকে জেঁকে ধরলো।সে দ্রুত এসে রাণীর দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে তাকে বললো,
“সালেহাকে তুই কখন থেকে চিনিস?” রাণী তার হাতে ব্যাথা অনুভব করা সত্ত্বেও সে তূর্যয়কে বললো,”যখন থেকে বুদ্ধি হয়েছে তখন থেকে উনাকে দেখছি আমি।”
তূর্যয় আরো জোরে চেপে ধরলো রাণীর বাহু।ব্যাথায় রাণী “আহ্” করে উঠলো।তাও তূর্যয় ছাড়লো না রাণীকে। সে রাগী গলায় রাণীকে বললো,”সেই কারণেই তো, ঐ স্বার্থপর মহিলার মতো হয়েছিস তুই।একদম সেইম।একদম একই তোরা দুইজন।তোদের কথা,চালচলন, স্বার্থপরতা সব একদম একই।” রাণী অবাক হয়ে শুনছে তূর্যয়ের কথা।সালেহা কি এমন করলো তূর্যয়ের সাথে এটাই মাথায় ঢুকছে না রাণীর।রাণী নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো তূর্যয়ের কাছ থেকে।তূর্যয় রাগে গর্জন করে যাচ্ছে।রাণী এইবার মুখ না খুলে পারলো না।রাণী তূর্যয়কে বলে উঠলো,”দেখুন,আপনার মনে কোনো কষ্ট থাকলে আমাকে বলতে পারেন।মনের কষ্ট মনে না রাখায় ভালো।” তূর্যয় রাণীর হাত টেনে ধরলো যার কারণে রাণী গিয়ে ঠেকলো তূর্যয়ের বুকে।তূর্যয়ের খালি বুকে রাণীর মুখ লাগতেই দুইজনই কেমন নড়ে উঠলো। রাণীর গাল জোড়া যেনো এখনই জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাবে।তূর্যয়ের বুকে রাণীর গাল লাগতেই তূর্যয় যেনো এক অন্য দুনিয়ায় চলে এসেছে।কিন্তু তূর্যয়ের রাগ তাদের দুইজনের এমন অনুভূতি বেশিক্ষণ থাকতে দিলো না।তূর্যয় রাণীর ঘাড় চেপে ধরে তাকে রাগী গলায় বলে উঠলো,”সালেহার কাছে পালিত মেয়েকে আমি আমার মনের কষ্ট বলবো?তোদের মতো নিচু জাতের মেয়ের কাছে আমি তূর্যয় ফিরেও তাকায় না।” রাণী আবারও নিজেকে ছড়িয়ে নিলো তূর্যয়ের কাছ থেকে।রাণীর চোখের টলটল পানি,তার চোখের পলক ফেলতেই রাণীর গালে চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো।রাণী তূর্যয়ের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললো,” আপনি আসলেই একটা গুন্ডা।ভেবেছিলাম,গুন্ডা হলেও আপনার মনেও একটা কষ্ট থাকতে পারে।তবে,আপনি তো দানব।আর দানবের কোনো কষ্ট থাকে না।কিন্তু, আমিও রাণী।আমি সব ঠিকই জেনে ছাড়বো।আর না আমি ছাড়বো আপনার এই চাকরি।এই রাণীকে আপনার অভ্যাসে পরিণত করে নিন এখন।বুঝতে পেরেছেন, মিস্টার দানব সন্ত্রাসী?আর আমার হাত চেপে যে ব্যাথা দিয়েছেন,এটার শাস্তি আমি আপনাকে ঠিকই দিবো।দানব একটা!”
রাণী কথাগুলো বলে হনহন করে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে।তখনই হ্যারি ঢুকলো কেবিনে।হ্যারিকে দেখে তূর্যয় চিল্লিয়ে হ্যারিকে বললো,”এই মেয়ের এতো সাহস! আমার সাথে গলা উঁচু করে কথা বলে?”
কয়েক মিনিট পরে তূর্যয় তার রাগটাকে দমিয়ে নিলো।এরপর সে আবারও হ্যারির দিকে ফিরে তাকে বললো,
“আমার রাগ এতো বেড়ে গিয়েছিল, কি কি বলে ফেলেছি আমি তাকে!হ্যারি গিয়ে দেখো তো, ঐ চঞ্চল মেয়েটার হাত ঠিক আছে কিনা?রাগে বেশি জোরে চেপে ধরেছিলাম তার হাত।সালেহার রাগ সবটাই দেখলাম এই নির্দোষ মেয়েটার উপর।উফফ,আমার রাগ! ধেত!” বলেই তূর্যয় কেবিনে থাকা টেবিলে লাথি দিলো।

হ্যারি অবাক হয়ে তূর্যয়কে দেখে যাচ্ছে।তূর্যয়ের কোনো কথায় হ্যারির মাথায় ঢুকছে না।
আর তূর্যয়, নিজের চুল টেনে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।

চলবে….

#আলো-আঁধার🖤
#লেখিকা: সালসাবিল সারা

১৫.
হাসপাতাল থেকে তূর্যয়কে ডিসচার্জ করে দেওয়া হলো।তূর্যয় নিজের সব ঔষুধপত্রের খোঁজ নিজেই ডাক্তার থেকে জেনে নিয়েছে।সবকিছু তূর্যয় সজ্ঞানে করলেও,
তার মাথায় ঘুরছে রাণীর কথা।হ্যারি সেই যে রাণীকে দেখতে গেলো এখনো আসেনি।তূর্যয়ের চিন্তা হচ্ছে খুব সেই দুইজনের জন্যে।রাগের মাথায় তূর্যয় রাণীর হাতে বেশি আঘাত দিয়ে ফেললো নাকি,এই নিয়েই এখন তূর্যয় ভেবে যাচ্ছে।কিন্তু, তূর্যয় রাণীর প্রতি তার মনোভাব কোনো মতেই প্রকাশ করছে না।কারণ, তূর্যয় সাধারণত কারো জন্যেই চিন্তা করে না।সেখানে এখন,রাণীর প্রতি চিন্তাটা সবাই হজম করতে পারবে বলে তূর্যয়ের মনে হচ্ছে না।অগত্য তূর্যয় নানান কথা ভেবে চললো নিজ মনে।পকেট থেকে মোবাইল বের করে হ্যারিকে ফোন করলো তূর্যয়।কিন্তু তূর্যয়ের ফোন ধরছে না হ্যারি।এতক্ষণ তূর্যয় এইসব সহ্য করে নিলেও এখন হ্যারির ফোন না ধরাটা তূর্যয়ের আর ভালো লাগছে না।ডাক্তার থেকে সবকিছু বুঝে নিয়ে তূর্যয় ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করছে হ্যারি আর রাণীর জন্যে।তূর্যয়ের গ্যাং এর কিছু ছেলেও এসেছে আজ।তারা আপাতত তূর্যয়ের পাশে ঢালের মতো দাঁড়িয়ে আছে।তূর্যয় নিজের কপালে হাত রেখে কপাল ঘষে যাচ্ছে।এমনভাবে সে নিজের কপাল ঘষছে,এই বুঝি তূর্যয়ের কপালের চামড়া উঠে গেলো!অনেক্ষণ চুপ থেকে তূর্যয় এইবার তার পাশে দাঁড়ানো এক ছেলেকে বললো,
“ঐ শুন।”
ছেলেটি তূর্যয়ের ইশারা পেয়ে তূর্যয়ের দিকে ঝুঁকে দাঁড়ালো।তূর্যয় ছেলেটির ঘাড় চেপে ধরে তাকে বলে উঠলো,
“হ্যারিকে ফোন লাগা।”
তূর্যয়ের কথায় ছেলেটি মাথা নাড়িয়ে বললো,
“ঠিক আছে বস।”
ছেলেটি নিজের মোবাইল থেকে হ্যারিকে কমপক্ষে দশটি কল দিলো।প্রথমে ছেলেটার মুখ নরমাল থাকলেও,
তূর্যয়ের তীক্ষ্ণ চোখের দিকে তাকিয়ে ছেলেটা বারবার ইতস্তবোধ করছে।শেষ বার কল দিয়ে ছেলেটা তূর্যয়ের দিকে কিছু বলতে যাবে,তখনই তূর্যয় ছেলেটার দিকে হাত দেখিয়ে বললো,
“চুপ।”
অতঃপর ছেলেটি কিছু বললো না।তূর্যয় মুহূর্তেই রাগে একেবারে বোম্ব হয়ে গেলো।চেয়ার থেকে উঠে হনহন করে হাঁটতে লাগলো সে।তার পিছু পিছু হাটছে তার ছেলেপেলে।তূর্যয়ের দিকে হাসপাতালের অনেকে ভয়ে তো অনেকে অবাকদের চোখে তাকাচ্ছে।কারণ,একে তো তূর্যয় নাম করা একজন গ্যাংস্টার।এতো বড় মাপের মানুষকে বাস্তবে দেখে অনেকে অবাক হচ্ছে।তার উপর তূর্যয় অত্যন্ত আকর্ষণীয়,আর বলিষ্ঠ একজন পুরুষ।অনেক মেয়েই তার সাথে এক মুহুর্ত কাটাতে চায়।যদিও এমন কাজের দুঃসাহস কারো কখনোই হয়নি।তারপরও তূর্যয়কে এক নজর দেখার জন্যে মেয়েরা উঁকিবুকি করছে।
তূর্যয় সেদিকে তাকানোর একটুও প্রয়োজন মনে করছে না।সে বরং রাণী আর হ্যারির চিন্তা করছে।তূর্যয় মনে মনে ভাবছে,
“ঐ দুইজন পাতানো ভাইবোন কই গেলো আল্লাহ্ জানে।মেয়েটা তো একেবারেই ছিঁচকাদুনে।হ্যারি তার বোনের এমন কান্না দেখে নিশ্চয় মেয়েটার সাথে তাল মেলাচ্ছে! ভাবা যায় এইসব?দুইজন মিলে এখন হয়তো আমার নামে নানা কথা বলে যাচ্ছে।মেয়েটা নিশ্চয় হ্যারিকে ইমোশনাল করে ফেললো।আর দুইজন মিলেই এখন কেঁদে যাচ্ছে।উফ, এই মেয়েটা হ্যারিকে একদম মেয়েলি টাইপ বানিয়ে দিয়েছে।দুইটাকে আজ পেলেই একদম চিল্লিয়ে বকা দিবো।এরপর দুইজন আমার সামনেই কান্না করবে।বাহ্,তূর্যয় ভালো আইডিয়া।”
তূর্যয় নিজের ঠোঁট বাকালো নিজের কথায়।তূর্যয়ের ধারণা,হ্যারি আর রাণী পার্কিং বা নিচের লবিতে থাকবে।হলোই তা।হ্যারি আর রাণীকে লবিতে না পেয়ে তূর্যয় আর তার অনুসারীরা পার্কিং এ গেলো।সেখানে একটু ভেতরের দিকে যেতেই তূর্যয় রাণী আর হ্যারিকে দেখতে পেলো।রাণী বসে আছে পার্কিং এর কিনারায় রঙিন লাইট আর একটা ছোটো ঝর্নার ডিজাইনের মধ্যখানে করা বাগানের পাশে।হ্যারি রাণীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তার পাশে দাঁড়িয়ে।আর রাণী মাথা উঁচু করে হ্যারির দিকে তাকিয়ে কিছু বলছে।তূর্যয় সাবধানে সেদিকে এগিয়ে গিয়ে একটা গাড়ির আড়াল করে নিলো নিজেকে।তূর্যয়ের দাঁড়ানোর জায়গা থেকে স্পষ্ট রাণীর কথা শুনতে পাচ্ছে।রাণী কান্না মাখা কন্ঠে হ্যারিকে বলছে,
“ভিনদেশী ভাই,আমি তো আপনাকে সব বলেছি।আমার হাতে এখন ব্যাথা নেই ।কিন্তু আপনার ব্রো এর কথায়, আমার মনের ব্যাথাটা এখনো আছে।।আপনার ব্রো কিন্তু সত্যি একটা দানব।আপনি কিন্তু আবার উনাকে বলবেন না,আমি যে উনাকে দানব ডেকেছি।ডাকবো না কেনো বলুন!আমি এতিম খানায় থাকি বলে, আমি কি মানুষ না?উনি আমাকে বলেছেন,আমার মতো মেয়ের দিকে নাকি ফিরেও তাকানো যায় না।কেনো?আমি দেখতে এতো বিশ্রী?নাকি আমার বাবা মা নেই,তাই আমাকে সবাই ঘৃণা করবে!আচ্ছা,বাবা মাকে কি আমি ইচ্ছে করেই নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি?আমি নিজেই তো তাদের কখনোই দেখিনি।দেখবেন তো,আপনার ব্রো কখনোই সুখী হবে না।উনার জীবনে কখনো সুখ আসবে না।একদিন উনি উনার কোনো এক আপনজনের জন্যে অনেক কান্না করবেন।দেখে নিয়েন এই এতিমের কথা,
ঠিক ঠিক মিলবে!”
রাণী মিনমিন করে কান্না করতে লাগলো।রাণীর কথায় হ্যারি আহত গলায় বললো,
“সব অলরাইট।তবে,আমার ব্রো এর জীবনটাও অনেক এলোন। বাট!”
রাণী হ্যারিকে বলতে না দিয়ে নাক টেনে আবারও হ্যারিকে বলে উঠলো,
“জানি জানি,আপনি কি বলবেন।যান যান,আপনার ব্রোয়ের উপর থেকে সব অভিশাপ তুলে নিলাম।উনার মনে সত্যি কোথাও কষ্ট আছে।আর এইসব রহস্য সব এই রাণী বের করে নিবে। ঐ দানবকে আমি মানুষে পরিণত করবোই।”
রাণীর কথা শুনে হ্যারি হাসলো।সে রাণীকে দাঁড় করালো রাণীর হাত ধরে।আর মুচকি হেসে তাকে বললো,
“ইয়াহ ইয়াহ, আই নো।আমার ব্রোয়ের জন্যে তুমি পারফেক্ট। গড আমাকে ওলয়েজ গুড ইশারা দেয়।”
হ্যারির উত্তরে রাণীর মুখটা প্রশ্নে ছেয়ে গেলো।রাণী কিছু বলতে যাবে এর আগেই রাণী দেখলো গাড়ির আড়ালে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে।রাণী একটু উঁকি দিতেই দেখলো তূর্যয় একপাশ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।রাণী ইশারায় হ্যারিকে চুপ করতে বললো।রাণী হ্যারিকে তার পিছু পিছু আসার জন্যে ইঙ্গিত করলো।হ্যারি রাণীর পেছন পেছন আসছে।তাদের আসতে দেখে তূর্যয়ের অন্য ছেলেরা তূর্যয়কে ইশারা করছে।কিন্তু তূর্যয় মাথা নিচু করে ভালো করে রাণীদের কথা শোনার চেষ্টা করছে।রাণী আর হ্যারির কোনো কথা শুনতে না পেয়ে তূর্যয় মাথা উঠিয়ে তাকালো। সামনে রাণী আর হ্যারিকে দেখে তূর্যয় একটু নড়ে উঠলো।হ্যারি তূর্যয়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
“তুমি হচ্ছো মাসেল ম্যান।তোমার এই ছোট জায়গায় লুকিয়ে থাকা কি মানায়?আর তুমি এইভাবে হাইড হয়ে আমার কনভারসেশন শুনছিল? হাউ চিপ!”
তূর্যয়ের ভ্রু মুহূর্তেই কুঁচকে গেলো হ্যারির কথা শুনে।তূর্যয়কে রাগতে দেখে রাণী হ্যারিকে বললো,
“আরে আরে,কাকে কি বলছেন; ভিনদেশী ভাই?উনি তো দা গ্রেট তাশরীফ তূর্যয়।উনি লুকিয়ে অন্যের কথা শুনবেন নাকি?উনি তো এইখানে দাঁড়িয়ে ব্যায়াম করছিলেন‌,তাই না তূর্যয় বস? ছি!এত্তবড় একটা গ্যাংস্টার সে নাকি অন্যের কথা লুকিয়ে শুনে।”
কান্না করার ফলে রাণীর গলা একটু অন্যরকম শোনাচ্ছিল।তূর্যয় কিছু না বলে চুপ করেই রাণীর সেই লাল হয়ে যাওয়া চোখ আর চোখ বড় করে কথা বলাকে দেখছে।রাণীর কণ্ঠস্বর তূর্যয়ের হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে চললো।তূর্যয়কে এইভাবে হাবলার মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে রাণী হ্যারিকে বললো…
“উনি কি এইখানেই হাঁ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে?উনি যে অসুস্থ এটা উনার জানা নেই?”
রাণী একটু জোরে চিল্লিয়ে কথাগুলো বলল।রাণীর কথায় তূর্যয় বলে উঠলো,”হুঁ?”
তূর্যয়ের কথা শুনে রাণী নিজের কোমরে হাত রেখে তূর্যয়কে বললো,
“হুঁ না বু! দাঁড়িয়ে বাতাস খান আপনি এইখানে।নিজে অসুস্থ সেটা কি আপনার মাথায় নেই?এই যাহ! দেখুন দেখুন আমি কতো মহৎ মেয়ে।আপনি আমাকে কতো অপমান করেছেন আর আমি আপনার স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবছি? ছি! আমার উপর ছি বর্ষিত হোক। হুঁ,রোবট একটা।”
রাণী ধপ ধপ পা ফেলে সামনের দিকে যাচ্ছে।

তূর্যয় চোখ ছোট ছোট করে হ্যারির দিকে তাকিয়ে তাকে বলতে লাগলো,
“কি এই মেয়েটা?এই মেয়ের কি মাথা নষ্ট?ও কি ভাবতে পারে,আমার মেজাজ খারাপ হলে আমি তার সাথে কী করতে পারি?মেয়েটা কি একটুও ভয় পায় না আমাকে?”

হ্যারি তূর্যয়ের কথার উত্তরে তাকে বলে উঠলো,
“তোমাকে ভয় পায় ঠিকই।কিন্তু সে ভয়টা ফেইসে দেখায় না।তুমি যেমন তোমার সকল কষ্ট হাইড করো সবার থেকে।তেমনি কুইনও তার মনের স্যাডনেস আর তোমার প্রতি তার ভয়টাকে হাইড করে।তোমরা দুজনই কেমন যেনো!নিজেদের সবকিছু হাইড করতে লাভ করো।বাট!আমার বিশ্বাস;তোমরা দুইজন দুইজনার সকল স্যাডনেস, লাভ,ভয় সবকিছু ভালই শেয়ার করতে পারবে।”
হ্যারির এমন বক্তব্য শুনে তূর্যয় রাগী গলায় হ্যারিকে চেঁচিয়ে বললো,
“স্বপ্ন দেখতেই থাকো।তূর্যয় নিজের কষ্ট কারো সাথে শেয়ার করে না।আর ঐ মেয়ের সাথে তো একদমই না।”
তূর্যয় দ্রুত হাঁটতে লাগলো সামনের দিকে।হ্যারির বলা কথাগুলো তূর্যয়কে বড্ড ভাবাচ্ছে।

আর হ্যারি সেখানেই দাড়িয়ে ভাবতে লাগলো,
“অলরেডি দুইজন দুইজনের জন্যে অনেকটা কেয়ার দেখিয়ে ফেলেছো।যাক, লেটস সি;কতদিন দুইজন দুইজন থেকে ডিসটেন্সে থাকবে!”
হ্যারি নিজের মনে কথাগুলো ভেবে সামনের দিকে গেলো।তূর্যয়ের সাথে থাকা ছেলেরা অন্য গাড়িতে উঠলো।আর রাণী,তূর্যয়, হ্যারি অন্য গাড়িতে উঠে পড়লো।গাড়িতে উঠার সময় তূর্যয়ের সাথে রাণীর চোখাচোখি হতেই রাণী মুখ ভেংচি দিলো তূর্যয়কে।তূর্যয় চোখ বড় করতেই রাণী চোখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে ফিরে গেলো।রাণী খেয়াল করলো,আজ গাড়ি অন্য রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে।একটু পরেই রাণী চারদিকে সমুদ্রের বিলবোর্ড লাগানো দেখছে।রাণী অবাক হয়ে ভাবছে,
“উনারা কি এখন সমুদ্রে গোসল করবেন?এইটা তো দেখে সমুদ্র পাড় মনে হচ্ছে।”
নিজের মনের প্রশ্ন রাণী নিজের মনেই রেখে দিলো।রাণী চোখ পাকিয়ে সব কিছু দেখছে।রাণী সমুদ্র কখনো দেখেনি।এতিম খানায় থাকে সে,এতিম খানা থেকে তাকে সমুদ্র দেখাতে কেই বা আনবে?রাস্তায় অনেকেই ডাব খাচ্ছে তো,অনেকে পেঁয়াজু, কাকড়ার দোকানে ভিড় করছে।অনেকে পরিবার,বন্ধুবান্ধব বা প্রেমিক প্রেমিকা নিয়ে এসেছে।রাণী চুপ করে দেখে রইলো সব।কিন্তু সমুদ্র দেখতে পাচ্ছে না আরেকটু দূরে যেতেই রাণী দেখলো গাড়ি একটা সুন্দর গেইট দিয়ে ঢুকছে।এই বাড়ির চারদিকে অনেক সুন্দর।রাণীর ধারণা ছিল “শান্তি মহল” তার দেখা সবচেয়ে সুন্দর ঘর।কিন্তু এই ঘর আর ঘরের পরিবেশ দেখে রাণীর মনের মত পরিবর্তন হলো।দুই তলা এই বাড়ি দেখেই রাণীর চোখ জুড়ে গেলো।গাড়ি থেকে নেমে রাণী হ্যারিকে বললো,
“এটা কার বাড়ি?আমরা কি এইখানে বেড়াতে এসেছি?”

” অন্যর বাড়িতে চুরি করতে এসেছি।আমার টাকার অনেক অভাব তো, তাই।”
তূর্যয় বাঁকা চোখে তাকিয়ে কথাগুলো বললো রাণীকে।
হ্যারি হেসে উঠলো ঐ দুইজনকে দেখে।রাণীকে হ্যারি বলে উঠলো,
“এইটা ব্রোয়ের বাড়ি।কিছুদিন আগেই কিনেছে।ব্রো এখন দিনের বেলায় এইখানে থাকে।বাট রাতে সেই শান্তি মহলে ব্যাক করে।”
রাণী অবাক হয়ে হ্যারিকে বললো, “কেনো?”
এইখানে রাতে কি ভূত আসে?উনি এইখানে রাতে থাকে না কেনো?”

“স্টুপিড।” তূর্যয় কথাটা বলে বাড়ির ভেতরে যেতে লাগলো।আর হ্যারি রাণীকে, তূর্যয়ের মায়ের দেওয়া ওয়াদা শোনাচ্ছে।তূর্যয়ের দলের ছেলেরা গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির আঙিনায় বসে রইলো।
ভেতরে গিয়ে রাণী আরো বেশি অবাক।এই ঘরের সবকিছু যেনো রাজকীয়।রাণী অবাক হয়ে হ্যারিকে বলে উঠলো,
“এই ঘরের দাম অনেক।তাই না?”
হ্যারি মাথা নাড়িয়ে “হ্যাঁ” বললো।রাণী হ্যারির ইশারা দেখে হাসলো।রাণী ঘুরে ঘুরে সারা ঘর দেখছে।একটু পরে হ্যারি এসে রাণীকে বললো,
“সিস,তুমি থাকো।আমি বেরুচ্ছি ওয়ার্কে।রাতে আমি ব্যাক করলে, তোমাকে এতিম খানায় পৌঁছে দিবো। ব্রোকে দেখে রেখো।তাকে ভয় পাবে না একদম।তার কাছে গিয়ে আস্ক করবে,তার কিছুর নিড হয় কিনা!”
হ্যারি দাঁড়ালো না কথাগুলো বলে। কানে ফোন লাগিয়ে চলে যাচ্ছে সে।আর রাণী মনে মনে ভাবছে,
“আমাকে এই দানবের কাছে একা রেখে চলে গেলেন আপনি ভিনদেশী ভাই!এই দানব সন্ত্রাসী আমাকে যেনো খেয়ে না ফেলে,আল্লাহ্।”
রাণী একটা রুমে বসে রইলো।এই রুম থেকে সমুদ্রের শব্দ শোনা যাচ্ছে।কিন্তু সমুদ্র দেখা যাচ্ছে না।ঘরের সবকিছু একেবারে চিকচিক করছে।হ্যারি থেকে রাণী শুনেছিল,সকালের দিকে এই ঘরের দরজা খোলা হয় আর চাকররা সম্পূর্ণ ঘর পরিষ্কার করে দেয়।এরপর সারাদিন কোনো কাজের লোক আসে না এইখানে।রাণী অনেক্ষণ এই রুমে বসে থেকে সে তূর্যয়ের ঘরের দিকে যাচ্ছে।হাজার হলেও,রাণী তূর্যয়ের জন্যে কাজ করে।তূর্যয়ের সাথে তার এতো ভাব নেওয়া ঠিক হবে না।তূর্যয়ের রুমের সামনে আসতেই রাণী তূর্যয়ের দরজায় নক করলো।ভেতর থেকে কোনো শব্দ না পেয়ে রাণী দরজা ঠেললো।নিজে নিজেই দরজা খুলে গেলো।দরজা খুলতেই রোদের একটা তীব্র আলো এসে পড়লো রাণীর মুখে।রাণী রোদ থেকে বাঁচার জন্যে নিজের মুখের সামনে হাত রাখলো। রোদের জন্যে রাণী কিছুই দেখছে না।

তূর্যয় হ্যারিকে তার সকল মিটিং কালকে থেকে ফিক্স করার জন্যে ফোন করেছিল।বারান্দায় দাঁড়িয়ে সে হ্যারির সাথে কথা বলছিল।রুমের ভেতরে আসতেই রাণীকে দেখে থমকে গেলো তূর্যয়। রোদে রাণীর কুঁচকানো মুখ তার পরিচিত লাগছে অনেক,সেই আগের মতো!যেদিন প্রথম দেখেই রাণীকে তূর্যয়ের পরিচিত মনে হয়েছিল।

রাণী মুখে হাত রেখেই তূর্যয়ের অবয়ব দেখতে পেয়ে চোখ বন্ধ করে তাকে বললো,
“আপনার কোনো কিছুর দরকার হলে আমাকে জানাবেন।ভিনদেশী ভাই বললো,আপনার যত্ন নিতে।”
তূর্যয়ের কানে রাণীর কথা ঢুকেছে ঠিকই।কিন্তু সে দেখে যাচ্ছে রাণীকে।রাণীকে দেখতে দেখতে এক পর্যায়ে তূর্যয় এসে রাণীর সামনে দাঁড়ালো।
নিজের সামনে রোদের তাপ আর না লাগায় রাণী তার চোখ খুললো।সে দেখলো,তূর্যয় তার সামনে পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে।যার কারণে তার মুখে রোদ লাগছে না।

অন্যদিকে রাণীর স্বাভাবিক মুখ থেকে তূর্যয় আবারও রাণীর সামনে থেকে সরে গেলো। যার কারণে রাণীর মুখে আবারও রোদ পড়লো আর রাণী তার মুখ আবারও কুঁচকে নিলো।তূর্যয়ের মুখে অচিরেই হাসি ফুটে উঠল রাণীর এমন মুখ দেখে।পরক্ষণে তূর্যয় নিজের হাসি থামিয়ে রাণীর হাত চেপে তাকে রোদ থেকে সরিয়ে নিলো।আর রাণীর মুখ চেপে ধরে তাকে প্রশ্ন করলো,
“কে তুই?কেনো এতো পরিচিত আমার কাছে তুই? তোকে আমি কেনো চিনি? কোথায় পড়ালেখা করেছিস তুই?”
তূর্যয়ের প্রশ্নে রাণী কাঁপতে লাগলো।কারণ,তূর্যয়ের চোখে অন্যরকম এক ভয়ংকর আক্রোশ দেখতে পাচ্ছে সে।রাণীর মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না।কিন্তু, সে সাহস নিয়ে তূর্যয়ের নজরে নজর মিলিয়ে বলতে লাগলো..
“সব বলবো, সব।আপনি একটু শান্ত হোন।প্লিজ!আপনার শরীর এখনো অনেকটাই দুর্বল।”

রাণীর নরম চাহনিতে তূর্যয়ের রাগী চোখ নিমিষেই বিলীন হয়ে গেলো।তূর্যয় রাণীর বাহু ছেড়ে দিলো।কিন্তু সে রাণীর সামনে থেকে সরলো না। বরং তূর্যয় রাণীর মাথার উপর দেওয়ালে এক হাত ঠেকিয়ে তার আরেক হাত রাণীর কোমরের পাশে দেওয়ালে রেখে বললো,
“এইবার বল।তুই কোন স্কুলে বা কলেজে পড়েছিস?”
রাণী নিজের বুকের উপর এক হাত চেপে বলতে লাগলো,
“সান.. সানসাইন হাই স্কুলে।আমার ম্যাডাম
পড়িয়েছিলেন আমাকে সেখানে।”
রাণীর এতটুকু কথায়, তূর্যয়ের এতদিনের রাণীকে চেনা চেনা ভাব একদম পরিষ্কার হয়ে গেলো।তূর্যয়ের চোখজোড়া এখন একদম মায়ায় ছেয়ে গেলো।যে মায়ায় সে, অনেক বছর আগে সেই বাচ্চা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকতো।রাণীর কপালে চলে আসা চুলকে তূর্যয় হাত দিয়ে সরিয়ে বলে উঠলো,
“তোকে আমি চিনি।সেই প্রথম দিনেই চিনতে পেরেছিলাম।এইযে তোর চোখ,এই চোখ দেখেই আমি তোকে চিনেছিলাম।সবটাই পরিবর্তন হলো তোর,কিন্তু রোদ লাগলে মুখ কুঁচকে নেওয়াটা কমলো না তোর।”
তূর্যয়ের সব কথা রাণীর মাথার উপর যাচ্ছে। রাণী ডুবে গেলো তূর্যয়ের মায়ামাখা চোখ দেখে।রাণী তূর্যয়ের মায়া ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে তূর্যয়কে প্রশ্ন করলো,
“আপনি কিভাবে চিনেন আমাকে?আপনিও কি সেই স্কুলে পড়তেন?কিন্তু আমার তো মনে নেই আপনার কথা!”
রাণীর কথায় হুঁশ এলো তূর্যয়ের।সে রাণীর সামনে থেকে সরে গেলো।আর জোরে রাণীকে ধমকে বললো,
“বেরিয়ে যা এই রুম থেকে।এক মুহূর্তও এইখানে যেনো না দেখি তোকে আমি।”
রাণীর মাথা একেবারে ফাঁকা হয়ে গেলো তূর্যয়ের কথা শুনে।সে দৌড় দিয়ে রুমের দরজা পর্যন্ত এলো এরপর সে তূর্যয়কে চিল্লিয়ে বললো,
“দানব সন্ত্রাসী,আপনার মাথা ঠিক নেই।সারাজীবন খুন করতে করতে আপনার মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।পাগল সন্ত্রাসী কোথাকার!”
রাণী এক মিনিটও দাঁড়ালো না।তূর্যয়ের রাগী কথা শোনার পূর্বে, মুহূর্তেই সে এই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

তূর্যয় নিজের আঙ্গুলের ভাঁজে জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে বসে আছে।সে এই ভেবে অবাক হচ্ছে,
“এতো বছর পর এই চঞ্চল মেয়েকে আমি আমার জীবনে আবারও পাবো কখনোই ভাবিনি আমি।মেয়েটাকে যখন থেকে চিনি,তখন তো আমি এতো হিংস্র ছিলাম না!কিন্তু, এই মেয়েই সেই আগের ছোট্ট রোদ্র কন্যা হবে এমনটা আমি কিভাবে মিলিয়ে ফেলেছি?এখনো কি সেই ছোট্ট মেয়ের জন্যে জমানো মায়া, আমার হৃদয়ে স্থাপন করা আছে? নিশ্চয় আছে,
নাহলে আমি কিভাবে এই মেয়েকে সহ্য করে নিই?যেখানে আমার আশে পাশ অন্য মেয়ের কোনো দেখা নেই,সেইখানে কিভাবে আমি এই মেয়েকে অত্যাচার করতে পারি না?”
তূর্যয়ের মনের প্রশ্নের শেষ নেই।তূর্যয় তার সেই রোদ্র কন্যাকে খুঁজে পাবে,আর সেই মেয়েটি বড় হয়ে তার সামনেই আসবে;এমনটা সে কখনো ভাবেনি।তার হিংস্র জীবনে রোদ্র কন্যার আগমন হবে, এই ভাবনাটা কখনো আসেইনি তার মাথায়।কিন্তু, এই প্রথম সে অতীতের কথা ভাবতেই খুশি হয়েছে।হবে নাই বা কেনো?তূর্যয়ের অতীতে, রাণী নামক সেই ছোট্ট মেয়েটির চোখের মায়া দেখেই তূর্যয় তার রাতভরের কষ্ট মুহূর্তেই যে ভুলে যেতো!

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে