#আকাশ_জুড়ে_তারার_মেলা
#পর্ব_৯
#লেখিকা_N_K_Orni
তানিশা ইফাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর সে মনে মনে ভাবল,
— আমি কি একটু বেশিই বলে ফেললাম ওনাকে? আমার এতোটা বলা উচিত হয়নি। আসলেই ওনার তেমন কোনো দোষ নেই। ওনার একটাই দোষ। সেটা হচ্ছে আমাকে ব্লা*কমেইল করে বিয়ে করা। এছাড়া তো ওনার কোনো দোষই নেই।
বলেই তানিশা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। গভীর রাতে ইফাদ বাসায় ফিরে এলো। সে এসে দেখল তানিশা এক হাতের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। সে গিয়ে তানিশাকে ঠিকভাবে শুইয়ে দিল। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বারান্দায় চলে গেল। সে কপালে উপর এক হাত দিয়ে ওখানে বসে ভাবতে লাগল আগের কথা। তার পুরোনো সব স্মৃতি যেগুলোতে তানিশা জুড়ে আছে।
অতীত
— ইফাদ বাবা খেয়ে যা। তুই অফিসে একটু দেরী করে গেলে কিছুই হবে না। সকাল সকাল না খেয়ে বের হোস না।
ইফাদ শার্টের হাতা ঠিক করতে করতে বলল,
— না মা, রুলস আর রুলস। আর সেটা সবার জন্যই প্রযোজ্য। তাই আমাকে এখনই বের হতে হবে। নাহলে বেশি দেরী হয়ে যাবে।
— একদিন দেরী হলে কিছুই হবে না।
— তুমি যখন অফিসে যেতে তখন কিন্তু একদম সময় মতোই যেতে। তাহলে আমি কেন তোমার ছেলে হয়ে দেরী করব। আচ্ছা এখন এসব বাদ দেও। আমি বরং অফিসে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিব।
বলেই ইফাদ তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে গেল। ইফাদের মা মিসেস আরিয়া সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
— এই ছেলেকে নিয়ে আর পারব না আমি। সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ।
মিসেস আরিয়া নিজের রুমে চলে গেলেন। ইফাদ বাসা থেকে বের হয়ে এলো।
— ফাহিম দ্রুত চলো। দেরী হয়ে যাচ্ছে।
— স্যার খেয়ে আসলেই কিন্তু পারতেন।
ইফাদ এবার ফাহিমের দিকে তাকালো।
— স্যার চলেন যাই।
ইফাদ গাড়িতে উঠে বসল। কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে তানিশা। তখন ওর রুমের সামনে তিনা এলো।
— আপু আসব?
— হুম আয়।
তিনা ভেতরে তানিশাকে তৈরি হতে দেখে এসে বলে উঠল,
— আপু কোথায় যাচ্ছিস?
তানিশা চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলল,
— পিকনিকে যাচ্ছি। তুই যাবি আমার সঙ্গে?
তানিশার কথা শুনে লাফিয়ে উঠে বলল,
— সত্যিই? আমাকে আগে বললি না কেন? তাহলে আমিও যেতাম।
তিনার কথা শুনে তানিশাকে মাথায় হাত দিল। ওকে এমন করতে দেখে তিনা বলে উঠল,
— কি হলো? এমন করছিস কেন আপু?
— তুই আসলেই গা*ধী। আরে এই সময় আমি প্রতিদিন কলেজে যাই দেখিস না? আজকেও আমি সেখানেই যাচ্ছি, কোনো পিকনিকে না।
— ওহ। তুই যে কলেজে যাচ্ছিস সেটা আগে বললেই পারতি। কিন্তু এই দুই তো তুই কলেজে যাসনি। এই জন্য আমি জিজ্ঞাসা করছি যে কোথায় যাচ্ছিস?
— তোকে আর কিছু বলার নেই। আর তোর সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করার ইচ্ছা আমার একদমই নেই। আমাকে দ্রুত কলেজে যেতে হবে। যাই খেয়ে আসি।
বলেই তানিশা রুম থেকে বেরিয়ে গেল। তানিশা ডাইনিং রুমে যেতেই দেখল তার বাবা বসে আছে। আজাদ সাহেব ওকে দেখে বলে উঠলেন,
— কিরে মা কলেজে যাচ্ছিস?
তানিশা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,
— হ্যাঁ বাবা। এই দুইদিন তো যাওয়া হয়না। তাই ভাবলাম আজকে যাই।
— আচ্ছা ভালো করেছিস।
একটু পরে ওখানে তিহান এলো। তানিশা তিহানকে দেখে বলে উঠল,
— কিরে তিহান কলেজে যাবি?
— হ্যাঁ আপু। তোমরা এখানে সবাই আছো। কিন্তু তিনা কই? ও খাবে না?
