#আমি_শুধুই_তোমার?
#পর্বঃ০৬এবং শেষ
#Arshi_Ayat
“কি রে কি করছিস?”
আদ্রি নিজের বাসার ছাদে দাড়িয়ে ছিলো।আচমকা আয়াশের গলার আওয়াজ শুনে পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো আসলেই আয়াশই এসেছে।আদ্রি হেসে বলল”এই তো গোধূলি দেখছি।হঠাৎ তুই এলি যে।”
আয়াশ আদ্রিকে একটা ডায়েরি দিয়ে বলল”এটা তো তোর তাই না?”
আদ্রি ওর ডায়েরিটা আয়াশের হাতে দেখে ভয় পেলো।তারপর ডায়েরিটা আয়াশের হাত থেকে নিয়ে বলল”এটা কই পেলি?”
“ইনশিরা দিয়েছিলো কয়েকদিন আগে।বলেছিলো পড়তে।আমি পড়ি নি তবে আজ কেনো যেনো পড়লাম।”
আদ্রি আয়াশের কথায় কিছুই বলল না।এখন আর কিছুই বলার নেই কারণ আয়াশ এখন সবই জানে।আয়াশ আবার বলতে শুরু করলো”জানিস বলতে না পারার কারণে অনেক সময় ভালোবাসার মানুষটা হারিয়ে যায়।এই যেমন আমিও তোকে ভালোবাসতাম কিন্তু গাধার মতো তুই কবে বলবি এটার জন্য ওয়েট করতে করতে একটা রিলেশনেও চলে যাই।তারপর তুইও ভাবতি আমি বলবো তোকে কিন্তু বলা হয়ে ওঠেনি।কি হতো একটা বার বললে?ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট হয়ে যেতো?বয়ফ্রেন্ড কি বেষ্টফ্রেন্ড হতে পারে না?পারে কিন্তু আমরা তো আমরাই নিজের ভেতর কথা জমিয়ে রেখে বুঝাতে চাই আমরা কতো ভালোবাসি।একটা বার বিপরীত মানুষের মনে কি চলছে বুঝি না বুঝতে চাই না।”
আয়াশ আদ্রিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে দেখলো ও কাঁদছে।আয়াশ ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল”কাদিস না।আজ তোকে প্রেম নিবেদন করতে এসেছি।আমার ভালোবাসা গ্রহণ করে আমাকে ধন্য কর।”
আদ্রি হেসে আয়াশকে জড়িয়ে ধরলো।আয়াশও হাসলো।
.
.
.
.
.
অনেক্ষণ ধরে ইনশিরা বসে বসে ঝালমুড়ি চাবাচ্ছে কিন্তু কিছুই বলছে না।ইনানও ওর সাথে বসে আছে।ইনশিরার ভাবভঙ্গিতে বোঝা যাচ্ছে সিরিয়াস কিছু বলবে।একপর্যায়ে ইনশিরা বলা শুরু করলো”ইনান আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো।কিন্তু আমি চাই না তুমি আমার জীবনের সাথে নিজেকে জড়াও।আজ সব শেষ করতে এসেছি আমি।তোমার সাথে আমার বন্ধুত্ব থাকবে আজীবন কিন্তু তোমার সুন্দর জীবনের সাথে আমি নিজেকে জড়াতে পারবো না।আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ফাইনাল পরীক্ষাটা দিয়ে লন্ডন চলে যাবো।আর ফিরবো না।তাই আজ সব বলতে এলাম।”
ইনান ওর কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল”ঠিকাছে তোমার কথাই মানলাম তবে তোমাকে তো অনেক ভালোবাসি নিজের হাত মেরে তারপর চলে যাও।আমি আটকাবো না।তারপর তোমার জীবনের সাথে আমার জীবনও জড়াবে না।বলো এই শর্তে রাজি তুমি?যদি রাজি থাকো তাহলে ঠিকাছে আর রাজি না থাকলে তোমাকে আমার জীবনের সাথে জড়াতেই হবে কিচ্ছু করার নেই।দুটো অপশন দিলাম।তোমার যেটা ভালো লাগো সেটাই বেছে নাও।”
“এভাবে বলো না।দেখো তুমি জানো আমি কেনো এমন বলছি।তারপরেও কেনো চাইছো?”
“হ্যাঁ আমি জানি তারপরও কেনো চাইছি জানো?আমি তোমাকে ভালোবাসি তাই।আর ভালোবাসার উপর কোনো কথা হতে পারে না।শুনে রাখো আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমার শরীর না।”
“তোমার বাবা মা কে কি বলবে?কি বলবে সমাজ কে?”
“ঠিকাছে তবে এর উত্তর বাবা মাই দিবে।চলো।”
ইনান ইনশিরাকে নিয়ে ওর বাসায় গিয়ে বাবা মা কে ডাক দিলো।তারপর ইনশিরার হাত ধরে বলল”আব্বু আম্মু এই যে দেখছো মেয়েটাকে ওকে আমি ভালোবাসি।কিন্তু সে তোমাদের ছেলেকে একা করে চলে যেতে চাচ্ছে।আমি কি ওকে যেতে দিবো?”
ইরফান চৌধুরী ইনানের কথা শুনে বলল”একদম না।ওকে কোথাও যেতে দিবি না।তোর মাকে যেমন আমি হৃদ মাঝারে রাখি।তুই ওকে সেখানেই রাখবি যেনো পালাতে না পারে।”
তারপর ইনানের মা ইনশিরার কাছে বলল”কি গো মেয়ে আমার ছেলেকে পছন্দ হয় নি?আমার ছেলেকে একা ছেড়ে চলে যেতে চাইছো কেনো?”
ইনশিরা লজ্জা পাচ্ছে খুব।হেসে বলল”না আন্টি তেমন কিছু না।আসলে…”
ইনশিরার কিছু বলতে হয় নি তার আগে ইনান ই ওর বাবা মাকে সবটা বুঝিয়ে বলেছে।সব শুনে ইনানের মা বলল”দেখো মা তুমি তো ইচ্ছে করে কিছু করো নি।তাহলে কেনো নিজেকে কষ্ট দিবে?”
তারপর ইনানকে ডেকে বলল”শোন বউ আমার পছন্দ হয়েছে।”
ইনানের বাবা বলল”তো কবে বিয়ে করছিস ইনান?”
ইনান হেসে বলল”মন তো চায় আজই করে ফেলি কিন্তু কিচ্ছু করার নাই।আগে পরীক্ষা তারপর বিয়ে করে রিল্যাক্সে বাসর করবো।”
ইনানের কথা শুনে বাবা মা দুজনই হাসলো আর ইনশিরা লজ্জায় পড়ে গেলো।
———
কিছুক্ষণ আগে ইনান বাসায় দিয়ে গেলো ইনশিরাকে।বাসায় কেউ নেই।ছোট মামার লাশের খোজ পেয়েছে পুলিশ তাই সবাই দেখতে গেছে।ইনশিরা রুমে এসে বারান্দায় দাড়িয়ে ভাবতে লাগলো আসলেই আমি ভালোবাসা ছাড়তে পারলাম না।একটা মেয়ের জীবনে এমন ভালোবাসার মানুষ আর তার পরিবারের সাপোর্ট থাকলে আর কি লাগে।
সমাপ্ত