আমার ভীনদেশী এক তারা পর্ব-০৮

0
514

#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব৮
#Raiha_Zubair_Ripte

মাঝ রাস্তায় আসতেই এনা কিছু একটা ভেবে আনন্দ কে গাড়ি ঘুরিয়ে পিটারের বাসার বিপরীত রাস্তায় থাকা তাদের বাসায় যেতে বলে। আনন্দ এনার দিকে তাকিয়ে বলে,,,

” কেনো কি হলো যাবি না তার কাছে?

এনা জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে,,

” না।

” কেনো? এতোক্ষণ তে ছটফট করছিলি তার কাছে যাবি তাহলে?

” বুঝবি না তুই। আমায় আমায় বাসায় দিয়ে আয়।

” আচ্ছা।

কথাটা বলে আনন্দ গাড়ি ঘুরিয়ে এনাদের বাসার সামনে এসে গাড়ি থামায়। এনা গাড়ি থেকে নেমে আনন্দ কে বাড়িতে আসতে বললে আনন্দ জানায় অন্য একদিন আসবে আজ তাড়া আছে। এনা আর কথা না বাড়িয়ে ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে বাসায় প্রবেশ করে । সোফায় বসে থাকা ফারাহ্-কে টেনে নিয়ে নাচা শুরু করে। হঠাৎ এনার এতো খুশি হওয়া দেখে বেশ অবাক হয় ফারাহ্। এনা ফারাহ্ কে ঘুরাতে ঘুরাতে বলে,,

” ভাবি আজ আমি অনেক খুশি আমার মতো এতো সুখী, খুশি মানুষ আজ বোধহয় কেউ নেই।

” কেনো কি হয়েছে এনা। ফ্রেন্ড দের সাথে ঘুরে এতো খুশি!

” না ভাবি তেমনটা না। ভাবি আজ আমি আমার.. কথাটা আর শেষ করতে পারে না। হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলে ফারাহ্ হাত টেনে ধরে। পেছন থেকে আরাভ বলে উঠে,,

” আরে কি হচ্ছে এখনই তো নিজেও পড়তে সাথে আমাকেও ফেলতে।

এনা এবার ফারাহ্-র হাত ছেড়ে আরাভের হাত ধরে বলে,,

” আরাভ ভাই আরাভ ভাই এতো খুশি খুশি লাগছে কেনো আমার।

” এতো খুশি হওয়ার কারন কি?

ফারাহ্ এনাকে থামিয়ে সোফায় বসিয়ে বলে,,

” আমি ও তো সেটাই জিজ্ঞেস করছি। এনা তো বলছেই না।

” ভাবি আমি আজ সত্যি জেনে গেছি।

” কিসের সত্যি এনা?

” আরাভ ভাই পি… কথাটুকু বলতেই আবার চুপ হয়ে যায় এনা। আবেগে এতোটাই উৎফুল্ল হয়েছিলো এনা যে হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। তার যে পিটারের সাথে মিলন নেই পিটারের সাথে যে তার ঘর বাঁধা হবে না কোনো কালেই। সোফা ছেড়ে উঠে রুমে চলে আসে দৌড়ে। পেছন থেকে ফারাহ্ আর আরাভ এনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ কি হলো মেয়েটার ওভাবে দৌড়ে রুমে চলে গেলো।

এনা রুমে এসে দরজা বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নেয়। বিছানায় বসে আলমারি থেকে পিটার আর তার একটা ছবি বের করে বলে,,

” পিটার আপনি বিয়ে করেন নি। তাহলে কি আজও আপনার মনে আমার বিচরণ। এখনও কি আমায় ভালোবাসেন? যখন শুনলাম আপনি বিয়ে করেন নি বিশ্বাস করুন তখন আমার চাইতে খুশি মনে হয় আর কেউ ছিলো না পৃথিবীতে। কিন্তু পরক্ষণেই সেই খুশিটা আর বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। মনে পড়ে গেল আপনার আর আমার ধর্ম তো আলাদা এক হবো কি করে আমি আর আপনি। আর আপনার মা সে তো জীবনেও আমায় মানবে না আপনার পাশে। ইশ কি এমন ক্ষতি হতো আপনি মুসলিম হলে।

তাহলে তো এতোদিনে আমাদের একটা সংসার হতো। জানেন তো আজ ইচ্ছে করছিলো আপনার পছন্দের ধূসর রঙের শাড়ি পড়ে আপনায় সারপ্রাইজ দিবো। সেই জন্য বাসায় এসেছিলাম আপনার কাছে না গিয়ে কিন্তু সেটা আর হবার নয়। এতোটাই খুশি হয়েছিলাম আপনি বিয়ে করেন নি সেটা শুনে যে ধ্যানঞ্জান সব ভুলে শুধু আপনাকে পাওয়ার লোভ করে বসেছিলাম।

আপনি উত্তর মেরুর মানুষ আর আমি দক্ষিণ মেরুর মানুষ যা কখনো এক হবার নয়। খানিকের জন্য আপনাকে একান্তে কাছে পবার আশা জেগেছিল। আমি না হয় -দূর হতে আপনারে সাধিব গোপনে বিরহডোরে বাঁধিব।

“আপনি তো ছিলেন আমার কাছে ভিনদেশী এক তারার মতো। আপনি না হয় ভিনদেশী তারাই হয়ে রইলেন আমার কাছে। অনেক ভালোবাসি আমি আপনায় বুঝেছেন ”

ছাঁদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে পিটার। তার সামনেই অ্যাঞ্জেলেকা পুতুল নিয়ে খেলছে। হেফজিবার কাছে শুনেছে একটু আগেই ফোন করে জানিয়েছে আজ এনা জেনে গেছে সে বিয়ে করে নি। পিটার নিজের ভাগ্যের কাছে নিরুপায়। পিটার ইচ্ছে করলে মুসলিম হয়ে এনা কে বিয়ে করতে পারতো কিন্তু এর পর! এরপর সে কি করতো? মেয়েটা কে আরো তার মায়ায় পড়াতে বাধ্য করতো তারপর একদিন হঠাৎ করে সব মায়া ত্যাগ করে নিজ গন্তব্যে চলে যেতে হতো। যেই গন্তব্যে কেউ আগে যায় তো কেউ পরে যায়। কিন্তু সবাইকে একদিন যেতেই হবে সে জায়গায়। সে কেউ চাইলেও যেতে হবে আর না চাইলেও যেতে হবে। এটাই তো প্রকৃতির নিয়ম। যেই নিয়মে বাঁধা পিটার।

” শোনো ভীনদেশী তারা তোমাকে চাইলেও আর ভালোবাসতে পারবো না,
পারবো না আর তোমার মুখের হাসির কারন হতে রোজ। কারন নিজের হাতেই দিয়েছি সেসব রাস্তা বন্ধ করে, করেছি দাফন নিজের সুখ। বিধাতার তটে চাই এমন ভালোবাসা না দিক আর কোনো মানবীর জীবনে। যে ভালোবাসার প্রাপ্তির কোনো স্থান নেই। ভালো থেকো আমার ভিনদেশী তারা। তোমার পিটার তোমায় সেদিন ও ভালোবেসেছিল আজ ও ভালোবাসে আগামী তেও ভালোবেসে যাবে।

হেফজিবা বাসায় এসে অনেক অবাক হয় সামনে সোফায় বসে থাকা মানুষটাকে দেখে। সোফায় বসে থাকা মানুষটা রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে আছে হেফজিবার পানে। চোখ দিয়ে ভস্ম করে দিবে হেফজিবা কে। সোফা থেকে উঠে স্যামিয়ুল সোজা হেফজিবার হাত ধরে রুমে টেনে নিয়ে বিছানায় ধাক্কা মে’রে ফেলে দেয়। দরজাটা বন্ধ করে দেয় শব্দ করে স্যামিয়ুল। কেঁপে উঠে হেফজিবা। স্যামিয়ুল যতো এগিয়ে আসছে হেফজিবার দিকে ততোই গলা শুকিয়ে যাচ্ছে ভয়ে হেফজিবার। কোমর থেকে বেল্টটা খুলে হেফজিবা কে এলোপাথাড়ি মার’তে শুরু করে। হেফজিবার আর্তচিৎকার বারি খাচ্ছে চার দেওয়ালে। দরজায় কান পেতে থাকা হেফজিবার চাচি সেই আর্তচিৎকার শুনে পৈশাচিক আনন্দ পায়।

হেফজিবা বেল্টের সেই ধারালো আ’ঘাত গুলো থেকে বাঁচার জন্য স্যামিয়ুলের পা ধরে মিনতি করে বলছে,, স্যামিয়ুল আমি সহ্য করতে পারছি না। দয়া করে আর মার’বেন না আমায়। আমার কি অপরাধ সেটা বলুন। আমি আর পারছি না ছেড়ে দিন। এই অবস্থায় আমাকে আর মারবেন না প্লিজ।

স্যামিয়ুল হেফজিবার কথা শুনে শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি খাটিয়ে একের পর এক আ’ঘাত করতে থাকে। হেফজিবা আর সহ্য করতে পারলো না সেই মা’রের আ’ঘাত, লুটিয়ে পড়লো মেঝেতে। সারা শরীরে তার বেল্টের লাল দাগ বসে গেছে। ফর্সা শরীর সে দাগ যেনো চাঁদের গায়ে কলঙ্কের মতে। জায়গা জায়গা থেকে র’ক্ত ঝড়ে পড়ছে। মেরুন রঙের শাড়ী টা র’ক্তে ছুপছুপ। স্যামিয়ুল হেফজিবার কাছে গিয়ে তল পেটে সজোরে লা’থি মা’রে সাথে সাথে হেফজিবা আমার বাচ্চা বলে এক আর্তচিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারায়।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে