#আছো_তুমি_হৃদয়জুড়ে
#পর্ব_৭
#জাফিরাহ_জারিন
খাটের উপর বসে পা দোলাচ্ছে মিহি।এখন তার হাতে কোনো কাজ নেই।সব কাজ শেষ।রিশান খাটে বসে খেলছে।রিদিম সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।মিহিকে দেখে বোঝা যাচ্ছে যে সে বোরিং ফিল করছে।তাই রিদিম বললো,
“শপিং এ যাবে??”
“ভাল্লাগে শপিং করতে।”
“শপিং করা লাগবে না।এমনি ঘুরে আসি চলো।”
“হুম।যাওয়া যায়।বাসায় বসে বোরিং লাগছে।”
“ওকে রেডি হয়ে নাও।”
এরপর মিহি রিশানকে রেডি করে নিজেও রেডি হয়ে নিলো।রিদিমও রেডি হয়ে গাড়ি বের করলো।এরপর তারা তিনজন মিলে শপিং এ গেলো।হঠাৎ করেই মিহি গাড়ি থামাতে বললো।রিদিম গাড়ি থামালো।
“কি হলো??এভাবে গাড়ি থামাতে বললে যে??”
“ওই দেখুন ফুচকা।চলুন ফুচকা খাবো।অনেকদিন খাই নি।”
রিদিম গাড়ি ঘুরিয়ে ফুচকাওয়ালার কাছে নিয়ে গেল।মিহি সাথে সাথে গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে ফুচকার অর্ডার দিলো।
ফুচকাওয়ালা মিহির কথামত এক প্লেট ফুচকা বানিয়ে দিলো।ফুচকার প্রতি মিহিকে এত উৎসাহিত হতে দেখে রিদিমের মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো।রিদিম রিশানের কাছে গিয়ে রিশানের কানে কানে কিছু একটা বললো।নিজের বাবার কথা শুনে রিশান মুখ টিপে হাসলো।রিদিম এবং রিশান দুইজনের মুখেই শয়তানি হাসি।রিশান মিহিকে বললো,
“মাম্মাম আমার শার্টের বোতাম খুলে গেছে।লাগিয়ে দাও।”
রিশানের কথা শুনে মিহি ফুচকার প্লেট রেখে রিশানের কাছে গেলো।রিশানের শার্টের বোতাম লাগিয়ে আবার ফুচকার কাছে এলো।কিন্তু প্লেট হাতে নিয়ে মিহি অবাক।তার প্লেটে তো ১০টা ফুচকা ছিল।এখন ৯টা ফুচকা। মিহি ফুচকা খেতে যাবে তখনই রিশান ডাকলো,
“মাম্মাম!!”
“কি হয়েছে আব্বু??”
“জুতো খুলে গেছে।পড়িয়ে দাও।”
মিহি আবারও প্লেট রেখে রিশানের কাছে গিয়ে তার জুতা ঠিক করে দিলো।এবারও মিহি প্লেট হাতে নিয়ে অবাক।প্লেটে আরও একটা ফুচকা কমে গেছে।আগে ছিল ৯টি ফুচকা এখন আছে ৮টি ফুচকা। মিহি তার ডানদিকে তাকিয়ে দেখলো রিদিম হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।মিহি একবার বাম দিকে তাকালো।দেখলো রিশান মুখে হাত দিয়ে হাসছে।মিহি এতক্ষণে বুঝতে পারলো যে রিশান আর রিদিম দুজন মিলে ওর সাথে মজা করছে।রিশান মিহিকে ডাকছে।মিহি যখনই তার কাছে যাচ্ছে রিদিম একটা করে ফুচকা খেয়ে নিচ্ছে।মিহি রাগিভাবে রিদিমের দিকে তাকালো।
“প্ল্যানটা আপনার ছিল তাই না??”
“কিসের প্ল্যান?? আমি তো কোনো প্ল্যানই করি নি।”
“আমার সাথে মজা হচ্ছে??”
“না না।আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা যে তোমার সাথে মজা করব??”
“ঠিক হচ্ছে না কিন্তু।”
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো মিহি।
“আরে রাগ করছো কেন??আমরা তো জাস্ট মজা করছিলাম।”
“হুহ!!!”
“পাপা!!”
“ইয়েস রিশান।”
“ওই দেখো প্লে গ্রাউন্ড। আমি ওখানে গিয়ে খেলি??”
“ওকে আব্বু।সাবধানে যাও।”
এরপর রিশান প্লে গ্রাউন্ডে গিয়ে খেলতে লাগলো।আর রিদিম আর মিহি ঘুরতে লাগলো।হঠাৎ কারোর ডাক শুনে পিছে ঘুরে তাকায় রিদিম।কিন্তু পিছে ঘুরে থমকে যায় সে।রিদিমকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিহিও পিছে ঘুরলো।যাকে দেখলো মিহিও অবাক হয়ে গেলো।কারণ তাদের সামনে নিয়া দাঁড়িয়ে আছে।
“কেমন আছো রিদিম??”
নিয়া মুখে বাকা হাসি নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো।
“ভালোই আছি।অনেক বেশি ভালো আছি।”
শান্ত স্বরে উত্তর দিল রিদিম।
“তুমি কেমন আছো”
“অনেক অনেক ভালো।জানো আমার বর্তমান স্বামী কতটা আরামে রেখেছে আমাকে!!আমাকে বাসার কোনো কাজই করতে হয় না।বাসায় ৪ জন কাজের লোক আছে।আমি সারাদিন যা খুশি তাই করতে পারি।”
“আর কিছু বলবে??”
“আর কিছু বললে সহ্য হবে তো তোমার??”
“এতক্ষণ যখন সহ্য করেছি তখন বাকিটাও সহ্য করতে পারবো।”
“বাদ দাও।আমার যা দরকার ছিল তা কোনোদিনও তুমি আমাকে দিতে পারতে না।তাই বাই বাই।”
“গুড বাই।আর আমিও অনেক ভালো আছি।”
রিদিম আর সেখানে দাঁড়ালো না।মিহিকে নিয়ে চলে এলো।এরপর প্লে গ্রাউন্ড থেকে রিশানকে নিয়ে চলে এলো বাসায়।
_____________________________________
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আচড়াচ্ছে মিহি।হঠাৎ করেই তার নিয়ার কথা মনে পড়লো।মিহি একা একাই বলতে লাগলো,
“মিস নিয়া!!!যদি আপনার এত আরামেই থাকার দরকার তাহলে বিয়ে কেন করলেন??চিরকুমারী হয়েই তো থাকতে পারতেন।তাই না??এহ!!তার সোয়ামী তাকে কত্ত ভালো রেখেছে।এই শোন তুই খালি ওই আরামটাই পাচ্ছিস।রিদিম তোকে যেই ভালোবাসাটা দিয়েছে সেটা অন্য কেউ তোকে দিতে পারবে না।”
কিছুক্ষণ থেমে আবার বলতে শুরু করলো সে,
“আর এই যে মিস্টার রিদিম।আপনার লজ্জা করে না নিজের বউকে সাথে রেখে নিজের প্রাক্তনের সাথে কথা বলতে??কি এটিটিউড!! আপনাকে তো এই অপরাধে জেলে দেওয়া উচিৎ। আর……”
মিহি আর কিছু বলবে তার আগেই মিহির মুখ বন্ধ হয়ে গেল।কারণ রিদিম দরজার সাথে হেলান দিয়ে বুকে হাতগুজে দাঁড়িয়ে আছে।
“কি হলো থামলে কেন??বলো।আমি শুনছি।বলো বলো।”
“না মা..মানে ওই আরকি!!”
রিদিম ধীরে ধীরে মিহির দিকে এগিয়ে এলো।রিদিমকে কাছে আসতে দেখে মিহি একটা ঢোক গিললো।এখন কি হবে আল্লাহই জানে।রিদিম মিহির কাছে এসে মিহিকে পিছে থেকে জড়িয়ে ধরলো।রিদিম মিহির কাধে নিজের থুতনি রেখে বলতে শুরু করলো,
“আমি খুব খারাপ তাই না??”
“না।”
“আমার অনেক এটিটিউড। তাইনা??”
“উহুম।”
“এতক্ষণ তো এগুলোই বলছিলে।আমাকে তো জেলে দেওয়া উচিৎ। ”
“না মানে…”
“তো মেডাম আমি খারাপ হই আর ভালো হই।রাগী হই আর বদমেজাজি হই।এটিটিউড থাকুক আর না থাকুক।যেরকমই হই না কেনো আফটার অল হাজবেন্ড তো তোমারই।তাইনা??”
“হুম।”
“ভালোবাসি।”
“আমিও”
——————-সমাপ্ত——————–