#আমার_শহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
লেখক- এ রহমান
পর্ব ১৩
মুখে কারও গরম নিশ্বাস পড়তেই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ খুলে দেখি জারিফের উষ্ণ নিশ্বাস আমার মুখে পড়ছে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।ভাল করে খেয়াল করলাম সে ফর্মাল ড্রেসেই শুয়ে আছে।তার মানে মাঝ রাতে এসেছে। খুব টায়ার্ড ছিল তাই চেঞ্জ করেনি। আমি তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। এমন সময় সে চোখ বন্ধ করেই বলল “আমাকে দেখে তোমার পেট ভরে যাবে কিন্তু আমার ভীষণ খুদা পেয়েছে। রাতে কিছুই খাইনি।” তার কথা শুনে আমি ভীষণ লজ্জা পেলাম সাথে কষ্টও। কষ্টের পরিমানটাই বেশি ছিল তাই বলে উঠলাম “আমাকে ডাকেননি কেন?” সে চট করে আমাকে নিচে দিয়ে তার মাথা উপরে তুলে আমার মুখের কাছে এসে বললেন “এমন মায়াবি চেহারা নিয়ে ঘুমালে কি ডাকতে ইচ্ছা করে। বুকে জড়িয়ে ঘুমাতে ইচ্ছা করে। তখন এই চেহারা দেখেই মন পেট সব ভরে গেছিলো। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি কতটা খুদা পেয়ছে।” আমি একটু হেসে তাকে সরিয়ে দিয়ে ওয়াশ রুমে গেলাম। সেখান থেকে বের হয়ে খাবার রেডি করলাম। কিন্তু উনি আবার ঘুমিয়ে গেছেন। আমি ওনার কানের কাছে গিয়ে বললাম “আমি খাবার রেডি করেছি। খাবেন না।উঠুন।” আমার কথা শুনে উনি উঠে গেলেন। ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলেন। খেতে খেতে বললেন “আজ অফিসে কাজ নেই। খাওয়া শেষ করে রেডি হয়ে নাও। আমরা বেড়াতে যাব।” “কথায় যাব?” “এরকম সব কথার পিছনে প্রশ্ন করাটা কি তোমার স্বভাব?” “সেটা তো আপনিও করেন।” আমার কথা শুনে সে আর কিছু বললনা। খাওয়া শেষ করে রেডি হতে চলে গেলো।আমিও কিছু না বলে রেডি হচ্ছিলাম। কিন্তু ব্লাউজের ফিতা বাধতে পারছিলাম না। আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজে নিজে দেখে বাধার চেষ্টা করছিলাম। এমন সময় জারিফ এসে আমার পিঠে হাত দেয়। তার শীতল হাতের স্পর্শে আমি কেঁপে উঠি। সে খুব যত্ন করে আমার পিছনে ফিতাটা লাগিয়ে দেয়। তারপর নিজের ঠোঁট আমার পিঠে ছুয়ে দেয়। আমি আরও কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে নেই। আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আমার কানের কাছে এসে বলে “খুব সুন্দর লাগছে জান।ভাবছি আজ আর বাইরে যাবনা।” বলেই একটু হেসে দিলো। তার কথা শুনে আমি তার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ার চেষ্টা করলাম। উনি আরও জোরে আমাকে চেপে ধরল। আমিও প্রান পনে নিজেকে ছাড়ার চেষ্টা করেই যাচ্ছি। কিন্তু ওনার শক্তির সাথে পেরে উঠছি না। ব্যর্থ হয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছি। উনি এবার আমাকে তার দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললেন “পালিয়ে যেতে চাও আমার কাছ থেকে। পারবেনা।” বলেই আমার ঠোঁটে তার ঠোঁট মিশিয়ে দিলো।
সারা রাস্তায় বরফ পড়ছে। প্রকৃতি যেন আমাদের সাদরে আমন্ত্রন করছে। ট্যাক্সির জানালা দিয়ে আমি হাত বাড়িয়ে সেই বরফ ধরছি। জারিফ আমাকে দেখছে। এক জায়গায় এসে ট্যাক্সি থেমে গেলো। আমরা গাড়ি থেকে নামলাম। নেমেই আমি ঠাণ্ডায় জমে গেলাম। শিরশির করে যাচ্ছে সারা শরীর। জারিফ বুঝতে পেরে আমাকে তার সাথে জড়িয়ে নিলো। তার উষ্ণ স্পর্শে আমি একটু স্বস্তি পেলাম। আমরা হেটে সামনে গেলাম। রাস্তার পাশে একটা রেস্টুরেন্টে খাবার খেলাম। কিন্তু আবহাওয়া আরও খারাপ হওয়ায় আমরা তাড়াতাড়ি ফিরে এলাম। হোটেলে ফিরতেই জারিফ আমাকে বলল “তুমি রুমে যাও আমি একটু অফিস থেকে আসছি। বেশিক্ষণ থাকবনা। দেখা করেই চলে আসব।” বলেই সে চলে গেলো আমি রুমে চলে আসলাম।
অফিস থেকে ফিরে আমি দরজার কাছে দাড়িয়ে আছি অনেকক্ষণ যাবত। কিন্তু আজও সে দরজা খুললোনা আমি অপেক্ষা করে কিছুক্ষন পর নিজেই দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম। ঢুকে দেখি ফারিয়া বিছানায় নেই। এদিক ওদিক চোখ ফেরাতেই দেখলাম সে নিচে পড়ে আছে। আমি দৌড়ে তার কাছে গেলাম। তার মাথাটা আমার কোলে তুলে নিতেই চমকে গেলাম। জরে গা পুড়ে যাচ্ছে। একি! বাইরে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। ঠাণ্ডা লেগে জর এসে গেছে। আমি তাড়াতাড়ি করে ওকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলাম। নিজের হাত দিয়ে তার হাত ঘষতে লাগলাম। পায়ে ঘষতে লাগলাম কিন্তু কোন কাজ হলনা। তাকে ভালো করে ঢেকে দিলাম। তারপর তার মাথায় জল পট্টি দিতে লাগলাম। কিন্তু কোন ভাবেই না তার জর কমছে না জ্ঞ্যান ফিরছে। আমি বুজতে পারছিনা কি করবো। মাথায় হাত দিয়ে ভাবছি এখন কি করবো। কোন বুদ্ধি না পেয়ে আমার পরিচিত এক ডাক্তার কে ফোন দিলাম। সে বলল এই সময়ে তাকে উষ্ণ রাখা খুব দরকার। এই জরে যদি তার শরীরের তাপ মাত্রা স্বাভাবিক না হয় তাহলে খুব বিপদ হয়ে যাবে।আমি একটু ভেবে নিজের শার্ট টা খুলে শুয়ে পড়লাম। তাকে নিজের শরীরের সাথে লেপটে নিয়ে শুয়ে আছি। ভাবতেও পারিনি আজ এমন কিছু হয়ে যাবে। আমার খেয়াল রাখা উচিৎ ছিল। কিন্তু ফারিয়ার যদি জ্ঞ্যান না ফেরে তাহলে ওকে হসপিটালে নিতে হবে। আমি ফারিয়াকে জড়িয়ে নিয়ে ভাবছি। অনেক টা সময় পার হয়ে গেছে। ফারিয়ার জর কমে গেলেও এখনো জ্ঞ্যান ফেরেনি। আমি তাকে জড়িয়েই আছি। কিছুক্ষন পর ফারিয়া নড়ে চড়ে উঠলো। আমি আমার হাতের বাধন একটু আলগা করে দিলাম জাতে সে ভালভাবে নড়া চড়া করতে পারে। সে খুব আলতো করে চোখ খুলে আমার দিকে তাকিয়ে দেখল। তার জ্ঞ্যান ফেরা দেখে আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। তাকে ছেড়ে উঠে গেলাম খাবার বানাতে। এই মুহূর্তে তার কিছু খাওয়া দরকার। তারপর ঔষধ খেতে হবে। আমার উঠে যাওয়া দেখে সেও উঠতে চেষ্টা করলো কিন্তু দুর্বলতার কারনে উঠতে পারলনা। তারপর মিন মিনে সরে আমাকে জিজ্ঞেস করলো ”কোথায় যাচ্ছেন?” আমি কোন কথা না বলে নিজের কাজ করতে লাগলাম। সে পিছন থেকে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল “আমার না মাথা ঘুরাচ্ছে।” এবার আমি তার হাত ধরে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলাম। নিয়ে বললাম “গায়ে অনেক জর। মাথা তো ঘুরবেই। উঠে আসলে কেন?” একটু জোরেই কথাটা বলে ফেলেছিলাম। সে ভয়ে কেঁপে উঠে। আমি তাকে জড়িয়ে ধরে বলি “সরি জান। ভয় পেয়েছ।” সে আমার বুকে মুখ লুকিয়ে মাথা নাড়ায়। “তোমাকে বকিনি। একটু টেনশনে ছিলাম তো।” সে আমার কথা বুঝতে পেরে আমাকে জড়িয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি তার জন্য খাবার রেডি করে নিয়ে তাকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলাম। তারপর তার মুখে খাবার তুলে তাকে খাইয়ে দিলাম। খাওয়া শেষ করে তাকে ঔষধ খাইয়ে দিলাম। সে ঔষধ খেয়ে শুয়ে পড়লো।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি জারিফ চেয়ারে বসে বাইরে দেখছে। মাথাটা প্রচণ্ড ব্যাথা করছে। তবুও কষ্ট করে উঠলাম। তার পাশে দাড়াতেই সে আমার দিকে একবার তাকিয়ে বলল “এখন কেমন আছ?” আমি একটু ভ্রু কুচকে তাকালাম। রাতের কথা আমার কিছুই মনে নেই। “কি হয়েছিল?” জিজ্ঞেস করতেই সে আমাকে টেনে তার কোলে বসিয়ে নিয়ে বলল “ম্যাডাম আপনার কাল রাতে জরে কোন সেন্স ছিলোনা।” আমি মিন মিন করে বললাম “আমি তো কিছুই বলতে পারছিনা।” “তুমি যা করেছো।“ আমার দিকে তাকিয়েই বলল। আমি তার কথায় ভাবনায় পড়ে গেলাম। আমি কি এমন করেছি। একটু ভেবে তাকে জিজ্ঞেস করলাম “কি করেছি?” সে আমার কথা শুনে একটু মুচকি হাসল। তারপর বলল “থাক সেসব না বলি।” আমি তার কথা শুনে লজ্জায় পড়ে গেলাম।
চলবে……