#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
লেখনীতেঃ-অনামিকা ভট্টাচার্য্য
আংটি পর্ব ৬
কলেজের কাছেই একটা দো-তলা বাসায় একটা ফ্যামিলির সাথে সাবলেট থাকে অরণ্য।বাসায় তিনটা বেডরুম,ড্রয়িংরুম,ডাইনিং,কিচেন আর সাথে একটা বারান্দা আছে।একটা সিঙ্গেল রুমে অরণ্য থাকে,সাথে এটাচড ওয়াশরুম।ঐ ফ্যামিলির সাথেই খাওয়াদাওয়া করে।মাস শেষে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে দেয়।ভদ্রলোক স্ত্রী,দুই ছেলে আর বৃদ্ধ মাকে নিয়ে থাকেন।তিনি একটা এনজিও তে চাকরি করেন।ছেলে দুটো স্কুলে পড়াশুনা করে।স্ত্রী গৃহিণী।
বাসায় বসে পত্রিকা পড়ছিলো অরণ্য।এমন সময় ওর মা কল করে বলেনঃ-
-অরণ্য,তোর বড় মামা একটা খুব ভালো সম্বন্ধ এনেছেন।মেয়ে মেডিক্যালে পড়ছে।দেখতে শুনতেও ভালো।উঁচু বংশ।বাবা-মা দুজনই সরকারি চাকুরিজীবী।তুই তো ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসবে।তখন না হয় দেখতে যাবো।
-আগে ছুটি হোক।তারপর দেখা যাবে।
একটু সময় ভালো-মন্দের খোঁজ-খবর নিয়ে ফোন রেখে দেয় অরণ্য।তারপরই উপমাকে কল করে।উপমা রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো।অরণ্যের নাম্বার দেখে কেমন একটা সংকোচ লাগছে।সেদিনের ঘটনার পর থেকে আর ওরা মুখোমুখি হয় নি।কল রিসিভ করবে না ভেবেও হ্যালো বলে উঠলো উপমা।
-হ্যালো উপমা।আমি অরণ্য বলছি।
-নাম্বার সেইভ করা আছে।
-ও আচ্ছা।কোন ভণিতা না করে সরাসরিই বলছি।আমার মা অনেকদিন ধরে বিয়ের জন্য পাত্রী দেখছেন।বাবা-মা দুজনই একমাত্র ছেলের বৌকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছেন।এতোদিন ধরে আমার নিজেরই কেন জানি বিয়ের প্রতি কোন ইন্টারেস্ট ছিলো না।তাই একটার পর একটা আলাপ নানান অজুহাতে না করে দিয়েছি।এখন আর বাবা-মাকে অপেক্ষা করিয়ে রাখতে চাচ্ছি না।নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো এর কারণ হচ্ছো তুমি।তোমাকে তুমি করে সম্বোধন করলাম বলে আবার কিছু মনে করো না যেন।আপনজনকে আপনি করলে কেমন যেন পর পর মনে হয়।যা-ই হোক,ফাইনাল কথায় আসি।তোমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে চাই।তোমার এতে কোন আপত্তি নেই তো?
-বাহ!ভালো তো।এখন পর্যন্ত প্রপোজই করতে পারলেন না।আর উনি আসছেন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।
-আরে দূর।ওসব টেস্ট পরীক্ষার সময় আছে নাকি আর।একেবারে সেমিস্টার ফাইনাল দিয়ে দেবো ভাবছি।
-হাহাহা…….এই তো হলো শিক্ষকের প্রেম।সবকিছুতেই পরীক্ষা খোঁজে।
-এবার তোমার মতামত টা বলো।
-আমার তোমাকে কিছু বলার আছে অরণ্য।বিয়ের ব্যাপারেই।
-ঠিক আছে।শুনবো।তবে ফোনে নয়।সরাসরি দেখা হোক তারপর বলবে।আগামীকাল বিকেলে একটা জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যাবো তোমাকে।কাছেই একটা পার্ক আছে।যাবে নাকি?
-ঠিক আছে।আগামীকাল দেখা হচ্ছে।Bye.
**************
একটা পার্কে বসে আছে অরণ্য আর উপমা।অন্যদিন অরণ্যের সাথে দেখা হলে কখনো লজ্জা করতো না।আজ কেমন জানি লজ্জা লজ্জা করছে।লজ্জা হচ্ছে নারীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুভূতির নাম।প্রেমের অন্যতম একটি উপাদান।যার প্রতি কোন ফিলিংস নেই,তার প্রতি লজ্জা আসবে কেন?ফিলিংস আছে বলেই তো লজ্জাও এসে ভীড় জমিয়েছে চোখের কোণে।তাই তো অরণ্যের দিকে চোখ তোলে তাকাতে পারছে না উপমা।
-উপমা,এমনিতেই তো তুমি লাল টুকটুকে কন্যা।তার ওপর এই লজ্জা রাঙা মুখটা তো লাল জবাকেও হার মানাবে।তাকাও আমার দিকে।
-হুম বলো।শুনতে পাচ্ছি।
-আমি কি বলবো?বলবে তো তুমি।সেদিন ফোনে তো সেভাবেই কথা হলো।আমার যা বলার তা তো ফোনেই বলে দিয়েছি।
-ও,হ্যাঁ বলছি।মাথা নীচু করেই জবাব দেয় উপমা।
-এভাবে বললে তো হবে না।আমার চোখের দিকে তাকাও।দেখো তো,সেদিনের মতো গভীরতা খোঁজে পাও কি-না।যাতে তুমি ডুব দিতে পারো।
এবার নড়েচড়ে বসলো উপমা।সরাসরি অরণ্যের চোখের দিকে তাকালো।আবার সেই অনুভূতি হচ্ছে।অদ্ভুত মায়াময় সেই অনুভূতি।পলকেই ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো উপমার মন।ওই দু চোখ যেন সম্মোহনের মন্ত্র জানে।এভাবেই কেটে গেলো কিছুক্ষণ।হঠাৎ করে বাদামওয়ালার ডাকে চমকে তাকালো দুজনেই।অরণ্য বাদাম কিনলো।উপমা বলতে শুরু করলোঃ-
-আমি বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে।ক্লাস এইটে উঠেই বাবার ব্যবসার সূত্রে ঢাকায় চলে যাই এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করি।আমার বড় হওয়া ঢাকা শহরেই।আমাদের সমাজের প্রেক্ষিতে বুঝতেই তো পারছো প্রচুর বিয়ের প্রপোজাল আসতে থাকে বড় হওয়ার সাথে সাথে।বাবা-মা প্রথমে কোনটাই হাতে নেন নি।কিন্তু অনার্স কমপ্লিট করার পর কয়েকটা বেশ ভালো ভালো আলাপ আসে।এরমাঝে দু একটা প্রায় ঠিকঠাক হয়েও ভেঙে যায়।গতবছর এক ডাক্তার ছেলের সাথে বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক হবার পরও ওরা না করে দেয়।বলে সবকিছু বিশদভাবে বললো উপমা।এবার তোমার মতামত বলো অরণ্য।
সবটা মনযোগ সহকারে শুনলো অরণ্য।তারপর বললোঃ-
-দেখো,আমার কাছে সবটাই জাস্ট কো-ইনসিডেন্ট বলে মনে হচ্ছে।এগুলোর সাথে বিয়ের কোন যোগসূত্র আছে বলে আমি মনে করি না।তুমি এসব নিয়ে ভেবো না।আমি ছুটিতে বাড়ি গিয়েই বাবা-মাকে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো।
-ঠিক আছে।আমিও ছুটিতে বাসায় গিয়ে বাবা-মার কাছে তোমার কথা বলবো।
-তবে এই কথাই রইলো।এবার একটা অন্য বিষয়ে একটু কথা বলতে চাই উপমা।তোমার আংটির বিষয়ে।
-কি জানতে চাও বলো।
-সেদিন তুমি বলেছিলে না তোমার হাতের ঐ আংটিটা আর কেউ খুলতে পারে না।আমি একটু ট্রাই করে দেখতে চাই।
হাতটা বাড়িয়ে দেয় উপমা।অরণ্য উপমার হাতটা নিজের হাতের ওপর নিয়ে রাখে।তারপরই এক টানে খুলে ফেলে এই আংটি।হতবাক হয়ে যায় উপমা!
-এটা কি করে সম্ভব!মিরাকল ঘটিয়ে ফেলেছো অরণ্য।বিলিভ মি।আমি সেদিন সত্যি বলেছিলাম।কেউ কোনদিন খুলতে পারে নি।এমনকি রিমি দিদিও সেদিন পারে নি।
-আমি জানি তো উপমা।তুমি মিথ্যে বলো নি।রিমিকে পিকনিকের দিন আমিই বলেছিলাম আংটি টা খুলে দেখতে।তবে আংটির বিষয়ে অন্যকিছু বলি নি।জাস্ট বলেছিলাম খুলে দেখিস তো এটা মনে হয় পুরনো দিনের নিখাঁদ স্বর্ণ দিয়ে তৈরী।
এবার যখন আংটি টা খুলতে পেরেছি আমি তবে আমি আর একটা কাজ করতে চাই।উপমার হাতে আংটি পরিয়ে দিতে দিতে বললো অরণ্য।
-কি কাজ?
-আমি এখন তোমাকে নিয়ে জুয়েলার্সে যাবো।তারপর এরকম একটা আংটির অর্ডার করবো।দেখা যাক এখানকার কোন কারিগর বানাতে পারে কি না।তারপর একসাথে কোন রেস্টুরেন্টে ডিনার করে তবেই বাসায় যাবো।
-ঠিক আছে চলো।
#চলবে
#পরবর্তী_পর্ব
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/963205194110200/