তানিশার মা মিসেস তাসনীম রান্নাঘর থেকে বের হতে হতে বললেন,
— ও কি আর ঘুম থেকে উঠেছে? ওর তো পরীক্ষা শেষ। দেখ বিছানায় শুয়ে ঘুমাচ্ছে।
তানিশা তখন ওনার কথায় আপত্তি জানিয়ে বলল,
— না, তিনা তো উঠে গেছে। ও তো একটু আগেই আমার রুমে এলো।
মিসেস তাসনীম ভ্রু কুচকে বলে উঠলেন,
— কি! উঠে গেছে! এই তিহান যা ওকে ডেকে নিয়ে আয়।
তিহান অসহায় হয়ে বলে উঠল,
— আমি! সবকিছুতে আমাকেই কেন বলো? ধুর! ভালো লাগে না।
তিহান উঠে চলে গেল। তানিশা ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হাসল। তিহান তিনাকে নিয়ে ফিরে এলো। তিনাকে দেখে মিসেস তাসনীম বলে উঠলেন,
— কিরে আজকে সকাল সকাল উঠে গেলি যে? আমি তো তোকে ডাকতে যাইনি। তাহলে একা একা তাড়াতাড়ি উঠে গেলি কেন? যখন পড়ালেখা থাকে কই তখন তো এতো তাড়াতাড়ি উঠিস না? আমাকে টেনে উঠাতে হয় তখন।
তিনা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,
— উফফ! মা এখন এসব বাদ দেও না।
তানিশা ব্রেকফাস্ট করে রুমে চলে এলো। তারপর সবকিছু ঠিকমতো গুছিয়ে কলেজে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ল। সে কলেজে যেতেই দেখল ক্লাসের সামনে তার বান্ধবী নেহা দাঁড়িয়ে আছে। তানিশা তার দিকে এগিয়ে গেল। নেহা তানিশাকে দেখে বলে উঠল,
— কিরে এই দুইদিন আসিসনি কেন?
— আসলে আমি একটু অসুস্থ ছিলাম।
— ওহ। ভালো করেছিস আজকে এসে।
— তা তুই বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? চল ক্লাসে যাই।
— না। আজকে আর ক্লাস করব না। তুই তো এই দুইদিন আসিসনি তাই জানিস না।
তানিশা ভ্রু কুচকে বলে উঠল,
— কি?
— আরে আগে পুরোটা বলতে তো দিবি। মাঝে কথা বললে বুঝবি কি করে? শোন এই দুইদিনে অনেক কিছু ঘটে গেছে। নাবিলা নতুন বয়ফ্রেন্ড পেয়েছে।
— নাবিলা নতুন বয়ফ্রেন্ড পেয়েছে মানে? তাহলে মাহিরের কি হলো?
— ওর সাথে ব্রেকআপ হয়ে গেছে। যেহেতু নাবিলা নতুন বয়ফ্রেন্ড পেয়েছে, তাই সে আমাদের ট্রিট দেবে। আমরা আজকে আর ক্লাস করব না।
— ওহ।
— তুই তো আসিসনি তাই তোকে বলতেও পারিনি। ভালো হয়েছে আজকে তুই এসেছিস। তোরও আজকে ক্লাস করার দরকার নেই।
— তাহলে নোটের কি হবে? আর আমি তো আগের দুইদিনের নোটও নেইনি।
— আরে আমি দিয়ে দিব।
— আচ্ছা এখানে কেন দাঁড়িয়ে আছিস?
— আমরা ঠিক করেছি এখানেই সবাই দেখা করব। তারপর একসাথে যাব।
— ওহ। কিন্তু আমরা প্রথম ক্লাস করে তো যেতে পারতাম।
— আরে ক্লাসের চিন্তা বাদ দে।
তানিশার বাকি ফ্রেন্ডরা এলে ওরা একসাথে বেরিয়ে পড়ল। প্রথমে তানিশা একটু না করলেও বাকিদের জোড়াজুড়িতে সেও রাজি হয়ে গেল।
— স্যার আজকে দুপুর একটায় আপনার একটা মিটিং আছে।
ফাহিমের কথা শুনে ইফাদ মুখ তুলে সামনে তাকাল। তারপর সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— এই খররটা আমাকে আগে দেওনি কেন? এতো দেরী হয়ে গেছে। আর এখন এসে বলছ যে একটু পরে মিটিং আছে। একটা বাজতে তো আর বেশি সময় নেই।
— এতে আমার কোনো দোষ নেই। এই বিষয়ে আমিও জানতাম না। নির্জন আমাকে একটু আগে বলেছে।
ইফাদ বিরক্ত হয়ে বলে উঠল,
— তা সেই নির্জন কই?
— স্যার ও ফাইল ঠিক করছে।
ইফাদ আবারও বেশ বিরক্ত হলো।
— আচ্ছা সবকিছু দ্রুত তৈরি করো। আমরা একটু পরেই বের হবো। আর কোনো সমস্যা যেন না হয়।
ফাহিম মাথা নাড়িয়ে বলল,
— আচ্ছা স্যার।
বলেই ফাহিম বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর ইফাদ মিটিংয়ের জন্য বেরিয়ে গেল। কিছু পথ যেতেই ইফাদের গাড়ি থেকে গেল। ইফাদ সামনে তাকিয়ে বলল,
— কি হলো নির্জন? গাড়ি থামালে কেন?
— স্যার আপনি তো জানেনই আমাদের দেশের রাস্তায় কত জ্যাম থাকে? আমার তো কোনো দোষ নেই।
ইফাদ একবার ঘড়ির দিকে তাকাল তারপর বলল,
— এসব তোমার জন্যই হয়েছে।
বলেই ইফাদ বিরক্তি নিয়ে পাশে তাকাল।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )