আম্মার সংসার পর্ব-০৫

0
428

#আম্মার_সংসার
#পর্ব৫

টুনি আপার বিয়ের দিন সকালে হলো এক কান্ড। পাড়া-পড়শীর মহিলা আসছে বিয়ের গোসল করাতে। বাড়ির উঠানে জল চৌকি পাতা হয়েছে। আগের দিন সন্ধ্যায় লটকন টা মানে অরন্য ভাইয়া বসে বসে আল্পনা এঁকেছে।

বাপরে বাপ! কি বলবো আর? ছেলে মানুষ গুটুর গুটুর করে এতো সুন্দর আল্পনা আঁকলো কি করে?
আপার হলুদ সন্ধ্যা হয়নি ঐ লটকন টা -ই টুকটাক মেহদী পরিয়ে দিয়েছে। গান গেয়ে মাতিয়েছে।
আমাকে হাত ইশারায় কাছে ডাকলো। আমি গেলাম না। অজুহাত দেখিয়ে সরে আসলাম।

এই লম্বু বসে বসে আমাকে মেহদী পরিয়ে দিবে আর আমি লজ্জায় বসে বসে মরে যাবো।

আমি তো গিয়ে দাদির পানের আড্ডায় ঘাপটি মেরে বসে আছি। লটকন নাছোড়বান্দা, খুঁজে খুঁজে ঠিকই বের করে ফেলেছে।

দাদির পাশে বসে বললো-

– দাদি হাত টা দেন?

– কিতা করতে রে ভাই?

– নাতনির বিয়ের মেহদী দাদির হাতে না থাকলে ভাল দেখায় না।

– তুই দিতে পারবে? তুই দেকি বেডির মতো নারিঙ্গি-বিরিঙ্গি করছ।

অরন্য ভাইয়া নারিঙ্গি-বিরিঙ্গির মানে বুঝতে না পেরে এদিকে সেদিকে তাকাচ্ছে।
আমি তার এহেন করুন দশা দেখে বললাম-

– আপনি মেয়েদের মতো ছলাকলা ভালো জানেন। দাদির ভাষায় নারঙ্গি-বিরিঙ্গি।

– দাদির আলাদা ভাষা আছে না কি?

– হুম, আছে। অনেক অনেক শব্দ আছে।

– টায়রা এদিকে একটু শুনে যেতে পারবে?

– মেহদী দিয়ে দিলে আসতে পারবো না।

– এই মেয়ে আসতো। না হলো একদম কোলে তুলে নিয়ে যাবো। তখন দেখবে কেমন মজা।

আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। এই ছেলে কি বলে এইসব? দাদি এমনিতে-ই কানে ক্লিয়ার শুনতে পায়। তাই নিজের ঠোঁটো তর্জনী আঙ্গুল চেপে বললাম-

– হুশ,হুশ যান তো এখান থেকে।

– এই মেয়ে যান না বলে ‘জান’ ডাকতে ও তো পারো।

– ধ্যাত যাবেন না কি দাদি কে ডাকবো?

– এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে এসো প্লিজ। পানি খাওয়ানো সুন্নত। মন থেকে দোয়া পাবে।

এতক্ষণে বুঝতে পারছি এই লটকন আমার সাথে লাইন করতে চায়। দাদি প্রেম-ভালোবাসা কে লাইন করা বলে।

পানি নিয়ে গিয়েছিলাম। লটকন পানির গ্লাসে না ধরে আমার হাত ধরে ছিলো। আমি তো বাপ রে! বলে এক লাফে ছয় হাত দূরে ছিটকে পরেছি।
আশেপাশে যারা ছিলো কি হয়েছে? কি হয়েছে? বলে এসেছে।

লটকন কি কি বলে বুঝিয়েছে শুনতে পাইনি। তখন আমার গা গুলাচ্ছিলো,মাথা ঘুরাচ্ছিলো।

ঐ রাতে আর তার চোখের সামনে আসিনি লুকিয়ে লুকিয়ে থেকেছি।

যাইহোক টুনি আপা নিজে নিজে বিয়ের গোসল করে ফেলছিলো। দাদি তো হই, হই করে বাড়ি মাথায় করে ফেলেছে।

– আ, ল বান্দী করতাছত কিতা? বিয়ার পরে যত ইচ্ছা একলা একলা গোসল করিছ।

টুনি আপার বিয়ের পর বাড়ি ফাঁকা ফাঁকা লাগে। আম্মা তরকারিতে লবণ দেয় তো হলুদ দেয় না। ভাত পুড়ে ছাই হয়ে গন্ধ ছড়ায়। আব্বা ও কেমন জানি খামখেয়ালি হয়ে হাঁটে।
টগর টা ও কুটনামি করে না। রঙ্গন ভাইয়া চলে গেছে অরন্য ভাইয়া আমাকে একটা কথা বলবে বলে গেছে।
কবে বলবে? কি বলবে? জানতে ইচ্ছে করেনি অন্য সময় হলে চেঁপে ধরতাম।
আপার জন্য আমাদের এই প্রাণহীনতা।

বাড়ির কাজের জন্য ছোট ফুফু একটা হ্যাল্পিংহ্যান্ড জোগাড় করে দিয়েছে। হ্যাল্পিং হ্যান্ড জৈতুন আপা বসে বসে দাদির সাথে সুখ দুঃখর গল্প করছে আর লাউ শাকের ডোগা কুঁটছে। আমি তাদের সাথে বসে চিংড়ি মাছ গুলো বেছে দিচ্ছি।

– দাদি গো বাপের বাড়িতে জীবন ডা ভালাই যাইতেছিল। এক গোলামের পুতের সাথে দেখা হইলো। বিয়া করলাম,এরপর থেকে জীবনের বারো টা বাজা শুরু হইছে।

জৈতুন আপার গোলামের পুতের কথা শুনে আমার কেনো জানি অরন্য ভাইয়র কথা পরে গেলো। তার জন্য আমার মন পুড়ে, মুখে কিছু বলতে পারি না।

টুনি আপা কল দিয়েছে আব্বার নাম্বারে।

– কেমন আছিস টুনি মা?

– আব্বা, আব্বা গো বলে আপা বিলাপ দিয়ে কান্না শুরু করেছে।

কান্নার জন্য আব্বা কোন কথা বুঝতে পারছিল না।পাশে আমি থাকায় আমার কানে ফোন ধরিয়ে দিলেন।

– টুনি আপা শান্ত হও। তোমার কথা না বুঝতে পারলে আমরা সমাধান দিতে পারছি না।

চলবে…

#তানজীনা_আফরিন_মেরিন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে